রবিবার, ৩ মার্চ, ২০১৯

বইয়ের পর্যালোচনা - জান এ গালিব, ইনামউল্লা খাঁ নাসির, ভাষান্তর : জাভেদ হুসেন

মুহব্বত মে নেহিঁ হ্যায় ফরক জিনে অওর মরনে কা
উসিকো দেখকর জিতে হ্যায় জিস্ কাফির পে দম নিকলে

বাঁচা আর মরার ভেদ থাকে না প্রেমে
তাকে দেখেই বেঁচে আছি, যে সর্বনাশার জন্য প্রাণ যায়

গালিবের শের নিয়ে আলোচনা আর কী করব। শের পাঠ করে মনে হলো এ যেন আমারই মনের গহীন কোণে লুকিয়ে থাকা কোন কথা। তা যেন আজ গালিবের শের হয়ে আকার পেল। মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা এত জমাট বাঁধা কথা, তা কে কোনদিন দেখেছে। তা আজ প্রকাশিত হলো গালিবের শেরের উপমায়। আরেকটি শের দিয়ে মনের আরও কিছু কথাকে আলোর মুখ দেখার সুযোগ দেই।

হাম কাহাঁ কিসমত আযমানে জায়ে
তুহি জব খনজর আযমা না হুয়া

আমি কোথায় যাব এই ভাগ্য বাজিয়ে দেখতে
তুমিই যখন হাতের ছুরি গুটিয়ে নিলে

গালিবের এক বন্ধু তাকে বাড়ি থেকে দূরে কোথাও ঘুরে আসার পরামর্শ দিলে গালিব বন্ধু থেকে দূরে কোথায় যাবে সেই বেদনাকে ফুটিয়ে তুলেছেন ছুরির আঘাতের সাথে। এ যেন ছুরির আঘাতও নয়। যার হাতে জীবন দিব বলে ঘর থেকে বের হলাম, সেই প্রিয়বাসিনী, আকাক্সিক্ষণী যেন হাত গুটিয়ে নিল। এ বেদনা ছুরির আঘাত পেলে যে যাতনা হত তারচেয়েও পীড়াদায়ক।

আর ভাষান্তর অসাধারণ হয়েছে। আমি পূর্বেও জাভেদ হুসেনের ভাষান্তরিত আরেকটি বই পাঠ করেছি। তা নিয়ে পর্যালোচনাও লিখেছি। বইয়ের পর্যালোচনা - কালো সীমানা। মূল : সাদাত হাসান মান্টো। ভাষান্তর : জাভেদ হুসেন। মূলত জাভেদ হুসেনের ভাষান্তর ভালো লাগে। তাই এ বইটিও পাঠ করলাম। জাভেদ হুসেন গালিবের রত্নভাণ্ডার থেকে আমাদের মতো সাধারণ পাঠকের জন্য যে মণিমুক্তা তুলে এনেছেন তা অতীব প্রশংসনীয়।

শেষ করছি গালিবের প্রিয় বন্ধু মোমিন খাঁ মোমিন এর একটি শের দিয়ে। এ শের পাঠ করে গালিব বলেছেন, ‘আমার সব কবিতা নিয়ে এই শের তুমি আমাকে দিয়ে দাও।’ গালিবের কবিতা অমূল্য। তাই তিনি অমূল্য জিনিসের দাম দিতে চেয়েছেন অমূল্য জিনিস দিয়ে। আমার মতো সাধারণ মানুষের কাছে এই তুচ্ছ জীবনই সবচেয়ে দামী। তাই এ শের শুনে আমার মনে হলো আমি যেন মোমিন খাঁ মোমিনকে বললাম, ‘আমার জীবন নিয়ে এই শের তুমি আমাকে দিয়ে দাও।’

তুম মেরে পাস হোতে হো গোয়া
জাব কোয়ি দুসরা নেহি হোত

মনে হয় তুমিই যেন আমার পাশে থাকো
যখন আর অন্য কেউ থাকে না।