শুক্রবার, ৩১ জুলাই, ২০১৫

রচনা - ০১। কনফুসিয়াসের বাণীগুলো নিয়ে ছোট্ট আলাপ সহকারে নিম্নে রচনা লেখা হল।



ইহা খুব সহজ ঘৃণা করা এবং ইহা খুব কঠিন ভালোবাসা। ঠিক এই ভাবেই জিনিসগুলো কাজ করার সম্পূর্ণ পদ্ধতি ক্রিয়া করে। সকল ভালো জিনিসগুলো অর্জন করা কঠিন এবং মন্দ জিনিসগুলো পাওয়া খুবই সহজ– কনফুসিয়াস

ঘৃণা করা বেশ সহজ তবে ভালোবাসা খুব কঠিনএকজন পুরুষকে ঘৃণা করা যেতে পারে বহু দিক হতে তবে তাকে গ্রহণ করা, মন্দ দিকগুলো থাকা সত্ত্বেও তাকে ভালোবাসা এবং মানিয়ে চলা বেশ কঠিন একটি কাজ। এই সহজ এবং কঠিন ব্যাপারটির সাথে অন্যান্য সকল কাজের অদ্ভুত মিল রয়েছে। জগতে ভালো জিনিসগুলো অর্জন করা যেমন কঠিন, ঠিক তেমনি মন্দ জিনিসগুলো পাওয়া খুবই সহজআর এভাবেই কাজ করে সবগুলো ব্যাপার এবং একই ক্রিয়া পদ্ধতি মেনে চলে।

বুঝতেই পারছেন ভালো জিনিসগুলো অর্জন করা কঠিন এবং কষ্টকর বটে। তবুও আমাদের এগুলো অর্জন করতে হবে যদি আমরা ইহা অর্জনের জন্য নির্দিষ্টভাবে আকাঙ্ক্ষা করি। নির্দিষ্টতা সম্বন্ধে একটি মানসিক কারণ রয়েছে। ধরুন, আপনি চিন্তা করছেন লাল রঙ। আপনার চারপাশে তাকিয়ে আপনি দেখতে পাবেন অনেক বস্তুতেই লাল রঙ রয়েছে যা আপনি পূর্বে কখনও খেয়াল করেননি। তেমনি জীবনে একটি কাজ নির্দিষ্ট করলে আপনিও দেখবেন সেই নির্দিষ্ট কাজটি আছে আপনার চারপাশেই রয়েছে, এতে আপনি আরও বেশি মনোযোগের সাথে আপনার কাজটি করতে পারবেন



সাফল্য নির্ভর করে পূর্ববর্তী প্রস্তুতির উপর এবং এমন প্রস্তুতি ব্যতীত সেখানে নিশ্চিতভাবে ব্যর্থতা ঘটবে। – কনফুসিয়াস

প্রস্তুতির জন্য দরকার আটটি উপাদান, এগুলোকে প্রকাশ করা যায়ঃ প্রস্তুতি = উদ্দেশ্য + আদর্শ + পরিকল্পনা + অনুশীলন + অধ্যবসায় + ধৈর্য + আত্মগৌরব + ইতিবাচক চিন্তা। আপনার জীবনে সাফল্য অর্জন করতে হলে আপনার অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট প্রধান উদ্দেশ্য থাকতে হবে এবং অবিরতভাবে আপনাকে এই নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে স্মরণ করে যেতে হবে, প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে।

       সাফল্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এবং ইহাই একমাত্র ব্যাপার। আপনার জীবনের একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য পূরণের জন্য, এতে সাফল্য অর্জন করতে হলে সর্বাত্মক যত্ন সহকারে প্রস্তুতি নিতে হবে। আপনার প্রস্তুতি মানে উল্লেখিত আটটি উপাদানকে সম্পন্ন করলেই প্রস্তুতি সমাপ্ত হবে। যদিনা আপনি সকল উপাদানগুলোকে ঠিকভাবে কাজে লাগান আপনি নিশ্চিতভাবে ব্যর্থতার সম্মুখীন হবেন। তাই ব্যর্থতার পরিবর্তে সাফল্য অর্জনে পূর্ণ রূপে প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে।

শুক্রবার, ২৪ জুলাই, ২০১৫

বিষয়ঃ লেও টজু।


লেও টজু প্রাচীন চিনা একজন দার্শনিক এবং কবি। তিনি উত্তমভাবে পরিচিত তাও তী চিং এর সুনামধন্য লেখক রূপে এবং তিনি টাওজিম দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কিন্তু তিনি আরও প্রচুর সম্মানিত টাওজিম ধর্মের একজন মহা পুরুষ রূপে এবং ঐতিহ্যগত চিনা ধর্মগুলোর।

আমরা এখন লেও টজুর বিখ্যাত উক্তিগুলোর ১৭টি পাঠ করবো।

ক। কারও দ্বারা গভীরভাবে ভালোবাসিত হলে ইহা আপনাকে বল দিবে, যখন কাউকে গভীরভাবে ভালোবাসবেন ইহা আপনাকে সাহস দিবে। – লেও টজু

খ। হাজারো মাইলের যাত্রা আরম্ভ হয় একটি কদমের সাথে। – লেও টজু

গ। দয়া শব্দগুলোতে সৃষ্টি করে বিশ্বাসদয়া চিন্তায় সৃষ্টি করে নিগূঢ়তা। দেওয়ার মধ্যে দয়া সৃষ্টি করে ভালোবাসা। – লেও টজু [নিগূঢ়তা মানে গভীরতা।]

ঘ। যদি আপনি দিক পরিবর্তন না করেন, আপনি হয়ত শেষ গিয়ে পৌঁছাতে পারেন যেখানে আপনি যাচ্ছিলেন। – লেও টজু



ঙ। একজন নেতা সর্বোত্তম যখন লোকজন কদাচিৎ তার অস্তিত্ব সম্বন্ধে জানে, যখন তার কর্ম সম্পন্ন হয়, তার লক্ষ্য পরিপূর্ণ হয়, তারা বলবেঃ আমরা ইহা নিজেরাই করেছি। – লেও টজু

সেই মন যা হয় অনড়, সম্পূর্ণ মহা বিশ্ব আত্মসমর্পণ করে। – লেও টজু

ছ। নীরবতা হচ্ছে একটি মহান বলের উৎস। – লেও টজু

জ। একজন ভালো পরিব্রাজকের কোন স্থির পরিকল্পনা নেই এবং কোথাও পৌঁছানোর কোন অভিপ্রায় নেই। – লেও টজু

ঝ। যখন আপনি শুধুমাত্র আপনার নিজেকে নিয়ে সহজভাবেই সন্তুষ্ট এবং তুলনা বা প্রতিযোগিতা করেন না, সকলেই আপনাকে শ্রদ্ধা করবে। – লেও টজু

ঞ। আমার কেবলমাত্র তিনটি জিনিসই শেখানোর আছেঃ সহজবোধ্যতা, ধৈর্য, সহানুভূতি (দয়া)। এই তিনটি হচ্ছে আপনার মহানতম সম্পদ। – লেও টজু

ট। অন্যান্যদের জানা হচ্ছে বিজ্ঞতা, নিজেকে জানা হচ্ছে আলোকপ্রাপ্ত অবস্থা (বোধোদয়)।– লেও টজু

অন্যান্যদের উপর কর্তৃত্ব করা হচ্ছে বল। নিজের উপর কর্তৃত্ব করা হচ্ছে সত্যিকারের ক্ষমতা। – লেও টজু

ড। বৃদ্ধির চাবিটি হচ্ছে সচেতনতার উচ্চতর মাত্রাগুলোর সূচনা আমাদের অবগতিতে পরিণত হওয়া। – লেও টজু

ঢ। আত্মার মধ্যকার সংগীত মহা বিশ্বও শুনতে পায়। – লেও টজু

ণ। প্রকৃতি তাড়াহুড়া করে না, তবুও সবকিছুই সম্পন্ন হয়। – লেও টজু

ত। সন্তুষ্ট হোন যা আপনার আছে তাই নিয়ে; আনন্দিত হোন জিনিসগুলো যেভাবে আছে তাই নিয়ে। যখন আপনি অনুধাবন করবেন সেখানে কিছুরই অভাব নেই, সম্পূর্ণ বিশ্ব আপনার হয়ে যাবে। – লেও টজু

থ। জীবন এবং মরণ হচ্ছে একটি সুতা, একই সারির যা ভিন্ন দিক হতে দেখা হয়। – লেও টজু

তথ্য নির্দেশঃ

শুক্রবার, ১৭ জুলাই, ২০১৫

বিষয়ঃ সক্রেটিস।


সর্বকালের একজন শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ এবং দার্শনিক হচ্ছেন সক্রেটিস। আমরা আজ তার সর্বোৎকৃষ্ট বাক্যগুলোর ২৪টি বাক্য নিম্নে পাঠ করবো। এছাড়াও আপনারা যদি সক্রেটিস সম্বন্ধে বাংলায় লিখিত বইগুলো পাঠ করতে চান তার একটি তালিকা নিম্নে দেওয়া হলঃ

[ এখানে বইগুলোর নামগুলো গ্রন্থপঞ্জি লেখার নিয়ম অনুসারে দেওয়া হল। গ্রন্থপঞ্জি লেখার নিয়মগুলো পেতে পারেন – সামাদ, মোঃ আবদুস। শিক্ষা ও গবেষণা। ঢাকাঃ বাংলা একাডেমি, ২০১০। ]

ক। অনুবাদক। ভুইয়া, আমিনুল ইসলাম। প্লেটোর আইনকানুন। ঢাকাঃ বাংলা একাডেমি, ২০১৩।
খ। অনুবাদক। করিম, সরদার ফজলুল। প্লেটোর রিপাবলিক (প্রজাতন্ত্র)। ঢাকাঃ মাওলা ব্রাদার্স, ২০১১।
গ। অনুবাদক। করিম, সরদার ফজলুল। প্লেটোর সংলাপ। ঢাকাঃ প্যাপিরাস, ২০১৫।
ঘ। অনুবাদক। হোসেন, কাজী মোতাহার হোসেন। প্লেটোর সিম্পোজিয়াম। ঢাকাঃ অবসর, ২০০০।

এখন আমরা পাঠ করবো সক্রেটিসের ২৪টি অমৃত উক্তিগুলো।

ক। একমাত্র সত্যিকারের বিজ্ঞতা হচ্ছে ইহা জানার মধ্যে যে কিছুই জানেন না। [একমাত্র সত্যিকারের বিজ্ঞতা হচ্ছে ইহা জানার মধ্যে যে আপনি কিছুই জানেন না।] – সক্রেটিস

খ। অপরীক্ষিত জীবন, যাপন করার জন্য কোন মূল্য রাখে না। – সক্রেটিস

গ। সেখানে শুধুমাত্র একটি ভালো, জ্ঞান এবং একটি মন্দ, অজ্ঞতা। – সক্রেটিস

ঘ। আমি কাউকে কিছু শেখাতে পারি না। আমি শুধুমাত্র তাদের চিন্তা করাতে পারি। – সক্রেটিস

ঙ। দয়ালু হোন, প্রত্যেকের জন্য যাদের সাথে আপনার সাক্ষাৎ হয় তারা একটি কঠিন লড়াই চালাচ্ছানে। – সক্রেটিস

চ। শক্তিশালী মনগুলো ধারণাগুলো আলোচনা করে, গড় মনগুলো ঘটনাগুলো আলোচনা করে, দুর্বল মনগুলো লোকজনের আলোচনা করা। [অন্যান্য লোকদের আলোচনা করা, সমালোচনা করা।] – সক্রেটিস

ছ। বিবাহের সকল মানেগুলো হচ্ছে; যদি আপনি একটি ভালো বউ পান, আপনি সুখী হয়ে উঠবেন, যদি আপনি একজন মন্দ পান, আপনি একজন দার্শনিক হয়ে উঠবেন। – সক্রেটিস

জ। তিনি যে সন্তুষ্ট নন যা তার আছে, তিনি সন্তুষ্ট হবে না যা তিনি হতে পছন্দ করেন। – সক্রেটিস


ঝ। যদি আপনি না পান যা আপনি চান, আপনি কষ্ট পাবেন; যদি আপনি পান যা আপনি না চান, আপনি কষ্ট পাবেন; এমনকি যখন আপনি পাবেন একদম তাই যা আপনি চান, আপনি তখনও কষ্ট পাবেন কারণ আপনি ইহা চিরদিনের জন্য ধরে রাখতে পারবেন না। আপনার মন হচ্ছে আপনার জন্য বিপদজনক। ইহা পরিবর্তন হতে মুক্তি চায়। বেদনা থেকে মুক্তি, জীবন এবং মৃত্যুর বাধাগুলো হতে মুক্তি। কিন্তু পরিবর্তন হচ্ছে প্রকৃতির আইন এবং কোন ছলনাকারী যেকোন পরিমাণের ইচ্ছা সেই বাস্তবতাকে বদলাতে পারবে না। – সক্রেটিস

কিছু সময় আপনি দেয়ালগুলো তুলে দেন লোকজনকে দূরে রাখার জন্য নয়, কিন্তু দেখার জন্য যে কারা যথেষ্ট আগ্রহী এগুলো ভাঙার জন্য। – সক্রেটিস

ট। বিস্ময় হচ্ছে বিজ্ঞতার আরম্ভ। – সক্রেটিস

ঠ। নিজেকে খোঁজার জন্য, নিজের জন্য চিন্তা করুন। – সক্রেটিস

ড। শিক্ষা হচ্ছে একটি আগুনের ফুলকি জ্বালানো, একটি মটকা ভরার জন্য নয়। – সক্রেটিস [মটকা মানে মাটির বড় পাত্র।]

ঢ। নিজেকে জানুন। – সক্রেটিস

ণ। যিনি বিশ্বকে নাড়া দিবেন তিনি প্রথমে নিজেকে নাড়া দিবেন। – সক্রেটিস

সুখের রহস্য, ব্যাপারটা হচ্ছে যে, আরও খুঁজলেও পাবেন না, কিন্তু পাবেন কম উপভোগের ধারণ ক্ষমতা বিকাশের মধ্যে। – সক্রেটিস

থ। পরিবর্তনের রহস্য হচ্ছে আপনার সকল বলের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা, পুরাতনের সাথে লড়াই করা নয়, বরং নতুনকে নির্মাণ করা। – সক্রেটিস

দ। আমি একজন অ্যাথেনিয়ান নই বা একজন গ্রীক নই, বরং আমি বিশ্বের একজন নাগরিক। – সক্রেটিস

ধ। সম্পদের চেয়ে জ্ঞান পছন্দ করুন, একটি হচ্ছে অচিরস্থায়ী, অন্যটি চিরস্থায়ী। – সক্রেটিস

ন। একটি প্রশ্ন বুঝতে পারা হচ্ছে একটি উত্তরের অর্ধেক। – সক্রেটিস

প। সত্যিকারের বিজ্ঞতা আমাদের প্রত্যেকের কাছে আসে যখন আমরা অনুধাবন করি কত অল্প আমরা বুঝি জীবন সম্বন্ধে, আমাদের নিজেদের এবং আমাদের আশেপাশের বিশ্বটি সম্বন্ধে। – সক্রেটিস

ফ। তিনিই ধনীতম যিনি সর্বাধিক কমে সন্তুষ্ট, কারণ সন্তুষ্ট হওয়া হচ্ছে প্রকৃতির সম্পদ। – সক্রেটিস

ব। হওয়ার জন্য কাজ করতে হবে। – সক্রেটিস

ভ। মন হচ্ছে সবকিছু; যা আপনি চিন্তা করেন আপনি তাই হয়ে ওঠেন। – সক্রেটিস


তথ্য নির্দেশঃ

শুক্রবার, ১০ জুলাই, ২০১৫

ইতিবাচক চিন্তা বদলে দিতে পারে আপনার জীবন।


ইতিবাচক চিন্তা হচ্ছে একটি মানসিক ভঙ্গি যাতে আপনি ভালো এবং পছন্দনীয় ফলাফলগুলো আশা করেন। অন্য শব্দগুলোতে বললে, ইতিবাচক চিন্তা হচ্ছে একটি চিন্তা তৈরি করার প্রক্রিয়া যা শক্তি তৈরি করে এবং রূপান্তর করে বাস্তবতায়। একটি ইতিবাচক মন যেকোন অবস্থায় চেষ্টা করে সুখ, স্বাস্থ্য এবং একটি সুখকর পরিসমাপ্তির জন্য।

একটি উদাহরণ বিবেচনা করুন, একটি গ্লাস যার অর্ধেক খালি বা অর্ধেক পূর্ণ? আপনার দেখার ঝোঁক কেমন? আপনি হয়ত সম্ভবত শুনেছেন এই প্রশ্নটি বহুবার। আপনার উত্তর সরাসরি সম্পর্ক যুক্ত ইতিবাচক চিন্তার ধারণাটির সাথে এবং জীবনের ওপর আপনার একটি ইতিবাচক বা নেতিবাচক দৃষ্টি কিনা।

       জিগ জিগলার বলেছেন, “ইতিবাচক চিন্তা আপনাকে সবকিছু উত্তমভাবে করার সুযোগ দিবে তারচেয়ে যা নেতিবাচক চিন্তা করলে দিবে।”

       শিব খের তার বিখ্যাত বই “তুমিও জিতবে” তে একটি অধ্যায়ই লিখেছেন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির জন্য। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির জন্য দরকার ইতিবাচক চিন্তাতিনি মনোযোগকে নেতিবাচক অংশ হতে ইতিবাচক অংশে ঘোরানোর প্রতি জোর দিয়েছেন। কিছু লোকজন সর্বদাই পরিস্থিতির নেতিবাচক অংশের প্রতি দেখবে। কিন্তু ইহা আপনার জীবন এবং আপনি কেন নেতিবাচক চিন্তা করে নিজের মেজাজকে খারাপ করবেন। এখনই সিদ্ধান্ত নিন, আপনি কি ইতিবাচক চিন্তা করে নিজের মেজাজকে আরও ভালো করতে চান এবং আনন্দের সাথে কাজে সফল হতে চান?

       লেখক নরম্যান ভিনসেন্ট পেইলি তার জীবন ভর গবেষণা করেছেন, বক্তৃতা দিয়েছেন, রচনা লিখেছেন ইতিবাচক চিন্তার ওপর। তিনি একটি মহা মূল্যবান বই রচনা করেছেন ইতিবাচক চিন্তার ওপর এবং ইহার শিরোনাম দিয়েছেন “ইতিবাচক চিন্তার ক্ষমতা।” একটি অসাধারণ বইইহা ব্যক্তিগত উন্নয়নের সর্বোৎকৃষ্ট বইগুলোর মধ্যে একটিবইটি ১৯৫৩ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল এবং আজও সমানভাবে পৃথিবীকে এর জ্ঞান দ্বারা আলোকিত করে চলেছে। হাজারো লক্ষ পুরুষ এই বই দ্বারা উপকৃত হয়েছেন।

       “ইতিবাচক চিন্তার ক্ষমতা” বইটির প্রথম অধ্যায়ের দুইটি বাক্যই হচ্ছে:

“নিজের মধ্যে বিশ্বাস রাখুন !”
“নিজের দক্ষতাগুলোর মধ্যে আস্থা রাখুন !”

       উভয় বাক্যগুলো হচ্ছে ইতিবাচক চেতনায় ভরপুর। বাক্যগুলো এমন যে, পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক আপনি যদি ইতিবাচক চিন্তা করার চেষ্টা করেন এবং নিজের মধ্যে এবং নিজের দক্ষতাগুলোর মধ্যে বিশ্বাসআস্থা রাখেন তবে অবশেষে জয় আপনার নিশ্চয়ই হবে।

       পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ্‌ বলেন, “যে কেউ কোন উত্তম কাজ করে, আমি তার জন্য তাতে আরও সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেইনিশ্চয় আল্লাহ্‌ পরম ক্ষমাশীল, অতিশয় গুণগ্রাহী।” সূরা আশ্‌শুরা, আয়াত – ২৩। এখানে উত্তম কাজ বলতে ইতিবাচক কাজ, ভালো কাজ এবং সৎ কাজ সম্বন্ধে বলা হয়েছেআল্লাহ্‌ ইহাও বলেছেন যে তিনি পরম ক্ষমাশীল এবং গুণগ্রাহী তারমানে আপনি কোন ভুল করে থাকলেও ক্ষমা চাইলে আল্লাহ্‌ ক্ষমা করে দিবেন এবং আপনার উত্তম কাজ সম্পন্ন হওয়ার জন্য আপনাকে উপায় দেখাবেন।

       বিষয়টি হচ্ছে আপনি জীবনে যা নির্দিষ্টভাবে চান তার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা এবং ইহা অর্জন করা। এর জন্য দরকার ইতিবাচক চিন্তা, নির্দিষ্টভাবে একটি আকাঙ্ক্ষার ওপর চিন্তা করে যাওয়া, ইহা পূরণ করার জন্য পরিকল্পনা করা এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে যাওয়া, এই কাজগুলো করতে হবে অধ্যবসায় এবং ধৈর্যের সাথে। সাফল্য নিশ্চয়ই হবেই, আপনাকে শুধুমাত্র ইহার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখতে হবে এবং চিন্তা করতে হবে ইতিবাচক চিন্তা।

তথ্য নির্দেশঃ

গ্রন্থপঞ্জিঃ
 কুরআন শরীফ। ঢাকাঃ খোশরোজ কিতাব মহল, ২০০১।
খের, শিব। তুমিও জিতবে। নিউ দিল্লীঃ ম্যাকমিলান ইন্ডিয়া লিমিটেড, ২০০২
পেইলি, নরম্যান ভিনসেন্ট। ইতিবাচক চিন্তার ক্ষমতা। ইংল্যান্ডঃ ভারমিলিয়ন, ২০০৪।

শুক্রবার, ৩ জুলাই, ২০১৫

দশটি উচ্চ অভ্যাসগুলো গঠন করুন যা আপনাকে ধনী তৈরী করতে পারে।



আপনি কি জানেন প্রতিদিন আপনার ছোট্ট কাজগুলোর মাধ্যমে ধনী হওয়া যায়। দেখা গেছে সেখানে কিছু প্রাত্যহিক অভ্যাসগুলো রয়েছে যা করলে আপনি আপনার সাফল্যের মাত্রাকে বৃদ্ধি করতে পারবেন এবং ধনী হওয়ার সম্ভাবনাকে বর্ধিত করতে পারবেন অদূর ভবিষ্যতে। এই “ধনী অভ্যাসগুলো” আপনাকে সহায়তা করতে পারে আপনার পেশাগত এবং ব্যক্তিগত সাফল্য এবং সম্পদ অর্জন করতে।
এখানে বর্ণনা করা হল ১০টি উচ্চ অভ্যাসগুলো যা আপনি নিশ্চিত করলে আপনার ধনী হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে বহুগুণে।

১। প্রতিদিনের লক্ষ্য স্থির।
কেবলমাত্র দীর্ঘ-মেয়াদী লক্ষ্য স্থির করাই যথেষ্ট নয়। ইহা সত্য যে আপনার জীবনের একটি নির্দিষ্ট প্রধান লক্ষ্য থাকতে হবে। তবে ইহা পূরণ করার জন্য আপনাকে প্রতিদিন লক্ষ স্থির করতে হবে। প্রতিদিন স্থির করুন কিছু নির্দিষ্ট কাজ যা আপনার জীবনের নির্দিষ্ট প্রধান লক্ষ্যের প্রতি আপনাকে আরও একটু ধাবিত করে। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আমার নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে কি প্রয়োজনীয় তথ্য আমার কাছে নাই? প্রতিদিন চিন্তা করুন, আগামী দিন কি কাজ করলে আপনার নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে আপনি এগিয়ে যাবেন?

২। দক্ষ শ্রোতা হওয়ার অনুশীলন।
অন্য যেকোন গুণের মতন দক্ষ শ্রোতা হওয়া আবশ্যক। আপনাকে জানতে হবে যে অন্যরা আপনার কাছ থেকে কি চায় এবং ইহা জানতে আপনাকে দক্ষ শ্রোতা হতে হবে। শ্রবণ করার অভ্যাস গঠন করুন এবং আপনি অন্যান্যদের জানতে পারবেন এবং তাদের প্রয়োজন মতন সহায়তাও করতে পারবেন। সকলেই একজন শ্রোতাকে পছন্দ করে এবং তার কাছ থেকে পরামর্শ এবং সহযোগিতা কামনা করে। একজন শ্রোতা একজন দক্ষ পর্যবেক্ষণকারী। শ্রবণ করুন, চিন্তা করুন এবং প্রত্যেককে সহযোগিতা করার মনোভাব বজায় রাখুন।

৩। আপনার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের যত্ন নিন।
একজন অসুস্থ পুরুষ কখনও সাফল্যের সুখ অর্জন করতে পারে না। জীবনের আনন্দ অনুভব করতে আপনার দরকার সুস্বাস্থ্য। একটি ব্যায়াম করার তালিকা তৈরী করুন এবং নিয়মিত ইহা অনুশীলন করুন। ইহাকে একটি অভ্যাসের মতন তৈরী করুন যাতে আপনি হয়ে উঠতে পারেন আরও উৎপাদনক্ষম এবং কাজগুলো করতে পারেন আরও দ্রুত এবং সহজভাবে

নিয়মিতভাবে সঙ্ঘের সাথে চলুন এবং স্বেচ্ছাসেবক হোন।
সঙ্ঘের সাথে চলার ক্ষমতাকে কখনও অবহেলা করবেন না। সঙ্ঘের সাথে মানে আপনার নির্দিষ্ট প্রধান উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পুরুষদের সাথে একত্রে চলাচল করা, নিয়মিত যোগাযোগ রাখা এবং ধারণা বিনিময় করা। এমন সঙ্ঘ না থাকলে, নিজেই তৈরী করুন। আপনার সঙ্ঘে নিন যারা আপনার মতন একই নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের প্রতি চিন্তাশীল। সঙ্ঘ বজায় রাখা এবং একত্রে কাজ করা সাফল্যের প্রতি অতি গুরুত্বপূর্ণ। ইহা নিশ্চিত করতে পারে আপনার সাফল্য বা ব্যর্থতা।

৫। টিভি কম দেখুন।
অধিকাংশ সাফল্যমণ্ডিত লোকজন প্রতিদিন এক ঘণ্টার বেশি টিভি দেখা এড়িয়ে চলেন। কিছু সময় তারা টিভিই দেখেন না। তারা জানেন যে তারা আরও উৎপাদনক্ষম কাজ করতে পারেন যে সময় তারা একটি বাকসের সামনে বসে থাকবেন। সাফল্যমণ্ডিত ব্যক্তিরা কঠোর পরিশ্রম করে এবং তারা সময়ের দাম দিতে পছন্দ করে। তারা টিভির সামনে বসে যে সময় ব্যয় করবেন তারচেয়ে অধিক আয় তারা তাদের সাফল্যের প্রতি চিন্তা এবং পরিকল্পনা করে অর্জন করেন।

৬। প্রতিদিন পাঠ করুন।
       সাফল্যের রাস্তায় টিকে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত আপনাকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এজন্য প্রতিদিন কিছু পাঠ করুন। পাঠ আপনাকে বর্ধিত হতে সহায়তা করবে, আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি করবে এবং বিশ্বকে ভিন্নভাবে দেখার প্রতি আপনাকে উৎসাহিত করবে। আপনার পছন্দ মতন একটি বই চয়ন করুন এবং ইহা পাঠে একদিনে ৩০ মিনিট ব্যয় করুন। আপনার পেশা সংক্রান্ত বইগুলো পাঠ করতে পারেন বা নিয়মিত সংবাদপত্রের ওয়েবসাইটগুলো দেখে বিশ্ব জুড়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার সাথে নিজেকে অবহিত রাখতে পারেন।

৭। আপনার দক্ষতাগুলোকে বিকশিত করুন।
       আপনার স্বপ্ন পূরণের পথগুলোর একটি সর্বোৎকৃষ্ট পথ হচ্ছে আপনার দক্ষতাগুলোকে বিকশিত করা। যদি আপনি চান আপনার পেশা বা অন্য কোন কাজ যাতে আপনি সাফল্য অর্জন করতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই আপনার মেধা বৃদ্ধি করার জন্য বিনিয়োগ করতে হবে বা গুণাবলীকে বিকশিত করতে হবে। ইহাতে আপনি অন্যান্য প্রতিযোগীদের নিকট থেকে এগিয়ে থাকবেন। এই বিনিয়োগ হতে পারে শ্রম, সময় বা অর্থ। স্মরণ রাখবেন মহান হওয়ার চেষ্টা করাই হচ্ছে মহান হওয়ার একমাত্র পথ।

৮। ইতিবাচক চিন্তা।
       ইতিবাচক চিন্তা একটি অভ্যাসের চেয়েও বেশি কিছু, ইহা জীবনের একটি ধারা। যদি আপনি শিখতে পারেন যে কিভাবে নেতিবাচক এবং আত্ম-সীমাবদ্ধতার অনুভূতিগুলো দূরে সরিয়ে রাখবেন, ইহা আপনার জন্য সহজ হবে সবকিছুতে একটি ইতিবাচক ফলাফল দেখার। বন্ধু ভাবাপন্ন এবং আগ্রহী হোন এবং নিজেকে নতুন সম্ভাবনাগুলোর প্রতি সর্বদা প্রস্তুত রাখবেন। কারোই একটি নির্ভুল জীবন হয় না। প্রত্যেকেরই তাদের নিজস্ব সমস্যাবলী রয়েছে। শুধুমাত্র কিছু লোকজন জানে যে কিভাবে ইহাকে একটি উত্তম পথে লেনদেন করতে হবে।
       এই উত্তম পথটি হচ্ছে ইতিবাচক চিন্তা করা। ইতিবাচক চিন্তা হচ্ছে আশাবাদী চিন্তা, ভালো চিন্তা, ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের জন্য যা করতে হবে মানে সমাধানের চিন্তা যে সমস্যা যত কঠিনই হোক সমাধান আপনি পাবেনই। ইতিবাচক চিন্তাই পারে একজন ব্যক্তিকে তার সমস্যা থেকে সমাধান খুঁজে বের করে দিতে। সহজে আপনার নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে ত্যাগ করবেন না, কারণ ত্যাগকারীরা কখনও জয়ী হয় না, বিজয়ীরা কখনও ত্যাগ করে না। সেখানে সমাধান আছে, আপনাকে কেবলমাত্র ইহা চিন্তা করে খুঁজে বের করতে হবে।

৯। অর্থ সঞ্চয়।
       গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিজেদের অর্থকে দক্ষভাবে পরিচালনা করে তারা ধনী হয়ে ওঠে। আপনার আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ সঞ্চয় করুন। প্রতিদিন কিছু অংশ সঞ্চয়ের অভ্যাস গঠন করুন। কারণ সঞ্চিত অর্থ আপনাকে আরও বড় কাজ করার সাহস যোগাবে। শুধুমাত্র ইহাই নয়, সঞ্চিত অর্থ আপনার দুর্দিনেও আপনাকে সহায়তা করবে।

১০। পছন্দনীয় মানসিকতার লোকজনের সাথে জুড়ে থাকুন।
       আপনার সময় ব্যয় করুন আপনার পছন্দনীয় মানসিকতার লোকজনের সাথে। তাদের সাথে আপনার ধারণা বিনিময় করুন যা আপনাকে করতে পারে ধনী এবং সাফল্যমণ্ডিত। একই ধরনের চিন্তাশীল ব্যক্তিদের সাথে আপনার সম্পর্ক আপনার লক্ষ্যগুলো দ্রুত পূরণে সহায়তা করবে। তবে দেখবেন আপনার সঙ্ঘের মধ্যে এমন লোকদের নিবেন যারা আপনার লক্ষ্য পূরণ করতে আপনাকে উৎসাহিত করে এবং আপনার কাজে আপনাকে ঠাট্টা, তামাশা বা নিরুৎসাহিত করে না।

এই ১০টি অভ্যাসগুলো আপনাকে নিয়ে যেতে পারে আপনার জীবনের একটি নির্দিষ্ট প্রধান লক্ষ্য পূরণে। আপনাকে কেবলমাত্র আরম্ভ করতে হবে। যদি আপনি জানেন যে আপনি কোথায় যাবেন তবে আপনার যাত্রা সহজে দৃশ্যমান হবে। তাই আজই নির্দিষ্ট করুন আপনার জীবনের একটি নির্দিষ্ট প্রধান লক্ষ্য এবং ইহা পূরণ করতে এই ১০টি অভ্যাসগুলোকে একটি ব্যবস্থাপত্রের মতন কাজে লাগান। স্মরণ রাখবেন, ইহা আপনি যে সাফল্য অর্জন করতে চান, তাই আপনাকে সাফল্য অর্জন করার পরিশ্রম করতে হবে এবং দায়িত্ব নিতে হবে। যদি আপনি ব্যর্থ হন তবে আর কেউ নয় আপনি নিজেই নিজেকে দোষারোপ করবেন।

তথ্য নির্দেশঃ
গ। http://thikdarona.blogspot.com