বুধবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৯

এরিয়ান সান-মাইথ, দ্য অরিজিন অব রিলিজিয়নস্ বইয়ের পর্যালোচনা, অনুবাদ সা'দউল্লাহ


সূর্যের তিন ধরনের শক্তি। যখন উদিত হয় তখন সূর্যের সৃষ্টিকারী শক্তি। তারপর সূর্য উঠে গিয়ে পৃথিবীকে লালন-পালন করে। এর থেকে আসে লালন-পালনকারী শক্তি। তারপর খরার সময় শস্য পুড়ে যা, সূর্যের খরতাপে ধ্বংসাত্মক রূপ প্রকাশ পায়। একে বলা হয় ধ্বংসাত্মক শক্তি। এই তিন ধরনের শক্তিকে ত্রিত্ববাদ হিসাবে প্রাচীনকাল থেকে সূর্যকে পূজা অর্চনা করা আরম্ভ হয়। নানা দেশে, নানা জাতিতে, নানান সভ্যতায় সূর্যকে ভিন্নরূপে, অবতার হিসাবে পূজা করা হয়েছে।

হিন্দুরা ত্রিমূর্তির দেবতায় বিশ্বাসী - ব্রহ্ম পিতামহ, বিষ্ণু পুত্র এবং শিব হলো ধ্বংশকারী।

খ্রিস্টানদের কাছে ত্রি-মূর্তির তৃতীয় ব্যক্তি হলো পবিত্র আত্মা এবং ঘুঘু পাখির প্রতীক। দ্বিতীয় ব্যক্তিটি হলো শব্দ-জ্ঞান বা গ্রিক ভাষায় লোগোস।

খ্রিস্টপূর্ব ৬,০০০ বছর পূর্বে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর তীরে মানুষ বসবাস আরম্ভ করে। এখান থেকেই মেসোপটেমিয়া সভ্যতার সূচনা ঘটে খ্রিস্টপূর্ব ৫,০০০ বছরের দিকে। এখানে ব্রোঞ্জযুগে আক্কাদীয়, এসেরিয় ও ব্যবিলনীয় সভ্যতা গড়ে ওঠে। লৌহযুগে এসেরিয় ও নব্য-ব্যবিলনীয় সভ্যতা গড়ে ওঠে। এরা সূর্যকে পূজা করত এবং সূর্যের তিন শক্তি সম্পর্কে অবগত ছিল। ব্যবিলনে নানান উপকথা প্রচলিত ছিল। ব্যবিলীয়দের সৃষ্টিতত্ত্ব সম্বন্ধে কিম্বদন্তি ছিল, মানুষের পতনের কথা ছিল। হিব্রুরা ব্যবিলীয়দের দাস ছিল। সেখান থেকে তারাও এসব উপকথা শিখে নেয়। যা পরে তাদের জেনেসিস (আদিপুস্তক) এ লিখে রাখে। মেসোপটেমিয়া থেকে পরবর্তী সময় মিশরীয় সভ্যতা, পারস্য সভ্যতা, ভারতীয় (আর্য) সভ্যতা, গ্রিক সভ্যতা সহ নানান সভ্যতার উন্মেষ ঘটে।

ব্যবিলনীয়দের একটি মহাপ্লাবনেরও কাহিনী আছে যা হিব্রুবাইবেলের কাহিনী সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, মনে রাখতে হবে ব্যবিলনীয়রা আগে তারপর হিব্রু বা ইহুদীরা। (৫৩ পৃষ্ঠা)। নিঃসন্দেহে এটা বলা যায় যে কলদীয়তে বন্দিদশাকালীন সময়ে ইহুদীরা (হিব্রুরা) এই সব উপকথার সাথে বিশেষভাবে পরিচিত হয় এবং পরে তারা তাদের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করে। (৫৫ পৃষ্ঠা)।

এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে একটা জাতি অন্য একটা জাতির সংস্পর্শে এলে উভয় জাতি তাদের উপকথাগুলোর সংমিশ্রণ ঘটায়, কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব করে না। (৫৫ পৃষ্ঠা)।

যদিও বুদ্ধদেব শান্তির সাথে বৃক্ষের নিচের মৃত্যুবরণ করেছেন বলে বলা হয়, তবুও তাকে নির্যাতিত ত্রাণকর্তা বলা হয়েছে এবং মানুষের দুঃখের কারণে তিনি তৃণের মতো নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। (Max Muller, Science and Religion, p.224 London 1873)

বহু প্রাচীনকাল থেকে ত্রুশ’কে অনন্তকালের প্রতীক চিহ্ন হিসাবে ধরা হতো। (৭৪ পৃষ্ঠা)। এখানে মিশর, গ্রিক, সেন্ট এন্টনি, পার্শিয়ান, প্রাচীন ব্যবিলনবাসী, ভারত, নেপাল সহ বহু জায়গা ও জাতির কথা উল্লেখ করেছেন যারা ত্রুশ’কে অনন্তকালের প্রতীক চিহ্ন হিসাবে ব্যবহার করত। স¤্রাট অসুর বানিপাল ছিলেন এসিরিয়দের স¤্রাট। খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতক, তখন মিশর এসিরিয়দের অধীন একটি প্রদেশ। এ সময় অসুর বানিপাল অন্যদিকে বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত থাকায় মিশরে দৃষ্টি দিতে পারেননি। তাই সামটিক (Psamtik) নামে এক মিশরীয় (সেনাপতি যিনি ঐ সময় এ সিরিয়দের পক্ষে মিশরে ভাইসরয় হিসাবে কাজ করছিলেন, সুযোগ বুঝে, নিজেকেই মিশরের সর্বাধিপতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং ফেরাও (Pharoh) দের ২৬ তম বংশের প্রথম ফেরাও সামটিক-১ (Psamtik-1) বলে ঘোষণা দেন। (৮১ পৃষ্ঠা)।

আর্যদের কিম্বদন্তি (Myth) থেকে মি. কক্স (Cox) বলেন - যে যা-ই বলুক এবং কুমারী মাতাকে যে যেভাবেই চিহ্নিত করুক - সকল পুরাণ তত্ত্ব ঊষা (Dawn) কে নির্দিষ্ট করছে। (৮২ পৃষ্ঠা)। সকল পুরাণে কুমারী মাতা বলতে ভোরের সূর্যোদয়ের কথাকে বোঝানো হয়েছে।

ঋকবেদে সূর্যকে স্বর্ণের আলো বলা হয়েছে - দুবাহু দুদিকে যেন সোনা ছড়িয়ে দিলেন, স্বর্গের মধ্যে এবং পৃথিবীকে উদ্ধার করতে ও অন্ধকারকে মুছে দিতে জন্ম নিলেন। (৮৩ পৃষ্ঠা)।

পার্সিয়ান উপকথা অনুযায়ী অরমুজ (Ormuzd) এই বিশ্বপৃথিবী ছয়দিনের সময়ে সৃষ্টি করেন। প্রথমে করেন স্বর্গ, দ্বিতীয় জল, তৃতীয় পৃথিবী, চতুর্থ গাছ-গাছড়া, পঞ্চম পশুপাখী এবং ষষ্ঠবারে মানুষ সৃষ্টি করেন। এরপর অরমুজ (Ormuzd) বিশ্রাম গ্রহণ করেন। (৯২, ৯৬ পৃষ্ঠা)। ভন বোলেন এবং ড. ম্যাকল এর বর্ণনা মতে বিশ্ব সৃষ্টির ঘটনা। (৯২ পৃষ্ঠা)। (দেখুন : Aids to Faith, P. 219, also the Pentateuch Examined. Vol, iv P. 113)।

পৃথিবী সৃষ্টির পর সৃষ্টিকর্তা অশুভকে (আহরিমান) সর্পের আকারে পৃথিবীতে প্রেরণ করে যে প্রথম মানব-মানবীকে প্রলুব্ধ করেছিল ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করতে। (৯২ পৃষ্ঠা)। (দেখুন : Aids to Faith, P. 219, also the Pentateuch Examined. Vol, iv P. 113)।

সবশেষে বলা যায়, টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীদ্বয়ের মধ্যবর্তী অঞ্চলে মেসোপটেমিয়া সভ্যতা গড়ে ওঠে। এখান থেকে মানুষের চিন্তা ভাবনাকে সংগঠিত করে, রাজ্য পরিচালনা করে সভ্যতা গড়ে তোলার দিকে মানুষ ধাবিত হয়। তাই আমরা যতবেশি মেসোপটেমিয়া সভ্যতা সম্পর্কে জানবো ততবেশি বর্তমান চিন্তা ভাবনার সূচনা বা আরম্ভ বিন্দু ধরতে পারবো।

রবিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৯

নতুন বছরে নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন


নতুন বছরে নতুন নতুন জিনিস নিয়ে চেষ্টা করতে পারেন। আপনি যদি নতুন কিছু চেষ্টা করেন তবে তা আজকের চেয়ে ভিন্ন কোন ফলাফল আনতে পারে। আর আপনি যদি চেষ্টা না করেন তবে আপনি কখনোই জানতে পারবেন না যে আপনি কী করতে পারতেন বা করলে কী ফলাফল হতো। তাই আজই পরিকল্পনা করে ফেলুন এবং কাজে নেমে যান। নতুন বছরে নতুন নতুন চেষ্টা আপনার সাহসী চেতনাকে সমৃদ্ধ করুক। নিচের এই তেরোটি উক্তি আপনাকে এগিয়ে যেতে প্রেরণা যোগাবে। নতুন বছরের শুভ কামনা রইল।

১। যখন আমি আমার অতীতকে মেনে নিই এবং অতীতের জায়গাকে অতীতেই রেখে দিই, তখন আমি আমার সম্ভাবনাকে বাস্তব হওয়ার সুযোগ দেই। - লাও জু

২। আপনি চেষ্টা না করা পর্যন্ত কখনো জানতে পারবেন না যে আপনি কী করতে পারেন। আমাদের মধ্যকার খুব কম লোকই বাধ্য না হলে চেষ্টা করে না। - সি.এস. লুইস

৩। নতুন নতুন জিনিস নিয়ে চেষ্টা করুন। ভয় পাবেন না। নিজের আরামদায়ক জায়গা থেকে বের হোন ও ঝাঁপ দিন। - মিশেল ওবামা

৪। আপনার জীবন কত না সমৃদ্ধ হতে পারতো যদি আপনি অবাক হওয়ার ও আবিষ্কার করার আগ্রহ নিয়ে কাজ করতেন, আপনি যদি সবসময় নতুন কিছু নিয়ে চেষ্টা করার সাহস দেখাতে পারতেন। - নেট বার্কাস

৫। যারাই অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার সাহস দেখাতে পারে একমাত্র তারাই বলতে পারে যে একজন আসলে কত দূর পর্যন্ত এগিয়ে যেতে পারে। - টি.এস. ইলিয়ট

৬। আমি একজন পরিবর্তনশীল মানুষ, সবসময়ই বিকশিত হচ্ছি এবং সর্বদা নতুন নতুন জিনিস চেষ্টা করি। - থমাস রিট

৭। আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে, নতুন নতুন দ্বার উন্মোচন করতে হবে এবং নতুন নতুন জিনিস চেষ্টা করতে হবে, কারণ আমরা কৌতুহলী এবং কৌতুহলই আমাদেরকে নতুন পথে দিশা দেখায়। - ওয়াল্ট ডিজনি

৮। আমাদের জীবন তখনই সিদ্ধ হয় যখন আমরা চেষ্টা। এর মানে এই নয় যে আপনি সবকিছুই করতে পারবেন, কিন্তু আপনি অনেক কিছুই করতে পারবেন, যদি আপনি চেষ্টা করেন। - জিম রন

৯। সাফল ব্যক্তিদের চিহ্ন হচ্ছে তারা সর্বদাই নতুন কিছু শিখতে আগ্রহী। - ক্যারল এস. ডিউক

১০। আমাদের জীবন কেমন হত যদি আমরা কোন কিছুরই উদ্যোগ নেওয়ার সাহস নিতে না পারতাম? - ভিনসেন্ট ভ্যান গগ

১১। কাজ করতে গিয়ে ভয়ে সঙ্কুচিত হবেন না এবং বেশি খুঁতখুঁতে হওয়ারও দরকার নেই। সবই তো এক ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা। - রালফ ওয়াল্ডো এমারসন

১২। নতুন জিনিস চেষ্টা করতে গিয়ে নির্ভীক হোন। দৈহিক, মানসিক, অনুভূতিমূলক তা যাইহোক নতুন জিনিস চেষ্টা করতে গিয়ে নির্ভীক হোন। কারণ এই ভয় পাওয়া অবস্থাই আপনাকে পরবর্তী ধাপে উন্নীত হতে সাহস যোগাবে। - রিতা উইলসন

১৩। যে তার শিক্ষাকে কাজে লাগায় একমাত্র সেই শিক্ষিত। - ফ্রিডরিখ নিৎশে

বৃহস্পতিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৯

পরিচিত ও হিংসা বইয়ের পর্যালোচনা, লেখক অমর্ত্য সেন


আমরা প্রথম পরিচ্ছেদ - বিভ্রম থেকে হিংসা - আলোচনা করবো।

আলোচনার অন্যতম দিকগুলো :

১। একজন ব্যক্তির কেবল একটিই পরিচয় থাকে না। যেকোন ধরনের একটি নির্দিষ্ট পরিচয়ের বাইরেও তার অন্য অনেক ধরনের পরিচয় রয়েছে।

২। হঠাৎ করে উপলব্ধ যেকোন একটি পরিচয়ের ওপর বেশি জোর দেওয়া বা সেই পরিচয়কে উলটে ফেলার সংঘবদ্ধ প্রয়াস পৃথিবীতে অনেক ধ্বংস ঢেকে এনেছে।

বিভ্রম থেকে হিংসা। বিভ্রম মানে বিভ্রান্তি বা ভুল এবং আমাদের অনেক ভুল চিন্তা-ভাবনা থেকেই আমাদের মধ্যে হিংসার উৎপত্তি ঘটে। প্রথম পরিচ্ছেদে উদ্ধৃত - ‘নরহত্যার সর্দারদের নেতৃত্বে মানুষ “নিজেদের লোক”-এর পক্ষ নিয়ে শত সহ¯্র অন্য লোকদের খুন করল। সরলবিশ্বাসী মানুষের ওপর একমাত্রিক বৈরিতামূলক পরিচয় চাপিয়ে দিয়ে হিংসাকে চাগিয়ে তোলা হয়, আর একাজের ধ্বজাধারী হয় সন্ত্রাসের দক্ষ কারিগররা।’

আবার অন্য জায়গায় আছে - ‘“সামাজিক পুঁজি” নিয়ে সাম্প্রতিক লেখালেখিতে রবার্ট পাটনাম ও অন্যান্যদের জোরালো কাজে এটা যথেষ্ট স্পষ্ট হয়েছে যে, কোনও সামাজিক সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্যের সঙ্গে নিজের অভিন্নতাবোধ সেই সম্প্রদায়ের সকলের জীবনযাপন অনেক উন্নততর করে; সম্প্রদায়-অন্তর্ভুক্তির চেতনা সেজন্য পুঁজির মতোই সম্পদ বলে স্বীকৃত হয়।’ আমরা একটি সমাজে বাস করি। এখানে বিভিন্ন ধরনের, নানান চিন্তা-ভাবনার মানুষ বাস করে। নানান দিক, নানান দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের নিজের দেখার পরিসরকে বড় করে। অপর একজনের অভিমত আমার নিজের মতামতের সাথে মিলে না বলে অসহিষ্ণু হওয়া বুদ্ধিমানের পরিচয় নয়।
সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠী ও মতামতের সাথে পরিচিত হলে ভালো ও মন্দ উভয় দিকই থাকে। আবার সমাজ থেকে বাইরে থাকলেও এক ধরনের বৈরী মনোভাব তৈরি হয়। এবার মহাভারতের একটি বক্তব্য তুলে ধরছি।

‘অপমানকর পরিচয়লক্ষণ আরোপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংস্কৃতি বিভিন্ন সময়ে মনুষ্যত্বের সর্বজনীনতা ঘোষণা করেছে। কমবেশি দু’হাজার বছর আগেকার ভারতীয় মহাকাব্য মহাভারতে তার্কিক প্রশ্নকর্তা ভরদ্বাজ বর্ণাশ্রমের পক্ষে সামাজিক প্রধান ভৃগুর যুক্তির প্রত্যুত্তরে জিজ্ঞাসা করেন, “আমরা তো দেখি সকলের ওপরেই কামনা, ক্রোধ, ভয়, দুঃখ, চিন্তা, ক্ষুধা ও শ্রম প্রভাব বিস্তার করে, তা হলে আমাদের জাতিভেদ হয় কী করে?”’
জাতিভেদ ছাড়াও বিভিন্ন মানুষকে বিভিন্ন বর্গে বিভক্ত করে অন্যদের প্রতি হিংসা উৎপাদন করার রীতি দেখা যায়। যেমন ভারতে ১৯৪০ দশকের হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা। লেখকের মতে, ‘বহু মানুষের ভারতীয়, উপমহাদেশীয়, এশীয়, মানবজাতির সদস্য, ইত্যাদি পরিচয়গুলো যেন ধসে গেল- হঠাৎই তারা যেন হিন্দু, মুসলমান, শিখ সাম্প্রদায়িক পরিচয়ে ভাগ হয়ে গেল।’ এরপর যে হত্যাকা- হলো তা অকল্পনীয়।

একজন মুসলমানেরও বহু পরিচয় রয়েছে। অবশ্য আমরা প্রায়ই তা ভুলে যাই বা একটি পরিচয়ের ওপর চাপ দিয়ে অন্য পরিচয়গুলোকে ভুলতে বাধ্য করা হয়। আরেকটি উদ্ধৃতি তুলে ধরছি,

‘মানুষমাত্রেই নিজেদের বিভিন্নরূপে দেখতে পায়- তার কারণও আছে। যেমন বাংলাদেশের একজন মুসলমান শুধু মুসলমানই নন, তিনি বাঙালি এবং বাংলাদেশের নাগরিকও, তার ওপর তিনি প্রত্যাশিতভাবেই বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও গানবাজনা সম্বন্ধে যথেষ্ট গর্বিত। এসব ছাড়াও তাঁর অন্যান্য পরিচয় থাকতে পারে, যেগুলো লিঙ্গ, বৃত্তি, রাজনীতি, শিল্পরুচি ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত। পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বিচ্ছেদ কোনওমতেই ধর্মের কারণে হয়নি; অবিভক্ত পাকিস্তানের দু’দিকেই জনতার অধিকাংশ ছিলেন মুসলমান। বিরোধের কারণ ছিল ভাষা, সাহিত্য ও রাজনীতি।’

আমাদের বহুমাত্রিক পরিচয় রয়েছে এবং এসব পরিচয়কে যুক্তির সাথে ব্যবহার করতে হবে। দেখা যায় আমরা যখন আমাদের নানা দিকে পরিচয়কে বাদ দিয়ে একটি নির্দিষ্ট পরিচয়কে অবলম্বন করি তখন অন্যদের সাথে আমাদের বিভেদ অনেক বেশি প্রকট হিসাবে দেখা হয় এবং আমাদের মনোভাবকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের বহুমাত্রিক পরিচয় ও যুক্তির ব্যবহার আমাদেরকে ভ্রান্তির পথ থেকে দূরে রাখবে এবং আমাদের মনোভাবকে অন্যের প্রতি অনেকটা সহযোগিতাপূর্ণ করে তুলবে।