রবিবার, ১৬ মে, ২০২১

সেকেন্ড চান্স (Second Chance) তথা দ্বিতীয় সুযোগ বইয়ের পর্যালোচনা

সেকেন্ড চান্স (Second Chance) তথা দ্বিতীয় সুযোগ বইয়ের পর্যালোচনা

১৫৬ পৃষ্ঠার গল্প বা ঘটনার অনুবাদ:

Second Chance: For Your Money, Your Life and Our World Book by Robert Kiyosaki

কিছুদিন আগে আমি স্কটল্যান্ড গিয়েছিলাম। সেখানে আমার এক বন্ধু গ্রিম এবং তার স্ত্রী লিয়েনের সাথে সাক্ষাৎ হয়। গ্রিম ও তার স্ত্রী লিয়েন মিলে ১৫০ বছর পুরাতন ঐতিহাসিক এক চার্চ ঘর ক্রয় করে। তারা ২ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড তথা ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় এটা ক্রয় করে। স্কটিশ সরকার তাদেরকে সরকারিভাবে ৩.৫ লাখ পাউন্ড তথা ৪ কোটি ১১ লাখ দেয় চার্চটাকে মেরামত করার জন্য। আর সরকারিভাবে প্রদত্ত এ টাকা তাদেরকে ফেরতও দিতে হবে না।

প্রশ্ন: কী বলেন! গ্রিম চার্চটা কিনল ২.৩৫ কোটিতে এবং সরকার মেরামতের জন্য দিল ৪.১১ কোটি। আবার টাকা ফেরতও দিতে হবে না। তাহলে তো এ প্রকল্প পুরো বিনামূল্যে পাওয়া গেল।

উত্তর: ‘হ্যাঁ’, আবার ‘না’। সরকার টাকা দিয়েছে। কিন্তু একটা শর্ত আছে। সরকার যা বলবে গ্রিমকে এখানে তাই করতে হবে। সরকার বলেছে, এই চার্চকে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ঘর হিসাবে তৈরি করতে। মূল কথা হচ্ছে: গ্রিম এখানে যা কিছু করছে তা সরকারের ইচ্ছানুযায়ী করছে।

গ্রিম চার্চটাকে মেরামত করল এবং ১৬টি স্বল্প আয়ের পরিবারের জন্য ঘর তৈরি করল। এর জন্য গ্রিম আরও কিছু বিনিয়োগ নিয়েছিল। বিনিয়োগ নিয়েছিল ৪ লাখ পাউন্ড তথা ৪ কোটি ৭০ লাখ। একে বলা হয় ইকুয়িটি (equity)। তারপর গ্রিম ব্যাংক থেকে ধার নিয়েছে ৭ লাখ পাউন্ড তথা ৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এটা প্রকল্প সম্পন্ন করতে ঋণ হিসাবে নিয়েছে।

এরপর ২ বছর পর, প্রকল্পটি যখন শেষ হলো এবং ভাড়াটিয়াদের ভাড়া থেকে ক্যাশ ফ্লো হিসাবে টাকা আসতে লাগল, তখন এই ব্যবসায়িক প্রকল্পটি আবার ব্যাংকের কাছে গেল। এই প্রকল্প থেকে এখন টাকা আসছে, তাই এই ক্যাশ ফ্লো এর ভিত্তিতে ব্যাংক থেকে প্রকল্পটিকে পুনরায় ফাইন্যান্স করার জন্য আরেকটি লোন তথা ঋণের আবেদন করল। 

এভাবে নতুন ঋণ নিয়ে, সকল বিনিয়োগকারীদেরকে তাদের আকাঙ্ক্ষিত টাকা ফেরত দেওয়া হল এবং তারা ট্যাক্স-ফ্রি আয় তথা ক্যাশ ফ্লো এর টাকা পেতে লাগল। এই প্রকল্প থেকেই তারা জীবনভর টাকা পেতে লাগল। আরেকভাবে বলতে গেলে, তাদের বিনিয়োগের বিপরীতে তারা অসীম সংখ্যায় প্রকল্পের ২ বছর পর থেকে টাকা পেতে লাগল। আবার তাদের বিনিয়োগের টাকাও ফেরত পেল। এখন আর কোন বিনিয়োগ ছাড়ায় সারাজীবন টাকা পেতে লাগল। আর সবচেয়ে বড় কথা, তারা যে টাকা পুনরায় ফাইন্যান্স হিসাবে নিল সেটা ট্যাক্স-ফ্রি টাকা। কারণ এই টাকাটা এসেছে সম্পত্তির ঋণ হিসাবে, আর এই ঋণের টাকা পরিশোধ করবে ভাড়াটিয়ারা তাদের ভাড়ার মাধ্যমে।

সোমবার, ৩ মে, ২০২১

আপনার সময় আসলে যায় কোথায়?-তাই আগে খুঁজে বের করুন

সময় ব্যবস্থাপনায় আপনি যদি দক্ষ হতে চান, তবে প্রথমে আপনাকে যে কাজ করতে হবে তা হচ্ছে, আপনার সময় আসলে যায় কোথায়?-তাই আগে খুঁজে বের করুন। বর্তমান কাজের ধারা অনুযায়ী, আপনার সময় কোথায় এবং কীসে ব্যয় হয়-তা খুঁজে বের করা দরকার। বেশির ভাগ লোকজন এ ব্যাপারটাই এড়িয়ে যায়। যদি না তারা খুঁজে বের করে, সময় ব্যবস্থাপনায় অগ্রগতি করা কঠিন।


আইডিয়া


দুই উপায়ে আপনি আপনার বর্তমান অবস্থান খুঁজে বের করতে পারেন। প্রথম হচ্ছে পরিমাপ করা। অনুমান করবেন না। অনুমানে কাজ হয় না। পরিমাপ করার সহজ উপায় হচ্ছে পাই চার্ট ব্যবহার করা। এতে করে সহজেই শতাংশের হিসাবে সময় ও কাজের পরিধি দেখা যায়। আপনার কাজের মূল খাতগুলো লিখুন। তারপর পাই চার্টের বিভিন্ন অংশে খাতগুলো উল্লেখ করুন। এসব খাতে থাকতে পারে:


  • লেখালেখি,

  • ফোন করা,

  • মিটিং,

  • পরিকল্পনা, প্রভৃতি।


আরও ব্যক্তিগত বা ভিন্ন কিছুও থাকতে পারে। আমি আমার দেখা মতে কিছু সাধারণ খাত উল্লেখ করলাম। আপনি নিজের মতো করে বসিয়ে নিন। আমার ক্ষেত্রে আমি ট্রেনিং পরিচালনা করা এবং বই লেখার মতো খাত যোগ করেছি।


 

দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে একটি টাইম লগ ব্যবহার করা। টাইম লগ হচ্ছে সময় ও কাজের উদ্দেশ্য লিখে রাখার একটি খাতা বা ডায়েরি। টাইম লগ ব্যবহার করে আপনি বেশ পরিচ্ছন্ন ও স্পষ্টভাবে আপনার সময় আসলে কোথায় যায়-তা দেখতে পাবেন। দিনের সবকিছু নথিভুক্ত করবেন, কমপক্ষে এক সপ্তাহ কী করেছেন তা উল্লেখ করবেন। যদি সম্ভব হয় এক মাসের সময় হিসাব নথিভুক্ত করুন। এটা করতে খুব বেশি সময় লাগে না, মাত্র দু-এক মিনিট। কিন্তু আপনাকে শৃঙ্খলার সাথে এটা পালন করতে হবে।


খুব অল্প লোকই আছে যারা নিজেদের সময়ের ভাগ-বণ্টন দেখে অবাক হয় না। অবশ্য যারা এ ডায়েরি ঠিকমতো লিখে রাখতে পারে। তারা হয়তো চিন্তা করে তারা গুরুত্বপূর্ণ কিছুতে সময় দিচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় তারা ভিন্ন কিছুতে সময় ব্যয় করছে যা তাদের করার কথা না। তাই সামনে যা আসে তাই করবেন না। আগে টাইম লগ লিখুন। ডাইরিতে লেখা বজায় রাখুন। তারপরই আপনি বুঝতে পারবেন, কোন খাতে কত সময় যাচ্ছে এবং কত সময় দেয়া উচিত। [নিচে একটি টাইম লগের নমুনা ছবি দেয়া হলো। ছবিসূত্র: যঃঃঢ়ং://সধংধশধ.ষীঁরধৎবিফফরহমঢ়যড়ঃড়.পড়স/ঃরসব-ষড়ম-ংযববঃ-বীপবষ/]


 

হাতে কলমে কাজ করুন


১। পাই চার্টের ব্যাপারে বলি। পাই চার্ট ব্যবহারের সময় খাতগুলোর দিকে মনোযোগ দিন। পাই চার্টের একটি অন্যতম সুবিধা হচ্ছে এতে সহজেই খাতগুলো দেখা যায় এবং এতে দেয়া সময়ের শতাংশ হিসাব খুব পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠে। ছবি আকারে হওয়াতে এটা মাথায় ঢুকে ভালো। আপনি সহজেই বুঝতে পারেন আপনি কী নিয়ে কাজ করছেন। এ ধরনের ছবি আপনার সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধিতে অসামান্য ভূমিকা রাখতে পারে।


২। আর আপনি সময়ের হিসাব লিখে রাখছেন কেন? কারণ আপনি নিজেকে উন্নত করতে চান। নিজের সময়কে কাজে লাগাতে চান। এ ধরনের কলাকৌশল কাজে লাগিয়ে প্রতিনিয়ত একটু একটু করে উন্নতি করুন। আপনি হিসাব করবেন, পর্যালোচনা করবে, তারপর বিচারবিবেচনা করবেন এবং কাজ করবেন। আপনি চিন্তা করে দেখবেন, এ ধরনের কাজের ফলে আপনার জীবনে কোন ইতিবাচক ফলাফল এলো কিনা। এ বইয়ের সমস্ত আইডিয়াই দেয়া হয়েছে আপনাকে আরও দক্ষ ও সুকৌশলে কাজ করার সামর্থ্য অর্জনে সাহায্য করার জন্য। আপনি এগুলো কাজে লাগিয়ে দেখুন। পর্যালোচনা করুন। দেখুন যে আপনার কোন কোন খাতে, কোন কোন দিকে এগুলো উত্তমভাবে কার্যকর।


তথ্যসূত্র: টাইম ম্যানেজমেন্ট (সময় ব্যবস্থাপনা)। মূল : ব্রায়ান ট্রেসি। অনুবাদ : ফজলে রাব্বি। ঢাকা, সাফল্য প্রকাশনী, ২০২০।