মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০২২

Steal Like an Artist by Austin Kleon এর পুরো বইয়ের পর্যালোচনা


লেখক অস্টিন ক্লেওনের বই Steal Like an Artist: 10 Things Nobody Told You About Being Creative। উপশিরোনামেই বইয়ের বিষয়বস্তুকে পরিষ্কার করে তুলে ধরেছে। এ বই মূলত ক্রিয়েটিভিটি তথা সৃজনশীলতা বৃদ্ধির ১০টি উপায় দেখায়। যদিও ১০টি বলা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে এরচেয়ে অনেক বেশি আইডিয়া, বুদ্ধি এবং উপায় বাতলে দেওয়া হয়েছে। ১০টি উপায়কে লেখক ১০টি অধ্যায়ে ভাগ করেছেন। এই ভাগ সম্পর্কে আমার আগের পোস্ট-Steal Like an Artist by Austin Kleon এর বইয়ের পর্যালোচনা পড়তে পারেন।

আজকে আমরা বইয়ের ভেতর থেকে আমার ভালো লাগা কিছু কলাকৌশল তুলে ধরব:

১। পড়ালেখার জন্য আলাদা টেবিল রাখা দরকার। কম্পিউটার টেবিলে পড়ালেখা হয় না। কম্পিউটার হচ্ছে আইডিয়া আসার পর কাজ করার জায়গা। কিন্তু কম্পিউটার টেবিলে বসে আইডিয়া আসবে না। এটা অনেকটা কাজ করার সময় চিন্তা করবে না, আর চিন্তা করার সময় কাজ করবে না-তত্ত্বের মতো। তাই লেখক বলেন, কম্পিউটার টেবিলে পড়বে না। আর পড়ার টেবিলে কম্পিউটার, ল্যাপটপ চালাবে না।

২। আমরা কোথায় থাকি তা আমাদের কাজের ক্ষেত্রে অনেক বড় প্রভাব বিস্তার করে।

৩। প্রতিদিনকার পরিবেশ পরিস্থিতি দেখতে দেখতে মস্তিষ্ক অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এজন্য ভ্রমণ করা জরুরি। ভ্রমণ করলে আমরা দুনিয়া সম্পর্কে নিত্যনতুন দৃষ্টিভঙ্গি পাই।

৪। যেকোন দলের মধ্যে সবচেয়ে স্মার্ট লোক খুঁজে বের করো। তারপর তার পাশে দাঁড়াও। তার সাথে আড্ডা দাও।

ভালো চুরি বনাম মন্দ চুরি (ভালো চুরির বৈশিষ্ট্য) 

৫। নিজের কাজ শেষ করার জন্য বোরিং ভাবভঙ্গি নিয়ে চলাও উত্তম।

৬। ঋণ থেকে দূরে থাকো। বেশিরভাগ লোকজন টাকাপয়সার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করতে ঘৃণা করে। কিন্তু টাকাপয়সা খরচ করার ব্যাপারে তাদের কোন আপত্তি নেই। তাই চেষ্টা করবে টাকাপয়সা সম্পর্কে যত দ্রুত জ্ঞান অর্জন করা যায় ততই উত্তম। মানি ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কিত বই পড়ো: Secrets of the Millionaire Mind by T. Harv Eker, Rich Dad Poor Dad by Robert Kiyosaki, থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ প্রভৃতি।

৭। শখ পূরণ করো। নিজের পছন্দ মতো কাজ করো। যা ভালোবাসো তাই করো। কিন্তু পাশাপাশি ৯-৫টা একটা চাকরিও রাখো। কারণ এতে করে তোমার মধ্যে শৃঙ্খলা আসবে। আর এই চাকরি থেকে যা অর্থ পাবে তা তোমাকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে সাহায্য করবে।

৮। বন্ধু বানাও। শত্রুদের এড়িয়ে যাও। তোমার পছন্দের জিনিগুলো গুগল এলার্টস থেকে দেখে নাও।

৯। বলা হয়, আবর্জনার পাশে দাঁড়ালে দুর্গন্ধ তো আসবেই। আবার ফুলের সাথে দাঁড়ালে ফুলের সুবাতাস তোমার দেহ-মনে বইবে। চেষ্টা করো, যেকোন জায়গায় প্রতিভাবান এবং যোগ্য ব্যক্তির পাশে দাঁড়ানোর। দলের মধ্যে যদি কেউ যোগ্য না থাকে, তবে সেই দল বাদ দাও। যদি দলের মধ্যে তুমিই একমাত্র যোগ্য হও, তবে নতুন দল খুঁজে নাও।

১০। অনলাইনে লোকজনের সাথে ঝগড়া করা বাদ দাও। কিছু করে দেখাও। কাজ করে দেখাও।

১১। লোকজন তোমার কাজের যেসব প্রশংসা করে, তার একটা ফাইল বানাও। কারণ প্রতিদিন যে তোমার ভালো যাবে তার কোন গ্যারান্টি নেই। তাই যখন মন খারাপ লাগবে, একঘেয়ে লাগবে, তখন এই ফাইল থেকে প্রশংসাগুলো পড়ে দেখো।

১২। ক্রিয়েটিভ হতে গেলে অনেক এনার্জি দরকার। তাই নানা কাজে মনোযোগ দেওয়ার চেয়ে নিজের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে মনোযোগ দাও।

ক্রিয়েটিভিটি নিয়ে পড়তে পারো ক্রিয়োটিভিটি অ্যান্ড প্রবলেম সলভিং (সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধানের উপায়সমূহ) বই।

১৩। ঋণ থেকে দূরে থাকো। এজন্য টাকাপয়সার ব্যাপারে আগে থেকে শেখার চেষ্টা করো। Money Management 101 শিখো।

১৪। একটা ক্যালেন্ডার রাখো। প্রতিদিন কাজ করে ক্যালেন্ডারে ক্রস চিহ্ন দাও। পাশাপাশি একটি ডায়েরি রাখো।

১৫। বিয়ে করো চিন্তাভাবনা করে। তোমার সহধর্মিণী যেন একই মনোভাবসম্পন্ন হয়। তোমাকে যেমন ভালোবাসবে, তেমন তোমার কাজকেও যেন ভালোবাসে। বিয়ে করার সময় চিন্তাভাবনা করবে বলতে আমি কেবল সহধর্মিণীর কথাই নয়, অন্য যেকোন সম্পর্ক, যেমন ব্যবসায়িক, পেশাগত এবং বন্ধুত্বপূর্ণ প্রভৃতি সম্পর্কে ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সমভাবানপন্ন মানুষ খোঁজ।

১৬। ক্রিয়েটিভিটি মানে কী করবে তা যেমন নির্বাচন করবে, তার পাশাপাশি কী কী করবে না তাও নির্ধারণ করবে। তোমার জন্য যা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তাতে মনোযোগ দিতে গিয়ে তোমাকে এমন বহুকিছু বাদ দিতে হবে যা তোমার গুরুত্বপূর্ণ কাজের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

তোমাকে বুঝতে হবে তুমি দুনিয়ার সবকিছু করতে পারবে না। একে স্বীকার করে নাও। সবকিছুতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা বন্ধ করো।

১৭। কোনকিছু নির্বাচন করার আগে সময় নিয়ে চিন্তা করো। তারপর মজা করো।

সোমবার, ২৩ মে, ২০২২

কেন মানুষের সাথে নেটওয়ার্কিং গড়ে তোলা দরকার?

এ পোস্ট থেকে কী শিখবেন?

- কেন মানুষের সাথে নেটওয়ার্কিং গড়ে তোলা দরকার?

- লেখক জেফ কেলারের নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে উন্নতি করার অভিজ্ঞতা।

- ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক পরিসরে নেটওয়ার্কিং এর সুবিধা আগামী পোস্টে উল্লেখ করা হবে।

ছবি: ইমেজ বাজার 


কেন মানুষের সাথে নেটওয়ার্কিং গড়ে তোলা দরকার?

যখনই পারেন ব্যক্তিগতভাবে মানুষের নেটওয়ার্ক করতে ভুলবেন না। এতে করে আপনি আরও শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলবেন এবং অফলাইন জগতের মানুষের কাছে পৌঁছাবেন যাদের সাথে আপনি আগে শুধু কম্পিউটারে চ্যাট করেছেন অথবা কখনো দেখাই হয়নি৷ ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করা আপনার ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরে এবং মানুষকে আপনার সাথে প্রকৃত উপায়ে সংযোগ করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যেমে আপনি নিত্যনতুন আইডিয়া সম্পর্কেও জানতে পারেন।


এখানে লেখক জেফ কেলার কীভাবে নেটওয়াকিং এর মাধ্যমে তার বই এটিটিউড ইজ এভরিথিং এর প্রচারপ্রসার এবং তার নিজের বক্তৃতার পেশাকে সমৃদ্ধ করল তার এক অসাধারণ ঘটনা উল্লেখ করা হলো।


১৯৯০ সালের শেষের দিকে আমি ফ্রিল্যান্স লেখক স্টু কামেনের সাথে দেখা করি। এটা আমার ব্যবসায়িক জীবনের জন্য এক অবিশ্বাস্য সুফল বয়ে আনে। ঘটনাটি হলো:


১৯৯২ সাল। তখন স্টু ‘থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ’ নামক একটা সংবাদপত্রে নিয়মিত লিখত। স্টুরই পরামর্শে পত্রিকাটির প্রথম পৃষ্ঠাতেই আমাকে নিয়ে একটি গল্প প্রকাশ করে–কীভাবে আমি আইনজীবী থেকে একজন অনুপ্রেরণাদানকারী বক্তায় পরিণত হলাম। ঐ সময়েই আমি আবার সংবাদপত্রটির সাথে বই বিক্রির একটা ব্যবসায়িক চুক্তিতে স্বাক্ষর করি এবং তারা আমার ‘এটিটিউড ইজ এভিরিথিং’ বইটি তাদের প্রকাশনীর মাধ্যমে প্রচার করে। তখন হাজার হাজার বই বিক্রি হয়।


‘থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ’ সংবাদপত্রটি তাদের প্রকাশনী থেকে আমার নিজের কিছু প্রবন্ধও প্রকাশ করে। ফলস্বরূপ তাদের পাঠকদের কাছ থেকে প্রচুর সাড়া পাই এবং বিভিন্ন সময়ে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানের আমন্ত্রণ পাই।


এই সময়ে জিম ডুনোভান নামক নিউ ইয়র্কের তাদের এক গ্রাহকের কাছ থেকে একটা চিঠি আসে। পরে আমাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। জিম আমাকে আইএনটিআই পাবলিশিং অ্যান্ড রিসোর্স বুকস নামক প্রকাশনীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। যারা আপনার হাতে থাকা আমার বইটি প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে জিম নিজে ‘হ্যান্ডবুক টু এ হ্যাপিয়ার লাইফ’ এবং ‘দিস ইজ ইউর লাইফ, নট এ ড্রেস রিহার্সেল’ নামক দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বই লিখে ফেলে।


আমার সাথে এতো ভালো কিছু ঘটে যাওয়ার পিছনে মূলত কাজ করেছিল স্টু কামেনের সাথে আমার পরিচয় হওয়া... তারপর থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ সংবাদপত্রের নেটওয়ার্কের আওতায় আসা... এবং জিম ডুনোভানের নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত হওয়া। নেটওয়ার্কিং এর ক্ষমতা এক কথায় অসাধারণ!


আপনাকে যদি সফলতায় পৌঁছানোর জন্য দুটি রাস্তা থেকে একটি বেছে নিতে বলা হয় এবং রাস্তা দুটোর একটি যদি কম সময়ের, আর অপরটি যদি হয় দীর্ঘ সময়ের; আপনি কি কম সময়ের রাস্তাটি বেছে নিবেন না? নেটওয়ার্কিং বা ভালো যোগাযোগ ও সম্পর্ক তৈরি করাও এমন এক রাস্তা, যা আপনার কাজকে আরও সহজ করে দেয় এবং দ্রুততার সাথে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। সবশেষে বলব, যত ভালো এবং মজবুত সম্পর্ক তৈরি করবেন, আপনার সাফল্যের জন্য ততো ভালো সুযোগ তৈরি হবে।

রবিবার, ১৫ মে, ২০২২

অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকুন

আপনি কি এমন কাউকে চেনেন যে দেখা হলেই তার কাজকর্ম সহ নানা বিষয়ে অভিযোগ করতে থাকে? আমি তো নির্ঘাত একজনকে চিনি। আমার এক আত্মীয়। সদ্য চাকরি পেয়েছেন এবং দেখা হলেই অভাব অভিযোগের শেষ নেই। তাদের কাছ থেকে বাঁচার জন্য আজই কয়েকটা কৌশল অবলম্বন করুন। কেন? কারণ অন্যের পেট খারাপ, বমি বমি ভাব অথবা খাবারে তেলাপোকা পেয়েছে এ কথা শুনে আপনার কি ভালো লাগবে?

লেডি হল্যান্ড বলেন, ❝সমস্যাকে জিইয়ে রাখলে কমে না; বরং ডালপালা গজিয়ে ওঠে এবং বৃদ্ধি পায়।❞ তাই অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকুন। সত্যি কথা বলতে কেউই আপনার দুঃখ-দুর্দশার গল্প শুনতে ইচ্ছুক নয়। নিজের দুঃখদুর্দশার আলোচনা সমস্যাকে ঘনীভূত বৈ কিছু করে না। আর আশেপাশের মানুষগুলোকে দূরে ঠেলে দেয়।
এমন সব অবস্থা যার ওপর আপনার কোনো হাত নেই এবং তা আপনার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রভাবও রাখে না সেগুলো নিয়ে পেরেশান হওয়ার কোনো মানে হয় না। উইলিয়াম পেন বলেন, ❝সুখী জীবনের রহস্য হলো যখন অন্যরা তাদের সমস্যা নিয়ে বসে আছে তখন আপনি আপনার জীবনের সুখের মুহূর্তগুলোর হিসাব করুন।❞

চেষ্টা করুন যেকোনো ঘটনাকে ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করতে। চার্লস ডিকেন্স বলেন, ❝আপনার বর্তমান সুখময় মুহূর্তগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিন, যা প্রত্যেকের প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। অতীতের দুর্ভাগ্য নিয়ে পড়ে থাকবেন না, যা প্রত্যেকের কিছু না কিছু থাকে।❞

যদি আপনার সামনে সমস্যা অনেক বড় হয়ে দেখা দেয়, তবে একটি কাগজ কলম নিন। আর সেসব বিষয় লিখুন যার জন্য আপনি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। বিশ্বাস করুন আপনার অভিযোগ-অনুযোগ সব পালিয়ে যাবে। আল্লাহই আপনার জন্য যথেষ্ট।

শুক্রবার, ১৩ মে, ২০২২

যে ১০টি উক্তি আপনার জীবনে সুবাতাস বয়ে আনবে

১। ❝চেষ্টার ফল পরিপূর্ণভাবে তখনই পাওয়া যায় যখন একজন ব্যক্তি হাল না ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়।❞ - নেপোলিয়ন হিল (থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ বইয়ের লেখক)

২। ❝এ কী ধরনের শক্তি তা আমি বলতে পারছি না; তবে এর অস্তিত্ব আছে এবং একে তখনি পাওয়া যায় যখন একজন মানুষ নির্দিষ্টভাবে জানে সে কী চায় এবং তা না পাওয়া পর্যন্ত দৃঢ়তার সাথে চেষ্টা করে যায়।❞ - আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল

৩। অঙ্গীকারের এই জাদুর সবচেয়ে সঠিক ও চমকপ্রদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন ডব্লিউ.এইচ. ম্যুরে। তিনি বলেছেন, ‘অঙ্গীকার যেখানে থাকে না সেখানে দ্বিধা থাকে; অক্ষমতা ও ব্যর্থতার সুযোগ থাকে। সমস্ত উদ্যোগের (ও সৃষ্টির) পিছনে একটি ধ্রুব সত্য রয়েছে, আর তা হলো–অঙ্গীকার সম্পর্কে এই অজ্ঞতা আমাদের মধ্যকার অগণিত বুদ্ধি, ধারণা ও চমৎকার সব পরিকল্পনাকে হত্যা করে। যখন কেউ নিজের প্রতি অঙ্গীকার করবে তখনই সে দূরদর্শিতা অর্জন করতে পারবে।

আগে যেসব সুযোগ পাওয়া যায়নি সেগুলো সামনে আসবে। একজন মানুষ অঙ্গীকার করার পর থেকে এমন সব ঘটনাপ্রবাহ শুরু হবে, যা তার লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে। এমন সব জিনিস সে পাবে যা সে কখনো পাওয়ার কল্পনাও করেনি।’

৪। ❝সাধারণ মেধা ও অসাধারণ অধ্যবসায় থাকলে সবকিছুই অর্জন করা যায়।❞ - স্যার থমাস বাক্সটন

৫। অঙ্গীকার করা সত্ত্বেও আপনার পথের সব বাধা কিন্তু দূর হয়ে যাবে না। জীবন বারবার আপনার পরীক্ষা নিবে, আপনার অঙ্গীকার কতটা দৃঢ়  তা পরখ করে দেখবে। আপনি ভুল করবেন, হতাশ হবেন, পশ্চাৎপদ হবেন। কিন্তু বিপদ যত কঠিনই হোক আপনি লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হবেন না। - জেফ কেলার (এটিটিউড ইজ এভরিথিং বইয়ের লেখক)

৬। উইনস্টন চার্চিলের এই জ্ঞানগর্ভ কথা মনে রাখতে হবে, ❝কখনো, কোনো অবস্থাতেই হার মানা চলবে না।❞

৭। অথবা মনে রাখতে হবে জেমস জে. করবেটের এই উপদেশবাণী, ❝আরেকবার চেষ্টা করলেই তুমি জিততে পারবে। যখন সময় কঠিন হয়ে আসবে তখনো আরেকবার চেষ্টা করে দেখ।❞

৮। ❝একজন অঙ্গীকারবদ্ধ মানুষ একশজন বিক্ষিপ্ত চিত্তের মানুষের চেয়ে উত্তম।❞ - ম্যারি ক্রোলে

৯। ❝বিজয়ের জন্য যেসব দুঃখকষ্টকে অতিক্রম করতে হয় তারচেয়েও বেশি পুরস্কার একমাত্র তারাই পায় যারা চেষ্টা করে যায় এবং অধ্যবসায় পালন করে।❞ - টেড ইংস্ট্রম

১০। ❝প্রত্যেক সমস্যার আড়ালে একটি সমান অথবা এর তুলনায় বড় কোনো সুযোগ থাকে।❞ - নেপোলিয়ন হিল

মনে করুন, আপনার একটি লক্ষ্য আছে। নিজেকে এরপর প্রশ্ন করুন, ‘আমি কি যেকোনো মূল্যে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য বদ্ধ পরিকর?’ যদি আপনার উত্তর হয়, ‘আমি সবই করব কেবল... করব না’ তাহলে সত্যি বলতে আপনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নন।

আর আপনি যদি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ না হন তবে আপনার পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার এবং লক্ষ্যে না পৌঁছাবার সম্ভাবনা প্রবল। অনেকেই এমন মনোভাব নিয়ে ব্যবসা শুরু করে, ‘আমি ছয়মাস চেষ্টা করব, এর মাঝে সফলতা না পেলে আমি ব্যবসা ছেড়ে দিব।’ এমন মনোভাব নিয়ে সাফল্য পাওয়ার চেষ্টা বৃথা। তাই আজই নিজের লক্ষ্য নিয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হোন। বলুন, যা কিছুই ঘটুক আমি আমার লক্ষ্য অর্জন করবই। তবেই আপনি সাফল্যের দেখা পাবেন।


Steal Like an Artist by Austin Kleon এর বইয়ের পর্যালোচনা

লেখক অস্টিন ক্লেওনের ২য় বই পড়ছি Steal Like an Artist। তার আগে পড়েছিলাম Show  Your Work. স্টিল লাইক অ্যান আর্টিস্ট বই মূলত আপনার সৃজনশীলতাকে উদ্দীপ্ত করার মালমশলা নিয়ে লেখা। সৃজনশীলতা এমন এক জিনিস যা কেউ কাউকে দিতে পারে না। এটা মানুষের মধ্যে জন্মগতভাবেই বিদ্যমান। এখানে লেখক সেই কথাই বলেছেন। লেখক বিভিন্ন আইডিয়া, থিওরি এবং উদাহরণ দিয়েছেন। এতে করে আপনার মধ্যকার সৃজনশীলতা জেগে উঠতে পারে। লেখক Austin Kleon স্টিল লাইক অ্যান আর্টিস্ট বইকে ১০টি অধ্যায়ে ভাগ করেছেন:
১। স্টিল লাইক অ্যান আর্টিস্ট।
২। সবকিছু জানার জন্য বসে থাকবেন না। কাজ আরম্ভ করুন। কাজের মধ্য দিয়েই নিজেকে চিনতে পারবেন।
৩। আপনি যে বই পড়তে চান সেই বইটা নিজেই লিখে ফেলুন।
৪। হাতের ব্যবহার করুন। মোবাইল, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ নয়, কাগজকলমে অনেক বেশি আইডিয়া পাওয়া যায়। আইডিয়া পাওয়ার পরে  ইমপ্লিমেন্টেশনের ক্ষেত্রে কম্পিউটারের সাহায্য নিন।
৫। সাইড প্রজেক্ট এবং শখের কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৬। গোপন সূত্র হচ্ছে ভালো কাজ করুন এবং তা মানুষের সাথে শেয়ার করুন।
৭। ভূতাত্ত্বিক ব্যাপারটা এখন আর মালিক নয়। ইন্টারনেটের বদৌলতে এখন সারা বিশ্বই আমাদের হাতের মুঠোয়।
৮। বিনয়ী হোন। দুনিয়া এখন একটা ছোট্ট শহর।
৯। কিছুটা বোরিং তথা বিরক্তিকর হোন। কারণ এভাবেই আপনি আপনার কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন।
১০। সৃজনশীলতা মানে বাদ দেওয়া। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ইনফরমেশনের ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। এসব থেকে অকাতরে বাদ দিতে হবে।

এভাবেই লেখক ১০টি অধ্যায়ে তার আইডিয়া, নানা থিওরি এবং উদাহরণ দিয়ে বইকে সাজিয়েছেন। সহজসরল ইংরেজিতে লেখা ছোট্ট বই পড়ে দেখতে পারেন।

রবিবার, ৮ মে, ২০২২

আপনি কি সময়মতো প্রজেক্ট শেষ করতে পারছেন না?

আপনি কি আজকের মধ্যেই কাজ শেষ করতে চান?


অনেক কর্মচারীকেই এ কথা শুনতে হয়। “কী ব্যাপার! আপনার কাজটা কি শেষ হয়েছে? কবে শেষ করবেন? এত সময় লাগে নাকি?”

এ ধরনের কথা শুনতে কার-বা ভালো লাগে। প্রায় সময় আমরা কাজের চাপে ঠিক সময়ে অনেক কাজটা শেষ করতে পারি না। এজন্য আমাদের ভালোমন্দ কথা শুনতে হয়। যা আমাদের মধ্যে আরও মানসিক চাপ তৈরি করে। কিন্তু এই মানসিক চাপ নিয়ে থাকতে হবে এমন নয়। একে দূর করা সম্ভব।

জার্নাল অফ কনজিউমার রিসার্চের এক গবেষণায় দেখা যায় কর্মচারীদেরকে সময়সীমা দিলে কর্মীরা দক্ষভাবে কাজ করে। কিন্তু ডেডলাইন দিলে কর্মীরা কাজটাকে প্রকৃত কাজের চেয়ে বেশি কঠিন বলে মনে করে। এজন্য তারা উক্ত কাজ নিয়ে বেশিই চিন্তায় পড়ে যায় এবং এ নিয়ে নানা তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করতে লেগে পড়ে। হয়তো এতকিছুর দরকারও নেই। আর অপ্রয়োজনীয় জিনিস যোগাড় করতে গিয়েই কাজে গড়িমসি বা দেরি হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

ইট দ্যাট ফ্রগ! (হার্ডকভার)। গড়িমসি অভ্যাস ত্যাগ করা এবং অল্প সময়ে আরও বেশি কাজ দক্ষভাবে সম্পন্ন করার ২১টি বাস্তবসম্মত উপায় by ব্রায়ান ট্রেসি

BUY NOW


গবেষকরা একটি কমিউনিটি সেন্টারে রোগীদের সাথে কথা বলে। এই গবেষণায় তারা ভলেন্টিয়ার হিসাবে যোগ দেয়। তাদেরকে তাদের অবসরের যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জিজ্ঞেস করা হয়। দুইটি গ্রুপে তাদেরকে ভাগ করা হয়। প্রথম গ্রুপকে ৭ দিনের ডেডলাইন বা সময়সীমা দেওয়া হয়। আর দ্বিতীয় দলকে ১৪ দিনের ডেডলাইন। দেখা গেছে যাদেরকে ১৪ দিনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে, তারা অবসর পরিকল্পনাকে বেশি জটিল করে ফেলেছে। এ সম্পর্কিত তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করতে করতেই তাদের দিন চলে গেছে। কিন্তু ৭ দিন সময় পাওয়া দল অপেক্ষাকৃত ভালো করেছে। এতে করে, বোঝা যায় বেশি সময় দিলে কাজে গড়িমসি করে এবং হাল ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়।

অন্য একটি গবেষণায় দেখা যায়, কিছু করদাতারা ট্যাক্স দাখিলের জন্য তাদের সমপরিমাণ আয় করা ব্যক্তিদের থেকে বেশি টাকা খরচ করেছে। যেমন, কেউ মাসে ৪০ হাজার টাকা আয় করে। সে ট্যাক্স দিতে ৩-৪ হাজার টাকা ব্যয় করল। কিন্তু একই বেতনের আরেকজন ২ হাজার টাকা খরচ করল। এর কারণ কী? গবেষকরা খুঁজে পেলেন এর আসল কারণ গড়িমসির অভ্যাস। যারা বেশি টাকা খরচ করেছে তারা মূলত কাজে গড়িমসি করে। এক বছরের টাকা আরেক বছর দেয়। দেরি করে। এতে করে তাদের খরচও বৃদ্ধি পায়। অথবা ট্যাক্স আইনজীবীর সাথে কথা বলা, সফটওয়্যার ব্যবহার করা, একই আয় করা অন্যদের সাথে আলাপ করা প্রভৃতি কাজ করতে করতে তাদের সময় চলে যায়।

টাইম ম্যানেজমেন্ট (হার্ডকভার)। সঠিক সময়ে কাজ শেষ করার ২১টি বাস্তবসম্মত উপায় by ব্রায়ান ট্রেসি

BUY NOW


এই গবেষণাটা ম্যানেজার বা পরিচালকদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমত, আপনি নিশ্চয়ই পারকিনসনের নীতি সম্পর্কে পড়েছেন। জনাব পারকিনসন ছিলেন ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রের একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মচারী। তিনি বহু বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থেকে এই সিদ্ধান্তে আসেন যে কর্মীদেরকে কাজের জন্য বেশি সময় দিলে বা লম্বা ডেডলাইন দিলে কাজে অসুবিধা সৃষ্টি হয়। কর্মীরা গড়িমসি করে। এমনকি কাজে হাল ছেড়ে দেয়।

দ্বিতীয়ত, পারকিনসন তো কাজ এবং সময়ের সাথে সম্পৃক্ত করে কথা বলেছেন। আমরা উপরোক্ত উদাহরণ থেকে দেখলাম, কাজে দেরি হলে সময়ের সাথে সাথে অর্থেরও অপচয় ঘটে। কর্মীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়লে কোম্পানির বিরাট আর্থিক ক্ষতি হয়।

ডিভেলপিং দ্য লিডার উইদিন ইউ (হার্ডকভার)। আপনার মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি গড়ে তুলুন by জন সি. ম্যাক্সওয়েল

BUY NOW


তৃতীয়ত, এতক্ষণ তো আমরা একটা কাজের ডেডলাইন সম্পর্কে জানলাম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি একাধিক কাজে ডেডলাইন থাকে, তবে কী হবে? গবেষণায় দেখা গেছে, একসাথে অনেক ডেডলাইন থাকলে, কর্মচারীরা বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ আগে করে। এতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে থাকে।

আপনি নিশ্চয়ই জরুরি/গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভাগ করার সূত্র সম্পর্কে জানেন। একে বলা হয় 4Ds of Effective Prioritisation তথা কার্যকরভাবে অগ্রাধিকার নির্ণয়ে ৪-ডি ফর্মুলা।

জরুরি-গুরুত্বপূর্ণ: এমন কাজ সাথে সাথে করুন। এখনই করুন।

জরুরি-গুরুত্বপূর্ণ নয়:  এমন কাজ কখন করবেন সিদ্ধান্ত নিন।

জরুরি নয়-তবে গুরুত্বপূর্ণ: এমন কাজ অন্য কারও হাতে দিন।

জরুরি নয়-গুরুত্বপূর্ণ নয়: বাদ দিন।

4Ds of Effective Prioritisation তথা কার্যকরভাবে অগ্রাধিকার নির্ণয়ে ৪-ডি ফর্মুলা


উদাহরণ দিলে বলা যায় আমরা প্রায় সময় অফিসে ইমেইল থেকে ফেসবুকের নোটিফিকেশন বেশি চেক করি। ডাক্তারের রুটিন চেকআপের চেয়ে শপিংমলে ঘোরাঘুরি এবং খাওয়াদাওয়া বেশি সময় দিই। এক্ষেত্রে রুটিন চেকআপ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমরা কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে বেশি সময় কাটাই। এতে করে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে থাকে। এর অবশ্য তাৎক্ষণাৎ ফল ভোগ করতে হয় না। কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদে ফলাফল খুব খারাপ হতে পারে।

ক্রিয়েটিভিটি অ্যান্ড প্রবলেম সলভিং (হার্ডকভার)। ক্রিয়েটিভ উপায়ে আপনার সমস্যা সমাধানের কলাকৌশল by ব্রায়ান ট্রেসি

BUY NOW


চতুর্থত, এমন অনেক কাজ আছে যা শেষ করতে আসলেই অনেক সময় দরকার। সেজন্য কীভাবে ডেডলাইন সেট করবেন? এক্ষেত্রে দরকার হতে পারে আপনার সহকর্মীদের সহযোগিতা, বাইরের কোন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ। এজন্য কাজকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিন। বড় ডেডলাইন থাকলে, ছোট ছোট করে দিন ঠিক করে কাজ করুন। এতে করে গড়িমসি অভ্যাস দূর হবে। কাজে হাল ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতাও কমবে। ম্যানেজার যদি প্রতিদিন কর্মীরা কী কী কাজ করবে তার লক্ষ্য সেট করে দেয়, তবে কর্মীদের মধ্যে কাজের গতি বৃদ্ধি পাবে।

ওয়ান স্মল স্টেপ ক্যান চেঞ্জ ইউর লাইফ (হার্ডকভার)। ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে যেকোনো বড় কাজ হাসিল করুন by ড. রবার্ট মৌরার, পিএইচডি

BUY NOW


সবশেষে বলব, সব কাজে যে লম্বা ডেডলাইন দিলে সমস্যা হয় তা নয়। কিছু কিছু কাজে লম্বা ডেডলাইন লাগে, যেমন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল প্রভৃতি। কিন্তু গবেষণা মতে লম্বা ডেডলাইনের সাথে গড়িমসির একটা সম্পর্ক রয়েছে। তাই ম্যানেজারদের উচিত তাদের কর্মীদের মনোযোগ ধরে রাখতে প্রতিদিনকার কাজ প্রতিদিনই চেকলিস্টের মাধ্যমে শেষ করা। আজকে এই এই কাজ হয়েছে, চেকলিস্ট তৈরি করে তাতে টিকচিহ্ন দিয়ে দেওয়া। এতে করে কর্মচারীদের মধ্যে কাজের গতি এবং দক্ষতা বৃদ্ধি পারে। আর গড়িমসির অভ্যাস এবং কাজে হাল ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা হ্রাস পাবে।

আত্ম-উন্নয়ন এবং ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক বই দেখুন