মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭

প্রত্যেকের বিশ্ববিদ্যালয়

প্রত্যেকের মাথার মধ্যে তার নিজেস্ব ও স্বতন্ত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। একমাত্র সেই পুরুষই জীবনে সাফল্য অর্জন করে যে মস্তিষ্কের এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাত্মক ও স্নাত্মকোত্তর ডিগ্রি গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিদিনই তাদের পর্যবেক্ষণ চলতে থাকে। প্রতিদিনই তাদের পাঠ্যসূচি তাদের পর্যবেক্ষণ দ্বারা সমৃদ্ধ হতে থাকে।

ক্ষমতার আসল উৎস বই নয়; বরং পর্যবেক্ষণ।


যা আমাদের কাছে অভিজ্ঞতা বয়ে নিয়ে আনে। গভীর চিন্তা করার সুযোগ দেয়। ভালো অনুভূতি নিয়ে আসে এবং একজনকে কাজ করার ক্ষমতা দেয়। এটাই হচ্ছে ক্ষমতার উৎস।


চিন্তা করে দেখুন, বই তো হচ্ছে একজন পর্যবেক্ষকের বর্ণনা। যে পর্যবেক্ষক আমার আপনার মতোই মানুষ। সে কেবল তার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়েছে। আর আমরা তার সেই পর্যবেক্ষণকে জানছি। যা আমরা নিজেরাও পর্যবেক্ষণ করতে পারতাম। যদি আমরা নিজেরা আমাদের পর্যবেক্ষণকে কাজে লাগাই, বাস্তবে প্রয়োগ করি তবে আমরাও এমন কোন মহামূল্যবান বই রচনা করতে পারি যা পাঠ করে অন্যরা উপকৃত হবে।

পর্যবেক্ষণ ব্যতীত সাহিত্য পাঠ ও ধ্যান করা হচ্ছে জমাট বাঁধা একদলা মাটির উপর বৃষ্টি ও সূর্যের আলো পড়ার মতো। যতই বৃষ্টি হোক পানি মাটির দলার ভিতরে প্রবেশ করে না। যতই সূর্যের আলো পড়–ক, বাইরের অংশ রোদে পুড়ে শুকিয়ে যাবে কিন্তু ভিতরে আলো প্রবেশ করবে না। পানির শীতলতা ও আলোর উষ্ণতা কখনো মাটির গভীরে পৌঁছায় না। একই রকমভাবে যে পুরুষ সাহিত্য পাঠ করে ও ধ্যান করে কিন্তু কখনো সাহিত্যর আনন্দ বা ধ্যানের উপকারিতা ভোগ করতে পারে না কারণ তার হৃদয় বদ্ধ, সে নিজের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতাকে প্রয়োগ করেনি।

কেবল সেই বিদ্যালয়গুলো ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রকৃত বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় যেগুলো এটা স্মরণ রেখে তাদের পাঠদান চালিয়ে যায়। যারা তাদের শিক্ষার্থীদের কোনকিছু খুঁজে দেখতে, পর্যবেক্ষণ করতে উৎসাহিত করে যা বিদ্যালয়ের পাঠসূচিতে কখনো পাওয়া যায় না। আপনি কুকুরের লেজ দিয়ে তো আর ভালো একটি তীর বানাতে পারবেন না। আপনি কদাচিৎ এমন একজন পুরুষের মধ্যে মূল্যবোধ খুঁজে পাবেন যে তার দেখার ও শোনার ক্ষমতাকে কাজে লাগায়নি। সাধারণত না পাওয়ারই কথা। যে পুরুষ তার পর্যবেক্ষণকে কাজে লাগায়নি তার মধ্যে মূল্যবোধ খুঁজে পাবেন না।

জন স্টুয়ার্ট ব্লেকি বলেছেন :
‘এটা একটি বিস্ময়কর ব্যাপার যে আমরা কীভাবে খোলা চোখে হেঁটে যাই এবং কিছুই দেখি না।’

ফজলে রাব্বি

সূত্র : (বই) অবজারভেশন। সাফল্য প্রকাশনী।

রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭

নিজের কল্পনায় নিজেকে একজন সফল ব্যক্তি রূপে দেখুন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে যান।


নিজের কল্পনায় নিজেকে একজন সফল ব্যক্তি রূপে দেখুন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে যান। যেমন বেন কুপার দেখেছিলেন।

কীভাবে একটি ভীত বালক ইতিবাচক মনোভাব গঠন করলো?


বেন কুপার ছিলেন আমেরিকার সবচেয়ে সুনামধন্য বিচারকদের একজন। ছোটবেলায় তিনি যে এলাকায় বাস করতেন তার পাশেই একটি বস্তি ছিল। সে ঐ বস্তির পাশ দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতো। কিন্তু সেখানে তার যাতায়াত পথে তিনটি দুষ্ট বালক দাঁড়িয়ে থাকতো। তারা প্রায়ই ছোট্ট বেনকে জ্বালাতন করতো। ব্যাপারটি এতদূর গড়ায় যে বেন বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিতে চাইলো। 

একদিন সে হোরেমিও এলজারের একটি বই পড়ছিলো, বইটি ছিল সাহস ও বিজয়ের চেতনায় ভরপুর। বেন অনেকটা অবচেতন ভাবেই সেই বই থেকে একটি ইতিবাচক মনোভাব গ্রহণ করলো। 

হোরেসিও এলজারের আরও কয়েকটি বই সে গভীর মনোযোগ দিয়ে পাঠ করলো। কয়েক মাস পর, একদিন সে ঐ রাস্তা দিয়ে বিদ্যালয় থেকে আসছিল। এমন সময় সেই দুষ্ট ছেলেগুলো তার পথ রোধ করলো। ছেলেগুলো রেল লাইনের পাশের নর্দমা থেকে ময়লা উঠিয়ে বেনের গায়ে ছুঁড়ে মারলো। 

প্রথমে বেন ভয় পেয়ে দৌড় দিলো। তারপরই তার মনে পড়লো সেই সাহসী ও বিজয়ের গল্পগুলো। সে ছেলেগুলোর সামনে ফিরে এলো। লাফ দিয়ে ছেলেগুলোর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। যদিও বেন ছিল ছোট ও বিপরীতে ছেলে ছিল তিনটি। তারপরও সে কঠিন মারামারি করে। ছেলেগুলো বেনের এহেন রুদ্রমূর্তি দেখে দৌড়ে পালাল। 

বেন উত্তেজনায় লাল হয়ে, হাঁপাতে হাঁপাতে দাঁড়িয়ে রইল। যদিও সে তিনটি ছেলের সমান শক্তিশালী ছিল না তবুও সে ভয়ের মুখামুখি হয়েছে। এই ঘটনাই তার জীবনকে বদলে দিয়েছে। বেক কুপার নিজেই বলেছেন, 

‘এই ঘটনার পর থেকে আমি আর কখনো
ভয়ের মুখামুখি হতে ভীত হইনি।’ 

নিজেকে একজন সকল ব্যক্তিত্ব রূপে চিন্তা করুন, কল্পনা করুন


আপনার মানস চিত্তে নিজেকে একজন সফল ব্যক্তি রূপে দেখুন। যেমন ছোট্ট বেন তার ভয়ের মুখামুখি হতে নিজেকে সাহসী ও বিজয়ী রূপে চিন্তা করেছিল। বেনের সেই মানসজগতের চিত্র, সেই সাহসী চিত্রটিই তাকে বাস্তবে ভয়ের মুখোমুখি হতে প্রেরণা জুগিয়েছে।

এজন্যই একজনের মানস চিত্তে তার যে সফল ব্যক্তিত্ব, যেরকম সফল ব্যক্তি সে হতে চায় তেমনি চিত্র এঁকে রাখা উচিত ও দৃঢ়ভাবে সেই চিত্রকে সর্বদা স্মরণ করে যাওয়া উচিত। এই সাফল্যম-িত চিত্রটিই আপনাকে আত্ম-সন্দেহ থেকে দূরে রাখবে ও পরাজয় থেকে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি দিবে। এভাবেই আপনি একটি নেতিবাচক মনোভাবের পিঞ্জর ভেঙে এগিয়ে যেতে পারবেন। আপনার ছবি আপনাকে কী বলে? 

ফজলে রাব্বি

সূত্র : (বই) সাকসেস থ্রো এ পজেটিভ মেন্টাল এটিটিউট। সাফল্য প্রকাশনী।

রবিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৭

এমন কিছু উর্বর জায়গা যেখানে ‘নতুন নেতৃত্ব’ দরকার হবে।


এমন কিছু উর্বর জায়গার উল্লেখ করছি যেখানে 'নতুন নেতৃত্ব' দরকার।

প্রথমত। রাজনৈতিক ক্ষেত্র যেখানে নতুন নেতাদের জন্য একটি অত্যন্ত জরুরি চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদা নির্দেশ করে যে এখনই এই ক্ষেত্রে নতুন নেতা দরকার, নতুন নেতৃত্ব দরকার। ব্যাপারটি একেবারে সংকটে গিয়ে পৌঁছেছে। বেশিরভাগ রাজনীতিবিদরা হচ্ছে উচ্চ শ্রেণির আইন অনুমোদিত মাস্তান। যে মাস্তান ক্ষতি করার ভয় দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। অন্তত বাহ্যিক দিক থেকে দেখলে তো তাদের মাস্তানের মতোই লাগে। তারা তেল-গ্যাস-বিদ্যুতে দাম বৃদ্ধি করেছে এবং লোকজনকে সৎ পথ থেকে প্রলোভন দেখিয়ে বিপথে নিয়ে গেছে। ব্যবসা ও কারখানাগুলোকে লাইসেন্সের নামে হয়রানি করেছে এবং অতিরিক্ত বোঝা এদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে যাতে লোকজন বোঝার ভারে কখনো উঠে দাঁড়াতে না পারে, প্রতিবাদ তো দূরের কথা।

দ্বিতীয়ত। ব্যাংকিং ক্ষেত্র একটি পুনঃগঠনের দিকে যাচ্ছে। এই ক্ষেত্রের নেতারা প্রায় সম্পূর্ণভাবে জনগণের বিশ্বাস হারিয়েছে। ইতোমধ্যে ব্যাংক কর্মকর্তাগণ পুনঃগঠনের অনুভূতি পাচ্ছেন এবং তারা এটা আরম্ভ করেছে।

তৃতীয়ত। শিল্প-কারখানাগুলো নতুন নেতাদের ডাকছে। পুরাতন ধরনের নেতাদের চিন্তা ও চাল-চলন ছিল লভাংশের ভিত্তিতে। কিন্তু বর্তমানে ব্যবসা ও কারখানায় নতুন চিন্তার আর্বিভাব হয়েছে। এটা হচ্ছে মানুষকে সমান ভিত্তিতে চিন্তা করবে ও চলবে। কেবল লভাংশের ভিত্তিতেই চিন্তা করবে না। ভবিষ্যতের শিল্প-কারখানার নেতারা দুঃখকষ্টে অবিচলিত থাকবে। তারা অবশ্যই নিজেকে বিবেচনা করবে যেন জনগণের একজন সেবাকারী। যার দায়িত্ব হচ্ছে তার বিশ্বাস এমন ভাবে তৈরির ব্যবস্থা করা যে এটা কখনো অন্যায়ভাবে কোন স্বতন্ত্র ব্যক্তির ওপর বা কোন স্বতন্ত্র গোষ্ঠীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না। মানুষের ওপর শোষণ, অধিক খাটিয়ে অল্প মজুরি দান করা, এগুলো হচ্ছে একটি অতীতের বিষয়। সেই মানুষটি নিজের আগ্রহ থেকে ব্যবসা, কারখানা ও শ্রমখাতে নেতৃত্ব দেওয়ার আকাক্সক্ষা পোষণ করে সে অবশ্যই এটা স্মরণ রাখবে।

চতুর্থত। ভবিষ্যতের ধর্মীয় নেতারা তাদের অনুসারীদের ইহজীবনের প্রয়োজনগুলোর প্রতি, তাদের বর্তমান আর্থিক ও ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো সমাধানের প্রতি বেশি মনোযোগ দিতে বাধ্য হবে এবং কম মনোযোগ দিবে মৃত্যু পরবর্তী সময়ের প্রতি এবং যে ভবিষ্যত জন্ম হয়নি তার প্রতি। ধর্ম কেবল মৃত্যু পরবর্তী জান্নাতে যাওয়ার টিকেট বিক্রির ব্যবসা নয়; বরং ধর্ম যে মানুষের পৃথিবীগত সমস্যারও সমাধান দিতে পারে-ঠিক এই ব্যাপারটিই ভবিষ্যতের ধর্মীয় নেতার বুঝতে সক্ষম হবে।

পঞ্চমত। আইন, ঔষধ ও শিক্ষা পেশাগুলোতে একটি নতুন ধরনের নেতৃত্ব গড়ে উঠবে এবং আরও কিছু ক্ষেত্রে, নতুন নেতাদের একটি প্রয়োজনীয়তা জরুরি হয়ে উঠবে। এটা বিশেষত শিক্ষাখাতের জন্য সত্য। এই খাতের নেতারা অবশ্যই ভবিষ্যতে এমন এমন পথ ও উপায় খুঁজে পাবে যে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের জ্ঞানকে বাস্তব জীবনে কাজে লাগাবে। তারা এমন এমন পদ্ধতি বের করবে যাতে করে ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে বসে বসে কেবল বই মুখস্তই করবে না; বরং কাজের দ্বারা শিখবে, জ্ঞানের প্রয়োগ শিখবে। তারা আরও বেশি কাজের দ্বারা শেখার প্রতি গুরুত্ব দিবে এবং কেবল মুখস্ত করে যাওয়াটা ধীরে ধীরে কমে যাবে।

ষষ্ঠত। নতুন নেতাদের প্রয়োজন হবে সাংবাদিকতায়। সংবাদপত্রের ভবিষ্যৎ সফলভাবে পরিচালিত হবে নতুন নেতাদের দ্বারা। যারা রাজনৈতি বা কোন বিশেষ অর্থনৈতিক গোষ্ঠীদের কাছ থেকে ‘বিশেষ সুবিধা’ নিয়ে তাদের হয়ে কাজ করবে না। যারা সংবাদপত্রকে বিজ্ঞাপনের অত্যাচার থেকে রক্ষা করবে। আজকে যেমন তারা বিভিন্ন সংগঠনের সমর্থন লাভের জন্য সংবাদ, প্রতিবেদন বা শিরোনাম তৈরি করে, ভবিষ্যতের নেতারা তা করবে না। ভবিষ্যতের নেতারা এধরনের চাটুকারিতা বর্জন করবে। অন্য যেসব সংবাদপত্র মানুষের সমালোচনা নিয়ে মুখরিত এবং অশ্লীল ছবি ছাপিয়ে মানব মনকে বিপথে নিয়ে যায় তারাও পর্যায়ক্রমে হারিয়ে যাবে।

এই দেশে কিন্তু কাজের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। এখানে অল্প কয়েকটি মূল জায়গার উল্লেখ করা হলো মাত্র যেখানে নতুন নেতা দরকার এবং একটি নতুন ধরনের নেতৃত্ব এখানে সহজলভ্য। বিশ্ব এখন দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এটার মানে পরিবর্তনটির সাথে সাথে মানুষের মানসিকতাও খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। যিনি নেতা হতে চান তাকে অবশ্যই এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে হবে। এখানে যে ব্যবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো একমাত্র এই ধরনের ব্যবস্থাই সভ্যতার ধারা নিশ্চিত করবে।

ফজলে রাব্বি

সূত্র : ডিভেলপিং দ্য লিডার উইদিন ইউ। সাফল্য প্রকাশনী।

শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৭

নেতৃত্বে ব্যর্থতার প্রধান ১০টি কারণ।



আমরা এখন প্রধান ভুলগুলো নিয়ে আলোচনা করবো। যে ভুলগুলোর কারণে নেতারা ব্যর্থ হয়ে থাকেন। কারণ কী করতে হয় না এটা জানা ততটাই গুরুত্বপূর্ণ যতটা কী করতে হয় জানা।

১. তথ্য সংগ্রহে অক্ষমতা। দক্ষ নেতৃত্ব হচ্ছে সংগঠিত করার সক্ষমতা ও তথ্যের পূর্ণতা। কোন প্রকৃত নেতা কখনো এমন কিছুর প্রতি ‘অনেক ব্যস্ততা’ দেখায় না যেখানে তার নেতা রূপে থাকার প্রয়োজন। যখন একজন ব্যক্তি সে নেতা হোক বা অনুসারী হোক তার পরিকল্পনা পরিবর্তনে ‘অনেক ব্যস্ততা’ দেখায় বা কোন জরুরি ব্যাপারে মনোযোগী হয় না, তখন সে তার অদক্ষতারই পরিচয় দেয়। একজন সফল নেতা অবশ্যই তার অবস্থানের সাথে সম্পৃক্ত সকল বিষয়ে দক্ষ হবে। এর মানে তিনি অবশ্যই সক্ষম কর্মকর্তাদের নিকট থেকে সবরকম তথ্য সংগ্রহ করবেন এবং যোগ্য ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় পদে বসাবেন।

২. বিনীত সেবা প্রদানে অনিচ্ছা। মহান নেতাদের আকাক্সক্ষাই প্রকৃত সত্য। যখন অবস্থা প্রয়োজনে যেকোন ধরনের শ্রম দিতে হয়, তারা পরিশ্রম দিতে রাজি এবং কাজ করে দেখান। যদিও তা অন্য কাউকে দিয়ে করানো যেত তবুও তারা নিজেরাই কাজটি করেন। ‘সবার মধ্যে মহান তিনিই যিনি সকলের সেবা করেন।’ সকল নেতাদের এই সত্যকে অনুধাবন করা দরকার এবং মেনে চলা উচিত।

৩. লোকজন কী ‘জানে’ এটার মূল্য দেওয়ার পরিবর্তে তারা যা জানে তা দিয়ে কী ‘করে’ তার মূল্য পরিশোধ করা। পৃথিবী সেইসব ব্যক্তিদের মূল্য দেয় না যারা ‘জানে’। পৃথিবী কেবল তাদেরই মূল্য দেয় যারা তাদের জানা জ্ঞান দ্বারা অন্যদের উৎসাহিত করে। কেবল জানাটাই যথেষ্ট নয়, সেই জানা জ্ঞান দ্বারা কাজ করে দেখানোটাই মূল্যবান।

৪. অনুসারীদের সাথে প্রতিযোগিতার ভয়। যে নেতা ভয় পায় যে তার অনুসারীদের মধ্যে কেউ একজন তার স্থান নিতে পারে, বাস্তবে তা শীঘ্রই ঘটবে। সক্ষম নেতাকে অবশ্যই তার নিম্ন পদস্থদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে যাতে করে তিনি তাকে প্রতিনিধি রূপে নিজের আকাক্সক্ষায় যেকোন অবস্থানে বসাতে পারেন। একমাত্র এইভাবেই একজন নেতা নিজেকে বহুগুণে ও বহু জায়গায় প্রসারিত করতে পারে। এইভাবে একজন নেতা ঠিক একই সময় বিভিন্ন মানুষের চেতনায়, কাজে-কর্মে উপস্থিত থাকতে পারে। যেসব ব্যক্তিরা অন্যদের দিয়ে কাজ করানোর সক্ষমতা অর্জন করেছেন তারা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি বেতন পায়। এটা একটি চরম সত্য। অন্যদের দিয়ে কাজ করানোর দক্ষতা একটি মূল্যবান সম্পদ। একজন দক্ষ নেতা হয়ত, তার কাজ সম্বন্ধে তার জ্ঞান ও তার ব্যক্তিত্বের চুম্বকত্ব দ্বারা অন্যদের দক্ষতা অনেক পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারেন এবং তাদেরকে আরও সেবা প্রদান করতে এবং অধিকতর ভালো সেবা দিতে প্রভাবিত করতে পারেন যা হয়ত তারা নেতার উৎসাহ ও সহায়তা ছাড়া পারতো না।

৫. কল্পনার অভাব। কল্পনা ব্যতীত একজন নেতা জরুরী সভা করতে অক্ষম এবং পরিকল্পনা তৈরিতেও অক্ষম যার দ্বারা তার অনুসারীদের দক্ষভাবে পরিচালিত করবে।

৬. স্বার্থপরতা। যে নেতা সব ধরনের পুরস্কারের প্রতি দাবি জানায় যা তার অনুসারীরাও করেছে, তিনি নিশ্চিতভাবে নির্বাসনে প্রেরিত হবে। একজন প্রকৃত নেতা কোন পুরস্কার দাবি করে না। তিনি পুরস্কারগুলো দেখেই সন্তুষ্ট। যখন কোন পুরস্কার দেখেন তা তার অনুসারীদের হাতে তুলে দেন, কারণ তিনি জানেন যে বেশিরভাগ মানুষই কঠিন পরিশ্রম করে প্রশংসার জন্য এবং তাকে যেন অন্যরা স্মরণ রাখে। একজন লোক টাকা পেলে যে কাজ করতো তারচেয়ে অনেক বেশি কাজ করবে এই প্রশংসা বা অন্যের চিন্তায় স্মরণ থাকার জন্য।

৭. অসংযম। অনুসারীরা কখনো একজন অসংযমী নেতাকে শ্রদ্ধা করে না। অধিকন্তু, যে ব্যক্তি তার মধ্যে অসংযমকে প্রশয় দেয় তার মধ্যকার সব সহ্যশক্তি ও জীবনী শক্তি ধ্বংস হয়ে যায়। এটা যেকোন ব্যবসা বা উদ্যোগের জন্যও সমান সত্য।

৮. অবিশ্বস্ত। এটা হয়ত তালিকার একদম উপরে থাকা উচিত ছিল। একজন নেতা যিনি তার সহযোগী ও কর্মচারীদের প্রতি আস্থাশীল নয়, তার উপরে যারা আছেন এবং তার নিচে যারা আছেন, কেউই বেশি সময় তার নেতৃত্ব মেনে নিতে পারে না। অবিশ্বস্ততা ধুলোবালির মতো। যার মধ্যে অবিশ্বস্ততা বিরজমান সে ধুলোবালির মতো সহজেই উড়ে যায়। কোথাও টিকতে পারে না। এই বিশ্বস্ততাই তার মাথাকে অপমানে নিচে নিয়ে আসে যার সে যোগ্য। আমাদের জীবনে ব্যর্থতার একটি অন্যতম প্রধান কারণ বিশ্বস্ততার অভাব।

৯. নেতৃত্বের ‘কর্তৃত্বের’ ওপর অধিক জোর দেওয়া। ‘আমি নেতা বা আমি মালিক। আমার কথাই তোমাকে মানতে হবে।’ এই ধরনের বক্তব্য একজন অদক্ষ নেতার পরিচায়ক। একজন দক্ষ নেতা পরিচালিত হন উৎসাহ দ্বারা এবং এটা নয় যে তার অনুসারীদের মনে ধীরে ধীরে ভয় প্রবেশ করিয়ে নেতৃত্ব দিবে। যে নেতা তার অনুসারীদের ‘কর্তৃত্বের’ ভয় দেখানোর চেষ্টা করে তিনি বল দ্বারা নেতৃত্বের প্রকারে পড়ে। যদি একজন নেতা, একজন প্রকৃত নেতাই হন, তবে তার বিজ্ঞাপন দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। শুধু তার আচরণ ব্যতীত। তার আচরণই বলে দিবে সে নেতৃত্বের কোন প্রকারে পড়ে। তিনি সহানুভূতি, বুঝজ্ঞান, ন্যায্যতা ও জনমতের প্রকাশ সম্বন্ধে জানে যে এটা তার দায়িত্ব, এটা তার কাজ।

১০. পদবির ওপর জোর দেওয়া। অনুসারীদের সম্মান পেতে হলে একজন যোগ্য নেতার কোন ‘পদবি’র প্রয়োজন হয় না। যে ব্যক্তি তার পদবির ওপর খুব বেশি জোর দেয় সে সাধারণত নাম সর্বস্বই থাকে। প্রকৃত নেতার অফিসের দরজা সব সময় খোলা থাকে তাদের জন্য যে প্রবেশ করতে চায় এবং তার কাজের অংশ লৌকিকতা বা বাহ্যাড়ম্বর থেকে মুক্ত।

নেতৃত্বে ব্যর্থতার কারণসমূহের মধ্যে এগুলো হচ্ছে বেশি সাধারণ। ব্যর্থতা ঘটাতে এই ভুলগুলোর যেকোন একটিই যথেষ্ট। তালিকাটি মনোযোগের সাথে পর্যবেক্ষণ করুন। যদি আপনি নেতৃত্বের প্রতি আগ্রহী হন তবে আগে নিশ্চিত হোন যে আপনি এই ভুলগুলো থেকে মুক্ত।

ফজলে রাব্বি

রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৭

জীবনে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য একটি বাতিঘরের মতো।



একটি বাতিঘর যেমন বিপথগামী জাহাজকে আলো দেয়, পথ দেখায় তেমনি একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যও আপনাকে আপনার চলার পথে দিকনির্দেশনা দেয়, উদ্দীপ্ত করে। আপনি আপনার গতানুগতিক কাজের মধ্যে তখনই সন্তুষ্টি খুঁজে পাবেন যখন আজকের কাজটি আপনার ভবিষ্যৎ লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য একটি ধাপ হবে। আপনি আপনার নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে তাকিয়ে প্রতিদিনকার কাজকে সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার একেকটি ধাপ রূপে চিন্তা করবেন। তখন দেখবেন প্রতিটি কাজ, প্রতিটি পদক্ষেপ দেওয়া আনন্দদায়ক। কারণ আপনি একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে চলছেন।

শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৭

সাকসেস থ্রো এ পজিটিভ মেন্টাল এটিটিউট বইয়ের পর্যালোচনা


সাকসেস থ্রো পজিটিভ মেন্টাল এটিটিউট বইটি এমন নয় যে অনেক মনীষীদের উক্তি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দিয়ে ভরা। এমনকি এটা অনুপ্রেরণার উক্তিতেও যে ভরপুর তা নয়। অনেকের কাছে এটা সত্য নাও লাগতে পারে। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এটা এমন এক বই যা পাঠ করলে আপনি আপনার দুই পায়ে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াবেন এবং একটি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ আরম্ভ করবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি সাফল্য অর্জন করছেন। কথাটা জাদুর মতো মনে হলেও এটা পুরোপুরি সত্য।
এই বইটি পুরোপুরি বাস্তবতা কেন্দ্রিক। বইটিতে বিশ্বের বড় বড় অসংখ্য লোকজনের সাফল্য যাত্রা সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে; তারা কী ধরনের বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছে এবং কীভাবে সেগুলোর মোকাবিলা করেছে তাও বলা হয়েছে। এসব ঘটনাবলি থেকে নেপোলিয়ন হিল কিছু সাধারণ সূত্র আবিষ্কার করেন যা যেকোন মানুষই তার জীবনে কাজে লাগাতে পারে। আর কেউ যদি এই সূত্রগুলো তার বাস্তব জীবনে কাজে লাগায় তবে তার জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটবে, যা অবশ্যই ইতিবাচক।
আমার পক্ষ থেকে কিছু সর্তক বাণী : আপনার মধ্যে যদি জীবনে সাফল্য অর্জনের একটি তীব্র আকাক্সক্ষা না থাকে তবে এই বই ধরার দরকার নেই। আপনি যদি আপনার মধ্যে বিস্ময়কর পরিবর্তন দেখতে না চান তবে এই বই কেনার দরকার নেই। আপনার পক্ষেও যে সাফল্য অর্জন সম্ভব এটা যদি আপনি অন্যদের দেখাতে না চান তবে এই বই পড়ার দরকার নেই।
আপনি যখন এই বইটি পরিপূর্ণভাবে পাঠ শেষ করবেন বুঝবেন, তখন দেখবেন আপনি আর আগের ব্যক্তিটি নেই; এমনকি আপনি চাইলেও আর আগের মতো থাকতে পারবেন না।
সাকসেস থ্রো পজিটিভ মেন্টাল এটিটিউট বইটি কেবল অনেক চিন্তা-ভাবনার স্তুপ নয়, এটা নেপোলিয়ন হিলের ২০ বছরের গবেষণা সাধনার ফল। বইটি পাঠ শেষে আপনি দুইভাগে জীবন যাপন করবেন। প্রথম ভাগ হলো বই পাঠের আগের জীবন। আর দ্বিতীয় ভাগ হলো বই পাঠের পরের জীবন। আমি আমার এই পরের ভাগের জীবন অতিবাহিত করছি।
সাফল্য অর্জনের জন্য ইচ্ছাই যথেষ্ট নয়, একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর যে পথ বা যাত্রা সেই অভিযানে হেঁটে চলাটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের যাত্রাপথে যখন আমরা এগিয়ে যাবো তখন অনেক সমস্যারই আমরা সম্মুখীন হবো, অনেক পরিস্থিতিতে পড়ে আমরা ভয় পাবো, আমাদের মনোযোগ সরে যাবে (চলচ্চিত্র, টিভি বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দ্বারা), আমরা এটা বুঝতে না পেরে আশাহত হবো; যেমনটা আমার হয়েছে।


তারপর যখন দেখবো পৃথিবীর মহান সব ব্যক্তি : থমাস আলভা এডিসন, থিওডোর রুজভেল্ট, হেনরি ফোর্ড, এন্ড্রু কার্নেগি জন ডি. রকফেলারের মতো প্রমুখ ব্যক্তিরাও এমন কঠিন বাধার মুখে পড়েছে এবং দেখবো যে কীভাবে তারা তাদের সমস্যার সমাধান করেছে, তখন আমরা অনুপ্রাণিত হবো, পুনরায় আশা নিয়ে বুক বাঁধবো এবং জীবনের প্রকৃত মানে খুঁজে পাবো। আসলে এই বিশ্বের প্রতিটি মানুষই সমান এবং প্রত্যেকেরই সুযোগ আছে মহৎ কোন কর্ম করে অমর হওয়ার। কেউ কারও চেয়ে কম নয়; কিন্তু তারপরেও কেন আমরা পিছিয়ে পড়ি বা ব্যর্থ হই? বইতে ঠিক এই প্রশ্নেরই উত্তর দেওয়া হয়েছে। এমন কিছু সাধারণ সূত্রের উল্লেখ আছে যা আপনাকে অনায়াসে আপনার জীবনের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
বইটি থেকে আমরা অজস্র ভালো জিনিস শিখতে পারবো।
কীভাবে
=>অধ্যবসায় গঠন করতে হয়
=>নিজের ভেতরের ভীতি দূর করতে হয়
=>জীবনে যা চাই তা অর্জন করতে হয়
=>নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা করতে হয়
=>প্রতিটি বাধার সামনে দৃঢ় পদে দাঁড়াতে হয়
=>অলসতাকে পরাস্ত করতে হয় (আপনি যদি অলস হয়েও থাকেন তবে বইটি পাঠের পর আর কখনো পূর্বের ন্যায় অলসতা দেখাতে পারবেন না)
=>জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে চেষ্টা করবেন
=>আপনার কাজকে উপভোগ করবেন
=>ইতিবাচক মনোভাব দ্বারা ব্যর্থতার মুখোমুখি হবেন
=>জীবনের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে নিজেকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন
=>খারাপ কিছুর সম্মুখীন হলে ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখবেন
=>নিজেকে সৎভাবে বিচার করবেন
=>বেঁচে থাকার আসল মানে খুঁজে পাবেন
.
.
.
.
এবং আরও অনেক কিছু
বইটি পাঠ করার পর আপনি জীবনে যা কিছু অর্জন করতে চান তাই পাবেন : অর্থ, সুখ, ভালোবাসা, সম্মান বা অন্য যেকোন কিছু। বইয়ে যেসব উদাহরণ দেওয়া হয়েছে সেসবই বাস্তব দুনিয়া থেকে নেওয়া। এই উদাহরণসমূহ আপনাকে ভীষণভাবে উদ্দীপ্ত করবে। আর এই উদ্দীপনাই আপনাকে আপনাআপনি আপনার জীবনের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের প্রতি ধাবিত করবে।
একটি ইতিবাচক আবেশ আপনাকে সর্বদা ঘিরে রাখবে। আপনি যেখানেই যান আপনার সাথে সাথে থাকবে সাফল্যের এই চেতনা। সাফল্য মানে যে অনেক বড় কিছু অর্জন করতে হবে তা নয়। আপনি ছোট ছোট কাজেও সফলতা পেতে পারেন। ধরুন সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠা, কোন বদ অভ্যাস ত্যাগ করা বা যে মেয়েটিকে আপনি কেবল দেখেই যান কিন্তু কখনো তাকে ভালোবাসি বলার সাহস পাননি, তাকে আপনার মনের কথা বলা, এমন যেকোন কিছু।
আমি ঠিক জানি না আমি যা বলেছি তাতে আপনি কতটুকু বুঝেছেন। কিন্তু একটি কথা তো সত্য যে আমাদের জীবন মাত্র একটি। আপনি কি আপনার এই একটি জীবনকে উপভোগ করতে চান না?
আপনি যদি আপনার জীবনকে উপভোগ করতে চান বা জীবনে কিছু পেতে চান তবে এই বই আপনাকে সেই দিকেই পরিচালিত করবে। আপনি এই বইকে আপনার জীবনের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে কাজে লাগাতে পারেন। আপনি জীবনে সুখী হন এবং সফলতা লাভ করেন এই কামনায় শেষ করছি।
-ফজলে রাব্বি

বইয়ের শিরোনাম : সাকসেস থ্রো পজিটিভ মেন্টাল এটিটিউট (Success Through A Positive Mental Attitude)
মূল লেখক : নেপোলিয়ন হিল ডব্লিউ. ক্লেমেন্ট স্টোন
অনুবাদ : ফজলে রাব্বি
প্রকাশনী : সাফল্য প্রকাশনী
প্রথম প্রকাশ : কার্তিক  ১৪২৪ / অক্টোবর ২০১৭
দাম : তিনশত ষাট টাকা (৳৩৬০)