রবিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৮

আবদ্ধ মানসিকতা (fixed mindset) ও ক্রমবর্ধমান মানসিকতার (growth mindset) সুবিধা অসুবিধা।

আজকে আপনাদের সাথে মস্তিষ্কের দুইটি মনস্তাত্বিক ব্যাপার নিয়ে আলাপ করবো। এগুলোকে আমাদের মানসিকতার ধরন বলতে পারেন। একটি হচ্ছে আবদ্ধ মানসিকতা (fixed mindset)। আর অন্যটি হচ্ছে ক্রমবর্ধমান মানসিকতা (growth mindset)। ক্রমবর্ধমান মানে ক্রমশ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হচ্ছে এমন। চিত্রে মস্তিষ্ক গাছের মতো বৃদ্ধি পাচ্ছে বলতে ক্রমবর্ধমান মানসিকতা (growth mindset) কে বুঝিয়েছে। আর তালা মারা মস্তিষ্ককে একটি আবদ্ধ বা নির্দিষ্ট মানসিকতার (fixed mindset) ব্যক্তি বুঝিয়েছে।


আবদ্ধ মানসিকতা হচ্ছে সবকিছুকে ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে মাপে। আপনি যদি ব্যর্থ হন অথবা আপনি সবচেয়ে ভালো ফলাফল নিয়ে আসতে না পারেন, তবে আপনার সকল প্রচেষ্টাই ব্যর্থ। অপরদিকে ক্রমবর্ধমান মানসিকতা হচ্ছে ফলাফল যাই আসুক না কেন তারা যে চেষ্টা করেছে সেই কর্মপ্রচেষ্টাকে মূল্য দেয়। তারা নতুন নতুন সমস্যার সমাধান করে, নতুন পথে চলার ঝুঁকি নেয়, গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করে। তারা হয়তো ক্যান্সার রোগের মতো ভয়াবহ রোগের ঔষধ খুঁজে পায় না, কিন্তু তবুও তারা এর প্রতিষেধক খুঁজতে পিছপা হয় না। কারণ তারা এর ভয়াবহতা ও প্রতিষেধকের গুরুত্ব গভীরভাবে অনুভব করে।

মূলত ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তা, সামর্থ্য ও সাফল্য দেখার দুইটি ভিন্ন উপায় হচ্ছে ক্রমবর্ধমান মানসিকতা ও আবদ্ধ মানসিকতা। ক্রমবর্ধমান মানসিকতার লোকজন জীবনকে দেখে তাদের সম্ভাব্য গুণাবলি পূরণ করার ভিত্তিতে। আর আবদ্ধ মানসিকতার লোকজন নিজেদেরকে বুদ্ধিমান ও মেধাবী প্রমাণ করে দেখাতে বেশি আগ্রহী।

আবদ্ধ মানসিকতা হচ্ছে যদি আপনি লোকজনকে দেখাতে চান যে আপনি বুদ্ধিমান বা চালাক তবে আপনাকে দেখতে চালাক হতে হবে এবং কাজেও চালাকি করতে হবে। আপনি এটা জিজ্ঞেস করবেন না, ‘আমি এই কাজটি থেকে কী শিখছি?’ বরং আপনি জিজ্ঞেস করবেন, ‘আমি কি জিতবো নাকি হারবো; লোকজন আমাকে কি গ্রহণ করবে নাকি বর্জন করবে?’ এই হচ্ছে মূলত আবদ্ধ মানসিকতার লোকজনের মূল চিন্তা।

অপরদিকে ক্রমবর্ধমান মানসিকতা নিয়ে লোকজন চিন্তা করে আমাদের স্বাভাবিক গুণাবলি বা সামর্থ্য হচ্ছে একটি আরম্ভ মাত্র। এগুলোকে প্রতিনিয়ত ব্যবহার, অনুশীলন, অভিজ্ঞতা ও শেখার মানসিকতার মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব।

মনোবিজ্ঞানী আলফ্রেড বিনেট বলেন, ‘অনুশীলন, প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন শিখন পদ্ধতি দ্বারা আমরা আমাদের মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি, বিবেচনা শক্তি ও চিন্তাশক্তি সহ বুদ্ধিমত্তার অন্যান্য দিকসমূহ সমৃদ্ধ করতে পারি।’

মানসিকতা বইয়ের লেখক ক্যারোল ডউক (Mindset by Carol Dweck) বলেছেন, ‘আবদ্ধ মানসিকতার লোকজন চেষ্টায় বিশ্বাস করে না। তারা চ্যালেঞ্জকে ভয় পায়। তারা ঝুঁকি নিতেও কম আগ্রহী। যদি কাজকর্ম ঠিকভাবে না হয়, তারা চেষ্টা করা ছেড়ে দেয়। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, “চেষ্টা করে আর কী লাভ!” অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান মানসিকতার লোকজন যে সবসময় আত্মবিশ্বাসী হয় তা নয়। কিন্তু তাদের সর্বোচ্চ লক্ষ্য থাকে কাজকর্ম থেকে শেখা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করা। নিজেকে সমৃদ্ধ করার এক অক্লান্ত আকাক্সক্ষা তাদের মধ্যে বিরাজমান। বিশেষ করে যখন তাদের সময় খুব খারাপ যায় তখনও তারা চেষ্টা করেই যায়। এটাই ক্রমবর্ধমান মানসিকতার লোকজনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।’


কবি স্যামুয়েল বেকেট বলেছেন, ‘কখনো চেষ্টা করবে। কখনো ব্যর্থ হবে। কোনো ব্যাপার না। আবার চেষ্টা করো। আবার ব্যর্থ হও। আরও ভালোভাবে ব্যর্থ হও।’

সবশেষ বক্তব্য হচ্ছে, আপনি যত দ্রুত অনুভব করবেন যে আপনি সবকিছুই জানেন এবং এর জন্য অন্যদের স্বীকৃতি, কৃতজ্ঞতা ও পুরস্কার আশা করবেন, তখনই আপনি শেখার আকাক্সক্ষা ত্যাগ করবেন এবং এখান থেকেই ব্যর্থতার সূচনা ঘটবে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন জিনিস শিখতে হবে এবং নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করতে হবে, তবেই আপনি সময়ের সাথে প্রাসঙ্গিক থাকতে পারবেন। সময়কে কাজে লাগাতে পারবেন এবং অন্যদের কাছেও মূল্যবান বলে বিবেচিত হবেন।

তথ্যসূত্র :

1| https://www.youtube.com/watch?v=KUWn_TJTrnU
2| https://www.youtube.com/watch?v=9n9nQM9Cj3s
3| https://en.wikipedia.org/wiki/Mindset
4| https://en.wikiquote.org/wiki/Samuel_Beckett
5| Butler, Tom. Bowdon. 50 Psychology Classics. London : Nicholas Brealey Publishing, 2017.
6| Dweck, Carol S. Mindset: The New Psychology of Success. New York : Penguin Random House LLC, 2016.

সোমবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৮

নিজেকে উন্নত করতে, আত্মসম্মান সৃষ্টিতে দরকার শৃঙ্খলা।


আমাদের মনের দুই বিরোধী ভাব রয়েছে। এটা অদ্ভুত বলে মনে হলেও সত্য। তারচেয়েও বেশি অদ্ভুত হচ্ছে এই দুই বিরোধী ভাব একই সাথে, একই মনে বাস করে। যখন এটা বলি তখন ওটা মনে আনি না, যখন ওটা বলি তখন এটা মনে আনি না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার বই ‘পঞ্চভূত’ এ লিখেছেন, ‘এমন-কি ঘোরতর পশুত্ব থাকিলেও পূজার ব্যাঘাত হয় না। তাহারা একদিকে স্বামীকে মানুষ ভাবে লাঞ্ছনা গঞ্জনা করিতে পারে, আবার অন্যদিকে দেবতা ভাবে পূজাও করিয়া থাকে। একটাতে অন্যটা অভিভূত হয় না। কারণ আমাদের মনোজগতের সহিত বাহ্যজগতের সংঘাত তেমন প্রবল নহে।’

এটাকে যে যাই মনে করুক না কেন এতে সর্বোপরি আমাদের চরিত্রের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে। স্বামীকে দেবতা বললে স্ত্রীর ভক্তি পাইবার জন্য স্বামীর কিছুমাত্র যোগ্যতা লাভের আবশ্যক হয় না। আর যোগ্যতা লাভ করতে হলে আমাদেরকে আমাদের আলস্য শৈথিল্য বর্জন করতে হবে। তা কি সম্ভব! একই বইয়ে রবী ঠাকুর বলেছেন, ‘বাঙালির বেশভূষা চালচলনের অভাবে একটা অপরিমিত আলস্য শৈথিল্য স্বেচ্ছাচার ও আত্মসম্মানের অভাব প্রকাশ পায়।’ এটাকে কী বলে তা আপনি নিজেই জানেন।

যাইহোক, অনেক আলোচনা সমালোচনা হলো। এবার সমাধানে যাওয়া যাক। আমাদের ধনীরাও যে অশোভনভাবে চলাফেরা করে তার কারণ জড়তা ও মূঢ়তা। আমাদের বেতনবৃদ্ধি হলেও চেতনা বৃদ্ধি পায়নি। এজন্য আত্মসম্মান যে নাই বা আত্মসম্মান কী তাও বুঝি না।

নিজেকে উন্নত করতে, আত্মসম্মান সৃষ্টিতে দরকার শৃঙ্খলা। আপনি যদি নিজেকে উন্নত করতে চান তবে আপনি পারবেন। ব্রায়ান ট্রেসি তার বই ‘টাইম ম্যানেজমেন্টে’ লিখেছেন, ‘কাগজে লিখে পরিকল্পনা তৈরি করুন। মুখে মুখে পরিকল্পনা তৈরি করা বন্ধ করুন।’ এর সাথে যদি আগের রাতেই আজকের কী কী কাজ করবেন তা একটি ডাইরিতে লিখে ফেলতে পারেন তবে আরো ভালো হয়। এতে করে আপনি নিশ্চিন্তে ডাইরি দেখলেন এবং কাজগুলো করে গেলেন। আজকে এতটুকুই। ভালো লাগলে মন্তব্য করতে এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আপনার মন্তব্য আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ধন্যবাদ।

ফজলে রাব্বি

***ব্রায়ান ট্রেসির টাইম ম্যানেজমেন্ট বইটি বাংলায় পাবেন সাফল্য প্রকাশনীতে।

শনিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৮

সমুদ্র দেবতা প্রোটিয়াস ছিলেন নমনীয়।

সব সময় বিনয়ী হয়ে থাকলে লোকজন বিরক্ত হয়ে পড়ে। বিনয় অবশ্যই একটি বিরল গুণ। তবে মাঝে মাঝে একটু কৌতুক করা ভালো। একটু মজা করা, একটু হাস্যরসের মধ্যে নিজেকে নিমজ্জিত করা দরকার। এতে করে এক ধরনের মানসিক অবসাদ দূর হয়। সারাক্ষণ একই রকম হয়ে থাকলে, গম্ভীর হয়ে থাকলে আমরা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ি। তাই নিজের মধ্যে একটু নমনীয়তা রাখা দরকার।


ছোট্ট একটি গল্প বলি। গল্পটি হচ্ছে গ্রিক সমুদ্র দেবতা প্রোটিয়াসকে নিয়ে। তার ক্ষমতা ছিল নিজের ইচ্ছামতো নিজেকে পরিবর্তন করার সামর্থ্য। তিনি যখন তখন নিজেকে নিজের ইচ্ছামতো পরিবর্তন করতে পারতেন। একদিন আগামেনোনের ভাই, স্পার্টার রাজা মেনেলেআস প্রোটিয়াসকে ধরতে যায়। তখন সমুদ্র দেবতা নিজেকে প্রথমে একটি সিংহে, তারপর একটি সাপে পরিণত করে। এরপর যথাক্রমে একটি চিতাবাঘে, একটি বন্য শূকরে, একেঁবেকেঁ চলা জলতরঙ্গে এবং সবশেষে একটি বটবৃক্ষে পরিণত হয়। সমুদ্র দেবতা প্রোটিয়াস ছিলেন নমনীয়। তার মতো আমাদেরকে নিজেদের মধ্যে এই অসামান্য গুণ-নমনীয়তা সৃষ্টি করার প্রয়োজনীয়তা অনেক।

ফজলে রাব্বি