শনিবার, ৯ জুলাই, ২০১৬

ইতিবাচক চিন্তা




ইতিবাচক চিন্তা হচ্ছে একটি ঘটনার আশাবাদী দিকের প্রতি মনোযোগ দেওয়া। একটি ঘটনার ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক উভয়ই থাকে, কিন্তু ইতিবাচক চিন্তা ঘটনার ভালো দিকটি নিয়ে চিন্তা করতে উৎসাহিত করে, যাতে করে আপনি আশাবাদী চিন্তা করে মনোযোগের সাথে একটি কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। আশা করা যায় যে একটি কাজ যদি মনোযোগের সাথে এবং ইতিবাচক চিন্তার সাথে সম্পন্ন করা হয় তবে তাতে সাফল্য অর্জন করার সম্ভাবনা বেশি যতটা থাকে নেতিবাচক চিন্তার সাথে সম্পন্ন করলে।

বুধবার, ৬ জুলাই, ২০১৬

কখনো হাল ছেড়ো না। - ফেলিপে কালদেরন




ফেলিপে কালদেরন মেক্সিকোর রাষ্ট্রপতি। ১৯৬২ সালের ১৮ আগস্ট তাঁর জন্ম। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তিনি এ বক্তব্য দেন। সূত্র: ওয়েবসাইট, ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মারুফা ইসহাক।

সর্বপ্রথম আপনাদের অভিনন্দন। আমি জানি, আপনারা আপনাদের অর্জনের জন্য অনেক আনন্দিত ও গর্বিত।

আজকের এই সমাবর্তন কোনো কিছুর শেষ নয়, বরং আজকের দিনটা হচ্ছে আপনাদের জীবনে একটা নতুন যাত্রা শুরুর দিন। একদিন আপনাদের মধ্যকার অনেকেই বিখ্যাত ব্যবসায়ী, আইনজীবী, লেখক, চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হবে। তা যা-ই হন না কেন, একজন আদর্শ মানুষ রূপে নিজেকে গড়ে তোলাই হোক আপনার জীবনের ব্রত। নিজের দেশের একজন ভালো নাগরিক হওয়ার পাশাপাশি পৃথিবীর একজন যোগ্য মানুষও আপনাকে হতে হবে। আজকে আপনারা স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হচ্ছেন সবচেয়ে আধুনিক জ্ঞান নিয়ে। নিঃসন্দেহে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট হওয়াটা সম্মানের এবং একই সঙ্গে দায়িত্বের।

আপনাদের সুযোগ আছে অন্যদের জন্য কিছু করার। আপনারাই পারবেন আপনাদের মেধা ও সাহস দিয়ে পৃথিবীকে ঠিক পরিবর্তনের পথে এগিয়ে নিতে—যদিও অনেকের কাছেই তা অসম্ভব। মহাত্মা গান্ধীর সেই কথাটা মনে করেন, "নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, যে পরিবর্তন আপনি দেখতে চান, তা নিজেকে দিয়েই কি শুরু করতে চান?"

আপনাদের আমি আমার একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলছি। আমি যখন আপনাদের বয়সী ছিলাম, মেক্সিকোতে তখনো স্বৈরাচারী শাসন ছিল। প্রতিটি প্রদেশের গভর্নর এবং সিনেটররা ছিলেন একই দলের সদস্য। বহু বছর ধরে সেই দলই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করত। যেমন—গণমাধ্যম কী বলবে, স্কুল কী শিক্ষা দেবে, কোন ধরনের রক কনসার্ট করা যাবে ইত্যাদি। একসময় আপনাদের মতো শিক্ষার্থীরাই এর বিরুদ্ধাচরণ করতে শুরু করল। রাষ্ট্রজুড়ে তখনো আশার আলো ছিল এবং গণতন্ত্রের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছিল। আমার বাবা সরাসরি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। খুব কঠিন সময় ছিল সেটা। আমার ভাইবোন ও আমি বাবার সঙ্গে ছিলাম। দরজায় ধাক্কা দিতে, চিৎকার করে স্লোগান দিতে খুব ভালো লাগত আমার।

ধীরে ধীরে গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়ে গড়ে উঠতে লাগল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে নির্বাচনী জালিয়াতিও শুরু হলো। ক্ষমতার হতাশাজনক অপব্যবহার দেখে একদিন বাবাকে বললাম যে আমাদের সব চেষ্টা বৃথা। একদিকে সরকার ভোট চুরি করছে, অন্যদিকে দেশের মানুষও এসব নিয়ে ভাবছে না। তখন তিনি বললেন, "আমি তোমার আক্ষেপের কারণ বুঝতে পারছি। আমরা যা করেছি, তা দেশের প্রতি নৈতিক দায়িত্ব। হয়তো আমাদের দল থেকে আমরা কোনো প্রেসিডেন্ট বা গভর্নর পাব না। কিন্তু মেক্সিকোকে শান্তিপূর্ণভাবে বদলানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, এখানকার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলানো। আমরা না করলে আর কেউ সেটা করবে না।" গণতন্ত্র খুব ভালো করে আসার আগেই আমার বাবা মারা যান এবং এর কয়েক বছর পর সব ধরনের বিপত্তি কাটিয়ে আমি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হই।

আপনারা কখনোই আপনাদের স্বপ্ন এবং চিন্তার জগৎ থেকে সরে আসবেন না। বিশ্বাস করে লড়ে যান। আপনার প্রচেষ্টার মধ্যে কখনো সংশয় রাখবেন না। কারণ, মানুষের সৃষ্টি করার ক্ষমতা তার ধ্বংস করার ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি। জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তুলুন। আপনার নীতিতে অটল থাকুন। পৃথিবী আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আজকের পৃথিবী। যেমন—জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য, সন্ত্রাস, বেকারত্ব ইত্যাদি।

প্রায় ৪০ বছর আগে ক্লাব অব রোমের বিশিষ্ট চিন্তাবিদেরা মানবতার ধারা নিয়ে গবেষণা করে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন, তা হলো "মানবজাতির সন্ধিকাল" বা "ম্যানকাইন্ড অ্যাট দ্য টার্নিং পয়েন্ট"। সেখানে বলা হয়েছে, বর্তমান সময়ে দুই ধরনের শূন্যতা চোখে পড়ে। একটা হলো মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে এবং অপরটা হলো ধনী-গরিবের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক। দিন দিন দরিদ্রতা বেড়ে চলেছে। ১০০ কোটির বেশি মানুষ এখন এক ডলারের চেয়ে কম উপার্জনে বেঁচে রয়েছে। অন্যদিকে, কার্বন নিঃসরণের কারণে গত শতাব্দীতে পৃথিবীর তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বেড়ে গেছে। সঠিক উদ্যোগের অভাব হলে এই শতাব্দীর শেষে তাপমাত্রা প্রায় পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব রয়েছে। অর্থনীতির উন্নয়ন নাকি পরিবেশ রক্ষা—কোনটাকে বেছে নেওয়া হবে, সেটা এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখেও অর্থনীতির উন্নয়ন করা সম্ভব। এমনকি জলবায়ু পরিবর্তন ও দরিদ্রতার সঙ্গেও একসঙ্গে লড়াই করা সম্ভব। একধরনের উভয় সংকটপূর্ণ অবস্থা দূর করার জন্য দরকার শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী, শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী এবং শ্রেষ্ঠ মন।


প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আপনারা অনেক দূর এসেছেন। আরও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। একটা শেষ উপদেশ দিচ্ছি, জীবনটাকে উপভোগ করুন, আনন্দ খুঁজে নিন—এটাই হলো বেঁচে থাকার নির্যাস। পৃথিবীতে আপনার বেঁচে থাকার অর্থ অনুসন্ধান করুন। আপনি যে লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান, তা নিয়ে চিন্তা এবং কাজ করে যান। জীবনতরীকে ঝড়ের বিপরীতে চালাতে ভয় পাবেন না। আজ থেকে আপনাদের নতুন এক যাত্রা শুরু হলো।

তথ্য সহযোগিতায় -
ক। Inspirational Speech এন্ড্রয়েড অ্যাপ।
খ। http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2012-09-26/news/292614