মঙ্গলবার, ১০ মার্চ, ২০২০

অমর্ত্য সেন পাঠচক্র উদ্বোধন


উদ্বোধনী বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান ওসমানী খুব চমৎকারভাবে বিষয়বস্তু তুলে ধরেন। বিষয় হচ্ছে : সমৃদ্ধ ও ন্যায্য সমাজের সন্ধানে অমর্ত্য সেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘সমৃদ্ধ সমাজ কীভাবে গড়ে তোলা যায়? এবং একটি সমৃদ্ধ সমাজকে কীভাবে ন্যায্য সমাজে পরিণত করা যায়?’ এগুলো আমরা অমর্ত্য সেনের রচনাবলি পাঠ করে কিছু স্পষ্ট ধারণা পাব।

বক্তব্যে গণিতের দুইটি ধারণা উঠে আসে। একটি হচ্ছে অপটিমাল (optimal) তথা সর্বোচ্চ সর্বোত্তম উপায়। মানে আদর্শ এক সমাধান। যেমন প্লেটোর ইউটোপিয়া। এমন আদর্শ তত্ত্বে সম্ভব হলেও বাস্তবে তা প্রায়ই প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। আরেকটি ধারণা হচ্ছে ম্যাক্সিমাল (maximal means at least as good as available options) তথা যে সকল উপায় পাওয়া গেছে তার মধ্যে উত্তম উপায়। ধরুন, চার ধরনের মিষ্টি পাওয়া গেল। সাদা, কালো, নাড়ৃ ও সন্দেশ। আপনার পছন্দ ও ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী আপনি নাড়– খেলেন। একে বলা হয় ম্যাক্সিমাল।



এরপর বক্তব্য রাখলেন অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তার বক্তব্যে উঠে এসেছে বাংলাদেশের উন্নয়নের পটভূমি। সামাজিক প্রচার ও আন্দোলন বাংলাদেশের উন্নয়নের পটভূমির অনেক কারণের অন্যতম কারণ। আরও কারণের মধ্যে রয়েছে খাবার স্যালাইন, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি প্রভৃতি।

বাংলাদেশের মানুষের অন্যতম দিক হচ্ছে :

এখানকার মানুষ স্বল্প খরচে যেকোনো নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করতে আগ্রহী। পৃথিবীর যেকোনো দেশের জনগণের তুলনায় স্বল্প খরচে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের হার বাংলাদেশে বেশি।

কিন্তু এখানকার অন্যতম সমস্যা হচ্ছে সেবাখাতে বিরাট অব্যবস্থাপনা। এক্ষেত্রে ভারতের কেরালা রাজ্যের সফলতার কথা তুলে ধরেছেন। ভারতের কেরালা রাজ্যের সামাজিক উন্নয়নে সামাজিক সংগঠনগুলোর অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে।

অমর্ত্য সেন তার বই ‘দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষ’ এ food entitlement সম্পর্কে লিখেছেন। খাদ্য আছে কিন্তু দাম বেশি বলে ক্রয় করা যাচ্ছে না।

এছাড়াও অধ্যাপক অমর্ত্য সেন তার বই An Uncertain Glory এ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন।

  • উন্নয়নের বৈপরীত্য
  • দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো
  • ভূমি সংস্কার
  • মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা
  • জবাবদিহিতার অভাব


প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। এসব বিষয় বাংলাদেশ প্রসঙ্গেও অনেকটা প্রাসঙ্গিক।

জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে দরকার নাগরিক সমাজ এবং স্বাধীন গণমাধ্যম।



এরপর বক্তব্যে অগ্রগতি বা উন্নয়নের দুইটি ধরন নিয়ে আলোচনা হয়। অন্যের সহায়তায় উন্নয়ন এবং নিজেদের প্রচেষ্টায় উন্নয়ন।

বাংলাদেশের উন্নয়নে এনজিওগুলো বড় ভূমিকা রেখেছে। বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বহু এনজিও ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। যেমন : ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক, গণস্বাস্থ্য প্রভৃতি।

উন্নয়নের ক্ষেত্রে যোগাযোগ আরেকটি বড় দিক। পূর্বে যেখানে যেতে একদিন দেড়দিন লাগত, এখন হয়তো চার থেকে ছয় ঘণ্টা সময় লাগছে। তবে নদীপথকে আরও উন্নত করা দরকার। এ ব্যাপারে অ্যাডাম স্মিথ তার বই An Inquiry into the Nature and Causes of the Wealth of Nations এ বলে গেছেন।

নারীদের ক্ষমতায়ন বাংলাদেশের উন্নয়নের আরও একটি বড় দিক। যদিও এখনো বহুদূর এগিয়ে যেতে হবে, তবুও বিদ্যমান অবস্থান বেশ প্রশংসনীয়।


অমর্ত্য সেনের রচনাবলি নিয়ে ১২টি ক্লাস হবে এবং ৪টি বক্তৃতা হবে। ভর্তি ফি : ১,০০০ টাকা মাত্র। সকলকে আমন্ত্রণ রইল।


তথ্যসূত্র :

১। https://wikidiff.com/optimal/maximal

২। http://www.heraldmalaysia.com/news/what-is-food-entitlement/24613/14

৩। দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষ। মূল : অমর্ত্য সেন। অনুবাদ : কবীর চৌধুরী। ঢাকা, মাতৃভূমি প্রকাশনী, ২০১৮।

৪। https://roar.media/bangla/main/economy/a-brief-introduction-to-the-thoery-of-development-as-freedom-by-amartya-sen/