শনিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৬

সমস্যাকে নিজের সুবিধায় রূপান্তর করুন।



এক কৃষকের একটা গাধা ছিল। গাধাটা একদিন অগভীর কুয়ায় পড়লো। কিন্তু কুয়াটার গভীরতা গাধার উচ্চতা থেকে বেশি হওয়াতে অবলা প্রাণীটি উঠে আসতে পারছিল না। গাধার ত্রাহি চিৎকারে কৃষক এবং আশপাশের জনগণ ছুটে আসল। কিন্তু ওরাও বুঝে উঠতে পারল না কী করবে।

ঘণ্টাখানেক নানাভাবে চেষ্টা করার পরও যখন গাধাকে উপরে তুলে আনা গেল না, কৃষক তখন চিন্তা করল, কুয়াটা আগে থেকেই বিপজ্জনক। বেশ কয়েকটি বাচ্চা কুয়াতে পড়ে বারবার আহত হয়েছে। কুয়াটা এমনিতেই ভরাট করতে হবে, তার ওপর গাধাটা অনেক বুড়ো এবং দুর্বল হয়ে গেছে। তাই কৃষক সিদ্ধান্ত নিল গাধাসহ কুয়াটি ভরাট করে ফেলবে।

কৃষক সবাইকে ডাক দিয়ে সাহায্য করতে বলল। সবাই হাতে বেলচা এবং কোদাল নিয়ে পাশ থেকে মাটি কেটে কুয়াতে ফেলতে লাগল। কিছু মাটির দলা গিয়ে গাধাটির ওপরেও পড়ল। ওদের মাটি ফেলা দেখে গাধাটি বুঝতে পারল কি ঘটতে চলেছে, প্রাণীটি ভয়ে-দুঃখে নিরবে কাঁদতে লাগল।

কিছুক্ষণ মাটি ফেলার পরে সবাই হঠাৎ চমকে গেল, কারণ গাধাটি অদ্ভুত একটা কাণ্ড করে বসেছে। সবাই যখন গাধার উপরে মাটি ফেলছে, গাধাটি তখন গা-ঝাড়া দিয়ে মাটি নিচে ফেলে দিচ্ছে এবং এক-পা, এক- পা করে ভরাট হওয়া জায়গাতে অবস্থান নিচ্ছে। গাধাটি তার সমস্যাকে নিজের সুবিধায় রূপান্তর করছে। সবাই এবার দ্রুত গাধার উপরে মাটি ফেলতে শুরু করল, গাধাটিও তত দ্রুত মাটি গায়ের ওপর থেকে ঝেড়ে-ফেলে ভরাট হওয়া জায়গাতে এসে দাঁড়ায়। এভাবে কিছুক্ষণ মাটি ফেলার পর সবাই অবাক হয়ে লক্ষ্য করল কুয়াটি প্রায় ভর্তি হয়ে গেছে, অবশেষে গাধা কুয়া থেকে বেরিয়ে আসলো।…

জীবনে চলার পথে এমন অসংখ্য কুয়াতে আপনি পড়বেন, যা থেকে উঠে আসার মতন সক্ষমতা হয়তো আপনার থাকবে না। আশপাশের পুরুষগুলো আপনাকে টেনে তোলার পরিবর্তে আপনাকে আরো ডুবিয়ে দিতে চাইবে। কিন্তু এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনার সমস্যাকে নিজের সুবিধায় রূপান্তর করতে হবে, ওই গাধাটির মতই গা-থেকে আবর্জনাগুলো একটু একটু করে ঝাড়া দিয়ে ফেলতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না ওই আবর্জনাতে কুয়াটা পূর্ণ হয়ে যায়। যখনই সমস্যা এসে আপনার শরীর এবং মনের ওপরে চেপে বসবে, প্রতিবার একটু একটু করে ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিবেন। তারপর মাথা উঁচু করে একটু আগে ঝেড়ে ফেলে দেওয়া সমস্যার উপরে গিয়ে দাঁড়াবেন।

প্রতিটি সমস্যা-ই আবর্জনার মতো। আপনি থেমে থাকলে আবর্জনার পাহাড় এসে আপনাকে জীবন্ত কবর দিয়ে দেবে।
তাই কখনোই হাল ছাড়বেন না। থেমে থাকবেন না। এগিয়ে যান। সমস্যাকে নিজের সুবিধায় রূপান্তর করুন। একটি গাধা যদি তার জীবন বাঁচাতে চেষ্টা করতে পারে এবং বাঁচাতে সক্ষম হয় তবে আপনি একজন পুরুষ হয়ে আপনার একটি নির্দিষ্ট স্বপ্নকে পূরণ করতে কি পারবেন? অবশ্যই পারবেন। আমিও বিশ্বাস করি আপনি পারবেন। এগিয়ে যান এবং চেষ্টা করুন।

তথ্য সহযোগিতায় - All Result BD

সোমবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৬

ব্যবসায় সাফল্য অর্জন করতে কার্যকরী ৫ সূত্র।


১। আত্মবিশ্বাসঃ
এটি এক জাদুকরি শক্তি যা নিজের কর্মকাণ্ড এবং নিজের শক্তি- সামর্থ্যের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। বলা হয়- আত্মবিশ্বাসই সাফল্যের মূল সূত্র। একজন পুরুষ ব্যবসায় সাফল্য অর্জন করতে চাইলে এ গুণটি থাকা অপরিহার্য।

২। একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ভিত্তিক প্রচেষ্টাঃ
ইতিবাচক ফলাফল পেতে হলে কোনো কাজ করার আগে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা দরকার। কাজটি সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। আরও দরকার নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা। প্রচেষ্টা মানে প্রচণ্ড চেষ্টা, অধ্যবসায়ের সাথে কাজ করে যাওয়া। একটি ব্যবসায় সাফল্য অর্জন করতে শুধু কিছু কাজই সম্পাদন করলে হয় না। বরং সব সময়ই একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে মনযোগী হতে হবে।

৩। ঝুঁকি গ্রহণঃ
একজন সফল উদ্যোক্তা অনুধাবন করেন যে, কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে তিনি ক্ষতির সম্মুখীনও হতে পারেন। তবুও লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ঝুঁকি গ্রহণের মতো প্রয়োজনীয় মানসিকতা এবং সাহস তার থাকে।
কারণ তিনি তথ্য সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
ব্যবসায় উদ্যোক্তা হলেন তারা- যারা সিদ্ধান্ত নেবেন, ব্যবস্থা নেবেন। বিশ্বাস করেন যে, নিজেদের ভাগ্য তারা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তারা মনে করেন, সাফল্য ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে না। বরং তা নির্ভর করে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের প্রতি এবং সেই নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে কেন্দ্রীভূত মনোযোগের ওপর।

তাহলে উপরের কোন বৈশিষ্ট্যটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? বিশ্বাস করুন বা না করুন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাস দ্বারা সবকিছুই করা সম্ভব। আপনি যদি নিজের সামর্থ্যের ওপর আস্থা রাখতে পারেন, তবে প্রথম যে সুবিধাটি হবে সেটি হলো- একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপনার প্রয়োজনীয় কার্যক্রমে অধিক মনোযোগী হতে পারবেন।

আপনার আত্মবিশ্বাসকে উচ্চতর পর্যায়ে রাখতে কিছু সূত্রাবলী আলোচনা করা হলো-

৪। ইতিবাচক চিন্তাঃ
ইতিবাচক চিন্তার শুরুটা হবে ইতিবাচক আচরণের মাধ্যমে। কাজ শুরুর আগে চিন্তা করুন, প্রথম ধাপেই ভালো কিছু একটা হবে। নেতিবাচক চিন্তাকে মোটেই প্রশ্রয় দিবেন না এক্ষেত্রে। বিশ্বাস রাখুন, আপনার আকাঙ্ক্ষিত একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন।
মনে রাখবেন, ইতিবাচক চিন্তা সংক্রামক। যখন তা ছড়িয়ে পড়ে- তখন নতুন নতুন বন্ধু, গ্রাহক এবং ধারণার জন্ম দেয়।

৫। অধ্যবসায়ের সাথে কাজ করে যানঃ
আপনার সব ইতিবাচক চিন্তা, বিশ্বাস এবং ধারণা পৃথিবীতে অচল যদি আপনি তা কাজে না লাগান। আপনাকে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। কাজ করতে হবে। কোনো ধরনের অজুহাত চলবে না এক্ষেত্রে। কাজ করতে হবে নাছোড়বান্দার মতো। অধ্যবসায়ের সাথে কাজ করে যান।

কোনো ধাপ অতিক্রম করতে একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অবলম্বন করুন। সাফল্য না আসলে নতুন আরও একটি পরিকল্পনা তৈরী করে আবার চেষ্টা করুন। সাফল্য অর্জন করার আগে কাজটি ত্যাগ করা চলবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত সাফল্য অর্জন করতে না পারছেন ততক্ষণ পর্যন্ত চেষ্টা করে যান।

রচনার প্রথমাংশে যে বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছি- তা সাফল্য অর্জনকারী সব উদ্যোক্তারই থাকে। আপনিও সামনের দিকে তাকান। আপনাকে কোন অবস্থানে দেখতে চান, তা নির্দিষ্ট করুন। নিজের সামর্থ্য, শক্তি এবং দক্ষতার ওপর আস্থা রাখুন। নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা চালিয়ে যান। অধ্যবসায়ের সাথে কাজ করে যান। কোনোভাবেই পিছিয়ে যাবেন না। প্রচেষ্টা ত্যাগ করবেন না। আর তা যদি করতে পারেন, তবে অর্ধেক পথ পৌঁছে গেছেন -এ কথা মনে করতেই পারেন আপনি। আপনার সাফল্য কামনায় আপনার পাশে আছে ঠিক ধারণা ব্লগ এবং আমি ফজলে রাব্বি।

তথ্য সহযোগিতায় - ASBD Business Forum

মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৬

যখন সময় কঠিন তখন ধৈর্য ধরে অধ্যবসায়ের সাথে কাজ করে যান।



আমাদের সকলের জীবনেই একটি সময় আসে যখন আমরা কাজের চাপে বা সমস্যার চাপে থাকি। তখন কাজ করা অনেক কঠিন মনে হয় এবং আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী ফলাফল পাওয়ার আশা অসম্ভব বলে মনে হয়। কিন্তু তখনও কাজ থামাবেন না, ধৈর্য ধরে অধ্যবসায়ের সাথে কাজ করে যান। বিশ্বাস করুন আপনি সাফল্য অর্জন করতে পারবেন। আর আপনি যদি কাজটি ত্যাগ করেন তবে আপনি কখনই জানতে পারবেন না যে আপনি কি সাফল্য অর্জন করতে পারবেন। সর্বদাই এই অনুশোচনায় ভুগবেন যে আমি হয়ত আরেকটু চেষ্টা করলে সাফল্য অর্জন করতে পারতাম। তাই এই অনুশোচনায় না গিয়ে নিজেকে দিয়ে আরও একবার চেষ্টা করান, অধ্যবসায়ের সাথে কাজ করুন।

আজ আমরা আলোচনা করবো অধ্যবসায় কিভাবে গঠন করা যায় এই সম্বন্ধে। অধ্যবসায় হচ্ছে মনের একটি অবস্থা। সেইজন্য ইহা চাষ করা যায়। মনের সকল অবস্থার মতন, অধ্যবসায় নির্ভর করে নির্দিষ্ট কারণগুলোর ওপর, এগুলো হচ্ছেঃ-

ক। উদ্দেশ্যের নির্দিষ্টতা। একজন কি চায় ইহা প্রথমে জানতে হবে এবং ইহাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যবসায় গঠনের প্রতি। ইহা স্বাভাবিক যে আপনি যদি কক্সবাজার যেতে চান তবে আপনি নিশ্চয় কক্সবাজারের গাড়ীতে বা ট্রেনে উঠবেন। নিশ্চয়ই সিলেটের গাড়ীতে উঠবেন না। কারণ যে গাড়ী সিলেটে যাবে তা আপনাকে কক্সবাজার পৌঁছে দিবে না। ঠিক তেমনই আপনি কি অর্জন করতে চান তা একটি কাগজে নির্দিষ্ট করে লিখুন, আপনার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে নির্দিষ্ট হোন। ইহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

খ। আকাঙ্ক্ষা। আপনার উদ্দেশ্যটিকে প্রতিনিয়ত দেখে যান। রাতে ঘুমাবার আগে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে। এমন জায়গায় লিখে রাখুন যাতে সর্বদা দেখতে পান। এভাবেই একটি জ্বলন্ত আকাঙ্ক্ষা তৈরী হবে যা আপনাকে সাফল্য অর্জন করতে সর্বদাই উজ্জীবিত রাখবে।

গ। আত্ম নির্ভরশীলতা। আপন দক্ষতার ওপর বিশ্বাস রাখুন। আপনি আপনার নির্দিষ্ট আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারবেন। যখনই আপনার আত্ম বিশ্বাস কমতে আরম্ভ করবে নিজের মনে জোর করে বলুন – ‘আমি পারবো। আমি পারবো।’ পূর্ণ বিশ্বাস সহকারে। যদিও প্রথমে মনে হতে পারে আপনার আকাঙ্ক্ষাটি পূরণ হবার নয় কিন্তু আপনি যদি অধ্যবসায়ের সাথে কাজ করে যান তবে অবশ্যই আপনি তা পূরণ করতে পারবেন।

ঘ। পরিকল্পনাগুলোর নির্দিষ্টতা। আমি অনেকের সাথেই আলাপ করেছি এবং তাদের অভিমত হচ্ছে পরিকল্পনা ব্যর্থ তাই তিনি সাফল্য অর্জন করতে পারেননি। সর্বদা স্মরণ রাখবেন, একটি পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে আরও একটি পরিকল্পনা সৃষ্টি করা যায়। একটি পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে পারে কিন্তু আপনি ব্যর্থ নন। পরিকল্পনা ব্যর্থ মানে আপনার পরিকল্পনায় কিছু ত্রুটি ছিল এবং সেই ত্রুটির জন্য আপনার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। আবার একটি নতুন পরিকল্পনা সৃষ্টি করুন কিন্তু এবার গত পরিকল্পনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সম্পূর্ণ নতুন পরিকল্পনা সৃষ্টি করুন। সর্বদাই দেখবেন পরিকল্পনাটি যেন একটি কাগজে নির্দিষ্টভাবে লেখা থাকে। তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার কি আছে এবং আরও কি দরকার।

কাগজে একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য এবং ইহা অর্জনের জন্য পরিকল্পনা লেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রায় সময়ই ইহা লিখতে অনাগ্রহী থাকি কিন্তু একজন যখন একটি কাগজে নির্দিষ্টভাবে তার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে লিখে তখন তিনি তার অবচেতন মনে এই উদ্দেশ্য সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে ওঠেন। তারপর দেখবেন আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার উদ্দেশ্যের প্রতি ধাবিত হচ্ছেন। যেখানেই যাবেন আপনার অবচেতন মন আপনাকে রাস্তা দেখিয়ে দিবে যে পরবর্তীতে কোথায় দেখতে হবে এবং কোথায় যেতে হবে। এভাবে অধ্যবসায়ের সাথে কাজ করে যান এবং জীবনে সাফল্য অর্জন করুন।

অধ্যবসায় সম্বন্ধে আরও পাঠ করতে চাইলে এই লিংক দেখতে পারেন।

তথ্যসূত্র – নেপোলিয়ন হিলের চিন্তা করুন এবং ধনী হোন। সাফল্য প্রকাশনী।