জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত এক সুযোগ

ফ্রেডেরিক ডগলাস (ফেব্রুয়ারি ১৮১৮ - ২০ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৫) একজন লেখক, বক্তা ও রাজনীতিবিদ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের টালবট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মা ছিলেন ক্রীতদাস এবং তিনি নিজেও জন্ম থেকে ক্রীতদাস হিসাবে জীবন আরম্ভ করেন। তখনকার দিনে ক্রীতদাসদের জীবন অনেক ভয়ানক ছিল। দশ বছর বয়সে তিনি তাঁর মা’কে হারান। বারো বছর বয়সে, তাঁর মালিকের স্ত্রী সোফিয়া অলড তাঁকে লেখাপড়া শেখান। তখনকার দিনে ক্রীতদাসদের শিক্ষা অর্জন ছিল বেআইনি। মালিক অলড তার স্ত্রী’কে ফ্রেডেরিককে লেখাপড়া শেখাতে নিষেধ করলেন। কিন্তু ফ্রেডেরিক ছিলেন একজন বুদ্ধিমান ও আগ্রহী কিশোর। তিনি লুকিয়ে লুকিয়ে, অন্য সাদা শিশুদের লেখাপড়া দেখে শিখলেন।

এরপর তিনি যখন পড়তে শিখলেন তখন তিনি সংবাদপত্র পড়তে লাগলেন। দাসদের সম্পর্কে পড়তে লাগলেন। মানুষের সাথে মানুষের আচরণ কী রকম হওয়া উচিত তাই নিয়ে ফ্রেডেরিকের মধ্যে চেতনাবোধ তৈরি হতে লাগল। কিন্তু তিনি এক সময় ধরা পড়ে গেলেন। তাঁকে অন্য এক মালিকের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হল। সেই মালিক ফ্রেডেরিককে বেদম প্রহার করতেন। ফ্রেডেরিকের মনোবল ভেঙে দিতে চাইলেন। কিন্তু এতে করে ফ্রেডেরিকের মনোবল ইস্পাতসম দৃঢ় হয়ে উঠল। তাঁর একমাত্র ধ্যানজ্ঞান হয়ে দাঁড়াল– স্বাধীনতা অর্জন।

১৮৩৮ সালে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি নাবিকের ছদ্মবেশে মালিকের খামার থেকে পালিয়ে যান। তিনি একজন কৃষ্ণাঙ্গ ও মুক্ত ব্যক্তি এমন সনদও যোগাড় করেন। এরপর ট্রেনে করে নিউ ইয়র্কে এসে পৌঁছান।

ফ্রেডেরিক তাঁর দাস জীবন নিয়ে আত্মজীবনী লেখেন। তিনি নারীদের অধিকার নিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি দাসপ্রথা বিলোপে আমেরিকা সহ ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডেও বক্তব্য দেন। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় তিনি কৃষ্ণাঙ্গ সৈন্যদের অধিকার নিয়ে লড়াই করেন। যুদ্ধের সময় দক্ষিণ অংশ (কনফেডারেট স্টেটস অফ আমেরিকা) ঘোষণা দেয়, যেকোন কৃষ্ণাঙ্গ সৈন্যকে ধরতে পারলে হত্যা করা হবে অথবা দাস বানান হবে। ফ্রেডেরিক রাষ্ট্রপতি লিংকনকে (১৯৬১-১৯৬৫) এর বিপরীতে ব্যবস্থা নিয়ে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানান। পরে রাষ্ট্রপতি লিংকন ঘোষণা করেন, কনফেডারেট (দক্ষিণ অংশ) যদি একজন বন্দী সৈন্যকেও হত্যা করে তবে উত্তর অংশও (যুক্তরাষ্ট্র ইউনিয়ন) ইউনিয়নও একজন বন্দী সৈন্যকে হত্যা করবে। তিনি রাষ্ট্রপতি এন্ড্রু জনসনের (১৯৬৫-১৯৬৯) উপদেষ্টা ছিলেন।

ফ্রেডেরিক ডগলাসের বিখ্যাত কিছু উক্তি,

‘দাস ব্যবসায়ীদের সাথে কোন সংহতি বা সংঘবদ্ধতা নয়।’

‘আমি ন্যায়ভিত্তিক কাজ করার জন্য যেকোন লোকের সাথে যুক্ত হতে রাজি আছি, কিন্তু অন্যায় কাজের জন্য কারও সাথেই যুক্ত হতে রাজি নই।’

লাখে একটি সুযোগ পাওয়ার কথা না। কিন্তু ফ্রেডেরিক ডগলাস পেয়েছেন। যেকোন সুযোগ আপনার সুবিধায় পরিণত হতে পারে যদি আপনি কাজ আরম্ভ করেন। আমার সুযোগ নেই। আমার কপালে নেই। এমন কথা হচ্ছে অলসদের অজুহাত। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত এক সুযোগ। প্রত্যেক রোগী এক সুযোগ। পত্রিকার প্রতিটি প্রতিবেদন এক সুযোগ। ব্যবসার প্রতিটি গ্রাহক এক সুযোগ। সভাসমিতির প্রতিটি সাক্ষাৎ এক সুযোগ। ব্যবসার প্রতিটি চুক্তি এক সুযোগ। মানুষ্যোচিত প্রতিটি আচরণ এক সুযোগ। প্রতিটি সৎকর্ম এক সুযোগ। প্রতিটি বন্ধু এক সুযোগ। আপনার মধ্যকার আত্মবিশ্বাসী প্রতিটি কর্ম এক সুযোগ। যেকোন দায়িত্ব পালন করা, দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিজের সম্মান ও শক্তি বৃদ্ধি একটি সুযোগ। যদি একজন দাস– ফ্রেডেরিক ডগলাস নিজেকে একজন বক্তা, লেখক ও রাজনীতিবিদ হিসাবে তৈরি করতে পারেন তবে আপনার সম্ভাবনার দ্বার কি অসীম নয়?

এডউইন হুববেল চ্যাপিন বলেন,

‘মানুষের মধ্যে যারা উত্তম তারা সুযোগের জন্য অপেক্ষা করেন না বরং তারা সুযোগ তৈরি করে; সুযোগকে নিজের হাতের মুঠোয় চেপে ধরে এবং সুযোগকে তার সাহায্যকারী রূপে পরিণত করে।’

যারা কাজ করে তারা অভিযোগ জানায় না। আপনি দেখবেন, যারা অলস, কর্মবিমুখ তারাই ‘সুযোগ নেই, সম্ভবনা নেই’ বলে অভিযোগ জানায়। কিছু কিছু তরুণ জীবন থেকে এত কিছু গ্রহণ করে যেন ফুল থেকে মৌমাছির মধু সংগ্রহ। প্রতিটি ফুল থেকে, প্রতিবার কিছু না কিছু মধু সংগ্রহ করা। তেমনই জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত থেকে, প্রতিটি ঘটনা থেকে কিছু না কিছু শেখার চেষ্টা করুন যা আপনার ব্যক্তিগত উন্নয়নে কাজে আসবে।

এক মহান ব্যক্তি বলেছেন,

‘এমন কেউ নেই যার জীবনে একবার না একবার সুযোগ আসে না। কিন্তু সুযোগ এসে দেখল সেই ব্যক্তি প্রস্তুত নয়। তখন সুযোগ যেমন দরজা দিয়ে এসেছে তেমন জানালা দিয়ে বের হয়ে যায়।’

তথ্যসূত্র :

১। https://www.ducksters.com/history/civil_rights/frederick_douglass.php
২। https://www.biography.com/activist/frederick-douglass
৩। https://en.wikipedia.org/wiki/Frederick_Douglass

ফজলে রাব্বি (Fazle Rabbi)

আমার জীবনের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৪টি অনুপ্রেরণামূলক বই প্রকাশ করা। saphollo.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন