মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২১

বক্তৃতা দেয়ার নিয়ম


(ছবিসূত্র: https://www.freepik.com/free-vector/black-lives-matter-conference-african-american-man-speaking-tribune-against-racial-discrimination-dark-skin-character-with-fist-print-chest-support-human-rights-cartoon-illustration_10798372.htm#page=1&query=public%20speaking&position=2)

উত্তম বক্তৃতা দেওয়ার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

১। সবসময় অধিবেশন শুরুর আগে শ্রোতাকে বলে নিবেন আজকে আপনি কী নিয়ে বলতে যাচ্ছেন।
২। বিস্তারিতভাবে শ্রোতাদের তা বলুন।
৩। বলা শেষ হলে, আবার বলুন, আপনি তাদেরকে এতক্ষণ কী বললেন।

তথ্যসূত্র: এখন, আপনার শক্তিশালী দিকগুলো আবিষ্কার করুন (Now, Discover Your Strengths), লেখক ডোনাল্ড ও. ক্লিফটন। The Free Press প্রকাশনী, ২০০১। পৃ. ৪২।

মঙ্গলবার, ৬ এপ্রিল, ২০২১

জবাবদিহিতা কীভাবে পরিমাপ করবেন?


 
how to measure accountability?

জবাবদিহিতা কীভাবে পরিমাপ করবেন?

পৃথিবীর সবকিছু পরিমাপ করা যায়, যদি আপনার কাছে পরিমাপ করার মতো পদ্ধতি থাকে।

Here’s the SIMPLE method for employee accountability, developed by Torben Rick:

  • S = Set expectations
  • I = Invite commitment
  • M = Measure progress
  • P = Provide feedback
  • L = Link to consequences
  • E = Evaluate effectiveness

এমন লোকজনকে নিয়োগ দিতে হবে যারা সমাধানের দিকে, ফলাফলের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়।

কর্মচারীরা যদি সঠিক জবাবদিহিতার পরেও প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল অর্জন করতে না পারে, তবে এ দুর্বলতা দূর করতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায়িক ম্যাগাজিন দ্য হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ’র পাঁচটি পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন: 

The Harvard Business Review identifies five methods to avoid employee disconnects:

Clear expectations – Have a dialogue that includes expectations, outcomes, solutions and input. Ask employees to summarize what’s been said to ensure understanding.

Clear capability – Pick the right person for the job by knowing what skills and resources are required to achieve the end result. Don’t set someone up for failure.

Clear measurement – Set weekly milestones with clear, measurable targets during the initial conversation. When things get off-track, respond to it immediately.

Clear feedback – Use data and metrics to show your employees where they are on-track and where they need to improve. Be honest and helpful, and make this a weekly ritual.

Clear consequences – Depending on the outcome, you can choose to repeat, reward or release. Repeat the above steps if there was a lack of understanding along the way. Reward employees if the goal was reached. Release an employee from the task if that person was not accountable, or was the wrong choice for the job.

কর্মচারীরা যদি প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল অর্জন করতে না পারে, তবে এ দুর্বলতা দূর করতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায়িক ম্যাগাজিন দ্য হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ’র পাঁচটি পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন:

সুস্পষ্ট প্রত্যাশা - একটি সংলাপ করুন যাতে প্রত্যাশা, ফলাফল, সমাধান এবং ইনপুট অন্তর্ভুক্ত থাকে। বোঝাপড়া নিশ্চিত করার জন্য কর্মচারীদের কী বলা হয়েছে তা সংক্ষেপে বলতে বলুন।

সাফ সামর্থ্য - শেষ ফলাফল অর্জনের জন্য কী দক্ষতা এবং সংস্থান প্রয়োজন তা জেনে কাজের জন্য সঠিক ব্যক্তিকে বেছে নিন। ব্যর্থতার জন্য কাউকে সেট আপ করবেন না।

পরিষ্কার পরিমাপ - প্রাথমিক কথোপকথনের সময় সাফ, পরিমাপযোগ্য লক্ষ্যগুলি সহ সাপ্তাহিক মাইলফলক সেট করুন। জিনিসগুলি যখন ট্র্যাক হয়ে যায় তখন তাৎক্ষণিকভাবে এতে প্রতিক্রিয়া জানান।

প্রতিক্রিয়া সাফ করুন - আপনার কর্মীদের কোথায় ট্র্যাক রয়েছে এবং কোথায় তাদের উন্নতি করতে হবে তা দেখানোর জন্য ডেটা এবং ম্যাট্রিক ব্যবহার করুন। সৎ এবং সহায়ক হন, এবং এটি একটি সাপ্তাহিক আচার করুন।

পরিষ্কার পরিণতি - ফলাফলের উপর নির্ভর করে আপনি পুনরাবৃত্তি, পুরষ্কার বা প্রকাশ করতে পারেন। পথে যদি বোঝার অভাব হয় তবে উপরের পদক্ষেপগুলি পুনরাবৃত্তি করুন। লক্ষ্য পৌঁছে গেলে কর্মীদের পুরস্কৃত করুন। কোনও ব্যক্তি যদি জবাবদিহি না করে বা এই কাজের জন্য ভুল পছন্দ হয় তবে কোনও কর্মচারীকে কাজ থেকে ছেড়ে দিন।

এমনকি উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো ব্যবহার করার পরেও ফলাফল ততটা প্রত্যাশা অনুযায়ী হতে না-ও পারে। এটার কারণ হতে পারে কোম্পানির লক্ষ্যগুলো খুবই অস্পষ্ট বা অনির্দিষ্ট; লক্ষ্যগুলো পরিমাপ করা কঠিন; অথবা লক্ষ্যগুলো অর্জন করার উপায় বা পন্থা অনিশ্চিত।

কর্মচারীদের জবাবদিহিতার জন্য কর্মদক্ষতার মানদণ্ডগুলো ব্যর্থ হতে পারে মূলত চারটি কারণে:

প্রত্যাশাগুলো বাস্তবসম্মত নয়।

কর্মচারীর কাজের ভূমিকার সাথে মানদণ্ডগুলোর কোনো সম্পর্ক না থাকা। কর্মচারীর কাজ একটা, আর আপনি বিচার করছেন অন্য কাজের ভিত্তিতে-এমন মানদণ্ড থাকলে হবে না।

যেসব ভিত্তিতে কর্মচারীকে আপনি বিচার করছেন, সেসব ভিত্তিতে আদৌ পরিমাপ করা যায় না।

কর্মচারীকে সাফল্য অর্জনের পরিষ্কার ও নির্দিষ্ট কোন পথ দেখানো হয়নি।

একজন ব্যবসায়ী নেতা হিসাবে, আপনি যখন দেখবেন আপনার কোম্পানির লক্ষ্যগুলো আপনার কর্মচারীদের জন্য অর্জন করা বাস্তবসম্মত নয়, তখন আপনাকে কোম্পানির লক্ষ্যগুলো পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করতে হবে। মূল কথা হচ্ছে, আপনার স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে হলে আপনার কর্মচারীদের আপনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বোঝাতে হবে এবং তাদেরকে এসব উদ্দেশ্য পূরণে সম্পৃক্ত করতে হবে, যাতে করে তারা নিজেরাই এসব উদ্দেশ্য পূরণের চেষ্টা করে। যেসব কর্মচারীরা এসব উদ্দেশ্য পূরণে নিজেরা সচেষ্ট হয় তারাই জবাবদিহিতাকে স্বাগত জানায়। এ খুব সহজ ব্যাপার। আপনি যখন আপনার কর্মচারীদের আপনার দূরদর্শী চিন্তায়, আপনার স্বপ্নে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ দিবেন, তখন আপনি তাদেরকে তাদের ব্যক্তিগত ও কোম্পানির সাফল্যের জন্য উদ্বুদ্ধ করলেন।


তথ্যসূত্র:

১। https://www.knowledgecity.com/blog/employee-accountability/

২। https://www.freepik.com/free-photo/finances-saving-economy-concept-female-accountant-banker-use-calculator_1211587.htm#page=1&query=accountability&position=48

৩।

৪।

শনিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২১

বই পর্যালোচনা: মিটিংস দ্যাট গেট রেজাল্টস। ব্রায়ান ট্রেসি।

#ব‌ই_পর্যালোচনা: মিটিংস দ্যাট গেট রেজাল্টস: ব্রায়ান ট্রেসি
Meetings that get results by Brian Tracy প্রকাশনা: AMACOM, American Management Association
প্রথম প্রকাশ, ২০১৬
© 2016 Brian Tracy
দাম: ১৭৫ টাকা
পৃষ্ঠা: ১১২ শিখেছিলাম কোনখানে? ঠেকেছিলাম যেইখানে।

একজন মানুষের কর্মজীবনের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সময় যায় কোনো না কোনো মানুষের সাথে সরাসরি বা দলবদ্ধভাবে মিটিংয়ের মাধ্যমে। তাই মিটিং যে আমাদের কর্মজীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, বিজ্ঞাপনের ৫০ শতাংশ অর্থ অপচয় হয়। কিন্তু কোন ৫০ শতাংশ তা বলা যাচ্ছে না। বিজ্ঞাপনের মতো মিটিংয়ের ক্ষেত্রেও তাই বলা যায়। বলা হয়, মিটিংয়ের ৫০ শতাংশ সময় অপচয় হয়। কিন্তু কোন ৫০ শতাংশ তা বলা কঠিন। তাই অনেকেই বুঝতে পারে না কীভাবে এ অপচয় রোধ করা যায় বা একে কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে হয়। এসব নিয়ে বিস্তারিত ও কার্যকর পদ্ধতি নিয়ে বলার জন্যই এ বই রচনা করা হয়েছে। একজন ম্যানেজার হিসাবে, আপনার কর্মজীবনের সাফল্য নির্ভর করে আপনি কীভাবে একটি মিটিংয়ের পরিকল্পনা করেন এবং মিটিং কীভাবে পরিচালনা করেন তার ওপর। সফল এক্সিকিউটিভ তথা কার্যনির্বাহীরা হচ্ছে এমন সব দক্ষ ব্যক্তি যারা জানে কীভাবে মিটিং কার্যকর ও সফলভাবে পরিচালনা করতে হয় এবং মিটিংয়ের পরিবেশকে সদর্থক রেখে দরকারি ফলাফল বের করে আনতে হয়। এ বইয়ে আমরা দুই ধরনের মিটিংয়ের কথা বলব। এক হচ্ছে দলবদ্ধ মিটিং, এর সাথে সবাই পরিচিত। যেকোনো সমস্যা সমাধানে বা উদ্যোগ নিতে এ ধরনের দলবদ্ধ মিটিং হয়ে থাকে। দুই হচ্ছে এক-এক মিটিং, মানে স্বতন্ত্র ব্যক্তি-ব্যক্তি যখন মিটিং হয় সেই মিটিং। এসব মিটিংয়ে লোকজন এক-এক করে তাদের বিষয়বস্তু ও আলোচ্যসূচি অনুযায়ী আলাপ-আলোচনা করে। সাক্ষাৎকার, কোনো ধরনের নিয়োগ দিতে, পুরস্কার প্রদান, প্রতিনিধি নির্বাচন বা কোনো ধরনের কাজ করার জন্য কাউকে কিছু বলতে গেলে এ ধরনের এক-এক মিটিংয়ের প্রয়োজন হয়। মিটিংয়ের ধরন। আইবিএম-এর প্রতিষ্ঠাতা থমাস জে. ওয়াটসন বলেন, মিটিংকে আরও কার্যকর ও সফল করতে চাইলে আপনাকে আগে থেকে মিটিং সম্পর্কে স্পষ্টভাবে ও সতর্কতার সাথে পুরোপুরি চিন্তাভাবনা করে রাখতে হবে।

পাঁচ ধরনের মিটিং আছে।

১। তথ্য শেয়ার করার মিটিং। এ মিটিংয়ে লোকজন একত্র হয় বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিচারবিবেচনা করার জন্য। তাছাড়া নতুন কোনো তথ্য পেলে তা একে অপরের সাথে গোল টেবিলে বসে শেয়ারও করা হয়।
২। সমস্যা সমাধানের মিটিং।
৩। কার্য নির্ধারণী মিটিং।
৪। পরিষদ সংক্রান্ত মিটিং। পরিষদ তথা কমিটি গঠন করা হয় কোনো একটি প্রকল্পের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য। প্রকল্পের নিরীক্ষণ, পুনর্নিরীক্ষণ ও পুনর্বিবেচনার জন্য এ ধরনের পরিষদ সংক্রান্ত মিটিং বসে। তারা মিটিংয়ে অতীতের কর্মকাণ্ড নিয়ে পুনর্নিরীক্ষণ করেন, সামনের দিকে গুণগত মান উন্নত করতে কী কী করা দরকার তার জন্য আলাপ-আলোচনা করেন এবং দরকারি দিক-নিদের্শনা দেন।
৫। শিক্ষণীয় ও ট্রেনিং মিটিং। মিটিংয়ের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করুন। আজকে মিটিং কেন করছেন? এর পিছনে কারণ কী? তাই স্পষ্ট করুন। লিখিত আকারে একটি কাগজে পরিষ্কার করুন। প্রশ্ন করুন।

প্রথমত, এই মিটিং কেন জরুরি? মনে রাখবেন, মিটিং করা যেমন জরুরি, তেমন মিটিং যদি দরকার না হয়, তবে মিটিং না করারও জরুরি। মিটিং যদি না করা হয়, তবে সবচেয়ে খারাপ কী হতে পারে?
দ্বিতীয়ত, মিটিংয়ে কাকে কাকে উপস্থিত থাকতে হবে? একইভাবে যাদেরকে মিটিংয়ে জরুরি তাদেরকে উপস্থিত হতে নির্দেশ দিন। আবার যাদের উপস্থিতি দরকার নেই, তাদেরকে মিটিংয়ে নিয়ে মিটিংকে বানচাল করার দরকার নেই। মিটিং করার কারণকে সকলের কাছে স্পষ্ট ও পরিষ্কার করে তুলুন।
তৃতীয়ত, মিটিংয়ের উদ্দেশ্য সকলের কাছে স্পষ্ট করে তুলুন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, মিটিং যদি সবচেয়ে ভালোভাবে সম্পন্ন হয় এবং সাথর্ক হয়, তবে কী রকম ফলাফল চাই? মিটিং করার আগে মিটিংয়ের ফলাফল নিয়ে আগে থেকে কল্পনা করে ঠিক করে নিন। ভুল সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করা। সবসময় সমস্যাকে ভালো করে চিহ্নিত করুন, বর্ণনা করুন। একটি কাগজে পরিষ্কার করে লিখুন। যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে গেলে কিছু জিনিসের পরিবর্তন করতে হয়, নতুন কিছু জিনিসপত্র দরকার হয়, ভিন্নভাবে কাজের পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু সমাধান করতে গিয়ে ভুল সমস্যার সমাধান করা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আপনি যে ঠিক সমস্যার সমাধান করছেন তা আগে থেকেই নিশ্চিত হোন। সমস্যার উপরিভাগে তাকিয়ে সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় না। সমস্যার গভীরে যান। সমস্যার মূল বিষয়বস্তু ধরে সমাধান করার চেষ্টা করুন। মিটিং করাকে কোম্পানির বিনিয়োগ বলে মনে করুন। মিটিংকে রিটার্ন অফ ইনভেস্টমেন্ট তথা বিনিয়োগের পর ফেরতযোগ্য মুনাফা হিসাবে চিন্তা করুন। আপনার কাজ হচ্ছে মিটিং করার আগে মিটিং সম্পর্কে পরিকল্পনা করা। মিটিংয়ের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য দরকারি সবকিছু যোগাড় করে রাখা, যাতে করে লোকজন এসে বলতে পারে, ‘এ এক অসাধারণ মিটিং ছিল। আমাদের সময়ের উত্তম প্রয়োগ হলো।’ Law of excluded alternative. ল অফ এক্সক্লুডেড অলটারনেটিভের মতে, একটি কাজ নির্বাচন করা মানে অন্য কয়েকটি কাজকে বাদ দেয়া। মানে আপনি যদি এখন পণ্যের ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেন, তার মানে আপনি কোম্পানির আয়-ব্যয়, লাভ-ক্ষতি বা ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলাপ করবেন না। একেই বলে বিকল্প সবকিছু বাদ দেয়ার সূত্র। মিটিংয়ে আপনার বিনিয়োগকৃত সময়েরও হিসাব করুন। শুধু নিজের নয়, অন্য যারা মিটিংয়ে অংশ নিচ্ছে তাদেরও সময়ের হিসাব করুন। মনে করুন, আপনি প্রতি ঘণ্টায় যত টাকা আয় করেন, সেই হিসাব করে মিটিংয়ের সময়ের হিসাব করুন। অন্যদেরটাও হিসাবে আনুন। এতে করে একটি মিটিংয়ে আপনাদের মোট কত টাকা ব্যয় হচ্ছে তা হিসাব করুন এবং একে বিনিয়োগ হিসাবে ধরুন। আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করুন। প্রায়ই দেখা যায়, মানুষ মিটিংয়ে অনেক সময় ধরে আলাপ-আলোচনা করছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো সমাধান বা উপসংহার ছাড়াই মিটিং শেষ হয়। এর অন্যতম কারণ তাদের মিটিংয়ে আলোচ্যসূচির অভাব। এতে করে মিটিংয়ের পর, প্রত্যেকের মধ্যে অসন্তুষ্টি তৈরি হয়। মিটিংয়ের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করুন। কাগজে লিখে নিন। মিটিংয়ের আলোচ্যসূচি কাগজে লিখে উপস্থিত সকলকে এক কপি করে দিন। এই কার্যবিবরণী পাঠ করে মিটিং আরম্ভ করুন। সবসময় মিটিং শুরু করবেন আলোচ্যসূচি দিয়ে। আজকের মিটিং এর উদ্দেশ্য বা কারণ হচ্ছে . . . - এমন বাক্য দিয়ে মিটিং শুরু করুন। আলোচ্যসূচিতে নানা ধরনের বিষয় থাকতে পারে। এগুলোকে গুরুত্ব ও প্রাধান্য অনুসারে সাজিয়ে নিন। নিজেকে জিজ্ঞেষ করুন, আমরা যদি বেশি সময় মিটিং করতে না পারি, কোনো কারণ মিটিং স্থগিত করতে হয়, তবে কোন একটি বিষয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করতে পারি? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেই একটি বিষয় কী?-তা কাগজে লিখে নিন। মিটিংয়ে সকলকে উপস্থিত থাকার দরকার নেই। আবার মিটিং করার সময় যেকাউকে মিটিংয়ে বসার অনুমতিও দেয়া যায় না। সকলকে দাওয়ার দিয়ে মিটিং করার কিছু নেই। এক্ষেত্রে গণতন্ত্র মানা যায় না। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: এই মিটিংয়ে আসলেই কাকে কাকে উপস্থিত থাকার দরকার আছে? মিটিংয়ের শুরুতে এসব কথা দিয়ে আরম্ভ করুন। একটি কাগজে আগে লিখে নিন। আমরা আজকে মিটিং করছি এ কারণে . . . আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে . . . মিটিং কখন শুরু হবে এবং কখন শেষ হবে তাও লিখে রাখবেন। মিটিং কীভাবে পরিচালনা করবেন? ব্যবস্থাপনার গুরু পিটার ড্রুকার লিখেছেন, ‘এক্সিকিউটিভ তথা কার্যনির্বাহীদের দক্ষতার অন্যতম উপাদান হচ্ছে মিটিং, প্রেজেন্টেশন ও রিপোর্ট তথা বিভিন্ন ধরনের প্রতিবেদন।’ আপনাকে এ তিন বিষয়েই উত্তম হতে হবে। মিটিং শুরু করবেন: আমরা আজকে মিটিং করছি এ কারণে . . . আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে . . . মিটিং কীভাবে শুরু করবেন?-তাও পরিকল্পনা করে নিন। সকলকে জানিয়ে দিন কখন মিটিং আরম্ভ হবে এবং কখন শেষ হবে। মিটিং সময়মতো আরম্ভ করতে হবে। যে পরে আসবে তাকে বাদ দিয়ে মিটিং আরম্ভ করতে হবে। মনে করবেন, যে দেরিতে আসে সে আসলে মিটিংয়ে আসতেই চায় না। সরাসরি কথা বলুন। আমরা আজকে মিটিং করছি এ সমস্যার সমাধান করতে। সরাসরি বক্তব্য দিয়ে মিটিং আরম্ভ করুন। সকলকে মুক্তভাবে কথা বলতে উৎসাহিত করুন। প্রত্যেক ব্যক্তিকে কিছু না কিছু অবদান রাখতে উৎসাহ দিন। যারা কথা বলতে লজ্জাবোধ করে, তাদেরকেও উৎসাহ দিন। উৎসাহ দিলে এমনও লোকও ভালো বুদ্ধি বা ধারণা দিতে পারে। দেখা গেছে, যারা একটু চুপচাপ থাকে, তারা অনেক সময়ই অসাধারণ সব আইডিয়া দেয়, যদি তাদেরকে যথেষ্ট পরিমাণ উৎসাহ ও সুযোগ দেয়া হয়। সবাইকে তার মতামত জানাতে উৎসাহিত করতে হবে। মূল আলোচ্য বিষয় (issue) নিয়ে সকলকে কথা বলতে হবে। অন্য বিষয়ের দিকে ঝুঁকে পড়লেও মিটিং নেতাকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে এবং সকলকে আলোচ্যসূচি নিয়ে কথা বলতে উৎসাহ দিতে হবে। এক চেয়ারে বসে না থেকে টেবিলের চারপাশে একটু হেঁটে আসুন। এতে করে সকলেই অবদান রাখতে উৎসাহ বোধ করবে। কেউ কর্তৃত্ব করতে চাইলে তাকে নিয়ন্ত্রণ করুন। কোন একজন শুধু বলে যাবে, আর অন্যরা কেবল চুপ করে শুনবে, তা হয় না। কেউ এমন লেকচার দিতে চাইলে তাকে নিয়ন্ত্রণ করুন। আলোচ্যসূচির মধ্যে থাকুন। একজন মিটিং নেতার অন্যতম কাজ হচ্ছে সকলের আলোচনাকে আলোচ্যসূচির মধ্যে রাখা। অনেক সময়ই লোকজন কথা বলতে বলতে আলোচ্যসূচির বাইরে চলে যায়। সেখান থেকে আলোচনাকে আলোচ্যসূচির মধ্যে মিটিং নেতাকেই নিয়ে আসতে হবে। মিটিংয়ের দুইটি অপচয়কারী বা সমস্যা উদ্রেককারী উপাদান হচ্ছে: ১। আলোচ্যসূচি অনুযায়ী আলাপ-আলোচনা না হওয়া। ২। একটি সমাধান বা উপসংহারের জন্য চাপ দিতে না পারা। প্রতিটি বিষয় বা পয়েন্ট আলোচনার পর একটি উপসংহার টানুন। মিটিং শেষে সকলকে জানিয়ে দিন আজকের আলাপ-আলোচনা থেকে কী পাওয়া গেল। সকলকে লিখিত আকারে মিনিটস অফ মিটিং তথা মিটিংয়ের সারসংক্ষেপ জানিয়ে দিন। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে মিটিংয়ের সারসংক্ষেপ সকলের কাছে পৌঁছে দিন। কাগজে প্রিন্ট করে, ইমেইলে বা চিঠিতে, যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবে সকলের কাছে সারসংক্ষেপ পৌঁছে দিন। এতে করে কারও কোনো প্রশ্ন থাকলে তা জানাতে পারবে। আর তাছাড়া মিটিংয়ে যা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা সকলেই স্পষ্ট ও লিখিত আকারে জানতে এবং নিশ্চিত হতে পারলো। মিটিংয়ে অংশগ্রহণের কিছু কলাকৌশল। মিটিং হচ্ছে আপনার কর্মজীবনে উন্নতি করার অন্যতম কলাকৌশল। সবসময় মনে রাখবেন আপনি মিটিংয়ে কেমন আচরণ করছেন, মিটিং কীভাবে পরিচালনা করছেন, তা মানুষজন দেখছে। মিটিংয়ের পূর্বপ্রস্তুতি নিন। সবাই যেন বুঝতে পারে আপনি মিটিং করতে আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন। প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে পেশাগত আচরণের লক্ষণ। আর আপনি যদি আগে থেকে প্রস্তুতি না নেন, তাও কিন্তু সকলের চোখে ধরা পড়বে। আগে আগেই কথা বলুন। দলের মধ্যে আপনিও যে একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তা জানাতে আগে আগে কথা বলুন। আলোচ্যসূচি নিয়ে কথা বলুন। মিটিংয়ের আলোচ্যসূচির ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ও বুদ্ধিমত্তার সাথে প্রশ্ন তুলুন। অন্যদের কাজকর্ম ও প্রতিবেদন প্রকাশ করলে তা নিয়েও কথা বলুন। কিছু না কিছু অবদান রাখুন। যারা মিটিংয়ে কোনো অবদান রাখতে চায় না, তাদের সম্পর্কে মনে করা হয় তাদের আসলে অবদান রাখার মতো যোগ্যতা নেই। যারা মিটিংয়ে কোনো কথা বলে না, তাদের সম্পর্কে মনে করা হয় তাদের কাছে মূল্যবান কিছু বলার মতো নেই। এতে অন্যদের সামনে ব্যক্তির যোগ্যতা ক্ষুণ্ন হয়। কোম্পানিতে যারা ভবিষ্যতে নেতা হবে, আর উপরের পদে দায়িত্ব পালনের জন্য পদোন্নতি পাবে, তাদেরকে কোম্পানি নির্বাচন করে মিটিংয়ে কে কেমন অবদান রাখছে তার ভিত্তিতে। সমস্যা সমাধানের মিটিং। প্রায় সময়ই মানুষজন মিটিংয়ের উদ্দেশ্য পরিষ্কার করতে ভুলে যায়। সমস্যা ঠিকভাবে নির্ণয় করতে না পারলে, সমাধানও পাওয়া যায় না। আর মিটিংয়ের উদ্দেশ্যই হচ্ছে সমস্যাকে স্পষ্টভাবে নির্ণয় করা, সকলে সম্মত হয়েছে এমন এক সমাধান খোঁজা। তারপর উক্ত সমাধান কাজে পরিণত করতে কাউকে দায়িত্ব দেয়া এবং কাজে নেমে পড়া। এখানে সফলভাবে সমস্যা সমাধানের মিটিং পরিচালনা করার জন্য কিছু আইডিয়া দেয়া হলো: সমস্যাকে স্পষ্টভাবে নির্ণয় করুন। সমস্যাকে লিখিত আকারে পেশ করুন। একটি কাগজে লিখে ফেলুন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয় সমস্যা নির্ণয় করা মানে অর্ধেক রোগ ভালো হয়ে যাওয়া। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও তাই। সমস্যাকে স্পষ্টভাবে নির্ণয় করুন। আর কী সমস্যা আছে? এটা কী আসলেই কোনো সমস্যা, নাকি কোনো ধরনের সুযোগ? ভালো করে চিন্তা করুন। আর প্রশ্ন করুন। বারবার জিজ্ঞেস করুন। আর কী সমস্যা আছে? সবাই যখন সমস্যাকে স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবে, উল্লেখ করবে, তারপর জিজ্ঞেস করুন, সমাধান কী? পরিবর্তনের চারটি উপায়। দীর্ঘদিনের গবেষণা থেকে জানা যায়, যেকোনো সমস্যাকে সমাধান করতে চারটি ধাপ দরকার। এক, কিছু কিছু জিনিস আপনি আরও বেশি বেশি করতে পারেন। তবে কী কী জিনিস করবেন? যেসব জিনিস বা কাজ করলে আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি মুনাফাদায়ক তা করবেন। দুই, কিছু কিছু জিনিস আপনি আরও কম কম করতে পারেন। তবে কী কী জিনিস কম করবেন? যেসব জিনিস বা কাজ করলে আপনার জন্য মোটেই মুনাফাদায়ক হচ্ছে না সেগুলো কম করবেন। তিন, আপনি সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু তথা নতুন কিছু আরম্ভ করতে পারেন। সম্পূর্ণ নতুন কোনো পণ্য বাজারে আনতে পারেন। নতুন কোনো দাম বা প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি কাস্টমারকে প্রস্তাব করতে পারেন। ম্যাকিয়াভেলি বলেন, ‘নতুন কিছু প্রবর্তন করার চেয়ে কঠিন জিনিস আর কিছু নেই। এর প্রতি সবার অনাগ্রহ ও প্রতিরোধ থাকে। যাদের আগ্রহের প্রতি এটা হুমকি স্বরূপ তারা এর বিরোধিতা করে। আর যাদের কিছু দুর্বল সমর্থন থাকে, তাদের চিন্তা থাকে এর দ্বারা তারাই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি লাভবান হলেও তাদের সমর্থন থাকে খুবই দুর্বল।’ চার, কিছু কিছু জিনিস বা কাজ করা আপনি একেবারেই বাদ দিতে পারেন। আপনি যখনই কোনো সমস্যা নিয়ে লড়াই করছেন, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘এখন আমরা যা জানি, তা যদি আগে জানতাম, তবে কি আমরা এ কাজ শুরু করতাম?’ বর্তমান তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তথ্য আসছে। আপনি এখন যা জানেন, তা যদি আগে জানতেন, তাহলে কি এ কাজ শুরু করতেন? যদি না করতেন, তবে এখন এ কাজ বাদ দিন। কারণ এ কাজ করে গেলে আরও ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। সিদ্ধান্ত নেয়ার কাঠামো তৈরি করুন। কেন সিদ্ধান্ত নিবেন? সিদ্ধান্ত নিতে কী কী জিনিস দরকার? এগুলো ঠিক করে নিন। ‘বিকল্প চিন্তা পদ্ধতি’ সম্পর্কে আমরা তো জানি। একটি সমস্যার একাধিক সমাধান হতে পারে। তাই সবসময় নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আর কী সমাধান হতে পারে? সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে যত বেশি আলাপ-আলোচনা হবে, তর্ক-বিতর্ক হবে তত উত্তম। যা সম্মতি অসম্মতি হওয়ার তা যেন মিটিং টেবিলেই প্রকাশ পায়। তর্ক-বিতর্ক যত কম হবে, তত বেশি বাইরে গিয়ে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে কথাবার্তা হবে। তাই মিটিংয়ের টেবিলেই সবকিছু বলার জন্য উৎসাহ দিন। আপনার সিদ্ধান্তকে পরীক্ষানিরীক্ষা করুন। সবসময় ব্যক্তির চেয়ে সমাধানের দিকে নজর দিন। কে কোন কথা বলল, তা চিন্তা করার চেয়ে সমাধান কী কার্যকর কিনা তা চিন্তা করুন। আপনার সমাধান যেন সকলের কাছে স্পষ্ট ও পরিষ্কার করে বলা হয়েছে তা নিশ্চিত করুন। আর সমাধান যেন পরিমাপ করা যায়। কারণ পরিমাপ করতে পারলেই আপনি বুঝতে পারবেন কতদূর সামনে অগ্রসর হলেন। সবাই যাতে সমাধানের সাথে একমত হয়, সেই ব্যাপারেও নিশ্চিত হোন। পরিমাপ ও পর্যবেক্ষণ করুন। সমস্যার সমাধান তো হলো। এরপর সমাধান পরিমাপ ও পর্যবেক্ষণ কীভাবে হবে তা নিয়ে সকলে একমত হওয়া খুব জরুরি। সাধারণত একটি দলে চারজন ব্যক্তি সব কাজের সাথে জড়িত: প্রত্যেকে, কোনো একজন, যে কেউ এবং কেউ না। কোন একটি কাজ এ চারজনের একজন করবে বলে মনে করলে কাজ তো হবেই না; বরং পুরো প্রকল্পের ক্ষতি হতে বাধ্য। দেখা যায়, ‘প্রত্যেকে’ যখন কোনো একটি সমস্যার সমাধানে একমত হয় এবং কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হয়, তখন কে কোন কাজটি করবে তা নির্দিষ্ট করা হয় না। তখন ‘কোনো একজনের‘ ওপর কাজটির দায়িত্ব পড়ে। ফলে ‘যে কেউ’ কাজটি করার দায়িত্ব পায়। তাই কোনো চিন্তা করার কিছু নেই। দিনশেষে দেখা যায়, কেউই কাজটি করেনি। কারণ যে কাজ ‘যে কেউ’ করতে পারে, সেই কাজ ‘কেউ করে না’। সিদ্ধান্ত নেওয়ার মিটিং পদ্ধতি: ক। সবাইকে মন খুলে কথা বলার জন্য উৎসাহিত করেন। খ। একটি পরিষ্কার সিদ্ধান্তে সবাই একমত হোন। এখানে সবার সম্মত হওয়া খুবই জরুরি। গ। সিদ্ধান্তের সাথে শতভাগ অঙ্গীকারাবদ্ধ হোন। সবাইকে মন খুলে কথা বলার জন্য উৎসাহিত করুন। মন খুলে কথা বলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি তার বক্তব্য মন খুলে বলতে না পারে তবে সে মিটিং থেকে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তার সাথে একমত পোষণ করবে না এবং সে অনুযায়ী দলবদ্ধভাবে কাজও করবে না। সবার বক্তব্য ধৈর্য ধরে শুনুন। যেকোনো অবাক হওয়ার মত তথ্য বা কথা শুনতে প্রস্তুত থাকুন। একটি পরিষ্কার সিদ্ধান্তে সবাই একমত হোন। এখানে সবার সম্মত হওয়া খুবই জরুরি। সিদ্ধান্তের সাথে শতভাগ অঙ্গীকারাবদ্ধ হোন। কাউকে না কাউকে অবশ্যই সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সবাই হয়তো সিদ্ধান্তের সাথে পুরোপুরি একমত হবে না। কিন্তু সব তথ্য-উপাত্ত বিচারবিবেচনা করে একজনকে অবশ্যই সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মিটিংয়ে সমস্যা। মিটিংয়ে সমস্যা হতে পারে। একটি কার্যকর ও সফল মিটিং করতে মিটিংয়ের সমস্যা ও বাধাগুলো নিয়ে আপনার আগে থেকে সতর্ক হওয়া দরকার। বাধাগুলো নিয়ে ঠিকভাবে চিন্তা করুন এবং ভালো সিদ্ধান্ত নিন। এক কেন্দ্রমুখী চিন্তা (convergent thinking)। দলবদ্ধভাবে কাজ করতে গেলে এক কেন্দ্রমুখী চিন্তা খুব মারাত্মক। দলের মধ্যে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় সমস্যার বিভিন্ন সমাধান সম্পর্কে চিন্তা না করে কেবল এক কেন্দ্রমুখী চিন্তা করে সমাধান নেয়াকে এক কেন্দ্রমুখী চিন্তা বলে। জেনারেল মটরস কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা আলফ্রেড পি. স্লোয়ান এক কেন্দ্রমুখী চিন্তার বিপদজনক দিক সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তিনি দেখলেন, এক্সিকিউটিভদের মধ্যে কোনো একটি সমস্যা নিয়ে কথা হলে, এর একটি সমাধান কেউ বললেই বাকি সবাই বলে হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক আছে। তাতে বোঝা গেল বাকিরা এ সমস্যা সম্পর্কে কিছুই চিন্তা করছে না। তাই তিনি সকলকে মিটিংয়ে সমস্যা সম্পর্কে বলতেন। তারপর নির্দেশ দিতেন, সকলে এ সমস্যা সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্থাপিত সমাধানের সাথে কেন একমত নয় তা জানাবে। তিনি সকলকে সমস্যা সম্পর্কে গুরুতরভাবে চিন্তা করতে চাপ দিল। তিনি অভিজ্ঞতা থেকে দেখলেন, দলবদ্ধভাবে কোনো সমস্যা সম্পর্কে বললে, লোকজন কোন একটা সমাধান আসা মাত্রই আর কোনো ধরনের চিন্তাভাবনা করা ছেড়ে দেয়। তাই তিনি সতর্কভাবে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। মিটিংয়ে জোরে কথা বলুন এবং দ্রুত বলুন। তবে এর বিপদও আছে। যারা মিটিংয়ে জোরে কথা বলে, আওয়াজ বেশি দিয়ে কথা বলে, তারা মিটিংয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে। তারা হয়তো দলের কোনো দুর্বল সিদ্ধান্তে সকলকে একমত হতে বাধ্য করতে পারে। আমাদের সবসময় চিন্তা থাকা দরকার, দলের জন্য সবচেয়ে ভালো কী সিদ্ধান্ত হতে পারে তা বিবেচনা করা। দায়িত্ব নিন। একজন দলনেতা হিসাবে আপনি দুইটি কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। প্রথমত, জোরে কথা বলা লোকটিকে মিটিংয়ের আগে আলাদা করে বলবেন তিনি যেন অন্যদের কথা বলার সুযোগ দেন। দ্বিতীয়ত, কেউ যদি মিটিংয়ে উঁচু গলায় জোরে কথা বলে কর্তৃত্ব করা আরম্ভ করে, তবে আপনি এমন কিছু বলতে পারেন, ‘এ তো বেশ ভালো আইডিয়া। চলুন, এ ব্যাপারে অন্যরা কী চিন্তা করে তা শোনা যাক।’ দলের অন্য সদস্যদের কথা বলতে উৎসাহিত করুন। সিদ্ধান্ত গ্রহণে পলিটিকস বর্জন করুন। কারও হয়তো ম্যানেজমেন্টে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বেশি। এ কারণে মিটিংয়ে তিনি যা বলেন, তার সাথে দলের অন্যান্য সদস্যরা একমত না হলেও মুখে হ্যাঁ বলে। এটা দলের অন্যান্য সদস্যদের জন্য অস্বস্তিদায়ক। এ ধরনের পলিটিকাল সিদ্ধান্ত পুরো সংগঠনের জন্য মারাত্মক হয়ে দেখা দিতে পারে। কারণ ক্ষমতাবান কেউ একজন একটি সমাধান দিল, যা দুর্বল হতে পারে, বাকিরা এর দুর্বলতা না দেখিয়ে এর সাথে একমত হলো। তখন মূল ক্ষতি পুরো কোম্পানির হবে। অকার্যকর ও অসফল মিটিং হওয়ার কারণ। মিটিং অসফল হওয়ার একটি প্রধান কারণ হচ্ছে মিটিংয়ের অস্পষ্ট বা অনিশ্চিত লক্ষ্য। লোকজন ঠিক জানে না যে কেন এ মিটিং ডাকা হয়েছে, মিটিংয়ের লক্ষ্য আসলে কী হওয়া উচিত। মিটিংয়ে দুর্বল নেতৃত্ব মিটিং অকার্যকর হওয়ার আরেকটি কারণ। সময়সূচি অনুযায়ী মিটিং আরম্ভ করতে ব্যর্থ হওয়া। যখন মিটিং আরম্ভ করার সিদ্ধান্ত নিবেন তার এক মিনিট পর মিটিং রুমের দরজা বন্ধ করে দিন। যারা এসেছে তাদের নিয়ে মিটিং আরম্ভ করুন। আর কাউকে রুমে ঢুকতে দিবেন না। মিটিংয়ের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা। মিটিংয়ের সদস্যদের মিটিংয়ের আলোচ্যসূচি অনুযায়ী আলাপ করতে হবে। আলোচ্যসূচি ভিন্ন নানান বিষয় নিয়ে আলাপ করে মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া মিটিং অকার্যকর হওয়ার একটি কারণ। নানান বিষয় নিয়ে কথা হতেই পারে। তবে মিটিং নেতাকে এ ব্যাপারে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলাপ হলেও মিটিং নেতাকে আলোচনা আবার আলোচ্যসূচির দিকে নিয়ে আসতে হবে। মিটিং মানে কোনো বক্তৃতা নয়। একজন বলবে, বাকিরা শুনবে, এটা মিটিং নয়। মিটিংয়ে সকলকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। কোনো একটি উপসংহারে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়া। মিটিংয়ে সদস্যদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়া। এজন্য আমি চেষ্টা করি, বিভিন্ন সদস্যকে মিটিংয়ের নেতা হিসাবে দায়িত্ব দিয়ে মিটিংকে প্রাণবন্ত করে তুলতে। তদারকির অভাব। কাজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, কিন্তু কাজটি কে করবে, তাকে কে তদারক করবে তা নির্ধারণ না করলে কাজের অগ্রগতি নিশ্চিত করা যায় না। মিটিং নেতার এটা দায়িত্ব কোন একটি কাজের সিদ্ধান্ত হলে তা কে করবে, তাকে কে তদারক করবে বা কাজের পরবর্তী সময় উক্ত কাজ সম্পর্কে কার কাছে প্রতিবেদন জমা দিবে তা বলে দেয়া। আমার প্রিয় প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে আমাদের পরবর্তী কাজ কী? এখন আমরা কোথায় আছি? কাজটি কে করবে? কাজটি কখন শেষ হবে এবং কাজের অগ্রগতি আমরা কীভাবে পরিমাপ করব? এসব প্রশ্নের স্পষ্ট ও লিখিত জবাব দরকার। মিটিং কোথায় হবে তা দেখতে ভুলবেন না। মিটিং রুমে আলোর মাত্রা কম বা তাপমাত্রা বেশি ঠান্ডা বা গরম তা আগেই দেখে নিন। সবসময় মিটিং রুম আগে দেখে নিন সব ব্যবস্থা যথাযথ আছে কিনা। একজনের-সাথে-একজনের ব্যক্তিগত মিটিং। একজন কর্মচারী তার বসের সাথে কতটা মুক্তভাবে কথা বলতে পারে তার ওপর উক্ত কর্মচারীর কর্মদক্ষতা ও সৃজনশীলতা সরাসরি নির্ভর করে। বসের সাথে কর্মচারীর যত বেশি মুক্ত ও স্বাধীনভাবে কথা হবে, যত সহজ সম্পর্ক ও সহযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ থাকতে তত বেশি কর্মচারী কর্মদক্ষ হয়ে উঠবে। লক্ষ্য নির্ধারণ এবং পুনর্নিরীক্ষণ। অন্যান্য মিটিংয়ের মতো একজনের-সাথে-একজনের ব্যক্তিগত মিটিংয়েও লিখিত আলোচ্যসূচি থাকতে হবে এবং উভয় পক্ষকে এটা অনুসরণ করতে হবে। প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা এবং সতর্কভাবে শ্রবণ করা। এ প্রশ্ন দিয়ে আরম্ভ করতে পারেন, সবকিছু কেমন চলছে? সবসময় মনে রাখবেন, যে প্রশ্ন করে সেই নিয়ন্ত্রণ করে। আপনার প্রশ্ন কেমন, কখন, কে এবং কোনটা দিয়ে আরম্ভ করতে পারেন। যাতে করে কেবল হ্যাঁ বা না-তে উত্তর না দিয়ে, একটু ব্যাখ্যা করে উত্তর দিতে হয়। এ ব্যাপারে আমাদের কী করা উচিত বলে তুমি মনে করো? একজনের-সাথে-একজনের ব্যক্তিগত মিটিংয়ের সময়সীমা সবচেয়ে ভালো হয় ষাট থেকে নব্বই মিনিট হলে। আগে থেকে মিটিংয়ের সময়সীমা নির্ধারণ করুন। আমি আমার চাকরি জীবনের শুরুতে প্রায় সময় সন্ধ্যা ৬টার পরেও কাজ করতাম। আমাদের অফিসের ২০০ কর্মীর মধ্যে আমি এবং আমার বসের ডেস্কের বাতি ৬টার পরেও জ্বলত। একদিন আমার বস আমাকে তার ক্যাবিনে ডাকেন। আমরা এক ঘণ্টার মতো আলাপ করি। এরপর থেকে প্রতি সপ্তাহে তিনি আমাকে তিন-চারদিন তার ক্যাবিনে ডাকতেন এবং আমরা ত্রিশ থেকে ষাট মিনিট আলাপ করতাম। তিনি আমাকে তার অভিজ্ঞতার দ্বারা ঋদ্ধ করতেন। তিনি আমাকে এ সময় নিয়ে মেনটরিং করেছেন। এ মেনটরিং আমার পরবর্তী জীবনের দিক-নির্দেশনা হয়ে দেখা দিয়েছে। [মেনটরিং সম্পর্কে আরও পড়ুন: মেনটরিং ১০১। জন সি. ম্যাক্সওয়েল। অনুবাদ: ফজলে রাব্বি। ঢাকা, সাফল্য প্রকাশনী, ২০২১।] প্রতিনিধির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের মিটিং। প্রথম কাজ হচ্ছে একটি সহজ কাজ কোন একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে দিয়ে করানোর কোনো দরকার নেই। আপনার কাজ হচ্ছে কাজগুলোকে জ্ঞান, দক্ষতা ও ব্যক্তির ঘণ্টা প্রতি আয়ের ওপর নির্ভর করে হস্তান্তর করা। কাজ হস্তান্তর করার সময় দায়িত্বটি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করুন। কাজ নিয়ে একজন কর্মচারী বসের সাথে যত বেশি আলোচনা করার সুযোগ পাবে সে তত বেশি কাজ সম্পন্ন করার প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকবে। কাজটি কি ঠিকভাবে বুঝতে পেরেছে-তা জিজ্ঞেস করুন। কখনো মনে করবেন না, আপনি বলা মাত্রই লোকজন বুঝতে পেরেছে। যাকে কাজের দায়িত্ব দিবেন, তাকে জিজ্ঞেস করুন। প্রশ্ন করুন। আপনাকে আবার বলতে বলুন যে সে কী বুঝেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, মিটিংয়ের সদস্যরা কাজ সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে না পেরেই মিটিং শেষ করেছে। দেখা যায়, ত্রিশ বা ষাট মিনিটের একটি মিটিংয়ের পর লোকজন প্রায় ৫০% জিনিস ভুল বোঝে বা ভুলভাবে ব্যাপারটাকে ব্যাখ্যা করে। তাই আমি সবসময় মিটিংর শেষে লোকজনকে জিজ্ঞেস করি, তারা ঠিক কী বুঝতে পেরেছে। সময়সীমা (ডেডলাইন) দিন এবং একটি সময়সূচি (শিডিউল) তৈরি করুন। মনে রাখবেন, একটি সময়সীমা ছাড়া একটি কাজ দেওয়া মানে শুধু আলোচনা করে যাওয়া। কাজের কাজ কিছুই হওয়ার নয়। আপনি যদি অন্য কাউকে কাজের জন্য দায়িত্ব দিয়ে থাকেন, তবুও কাজটি হয়েছে কিনা, কাজের অগ্রগতি ও কাজটা সময়মতো হলো কিনা-তা জানার দায়িত্ব কিন্তু আপনারই থাকে। প্রতিনিধির হাতে কাজের দায়িত্ব দিয়ে, পরের কাজ হলো কাজের অগ্রগতি জানাবে বা প্রতিবেদন জমা দিবে-এমন সময়সূচি নির্ধারণ করুন। কোন তারিখে আপনার সাথে দেখা করে কাজের অগ্রগতি জানাবে তা নির্দিষ্ট করুন। অফিসের বাইরের মিটিং। আপনি যদি অফিসের বাইরে মিটিং করেন, তবে আশেপাশের সবকিছু হয়তো আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। কিন্তু আপনার পক্ষে যতটুকু নিয়ন্ত্রণ নেয়া সম্ভব ততটুকু নিতে আপনার উদ্যমী হতে হবে। সবসময় মিটিংয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে আগে কথা বলুন। যার সাথে মিটিং করবেন, তার সাথে মিটিংয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে আগেই কথা বলে রাখুন। ধরুন বললেন, আমরা মিটিংয়ে এ এ বিষয়ে একমত হতে চাই। মিটিংয়ের উদ্দেশ্য সম্পর্কে পরিষ্কার হতে লিখিত আলোচ্যসূচি রাখুন। মিটিং কেন করছেন তা আগে থেকে পরিষ্কার থাকুন। আপনার নিজের কাছে এবং যার সাথে মিটিং করবেন তাকেও এ ব্যাপারে অবহিত করুন। এ সম্পর্কে যা কিছু পান পড়ে নিন। দরকারি জিনিসপত্র গুছিয়ে নিন। মনে রাখবেন, আপনার সময়ের দাম আছে। মিটিং করতে যে সময় আপনি বিনিয়োগ করবেন, তা আপনার কাছে বেশ মূল্যবান। বিশেষ করে, মিটিং করতে হলে আপনাকে আপনার অফিস ভিন্ন এক জায়গায় পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হবে। মিটিংয়ের উদ্দেশ্যের ব্যাপারে কাগজে লিখে রাখুন। রিকশা, বাস, গাড়ি বা প্লেন যাতে করেই আপনি যাতায়াত করুন না কেন, এ সময় যানজটে বসে থাকলে বা স্বল্প সময় পেলেও, মিটিংয়ের উদ্দেশ্য কাগজে লিখে ফেলুন। মিটিংয়ে কী কী জিনিস আপনি অর্জন করতে চান?-সে সম্পর্কে তালিকা আকারে লিখে ফেলুন। মিটিং যদি সফল হয়, তবে আপনি কী ফলাফল পেতে চান?-সেই ব্যাপারে আগে থেকে কল্পনা করুন। কী পরিস্থিতি দেখতে চান এবং কী ফল চান? কোনো ধরনের দরজা বা মানুষের যাতায়াতের পথের দিকে না বসে দেওয়ালের দিকে পিঠ দিয়ে বসুন। এতে করে আপনার ওপর পূর্ণ মনোযোগ থাকবে। প্রস্তুতি নিয়ে বসুন। পেশাগত পোশাক পরিধান করুন। পেশাগত আচরণ করুন। কত সময় ধরে মিটিং করবেন সেই সম্পর্কে আগে থেকে নিশ্চিত হোন। আমরা বিকাল ৪.০০টা থেকে ৫.০০টা পর্যন্ত মিটিং করব। ঠিক আছে কি? সময়ের ব্যাপ্তি নির্ধারণ করলে মিটিংয়ের আলোচ্যসূচি নিয়ে আলাপ করতে সুবিধা হয়। দরকার হলে মিটিংয়ের সময়সূচি বাড়াতে পারেন, কিন্তু সবসময় আগে থেকে মিটিংয়ের শুরু ও শেষ সময় নির্ধারণ করে নিবেন। এতে করে মিটিংয়ের বিষয়সূচির মধ্যেই থাকবেন, এদিক-ওদিক নিয়ে আলোচনা হবে না। উপসংহারের জন্য চাপ দিন। সবসময় আলোচনা শেষ করে একটি উপসংহারের জন্য চাপ দিন। মিটিং শেষে সবসময় আজকের মিটিংয়ে তাহলে এই এই বিষয়ে আমরা একমত হলাম, এ এ সিদ্ধান্ত হলো-এমন বক্তব্য দিন। এসব সিদ্ধান্ত কে বাস্তবায়ন করবে, কার কী কাজ, কখন করবে, কার কাছে প্রতিবেদন জমা দিবে এবং আবার কবে কাজের পুনর্নিরীক্ষণ হবে তা বলুন। মিটিংয়ে পর্যাপ্ত তথ্য টুকে রাখুন। বলা হয়, মিটিংয়ে যে সবচেয়ে ভালো নোট নিতে পারে তার হাতেই ক্ষমতা। আপনার কর্মজীবনে সাফল্য নির্ভর করে আপনি মিটিংয়ে কী করতে পারলেন, কী করতে পারলেন না, মিটিংয়ের অন্যান্য সদস্যদের কী রকম সুযোগ দিলেন, সকলকে কী রকম আলোচ্যসূচিতে অংশগ্রহণ করালেন-এসবের ওপর। এসব মিটিংয়ের প্রস্তুতিতে আপনার ইচ্ছা ও সক্ষমতাই আপনার কর্মজীবনে বিরাট ভূমিকা পালন করবে। মিটিংয়ের আনুষাঙ্গিক সুবিধাদির ব্যবস্থা করা - অভ্যন্তরীণভাবে আমি বহুবছরের ট্রেনিং ও মিটিং কার্যক্রম চালানোর পর এ সিদ্ধান্তে এসেছি: মিটিংয়ের পূর্বে যথাযথ প্রস্তুতি নিলে বাজে অবস্থার তৈরি হয় না। মিটিং বেশ সফল ও কার্যকর হয়। মিটিংয়ের ৯০ শতাংশ সাফল্য নির্ভর করে প্রস্তুতির ওপর। তাই বলে অতিরিক্ত প্রস্তুতি নেয়ার দরকার নেই। আর আগে থেকে কিছু অনুমান করে সিদ্ধান্ত নিবেন না। মিটিংয়ের রুম থেকে আরম্ভ করুন। সবকিছু ঠিক হবে এমন অনুমান না করে আগে থেকে সবকিছু দেখে নিন। পিটার ড্রুকার বলেন, ‘বেশির ভাগ ব্যর্থতার মূল হচ্ছে ভুল অনুমান।’ একটি সাদা কাগজে ছোট ছোট বক্স করে চেকলিস্ট তৈরি করুন। যেমন: [] আলোচ্যসূচি তৈরি করতে হবে [] সকলকে এক কপি করে আলোচ্যসূচির কাগজ দিতে হবে [] একটি উপসংহারে আসতে হবে [] বিরতি হবে ১৫ মিনিটের [] বিরতির সময় ছোলা-মুরি ও রঙ চায়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে এভাবে একটি চেকলিস্ট তৈরি করে সবকিছুর ব্যবস্থা করুন এবং তদারকি করুন। তদারকির সময় সবকিছু দেখে নিন এবং চেকলিস্টে একটা একটা করে টিকচিহ্ন দিন। সবকিছু পর্যায়ক্রমে আছে কিনা তা-ও দেখুন। একদম তালিকার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত দেখে দেখে টিকচিহ্ন দিয়ে যান। আপনার লক্ষ্য হচ্ছে মিটিংয়ের লোকজন যেন আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র খুব সহজেই পায়। তাদের যেন এ নিয়ে কোনো চিন্তাই করতে না হয়। পিটার ড্রুকার বলেন, একটি কোম্পানির মূল সম্পদ হচ্ছে এক্সিকিউটিভের চিন্তাভাবনার সময়। কারণ চিন্তাভাবনা করেই সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়, নিত্যনতুন আইডিয়া পাওয়া যায়। বলা হয় মিটিং রুমের জন্য ৬৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সবচেয়ে ভালো। কম্পিউটারের মাইক্রোপ্রসেসর যেমন ঠিক তাপমাত্রায় উত্তম কাজ করে, তেমন মানবমস্তিষ্কও ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সবচেয়ে ভালো চিন্তা করতে পারে। যত ধরনের বাধাবিপত্তি থাকতে পারে তা বাদ দিয়ে দিন। কাউকে মিটিংয়ের সময় ঘরে ঢোকার অনুমতি দিবেন না। মিটিংয়ে কেউ যেন বাইরে থেকে এসে বাধা না দিতে পারে, তা নিশ্চিত করুন। সময়মতো মিটিং আরম্ভ করুন। দরজা বন্ধ রাখুন। পর্যায়ক্রম অনুসারে আলোচ্যসূচি ধরে আলোচনা করে যান। মিটিংয়ের আনুষাঙ্গিক সুবিধাদির ব্যবস্থা করা - বাহ্যিকভাবে এক্সিকিউটিভদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হচ্ছে অফিসের বাইরে কোনো হোটেলে বা অন্য কোথাও মিটিংয়ের আনুষাঙ্গিক সুবিধাদির ব্যবস্থা করে মিটিং করা। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমরা যেহেতু প্রায়ই মিটিং, সেমিনার ও সভা করি, তাই আমরা একটি সাধারণ চেকলিস্ট তৈরি করে রেখেছি। মিটিং অনুযায়ী দরকার হলে, নতুন কিছু লিখে রাখি। নতুবা এ চেকলিস্টের সব বিষয় একবার, অনেক সময় দুইবারও চেক করে দেখি। মিটিং করার আগে সবসময় মিটিং রুম নিজে সরাসরি দেখে আসবেন। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস মনে রাখবেন: শব্দের ব্যবস্থা, আলোর অবস্থা এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কিনা। আর রুমের তাপমাত্রা যেন সবসময় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৬৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট থাকে তা অবশ্যই নিশ্চিত করবেন, নতুবা কোনো ভাড়া দিবেন না। মিটিংয়ের জন্য রুমের নকশা বা অবস্থান আপনি যদি ছোট কোনো মিটিং করেন, তবে গোল বা চারকোণা টেবিল ব্যবহার করতে পারেন। আপনি নিজেকে রুমের দরজার উলটা পাশে রাখবেন। যাতে করে সকলে আপনার দিকে মুখ করে বসতে পারে এবং দরজা দিয়ে কোনো বাধাবিপত্তি এলে বা দেরিতে যারা আসে তারা যেন ঢুকেই আপনার মুখ দেখে। এতে করে অংশগ্রহণকারীরা অন্য বাধাবিপত্তি বা দেরিতে আসা লোকজনের দিকে পিঠ দিয়ে বসবে এবং মনোযোগের সাথে আপনার দিকে মুখ করে আলোচনা চালিয়ে যাবে। এতে করে সবাই আপনার দিকে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাথে সরাসরি চোখ রেখে কথা বলতে পারবে। আপনি সবসময়ই চেষ্টা করবেন মিটিং রুমের প্রবেশদ্বারের বিপরীতে বসতে। আপনি যদি মিটিং নেতা হন বা অংশগ্রহণকারী হন, উভয় ক্ষেত্রে এ চেষ্টা করবেন। এমন রুম নির্বাচন করবেন যেন লোকজন খুব সহজেই, একবার মাথা ঘুরালেই পুরো রুমের অর্ধেক বা তার বেশি অংশগ্রহণকারীকে দেখতে পায়। সবসময় মিটিংয়ের আগে মিটিং রুম দেখে আসুন। সবকিছু আপনার মনের মতো হয়েছে কিনা চেকলিস্ট দেখে বিবেচনা করুন। যদি প্রয়োজন মতো না হয়, তবে সাথে সাথে বাদ দিন। না বলতে কখনো ভয় পাবেন না। আমি একবার একটি সেমিনার করেছি যেখানে সামনের সারির চেয়ারগুলো মঞ্চ থেকে বেশি দূরে। আমি চেয়েছিলাম আমি বক্তব্য দেয়ার পাশাপাশি সামনের সারির লোকজনকে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে। আমি তাদেরকে সামনের সারিতে আরেক সারি চেয়ার দিতে বললাম। আর আমার মনের মতো করে সেমিনার করলাম। আপনার কী দরকার তা আপনি নিজে জানেন। তাই সেই কথা বলতে কখনো দ্বিধা করবেন না। কারণ এভাবেই কথাবার্তা হয়ে থাকে। মিটিংয়ে উপস্থাপনা বা বর্ণনা দিয়ে আরম্ভ করুন। মিটিংয়ে সবসময় আলোচ্যসূচি নিয়ে আরম্ভ করুন। কখনোই এ উপস্থাপনা বা বর্ণনাকে ঘটনাচক্র বা দৈবের ওপর ছেড়ে দিবেন না। মানব সভ্যতা গড়ে ওঠেছে মানুষের প্রভাব থেকে। আর এ প্রভাব সবচেয়ে বেশি হারে ঘটেছে মানুষের বক্তৃতার মাধ্যমে। মিটিং করা এক ধরনের বক্তৃতা। তাই এ বক্তৃতা দেওয়ার সময় নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আরম্ভ করুন। উত্তম বক্তৃতা দেওয়া কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। বিখ্যাত আমেরিকান মনোবিদ ডোনাল্ড ও. ক্লিফটন তার বই এখন, আপনার শক্তিশালী দিকগুলো আবিষ্কার করুন (Now, Discover Your Strengths) এ লিখেছেন উত্তম বক্তৃতা দেওয়ার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে: ১। সবসময় অধিবেশন শুরুর আগে শ্রোতাকে বলে নিবেন আজকে আপনি কী নিয়ে বলতে যাচ্ছেন। ২। তাদেরকে বলুন। ৩। বলা শেষ হলে, আবার বলুন, আপনি তাদেরকে এতক্ষণ কী বললেন। তথ্যসূত্র: এখন, আপনার শক্তিশালী দিকগুলো আবিষ্কার করুন (Now, Discover Your Strengths), লেখক ডোনাল্ড ও. ক্লিফটন। The Free Press প্রকাশনী, ২০০১। পৃ. ৪২। শ্রোতাদের সবসময় এমন স্পষ্ট ও পরিষ্কার বক্তব্য দিবেন। ৫ গুণ ৫ বলে এক সূত্র আছে। আপনি যদি কখনো স্লাইড ব্যবহার করেন, তবে এক স্লাইডে ৫টি বাক্যের বেশি ব্যবহার করবেন না। প্রতিটি বাক্যে ৫টি শব্দের বেশি বাক্য ব্যবহার করবেন না। ৫টি শব্দের বাক্য থাকলেই শ্রোতা ও দর্শকরা সবচেয়ে ভালোভাবে স্লাইড পড়ে বুঝতে পারবে। বেশি বেশি তথ্য দিলেই যে বক্তব্য ভালো হবে তা নয়। অনেক সময় বেশি তথ্য দিলে লোকজন দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সারাক্ষণ ল্যাপটপ বা কাগজের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। বেশি বেশি শ্রোতাদের দিকে তাকান। শ্রোতাদের সাথে সংযোগ ঘটান। পাওয়ার পয়েন্ট বা প্রোজেক্টরে স্লাইড দেখানো শেষে তা বন্ধ করে দিন। তারপর শ্রোতাদের সাথে মুখ করে সহজ ভাষায় কথা বলুন। বক্তৃতা দেওয়ার সময় শ্রোতাদের মনোযোগ আপনার ও আপনার বার্তার প্রতি ধরে রাখুন। এটা কীভাবে করবেন? উত্তম বক্তৃতা দেওয়ার বৈশিষ্ট্যগুলো আবার পড়ুন। আর অনুশীলন করুন। অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। বেশি বেশি অনুশীলন করুন। অনুশীলন, অনুশীলন এবং অনুশীলন। মিটিংয়ে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলুন। গিনিজ ‍বুকের মতে, ৫৪ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সবচেয়ে বড় ভীতি হচ্ছে লোকজনের সামনে বক্তৃতা রাখা। এরপর হচ্ছে মৃত্যু ভীতি। বুঝতেই পারছেন, মৃত্যু ভীতির চেয়েও মানুষ লোকজনের সামনে বক্তৃতা রাখাকে বেশি ভয় পায়। বক্তৃতা দেওয়ার সময় আপনার শ্রোতা ও দর্শকদেরও আপনার সাথে যুক্ত করুন। তাদেরকে আপনার বক্তব্যের উত্তর দিতে বলুন। কেউ একজনকে অংশগ্রহণ করতে বলুন। দেখবেন, সবাই কেমন চুপ মেরে যায়। রালফ ওয়াল্ডো এমারসন বলেন, ‘আপনি যা ভয় পান তাই করুন। মৃত্যুকে ভয় পান? সে তো নিশ্চিতভাবে আসবে।’ আমরা আগেই জেনেছি, যেকোনো কাজে সফলতার মূল চাবিকাঠি হচ্ছে প্রস্তুতি। আর প্রস্তুতির মূল হচ্ছে আগে থেকে কোনোকিছুকে কল্পনার চোখে দেখা। আপনি যখন কল্পনার চোখে আপনার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল দেখবেন, তখন আপনার অবচেতন মন আরও উদ্দীপ্ত হবে এবং আপনার আত্মবিশ্বাস ও সাহস বৃদ্ধি পাবে। বলা হয়, যে প্রশ্ন করে তার হাতেই নিয়ন্ত্রণ। তাই মিটিংয়ে আগে কথা বলার চেয়ে শুনুন এবং প্রশ্ন করুন। মিটিংয়ে যারা কিছু বলতে চান না, অংশগ্রহণ করতে চায় না তাদের সম্পর্কে কী বলবেন। মিটিংয়ের আরেকটি নিয়ম বলি। মিটিংয়ে যে কিছু প্রদান করতে চায় না, অংশগ্রহণ করতে বা কিছু বলতে চায় না, ধরে নিবেন তাদের কাছে মূল্যবান কিছু দেওয়ার নেই। তারা হয়তো মিটিং সম্পর্কে প্রস্তুতি নিয়ে আসেনি। মিটিংয়ে পারকিনসনের সূত্রের প্রয়োগ করুন। ব্রিটিশ একজন আমলা সিরিল নর্থকোট পারকিনসন একটি ছোট্ট বই লিখেন পারকিনসনের সূত্র: অগ্রগতির সাধনা (Parkinsons Law: The Pursuit Of Progress)। তিনি এখানে অসাধারণ এক বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, যেকোনো কাজের বিস্তৃতি বৃদ্ধি পায় এর জন্য নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী। পারকিনসন ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রকে পর্যালোচনা করে দেখান যে একটি প্রতিষ্ঠানে আমলাদের সংখ্যা যত বৃদ্ধি পাবে, যত বেশি লোকজন নিয়োগ দিবে, তত বেশি প্রতিষ্ঠানের কর্মদক্ষতা হ্রাস পাবে। তারা সারাদিন অনেক কাজে ব্যস্ত থাকবে, কিন্তু বস্তুত কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য যা আসলেই দরকার তার খুব কমই সম্পাদন হবে। মিটিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা পারকিনসনের সূত্র প্রয়োগ করব। ঠিক সময়ে মিটিং শুরু করবেন এবং কিছুটা আগে আগে মিটিং শেষ করবেন। দ্রুত আলোচ্যসূচির পয়েন্ট থেকে পয়েন্টে যাবেন। আলোচ্যসূচির পয়েন্ট ভিন্ন অন্য কোনোদিকে সময় ও মনোযোগ দিয়ে মিটিংয়ের মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না। আলোচ্যসূচির কপি সবাইকে এক এক কপি করে দিবেন। সেখানে যে যে পয়েন্টে আলোচনা করবেন তার পাশে সময়সীমাও লিখে দিন। যেমন: সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মূল অফিস ভারতের বাইরে, বহুদূরে ইংল্যান্ডে অবস্থিত। তাই ভারতে সিপাহী যুদ্ধ হলেও কোম্পানির মূল অফিসে কেউ হামলা করতে পারেনি। এজন্য কোম্পানি নিশ্চিন্তে একের পর এক সেনাপ্রধান নিয়োগ করে যেতে পেরেছে। কোম্পানির মূল অফিস সিপাহী যুদ্ধের জায়গা ভারত থেকে অনেক দূরে থাকার সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে আলোচনা। সময়সীমা: বিকাল ৫:০০-৫:২০। এতে করে লোকজন সময়ের স্বল্পতা আগে থেকে অনুধাবন করবে এবং উক্ত সময়ের মধ্যে নিজ নিজ বক্তব্য তুলে ধরার তাগিদ পাবে। সদস্যদের নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিন কথা বলার ক্ষেত্রে। নিজের ওপরও এ সময়সীমার বাধ্যবাধকতার প্রয়োগ করতে পারেন। যেকোনো কাজ করতে গিয়ে সময়সীমা বেঁধে দিন। দেখবেন কাজ কেমন তরতরিয়ে হয়ে যাচ্ছে। দুইটি নিয়ম মেনে চলুন: ১। সব কাজে সময়সীমা দিন। ২। সপ্তাহ ও মাসব্যাপী সময়সূচি তৈরি করুন। ব্যক্তিগতভাবে মিটিংয়ের কার্যকারিতা বৃদ্ধির উপায়সমূহ। যখনই মিটিংয়ের ব্যাপার আসবে তখনই চিন্তা করবেন কী নিয়ে মিটিং হবে এবং মিটিংয়ের আলোচনা কেমন হতে পারে। উদ্দেশ্যের স্পষ্টতা প্রয়োজন। সবসময় মিটিং শুরু করার ক্ষেত্রে বলবেন, আমাদের আজকের মিটিংয়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে . . . একটি বাসের উদাহরণ দিই। আপনি যদি কক্সবাজার যেতে চান তাহলে আপনি নিশ্চয়ই সিলেটগামী বাসে উঠবেন না। তাই আগে থেকে নির্দিষ্ট করে নিন কোন বাস আসলে কোথায় যায়। সেই নির্দিষ্ট গন্তব্যে কী আপনি যেতে চান?-তা আগে থেকে ঠিক করেই যাত্রা আরম্ভ করুন। এক্ষেত্রে লিখিত আলোচ্যসূচি দিয়ে আরম্ভ করলে ভালো ফলাফল পাবেন। মিটিংয়ে আলোচ্যসূচি ধরে পয়েন্ট থেকে পয়েন্টে আলোচনা করবেন। এতে করে, সবার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের সদব্যবহার হবে। মিটিংয়ে লিখিত তথ্য দেখানোর পাশাপশি কোনো ছবি থাকলে ভালো হয়। আলোচনার সাথে প্রাসঙ্গিক ছবি দেখালে আলোচনার বিষয়বস্তু বুঝতে সুবিধা হয়। মিটিংকে এক ধরনের কলাকৌশল বা উপায় হিসাবে চিন্তা করুন। আপনি যাতে অন্যদের কাজকর্ম বুঝিয়ে দিতে পারেন বা সর্বোত্তম আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে পারেন সেজন্য মিটিং করছেন। তাই আপনার ও অন্যদের উভয়ের উপকার হয় এমন ভাবে আলোচনা করুন। কর্ম নির্ধারণের জন্য ব্যবস্থাপনা মিটিং। এ বইয়ে যেসব সূত্রের কথা বলা হয়েছে তা পর্যায়ক্রমিকভাবে কাজে লাগান। প্রতিটি মিটিংকে নিজের ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে বলে মনে করুন। এ বইয়ের পর্যালোচনা শেষে সূত্রাবলি সংক্ষেপে আবারও বলা হচ্ছে: প্রথমে আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করুন। কোনো ধরনের চমকপ্রদ বক্তব্য বা কার্যক্রম তুলবেন না। যারা যারা মিটিংয়ে আসবে তাদেরকে আগে থেকে মিটিংয়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠিয়ে দিন, যাতে করে তারা প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পায়। মিটিংয়ের গতিপথ যেন আলোচ্যসূচি অনুযায়ী থাকে-এ ব্যাপারটা নিশ্চিত করুন। বাস্তবে প্রয়োগযোগ্যতার ভিত্তিতে চিন্তা করুন এবং কথা বলুন। কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নিন বা করবেন না সিদ্ধান্ত নিন অথবা অন্য কোন মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন বলে স্থির করুন। তারপর উক্ত বিষয়ে উপসংহার টেনে সামনে এগিয়ে যান। সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অস্পষ্ট থাকা যাবে না। প্রত্যেক ব্যক্তি যেন বুঝতে পারে কার কী করতে হবে, কত সময়ের মধ্যে করতে হবে-এ ব্যাপারটা নিশ্চিত করুন। কখনো অনুমানের ওপর নির্ভর করবেন না যে আমরা এতক্ষণ আলোচনা করেছি বলে সবাই ব্যাপারটা ঠিকঠাকভাবে বুঝে নিয়েছে। মিটিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, কে কোন কাজ করবে, কবের মধ্যে কাজ শেষ করবে-তা একটি লিখিত প্রতিবেদন আকারে সকলের কাছে পৌঁছে দিন। কাগজে প্রিন্ট করে দিন বা ইমেইল করুন। সবশেষে মিটিং পরিচালনা করতে একজন অসাধারণ দক্ষ ব্যক্তি হয়ে উঠবেন বলে আজই সিদ্ধান্ত নিন। মিটিংকে নিজের কোম্পানির ও নিজের ভবিষ্যৎ অগ্রগতির পথে সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহার করুন। মিটিংয়ের মাধ্যমে আপনি কঠিন কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারেন, সিদ্ধান্ত নিতে, মানুষকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করতে পারেন এবং অনেক ঘটনার ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেন। এ বইয়ের আইডিয়াগুলো পড়ে এবং কাজে লাগিয়ে আপনি আপনার কর্মজীবনের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের পথে দৃঢ়পদে এগিয়ে যান-এ প্রত্যাশাই রইল। শুভ কামনা।