বেকনের প্রবন্ধে আমরা মূলত উপযোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাই। বেকন সবকিছুকে ব্যবহারিক মূল্য ও উপযোগিতার নিরিখে বিচার করেন। বেকন চান মানুষের সামর্থ্যরে ষোলো আনা ব্যবহার। মানুষ বাস্তব জগতে নিজের সামর্থ্য প্রয়োগ করবে এবং এর ব্যবহার থেকে সাফল্য লাভ করবে।
বাস্তবে কী কতটুকু কাজে আসবে তাই হচ্ছে বেকনের আসল কথা, সত্য মিথ্যা বিবেচনাটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাঁর চেষ্টা ছিল জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতা আলোচনা করা।
আমি প্রথমে ঈর্ষা প্রবন্ধের উল্লেখ করছি। দীর্ঘদিন থেকে আমার মনে একটি প্রশ্ন ছিল, মানুষ কেন ঈর্ষাপরায়ণ হয়? এর খুব সহজ ও যথার্থ এক উত্তর পাওয়া গেল বেকনের প্রবন্ধে। বেকন বলছেন,
‘যার নিজের কোন গুণ নেই, অন্যের গুণপনা তার ঈর্ষার উদ্রেক করে।’
‘নিজের কাজে যার মন রয়েছে, তার ঈর্ষান্বিত হবার মতো বিশেষ কিছু থাকে না। কারণ ঈর্ষার স্বভাবই হচ্ছে টো টো করা, সে পথে পথে ঘুরে বেড়ায়, ঘরে তার মন টেকে না।’
‘আবার ঈর্ষার পিছনে কাজ করে অন্যের সাথে নিজের তুলনা; যেখানে তুলনা নেই, সেখানে ঈর্ষাও নেই; যে কারণে রাজা ভিন্ন কেউ রাজাকে ঈর্ষা করে না।’
‘সম্মানের পথে যাদের বিস্তর দুর্ভোগ, দুশ্চিন্তা ও দুরবস্থা মোকাবিলা করতে হয়েছে, লোকে তাদের ঈর্ষা করে কম। অনেক ক্লেশে কষ্টে সম্মান অর্জিত হয়েছে জেনে অনেকে বরং তাদের করুণাই করে; আর করুণা ঈর্ষার দারুণ এক প্রতিষেধক। যে কারণে দেখবেন, চতুর ও কুশলী রাজনীতিকেরা সুসময়েও সর্বদা আফশোস করে বলছেন যে কী একটা জীবন তাঁদের, কাজের চাপে জীবনই শেষ। প্রকৃত অবস্থা যা-ই হোক, তাঁরা এসব বলেন ঈর্ষার ধার ভোঁতা করার অভিপ্রায়ে।’
উচ্চ পদ প্রবন্ধ থেকে একটি উক্তি দিচ্ছি।
‘ভালো কিছু করতে পারার শক্তি অর্জন– এই হওয়া চাই সকল উচ্চাকাক্সক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য।’
ক্ষমতা অর্জন কেন করব? উচ্চ পদে কাজ করার শক্তি কেন আমরা অর্জন করব তার খুব সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বেকন। একে আমরা এভাবেও বলতে পারি যে মানুষের জন্য উপকারী সেবা সম্পন্ন করার আকাক্সক্ষা থাকাই হচ্ছে উচ্চাকাক্সক্ষার প্রারম্ভ।
অর্থবিত্ত প্রবন্ধের উক্তি দিয়ে শেষ করছি,
‘ধনী হোন সৎ রাস্তায়, ব্যয় করুন ভেবে চিন্তে, বিতরণ করুন আনন্দের সাথে এবং যাবার সময় হলে হাসিমুখে ছেড়ে চলে যান।’
তথ্যসূত্র :
১। বেকনের প্রবন্ধ। মূল : ফ্রান্সিস বেকন। অনুবাদ : কাওসার হুসাইন। ঢাকা, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ২০০০।