শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১

আপনি কি আরোপিত কাজ করেন, নাকি স্বপ্রণোদিত কাজ করেন?



আরোপিত কাজ বনাম স্বপ্রণোদিত কাজ


কিছু মানুষ নিজেই নিজের কাজ নির্ধারণ করে। এদের আমরা বলতে পারি উদ্যোক্তা। যে ব্যক্তি নিজেই নিজের কর্ম নির্ধারণ করে, সে হচ্ছে উদ্যোক্তা। আর যে ব্যক্তি অন্যের বা প্রতিষ্ঠানের আরোপিত কাজ করে, তাকে আমরা বলতে পারি চাকুরিজীবী বা কর্মজীবী। এখানে কোন ধরনের কাজের ভালো-মন্দ নিয়ে আলাপ হচ্ছে না। আমরা কথা বলছি কাজের ধরন নিয়ে। অনেকেই অনেক ধরনের কাজ করে। সেসব কাজকে আমরা দুইটি ভাগে ভাগ করছি। যথা:


ক) আরোপিত কাজ

খ) স্বপ্রণোদিত কাজ


সহজ ভাষায় বলতে গেল, চাকরি পাওয়ার আগে মানুষ যে ধরনের কাজ করে তা স্বপ্রণোদিত কাজ। যেমন, বাইরে খেলতে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া, মোবাইল বা কম্পিউটারে গেম খেলা ইত্যাদি। কিন্তু যখনই মানুষ চাকরি পায় বা কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবী হিসাবে যোগ দেয়, তখন নিজের নিয়ম, অনুসূচি অনুযায়ী কাজ করে না। তখন কাজ করে প্রতিষ্ঠানের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী। এখানে টনি গ্যাসকিন্সের একটি উক্তি দেয়া যায়:

আপনি যদি আপনার স্বপ্ন তৈরির জন্য কাজ না করেন, তবে অন্য কেউ আপনাকে তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য ভাড়ায় খাটাবে।

এখন কেউ যদি স্বপ্ন না দেখে, বা তার স্বপ্ন পূরণের চেষ্টার জন্য যে মূলধন বা বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা দরকার তার জন্য অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে, তাহলে কি সে ভুল করছে? ‘না’, সে ভুল করছে না। কিন্তু অন্যের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করতে করতে নিজের স্বপ্ন ভুলে যাওয়াই মারাত্মক ভুল। তাই স্বপ্ন দেখুন, সাহস নিন এবং কাজে নেমে পড়ুন। তারপর স্বপ্ন পূরণের চেষ্টায় লেগে থাকুন। স্বপ্ন পূরণ হবেই।



বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই, ২০২১

কারণ এবং ফলাফল সূত্র

কারণ এবং ফলাফল সূত্র

কারণ ও ফলাফল সূত্র-এটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মূলভিত্তি। এতে বলা হয়েছে, যা কিছু ঘটে তার জন্য সবসময়ই একটি কারণ থাকে। প্রতিটি ফলাফলের জন্য একটি কারণ থাকে, আমরা জানি বা না জানি। এর অর্থ হল আপনি যদি কী অর্জন করতে চান সে সম্পর্কে স্পষ্ট হতে পারেন, যেমন অর্থনৈতিক স্বাধীনতার মতো লক্ষ্য সম্পর্কে স্পষ্ট হতে পারেন, তবে আপনি কেবল অন্য সফল ব্যক্তিরা কী করে তা খুঁজে বের করবেন এবং আপনিও একই অভ্যাস পালন করবেন। তাহলেই দেখবেন আপনিও সফল ব্যক্তিদের মতো সাফল্য অর্জন করেছেন। সাফল্য কোনও কাকতালীয় নয়। ব্যর্থতা কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। উভয়ই কারণ ও ফলাফলের সূত্র মেনে চলে।


প্রথমবারের চেষ্টায় কোনকিছু ঠিকভাবে কাজ করে না।


প্রথম চেষ্টাতেই আপনি সফল হবেন, তা নিশ্চিত নয়। প্রথমবার যেকোনো কাজে ব্যর্থ হতে পারেন। তাই বলে, থেমে থাকা যাবে না। লেগে থাকুন।


নিজের চেষ্টায় কোটিপতি হতে গেলে কী লাগে? আমি এ সম্পর্কে অনেক বইপত্র পড়লাম, প্রতিবেদন, সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন পড়ালাম। নিজের চেষ্টায় কোটিপতি হয়েছে এমন ব্যক্তিদের জীবনী পড়লাম। তারপর, আমি খুঁজে পেলাম, কোটিপতি হওয়া তাদের গোপন চাবিকাঠি নয়। তাদের মূলভিত্তি হচ্ছে নিজের চেষ্টায় কোটিপতি হতে যে ধরনের ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হয় সেই ধরনের ব্যক্তিত্ব অর্জন করা।


এখন আপনি যদি নিজের চেষ্টায় কোটিপতি না হয়ে থাকেন, তবে এটা নিশ্চিত থাকতে পারেন, আপনাকে নিজের চেষ্টায় কোটিপতি হতে হলে আগে সেই ব্যক্তিত্ব অর্জন করতে হবে যেই ব্যক্তিত্ব আপনাকে কোটিপতি বানাবে। এখানে ব্যক্তিত্ব গঠন করতে হবে আগে, তারপর আপনি কোটি টাকার মালিক হতে পারবেন।


বলা হয়, আপনি এমন কিছু যা আগে অর্জন করেননি, তা অর্জন করতে গেলে, আপনাকে এমন ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হবে যা আপনি এখনও নন। এটা এমন এক ধরনের গুণ যা আপনাকে বাহ্যিকভাবে ধনী হওয়ার আগে নিজের ভেতরে অর্জন করতে হবে। আপনাকে ভেতর থেকে চরিত্রবান হতে হবে, দৃঢ়সঙ্কল্পের অধিকারী, শৃঙ্খলাবোধ, সিদ্ধান্ত-গ্রহণ এবং আপনার শক্তিশালী দিকগুলোকে আরও মজবুত করতে হবে। আপনাকে সর্বোপরি, এমন এক উন্নত মানুষে পরিণত হতে হবে যা আপনি পূর্বে ছিলেন না। এর মানে নিজের চেষ্টায় কোটিপতি হতে গেলে আপনাকে সর্বোপরি এক উন্নত মানুষ হতে হবে।


নিজের চেষ্টায় কোটিপতি হওয়ার মানে আরও বেশি খাবার খাওয়া নয়, আরও বেশি কাপড়-চোপড় পরিধান করা নয়। এর মানে হচ্ছে, আপনি ভেতরগতভাবে কেমন চরিত্রের মানুষ, আপনি কেমন মানুষদের সাথে সময় কাটান, আপনি কেমন জীবনযাপন করতে চান তার প্রতিফল।


আমি নিজের চেষ্টায় কোটিপতি হয়েছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে কিছু গুণ খুঁজে পেয়েছি। আপনি যদি এগুলো চর্চা করেন, তবে আপনিও নিজের চেষ্টায় কোটিপতি হতে পারবেন। এগুলো হচ্ছে:


১। সব ধরনের দক্ষতাই শেখা যায়।


২। আপনি হয়তো একটি মাত্র দক্ষতা শিখলেই আপনার আয় দ্বিগুণ করতে পারেন।


৩। বড় স্বপ্ন দেখুন। মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। তাই বড় বড় স্বপ্ন দেখুন। স্বপ্ন দেখুন আপনি কয়েক বছর পরে কেমন থাকতে চান, কেমন স্বাস্থ্য চান, কেমন পরিবার চান। একটি কাগজে কলম দিয়ে লিখুন। একে স্বপ্নের তালিকা বলতে পারেন। আপনি কী কী চান, কী স্বপ্ন দেখেন, একটি খাতায় লিখে ফেলুন।


৪। আপনি যা কিছু করতে ভালোবাসেন, তাই করুন। যারা সফল তারা তাদের ভালোবাসার কাজ করে।


৫। দক্ষতা অর্জনের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হোন। কোন একটি কাজে সর্বোচ্চ দক্ষতা অর্জনের জন্য নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করুন। উক্ত দক্ষতা সম্পর্কে বই পড়ুন, সংবাদপত্র, প্রতিবেদন, ম্যাগাজিন পড়ুন, প্রশিক্ষণ নিন এবং উক্ত দক্ষতাসম্পন্ন লোকজনের সাথে দেখা করুন ও কথা বলুন, তাদেরকে প্রশ্ন করুন। এভাবে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করুন।


৬। আপনি যা করেন, সেই ক্ষেত্রে ১ নম্বর হওয়ার চেষ্টা করুন। এর জন্য যা যা দক্ষতা, যোগ্যতা, শিক্ষা দরকার তা গ্রহণ করুন। এখন সবকিছুই শেখা যায়। শিখুন। প্রশিক্ষণ নিন। আপনি যা কাজ করেন, সেই কর্মক্ষেত্রে ১ নম্বর হয়ে উঠুন। ১ নম্বর হওয়ার লক্ষ্য নিন। আজই সিদ্ধান্ত নিন। কঠোর পরিশ্রম করুন। এখন ১ নম্বর হতে গেলে এক সপ্তাহ বা এক মাসে হয়ে যাবেন তা নয়। তবে চেষ্টা করুন। যতক্ষণ পর্যন্ত না ১ নম্বর হচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত চেষ্টা করে যান।


৭। আপনি যা কিছু অর্জন করতে চান, তা অর্জনের জন্য দাম দিতে হবে। এই দাম হতে পারে আপনার সময়, শ্রম, বুদ্ধি, আবেগ বা অন্য যেকোনো কিছু।


৮। আপনার মেধা ও দক্ষতাকে শাণিত করুন। আপনার শক্তিশালী দিকগুলোকে নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে আরও তীক্ষ্ণ ও ধারাল করুন। এগুলোর নিয়মিত চর্চা করুন। পিটার ড্রুকার প্রায়ই বলতেন, ‘আপনি কীসে সবচেয়ে ভালো?’


নিজের চেষ্টায় কোটিপতি হওয়ার পরবর্তী ধাপ হচ্ছে


৯। নিজেকে নিজেই কাজের দায়িত্ব দিন। নিজের ওপর দায়িত্ব আরোপ করুন। অন্য কেউ আপনাকে চাকরি দেওয়ার আগে, নিজেই নিজেকে চাকরি দিন, দায়িত্ব দিন, কাজ দিন। নিজেই নিজের দায়িত্বের জন্য জবাবদিহিতা নিন। গবেষণায় দেখা গেছে, সমাজের উচ্চবিত্ত ৩% মানুষ নিজেকে নিজেই কাজের দায়িত্ব দেয়। তারা নিজেকে নিজে চাকরি দেয়। তারা নিজেকে নিজের দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ দেয়।


১০। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটি পরিষ্কার ও স্পষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করুন। এতে গন্তব্যে যাওয়ার মতো স্পষ্ট মানচিত্রে পরিণত করুন। একটি পরিষ্কার দিকনির্দেশনা থাকলে কাজ করতে এবং এগিয়ে যেতে সহজ হয়। আপনাকে লক্ষ্যকেন্দ্রিক হতে হবে। যত সফল ব্যক্তি আছে, তারা সকলেই লক্ষ্যকেন্দ্রিক। কোটিপতি এইচ.এল. হান্টকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়: আপনার সাফল্যের গোপন রহস্য কী? তিনি বলেন,

প্রথম, আপনাকে আপনার লক্ষ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ও পরিষ্কার হতে হবে, এটা অর্জনের জন্য পরিকল্পনা করতে হবে।


দ্বিতীয়, লক্ষ্য পূরণের জন্য কী দাম দিতে হয়, সেই দাম পরিশোধ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে।


আপনি আজকে যেখানে এসেছেন, তা হচ্ছে আপনি যেই দাম পরিশোধ করেছেন, সেই দামের বিনিময়েই আজকের অবস্থানে আছেন। এখন আপনার নিজেকে জিজ্ঞেস করতে হবে, আপনি আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য কী ধরনের দাম পরিশোধ করতে হবে। তারপর সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি পরিকল্পনা করুন। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিদিন কাজ করুন।


প্রতিদিন আপনার লক্ষ্য সম্পর্কিত একটি কাজ করুন। আপনার লক্ষ্য পূরণের জন্য, আপনার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে প্রতিদিন কাজ করুন। একটি কাজ হলেও করুন।


১১। পরবর্তী কাজ হচ্ছে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনাকে প্রত্যাখ্যান করুন। ব্যর্থ হওয়ার চিন্তাও বাদ দিন। কেবল সাফল্যের চিন্তা করুন। সাফল্য কীভাবে নিশ্চিত করা যায় সেই কর্মপন্থা তৈরি করুন। সাফল্য নিশ্চিত করার একাধিক পন্থা বা পরিকল্পনা করুন। এটা কাজ না করলে এটা এটা। এভাবে একটি পরিকল্পনার মধ্যে একাধিক উপ-পরিকল্পনা তৈরি করুন।


তথ্যসূত্র: ১। কারণ এবং ফলাফল সূত্র - The Law of Cause and Effect

২। নিজের চেষ্টায় কোটিপতি হওয়ার গোপন রহস্য - 

Secrets Of Self Made Millionaires by Brian Tracy

ব‌ই পর্যালোচনা: নেভার স্পিলিট দ্য ডিফারেন্স: ক্রিস ভস, টাহল রাজ


#ব‌ই_পর্যালোচনা:

নেভার স্পিলিট দ্য ডিফারেন্স: ক্রিস ভস, টাহল রাজ

Never split the difference by Chris Voss

মতের পার্থক্য থাকলেও কখনো আলাদা হবেন না

বইয়ের সারমর্ম লিখেছেন: ফজলে রাব্বি


প্রকাশনা: Harper Business

প্রথম প্রকাশ, ২০১৬

মূল্য: ২৬৫ টাকা

পৃষ্ঠা: ২৮৮

তথ্যসূত্র: স্যামুয়েল থমাস ডেভিস-এর আর্টিকেল অনুসারে 


ভূমিকা

ক্রিস ভস একজন আন্তর্জাতিক এফবিআই হস্টেজ নেগোসিয়েটর। তিনি তার বই নেভার স্পিলিট দ্য ডিফারেন্স  তথা মতো পার্থক্য থাকলেও কখনো আলাদা হবেন না-এ, নিজের অভিজ্ঞতার কথা ও কলাকৌশল তুলে ধরেন। কী কী কৌশলের মাধ্যমে একজন নেগোসিয়েটর জীবনমরণ সমস্যার ক্ষেত্রে অবলম্বন করলে সমাধান পেতে পারে তা উল্লেখ করেন।

পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ আইডিয়া:

১। নেগোসিয়েশন তথা আলাপ-আলোচনা আরম্ভ হবে কথাবার্তা শোনার মাধ্যমে, অন্যদের কথা শোনার মাধ্যমে, তাদের আবেগের মূল্য দিতে হবে, বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে হবে এবং কথাবার্তা শোনা ও বলার মধ্যমে অন্যদের ভরসা দিতে হবে।

২। মিরর তথা আয়না পদ্ধতি হচ্ছে অন্যের কথার পুনরাবৃত্তি করা। এই কথা পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে অন্যদেরকে সহানুভূতি জানান এবং আপনার সাথে একটি আত্মিক বন্ধন তৈরি করুন। মানুষকে এভাবে কথা বলতে উৎসাহ দিন। নিজের কথাগুলো গুছিয়ে নিতে সময় নিন। আপনার প্রতিপক্ষকে তার কলাকৌশল প্রকাশ করতে উৎসাহিত করুন। এসবই করবেন অন্যের কথার পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে।

৩। সহানুভূতি প্রকাশ করুন কৌশলগতভাবে। এজন্য আবেগ সংক্রান্ত বাধার সম্মুখীন হবেন এবং একটি সম্ভাব্য ঐকমত্যে পৌঁছাতে সহজ হবে।

৪। অন্যের আবেগের একটি নাম দিন। একে অন্যভাবে বলা হয়, লেবেল দেয়া। কোন পণ্যের মধ্যে যেমন লেবেল থাকে, যেখানে পণ্যের বিবরণ লেখা থাকে, তেমন অন্যের আবেগের নাম দিন। এতে করে আপনি অন্যদের আরও নিকটে পৌঁছে যাবেন। অন্য কিছু জিজ্ঞেস করা ছাড়াই আপনি মানুষের আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠবেন।

৫। মানুষকে ‘না’ বলতে দিন। এতে করে আপনার জন্য দারুণ সব সুযোগ তৈরি হবে। এতে করে আপনি কী চান এবং কী চান না, তা পরিষ্কার হবে এবং অপর পক্ষও এটা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবে।


নেভার স্পিলিট দ্য ডিফারেন্স  তথা মতো পার্থক্য থাকলেও কখনো আলাদা হবেন না-এর সারমর্ম


প্রথম অধ্যায়: নতুন নিয়মাবলি

মানুষ চায় তাকে যেন অন্যরা বোঝে এবং গ্রহণ করে। এই আকাঙ্ক্ষা বা চাওয়া থেকেই নেগোসিয়েশন তথা আলাপ-আলোচনার আরম্ভ হয়। অন্যের কথা শোনা সবচেয়ে সহজ এক কাজ এবং এটা নেগোসিয়েশনের জন্য অত্যন্ত কার্যকর এক পন্থা। তাই আমরা অন্যের কথা শোনার মাধ্যমেই আরম্ভ করতে পারি। আপনি অন্যের কথা গভীরভাবে শোনার মানে আপনি অন্যের অনুভূতিকে মূল্যায়ন  এবং অন্যরা কী অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি অনুভব করছে তা নিজের ভেতর অনুভব করেন।


দ্বিতীয় অধ্যায়: মিরর তথা আয়না পদ্ধতি ব্যবহার করুন। অন্যের কথার পুনরাবৃত্তি করুন।

ভালো নেগোসিয়েটররা জানে অন্যকে কীভাবে প্রশ্ন করতে হয়। তারা অন্যের বিশ্বাসযোগ্য অনুমানের ভিত্তিতে প্রশ্ন করে। অথবা এমন প্রশ্ন করে যে অন্যরা অহংকার বা দম্ভের চোটে একমত হয়। পাশাপাশি, তারা সব ধরনের সম্ভাবনার প্রতি মুক্তমনা থাকে। আবার বুদ্ধিমত্তার সাথেও যেকোনো পরিস্থিতির বিভিন্ন সম্ভাবনার দিকে নজর রাখে।

যেসব লোকজন নেগোসিয়েশন তথা আলাপ-আলোচনাকে তর্কবিতর্কের একটি লড়াই ক্ষেত্র মনে করে তাদের মাথা দ্রুতই গরম হয়ে যায়। নেগোসিয়েশন মানে লড়াই নয়, এটা কোনকিছু আবিষ্কার করার পন্থা। আপনার লক্ষ্য হচ্ছে যত বেশি সম্ভব তথ্য আদায় করা।

আপনার মস্তিষ্কের মধ্যে পূর্ব েথেকে যে কণ্ঠ ধ্বনিত হচ্ছে, আপনার আত্মাকে, আপনার মনোযোগকে বিক্ষিপ্ত করছে তার দিকে সতর্ক দৃষ্টি দিন। কারণ এতে করে আপনি অন্যরা কী বলছে বা কোন বিষয়ে জোর দিচ্ছে সেদিকে নজর দিতে ব্যর্থ হবেন।

আপনার লক্ষ্য হচ্ছে আপনার প্রতিপক্ষ প্রকৃত অর্থে কী চায় এবং তাদেরকে একটি নিরাপদ স্থানে আনা যেখানে তারা তাদের চাওয়া, তাদের আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে বলতে পারে।

নেগোসিয়েশন মানে আপনি অন্যদের কথা শুনবেন, অন্যদের আবেগের মূল্যায়ন করবেন এবং পর্যাপ্ত ভরসা জিতবেন যাতে করে তারা আপনার ওপর আস্থা রাখতে পারে এবং একটি প্রকৃত আলাপ-আলোচনা করতে পারে।

সব নেগোসিয়েটররাই দ্রুত গতিতে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার দিকে ধাবিত হয়। এটা একটা সর্বজনীন ভুল। আপনি যদি খুব বেশি তাড়াহুড়া করেন, তবে মানুষ মনে করবে আপনি তাদের কথা শুনছেন না। এতে করে আপনি একটি সম্পর্ক ও আস্থা তৈরিতে ব্যর্থ হবেন।


নেগোসিয়েটরদের জন্য তিন ধরনের কণ্ঠস্বরের উল্লেখ করা হল:


১। গভীর রাতের রেডিও ডিজে কণ্ঠস্বর: নির্দিষ্টভাবে আপনার পয়েন্ট তুলে ধরুন। আপনার কণ্ঠস্বরকে নিচের দিকে বাঁকিয়ে আনুন। শান্ত থাকুন। ধীরে কথা বলুন। এটা ঠিকভাবে করা গেলে, আপনি কর্তৃত্ব এবং বিশ্বাসযোগ্যতার একটি আবহ তৈরি করতে সক্ষম হবেন। এভাবে কথা বললে অপর পক্ষের প্রতিরক্ষার বিষয়গুলোও জাগ্রত হবে না।


২। ইতিবাচক / খেলার মাঠের কণ্ঠস্বর: আপনার সবসময় এ ধরনের কণ্ঠস্বর বজায় রাখা উচিত। এটা হচ্ছে সহজভাবে কথা বলার ভঙ্গি। একজন যত্নশীল ও রুচিবান ব্যক্তির এমন কণ্ঠস্বর থাকবে। আপনার মনোভাব হবে হালকা মেজাজের এবং অন্যকে অনুপ্রেরণাদায়ী। এখানকার মূল চাবিকাঠি হচ্ছে প্রশান্তি বোধ করা এবং মৃদু হাস্যে কথা বলা।

৩। সরাসরি / দৃঢ় কণ্ঠস্বর: খুব কম ব্যবহার করবেন। এই স্বর ব্যবহার করলে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে এবং শ্রোতার ওপর চাপ সৃষ্টি হবে।


আপনার মুখে একটা হাসি রাখবেন। যখন লোকজন ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে, তারা খুব দ্রুত অন্যের সাথে মিশতে পারে এবং সমস্যা সমাধানে তত বেশি অবদান রাখতে পারে। ইতিবাচকতা আপনার ও আপনার প্রতিপক্ষের মধ্যে এক ধরনের মানসিক স্ফূতি তৈরি করবে।

আপনি সরাসরিও কথা বলতে পারেন। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ধরে কথা বলেও এক ধরনের নিরাপত্তার বলয় তৈরি করতে পারেন। যেমন এভাবে কথা বলতে পারেন: ‘ঠিক আছে। এর ব্যাপারে আমি ঠিক আছে। আপনিও একমত। চলেন আমরা সামনের বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলে একটা সমাধান করি।’

অনুমানগুলোকে এক ধরনের সম্ভাব্য কাজ হিসাবে চিন্তা করুন এবং এই অনুমানগুলো দিয়ে নেগোসিয়েশনকে কঠোরভাবে পরীক্ষা করুন।

মিরর তথা আয়না পদ্ধতি ব্যবহার করুন। অন্যের কথার পুনরাবৃত্তি করুন। নেগোসিয়েশনে আয়না পদ্ধতি বেশ চমৎকার কাজে দেয়। অন্যের কথার শেষ তিনটি শব্দ পুনরাবৃত্তি করুন অথবা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন শব্দ পুনরাবৃত্তি করুন। আমরা সাধারণত কী কী জিনিস ভিন্ন তার প্রতি ভয়ে থাকি এবং কী কী জিনিস একই রকম তার দিকে মনোযোগ দিই। আয়না পদ্ধতি একই রকম জিনিস খুঁজে পেতে উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে। এতে করে একে অপরের মধ্যে বন্ধন তৈরি হয়। আয়না পদ্ধতির মাধ্যমে একে অন্যের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা যায়, মানুষকে কথা চালিয়ে যেতে উৎসাহ দেওয়া যায়, অন্যদের সাথে পুনরায় বন্ধন তৈরিতে সাহায্য করে এবং আপনার প্রতিপক্ষকে তাদের কলাকৌশল প্রকাশ করতে উৎসাহ দেয়।

প্রতিপক্ষের কথাকে পুনরাবৃত্তি করলে, অপরপক্ষ অবশ্যই মাত্র বলা কথাকে আরেকটু বিস্তারিতভাবে বলবে এবং এই প্রক্রিয়া বজায় রাখতে চেষ্টা করবে।

রিচার্ড ওয়াইজম্যানের এক গবেষণা থেকে দেখা যায়, যেসব ওয়েটাররা কাস্টমারদের ইতিবাচক প্রশংসা করে তাদের চেয়ে যারা কাস্টমারদের কথা পুনরাবৃত্তি করে তাদের টিপ বা অতিরিক্ত টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা ৭০% বেশি।

একটি সফল নেগোসিয়েশনের জন্য ঠিক মানসিকতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মুখোমুখী কোনকিছু মোকাবিলা করার চেয়ে নেগোসিয়েশন উত্তম। এর জন্য নিচের পাঁচটি সহজ ধাপ মেনে চলুন:

১। গভীর রাতের রেডিও ডিজে কণ্ঠস্বর প্রয়োগ করুন;

২। কথা শুরু করুন ‘আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত . . .’ বলে;

৩। আয়না পদ্ধতি ব্যবহার করুন;

৪। নীরবতা পালন; কমপক্ষে চার সেকেন্ডের জন্য। এতে করে প্রতিপক্ষের ওপর আয়না পদ্ধতি দারুণভাবে কাজ করবে।

৫। পুনরাবৃত্তি করুন;


অধ্যায় ৩: অন্যদের ব্যথা অনুভব করার দরকার নেই। তবে অবশ্যই অনুভূতির নাম দিন।


[চলবে . . .]

শুক্রবার, ২৩ জুলাই, ২০২১

কীভাবে একটি বই লিখবেন: বেস্টসেলার হতে হলে আপনার উচিত এই ১১টি ধাপ সম্পর্কে জানা


মূল লেখক: ব্রায়ান ট্রেসি

অনুবাদ: ফজলে রাব্বি


আমি মনে করি আপনি আমার পর্যবেক্ষণের সাথে একমত হবেন:


আমাদের সবার ভিতরে একটি দুর্দান্ত বই লেখার ইচ্ছা আছে এবং আইডিয়াও রয়েছে।


আসলে:


আমাদের বেশিরভাগই স্বপ্ন দেখে যে কীভাবে একটি বই লিখতে হয় এবং এটা কীভাবে প্রকাশ করবে।


আমরা কল্পনা করি কীভাবে বেস্টসেলার লেখা আমাদের জীবন বদলে দিবে। কীভাবে এটা আমাদের পেশাগত জীবনকে এগিয়ে দিবে। এটা কীভাবে আমাদের একটা কর্তৃত্ব তৈরি করবে।


তাহলে কেন আমরা আমাদের আশ্চর্য বইয়ের ধারণাগুলিকে মূর্ত কপিগুলিতে রূপান্তর করতে সংগ্রাম করি?


আসল কথা হচ্ছে:


আপনি যদি কোনও বই প্রকাশকারী লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখে থাকেন তবে আপনি একা নন - লেখক জোসেফ এপস্টেইনের মতে, "৮১ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন যে তাদের একটি বই লেখার আইডিয়া আছে - এবং এটা লিখতে হবে।"



অন্যদের সেই স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে সহায়তা করার জন্য আমি এই বই রচনা এবং প্রকাশনা গাইডটা তৈরি করেছি। এটা আপনার নিজের বইয়ের পরিকল্পনা, উত্পাদন এবং প্রবর্তনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো অন্তর্ভুক্ত করবে।


আমি এমন ধারণাগুলি অন্তর্ভুক্ত করেছি যা প্রাথমিকভাবে এবং পাকা লেখক, উভয়কেই সহায়তা করতে পারে। আপনার যদি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় এমন কোনও পদক্ষেপ আমি মিস করেছি তবে দয়া করে মন্তব্য বিভাগে আমাকে জানান যাতে আমরা গাইডটা আপডেট করতে পারি।


কীভাবে একটি বই লিখবেন এবং এটা প্রকাশ করবেন


আপনি কেন লিখতে চান তার কারণগুলো নির্ধারণ করুন

একজন মহান লেখক হওয়ার জন্য নিজের কাছে ওয়াদা করুন 

যে কোনও বই লেখার জন্য ১০টি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ শিখুন

আপনার স্বপ্নের অনুযায়ী পদক্ষেপ নিন এবং এটা সম্পর্কে লেখা শুরু করুন

আপনার চিন্তাগুলোর একটা নকশা বা রূপরেখা অংকন করুন

সমস্ত উপাদান অন্তর্ভুক্ত করতে একটি বই লেখার টেমপ্লেট ব্যবহার করুন

বই প্রকাশকারী লেখকদের লেখার টিপস অধ্যয়ন করুন

বর্তমানের বেস্টসেলার লেখকদের কাছ থেকে শিখুন কী কী জিনিস বেস্টসেলার হতে কাজে লাগে

আপনার বই প্রকাশ করার জন্য প্রস্তুত করুন (বা স্ব-প্রকাশনা তথা নিজেই নিজের বই প্রকাশ করুন)

আপনার বইয়ের প্রচ্ছেদের জন্য একটি দুর্দান্ত ডিজাইনার সন্ধান করুন

গুছিয়ে কাজ করার জন্য বই লেখার অ্যাপস এবং সফ্টওয়্যার ব্যবহার করুন


একটি বই কীভাবে লিখবেন তা শেখার ৩ কারণ

আপনার যদি কোনও বই লেখার জন্য দুর্দান্ত আইডিয়া থাকে তবে কীভাবে একটি ভালো বইয়ের পরিকল্পনা, লেখা এবং প্রকাশের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিতে হয় তা শেখার থেকে অনেক কিছু পাওয়া যায়। যেমনটা আমি নীচের ভিডিওটাতে ব্যাখ্যা করছি, একটি বই রচনা এমন দক্ষতা যা আপনি একাগ্র মনোযোগ দিয়ে চর্চা করার মাধ্যমে এবং পুনরাবৃত্তি দিয়ে আয়ত্ত করতে পারেন।

বই লিখুন। বই লিখতে গিয়ে আপনার জীবন বদলে যাবে। তিনটি উপায়ে আপনার জীবন বদলে যেতে পারে:

১। লেখক হয়ে উঠলে আপনি সকলের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠবেন। সকলের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে লেখক হওয়া সবচেয়ে দ্রুততম পথ।

২। বই লেখা হচ্ছে আপনি যা কিছুকে মূল্যবান মনে করেন তা অন্যদের জানানোর এক দুর্দান্ত সুযোগ।

৩। বই লেখার মাধ্যমে আপনি অন্যদের জীবনযাপনের গুণমানকে উন্নত করতে পারেন।


তাহলে লোকজন কেন বই লেখে না?


আমার মনে হয় অনেকেই বই লিখতে আগ্রহী। বই প্রকাশ করতেও আগ্রহী। কিন্তু তারা মনে করে তাদের লেখা বই হয়তো খুব সাধারণ কিছু। আরও কিছু কারণ থাকতে পারে:

তারা মনে করে বই লেখার মতো তারা ঠিকমতো দিকনির্দেশনা পায় না ... অথবা বই লেখার জন্য সঠিক দিকনির্দেশনার অপেক্ষায় থাকে।

এজন্যই তারা খ্যাতিমান লেখকদের থেকে ভিন্ন, যারা অনেক বহুল পঠিত বা বহুল বিক্রিত বই লিখে আত্মতৃপ্তি ও সুখ অনুভব করে।

আপনি কি চিন্তা করতে পারেন, আমরা কত শত অসাধারণ সব বই পড়ে আনন্দিত হতে পারতাম যদি ৮১% মানুষ একটি কার্যকর পদ্ধতির মাধ্যমে বই লিখতে পারত।

বই লেখার মতো ব্যাপারটা কি এতই সোজা?

অনেকের কাছে বই লেখা এবং তা প্রকাশ করা-মনে হয় একটি অসাধ্য কাজ। অনেকটা হিমালয়ের কোন এক পর্বতের চূড়ায় ওঠার মতো অসাধ্য।

যাই হোক, ব্যাপারটা অসাধ্য হলেও অনেকেই তা সাধন করেছেন। কোন একটি যাত্রা কঠিন হলে, তার মানে এই নয় যে গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে না। যেখানে আমাদের সামনে শত শত লেখক আছেন, যারা অসাধারণ সব বই লিখেছেন। সেগুলো বহুল পঠিত এবং বহুল বিক্রিত বই। চীনা প্রবাদ সম্পর্কে তো নিশ্চয়ই জানেন, হাজার মাইলের যাত্রা আরম্ভ করতে হয় একটি পদক্ষেপ দিয়ে।

তাই আপনি যখন এমন এক পদ্ধতি পাবেন, যেখানে এক একটি পদক্ষেপের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার উপায় দেখানো হয়েছে, তখন আপনি অসাধ্যও সাধন করতে সক্ষম হবেন। আমরা আপনাকে সেই পদ্ধতি বা ব্যবস্থা সম্পর্কেই জানাব। সহজ এক পদ্ধতি। যেখানে আপনি এক একটি পদক্ষেপের মাধ্যমে এগিয়ে যাবেন। অনেকটা বাসায় ওঠার সিঁড়ির মতো। এক এক ধাপ করে উঠলেন। টেরই পেলেন না, কখন বাসার দরজার সামনে চলে এসেছেন।


কীভাবে একজন লেখক হবেন?

আপনি কি বই লিখার কথা এই প্রথমবারের মতো চিন্তা করছেন? বাহ্! বেশ ভালো!


আপনি যা যা জানা দরকার:

একজন মহান লেখক হওয়ার জন্য আপনাকে সাহিত্যে মাস্টার্স পাশ হতে হবে এমন নয়। আর এমনও নয় যে আপনাকে শব্দের খেলা খেলতে হবে বা এ খেলায় দক্ষ ও পারদর্শী হতে হবে। সত্য হচ্ছে লেখক জীবনের যেকোনো ক্ষেত্র থেকে আসতে পারে। আর পৃথিবীর বেশিরভাগ সফল লেখকরা তো অর্ধজীবন পার করার পরও বুঝতে পারেনি তারা কখনো বই লিখবে।


শেষ কথা কী?

একজন সফল লেখক হওয়ার জন্য আপনাকে কেবল একটি গল্প নির্বাচন করতে হবে এবং এটাকে কীভাবে বলতে হয় তা শিখতে হবে। এতটুকুই যথেষ্ট। আপনার কাছে যদি পর্যাপ্ত তথ্য থাকে যা লোকজন শুনতে চায় বা একটি গল্প থাকে যাদের তাদের কল্পনাকে নাড়া দেয় এবং আপনি যদি নিজের লেখার দক্ষতাকে বৃদ্ধি করতে পারেন তবে সেই তথ্য বা গল্পই আপনাকে একজন মহান লেখক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করবে।


একটি বই লেখার ধাপসমূহ

অসাধারণ এক বই লেখার জন্য পরিকল্পনা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ এক উপাদান। অনেকেই অবশ্যই এখানেই আটকে যায়।

আপনি যদি নিজের মনমস্তিষ্কে আপনার বই লেখার ব্যাপারটা আগে থেকে কল্পনা করে নেন, তাহলে বই লেখা অনেকটা সহজ হয়ে আসবে। এজন্য আপনাকে কিছু সহজ ধাপ মেনে চলতে হবে।


একটি বই লেখার ধাপসমূহ কী?

লেখক হতে গেলে অনেকেই এ প্রশ্ন করে। অবশ্য অনেক লেখকই অনেক ধরনের ধাপ অনুসরণ করে। আমি (ব্রায়ান ট্রেসি) এগুলোর মধ্যে কয়েকটি সাধারণ ধাপ উল্লেখ করলাম।

আমি নিজে ৭০টির বেশি বই লিখেছি এবং সেগুলো প্রকাশও হয়েছে। আমার কাছে যে ধাপগুলো সহজ ও কার্যকর বলে মনে হয়েছে সেগুলোর একটি ছোট্ট তালিকা তৈরি করেছি।


একটি বই লেখার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ:


১। প্রতি সপ্তাহে লেখালেখির জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করুন। এ ব্যাপারে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন যে ঠিক সময়ে লিখতে বসবেন।

২। একটি বার্তা বা মেসেজ নির্বাচন করুন যা আপনি মানুষের সাথে শেয়ার করতে চান।

৩। এমন একটি বিষয় নির্বাচন করুন যাতে আপনার অনেক অভিজ্ঞতা আছে।

৪। আপনার সেই নির্বাচিত বিষয়ের ব্যাপারে আরও পড়াশুনা করুন। একই বিষয় সংক্রান্ত বই পাঠ করুন।

৫। আপনার গবেষণার সব তথ্য পয়েন্ট আকারে উদাহরণসহ তুলে ধরুন।

৬। আপনার তথ্য-উপাত্তকে একটি যৌক্তিক উপায়ে বিন্যস্ত করুন এবং অধ্যায়ে অধ্যায়ে ভাগ করুন। ৭, ১০, ১২ বা ২১ অধ্যায়ে ভাগ করে ফেলুন।

৭। সবসময় আপনার মনোনীত সময়ে লিখতে বসবেন এবং দ্রুত লেখা আরম্ভ করে দিন।

৮। সব লেখা শেষ হলে তারপর তথ্যাবলিকে সংশোধন বা পুনর্নিরীক্ষণ করুন।

৯। প্রকাশকদের কাছে দেখানোর মতো একটি বইয়ের প্রস্তাব বা সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করুন।

১০। প্রচার-প্রচারণা দ্বারা আপনার বইয়ের ব্যাপ্তি ও প্রসারকে আরও দৃঢ়ভাবে সমর্থন করুন।









চলবে...

তথ্যসূত্র: How To Write A Book: 11 Steps You Need To Know To Be A Bestseller

বই পর্যালোচনা: দ্য টোটাল মানি মেকওভার: ডেভ র‌্যামসি

#ব‌ই_পর্যালোচনা:

দ্য টোটাল মানি মেকওভার: ডেভ র‌্যামসি

The Total Money Makeover by Dave Ramsey

অর্থ সংক্রান্ত সমস্যার পরিপূর্ণ সমাধান

বইয়ের সারমর্ম লিখেছেন: ফজলে রাব্বি


প্রকাশনা: Thomas Nelson

প্রথম প্রকাশ, ২০০৩

© 2003, 2007, 2009, 2013 by David L. Ramsey III

মূল্য: ২৫০ টাকা

পৃষ্ঠা: ২৩৭

তথ্যসূত্র: https://thelifelifebalance.com/book-summary-the-total-money-makeover-by-dave-ramsey/


ডেভ র‌্যামসির বই দ্য টোটাল মানি মেকওভার-এ আর্থিক স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য ৭ ধাপের একটি পরিকল্পনার কথা বলেন। যদিও বইয়ের শিরোনাম দেখে অনেকেই একে বেশি বেশি মনে করেন, তবুও ডেভ র‌্যামসি আসলেই চমৎকার এক কৌশল ও উপায় আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। প্রতিটি ধাপের মূল কারণ ব্যাখ্যা করেছেন এবং এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে সাধারণ যেসব বাধাবিপত্তির সম্মুখীন মানুষজন হয়, তার পূর্ণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।


যদি তার ব্যাখ্যা ও ধাপগুলো খুবই বাস্তবসম্মত। তবুও আমি বলব, পৃথিবীর অনেক দেশের সাথে হয়তো ধাপগুলো পুরোপুরি খাপ খাবে না। কিন্তু এখান থেকে ধারণা নিয়ে যেকেউ তার বিদ্যমান অবস্থা অনুযায়ী পরিকল্পনা তৈরি করতে পারে।


এ বইয়ে প্রচুর উদাহরণ রয়েছে। বেশির ভাগই, বিবাহিত ও পারিবারিক লোকজনের উদাহরণ, যারা র‌্যামসির পরামর্শ অনুসরণ করেছেন এবং সফল হয়েছেন। আমি গুণে দেখেছি, বইয়ে প্রায় ৫০টিরও বেশি বাস্তব ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। পাশাপাশি তাদের ছবিও দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ছবি ও লোকজনের বাস্তব ঘটনা বইটিকে আসলেই প্রাণবন্ত করে তুলেছে। অনেকে সমালোচনা করেন এসব ছবি ও ঘটনা না থাকলে এ বই ৩০ পৃষ্ঠার বেশি হত না। তবে আমি বলব, এসব ঘটনা ও ছবিই বইটিকে আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। তাই আমি বলব, এ বই কিনে আমার টাকা উসুল হয়েছে এবং আমি অন্যদেরও বইটি পড়তে সুপারিশ করব।


এবার বইয়ের ব্যাপারে আসা যাক। শুরু করছি র‌্যামসির একটি উক্তি দিয়ে। কিছু কিছু মানুষ তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে ঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারে না। র‌্যামসি এ ধরনের মারাত্মক অবস্থাকে বর্ণনা করেছেন এভাবে:


‘আপনার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও পারিবারিক সদস্যরা আপনার আর্থিক অব্যবস্থাপনার অপারগতা বা এ শিক্ষার অভাবকে অপ্রয়োজনীয় বলে উপস্থাপন করবে, যাতে করে আপনার মনে হবে আপনি তো ভালোই করছেন।’


র‌্যামসি সমাজ নিয়েও চিন্তাভাবনা করেছেন। বিশেষ করে পাশ্চাত্যের সমাজ নিয়ে। একটি সমাজ কীভাবে চলে, সমাজের উৎসাহদায়ক বিষয়গুলো কী, সমাজে উত্তম বলে কী কী জিনিসকে দেখা হয়, আর্থিক ব্যাপারে সমাজের গোঁড়া চিন্তাভাবনাগুলো কী, বিশেষ করে ঋণ নেয়ার ব্যাপারে সমাজের চিন্তাভাবনা কী কী-সেগুলোর ব্যাপারে অধ্যয়ন করেন।


ডেভ র‌্যামসি ফাইন্যান্স ও রিয়েল স্টেট বিষয়ে অনার্স করেছেন। তিনি বর্তমানে রেডিও শো করেন যেখানে আর্থিক বিষয়ে হাজারো মানুষকে সরাসরি পরামর্শ দেন। বিশেষ করে, বাড়ি মরটগেজ নেয়া, সঞ্চয় বা বিনিয়োগ করার ব্যাপারে পরামর্শ দেন। মানুষের মধ্যে অর্থ বিষয়ক কিছু রূপকথা বা কুসংস্কার ছড়িয়ে আছে। র‌্যামসি তার বইয়ে এসব কথা বেশ দারুণভাবে তুলে ধরেন। এ ব্যাপারটা আপনার অবশ্যই ভালো লাগবে। পরবর্তী পৃষ্ঠায় এ ব্যাপারে সংক্ষেপে বলা আছে।


বইয়ের একটি মূল্যবান অনুচ্ছেদ হচ্ছে মানুষের সম্পর্ক ও ঋণের ব্যাপার। র‌্যামসি বলেন যে আপনি যখন একজন বন্ধু বা আত্মীয়কে ঋণ দিবেন, তখন ঋণগ্রহীতা ঋণদাতার দাসে পরিণত হয়। তাদের সাথে আপনার সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। আপনি যদি আপনার বন্ধু বা আত্মীয়কে সাহায্য করতে চান, তবে তাদেরকে উপহার হিসাবে টাকা দিন। আবার, ব্যাংক ঋণের সময় জামিনদার হয়ে স্বাক্ষর করার ব্যাপারে র‌্যামসি সতর্ক করেছেন। কখনোই পরিচিত, অপরিচিত বা ঘনিষ্ঠ কোনো ব্যক্তির জামিনদার হয়ে ব্যাংক ঋণের জন্য স্বাক্ষর দিবেন না। কারণ একটি বড় পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ঋণ গ্রহণকারী ব্যক্তি ঋণের টাকা ঠিকমতো পরিশোধ করে না। তখন জামিনদারকে ব্যাংক দায়ী করে এবং তার কাছ থেকে অর্থ আদায় করে। এরকমভাবে অনেক অনেক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আপনার উচিত হবে, এ ধরনের পরামর্শকে কঠিনভাবে অনুসরণ করা।


র‌্যামসির অর্থ সংক্রান্ত দর্শন বেশ যৌক্তিক এবং সম্মত হওয়ার মতো। তিনি ঠিকমতোই এ পয়েন্টকে তুলে ধরেন যে অর্থ থাকলে অন্যদের সাহায্য করা এবং বিশ্বকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।


ভালো লোকজনের একটি ভালো ইচ্ছা আছে বলেই তাকে মানুষ মনে রাখে না; তার পাশাপাশি তার (ভালো লোকের) অর্থ থাকতে হবে এবং ভালো ইচ্ছাকে কাজে লাগাতে হবে। টাকাপয়সা ভালো ইচ্ছা ও উদ্যোগকে কাজে পরিণত করার শক্তি ও ক্ষমতা দেয়। তাই আমি বারবার, প্রায় নির্লজ্জের মতো বলে যাব যে আমাদের উচিত সম্পদ গড়ে তোলা।


অবশ্য র‌্যামসির যৌক্তিক কথা আমার কাছে সহনীয় বলেই বোধ হয়েছে। অন্যান্য বিনিয়োগ ও অর্থ সংক্রান্ত লেখকদের মতো, র‌্যামসিও তার নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তিনি কীভাবে সফল হলেন এবং সম্পদ গড়ে তুললেন তা উল্লেখ করেছেন। নিজের অনভিজ্ঞতার কারণে এবং যুবক বয়সে র‌্যামসি সম্পদ গড়ে তোলার পরও তা হারিয়ে ফেলেন। নিজের বিবাহিত জীবন ও পরিবার নিয়ে তিনি বেশ ঝামেলার মধ্যে পড়ে যান। তারপর সেখান থেকে কীভাবে উঠে আসেন এবং কী শিক্ষা পান, তাই আমাদেরকে বলেছেন এ বইয়ে।


আমার মনে হয়, প্রত্যেক লেখকই তার জীবনের বিভিন্ন বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হন এবং তা থেকে কী শিক্ষা পেলেন তা অভিজ্ঞতার মুক্তা হিসাবে ব্যবহার করেন। আপনি নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন যে কেউ একজন যদি নিজে ধনী না হয়, তবে সে ধনী হওয়ার কলাকৌশল জানে এবং বোঝে বলে বর্ণনা করলেই মানুষজন তার কথার মূল্য দিবে না। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য ব্যক্তিকে অবশ্যই কষ্টকর সেসব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে যা তাকে আগুনের মতো পোড়ায়। আর এ জন্যই আমি বইয়ের লেখক না হয়ে, বইয়ের পর্যালোচনা লিখছি।


অনেক বইয়েই লিখা থাকে যে আমিও এক সময় আপনার মতো ছিলাম। … … ...। তারপর আমি এভাবে এভাবে উন্নতি করেছি। আমি মনে করি, একেক জনের পরিবেশ, পরিস্থিতি একেক রকম, তাই প্রত্যেকের বাধাবিপত্তি থেকে শিক্ষাও বিভিন্ন হবে। কিন্তু একে অপরের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানলে আরও উত্তমভাবে নিজেদের বাধাবিপত্তির মোকাবিলা করা সম্ভব।


এখন আমরা বইয়ের সূত্রাবলিতে চলে যাই।


সম্পদ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রস্তুতিমূলক কিছু পরামর্শ:


র‌্যামসি তার পদ্ধতি বা কলাকৌশল অনুসরণ করার আগে অংশগ্রহণকারীদের বলেন, প্রথমে মানুষকে ব্যক্তিগত আর্থিক বিষয়ক শিক্ষার পুনর্পাঠ নিতে হবে। তিনি ব্যক্তিগত আর্থিক বিষয়ক শিক্ষার ব্যাপারে বলতে গিয়ে জোর দিয়ে বলেন এ ব্যাপারটার ৮০% মানসিক এবং অভ্যাসগত বিষয়। আমরা যদি সম্পদ গড়তে চাই, তবে আমাদেরকে নতুন অভ্যাস এবং চিন্তা পদ্ধতি গঠন করতে হবে। তিনি আমাদের কিছু নিয়মের ব্যাপারেও বলেন:


  • কোনো নতুন গাড়ি কিনবেন না বা ঋণ করেও গাড়ি কিনবেন না (আমেরিকায় গাড়ির প্রচলন এতো বেশি যে এটা বাংলাদেশে মটরসাইকেলের মতো অবস্থা।)।

  • ঋণের সময় বৃদ্ধি বা অনেক ধরনের ঋণকে একত্র করে কোনো লাভ হয় না। এভাবে সমস্যার গোড়ায় আপনি কখনো পৌঁছাতে পারবেন না।

  • আপনার মৃত্যুর পূর্বপরিকল্পনা গ্রহণ করা অতি উত্তম, কিন্তু আগে থেকে টাকা ব্যয় বা সঞ্চয় করা অবিজ্ঞচিত ব্যাপার। আপনি টাকাটার আরও ভালো ব্যবহার করতে পারেন। কোথাও বিনিয়োগ করে আরও ভালো মুনাফা নিতে পারেন।

  • দেউলিয়া ঘোষণা করার ব্যাপারটা এড়িয়ে চলনু। অনেক বিশেষজ্ঞ হয়তো আপনাকে ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে দেউলিয়া ঘোষণা করতে বলবে, তা এড়িয়ে চলুন। দেউলিয়া ঘোষণা করলে পরবর্তীতে আপনার সুনামের ওপর এর যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

  • আপনি যদি তালাক নেন, তবে অবশ্যই আপনার নামে কোনো ঋণ আছে কিনা তা নিশ্চিত করে নিন। থাকলে, তা থেকে নিজের নাম কাটান বা কারও ঋণ নিতে জামিন দিয়ে থাকলে তা থেকেও নিজের নাম কাটান। দরকার হলে ঘরের জিনিসপত্র বিক্রি করে হলেও ঋণ পরিশোধ করুন এবং নিজের নাম সরান। কারণ তালাক হলেও ঋণের বোঝা আপনার নামের ওপর থেকে সরে না।

  • বাজেট করার ক্ষেত্রে খাম পদ্ধতি ব্যবহার করুন। আলাদা আলাদা নামে খাম করুন এবং টাকা আলাদা খামে রাখুন।

  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনার বীমা করা দরকার হবে। এটা আপনার দেশ, অবস্থা ও স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে করবেন। গাড়ির বীমা, ঘরের, জীবনবীমা, পঙ্গু অবস্থার বীমা, স্বাস্থ্য বীমা করতে পারেন। বর্তমানে চিকিৎসা ব্যয় সবচেয়ে বেশি হয়। তাই স্বাস্থ্য বীমা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

  • আপনি একদিন না একদিন মারা যাবেন। তাই আগে থেকেই একটি উইল করে রাখুন। এতে করে আপনার টাকা কোথায় যাবে তা নিশ্চিত হতে পারবেন।

  • প্রতি বছর কিছু সময় নিয়ে নিজেকে আর্থিক ব্যাপারে শিক্ষিত করার চেষ্টা করুন। ফাইন্যান্স তথা অর্থায়ন সম্পর্কে কিছু পড়ুন এবং বছর শেষে তা পর্যালোচনা করুন। সম্পদ এমনি এমনি গড়ে ওঠে না। এটা গড়ে তুলতে হয়। আর তাছাড়া আর্থিক ব্যাপারে জানতে হলে যে দেশের সর্বোচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে হবে তা-ও নয়। বছরে একবার হলেও অর্থায়ন তথা ফাইন্যান্স সম্পর্কে একটি বই পড়ুন।

  • ক্রেডিট কার্ড থেকে নিজের নাম কাটান। ক্রেডিট কার্ড থাকলে টাকাপয়সা চুরি বা ছিনতাই হবে না-এ ধরনের রূপকথায় বিশ্বাস করবেন না। এটা সত্য নয়।


শুরু করার আগে সামান্য ভূমিকা


এ বইয়ের মূল ভিত্তি হচ্ছে মনোযোগ, পুরোপুরি মনোযোগ। আপনি যদি ঋণ থেকে বাঁচতে চান, নিজেকে সম্পদশালী করে গড়ে তুলতে চান, তবে আপনাকে অবশ্যই আর্থিক বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। প্রথম প্রথম অগ্রগতির গতি হবে ধীর। আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে। আপনার হয়তো মনে হবে আপনি কিছু অর্জন করতে পারছেন না। এতে করে নিজের মধ্যে হাল ছেড়ে দেয়ার মনোভাব তৈরি হতে পারে। কিন্তু কখনো হাল ছাড়বেন না। এ বইয়ে উল্লিখিত পদ্ধতি ধাপে ধাপে অনুসরণ করে যান। কেবল চেষ্টা না, নিজে থেকে আরও কিছু যোগ করে এগিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হোন। আপনি পারবেন।


ধাপ ১: প্রথমে ইমার্জেন্সি ফান্ড দিয়ে আরম্ভ করুন।


আমরা প্রায়ই অনাঙ্ক্ষিতভাবে খরচ করে ফেলি। তাই প্রথমেই ইমার্জেন্সি ফান্ড গঠন করুন। এতে করে অনাঙ্ক্ষিত ব্যয় হ্রাস পাবে। মনে রাখবেন, আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে আপনার আয়। আপনার আয় যদি হয় বছরে ৩ লাখ টাকা, তবে এর ২০% বা ২৫% আপনার ইমার্জেন্সি ফান্ড হিসাবে গঠন করুন। অথবা আপনার বিপদআপদ অনুমান করে ইমার্জেন্সি ফান্ড গঠনের প্রস্তুতি নিন।



ধাপ ১: প্রথমে আরম্ভ করুন, জরুরি অবস্থার জন্য অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে। একটি ইমার্জেন্সি ফান্ড গঠন করুন।

ধাপ ২: ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে সর্বাত্মক মনোযোগ দিন। প্রথমে ছোট ছোট অংশে ঋণ পরিশোধের উদ্যোগ নিন।

ধাপ ৩: জরুরি অবস্থার জন্য অর্থ সংগ্রহের টার্গেট পূরণ করুন। ইমার্জেন্সি ফান্ডের অর্থ সংগ্রহের টার্গেট পূরণ করুন।

ধাপ ৪: আপনার আয়ের ১৫ শতাংশ টাকা রিটায়ারম্যান্ট তথা বৃদ্ধ বয়স বা অবসরের জন্য বিনিয়োগ করুন।

ধাপ ৫: কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সঞ্চয় করুন।

ধাপ ৬: বাড়ির মরটগেজের টাকা পরিশোধ করুন।

ধাপ ৭: সম্পদ গড়ুন এবং এর একটা অংশ দান করুন (যাকাতের মতো)।


বৃহস্পতিবার, ২২ জুলাই, ২০২১

ব‌ই পর্যালোচনা: ক্রিয়েটিভিটি অ্যান্ড প্রবলেম সলভিং। ব্রায়ান ট্রেসি।



#ব‌ই_পর্যালোচনা:

ক্রিয়েটিভিটি অ্যান্ড প্রবলেম সলভিং: ব্রায়ান ট্রেসি

Creativity and problem solving by Brian Tracy

সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধান

সারমর্ম লিখেছেন ফজলে রাব্বি


প্রকাশনা: AMACOM, American Management Association

প্রথম প্রকাশ, ২০১৪

© 2015 Brian Tracy

মূল্য: ২৫০ টাকা

পৃষ্ঠা: ১২৮


ক্রিয়েটিভিটি অ্যান্ড প্রবলেম সলভিংকে বাংলায় বলা যেতে পারে সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধান। 


একটি নতুন আইডিয়া বা অন্তর্দৃষ্টিই আপনার পেশাগত জীবন বা একটি কোম্পানির নতুন গতিপথ নির্ধারণ করে দিতে পারে।


আপনি যদি আপনার চিন্তার গুণগতমান বৃদ্ধি করতে পারেন, তবে আপনার জীবনযাপনের গুণমানও বৃদ্ধি করতে পারবেন।


বেশির ভাগ মানুষ সৃজনশীল চিন্তা খুবই কম করে অথবা একেবারে করে না বললেই চলে। কেন মানুষ সৃজনশীল চিন্তা করে না? কারণ তারা এক ধরনের স্বস্তিদায়ক বলয়ের মধ্যে আটকা পড়েছে। যেমন আছে তেমনই থাকতে চায়। নতুন কোনো আইডিয়া, নতুন কোনো উপায়, পন্থা বা বুদ্ধি কাজে লাগাতে অস্বস্তি বোধ করে। ব্যক্তির মধ্যকার এমন জড়তাকেই আমরা স্বস্তিদায়ক বলয় বলেছি, যা তাকে জীবনে অগ্রগতি করতে, উন্নত হতে বাধা দেয়। তারা কেবল তাদের অতীত নিয়ে পড়ে থাকে, অতীতে কী করেছে, অতীতে কী হয়েছে-তা নিয়েই কথা বলে চলে। এজন্যই এমারসন বলেছেন, ‘ভূতের ভয় যেমন মানুষের মনকে আকঁড়ে ধরে রাখে, তেমন বোকা ব্যক্তির বোকামিও তাকে আকঁড়ে থাকে।’


সৃজনশীলতার আসল উৎস


আপনার সৃজনশীলতাকে নির্ধারণ করে কী কী বিষয়? তিনটি বিষয়।

এক, আপনার অতীত অভিজ্ঞতা।

দুই, বর্তমানের শক্তি।

তিন, আপনি নিজেকে নিজের মনের ভেতর কীভাবে দেখেন তথা স্ব-চিত্রের ওপর সৃজনশীলতার আসল উৎস বিদ্যমান।


অতীতে আপনি কাউকে কোনো আইডিয়া বলেছেন, সেই আইডিয়া শুনে তারা আপনার সাথে সায় দিয়েছে, নাকি হাসাহাসি করেছে? এমন অভিজ্ঞতার ওপর আপনার আগামী সৃজনশীলতা অনেকাংশে নির্ভর করে। আপনি যদি অতীতে কোনো আইডিয়া শেয়ার করে অপমান হয়ে থাকেন, তবে আপনি চিন্তা করবেন, যেহেতু এমন আইডিয়া অন্য কারও মাথায় না এসে আপনার মাথায় এসেছে, তার মানে এ আইডিয়া কোনো ভালো আইডিয়া নয়।


আপনারা যখন আড্ডা দেন, একসাথে বসে গল্পগুজব করেন, তখন কি কারও কোনো আইডিয়া শুনে অন্যরা বাধা দেয়, সমালোচনা করে, নাকি সেই আইডিয়াকে উৎসাহ দেয়? বর্তমানের এসব আচরণের ওপরও আপনার সৃজনশীলতা নির্ভর করে। এজন্যই বলা হয়ে থাকে, বুদ্ধিমান ও ইতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন মানুষের সাথে চলুন।


তিন নম্বর সৃজনশীলতার উৎস হচ্ছে আপনি নিজেকে নিজের মনের ভেতর কীভাবে দেখেন। একে স্ব-চিত্র বা আত্ম-চিত্র বলা হয়। নিজের ভেতর থেকে নিজেকে অসাধারণ এক সৃজনশীল ব্যক্তি হিসাবে চিন্তা করুন। নিজেকে বলুন, ‘আমি বুদ্ধিমান, আমি বুদ্ধিমান, আমি বুদ্ধিমান।’ নিজেকে সবসময় একজন বুদ্ধিমান ও প্রতিভাবান ব্যক্তি হিসাবে কল্পনা করুন।


হাতে কলমে কাজ করুন।

আজকেই নিজের লক্ষ্য ও এর সামনে সবচেয়ে বড় বাধাকে খুঁজে বের করুন। তারপর নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, এখন এ বাধা দূর করতে কী পদক্ষেপ নিবেন?


বাংলাদেশে চারটি গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে বেশি চলতি ব্যবসা হচ্ছে:

হাসপাতাল / চিকিৎসা খাত

শিক্ষা খাত

খাবার

পোশাক


ধরুন, আপনি চা বানালেন। চায়ের মধ্যে এক চামচ চিনি দিলেন। তারপর চা খেলেন। কেমন? চা একটু তিতা তিতা স্বাদের মনে হচ্ছে। কারণ আপনি চিনি দিয়েছেন, কিন্তু নাড়া দিয়ে চিনিটা চায়ের মধ্যে মিশিয়ে নেননি। ঠিক তেমন আমাদের সকলের মধ্যেই সৃজনশীলতা বিদ্যমান। আমাদের কেবল একটু নাড়া দিয়ে উদ্দীপ্ত করতে হবে। আপনার সৃজনশীলতা তিনটি জিনিস দ্বারা উদ্দীপ্ত হবে।


  • প্রবলভাবে আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য

  • সমস্যায় জর্জরিত হলে

  • অত্যন্ত মনোযোগের সাথে প্রশ্ন করলে


আপনি যত বেশি একটি লক্ষ্যকে চাইবেন, তা অর্জনের জন্য চেষ্টা করবেন, তত বেশি তা পূরণের জন্য সৃজনশীল উপায় খুঁজে পাবেন। আপনি একটি লক্ষ্য নিন। একটি কাগজে লিখে রাখুন। এ লক্ষ্য পূরণ করুন। দেখবেন, এতে করে আপনার আত্মবিশ্বাস কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।


এরপর রয়েছে প্রবলভাবে আক্রান্ত সমস্যায় থাকলে সৃজনশীলতা উদ্দীপ্ত হয়। এতে করে আপনি নিজেকে প্রশ্ন করতে সুযোগ পান যে আপনার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কী, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী।


আরেকটি হচ্ছে অত্যন্ত মনোযোগের সাথে প্রশ্ন করলে। আপনার মধ্যে কৌতূহল থাকতে হবে। আশেপাশের সবকিছু নিয়ে প্রশ্ন করতে হবে। পিটার ড্রুকার বলতেন, আমি পরামর্শক নই, আমি অপমানকারী। আমি মানুষকে প্রশ্ন করি। এমন সব প্রশ্ন করি যা তারা সাধারণত নিজেদের করতে চায় না।


মাটির চুলাতে যেমন তুষ দিয়ে আগুনের তীব্রতাকে বৃদ্ধি করা হয়, তেমন সৃজনশীলতাকেও আপনার অনুমানগুলো পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে বৃদ্ধি করতে পারেন। আপনার অনুমানগুলো কী? বলা হয়, প্রতিটি ব্যর্থতার পিছনে থাকে ভুল অনুমান। আপনি যা অনুমান করেছিলেন, মনে করেছিলেন, তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। নিজেকে প্রশ্ন করুন, আমার অনুমান কী কী? আমার অনুমান ভুল হলে কী হবে?


মাইন্ডস্টর্মিং তথা মনকে আলোড়িত করার পদ্ধতি


একটি প্রশ্নের উত্তরে ২০টি উত্তর খুঁজে বের করতে নিজের মস্তিষ্ককে চাপ দিন।


পরবর্তের চারটি ধাপ


এক, আপনি কিছু জিনিস আরও বেশি বেশি করতে পারেন।

দুই, আপনি কিছু জিনিস আরও কম কম করতে পারেন।

তিন, আপনি সম্পূর্ণ নতুন কিছু আরম্ভ করতে পারেন।

চার, আপনি কিছু জিনিস করা একদম বন্ধ করে দিতে পারেন।


মনকে আলোড়িত করার পদ্ধতিকে কাজে লাগাতে গেলে, আইডিয়া বা বুদ্ধির গুণগত মানের ব্যাপারে চিন্তা না করে কত বেশি আইডিয়া আসে তার দিকে নজর দিন। ২০টি উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। সেখান থেকে অন্তত একটি আইডিয়া নিজে কাজে নেমে পড়ুন। দেরি করবেন না। সাথে সাথে কাজে নেমে পড়ুন।


আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হাতে নিন। এবার এর সমাধানে কাগজে ২০টি উত্তর, আইডিয়া বা বুদ্ধি, যাই মাথায় আসে লিখে ফেলুন। তারপর সেখান থেকে অন্তত একটি আইডিয়া নিয়ে সাথে সাথে কাজে নেমে পড়ুন।


সৃজনশীলতাকে উদ্দীপ্ত করতে প্রশ্ন করুন


সবসময় জিজ্ঞেস করুন, আমরা কীভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি? লেখক বেঞ্জামিন ট্রেগোয়ে বলেন, ‘সময়ের সবচেয়ে খারাপ ব্যবহার হচ্ছে যে কাজ করার দরকার নেই তাই সবচেয়ে ভালোভাবে করা।’ এজন্য সবসময়ই জিজ্ঞেস করবেন, আমরা কীভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি?


ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিনের এক গবেষণা হয় ২২ বছর ধরে। সেখানে ১৫০ জন গবেষক মিলে ২২ হাজার কোম্পানির ওপর দশ বছরের তথ্যউপাত্ত নিয়ে ফলাফল প্রকাশ করেন। গবেষণার বিষয়সূচি ছিল: একটি কোম্পানি বা দেশের ব্যবস্থাপনার দক্ষতা নির্ভর করে কী কী ভিত্তি বা নির্ধারকের ওপর। তারা খুঁজে পান যে এ ব্যাপারটা তিনটি জিনিসের ওপর ভিত্তি করে হয়:

১। স্পষ্ট ও পরিষ্কার উদ্দেশ্য তৈরি করা

২। পারফরম্যান্স তথা কর্মদক্ষতা পরিমাপ করার পদ্ধতি থাকে

৩। অসাধারণ পারফরম্যান্স করলে পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকে


ইন্টেলের গর্ডন মুর ও এন্ড্রু গ্রোভ একদিন গ্রোভের অফিসে বসে কথা বলছেন। তারা নিজেদের প্রশ্ন করেন, আজকে যদি ইন্টেলের ডিরেক্টর বোর্ড আমাদেরকে বরখাস্ত করে নতুন ম্যানেজমেন্টকে নিয়োগ দেয় তবে এই নতুন ম্যানেজমেন্ট আমাদের থেকে ভিন্ন কী কাজ করত?


আমরা কীভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি? আমরা কী কাজ করার চেষ্টা করছি? আমরা কী ধরনের ফলাফল আশা করছি?


নিজেকে আরও জিজ্ঞেস করুন। আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের আর কী কী উপায় আছে? সবসময় মনে রাখবেন, যেকোনো কাজকে আরও কার্যকর উপায়ে সম্পাদন করার উপায় আছে। আপনাকে কেবল তা খুঁজে বের করতে হবে। আপনি হয়তো জানেন না। আপনার মেধা ও সম্পদকে আরও উত্তম উপায়ে কাজে লাগাতে পারেন। আপনি কেবল তা খুঁজে বের করতে হবে।


হাতে কলমে কাজ করুন। আপনি আপনার ব্যবসায় কী অর্জন করতে চান তা বিশ থেকে পঁচিশটি শব্দে স্পষ্ট ও পরিষ্কার করে লিখুন।


তারপর, আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিশ থেকে পঁচিশটি শব্দে পরিকল্পনা লিখুন। আমরা ঠিক কীভাবে কাজটি করার চেষ্টা করছেন?


ব্রেইনস্টর্মিং তথা মাথা খাটানো। ব্রেইনস্টর্মিং এর মাধ্যমে আপনার দলের প্রকৃত ক্ষমতাকে বের করে আনুন।


কীভাবে ব্রেইনস্টর্মিং পদ্ধতি কাজে লাগাবেন? ব্রেইনস্টর্মিং পদ্ধতিকে কাজে লাগাতে এখানে ৬টি উপায় বর্ণনা করা হচ্ছে।


১। ব্রেইনস্টর্মিংয়ের জন্য সবচেয়ে ভালো হয় চার থেকে সাতজন সদস্য হলে। চারজনের কম হলে বেশি সংখ্যক আইডিয়া আসবে না। আর সাতজনের বেশি হলে অনর্থক কথা বেশি হবে এবং কাজের কাজ কিছুই হবে না।


২। ব্রেইনস্টর্মিং সেশনের আদর্শ সময়কাল হচ্ছে পনেরো থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। ত্রিশ মিনিটকে সন্তোষজনক বলা যায়। সময়সীমা বলা ব্রেইনস্টর্মিংয়ের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কখন শুরু করবেন এবং কখন শেষ করবেন, তা আগে থেকে বলে নিবেন। এতে করে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এক ধরনের ন্যূনতম চাপ অনুভব হবে, যা ব্রেইনস্টর্মিংয়ের জন্য উত্তম।


৩। একটি ব্রেইনস্টর্মিং সেশনের আসল লক্ষ্য হচ্ছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যত বেশি আইডিয়া বের করা যায়।


৪। ব্রেইনস্টর্মিং সেশনের কথাবার্তা সম্পূর্ণ ইতিবাচক হতে হবে। এর মানে হচ্ছে যেকেউ যেকোনো আইডিয়ার ব্যাপারে কথা বলতে পারে। আইডিয়া ভালো কি মন্দ তা নিয়ে কেউ যেন সাথে সাথে বিচার করতে না বসে। আইডিয়া আসা মাত্রই তা নিয়ে হাসাহাসি করা যাবে না। আলাপ-আলোচনা করুন। হাসাহাসি করুন। মজা করুন।


৫। ব্রেইনস্টর্মিং সেশন আরম্ভ করার পূর্বে কে দলনেতা হবে তা নিশ্চিত করে নিন। দলনেতার অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে প্রত্যেকেই যাতে কিছু অবদান রাখতে পারে, সেই ব্যাপারে সকলকে সুযোগ করে দেয়া।


৬। প্রতিটি ব্রেইনস্টর্মিং সেশনে অবশ্যই একজন রেকর্ডার হিসেবে থাকতে হবে। আইডিয়াগুলো লিখে রাখার জন্য কেউ একজনকে দায়িত্ব দিতে হবে। একজন তথ্য টুকে রাখবে।


সাধারণত সদস্য সাতজনের বেশি হলে আমি দুইভাগে বা একাধিক ভাগে ভাগ করে ছোট ছোট টেবিলে সব দলকে আলোচনা করতে বসিয়ে দিই। আমি আইবিএম এবং অন্যান্য কোম্পানিতে কাজ করতে গিয়ে এমন করেছি। তাদেরকে আলাদা আলাদা টেবিলে বসিয়ে দিয়ে এক টেবিলের সাথে অন্য টেবিলের প্রতিযোগিতার আয়োজন করতাম। এতে করে অসাধারণ সব আইডিয়া বের হয়ে আসত।


কিছু গুরুত্বপূর্ণ কলাকৌশল


নিজেদের মধ্যে শূন্যস্থান পূরণ করার মাধ্যমে ব্রেইনস্টর্মিং সেশন পরিচালনা করুন।


১। আমরা আমাদের বিক্রয় আগামী ৯০ দিনের মধ্যে দ্বিগুণ করতে পারব যদি . . . .

২। আমরা পণ্য উৎপাদন ব্যয় এবং পরিবহণ খরচ ২০ শতাংশ হ্রাস করতে পারব যদি . . . .

৩। আমরা এই বাজারের সেরা সরবরাহকারী হতে পারব যদি . . . .


এভাবে বিভিন্ন প্রশ্ন, বক্তব্য প্রভৃতি রেখে সেশন পরিচালনা করুন। চিন্তা করবেন যেন একটি উত্তম সমাধান আছে। আপনাদের কেবল তা খুঁজে বের করতে হবে।


আপনার ব্যবসা বা কোম্পানির একটি সমস্যা বা লক্ষ্য নিন যা আপনার ব্যবসায় সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলবে।


আপনার ব্রেইনস্টর্মিং দল তৈরি করুন। তাদেরকে এ অধ্যায়ের নিয়মাবলি অনুসারে পরিচালিত করুন। যত বেশি সম্ভব আইডিয়া বা সমস্যার সমাধান আসতে দিন এবং তা লিখে রাখুন। এতে করে আপনি অসাধারণ সব ফলাফল পাবেন, তা আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি।


আশাবাদ হচ্ছে প্রগতির মূল চাবিকাঠি


আশাবাদের মনোভাব বজায় রাখতে দুইটি পদ্ধতি ব্যবহার করুন।


এক, আপনি কী করতে চান এবং কীভাবে করবেন তা নিয়ে সবসময় চিন্তা করুন এবং কথা বলুন। আশাবাদী লোকজন সকাল-সন্ধ্যা-রাত, সবসময় তাদের লক্ষ্য নিয়ে চিন্তা করে। তারা দুনিয়াকে সুযোগে পরিপূর্ণরূপে দেখে এবং সবসময় কীভাবে সেই লক্ষ্য অর্জন করা যায় বা কোনো সমস্যা সমাধান করা যায় তাই নিয়ে চিন্তা করে।


দুই, প্রত্যেক ব্যক্তি বা প্রতিটি ঘটনার ভালো দিক খুঁজে দেখে। আশাবাদীরা মনে করে প্রতিটি সমস্যার একটি সমাধান নিশ্চয় আছে। তারা সবসময় যেকোনো ঘটনার ভালো দিক বা কাজে লাগে এমন সুযোগের প্রত্যাশায় থাকে।


আশাবাদীদের ভাষা


আশাবাদীরা একটি কঠিন সমস্যাকে ‘পরিস্থিতি’ বা ‘অবস্থা’ বলে। যেহেতু অবস্থা বা পরিস্থিতি ভালোও না, মন্দও না, একটি নিরপেক্ষ অবস্থা, তাই এ নিয়ে অতি উদ্বেগ প্রকাশের কিছু নেই। আপনি হয়তো একটি সমস্যায় পড়লে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বেন, কিন্তু একটি পরিস্থিতি বা অবস্থায় পড়লে তা নিয়ে তত বেশি উদ্বিগ্ন হবেন না।


এর চেয়েও ভালো শব্দ হচ্ছে ‘চ্যালেঞ্জ’। কোনো সমস্যায় পড়লে একে চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখুন।


সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি একে ‘সুযোগ’ বলে দেখেন। প্রতিটি সমস্যার মধ্যেই কোন না কোন সুযোগ থাকে। আপনাকে কেবল তা খুঁজে বের করতে হবে। যখনই কোনো সমস্যায় পড়বেন, তখন জিজ্ঞেস করুন, ‘সমস্যা কী?’ প্রশ্ন আপনার অবচেতন মস্তিষ্ককে উদ্দীপ্ত করে। এ প্রশ্ন করার পর আপনার অবচেতন মস্তিষ্ক ব্যাপারটিকে সুযোগ হিসাবে দেখবে, এ সমস্যার মধ্যে আপনার জন্য কী সুযোগ আছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে।


সমস্যার মধ্যে কোনো এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা খুঁজুন। আপনি এ বাধা বা সমস্যা থেকে কী শিখলেন?-এমন প্রশ্ন নিজেকে করুন। এতে করে এসব শিক্ষা আপনাকে ভবিষ্যতে সফল হতে সাহায্য করবে। আজই আপনার ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত জীবনের সবচেয়ে বড় বাধা বা সমস্যাকে খুঁজে বের করুন।


মনমস্তিষ্কের জন্যও পুষ্টিকর খাবার দরকার


আপনি যেমন দেহের জন্য পুষ্টিকর খাবার খান, সুষম খাবার খেলে যেমন দেহ ভালো থাকে, তেমন মনমস্তিষ্কের জন্যও পুষ্টিকর খাবার দরকার। আপনি যত বেশি বুদ্ধিদীপ্ত ও ইতিবাচক খাবার মনমস্তিষ্ককে দিবেন, তত বেশি আপনার মনমস্তিষ্ক সজীব ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।


আমাদের মন চুম্বকের মতো। আপনি যদি নেতিবাচক কথা বলেন, চিন্তা করেন অথবা ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় উদ্বিগ্ন থাকেন, তবে প্রকৃতির আকর্ষণ সূত্র অনুযায়ী, আপনি আরও সমস্যাকে আকর্ষিত করবেন। এ ব্যাপারে সাবধান থাকবেন।


হাতে কলমে কাজ। আজই একজন আশাবাদী ব্যক্তিরূপে নিজেকে প্রকাশ করবেন বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হোন। আপনার লক্ষ্য নিয়ে কথা বলুন এবং তা কীভাবে অর্জন করা যায় তাই নিয়ে চিন্তা করুন। প্রতিটি অবস্থা বা পরিস্থিতির ভালো দিক দেখুন। প্রতিটি সমস্যার মধ্যে সুযোগ খুঁজে বেড়ান। আপনার মনকে ইতিবাচক চিন্তা ও সুযোগ সম্ভাবনা দিয়ে ভরিয়ে তুলুন। এ ধরনের বই পড়ুন, সিডি বা ভিডিও শুনুন-দেখুন। অন্যদের সাথে এ নিয়ে কথা বলুন।


আশাবাদীর ভাষা ব্যবহার করুন। নেতিবাচক কথাবার্তা বলা বন্ধ করুন। নেতিবাচক শব্দকে ইতিবাচক শব্দে প্রতিস্থাপিত করুন। এতে করে আপনি আরও সজীব, প্রাণবন্ত ও বুদ্ধিদীপ্ত হয়ে উঠবেন।


বই পর্যালোচনা: ইউ ক্যান ডু ইট। জন মেসন।



আপনার পক্ষে আপনার ভবিষ্যৎ নির্মাণ করা সম্ভব। আপনি যদি আজকে আপনার পছন্দ মতো জায়গায় নাও থাকেন, উদ্বিগ্ন হবেন না, ভয় পাবেন না। আপনার পক্ষে আপনার পছন্দ মতো জায়গায় যাওয়া সম্ভব। এই সম্ভব্যতাকেই লেখক জন মেসন নানা যুক্তি ও উক্তির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।


আজকে আপনি যেখানে আছেন, গতকাল হয়তো তা সম্ভব ছিল না। আবার আগামীকাল আপনি যেখানে থাকবেন তা আজকে অসম্ভব বলে বোধ হতে পারে। এজন্যই আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন। মানুষের পক্ষে যা অসম্ভব, আল্লাহর পক্ষে তা নিশ্চয়ই সম্ভব।


নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করবেন না। যে কখনো ঝুঁকি নেয়নি, সে কখনো কোন বড় কিছু অর্জন করেনি। বলা হয়, একটি জাহাজ কখনো স্রোতহীন তীরে পড়ে থাকার জন্য নির্মাণ করা হয়নি। জাহাজকে গভীর সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের সাথে লড়াই করতে হবে। তুলে আনতে হবে মুক্তা। এলিজাবেথ কেনি বলেন, সারাজীবন ভেড়া হয়ে জীবনযাপন করার চেয়ে একদিন সিংহ হিসাবে বাঁচাও উত্তম।


আপনি যদি ঝুঁকি নিয়ে চিন্তা করেন তবে কখনোই এগিয়ে যেতে পারবেন না। সবসময় ফলাফলের দিকে, আপনি কী চান, সেই দিকে নজর দিন। তবেই এগিয়ে যাওয়ার শক্তি ও সাহস পাবেন।


সাধারণ মানুষ কখনো প্রার্থনা করে না। তারা ভিক্ষা চায়। আল্লাহর কাছে মানসিক শক্তি ও সাহস চান। এগিয়ে যাওয়ার দিকনির্দেশনা চান। প্রার্থনা করুন, নাকি ভিক্ষা। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। তবেই আল্লাহ আপনার তীব্র আকাঙ্ক্ষা পূরণের উপায় দেখাবে।


ভয় এমন এক জিনিস যেন সেখান থেকে সবসময় পালাতে মন চায়। ভীতি থেকে আমরা সাধারণত পালিয়ে বেড়াই। কিন্তু ভীতির সেই জিনিস হয়তো আপনার পিছনে নয়। একে মোকাবিলা করুন। মুখোমুখি হোন। দেখবেন ভয় কেটে গেছে।


জন লাববক বলেন, ‘একদিনের কঠোর পরিশ্রমের চেয়ে দিনভর দুশ্চিন্তায় কাটানো বেশি কষ্টের।’


বলা হয়, ভবিষ্যতের জন্য দুশ্চিন্তা করবেন না। কারণ দুশ্চিন্তা করতে করতে দেখা যাবে দুশ্চিন্তা করার মতো ভবিষ্যতই থাকবে না। দুঃখজনক হলেও সত্য যে লোকজন ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় বেশি সময় কাটায়। অথচ আমাদের চিন্তা থাকা দরকার ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেয়া।


সিস্টার ম্যারি ট্রিকি বলেন, ‘ভয় হচ্ছে এক ধরনের বিশ্বাস যা কখনো কাজে দেয় না।’


আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস করি। নিজেকে বলুন, আমি ভয় পাই না। যার আল্লাহর ওপর বিশ্বাস আছে, তাকে মর্তের মানুষ কী করতে পারে! আল কুরাআনে আল্লাহ বান্দাকে বলতে বলেন, বল, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। নির্ভরকারীরা তাঁরই উপর নির্ভর করে থাকে। - সুরা আয-যুমার, আয়াত, ৩৮।


আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন। কখনো অচেনা ভবিষ্যৎকে ভয় পাবেন না। কারণ আপনার সাথে সর্বদা আল্লাহ আছেন। কোরিই টেন বুম বলেন, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন। আল্লাহ আপনার কাছের জন, পরিচিত। তাই অজানা ভবিষ্যৎকে ভয় পাবেন না। কারণ আপনার পরিচিত আল্লাহ আপনার সাথে আছে।


ব্যর্থ হলেও ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিন। শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যান। একবার পড়ে গেলেও, আরও একবার উঠে দাঁড়ান। আবার চেষ্টা করুন। এবার আপনার সাথে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা আছে। আপনি নতুন উদ্যমে, শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার নতুন শক্তি নিয়ে চেষ্টা করুন। আপনি পারবেন।


ব্যর্থতা হয়তো অনিবার্য বলে বোধ হয়। কিন্তু এটা কেবল একটা ফলাফল মাত্র। সম্ভাবনার মতো, শত ফলাফল ঘটতে পারত। সেখান থেকে একটা ঘটল। সফল লোকজন বিশ্বাস করে ব্যর্থতা কেবল একটি প্রতিক্রিয়া মাত্র। ঠিক পন্থায় কাজ করতে না পারার কারণে ব্যর্থতা ঘটেছে। ঠিক পন্থা খুঁজে বের করতে হবে। নিজের পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঠিক পন্থা খুঁজে বের করুন।


বলা হয়, জীবনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হচ্ছে কোনো ঝুঁকি না নেয়া, কোন ধরনের ব্যর্থতা না থাকা। আপনি যদি জীবনে কোনো কিছু চেষ্টা না করেন, কোনো কিছুতে ব্যর্থ না হন, তবে কখনো সফল হতে পারবেন না। নাইকি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ফিল নাইট ও বিল বাওয়ারম্যান। ফিল নাইট বলেন, আগে আগে ব্যর্থ হোন। যত আগে ব্যর্থ হবেন, তত দ্রুত শিক্ষা নিয়ে নতুন করে আরম্ভ করতে পারবেন।


ভারমর্ন স্যান্ডার্স বলেন, অভিজ্ঞতা খুবই শক্ত শিক্ষক। এটা প্রথমে আপনাকে পরীক্ষায় ফেলবে, তারপর শিক্ষা দিবে।


পড়ালেখায় সাধারণত কী হয়? প্রথমে একটা বই বা সিলেবাস থাকে। তা ছাত্রছাত্রীরা পড়ে। তারপর পরীক্ষায় বসে। কিন্তু বাস্তবজীবনে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয় ভিন্নভাবে। এটা প্রথমে আপনাকে পরীক্ষায় ফেলে, তারপর শিক্ষা দেয়।


জিগ জিগলার বলেন, ‘আপনি যদি পর্যাপ্ত সংখ্যক মানুষকে তাদের স্বপ্ন পূরণে, তারা যা চায় তা অর্জনে সহায়তা করেন, তবে আপনি জীবনে যেকোনো কিছু অর্জন করতে সক্ষম হবেন।’ নিজের ব্যাপারে বেশি চিন্তা করবেন না। জীবনে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিন। তারপর ধৈর্য ধরে লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করুন। এর মধ্যে মানুষকে তারা যা চায়, তাদের স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করুন। দেখবেন, আপনার স্বপ্ন, আপনার লক্ষ্যও পূরণ হয়ে গেছে।


আপনার একটা স্বপ্ন আছে। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে কেবল তত্ত্ব পাঠ করলেই হবে না। এর জন্য দরকার কঠোর পরিশ্রম। বিশ্বাস করলে কিছুই হয় না। কাজ করতে হয়। ডেভিড ব্লি বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রম ছাড়া সাফল্যের জন্য চেষ্টা করা মানে বীজ না বুনেই ফসল উঠাতে যাওয়া।’ কথাটা হাস্যকর মনে হলেও তা সত্য।


পৃথিবীতে দুই ধরনের মানুষ আছে। এক, যারা কাজ করে। আর দ্বিতীয়, যারা কাজ করবে বলে কথাই বলতে থাকে। প্রথম দলে যোগ দিন। সেখানে প্রতিযোগিতা কম।


এরপরও অনেকেই তো কঠোর পরিশ্রম করে। তবুও সফল হয় না কেন? ধরুন, আপনি গর্ত খুঁড়লেন। অনেক পরিশ্রম করলেন। অনেক বড় ও গভীর গর্ত খুঁড়লেন। তাতে হলো কী? কঠোর পরিশ্রমের সাথে আরও কিছু জিনিস দরকার। যেমন জ্ঞানী মানুষের সহযোগিতা। বলা হয়, জ্ঞানীদের সাথে থাকলে জ্ঞানী হবে, আর যদি তুমি বোকাদের রাজাও হও, তবুও তোমার ধ্বংস নিশ্চিত। আমরা তাদের মতোই হয়ে উঠি যাদের সাথে আমরা চলাফেরা করি। তাই সতর্কভাবে নিজের আশেপাশের মানুষের দিকে তাকান। কাদের সাথে আপনি চলাফেরা করেন? তারা কেমন? জ্ঞানী না বোকা?


অঙ্গীকার রক্ষা করুন। রাস্তার মাঝপথে কোনো ফলাফল নেই। গন্তব্যের পৌঁছার আগ পর্যন্ত থামবেন না। হাল ছাড়বেন না। আপনি যতদূর পথই পাড়ি দিন না কেন, গন্তব্যে না পৌঁছালে সব পরিশ্রমই পণ্ড হবে। তাই চেষ্টা করে যান। আপনি পারবেন।


অতীতে পড়ে থাকবেন না। অতীতে কারও কোনো ভবিষ্যৎ নেই। অতীতের দিকে, পিছনের দিকে তাকান বন্ধ করুন। আপনি যেমন পিছনের দিকে তাকিয়ে চলতে পারেন না, তেমন অতীতের দিকে নজর রেখে কখনো আপনার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন না। আপনি কখনোই নিজের ভালো ও উত্তম ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে পারবেন না, যদি পিছনের দিকে আপনার মন পড়ে থাকে। অতীতের দিনগুলো ভালো ছিল এটা সত্য কথা। আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু সামনের দিনগুলোও উত্তম হবে। ভবিষ্যৎ ভালো হবে। আমাদের সবচেয়ে বড় কৃতিত্বপূর্ণ কাজ সব ভবিষ্যতে পড়ে আছে। আমাদের তা করে দেখাতে হবে। অসাধারণ সব উপন্যাস, কবিতা, গল্প, নাটক আরও ভালো ভালো সবকিছু সৃষ্টির অপেক্ষায়।


হাসুন। মনখুলে হাসুন। আব্রাহাম লিঙ্কন বলেন, মানুষ যতটা খুশি হতে চায়, তার মন যতটা চায়, ততটাই খুশি হতে পারে, সুখী হতে পারে। সবচেয়ে খারাপ দিন বলব সেটাই, যেদিন আমার মুখে হাসি ছিল না।


হেলেন কেলার বলেন, সূর্যের দিকে মুখ রাখুন। এতে করে আপনি কোনো ছায়া দেখতে পাবেন না।


হাসিমুখে থাকুন। জীবন উজ্জ্বল, যদি মুখে হাসি থাকে। অসুস্থতার লক্ষণ যেমন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস। তেমন সুখের অভাব বা অসুখী হওয়াও ভুল চিন্তাভাবনাকে নির্দেশ করে।


সবসময় যা কিছু জানেন তারচেয়ে কম বলুন। কিছুদিন আগে আমি একটি ফুলদানিতে লেখা দেখলাম, ‘আমি যদি আমার মুখ বন্ধ রাখতাম তবে আজকে এখানে থাকতাম না।’ কথাটা আসলেই সত্য। সাধারণত আমাদের জিহ্বা আমাদের মস্তিষ্কের চেয়েও বেশি দ্রুত এবং আগে কাজ করে। তাই আকস্মিক যেকোনো কথা বলার আগে জিহ্বায় একবার কামড় দিন।


সূত্র ১৫: যে পথে বাধাবিপত্তি নেই তা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো অর্জনের দিকে ধাবিত করে না। আর যা কিছু মূল্যবান, কৃতিত্বপূর্ণ তার সবকিছুই অর্জন করতে শত বাধাবিপত্তি অতিক্রম করতে হয়। নরম্যান ভিনসেন্ট পেইলি বলেন, প্রতিটি সমস্যার মধ্যেই সমাধানের বীজ বোনা থাকে। যদি কোনো সমস্যা না থাকে, তবে বুঝতে হবে সমাধানের কোনো বীজও নেই।


সূত্র ১৬: অধ্যবসায়ী লোকজন ততক্ষণ পর্যন্ত চেষ্টা করে যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সাফল্য লাভ করে। আর এর বিপরীতে বহু মানুষ ততক্ষণে তাদের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা ত্যাগ করে। পথের শেষ না দেখেই হাল ছেড়ে দেয়। মনে রাখবেন, আপনি কী আছে সেটা বড় কথা নয়, যা কিছু আপনার কাছে আছে তা দিয়ে আপনি কী করেন সেটাই বড় কথা।


ধরুন, ডাকটিকেটের কথা। এগুলোর কোনো কাজ নেই যদি তা ডাকঘরেই পড়ে থাকে অথবা পথের মাঝখানে ঝরে পড়ে। চিঠিকে তার গন্তব্যে পৌঁছানোই তার দায়িত্ব। চিঠিকে গন্তব্যে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত ডাকটিকেটকে অধ্যবসায়ের সাথে চিঠির সাথে লেগে থাকতে হয়। এমন করে স্বপ্নের সাথেও লেগে থাকতে হয়।


চীন দেশে এক ধরনের বাঁশ গাছ আছে। এগুলোকে চাইনিজ বাঁশ বলে। এগুলোকে মাটিতে চারা রোপণ করে টানা চার বছর পরিচর্যা করতে হয়; সার ও পানি দিতে হয়, প্রতিনিয়ত যত্ন করতে হয়। কিন্তু পঞ্চম বছর সার ও পানি দিয়ে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যেই বাঁশ লম্বা হয়ে যায় প্রায় নব্বই ফুটের মতো। এখন কেউ যদি প্রশ্ন করে, চাইনিজ বাঁশ কি পাঁচ সপ্তাহে নব্বই ফুট লম্বা হয়, নাকি পাঁচ বছরে? অবশ্যই উত্তর হবে, পাঁচ বছর।


আমরা যদি হাল না ছাড়ি, যদি আমরা অধ্যবসায়ের সাথে এগিয়ে যাই, ধৈর্য ধরি, তবে অবশ্যই আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত ফসল ঘরে তুলতে পারব।


সূত্র ১৭: নিজের যা কিছু প্রকৃত অর্থে গুণাবলি আছে তাই নিয়ে এগিয়ে যান। প্রকৃত জিনিস খুঁজে পাওয়া কঠিন, কিন্তু যে কেউ তা দেখেই চিনতে পারে।


আপনি এ বিশ্বে এসেছেন আপনার যা কিছু প্রকৃত গুণাবলি আছে সেগুলোকে ভালোভাবে ব্যবহার করার জন্য। তাই আজই নিজের শক্তিশালী দিক খুঁজে বের করুন। এজন্য পড়তে পারেন সাকসেস থ্রো এ পজিটিভ মেন্টাল এটিটিউড বই (Success Through A Positive Mental Attitude)। মূল লেখক: নেপোলিয়ন হিল ও ডব্লিউ. ক্লেমেন্ট স্টোন। অনুবাদ: ফজলে রাব্বি। ঢাকা, সাফল্য প্রকাশনী, ২০১৭।


সূত্র ১৮: আল্লাহ আপনার সাথে থাকলে আর কারও দরকার নেই। আল্লাহ সাথে থাকলে যেকোনো লড়াইয়ে আপনার জয় পাবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এজন্য বলা হয়, আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখুন এবং কিছু করুন।


প্রতিদিন সকাল বেলা উঠে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। রাতে ঘুমানোর সময় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। কৃতজ্ঞতার মনোভাব বজায় রাখুন।


সূত্র ১৯: আপনি কি প্রস্তুত? আপনি যদি জীবনকে ভুল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখেন, তবে জীবনে কেবল দুঃখদুর্দশা ছাড়া আর কিছুই দেখবেন না। আপনি যদি একশ টাকা গরিব মানুষকে দান করতে যান তবে তা কত বড় দেখাবে, কিন্তু মুদি দোকানে গেলে মনে হবে এত অল্প টাকায় কী পাওয়া যায়! আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক এমনই। সবচেয়ে বড় কথা, আপনি কি খুঁজছেন? কেউ কেউ সারাজীবন অভিযোগ করেই কাটায় যে গোলাপের মধ্যে কাঁটা আছে। অথচ কাঁটার জন্যই আমাদের ধন্যবাদ দেয়া উচিত।


জমিতে ফসল ফলাতে গেলে বৃষ্টি দরকার। এখন আপনি যদি কাদা মাটির জন্য অভিযোগ জানান, তবে বৃষ্টির জন্য দোয়া করা উচিত নয়। হার্ব কোহেন বলেন, আমাদের আশেপাশের জিনিসপত্র কেমন তা অনুযায়ী আমি আপনি দেখি না। আপনি জিনিসপত্র ও আপনার আশেপাশের পরিবেশ পরিস্থিতিকে সেভাবেই দেখেন যেভাবে আপনি নিজে আছেন। We see things as we are.


আমি মহান সব বই পড়ার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করি। কারণ এসব বই থেকে মহান সব ব্যক্তিদের জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো জানা যায়। আর চ্যালেঞ্জগুলো তারা কীভাবে অতিক্রম করেছে তা জানা যায়। এ থেকে আপনি শক্তি ও সাহস পাবেন। এ ধরনের মহান সব তথ্য আপনাকে পিপাসার্ত হওয়ার আগেই কুয়া খনন করতে উৎসাহ দিবে, ক্ষুধার্ত হওয়ার আগে বীজ বপণ করবেন।


এ থেকে আপনি বুঝতে পারবেন জীবন আসলে দেখার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। আমরা আমাদের স্বপ্ন অনুযায়ী, রূপকল্প (ভিশন) অনুযায়ী পথ চলি। জীবন কেবল একটা প্রত্যাশার বিষয়। আমরা যেমন প্রত্যাশা করি তেমনই কাজ করি।


সূত্র ২০: সুখী জীবনযাপনের গোপন রহস্য হচ্ছে মানুষকে দান করা। আমাদের যা কিছু আছে তা থেকেই অল্প হলেও কিছু দেয়া যায়। কিছু দিলেই বহু কিছু পাওয়া যায়। জি. ডি. বোর্ডম্যান বলেন, বেশি ফসল ওঠানোর উপায় হচ্ছে আপনাকে প্রথমে বীজ বুনতে হবে। সেরকম আমাদেরকেও আগে দিতে হবে, তারপরই বহু কিছু পাওয়া যাবে।


সূত্র ২২: আমার সাফল্যের গোপন রহস্য হচ্ছে আমার দৈনন্দিন জীবনের রুটিন বা কাজকর্মের অভ্যাসের মধ্যে। আমি আজকে যা কিছু করব, তাই আগামীদিন হয়ে উঠব।


সূত্র ২৩: আপনি যদি জীবনে উত্তম কাজ করেন, তবে একে সমালোচনার লোকেরও দেখবেন অভাব নেই। ডেনিস হোলি বলেন, আপনি একজন ভালো মানুষ। দুনিয়ার লোকজন আপনাকে ভালো মানুষ দেখে ভালো ব্যবহার করবে, ন্যায্য ব্যবহার করবে এমন আশা করা যেন আপনি একটা গরুর সামনে দাঁড়িয়েছেন এই আশা নিয়ে যে গরু আপনাকে গুঁতা দিবে না, কারণ আপনি সবজি খান।


সূত্র ২৪: আপনার সৃজনশীলতা এবং কল্পনাশক্তি দিয়ে প্রথাগত ব্যবস্থাকে নাকচ করুন। আইডিয়া এমন জিনিস যা খরগোশের মতো। আপনি যদি কয়েকটিকে ধরতে পারেন এবং কীভাবে ধরতে হয় শিখতে পারেন, তবে আপনি খুব সহজেই দেখবেন ডজন ডজন ধরতে পারছেন।


বলা হয়, কোনকিছুই কাজ করবে না, যদি না কোন স্বপ্ন থাকে। আপনি যত বেশি স্বপ্ন দেখবেন, আপনি তত বেশি কাজ করতে, উদ্যোগ নিতে উদ্দীপ্ত হবেন।


প্রথম কথা হচ্ছে, আপনার জীবনে একটি আইডিয়া দরকার। সৃজনশীল ও আপনার কল্পনাশক্তি নিয়ে বাঁচার জন্য সাহস দরকার। তাই সাহসী হোন। আপনার আইডিয়াকে কাজে লাগান। কোন আইডিয়াই ফেলনা নয়। রবার্ট শুলার বলেন, “যেহেতু স্বপ্ন দেখতে এক পয়সাও লাগে, তাই আপনার উচিত জীবনের ছোটোখাটো সমস্যায় জড়িয়ে না পড়ে বড় স্বপ্ন দেখুন।” জীবনে হঠাৎ একটি আইডিয়া জ্বলে উঠতে পারে যার হয়তো লক্ষ কোটি টাকা দাম। যেকোন জিনিসকে যেমন আছে তেমন তো দেখবেনই, তার পাশাপাশি যেকোন জিনিস কেমন ভবিষ্যতে হতে পারে তাও চিন্তা করুন। নিজের কল্পনাশক্তির প্রয়োগ করুন। যেকোন জিনিসে দূরদর্শিতার চর্চা করুন।