বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই, ২০২১

কারণ এবং ফলাফল সূত্র

কারণ এবং ফলাফল সূত্র

কারণ ও ফলাফল সূত্র-এটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মূলভিত্তি। এতে বলা হয়েছে, যা কিছু ঘটে তার জন্য সবসময়ই একটি কারণ থাকে। প্রতিটি ফলাফলের জন্য একটি কারণ থাকে, আমরা জানি বা না জানি। এর অর্থ হল আপনি যদি কী অর্জন করতে চান সে সম্পর্কে স্পষ্ট হতে পারেন, যেমন অর্থনৈতিক স্বাধীনতার মতো লক্ষ্য সম্পর্কে স্পষ্ট হতে পারেন, তবে আপনি কেবল অন্য সফল ব্যক্তিরা কী করে তা খুঁজে বের করবেন এবং আপনিও একই অভ্যাস পালন করবেন। তাহলেই দেখবেন আপনিও সফল ব্যক্তিদের মতো সাফল্য অর্জন করেছেন। সাফল্য কোনও কাকতালীয় নয়। ব্যর্থতা কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। উভয়ই কারণ ও ফলাফলের সূত্র মেনে চলে।


প্রথমবারের চেষ্টায় কোনকিছু ঠিকভাবে কাজ করে না।


প্রথম চেষ্টাতেই আপনি সফল হবেন, তা নিশ্চিত নয়। প্রথমবার যেকোনো কাজে ব্যর্থ হতে পারেন। তাই বলে, থেমে থাকা যাবে না। লেগে থাকুন।


নিজের চেষ্টায় কোটিপতি হতে গেলে কী লাগে? আমি এ সম্পর্কে অনেক বইপত্র পড়লাম, প্রতিবেদন, সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন পড়ালাম। নিজের চেষ্টায় কোটিপতি হয়েছে এমন ব্যক্তিদের জীবনী পড়লাম। তারপর, আমি খুঁজে পেলাম, কোটিপতি হওয়া তাদের গোপন চাবিকাঠি নয়। তাদের মূলভিত্তি হচ্ছে নিজের চেষ্টায় কোটিপতি হতে যে ধরনের ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হয় সেই ধরনের ব্যক্তিত্ব অর্জন করা।


এখন আপনি যদি নিজের চেষ্টায় কোটিপতি না হয়ে থাকেন, তবে এটা নিশ্চিত থাকতে পারেন, আপনাকে নিজের চেষ্টায় কোটিপতি হতে হলে আগে সেই ব্যক্তিত্ব অর্জন করতে হবে যেই ব্যক্তিত্ব আপনাকে কোটিপতি বানাবে। এখানে ব্যক্তিত্ব গঠন করতে হবে আগে, তারপর আপনি কোটি টাকার মালিক হতে পারবেন।


বলা হয়, আপনি এমন কিছু যা আগে অর্জন করেননি, তা অর্জন করতে গেলে, আপনাকে এমন ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হবে যা আপনি এখনও নন। এটা এমন এক ধরনের গুণ যা আপনাকে বাহ্যিকভাবে ধনী হওয়ার আগে নিজের ভেতরে অর্জন করতে হবে। আপনাকে ভেতর থেকে চরিত্রবান হতে হবে, দৃঢ়সঙ্কল্পের অধিকারী, শৃঙ্খলাবোধ, সিদ্ধান্ত-গ্রহণ এবং আপনার শক্তিশালী দিকগুলোকে আরও মজবুত করতে হবে। আপনাকে সর্বোপরি, এমন এক উন্নত মানুষে পরিণত হতে হবে যা আপনি পূর্বে ছিলেন না। এর মানে নিজের চেষ্টায় কোটিপতি হতে গেলে আপনাকে সর্বোপরি এক উন্নত মানুষ হতে হবে।


নিজের চেষ্টায় কোটিপতি হওয়ার মানে আরও বেশি খাবার খাওয়া নয়, আরও বেশি কাপড়-চোপড় পরিধান করা নয়। এর মানে হচ্ছে, আপনি ভেতরগতভাবে কেমন চরিত্রের মানুষ, আপনি কেমন মানুষদের সাথে সময় কাটান, আপনি কেমন জীবনযাপন করতে চান তার প্রতিফল।


আমি নিজের চেষ্টায় কোটিপতি হয়েছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে কিছু গুণ খুঁজে পেয়েছি। আপনি যদি এগুলো চর্চা করেন, তবে আপনিও নিজের চেষ্টায় কোটিপতি হতে পারবেন। এগুলো হচ্ছে:


১। সব ধরনের দক্ষতাই শেখা যায়।


২। আপনি হয়তো একটি মাত্র দক্ষতা শিখলেই আপনার আয় দ্বিগুণ করতে পারেন।


৩। বড় স্বপ্ন দেখুন। মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। তাই বড় বড় স্বপ্ন দেখুন। স্বপ্ন দেখুন আপনি কয়েক বছর পরে কেমন থাকতে চান, কেমন স্বাস্থ্য চান, কেমন পরিবার চান। একটি কাগজে কলম দিয়ে লিখুন। একে স্বপ্নের তালিকা বলতে পারেন। আপনি কী কী চান, কী স্বপ্ন দেখেন, একটি খাতায় লিখে ফেলুন।


৪। আপনি যা কিছু করতে ভালোবাসেন, তাই করুন। যারা সফল তারা তাদের ভালোবাসার কাজ করে।


৫। দক্ষতা অর্জনের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হোন। কোন একটি কাজে সর্বোচ্চ দক্ষতা অর্জনের জন্য নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করুন। উক্ত দক্ষতা সম্পর্কে বই পড়ুন, সংবাদপত্র, প্রতিবেদন, ম্যাগাজিন পড়ুন, প্রশিক্ষণ নিন এবং উক্ত দক্ষতাসম্পন্ন লোকজনের সাথে দেখা করুন ও কথা বলুন, তাদেরকে প্রশ্ন করুন। এভাবে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করুন।


৬। আপনি যা করেন, সেই ক্ষেত্রে ১ নম্বর হওয়ার চেষ্টা করুন। এর জন্য যা যা দক্ষতা, যোগ্যতা, শিক্ষা দরকার তা গ্রহণ করুন। এখন সবকিছুই শেখা যায়। শিখুন। প্রশিক্ষণ নিন। আপনি যা কাজ করেন, সেই কর্মক্ষেত্রে ১ নম্বর হয়ে উঠুন। ১ নম্বর হওয়ার লক্ষ্য নিন। আজই সিদ্ধান্ত নিন। কঠোর পরিশ্রম করুন। এখন ১ নম্বর হতে গেলে এক সপ্তাহ বা এক মাসে হয়ে যাবেন তা নয়। তবে চেষ্টা করুন। যতক্ষণ পর্যন্ত না ১ নম্বর হচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত চেষ্টা করে যান।


৭। আপনি যা কিছু অর্জন করতে চান, তা অর্জনের জন্য দাম দিতে হবে। এই দাম হতে পারে আপনার সময়, শ্রম, বুদ্ধি, আবেগ বা অন্য যেকোনো কিছু।


৮। আপনার মেধা ও দক্ষতাকে শাণিত করুন। আপনার শক্তিশালী দিকগুলোকে নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে আরও তীক্ষ্ণ ও ধারাল করুন। এগুলোর নিয়মিত চর্চা করুন। পিটার ড্রুকার প্রায়ই বলতেন, ‘আপনি কীসে সবচেয়ে ভালো?’


নিজের চেষ্টায় কোটিপতি হওয়ার পরবর্তী ধাপ হচ্ছে


৯। নিজেকে নিজেই কাজের দায়িত্ব দিন। নিজের ওপর দায়িত্ব আরোপ করুন। অন্য কেউ আপনাকে চাকরি দেওয়ার আগে, নিজেই নিজেকে চাকরি দিন, দায়িত্ব দিন, কাজ দিন। নিজেই নিজের দায়িত্বের জন্য জবাবদিহিতা নিন। গবেষণায় দেখা গেছে, সমাজের উচ্চবিত্ত ৩% মানুষ নিজেকে নিজেই কাজের দায়িত্ব দেয়। তারা নিজেকে নিজে চাকরি দেয়। তারা নিজেকে নিজের দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ দেয়।


১০। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটি পরিষ্কার ও স্পষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করুন। এতে গন্তব্যে যাওয়ার মতো স্পষ্ট মানচিত্রে পরিণত করুন। একটি পরিষ্কার দিকনির্দেশনা থাকলে কাজ করতে এবং এগিয়ে যেতে সহজ হয়। আপনাকে লক্ষ্যকেন্দ্রিক হতে হবে। যত সফল ব্যক্তি আছে, তারা সকলেই লক্ষ্যকেন্দ্রিক। কোটিপতি এইচ.এল. হান্টকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়: আপনার সাফল্যের গোপন রহস্য কী? তিনি বলেন,

প্রথম, আপনাকে আপনার লক্ষ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ও পরিষ্কার হতে হবে, এটা অর্জনের জন্য পরিকল্পনা করতে হবে।


দ্বিতীয়, লক্ষ্য পূরণের জন্য কী দাম দিতে হয়, সেই দাম পরিশোধ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে।


আপনি আজকে যেখানে এসেছেন, তা হচ্ছে আপনি যেই দাম পরিশোধ করেছেন, সেই দামের বিনিময়েই আজকের অবস্থানে আছেন। এখন আপনার নিজেকে জিজ্ঞেস করতে হবে, আপনি আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য কী ধরনের দাম পরিশোধ করতে হবে। তারপর সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি পরিকল্পনা করুন। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিদিন কাজ করুন।


প্রতিদিন আপনার লক্ষ্য সম্পর্কিত একটি কাজ করুন। আপনার লক্ষ্য পূরণের জন্য, আপনার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে প্রতিদিন কাজ করুন। একটি কাজ হলেও করুন।


১১। পরবর্তী কাজ হচ্ছে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনাকে প্রত্যাখ্যান করুন। ব্যর্থ হওয়ার চিন্তাও বাদ দিন। কেবল সাফল্যের চিন্তা করুন। সাফল্য কীভাবে নিশ্চিত করা যায় সেই কর্মপন্থা তৈরি করুন। সাফল্য নিশ্চিত করার একাধিক পন্থা বা পরিকল্পনা করুন। এটা কাজ না করলে এটা এটা। এভাবে একটি পরিকল্পনার মধ্যে একাধিক উপ-পরিকল্পনা তৈরি করুন।


তথ্যসূত্র: ১। কারণ এবং ফলাফল সূত্র - The Law of Cause and Effect

২। নিজের চেষ্টায় কোটিপতি হওয়ার গোপন রহস্য - 

Secrets Of Self Made Millionaires by Brian Tracy

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন