শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

প্রধান পাতা



ব্যক্তিগত উন্নয়ন – সমাপ্তি

“সাফল্য দর্শন”

ব্যক্তিগত উন্নয়নে যেসব মানসিক গুণাবলী দরকার তা নিয়ে এই লেখা। এগুলো প্রকৃত অর্থে সাফল্য দর্শন এর সূত্রসমূহ এবং আমি নিজে এর অনুসারী। আমি এই দর্শনে পুরোপুরি বিশ্বাস করি এবং এর উপর আস্থা রাখি। আমি বিশ্বাস করি একজন ব্যক্তি তার যেকোন ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপান্তর করতে পারে যদি তিনি এই দর্শনের সূত্রগুলোর ওপর কর্তৃত্ব করেন।

আরও কিছু প্রয়োজনীয় ব্যাপার আপনাদের দরকার হতে পারে যেমনঃ নিজেকে জানার জন্য নির্দিষ্ট প্রশ্নসমূহ, নেতৃত্বের গুণাবলী কি কি এবং কি কি আবেগ বা অনুভূতির কারণে মানুষ ব্যর্থ হয়। এসকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত তথ্য সহকারে হাজির হব আপনাদের সামনে। তবে আরও কিছুটা সময় গবেষণা করার পর। কারণ যেসব তথ্য আমি এখানে উল্লেখ করেছি তার বাস্তব নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করা হয়। এরপর পর তথ্যগুলো লিখিত রূপে সকলের সামনে হাজির করা হবে।

নিঃসন্দেহে সাফল্য দর্শন এর সূত্রগুলো আপনাদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারেন। আপনার বাস্তব জীবনে সূত্রগুলো প্রয়োগ করুন এবং আপনার সুন্দর জীবনকে আরও সুন্দরতম করে তুলুন। কোন কাজে ব্যর্থ হয়ে থাকলে ইহাকে জয়ে রূপান্তর করুন এবং সফল জীবন যাপন করুন। আপনাদের কোন প্রশ্ন, ইচ্ছা বা মন্তব্য থাকলে এই ঠিকানায় যোগাযোগ করুন।


ব্যক্তিগত উন্নয়ন – চর্তুদশ অধ্যায়

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় যার মাধ্যমে অসীম বুদ্ধিমত্তা সহায়তা করবে ধারণা দ্বারা। যা একজন ব্যক্তির সচেতন মনে আসবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে।

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়কে বুঝতে পারবেন এবং প্রয়োগ করতে পারবেন পূর্ববর্তী সূত্রগুলো প্রয়োগে দক্ষ হয়ে ওঠার পর। পূর্ববর্তী সূত্রগুলো আপনার কর্মে প্রয়োগ করে দক্ষ হয়ে উঠলেই এই শক্তিটি আপনার জন্য কাজ করবে।

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় হচ্ছে অবচেতন মনের অংশ। পূর্বে একে বর্ণনা করা হয়েছে সৃষ্টিশীল কল্পনা বলে, মস্তিষ্কের গ্রাহক অংশ বলে বর্ণিত বিষয়টিও হচ্ছে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়। এই ইন্দ্রিয়টির মাধ্যমেই ধারণাগুলো ঝিলিক দেয়। এই ঝিলিকগুলো হচ্ছে প্রেরণা বা উৎসাহ। যা দেখে আপনি আপনার কাজে আরও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সম্পর্কে বুঝতে হলে ব্যক্তিকে আপন মনের একাগ্র প্রচেষ্টা দ্বারা বুঝতে হবে। যা আমরা ধ্যান করার সময় করে থাকি। ইহা বর্ণনা দ্বারা বোঝানো যায় না যিনি পূর্বোক্ত সূত্রগুলো সম্পূর্ণ বুঝে প্রয়োগ করেন নি। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সম্পর্কিত জ্ঞানটি শর্তযুক্ত। ইহা বুঝতে হলে শর্ত হচ্ছে পূর্বোক্ত সূত্রগুলোর ওপর কর্তৃত্ব করা। পূর্বোক্ত সূত্রগুলোর ওপর কর্তৃত্বকারী ব্যক্তিই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সম্পর্কে অনুধাবন করতে পারবেন। ইহা ১৩তলা উচ্চ ভবনের মত, যেখানে ১ম তলা, ২য় তলা, ... ... ... ১২তম তলা উঠার পরেই ১৩তম তলায় পৌছানো যায়।

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দ্বারা আপনি সর্তক হবেন আপনার ঝুঁকি এবং বিপদগুলো থেকে, যাতে এগুলো থেকে রক্ষা পেতে পারেন। আপনি সুযোগ গুলো চিনতে পারবেন যখন এগুলো আপনার সামনে আসবে। আপনার সহায়তার জন্য ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় খুলে দিবে এমন দরজা যার সহায়তায় আপনি আপনার যেকোন ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপান্তর করতে পারবেন।

অবশ্য এই সত্য আপনি কখনও উপলব্ধি করতে পারবেন না যদি পূর্বোক্ত সূত্রগুলোতে বর্ণিত নির্দেশনাগুলো আপনি পালন না করেন বা সমরূপ কোন পদ্ধতি অনুশীলন না করেন।


ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় একটি মানসিক অবস্থা যা ব্যক্তির আত্মার সাথে সম্পৃক্ত। ইহা এমন নয় যে ব্যক্তি সহজেই অর্জন করতে পারে। ইহা অর্জন করতে হলে দীর্ঘ সাধনার প্রয়োজন। আপনাকে কর্তৃত্ব করতে হবে নিজের ওপর এবং নিজেকে পূর্বে বর্ণিত সূত্রগুলো দ্বারা ধাপে ধাপে নিয়ে যেতে হবে সুউচ্চ পর্যায়ে যেখানে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় অবস্থিত।

ব্যক্তিগত উন্নয়ন – ত্রয়োদশ অধ্যায়

মস্তিষ্ক

মস্তিষ্ক, মানব শরীরের সর্বাধিক উঁচুতলার কক্ষ, যা একই সাথে প্রচার করে এবং গ্রহণ করে চিন্তা তরঙ্গগুলোকে। ইহাকে প্রচারকারী এবং গ্রহণকারী স্টেশন বলা হয়।

পূর্ববর্তী লেখায় সৃষ্টিশীল কল্পনা সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে, যা মস্তিষ্কের গ্রাহক অংশ রূপে কাজ করে। ইহা চিন্তা তরঙ্গগুলোকে গ্রহণ করে একজন ব্যক্তির অবচেতন মন হতে, এমনকি অন্য কোন ব্যক্তির মন হতে যা অপরাপর ব্যক্তিদের মস্তিষ্ক দ্বারা প্রচারিত হয়। চিন্তা তরঙ্গগুলো যা মানুষের মনে ধারণা বা উপায় বলে ঝিলিক দেয়, এগুলো সাধারণ ভাবে আসতে পারে চারটি উৎস হতে। যথাঃ

ক. অসীম বুদ্ধিমত্তা
খ. একজন ব্যক্তির অবচেতন মন
গ. অন্য ব্যক্তির মন
ঘ. অন্য ব্যক্তির অবচেতন মন

ব্যক্তির অবচেতন মন হচ্ছে ব্যক্তির চিন্তা তরঙ্গের গুদাম ঘর। যেখানে একজন তার পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারা প্রাপ্ত তথ্যগুলো সাজিয়ে সংরক্ষিত করে রাখে। ইহা ব্যক্তির ধারণার উৎস। আবার অপর ব্যক্তির মনও একটি উৎস। কারণ একজন ব্যক্তির চিন্তাগুলো যখন অপর ব্যক্তি শুনতে পায় তখন তার সচেতন মন দ্রুত ইহার অবশেষ বা উপসংহার তৈরীর চেষ্টা করে একটি ধারণা সৃষ্টির মাধ্যমে। যখন অপর ব্যক্তির সচেতন মন অবশেষ সৃষ্টি করতে অক্ষম তখন অবচেতন মন সহায়তার জন্য প্রস্তুত হয় এবং ধারণা সৃষ্টি করে।

উক্ত চারটি উৎস হতে ধারণা রূপে উদ্ভাবিত চিন্তা তরঙ্গগুলো গৃহিত হয় সৃষ্টিশীল কল্পনা দ্বারা।

চিন্তা তরঙ্গগুলো যখন উচ্চ হারে স্পন্দিত হয় তখন এগুলো প্রকাশিত হয় বর্হিবিশ্বে। ইহা রেডিও এর মত ক্রিয়া করে- একটি স্টেশন, মূল স্টেশন হতে শব্দ তরঙ্গগুলো প্রকাশ করা হয়, তারপর ছড়িয়ে যায় বাতাসে। যার কাছে গ্রাহক যন্ত্র রয়েছে তিনি তরঙ্গগুলো যন্ত্রে গ্রহণ করেন এবং শুনতে পান শব্দগুলো। ব্যক্তির নিকটে গ্রাহক যন্ত্র হচ্ছে সৃষ্টিশীল কল্পনা। আর প্রেরক যন্ত্র হচ্ছে অবচেতন মন।
মস্তিষ্কের প্রেরক অংশ হচ্ছে অবচেতন মন যা চিন্তা তরঙ্গগুলোকে প্রেরণ করে। চিন্তা তরঙ্গগুলো যা উচ্চ হারে স্পন্দিত হয় তা মিশ্রিত হতে হয় আবেগ বা অনুভূতি দ্বারা। ইহা ইতিবাচক বা নেতিবাচক উভয় প্রকার আবেগ দ্বারা মিশ্রিত হতে পারে। আপনার ইচ্ছাকে ইতিবাচক আবেগ দ্বারা মিশ্রিত করতে হবে, এতে আপনি স্বপরামর্শ সূত্রের সহায়তা নিতে পারেন।


মস্তিষ্কের কর্মসূচি তিনটি সূত্রের উপর নির্ভরশীল। এগুলো হচ্ছে অবচেতন মন, সৃষ্টিশীল কল্পনা এবং স্বপরামর্শ। প্রচারকারী অংশ, অবচেতন মনকে আপনি সহায়তা করতে পারেন স্বপরামর্শ দ্বারা। এভাবে আপনার মস্তিষ্ক আপনার ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপান্তরের জন্য ব্যবহার করুন। আপনি তিনটি সূত্রকেই কাজে লাগাতে পারেন। এর জন্য ইচ্ছা অধ্যায়ে দেওয়া নির্দেশনা গুলোকে অধ্যবসায়ের সহিত পালন করুন।

ব্যক্তিগত উন্নয়ন – দ্বাদশ অধ্যায়

অবচেতন মন

সচেতন ক্ষেত্র দ্বারা গঠিত হয়েছে অবচেতন মন। এখানে প্রত্যেক চিন্তা তরঙ্গ পৌছায় পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা। অবচেতন মনে চিন্তা তরঙ্গগুলো শ্রেণী বিভক্ত হয়, সংরক্ষিত হয় এবং যেকোন প্রয়োজনে চিন্তাগুলোকে ফিরিয়ে আনা যায় বা তোলা যায়। ইহা অনেকটা এক বাক্স চিঠি থেকে দরকারী চিঠিটি তোলার মত।

অবচেতন মনে চিন্তাগুলো নথিভুক্ত হয়, সংরক্ষিত হয় এবং পরবর্তীতে চিন্তাগুলোকে ডাকা যায়। তবে অবচেতন মন সর্বাধিক বেশী সাড়া দেয় সেসব চিন্তা তরঙ্গগুলোর প্রতি যেগুলো প্রচন্ড ইচ্ছা দ্বারা আবৃত।

ইহার সাথে ইচ্ছা অধ্যায়ে দেওয়া নির্দেশনাগুলো বিবেচনা করুন। সেখানে যে নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়েছে তা প্রয়োগ করুন। এতে আপনি বুঝতে পারবেন পরিকল্পনা গঠন এবং অধ্যবসায় পালনের জন্য অবচেতন মনের গুরুত্ব।

অবচেতন মন প্রতি মুহূর্তেই কাজ করে, অবিরতভাবে, না থেমে। ইহা মানুষের সচেতন মন এবং অসীম বুদ্ধিমত্তার মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী মাধ্যম। ইহার দ্বারা সচেতন অংশ থেকে চিন্তাগুলো অসীম বুদ্ধিমত্তার কাছে পৌঁছায় এবং উন্নত ও পুনঃগঠিত হয়ে সৃষ্টিশীল কল্পনা কর্তৃক যেকোন সমস্যার সমাধানের ধারণা নিয়ে আসে।

আপনার অবচেতন মনকে আপনি সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। তবে অবচেতন মনকে সহায়তা করা যায়। কোন পরিকল্পনা, ইচ্ছা বা উদ্দেশ্য দিয়ে অবচেতন মনকে সহায়তা করার একটি পদ্ধতি হচ্ছে স্বপরামর্শ। স্বপরামর্শ অধ্যায়ে বর্ণিত নির্দেশনা গুলো দেওয়া হয়েছে যাতে অবচেতন মনকে প্রভাবিত করা যায়। অবচেতন মন প্রভাবিত হলে ইহা কর্তৃক প্রেরিত ইচ্ছা (তরঙ্গ আকারে) অসীম বুদ্ধিমত্তা হতে পুনঃগঠিত হয়ে এমন ধারণা নিয়ে আসবে যা উক্ত ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপান্তর করতে সক্ষম।

অবচেতন মনের অস্তিত্ব এবং এর সম্ভাবনাগুলোকে একটি বাস্তবতা হিসেবে গ্রহণ করার পর আপনি ইচ্ছা অধ্যায়ের নির্দেশনাগুলোর পূর্ণ তাৎপর্য হৃদয়ঙ্গম করতে পারবেন। আপনি আরও বুঝতে পারবেন যে কেন আপনাকে ইচ্ছাগুলো নির্দিষ্ট ভাবে ও পরিষ্কার করে তৈরী করতে এবং লেখায় রূপ দিতে বলা হয়েছে। আপনি আরও বুঝতে পারবেন যে নিদের্শনাগুলো পালন করার জন্য অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে।

লেখাগুলো একবার পড়ুন, প্রতিদিন পড়ুন, বারবার পড়ুন, এতে আপনি প্রেরণা পাবেন এই সূত্রগুলোকে আপনার বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার অধ্যবসায় পালন করুন, শেষ পর্যন্ত পড়ে যান, ফলে আপনার মাঝে অধ্যবসায়, ধৈর্য্য এবং গঠনমূলক চিন্তা করার অভ্যাস তৈরী হবে

অবচেতন মন হচ্ছে মনের একটি স্থান। ইহা বায়ু পূর্ণ স্থানের মত। এমন স্থান যেখানে বায়ু প্রবেশ করবে অবিরতভাবে, বিশুদ্ধ বা দূষিত যেমন বায়ুই হোক না কেন। তেমনি অবচেতন মন এর স্থান খালি থাকে না। চিন্তা তরঙ্গগুলো অবিরতভাবে এখানে প্রবেশ করে আপনার ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, হতে পারে চিন্তাগুলো নেতিবাচক বা ইতিবাচক। যদি আপনি ইতিবাচক চিন্তা তরঙ্গগুলো স্বপরামর্শের দ্বারা অবচেতন মনে প্রবেশ না করান তবে ইহা নেতিবাচক চিন্তা তরঙ্গগুলো দ্বারা পূর্ণ করবে নিজেকে এবং এগুলোকে বাস্তবে রূপ দিবে।

নেতিবাচক তরঙ্গগুলো অবচেতন মনে যাওয়ার রাস্তা চিন্তা তরঙ্গের সহায়তায় নিশ্চিত করে থাকে। এগুলো নেতিবাচক আবেগগুলোর (ভয়, হিংসা, রাগ) সহায়তায় অবচেতন মনে পৌঁছায়। ইতিবাচকগুলো (ইচ্ছা, আস্থা, গভীর আগ্রহ) প্রবেশ করাতে সহায়তা প্রয়োজন। স্বপরামর্শ সূত্র দ্বারা ইতিবাচকগুলো অবচেতন মনে চিন্তা তরঙ্গ রূপে প্রবেশ করাতে হবে। এজন্য সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পালন করবে- আপনি নিজে। ইহা একটি স্বতন্ত্র আশা রূপে অবচেতন মনে বারবার নির্দেশনা দিয়ে পৌঁছাতে হবে।

আবেগগুলো বা অনুভূতিগুলো অত্যন্ত গুরুত্ববহ যেকোন ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপান্তর করার জন্য। এগুলো একটি মৌলিক উপাদানের মত। রুটিতে যেমন আটা উপাদান হিসেবে রয়েছে তেমনি আবেগগুলো বা অনুভূতিগুলো হচ্ছে চিন্তা তরঙ্গের উপাদান। যা চিন্তা তরঙ্গগুলোকে মৃত অবস্থা থেকে জীবন্ত করে তোলে। এজন্যই মানুষ ঠান্ডা কারণ বা যৌক্তিক কারণ গুলো দ্বারা গঠিত চিন্তা তরঙ্গগুলো অনুযায়ী ক্রিয়া করতে পারে না, যতটা লোকেরা ক্রিয়া করতে পারে আবেগগুলো বা অনুভূতিগুলো মিশ্রিত চিন্তা তরঙ্গগুলোর মাধ্যমে।


আপনি নিজেকে প্রস্তুত করুন। অবচেতন মনকে সহায়তা দ্বারা প্রভাবিত করে ইহাকে কাজে লাগান, যা আপনি ইচ্ছা করেন। চিন্তা করুন, আপনাকে প্রস্তুত করবে আপনার ইচ্ছা। মানুষ হন, জীবনে সাফল্য অর্জন করুন এবং ইহা করতে হলে নিজেকে সাফল্যের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। নিজেকে সাফল্যের জন্য প্রস্তুত করুন, তারপর সাফল্য অবশ্যই আসবে। ইহা নয় যে সাফল্য এলে আপনি প্রস্তুত হবেন। ছাত্র জীবনের পরীক্ষার ব্যাপারটি চিন্তা করুন, প্রস্তুতি নেওয়ার পর আপনি পরীক্ষা দিতে গিয়েছেন এবং ভাল ফলাফল করেছেন। যদি পরীক্ষা দেওয়ার পর প্রস্তুতি নিতে চান, তবে তা মূল্যহীন। ঠিক একই রূপ, সাফল্য অর্জনের পূর্বেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে, একমাত্র এভাবেই আপনি আপনার সাফল্য নিশ্চিত করতে পারেন, অন্যথায় নয়।

ব্যক্তিগত উন্নয়ন – একাদশ অধ্যায়

যৌনশক্তি রূপান্তরের রহস্য

যৌনশক্তি অত্যন্ত ক্ষমতাশালী একটি শক্তি, যা রূপান্তর করে মানবজীবনে সাফল্য অর্জনের জন্য প্রয়োগ করা যায়। ইহাকে রূপান্তর করতে হলে আমাদেরকে রূপান্তরের অর্থ বুঝতে হবে। সোজা ভাষায় রূপান্তর শব্দটির অর্থ হচ্ছে, পরিবর্তন বা একটি পদার্থের অন্য পদার্থে পরিণতি অথবা শক্তির অন্য এক আকারে পরিণত হওয়া।

যৌনানুভূতি মনের একটি অবস্থা তৈরী করে।

এই বিষয়ে অজ্ঞতার কারণে, এই মানসিক অবস্থাটি সাধারণত শরীরগত ভাবেই ঘটে থাকে এবং বেঠিক (সঠিক এর বিপরীত) প্রভাবের দরুন বেশীরভাগ মানুষ যৌন জ্ঞান অর্জন করে শরীর বৃত্তিয় প্রয়োজনে যা মনকে পক্ষপাতদুষ্ট করে। [পক্ষপাতদুষ্ট বলতে বোঝায় সম্পূর্ণ অংশ সম্পর্কে না জেনে শুধু এক অংশের প্রতি ঝোঁক বা প্রবণতা।]

যৌন অনুভূতির তিনটি সম্ভাব্য গঠনমূলক আবশ্যিকতা রয়েছে, এগুলো হচ্ছেঃ

১. মানব জাতিকে বিলুপ্তি হইতে রক্ষা করা।

২. স্বাস্থ্য রক্ষা করা (যেমন একটি আরোগ্য বিদ্যা সম্বন্ধীয় অনুষদে ইহার সমতুল্য কিছু নেই।)

৩. প্রতিভাবান হতে রূপান্তরক মাধ্যম।

যৌনতা (যৌন শক্তি) রূপান্তরের সহজ এবং সাধারণ ব্যাখ্যা আছে। এর মানে, মনের চিন্তাগুলোর মাধ্যমে যা শারীরিক ক্রিয়া ঘটায়, এগুলো দ্বারা অন্য প্রকৃতির চিন্তা গুলোকেও প্রভাবিত করা যায়। অর্থাৎ প্রথম প্রকারের চিন্তাগুলোর প্রভাবে দ্বিতীয় প্রকার চিন্তা সৃষ্টি হতে পারে।

যৌন ইচ্ছা হচ্ছে মানব ইচ্ছাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। ব্যক্তিরা যখন এই ইচ্ছা দ্বারা পরিচালিত হয় তখন গঠন করে তীব্র কল্পনা, সাহস, ইচ্ছাশক্তি, অধ্যবসায় এবং সৃষ্টিশীল ক্ষমতা যা অনেক সময় তাদের কাছে অপরিচিত। যৌন ইচ্ছা এত শক্তিশালী এবং উত্তেজক যে মানুষ ইহা পেতে মুক্তভাবে তার জীবন এবং সম্মান ঝুঁকিতে ফেলতে রাজি। ইহাকে যখন সজ্জিত করে এবং অন্যান্য পথে পরিচালিত করা হয়, এই প্রভাব বিস্তারকারী শক্তি (প্রভাবক) সকল ধরনের তীব্র কল্পনা, সাহস প্রভৃতি তৈরী করতে পারে। এই শক্তিশালী সৃষ্টিশীল ক্ষমতাকে প্রয়োগ করা যায় সাহিত্যে, কলাকৌশলে বা অন্য যেকোন পেশা বা ইচ্ছায়। ইহাকে অবশ্যই জীবনে সাফল্য অর্জনে প্রয়োগ করা যায়।

যৌন শক্তির কোষ গুলোকে ইচ্ছা শক্তিতে রূপান্তর করার অনুশীলন করলে এর পুরস্কার, অনুশীলন প্রচেষ্টার চেয়েও বহু অধিক মূল্যমানের। যৌন প্রতিক্রিয়ার ইচ্ছা আজন্ম এবং প্রাকৃতিক। ইচ্ছাটিকে নিমজ্জিত বা ত্যাগ করা যায় না এবং করা উচিতও নয়। কিন্তু ইহাকে একটি নির্গম-পথ এর মাধ্যমে প্রকাশ হতে দেওয়া উচিত যাতে ইহা ব্যক্তির শরীর, মন এবং চেতনাকে (আত্মাকে) সমৃদ্ধ করতে পারে। যদি ইহাকে এই নির্গম পথ দেওয়া না হয়, রূপান্তরের মাধ্যমে, ইহা নির্গম পথ হিসেবে খুঁজে নেয় শুধুমাত্র শারীরিক পথগুলোর মাধ্যম।

একটি নদীকে হয়ত বাঁধ দেওয়া যায় এবং এর পানিকে একটা সময়ের জন্য নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিন্তু এক পর্যায়ে ইহা শক্তি প্রয়োগ করে হলেও এর একটি নির্গম পথ খুঁজে বের করবে। একই ব্যাপার সত্য যৌন অনুভূতির জন্য। ইহাকে হয়ত একটা সময়ের জন্য নিমজ্জিত এবং নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিন্তু ইহার প্রকৃতিগত কারণেই ইহা যেকোন পথ খুঁজে নেবে বহিঃপ্রকাশের জন্য। ইহা যদি কিছু সৃষ্টিশীল প্রচেষ্টায় রূপান্তর না হয়, ইহা খুঁজে নেবে কোন নিম্ন মূল্যমানের নির্গম পথ।

সেই ব্যক্তি সৌভাগ্যের অধিকারী, যিনি আবিষ্কার করেছেন যে কিভাবে যৌন অনুভূতিকে কিছু সৃষ্টিশীল প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি নির্গম পথ দিতে হয়। এই আবিষ্কারের জন্য তিনি নিজেকে একটি প্রতিভাবান অবস্থায় উন্নীত করেছেন।

বৈজ্ঞানিক গবেষনা এই তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপারগুলো উদঘাটিত করেছেঃ

১. সবচেয়ে সাফল্য অর্জনকারী ব্যক্তিরা হচ্ছেন সেই ব্যক্তিরাই যাদের যৌন প্রকৃতি উচ্চ পর্যায়ে গঠিত। ব্যক্তিরা যারা যৌনতা রূপান্তরের কৌশল শিখেছেন।

২. ব্যক্তিরা যারা মহান সৌভাগ্য গড়েছেন এবং অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন সাহিত্যে, কলা কৌশল, শিল্প প্রতিষ্ঠান, স্থাপত্যবিদ্যা এবং পেশায় তারা প্রভাবিত হয়েছেন একজন নারী দ্বারা।

এই গবেষণা যা অসাধারণ আবিষ্কার করেছে, ইহা দুই হাজার বছরেরও বেশী সময়ে পাওয়া জীবনী ও ইতিহাসের পাতার মাধ্যমে ফল স্বরূপ পাওয়া গেছে। যেখানেই মহান সাফল্য গাঁথায় পুরুষ ও নারীর সম্পর্ক পাওয়া গেছে, ইহা নিশ্চিত ভাবে নির্দেশ করেছে যে তারা উচ্চ মানে যৌন প্রকৃতির অধিকারী।


যৌন অনুভূতি একটি অনিবার্য ক্ষমতা যার বিরুদ্ধে এমন কোন বিপক্ষ নেই। যেন একটি নিথর দেহ। ব্যক্তি যখন এই অনুভূতি দ্বারা চালিত হয় তখন কাজের জন্য একটি উচ্চমানের শক্তির উপহার পায়। এই সত্যটি বুঝুন এবং এই বিবৃতির তাৎপর্য আপনি ধরতে পারবেন যে যৌনতাকে রূপান্তর করে একজন ব্যক্তি প্রতিভাবান অবস্থায় পৌঁছাতে পারে।

ব্যক্তিগত উন্নয়ন – দশম অধ্যায়

“কর্তৃত্বশীল মন” এর ক্ষমতা

সাফল্যের জন্য জীবনে ক্ষমতা সৃষ্টি করা অত্যন্ত দরকারী। তাই এখানে আলোচনা করা হবে যে কিভাবে ক্ষমতা সৃষ্টি করা যায়, আর ক্ষমতা সৃষ্টি করার সর্বোত্তম জানা পথ হচ্ছে কর্তৃত্বশীল মন গঠন এবং এর দল তৈরী করা।

ক্ষমতা হচ্ছে, জ্ঞানকে সংগঠিত এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে নির্দেশিত করা, পরিচালিত করা ও নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছানোর ব্যবস্থা করা। সাফল্য অর্জন করতে হলে দুই বা ততোধিক লোকের সহযোগিতা, প্রত্যেকের চেষ্টার সমন্বয়, চেতনার সমসুর এবং একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সমাপ্তির প্রতি সকলকে একত্রে চলতে হবে। একেই বলে কর্তৃত্বশীল মন এর দল। কর্তৃত্বশীল মন এর ক্ষমতা আপনাকে নিয়ে যাবে সাফল্যের চূড়ায় যেখানে আপনি যেতে ইচ্ছুক।

ক্ষমতা আসে জ্ঞানকে সংগঠিত করায় এবং জ্ঞান আসে যেসব উৎস হতে সেগুলো হলোঃ

ক. অসীম বুদ্ধিমত্তাঃ এই জ্ঞানের উৎস হতে জ্ঞান গ্রহণ করতে হলে সৃষ্টিশীল কল্পনার সহায়তা নিতে হবে। (সৃষ্টিশীল কল্পনা সম্পর্কে কল্পনা অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।)

খ. অর্জিত অভিজ্ঞতাঃ ইহা পেতে পারেন যেকোন গ্রন্থাগারে যেখানে মানুষের অভিজ্ঞতাগুলো নির্দিষ্ট বিষয়ে সজ্জিত করে রাখা হয়েছে। বিদ্যালয়গুলোতেও অর্জিত অভিজ্ঞতার জ্ঞান শ্রেণী এবং সংগঠিত আকারে সজ্জিত করা হয়েছে।

গ. পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাঃ ব্যক্তি জীবনের প্রাত্যহিক চলার পথে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে পর্যবেক্ষণ করে প্রাপ্ত জ্ঞান এবং বৈজ্ঞানিক পন্থায় গবেষণা হতে প্রাপ্ত জ্ঞান, যা ব্যক্তি শ্রেণীভাগ এবং সংগঠিত করে প্রতিনিয়ত নতুন জ্ঞানের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়। এখানেও প্রায়ই সৃষ্টিশীল কল্পনার ব্যবহার করতে হয় যদি প্রাপ্ত তথ্য হতে সন্তোষজনক উত্তর না পাওয়া যায়।

এই তিনটি জ্ঞানের উৎস হতে জ্ঞান গ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যদি একজন তার ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপান্তর করতে চায়। অধিকিন্তু (আরও) এই তিনটি উৎস হতে একজন ব্যক্তি স্বতন্ত্রভাবে জ্ঞান অর্জন, সংগঠন ও পরিচালিত করা কঠিন। যদি আপনার পরিকল্পনা হয় বিশাল তবে আপনার একটি কর্তৃত্বশীল মন এর দল গঠন করে একাধিক ব্যক্তির সহায়তা নিতে হবে উক্ত উৎসত্রয় হতে জ্ঞান অর্জনের জন্য।

কর্তৃত্বশীল মন বলতে বোঝায়, দুই বা ততোধিক লোকের মাঝে চেতনার সমসুর সৃষ্টি করা একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য লাভের জন্য, জ্ঞান ও প্রচেষ্টার সমন্বয় সাধন। একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য এবং একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করার জন্য নিজের মন এর ওপর কর্তৃত্ব করা এবং এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে নেওয়া যাদের চেতনায় একই নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য লাভের ইচ্ছা আছে এবং এদের সকলেই একই চেতনার সমসুরে গাঁথা।

একজন ব্যক্তি স্বতন্ত্রভাবে মহান সাফল্যের অর্জন করতে পারে না কর্তৃত্বশীল মন এর অধিকারী না হয়ে। পরিকল্পনা করুন, অধ্যবসায় পালন করুন, জ্ঞানকে সংগঠিত ও বুদ্ধিমত্তার সাথে নির্দেশিত করুন এবং কর্তৃত্বশীল মন এর দল গঠন করুন, তবেই সফল হবেন। যদি আপনি কর্তৃত্বশীল মন এর দল গঠন করতে আগ্রহী না হন তবে আপনি সাফল্যের শুধুমাত্র অর্ধেক পথেই পৌঁছাতে পারবেন, অধিকিন্তু স্মরণ রাখবেন সাফল্যের পথে যত বাঁধাই আপনি অতিক্রম করুন না কেন, শেষ প্রান্তে না পৌঁছালে সফলতা নিশ্চিত হবে না। আর একটি ইচ্ছার শেষ প্রান্তে পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা করে যাওয়াটাই হচ্ছে সফলতা।

আপনাকে বুঝতে হবে দুইটি মানুষের মনের মধ্যে সমসুর তৈরীর অস্পর্শনীয় বা অদৃশ্য চেতনা শক্তিকে। ইহা অনুভবযোগ্য শক্তি। এই শক্তিকে কর্তৃত্বশীল মন তৈরীতে প্রয়োগ করুন। কর্তৃত্বশীল মন সূত্রের দুইটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এখানে বলা হল। একটি হচ্ছে অর্থনৈতিক প্রকৃতির এবং অন্যটি হচ্ছে মানসিক প্রকৃতির। অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যটি হচ্ছে স্পষ্ট। আপনি অর্থনৈতিক সুবিধা দিয়ে উপদেষ্টা, পরামর্শক, গবেষক এবং কর্মচারী দ্বারা নিজেকে ঘিরে রাখতে পারেন যারা একই চেতনার সমসুরে আপনাকে হৃদয় দিয়ে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। ইহা প্রায় সকল মহান সৌভাগ্যের ভিত্তি। ইহা অনুধাবন করুন, ইহা নিশ্চিত ভাবে আপনার অর্থনৈতিক অবস্থা নির্দিষ্ট করবে।

কর্তৃত্বশীল মন সূত্রের মানসিক বৈশিষ্ট্যটি বর্ণনা করা কঠিন, বোঝানো আরও কঠিন। ইহা মানুষের আত্মিক শক্তিরগুলোর সাথে সম্পৃক্ত। ইহা এমন যে, আপনি শুধু অর্থনৈতিক সুবিধা দিয়ে আপনার দলের সদস্যদের সাথে সম্পৃক্ত নন, আপনার আত্মিক শক্তিগুলো দিয়েও তাদের সাথে সম্পৃক্ত।

এই মহাজগত সৃষ্টি হয়েছে শুধুমাত্র দুইটি উপাদান দিয়ে, শক্তি এবং পদার্থ। ইহা আমরা সকলেই জানি যে পদার্থ অণু আকারে, পরমাণু ও ইলেকট্রন আকারে ভাগ করা যায়। কিছু পদার্থ আছে গলানো যায়, আলাদা করা যায় এবং বিশ্লেষণ করা যায়।

        তেমনি, শক্তিরও ভাগ রয়েছে।

মানব মন শক্তির একটি প্রকার। এর একটি অংশ পরিবেশের সাথে আত্মিকভাবে সম্পৃক্ত। যখন দুই ব্যক্তির মনগুলো চেতনার সমসুরে সমন্বিত হয়, প্রত্যেক মনের শক্তির আত্মিক ভাগগুলো একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গঠন করে, যা তৈরী করে কর্তৃত্বশীল মন এর মানসিক অবস্থা।


একজন ব্যক্তির মস্তিষ্ক একটি বিদ্যুৎ কোষের (ব্যাটারী) মত। একটি বিদ্যুৎ কোষে শক্তির গাঠনিক একক হিসেবে থাকে বিদ্যুৎ, তেমনি মানব মস্তিষ্কে প্রকৃতির গাঠনিক একক, শক্তি রূপে রয়েছে চিন্তা। আমরা সবাই জানি যে, একটি বিদ্যুৎ কোষের চেয়ে একাধিক বিদ্যুৎ কোষের সমন্বিত শক্তি অনেক বেশি এবং একটি স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ কোষ তার উল্লেখিত শক্তির একাংশই দিতে পারে। একইরূপ, একটি স্বতন্ত্র ব্যক্তির মস্তিষ্ক যে পরিমাণ চিন্তা উৎপন্ন করতে পারে তারচেয়ে বহুলাংশে বেশী পরিমাণে চিন্তা শক্তি উৎপন্ন করতে পারে একাধিক ব্যক্তির সমন্বিত মস্তিষ্কগুলো, যা কর্তৃত্বশীল মন কতৃর্ক অর্জিত হয়।

ব্যক্তিগত উন্নয়ন – নবম অধ্যায়

অধ্যবসায়

অধ্যবসায় “সাফল্য দর্শন” এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। ইহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় একটি ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে। ইহার মূল ভিত্তি হচ্ছে ইচ্ছাশক্তি। ইচ্ছাশক্তি অধ্যবসায় পালনে প্রেরণা যোগায় এবং একটি জ্বলন্ত ইচ্ছা মানুষকে অধ্যবসায়ী করে তোলে।

ইচ্ছাশক্তি এবং আকাঙ্ক্ষা একটি শক্তিশালী জোড়া যা অধ্যবসায় গঠনে সহায়তা করে। আপনার ইচ্ছাশক্তিকে আকাঙ্ক্ষা দ্বারা মিশ্রিত করুন, ইহা আপনাকে অধ্যবসায় পালনে উৎসাহ দিবে। বেশীর ভাগ লোকেরা যারা জীবনে সফল হয়েছেন তারা তাদের ইচ্ছাগুলো বাস্তব করেছেন অধ্যবসায় দ্বারা, তাদের সফল হওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছা তাদেরকে সকল নেতিবাচক উৎস হতে দূরে থাকতে সহায়তা করেছে, অধ্যবসায় পালনে উৎসাহী করেছে।

বেশীর ভাগ লোক যারা তাদের ইচ্ছাগুলো বাস্তবে রূপান্তর করতে চেষ্টা করেন, তারা প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পর ইচ্ছাগুলো জলে ফেলে দেন, এরা কখনই জয়ী হতে পারে না কারণ তারা জয়ী হতে অধ্যবসায়ী নন। খুব অল্প সংখ্যক লোকই এই “সাময়িক বাঁধা” অতিক্রম করে নিজের ইচ্ছাগুলোকে পূরণ করেন। এরাই সফল। তারা অধ্যবসায় পালন করে নিজেদের সাফল্য নিশ্চিত করেন এবং প্রমাণ করেন, যেকোন ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপান্তর করা যায়।

ইহা জানা ব্যাপার যে, কাঁচা লোহা থেকে ইস্পাত সৃষ্টি করা হয়। একই রূপ অধ্যবসায়ের গুণ হল ইহা ব্যক্তির চরিত্রকে লোহা থেকে ইস্পাতে পরিণত করে, যা দ্বারা সকল সাময়িক বাঁধা, পরাজয় হার মানতে বাধ্য হয় এবং ব্যক্তির ইচ্ছার জয় নিশ্চিত হয়।

আপনার ব্যক্তিগত উন্নয়ন বা যেকোন কাজে সাফল্য অর্জন নিশ্চিত করতে আপনার প্রথম পরীক্ষা হবে অধ্যবসায় পালন করা। ধৈর্য্য সহকারে সবগুলো লেখা পড়ে যান সমাপ্তি পর্যন্ত। ইচ্ছা অধ্যায়ে লেখা নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করুন। সাফল্য নিশ্চিত করতে প্রথমেই আপনার কর্মে অধ্যবসায় প্রয়োগ করতে হবে নতুবা আপনি প্রতি একশজন ব্যক্তির মধ্যে একজন হবেন যার একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে কিন্তু ইহা অর্জনের জন্য ইচ্ছা ও অধ্যবসায়ের অভাব।

আপনি এই মুহুর্ত হতেই সর্তক হন। আপনি আপনার জীবনে সাফল্য অর্জনের ইচ্ছাকে আরও গুরুতর ভাবে দেখুন। ইহা আপনার জীবন এবং শুধুমাত্র একান্তই আপনার। সিদ্ধান্ত নিন আপনি জীবনে সফল হয়ে বাঁচতে চান নাকি ব্যর্থ হয়ে মরতে চান। কারণ হাজারো মানুষ যারা ব্যর্থ হয়ে জীবন যাপন করে, তারা না তাদের ইচ্ছার প্রতি নজর দেয়, না অধ্যবসায় পালনের প্রতি। তারা শুধু সফল হতে চায় কিন্তু চাওয়া কখনও আপনাকে সফল করবে না, যদি তা একটি জ্বলন্ত ইচ্ছায় পরিণত না হয়। জ্বলন্ত ইচ্ছাকে বজায় রাখুন, অধ্যবসায় পালন করুন এবং সফল হন। আর যারা ব্যর্থ হয় তাদের বেশীর ভাগই ব্যর্থ হয়ে থাকে অধ্যবসায় পালন না করার ফলে। অধ্যবসায়ের অভাব ব্যক্তির একটি সাধারণ দূর্বলতা। ইহার উপর কর্তৃত্ব করার উপায় হচ্ছে একটি জ্বলন্ত ইচ্ছা, যা প্রতিনিয়ত শক্তি যোগায় এগিয়ে যাওয়ার।

সৌভাগ্য আকর্ষণ করে সেসব লোকদের যারা সৌভাগ্যের জন্য প্রস্তুত। ইহা অভিকর্ষ শক্তির মত যার সহায়তায় পানি হাজারো মাইল প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রে পৌছায়। আপনিও সেই শক্তির সহায়তা পেতে পারেন যদি আপনি সাফল্য অর্জনে বদ্ধ পরিকর হন। এখানে আপনি সকল উৎসাহ পাবেন যার “সমন্বয়” সাধন করে আপনি আপনার যেকোন ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপান্তর করতে পারবেন।

অধ্যবসায় পালন করতে স্ব-পরামর্শ এবং অবচেতন মন অধ্যায়ের নির্দেশনাগুলো পালন করুন। এই নিয়মগুলো অনুসরণ করুন যতক্ষণ না ইহা আপনার মনের একটি স্থায়ী অভ্যাসে পরিণত হয়। ব্যক্তির অবচেতন মন প্রতি মুহুর্তে কাজ করে, রাতে ও দিনে সারাক্ষণ। অবচেতন মনকে প্রতিনিয়ত স্মরণ করিয়ে দিন, আপনি যা ইচ্ছা করেন।

নিয়মগুলো পালনে অবিরত প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। সাময়িক প্রচেষ্টা আপনার কোন কাজে আসবে না। আপনাকে সবগুলো নিয়ম পূর্ণরূপে প্রয়োগ করতে হবে যতক্ষণ না এগুলো একটি স্থায়ী অভ্যাসে পরিণত হয়। একমাত্র আপনার অধ্যবসায়ী প্রচেষ্টাই পারে আপনাকে সাফল্যের জন্য প্রস্তুত করতে।

এই অধ্যায়ের পূর্ণ তাৎপর্য উদ্ধার করুন এবং অনুধাবন করুন সাফল্য অর্জনের জন্য অধ্যবসায়ের গুরুত্ব। যদি বুঝতে পারেন তবে আপনার অভ্যন্তর হতে, মন থেকে শক্তি পাবেন যা আপনার জ্বলন্ত ইচ্ছা পূরণ করতে অধ্যবসায়ী করে তুলবে।

অধ্যবসায় মনের একটি অবস্থা। ইহা মনের অন্যান্য অবস্থার মত চাষযোগ্য। অধ্যবসায় চাষ করুন এবং ব্যর্থতার উপর কর্তৃত্ব করুন, ব্যর্থতাকে বদলে দিন জয়ে। ইহা কোন সমস্যাই না যে আপনি কতবার পড়ে গেছেন, অবশেষে সফল তারাই হন যারা পুনরায় উঠে দাঁড়ান এবং চলা শুরু করে। তারা মইয়ের মাথায় উঠেন, সাফল্যের চূড়ায় পৌছান এবং বিজয়ী রূপে পর্দাপন করেন।


“অধ্যবসায়” অধ্যায় ছেড়ে যাওয়ার পূর্বে চিন্তা করুন আপনার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের প্রতি, ইচ্ছার প্রতি, আত্ম-নির্ভরশীলতা অর্জন করুন স্ব-পরামর্শ দ্বারা, আপনার পরিকল্পনা গুলো নির্দিষ্ট করুন, লিখে রাখুন এবং প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করুন। কারণ যে পরিকল্পনা “জানা” এর পরিবর্তে “অনুমান” নির্ভর তা কখনও পূরণ হয় না, আর পরিকল্পনার প্রতিটি তথ্য সম্পর্কে জানা হচ্ছে প্রকৃত জ্ঞান।

ব্যক্তিগত উন্নয়ন – অষ্টম অধ্যায়

সিদ্ধান্ত

সিদ্ধান্ত, যে ব্যক্তি সিদ্ধান্ত নেয় যে সে জীবনে সফল হবে, তার যেকোন ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপান্তর করবে সে সাধারণত তা করে থাকে। যদি আপনি দ্বিধা করেন তবে আপনার পরিকল্পনা পূরণে আপনি শতভাগ চেষ্টা দিতে সক্ষম হবেন না এবং ব্যর্থ হবেন।

দ্বিধা আমাদের একটি সাধারণ শত্রু যা বেশীরভাগ লোকের মাঝেই পাওয়া যায়। ইহার ওপর আমাদের জয় আনতে হবে। দ্বিধার ওপর কর্তৃত্ব করার সূত্রটি হচ্ছে সিদ্ধান্ত। সেখানে কোন দ্বিধা থাকতে পারে না যখন আপনি নির্দিষ্টভাবে  সিদ্ধান্ত নেবেন।

পৃথিবীর মহান সাফল্যের অধিকারী ব্যক্তিগণ ও নেতাগণ দ্রুত ও নির্দিষ্টভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভ্যাসের অধিকারী। তারা সকলেই তাদের সিদ্ধান্তে পৌছান দ্রুততার সাথে এবং এগুলোকে পরিবর্তন করেন ধীরভাবে। কিন্তু সাধারণ লোকেরা যারা এদের মত মহান সাফল্যের অধিকারী নন, তারা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্তে পৌছান ধীরভাবে এবং সিদ্ধান্তগুলো প্রায়ই পরিবর্তন করেন এবং দ্রুততার সাথে পরিবর্তন করেন। আরেক ধরনের লোক রয়েছে যারা দ্রুততার সাথে সিদ্ধান্তে পৌঁছান কোন তথ্য ও সম্ভাবনা চিন্তা না করেই এবং ইহা দ্রুততার সাথেই পরিবর্তন করেন। এরাও মহান সাফল্যের অধিকারী হতে পারেন না কারণ তারা প্রকৃত সমস্যা এবং এর সম্ভাব্য সমাধানগুলো মাঝে উৎকৃষ্ট সমাধান চিন্তা করে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ।

বেশীরভাগ মানুষ তাদের কাজে ব্যর্থ হন কারণ তারা সাধারণত, সহজেই অপর ব্যক্তিদের মতামত দ্বারা প্ররোচিত হন। তারা জল্পনাকারী (বাজে গল্পকারী) প্রতিবেশী, আত্মীয়, স্বজন, বন্ধুদের অনুমতি দিয়ে থাকেন তাদের জন্য চিন্তা করে দিতে এবং মতামত দিতে। মতামত হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সস্তা বিষয়, যা সকলেই দিতে আগ্রহী, যারা ইহা নিতে ইচ্ছুক। আপনি আপনার কর্মে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রাপ্ত তথ্য, উপাত্ত, সুযোগ, ফলাফল এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। অথচ লোকেরা তাদের সহায়তা নেন যারা উক্ত কর্মটি সম্পর্কে মূর্খ এবং জল্পনাকারী।

যদি আপনি মতামতগুলো গ্রহণ করেন তবে আপনার নিজস্ব কোন ইচ্ছা থাকবে না।

নিজের পরামর্শদাতা নিজেই হোন। এখানে বর্ণিত সূত্রগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করুন, আপনার কর্ম সম্পর্কে পরিপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করুন, আপনিও দ্রুত ও নির্দিষ্টভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। আপনার আত্মবিশ্বাসে অন্য কোন ব্যক্তিকে স্থান দিবেন না, শুধুমাত্র আপনার কর্তৃত্বশীল মন এর দলের সদস্যদের ব্যতীত। এই দলের সদস্যদের নির্বাচন করুন এমন যে তারা আপনার সিদ্ধান্তগুলো অনুধাবন করতে সক্ষম এবং আপনার প্রতি সহানুভূতিশীল, যারা সাময়িক বাঁধায় হার মানে না।

ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা আত্মীয়রা ইহা নাও করতে পারে। প্রায় সময় দেখা যায়, বেশীরভাগ লোকেদের ইচ্ছাগুলো অঙ্কুরেই নষ্ট হয় আত্মীয়দের মতামতগুলো বা ঠাট্টাগুলো দ্বারা। অনেক ব্যক্তিই এই ধরনের হীনমন্যতায় ভোগেন তাদের সারা জীবন কারণ কিছু মূর্খ ব্যক্তি তাদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করেছে মতামত বা ঠাট্টা দ্বারা।

আপনার নিজের একটি মস্তিষ্ক আছে ও একটি মন আছে। এগুলোকে কাজে লাগান এবং আপনার প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিন। যদি অপর কোন ব্যক্তি থেকে কোন ব্যাপার বা তথ্য জানতে হয় তবে নিজের উদ্দেশ্য প্রকাশ না করে তা জানার চেষ্টা করুন।

ইহা মানুষের একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, সে বাহ্যিক ভাবে চাতুর্য বা জ্ঞানী হওয়ার ছদ্মবেশ ধারণ করে বোঝাতে চায় যে তাদের অনেক জ্ঞান আছে, তারা অনেক বেশি বোঝে। স্মরণ রাখবেন, যারা কম বোঝে তারা বেশি কথা বলে এবং কম শোনে। যদি আপনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চান তবে আপনার মুখ বন্ধ রাখুন এবং চোখ কান খোলা রাখুন। আপনি যদি শোনার চেয়ে বেশি কথা বলেন তবে আপনি অনেক প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জনের থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন, অধিকিন্তু আপনার উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা উন্মুক্ত করার ফলে লোকেরা আপনাকে পরাজিত করে বিশেষ আনন্দ নেবে কারণ তারা আপনাকে হিংসা করে।

আপনি বলার পূর্বে দুইবার চিন্তা করুন, আপনি যা বলতে যাচ্ছেন তা বলা ঠিক হবে কি না।

একটি সিদ্ধান্তে মুক্তি বা মৃত্যু

সিদ্ধান্তে উপর অটল থাকুন। এজন্য আপনার দরকার হবে সাহস। সিদ্ধান্তকে সম্পন্ন করতে আত্মবিশ্বাসী ও অধ্যবসায়ী হোন। মানব সভ্যতা টিকে আছে সিদ্ধান্তের ওপর, আপনার আশেপাশে দৃশ্যমান সবই সিদ্ধান্তের ফসল। লোকেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তা পূরণ করার সাহস দেখিয়েছেন বলেই আমরা আজ বহুতল ভবনে বাস করি, এমনকি আমাদের শরীরের পরিধেয় পোশাকও সিদ্ধান্তের ফসল।

সক্রেটিস বিষ ভরা পেয়ালা পান করে মৃত্যু বরণ করতে সিদ্ধান্ত নেন তবুও তিনি তার ব্যক্তিগত বিশ্বাস পরিবর্তন করেন নি। ইহা ছিল একটি সাহসী সিদ্ধান্ত। ইহা বুঝতে মানুষের এক হাজার বছর সময় লেগেছে, মানুষকে জাগিয়ে তুলেছে এবং দিয়েছে মুক্তভাবে চিন্তা করার এবং বলার স্বাধীনতা।

যিনি দ্রুত ও নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেন তিনি জানেন কোথায় যাচ্ছেন। আপনি সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করলে উক্ত স্থানে সিদ্ধান্তহীনতা প্রবেশ করবে। আপনি কোথায় যাবেন তা কল্পনা করতে পারবেন না, কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত পাবেন না এবং পরিকল্পনা ব্যর্থ হবে। তাই সিদ্ধান্ত নিন, আপনার পরিকল্পনা অধ্যবসায়ের সাথে পালন করুন এবং সফল হোন।


দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভ্যাস গঠন করুন। ইহা অন্যান্য মানসিক গুণাবলীর মত যা একজন ব্যক্তি জন্ম থেকে নিয়ে আসে না বরং জন্ম গ্রহণ করার পর আপন জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়ে গঠন করতে হয়। আপনার ইচ্ছা সম্পর্কে নির্দিষ্ট হোন, প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করুন, পরিকল্পনা সৃষ্টি করুন, সিদ্ধান্ত নিন, অধ্যবসায় পালন করুন এবং যে কোন ইচ্ছাকে আপনি বাস্তবে রূপান্তর করতে পারবেন। আপনার প্রতিদিনের কাজে এগুলো প্রয়োগ করুন এবং অভ্যাস গড়ে তুলুন, এতে আপনার জয়ী হওয়ার অভ্যাস সৃষ্টি হবে। যে ব্যক্তি জয়ী হওয়ার অভ্যাস গঠন করে তিনি পরাজয়ের মত সাময়িক বাঁধা অতিক্রম করেই জয়ী হন। সিদ্ধান্ত নিন জয়ী হওয়ার, সিদ্ধান্ত নিন জীবনে সফল হওয়ার।

ব্যক্তিগত উন্নয়ন – সপ্তম অধ্যায়

সংগঠিত পরিকল্পনা

ব্যক্তিগত উন্নয়ন, জীবনে সাফল্য অর্জন বা অন্য যে কোন ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপান্তর করতে হলে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিকল্পনা, আর এই পরিকল্পনাকে বাস্তব করতে হলে একে হতে হবে সংগঠিত। একটি সংগঠিত পরিকল্পনা তৈরী করতে আপনি যে কাজ করবেন তা সম্পর্কে পূর্ণ তথ্য ও সম্ভাবনাকে জানুন, প্রতিটি সুযোগ ও ঝুঁকি লিখে রাখুন যে আপনি কোনটি গ্রহণ করবেন এবং কোনটি এড়িয়ে যাবেন।

পরিকল্পনাকে বাস্তবে গ্রহণযোগ্য করতে এই নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করুন। নির্দেশনাগুলো বুঝতে মনোযোগী হন, যদি আপনি সাফল্য অর্জন করতে চান। এগুলো হচ্ছেঃ-

(ক) একটি দল গঠন করুন, আপনার যতজন লোক দরকার তাদের নিয়ে। আপনার পরিকল্পনাকে পূরণ করতে কর্তৃত্বশীল মন এর দল তৈরী করুন, দলগতভাবে কাজ করুন। (কর্তৃত্বশীল মন সম্পর্কে পরবর্তী লেখায় আলোচনা করা হয়েছে।)

(খ) আপনার কর্তৃত্বশীল মন এর দল গঠন এর পূর্বে চিন্তা করে নিন যে দলের প্রত্যেক সদস্যকে আপনি তাদের শ্রমের বিনিময়ে কি দিবেন।

(গ) কর্তৃত্বশীল মন এর সদস্যদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। কমপক্ষে সপ্তাহে দুই বার সাক্ষাৎ করুন এবং তাদের সাথে প্রতি সাক্ষাতে নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন।

(ঘ) আপনার কর্তৃত্বশীল মন এর দলের সদস্যদের মধ্যে সমতান বজায় রাখুন। একে অপরের সাথে সমতান অর্থাৎ সম্পর্কের সহজবোধ্যতা, সমসুর বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কর্তৃত্বশীল মন এর দলের সদস্যদের মধ্যে সমতান বজায় রাখতে পারার সক্ষমতা নির্ধারণ করবে আপনার পরিকল্পনার সফলতা বা ব্যর্থতা।

আপনাকে স্মরণ রাখতে হবে যে আপনার পরিকল্পনাটি হতে হবে নিখুঁত, ভুলহীন। আপনার পরিকল্পনার উপর নির্ভর করে আপনার সফলতা। আপনার কর্তৃত্বশীল মন এর দলের সদস্যদের সাথে সমতান বজায় রাখুন। আপনার পরিকল্পনায় তাদের সহযোগিতা নিন। দলের অন্যান্য সদস্যদের জ্ঞান, বুদ্ধি, অভিজ্ঞতা, কল্পনার  সামর্থ্যের সুবিধা নিন।

কোন স্বতন্ত্র ব্যক্তির পক্ষে মহান সাফল্য অর্জন সম্ভব নয় যদি তিনি অপর ব্যক্তিদের সহায়তা না নেন। পৃথিবীর সফল ব্যক্তিগণ সকলেই সাফল্য অর্জন করেছেন তাদের কর্তৃত্বশীল মন এর দলের সদস্যদের দ্বারা। আপনিও এই সুযোগ নিন এবং নিজেকে করে তুলুন মহান সাফল্যের অধিকারী।

আপনার ইচ্ছা আছে নিজ জীবনে সফল হওয়ার তাই চিন্তা করুন, ইচ্ছাকে বজায় রাখুন, পরিকল্পনা সংগঠিত করুন এবং পরিকল্পনাকে অধ্যবসায়ের সাথে অনুসরণ করুন। আপনি সফল হবেন। প্রথম পরিকল্পনা যদি ব্যর্থ হয় তবে বুঝবেন যে ইহা সাময়িক বাঁধা, আপনার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে আপনি ব্যর্থ নন, আবার নতুন পরিকল্পনা সৃষ্টি করুন। বেশীরভাগ মানুষ যারা নতুন পরিকল্পনা সৃষ্টি করতে পারে না, ব্যর্থতার পর তারা জীবনে কখনও সফলতার সম্মুখীন হয় না।

কোন ব্যক্তিই কোন কাজে কখনও হেরে যায় না, যতক্ষণ না সে তার নিজ মনে কাজটি ত্যাগ করে। এই ব্যক্যটি ভালো করে খেয়াল করুন। মানুষ কখনও হেরে যায় না, যদি সে পরাজিত হয় তবে তার সূচনা হয় তার চিন্তা থেকে, মন থেকে। ব্যক্তির মন কাজটি ত্যাগ করে।

অনুপ্রেরণা নিন এবং আপন মনে বলুন আমি পারবো। নিজ মনকে জয়ের প্রতি আসক্ত করুন। আপনার ব্যক্তিগত সেবাগুলোকে কাজে লাগান, সম্ভাব্য সকল পথে। আপনার অভ্যন্তরের সম্পদকে চিনুন, বুঝুন এবং এদেরকে ঠিকভাবে কাজে লাগান এবং আপন পেশায় নেতৃত্ব দিন।

নেতৃত্ব আপনার কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের চূড়ায় আপনাকে পৌছে দিবে। পৃথিবীর সকল সফল ব্যক্তিই ছিলেন তাদের নিজ নিজ পেশায় নেতা, তারা তাদের পেশাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং নিজেকে নিয়ে গেছেন সুমহান উচ্চাতায়। প্রথম ধাপেই সিদ্ধান্ত নিন যে আপনি আপনার পেশায় একজন নেতা হতে চান নাকি অনুসারী হিসেবেই থাকতে চান। এদের মধ্যে বিনিময় মূল্য খুবই বিশাল। একজন নেতা যে বিনিময় মূল্য পাওয়ার অধিকারী তা যৌক্তিক ভাবে একজন অনুসারী আশা করতে পারেন না।


একজন অনুসারী হওয়া অসম্মান জনক নয়। অপরপক্ষে ইহাতে কোন খ্যাতিও নেই। বেশির ভাগ মহান নেতারা শুরু করেছেন অনুসারী থেকেই। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, যে ব্যক্তি একজন নেতাকে বুদ্ধিমত্তার সাথে অনুসরণ করতে পারে না সে কখনও দক্ষ নেতা হয়ে উঠতে পারে না। একজন বুদ্ধিমান অনুসারী নেতার কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করে নেতৃত্বের গুণাবলী গঠন করে এবং একজন যোগ্য ও দক্ষ নেতা হয়ে ওঠে।

ব্যক্তিগত উন্নয়ন – ষষ্ঠ অধ্যায়

কল্পনা

কল্পনা হচ্ছে মনের কর্মঘর। এখানে চিন্তা তরঙ্গগুলো নিয়ে কাজ করা হয়, পরিকল্পনা করা হয়, সুবিধা, অসুবিধা বিবেচনা করে পরিকল্পনায় শর্ত যোগ বা বিয়োগ করা হয়। এই কর্মঘরে চিন্তা তরঙ্গের একটি বীজকে পর্যাপ্ত মাটি, পানি, বাতাস, আলো দিয়ে বড় করার প্রক্রিয়া চলে।

বলা হয়ে থাকে যে, একজন ব্যক্তি যা কল্পনা করতে পারে তাই সে সৃষ্টি করতে পারে। ইহার বাস্তব প্রমাণ মানব সভ্যতার প্রতিটি সৃষ্টিশীল কর্মেই রয়েছে। সাধারণত ব্যক্তিগণ যখন ছবি আঁকেন তখন কল্পনার ব্যবহার সরাসরি ব্যবহার করে থাকেন।

মানুষ আকাশে উড়ার কল্পনা করেছিল। তাই সে আজ বাতাসের মত হাল্কা বস্তুর ওপর নির্ভর সৃষ্টি করেছে উড়োজাহাজ, যা তাকে সবচেয়ে দ্রুত গতির পাখির চেয়েও বেশি দ্রুত উড়ে যাওয়ার গতি দিয়েছে। মানুষ প্রকৃতির ঝড়, বৃষ্টি থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য নিরাপদ আশ্রয় তৈরীর কল্পনা করেছিল, যার বাস্তব প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ ভবনগুলো। এগুলো যদি ব্যক্তিরা কল্পনা না করতো তবে আমরা এর কিছুই বাস্তবে দেখতাম না।

        কল্পনা অনুষদ দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথমটি সমন্বয় কল্পনা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে সৃষ্টিশীল কল্পনা।

সমন্বয় কল্পনাঃ কল্পনা অনুষদের যে ভাগ অভিজ্ঞতা, বাহ্যিক দৃষ্টি দ্বারা প্ররোচিত হয়ে কাজ করে তা সমন্বয় কল্পনা। ইহা প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে, সমন্বয় সাধন করে ও ফল প্রকাশ করে। ইহা ব্যক্তির সচেতন অংশ এবং ব্যক্তিরা সকলেই ইহার সাথে পরিচিত। ইহাকে আবিষ্কারগণ ব্যবহার করেন তাদের প্রাপ্ত তথ্য হতে ফলাফল লাভের জন্য। কিন্তু তারা ব্যতিক্রমী যারা সৃষ্টিশীল কল্পনার পথে চলেন কারণ তারা তাদের সমাধান সমন্বয় কল্পনায় পান না।

সৃষ্টিশীল কল্পনাঃ যারা তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য মনের সচেতন অংশকে যোগাযোগ করান অসীম বুদ্ধিমত্তার সাথে, সৃষ্টিশীল কল্পনার মাধ্যমে তারা উদ্ভাবন করেন তাদের সমস্যা সমাধানের নতুন পথ। এরাই হচ্ছেন সৃষ্টিশীল কল্পনার প্রয়োগকারী, উদ্ভাবক।

সৃষ্টিশীল কল্পনার মাধ্যমেই মনের সচেতন অংশ সরাসরি যোগাযোগ করে অসীম বুদ্ধিমত্তার সাথে। এই অংশেই উৎসাহগুলো বা অপমানগুলো ক্রিয়া করে।

এই অংশ কাজ করে যখন ব্যক্তি মনের সচেতন অংশ অধিক দ্রুত গতিতে আলোড়িত হয়। এই আলোড়ন সৃষ্টি সম্ভব ব্যক্তির একটি শক্তিশালী ইচ্ছা দ্বারা। একটি নির্দিষ্ট ইচ্ছা মনের সৃষ্টিশীল কল্পনাকে বাধ্য করে ইচ্ছা পূরণের জন্য এক বা একাধিক নির্দিষ্ট পরিকল্পনা উদ্ভাবন করতে।

সৃষ্টিশীল কল্পনা আরো প্রখর ও ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে প্রয়োগ দ্বারা। যত বেশি ইহা ব্যবহার করা হয় ইহা তত বেশি কার্যকরী হয়ে ওঠে। ইহাকে পুনরায় চিন্তা করুন, চিন্তা করুন সৃষ্টিশীল কল্পনা সম্পর্কে যদি আপনি ইহা অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে রাখেন তবে আজ, এখনই একে কাজে লাগান, প্রয়োগ করুন এবং ধীরে ধীরে অনুশীলন দ্বারা আপনিও বাস্তবে রূপান্তর করতে পারবেন আপনার যে কোন ইচ্ছা।

ইচ্ছা হচ্ছে একটি চিন্তা বা তরঙ্গ। ইহা উৎপন্ন হয় এক সেকেন্ড বা তারও কম সময়ে। ইহা মেঘ বা কুয়াশার মত, অস্পষ্ট, অনুভবনীয়। ইহাকে বাস্তবে পরিণত করতে হলে বা এর সমতুল্যে রূপান্তর করতে হলে ইহার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। ইচ্ছা একটি বিমূর্ত ধারণা যার কোন মূল্য নেই যদি ইহা বাস্তবে রূপান্তরিত না হয়। একে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে হলে সবচেয়ে বেশি আপনাকে প্রয়োগ করতে হবে সমন্বয় কল্পনার। কিন্তু এমন সময় আসবে যখন সমন্বয় কল্পনায় সমাধান পাওয়া যাবে না, তখন ইহা সৃষ্টিশীল কল্পনার প্রয়োগ দাবি করবে।

প্রথমবার সৃষ্টিশীল কল্পনা প্রয়োগে ব্যর্থ হলেও হতাশ হবেন না। আপনার সৃষ্টিশীল কল্পনা অংশ বহুদিন প্রয়োগ না করার ফলে প্রথমে ধীরে ধীরে কাজ করবে। আপনার প্রয়োগ যত বেশি হবে ইহা তত দ্রুত সমস্যা সমাধানে ধারণা প্রদান করে সাড়া দিবে।


ধারণা হচ্ছে কল্পনা থেকে উৎসারিত বস্তু। ধারণা সত্যি একটি মহান বিষয়। ইহার নিজস্ব কোন মূল্য নেই। যিনি ধারণাগুলোর সৃষ্টিকর্তা তিনি যদি বুদ্ধিমান হন তবে ধারণার দাম ঠিক করেন এবং তা পান। আমাদের ব্যবসা জগতে এমন উদাহরণ বহু রয়েছে যারা একটি নতুন ধারণা নিয়ে ব্যবসা করে মহান সাফল্য অর্জন করেছেন। এদের বলা হয় উদ্যোগক্তা। যিনি সৃষ্টিশীল কল্পনা প্রয়োগ করেন, ধারণা সৃষ্টি করেন এবং একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনায় অধ্যবসায়ের সাথে চলেন, তিনি তাঁর নির্দিষ্ট গন্তব্যে সবসময়ই পৌছান, যা তিনি ইচ্ছা করেন।

ব্যক্তিগত উন্নয়ন – পঞ্চম অধ্যায়

বিশিষ্ট জ্ঞান

যিনি বিশিষ্ট জ্ঞানের অধিকারী তাকে বলা হয় বিশেষজ্ঞ।

জ্ঞান দুই প্রকার। একটি সাধারণ এবং অপরটি বিশেষ জ্ঞান। বিশাল পরিমাণ সাধারণ জ্ঞান কোন কাজে আসে না যদি তা কোন নির্দিষ্ট পরিকল্পনায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছানোর জন্য প্রয়োগ করা না হয়। আর নির্দিষ্ট পরিকল্পনায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছাতে প্রয়োজন বিশেষ জ্ঞান।

সভ্যতার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত প্রাপ্ত জ্ঞানকে এই দুভাগে বিভক্ত করা যায়। সাধারণ জ্ঞানের ভান্ডার বিশাল এবং একে বিভিন্ন ভাগ, উপভাগে বিভক্ত করে আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে পড়ানো হয়। অপরটি, বিশেষ জ্ঞান যা আমাদের দেয় নির্দিষ্ট কাজে প্রয়োগ করার জন্য অপরিমেয় শক্তি। নির্দিষ্ট পরিকল্পনায় নির্দিষ্ট ফলাফল পাওয়ার আশায় প্রয়োগকৃত জ্ঞানই বিশেষ জ্ঞান, যা প্রয়োগের ফলে হয়ে ওঠে বিশিষ্ট জ্ঞানে।

লোকেরা বিশ্বাস করে জ্ঞানই শক্তি। আসুন বিষয়টাকে পুনরায় বিবেচনা করি। গাড়ির তেলের কথা চিন্তা করুন। তেল যদি অব্যবহৃত ভাবে দোকানে পড়ে থাকে তখন এর মূল্য আছে সত্য কিন্তু এর উপযোগিতা কোথায়। জ্ঞান আমাদের বই, পত্রিকা, বিদ্যালয় বা গ্রন্থাগারগুলোতে অঢেল রয়েছে কিন্তু ইহা যদি আপনি আপনার কাজে না প্রয়োগ করেন তবে এ জ্ঞান শক্তি হবে কিভাবে। তেল যখন গাড়ির ইঞ্জিনে প্রবেশ করে তখন নির্দিষ্ট নল পথে ইহা নির্দিষ্ট কক্ষে যায়, যেখানে ইহাকে উত্তপ্ত করা হয় বাতাসের সাথে (একটি অদৃশ্য, অনুভবযোগ্য শক্তির সাথে)। তখন এই মিশ্রিত উপাদানদ্বয় উৎপাদন করে এমন এক শক্তি যা তাদের মিশ্রিত উপাদানের ওজনের চেয়ে লক্ষগুণ বেশি ভারী ও ওজনদার বস্তু, গাড়ীকে নিয়ে যায় দ্রুত গতিতে। একই রূপে জ্ঞান প্রয়োগ করতে হয় নির্দিষ্ট পরিকল্পনায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেখানে ইহা মিশ্রিত হয় ইচ্ছা, আস্থা, অধ্যবসায় এবং সৃষ্টিশীল কল্পনার সাথে এবং হয়ে ওঠে এমন এক শক্তি যা যেকোন চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে বা তার সমতুল্য করতে সক্ষম। তেলের এই কৌশলটিকে বুঝুন, জ্ঞানকে নির্দিষ্ট পরিকল্পনায় নির্দিষ্ট গন্তব্যের জন্য প্রয়োগ করুন এবং ব্যক্তিগত উন্নয়ন বা জীবনের যে কোন কাজে সাফল্য অর্জন করুন।

আমরা অনেকেই পড়েছি-
পুথিগত বিদ্যা আর পর হস্তে ধন
নহে বিদ্যা, নহে ধন হলে প্রয়োজন।

আমাদের জীবনে সাফল্য অর্জনে এখন সময় হয়েছে উপরোক্ত বিষয়টি নতুন দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করার যাতে আমরা জ্ঞান সাধারণ পর্যায় হতে বিশেষ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি এবং ব্যক্তিগত উন্নয়ন বা সম্পদ অর্জনে ইহা প্রয়োগ করতে পারি। উপরোক্ত উক্তিমতে বইয়ে সীমাবদ্ধ জ্ঞান হচ্ছে প্রয়োজনের সময় অপর ব্যক্তির হাতে থাকা সম্পদের মত। ধরুন, একজন ব্যক্তির কাছে অর্থ (বা অন্য যেকোন সম্পদ) আছে কিন্তু তা যদি অন্যের কাছে থাকে তবে আপনার দরকারের সময় যেমন এই অর্থ কোন কাজে দেয় না, তেমনি জ্ঞান যদি সাজানো আকারে বইয়ে থাকে কিন্তু ব্যক্তি তার বাস্তব কাজে প্রয়োগ করলো না তবে যেকোন মূল্যবান জ্ঞানও মূল্যহীন হয় পড়ে।

এই লেখাগুলোতে আপনাদের প্রেরণা দেওয়া হয়েছে এবং জীবনে সাফল্য অর্জনের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার জন্য আপনাকে কোন অর্থ খরচ করতে হবে না, শুধুমাত্র ইন্টারনেটের সামান্য খরচ ছাড়া। তাহলে নির্দেশনাগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে সফল হবেন না কেন?

বর্তমানে বিশেষজ্ঞদের চাহিদা বেশি। চাকুরীদাতাগণ খোঁজেন প্রার্থীদের মাঝে একজন দক্ষ ব্যক্তিকে, যিনি তার প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজ দক্ষভাবে করতে বিশেষ জ্ঞান রাখেন। চাকরী প্রার্থীগণ যখন চাকরির জন্য আবেদন করেন তখনও বেশিরভাগই জানেন না তারা কোন কাজে দক্ষ, যে কাজটি করতে একজন প্রার্থী পারদর্শী সেই সম্পর্কে খুব অল্প সংখ্যক প্রার্থীই জ্ঞান রাখেন। তাই চাকুরীদাতাগণ এখন নির্দিষ্ট পদের নির্দিষ্ট কাজের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেন। এতে উল্লেখিত থাকে সেই পদ ও কাজ সম্পর্কে যে জন্য প্রার্থী আবেদন করতে পারবেন আর এমন নির্দিষ্ট কাজে তারাই অগ্রাধিকার পান যারা উক্ত কাজে বিশিষ্ট জ্ঞান রাখেন।


একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই তার ইচ্ছানুযায়ী কাজে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করতে হবে যদি তিনি জীবনে সাফল্য অর্জন করতে চায়। ব্যক্তিদের উচিত তাদের জীবনের মহাবিদ্যালয়ের পাঠ (উচ্চ মাধ্যমিক) গ্রহণকালেই নির্দিষ্ট করা, যা তিনি জীবনে হতে চান এবং এর জন্য যে জ্ঞান দরকার তা গ্রহণের চেষ্টা করা। তবে এখনও খুব দেরী হয়ে যায় নি যদি আপনি মহাবিদ্যালয় পাঠ শেষ করে থাকেন বহু আগে, এখনও আপনি সুউচ্চ সাফল্য অর্জন করতে পারবেন, আপনার বর্তমান পেশায়, অধ্যবসায় সহকারে এখানকার লেখাগুলো শেষ পর্যন্ত পড়ে যান, আপনি নিজেই খুঁজে পাবেন আপনার সফলতার সিঁড়ির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো।

ব্যক্তিগত উন্নয়ন – চতুর্থ অধ্যায়

স্ব-পরামর্শ

স্ব-পরামর্শঃ যে পদ্ধতিতে অবচেতন মনকে প্রভাবিত করা যায়।

স্ব-পরামর্শ হচ্ছে স্বীয় পরামর্শ। অর্থাৎ নিজেকে পরামর্শ প্রদান। আপনি নিজেকে গঠন করবেন, নিজের ব্যক্তিগত উন্নয়ন করবেন। সুতরাং আপনাকে পরামর্শ দিতে সবচেয়ে যোগ্য এবং বিশ্বস্ত ব্যক্তি আপনি নিজেই। ইহা আপনাকে আত্ম শাসনের প্রেরণা দেয়।
স্বপরামর্শ হচ্ছে আত্ম পরামর্শ। ইহা মস্তিষ্কে সচেতন মনের একটি স্থান যেখান থেকে অনবরত অবচেতন মনে পরামর্শ মূলক শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে চিন্তা তরঙ্গ প্রেরণ করা হয়। এই চিন্তা তরঙ্গ অবচেতন মন থেকে বর্ধিত শক্তি নিয়ে সচেতন মনে ফিরে আসে যা সচেতন মনকে কাজ করার জন্য প্রেরণা দেয়। যা পরবর্তীতে রূপ নেয় ইচ্ছা শক্তিতে।

ব্যক্তিগত উন্নয়নে স্ব-পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। আপনি একটি সহজ উদাহরণের মাধ্যমে ইহা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। আপনি রাতে বিছানায় শুয়ে নিজেকে বলুন, আমি সকাল ৭ টায় উঠবো। দশবার বলুন। ইহা বলতে বলতে ঘুমাবার চেষ্টা করুন। দেখবেন পরদিন ঠিক সকাল ৭ টায় আপনি উঠেছেন। ইহা হচ্ছে একটি ইতিবাচক চিন্তা। ইহা আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়ার আগের রাতে ব্যবহার করে থাকে।

এবার আমরা একটি নেতিবাচক চিন্তা দেখবো। ইহা অবশ্য আমরা সচেতনভাবে বা অসচেতনভাবে প্রায়ই ব্যবহার করি। অনেকেই বলে থাকেন রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে যে কালকে জরুরী কাজ আছে, সকাল ৮ টায় উঠতে হবে। কিন্তু এখন রাত ১২.৩০ বেজে গেছে। এখন আর সকালে উঠতে পারবো না। আমাদের অবচেতন মন এই নেতিবাচক চিন্তাকে গ্রহণ করে এবং ইহাতে বর্ধিত শক্তি দিয়ে সচেতন মনে ফেরত পাঠায়। ফলে পরদিন সকালে ব্যক্তিটি ৮.৩০ এ ঘুম থেকে উঠতে পারে। ইহা হচ্ছে নেতিবাচক চিন্তা যা আমরা স্বপরামর্শ রূপে ব্যবহার করে থাকি।


এখন একটি ভিন্ন উদাহরণ পড়বো। একজন লোক রাতে ঘুমাবার জন্য বিছানায় গেলেন। এখন অপর কোন ব্যক্তিকে সকাল ৭ টায় তাকে ডেকে উঠাতে বললেন। এমন অবস্থায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় অপর ব্যক্তি না ডাকা পর্যন্ত লোকটি ঘুমিয়ে থাকে। ইহা অবস্তুগত চিন্তা।

এই সকল চিন্তাগুলো যা ব্যক্তি তার মস্তিষ্কে অবচেতন মনে প্রেরণ করে থাকে তা একই রূপে অধিক শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসে এবং তদানুযায়ী সচেতন অংশ কাজ করে।

স্বপরামর্শ অবচেতন মনে পৌছায় ব্যক্তির পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারা। তবে অবচেতন মনে যে কোন চিন্তা তরঙ্গ স্ব-পরামর্শ ছাড়াও যেতে পারে। ইহা চিন্তা তরঙ্গের প্রাবল্যের ওপর নির্ভর করে। এই প্রাবল্য ইতিবাচক বা নেতিবাচক উভয়ই হতে পারে। ব্যক্তিরা প্রায়ই বাস্তব পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে তাদের ইচ্ছার ইতিবাচক চিন্তা বাদ দেয়। উক্ত স্থান দখল করে নেতিবাচক চিন্তা যে কাজটি মনে হয় হবে না। অবচেতন মন এই চিন্তা তরঙ্গ গ্রহণ করে, অধিক শক্তিশালী করে সচেতন মনে ফেরত পাঠায় এবং সচেতন মন তদানুযায়ী কাজ করে। যা ব্যাখ্যা করে কেন এত বেশি লোক তাদের জীবন দারিদ্র্যতার মধ্য দিয়ে যাপন করে।

আপনাকে ইচ্ছা অধ্যায়ের ছয়টি ধাপ অনুসরণ করতে হবে। এই ধাপগুলো অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধাপগুলো অনুসরণ করাটা খুবই সহজ। এগুলোকে স্বপরামর্শ রূপে ব্যবহার করুন।

পদ্ধতিটি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে, জোরে স্পষ্ট ভাষায় নিদের্শনা গুলো পড়ুন। পড়ার সময় আবেগ ও অনুভূতি প্রয়োগ করুন। কারণ অবচেতন মনে আবেগ ও অনুভূতি নিয়ে বলা নির্দেশনাই পৌছায় নতুবা আপনি হাজার বার পড়েও ব্যর্থ হবেন।

প্রথমবার পড়লে হয়ত আপনার সেই অনুভূতি আসবে না কিন্তু হতাশ হবেন না, চেষ্টা করুন। ব্যর্থ হলে আরেকবার চেষ্টা করুন, পুনরায় ব্যর্থ হলে আবার একবার চেষ্টা করুন যতক্ষণ না আপনি জয়ী হচ্ছেন।

স্বপরামর্শকে অধ্যবসায়ের সাথে পালন করুন। লেখাগুলো একবার পড়ুন, প্রতিদিন পড়ুন, বারবার পড়ুন, এতে আপনি প্রেরণা পাবেন এই সূত্রগুলোকে আপনার বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার। অধ্যবসায় পালন করুন, শেষ পর্যন্ত পড়ে যান, ফলে আপনার মাঝে অধ্যবসায়, ধৈর্য্য এবং গঠনমূলক চিন্তা করার অভ্যাস তৈরী হবে

স্বপরামর্শ ব্যবহার করতে আপনাকে ব্যবহার করতে হবে মনোযোগ। আপনার মনোযোগের উপর নির্ভর করবে ইহার কার্যকারিতা, অবচেতন মনে প্রবেশের সম্ভাবনা এবং আপনার সফলতা। আপনার মনোযোগ যত গাঢ় হবে অবচেতন মনে স্ব-পরামর্শের নির্দেশনা গুলো প্রবেশের সম্ভাবনা তত বেশি। মনোযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোন বিষয় সম্পর্কে আগ্রহ আমাদের মনোযোগ নিরূপণ করে দেয়। আমাদের আগ্রহ কম বা বেশি হলে যথাক্রমে মনোযোগের হ্রাস বা বৃদ্ধি ঘটে। অর্থাৎ

আগ্রহ  α  মনোযোগ

এর মানে আগ্রহ সমান অনুপাতে বা ধ্রুব ভাবে মনোযোগ তৈরী করে। তেমনি ভাবেই এই লেখাগুলো যদি আপনি আগ্রহী হয়ে না পড়েন তবে মনোযোগ ছাড়াই লেখাটি পড়বেন এবং ভুলে যাবেন। আগ্রহ হচ্ছে ইচ্ছার আধিক্য বা প্রাবল্য। আপনার ইচ্ছা আছে জীবনে সফল হওয়ার (সম্মান, ক্ষমতা বা অর্থনৈতিক যে কোন দিক হতে) তা আগ্রহে পরিণত হবে আপনার ইচ্ছার আধিক্যের ওপর এবং এই নির্দিষ্ট ইচ্ছাই আপনার মনোযোগ বৃদ্ধি করবে। ইহা অনেকটা ১৮টি সাদা ও কালো ক্যারামের গুটির মাঝে ১টি লাল গুটি দেখতে পাওয়ার মত। এভাবেই আমাদের মন প্রতিনিয়ত চিন্তা করে চলছে এবং এগুলোর মাঝে একটি নির্দিষ্ট ইচ্ছার প্রতি দৃষ্টি দেওয়াটাই মনোযোগ।


স্বপরামর্শ নির্দেশনা পড়ার ক্ষেত্রে আপনার মনোযোগ বৃদ্ধি করতে কল্পনা ব্যবহার করুন। আবার ক্যারাম খেলার চিন্তা করুন। আপনি ১৮টি সাদা ও কালো গুটির মাঝে ১টি লাল গুটি দেখতে পাচ্ছেন। আপনি সাদা বা কালো গুটি গর্তে ফেলছেন কিন্তু ১টি লাল গুটি থেকে আপনার নজর সরে নি। কারণ আপনি কল্পনা করছেন ১টি লাল গুটি গর্তে ফেলতে পারলে আপনার পয়েন্ট ১২ থেকে ৫ যোগ হয়ে ১৭ হবে (লাল গুটির পয়েন্ট ৫ ধরে) এবং আপনার জয়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। ঠিক একইরূপ কল্পনা করুন সাফল্যমণ্ডিত সেই জয়ী ব্যক্তিকে যখন আপনি স্ব-পরামর্শ নির্দেশনাগুলো পড়বেন।