বৃহস্পতিবার, ২২ জুলাই, ২০২১

ব‌ই পর্যালোচনা: ক্রিয়েটিভিটি অ্যান্ড প্রবলেম সলভিং। ব্রায়ান ট্রেসি।



#ব‌ই_পর্যালোচনা:

ক্রিয়েটিভিটি অ্যান্ড প্রবলেম সলভিং: ব্রায়ান ট্রেসি

Creativity and problem solving by Brian Tracy

সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধান

সারমর্ম লিখেছেন ফজলে রাব্বি


প্রকাশনা: AMACOM, American Management Association

প্রথম প্রকাশ, ২০১৪

© 2015 Brian Tracy

মূল্য: ২৫০ টাকা

পৃষ্ঠা: ১২৮


ক্রিয়েটিভিটি অ্যান্ড প্রবলেম সলভিংকে বাংলায় বলা যেতে পারে সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধান। 


একটি নতুন আইডিয়া বা অন্তর্দৃষ্টিই আপনার পেশাগত জীবন বা একটি কোম্পানির নতুন গতিপথ নির্ধারণ করে দিতে পারে।


আপনি যদি আপনার চিন্তার গুণগতমান বৃদ্ধি করতে পারেন, তবে আপনার জীবনযাপনের গুণমানও বৃদ্ধি করতে পারবেন।


বেশির ভাগ মানুষ সৃজনশীল চিন্তা খুবই কম করে অথবা একেবারে করে না বললেই চলে। কেন মানুষ সৃজনশীল চিন্তা করে না? কারণ তারা এক ধরনের স্বস্তিদায়ক বলয়ের মধ্যে আটকা পড়েছে। যেমন আছে তেমনই থাকতে চায়। নতুন কোনো আইডিয়া, নতুন কোনো উপায়, পন্থা বা বুদ্ধি কাজে লাগাতে অস্বস্তি বোধ করে। ব্যক্তির মধ্যকার এমন জড়তাকেই আমরা স্বস্তিদায়ক বলয় বলেছি, যা তাকে জীবনে অগ্রগতি করতে, উন্নত হতে বাধা দেয়। তারা কেবল তাদের অতীত নিয়ে পড়ে থাকে, অতীতে কী করেছে, অতীতে কী হয়েছে-তা নিয়েই কথা বলে চলে। এজন্যই এমারসন বলেছেন, ‘ভূতের ভয় যেমন মানুষের মনকে আকঁড়ে ধরে রাখে, তেমন বোকা ব্যক্তির বোকামিও তাকে আকঁড়ে থাকে।’


সৃজনশীলতার আসল উৎস


আপনার সৃজনশীলতাকে নির্ধারণ করে কী কী বিষয়? তিনটি বিষয়।

এক, আপনার অতীত অভিজ্ঞতা।

দুই, বর্তমানের শক্তি।

তিন, আপনি নিজেকে নিজের মনের ভেতর কীভাবে দেখেন তথা স্ব-চিত্রের ওপর সৃজনশীলতার আসল উৎস বিদ্যমান।


অতীতে আপনি কাউকে কোনো আইডিয়া বলেছেন, সেই আইডিয়া শুনে তারা আপনার সাথে সায় দিয়েছে, নাকি হাসাহাসি করেছে? এমন অভিজ্ঞতার ওপর আপনার আগামী সৃজনশীলতা অনেকাংশে নির্ভর করে। আপনি যদি অতীতে কোনো আইডিয়া শেয়ার করে অপমান হয়ে থাকেন, তবে আপনি চিন্তা করবেন, যেহেতু এমন আইডিয়া অন্য কারও মাথায় না এসে আপনার মাথায় এসেছে, তার মানে এ আইডিয়া কোনো ভালো আইডিয়া নয়।


আপনারা যখন আড্ডা দেন, একসাথে বসে গল্পগুজব করেন, তখন কি কারও কোনো আইডিয়া শুনে অন্যরা বাধা দেয়, সমালোচনা করে, নাকি সেই আইডিয়াকে উৎসাহ দেয়? বর্তমানের এসব আচরণের ওপরও আপনার সৃজনশীলতা নির্ভর করে। এজন্যই বলা হয়ে থাকে, বুদ্ধিমান ও ইতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন মানুষের সাথে চলুন।


তিন নম্বর সৃজনশীলতার উৎস হচ্ছে আপনি নিজেকে নিজের মনের ভেতর কীভাবে দেখেন। একে স্ব-চিত্র বা আত্ম-চিত্র বলা হয়। নিজের ভেতর থেকে নিজেকে অসাধারণ এক সৃজনশীল ব্যক্তি হিসাবে চিন্তা করুন। নিজেকে বলুন, ‘আমি বুদ্ধিমান, আমি বুদ্ধিমান, আমি বুদ্ধিমান।’ নিজেকে সবসময় একজন বুদ্ধিমান ও প্রতিভাবান ব্যক্তি হিসাবে কল্পনা করুন।


হাতে কলমে কাজ করুন।

আজকেই নিজের লক্ষ্য ও এর সামনে সবচেয়ে বড় বাধাকে খুঁজে বের করুন। তারপর নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, এখন এ বাধা দূর করতে কী পদক্ষেপ নিবেন?


বাংলাদেশে চারটি গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে বেশি চলতি ব্যবসা হচ্ছে:

হাসপাতাল / চিকিৎসা খাত

শিক্ষা খাত

খাবার

পোশাক


ধরুন, আপনি চা বানালেন। চায়ের মধ্যে এক চামচ চিনি দিলেন। তারপর চা খেলেন। কেমন? চা একটু তিতা তিতা স্বাদের মনে হচ্ছে। কারণ আপনি চিনি দিয়েছেন, কিন্তু নাড়া দিয়ে চিনিটা চায়ের মধ্যে মিশিয়ে নেননি। ঠিক তেমন আমাদের সকলের মধ্যেই সৃজনশীলতা বিদ্যমান। আমাদের কেবল একটু নাড়া দিয়ে উদ্দীপ্ত করতে হবে। আপনার সৃজনশীলতা তিনটি জিনিস দ্বারা উদ্দীপ্ত হবে।


  • প্রবলভাবে আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য

  • সমস্যায় জর্জরিত হলে

  • অত্যন্ত মনোযোগের সাথে প্রশ্ন করলে


আপনি যত বেশি একটি লক্ষ্যকে চাইবেন, তা অর্জনের জন্য চেষ্টা করবেন, তত বেশি তা পূরণের জন্য সৃজনশীল উপায় খুঁজে পাবেন। আপনি একটি লক্ষ্য নিন। একটি কাগজে লিখে রাখুন। এ লক্ষ্য পূরণ করুন। দেখবেন, এতে করে আপনার আত্মবিশ্বাস কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।


এরপর রয়েছে প্রবলভাবে আক্রান্ত সমস্যায় থাকলে সৃজনশীলতা উদ্দীপ্ত হয়। এতে করে আপনি নিজেকে প্রশ্ন করতে সুযোগ পান যে আপনার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কী, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী।


আরেকটি হচ্ছে অত্যন্ত মনোযোগের সাথে প্রশ্ন করলে। আপনার মধ্যে কৌতূহল থাকতে হবে। আশেপাশের সবকিছু নিয়ে প্রশ্ন করতে হবে। পিটার ড্রুকার বলতেন, আমি পরামর্শক নই, আমি অপমানকারী। আমি মানুষকে প্রশ্ন করি। এমন সব প্রশ্ন করি যা তারা সাধারণত নিজেদের করতে চায় না।


মাটির চুলাতে যেমন তুষ দিয়ে আগুনের তীব্রতাকে বৃদ্ধি করা হয়, তেমন সৃজনশীলতাকেও আপনার অনুমানগুলো পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে বৃদ্ধি করতে পারেন। আপনার অনুমানগুলো কী? বলা হয়, প্রতিটি ব্যর্থতার পিছনে থাকে ভুল অনুমান। আপনি যা অনুমান করেছিলেন, মনে করেছিলেন, তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। নিজেকে প্রশ্ন করুন, আমার অনুমান কী কী? আমার অনুমান ভুল হলে কী হবে?


মাইন্ডস্টর্মিং তথা মনকে আলোড়িত করার পদ্ধতি


একটি প্রশ্নের উত্তরে ২০টি উত্তর খুঁজে বের করতে নিজের মস্তিষ্ককে চাপ দিন।


পরবর্তের চারটি ধাপ


এক, আপনি কিছু জিনিস আরও বেশি বেশি করতে পারেন।

দুই, আপনি কিছু জিনিস আরও কম কম করতে পারেন।

তিন, আপনি সম্পূর্ণ নতুন কিছু আরম্ভ করতে পারেন।

চার, আপনি কিছু জিনিস করা একদম বন্ধ করে দিতে পারেন।


মনকে আলোড়িত করার পদ্ধতিকে কাজে লাগাতে গেলে, আইডিয়া বা বুদ্ধির গুণগত মানের ব্যাপারে চিন্তা না করে কত বেশি আইডিয়া আসে তার দিকে নজর দিন। ২০টি উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। সেখান থেকে অন্তত একটি আইডিয়া নিজে কাজে নেমে পড়ুন। দেরি করবেন না। সাথে সাথে কাজে নেমে পড়ুন।


আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হাতে নিন। এবার এর সমাধানে কাগজে ২০টি উত্তর, আইডিয়া বা বুদ্ধি, যাই মাথায় আসে লিখে ফেলুন। তারপর সেখান থেকে অন্তত একটি আইডিয়া নিয়ে সাথে সাথে কাজে নেমে পড়ুন।


সৃজনশীলতাকে উদ্দীপ্ত করতে প্রশ্ন করুন


সবসময় জিজ্ঞেস করুন, আমরা কীভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি? লেখক বেঞ্জামিন ট্রেগোয়ে বলেন, ‘সময়ের সবচেয়ে খারাপ ব্যবহার হচ্ছে যে কাজ করার দরকার নেই তাই সবচেয়ে ভালোভাবে করা।’ এজন্য সবসময়ই জিজ্ঞেস করবেন, আমরা কীভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি?


ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিনের এক গবেষণা হয় ২২ বছর ধরে। সেখানে ১৫০ জন গবেষক মিলে ২২ হাজার কোম্পানির ওপর দশ বছরের তথ্যউপাত্ত নিয়ে ফলাফল প্রকাশ করেন। গবেষণার বিষয়সূচি ছিল: একটি কোম্পানি বা দেশের ব্যবস্থাপনার দক্ষতা নির্ভর করে কী কী ভিত্তি বা নির্ধারকের ওপর। তারা খুঁজে পান যে এ ব্যাপারটা তিনটি জিনিসের ওপর ভিত্তি করে হয়:

১। স্পষ্ট ও পরিষ্কার উদ্দেশ্য তৈরি করা

২। পারফরম্যান্স তথা কর্মদক্ষতা পরিমাপ করার পদ্ধতি থাকে

৩। অসাধারণ পারফরম্যান্স করলে পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকে


ইন্টেলের গর্ডন মুর ও এন্ড্রু গ্রোভ একদিন গ্রোভের অফিসে বসে কথা বলছেন। তারা নিজেদের প্রশ্ন করেন, আজকে যদি ইন্টেলের ডিরেক্টর বোর্ড আমাদেরকে বরখাস্ত করে নতুন ম্যানেজমেন্টকে নিয়োগ দেয় তবে এই নতুন ম্যানেজমেন্ট আমাদের থেকে ভিন্ন কী কাজ করত?


আমরা কীভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি? আমরা কী কাজ করার চেষ্টা করছি? আমরা কী ধরনের ফলাফল আশা করছি?


নিজেকে আরও জিজ্ঞেস করুন। আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের আর কী কী উপায় আছে? সবসময় মনে রাখবেন, যেকোনো কাজকে আরও কার্যকর উপায়ে সম্পাদন করার উপায় আছে। আপনাকে কেবল তা খুঁজে বের করতে হবে। আপনি হয়তো জানেন না। আপনার মেধা ও সম্পদকে আরও উত্তম উপায়ে কাজে লাগাতে পারেন। আপনি কেবল তা খুঁজে বের করতে হবে।


হাতে কলমে কাজ করুন। আপনি আপনার ব্যবসায় কী অর্জন করতে চান তা বিশ থেকে পঁচিশটি শব্দে স্পষ্ট ও পরিষ্কার করে লিখুন।


তারপর, আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিশ থেকে পঁচিশটি শব্দে পরিকল্পনা লিখুন। আমরা ঠিক কীভাবে কাজটি করার চেষ্টা করছেন?


ব্রেইনস্টর্মিং তথা মাথা খাটানো। ব্রেইনস্টর্মিং এর মাধ্যমে আপনার দলের প্রকৃত ক্ষমতাকে বের করে আনুন।


কীভাবে ব্রেইনস্টর্মিং পদ্ধতি কাজে লাগাবেন? ব্রেইনস্টর্মিং পদ্ধতিকে কাজে লাগাতে এখানে ৬টি উপায় বর্ণনা করা হচ্ছে।


১। ব্রেইনস্টর্মিংয়ের জন্য সবচেয়ে ভালো হয় চার থেকে সাতজন সদস্য হলে। চারজনের কম হলে বেশি সংখ্যক আইডিয়া আসবে না। আর সাতজনের বেশি হলে অনর্থক কথা বেশি হবে এবং কাজের কাজ কিছুই হবে না।


২। ব্রেইনস্টর্মিং সেশনের আদর্শ সময়কাল হচ্ছে পনেরো থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। ত্রিশ মিনিটকে সন্তোষজনক বলা যায়। সময়সীমা বলা ব্রেইনস্টর্মিংয়ের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কখন শুরু করবেন এবং কখন শেষ করবেন, তা আগে থেকে বলে নিবেন। এতে করে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এক ধরনের ন্যূনতম চাপ অনুভব হবে, যা ব্রেইনস্টর্মিংয়ের জন্য উত্তম।


৩। একটি ব্রেইনস্টর্মিং সেশনের আসল লক্ষ্য হচ্ছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যত বেশি আইডিয়া বের করা যায়।


৪। ব্রেইনস্টর্মিং সেশনের কথাবার্তা সম্পূর্ণ ইতিবাচক হতে হবে। এর মানে হচ্ছে যেকেউ যেকোনো আইডিয়ার ব্যাপারে কথা বলতে পারে। আইডিয়া ভালো কি মন্দ তা নিয়ে কেউ যেন সাথে সাথে বিচার করতে না বসে। আইডিয়া আসা মাত্রই তা নিয়ে হাসাহাসি করা যাবে না। আলাপ-আলোচনা করুন। হাসাহাসি করুন। মজা করুন।


৫। ব্রেইনস্টর্মিং সেশন আরম্ভ করার পূর্বে কে দলনেতা হবে তা নিশ্চিত করে নিন। দলনেতার অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে প্রত্যেকেই যাতে কিছু অবদান রাখতে পারে, সেই ব্যাপারে সকলকে সুযোগ করে দেয়া।


৬। প্রতিটি ব্রেইনস্টর্মিং সেশনে অবশ্যই একজন রেকর্ডার হিসেবে থাকতে হবে। আইডিয়াগুলো লিখে রাখার জন্য কেউ একজনকে দায়িত্ব দিতে হবে। একজন তথ্য টুকে রাখবে।


সাধারণত সদস্য সাতজনের বেশি হলে আমি দুইভাগে বা একাধিক ভাগে ভাগ করে ছোট ছোট টেবিলে সব দলকে আলোচনা করতে বসিয়ে দিই। আমি আইবিএম এবং অন্যান্য কোম্পানিতে কাজ করতে গিয়ে এমন করেছি। তাদেরকে আলাদা আলাদা টেবিলে বসিয়ে দিয়ে এক টেবিলের সাথে অন্য টেবিলের প্রতিযোগিতার আয়োজন করতাম। এতে করে অসাধারণ সব আইডিয়া বের হয়ে আসত।


কিছু গুরুত্বপূর্ণ কলাকৌশল


নিজেদের মধ্যে শূন্যস্থান পূরণ করার মাধ্যমে ব্রেইনস্টর্মিং সেশন পরিচালনা করুন।


১। আমরা আমাদের বিক্রয় আগামী ৯০ দিনের মধ্যে দ্বিগুণ করতে পারব যদি . . . .

২। আমরা পণ্য উৎপাদন ব্যয় এবং পরিবহণ খরচ ২০ শতাংশ হ্রাস করতে পারব যদি . . . .

৩। আমরা এই বাজারের সেরা সরবরাহকারী হতে পারব যদি . . . .


এভাবে বিভিন্ন প্রশ্ন, বক্তব্য প্রভৃতি রেখে সেশন পরিচালনা করুন। চিন্তা করবেন যেন একটি উত্তম সমাধান আছে। আপনাদের কেবল তা খুঁজে বের করতে হবে।


আপনার ব্যবসা বা কোম্পানির একটি সমস্যা বা লক্ষ্য নিন যা আপনার ব্যবসায় সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলবে।


আপনার ব্রেইনস্টর্মিং দল তৈরি করুন। তাদেরকে এ অধ্যায়ের নিয়মাবলি অনুসারে পরিচালিত করুন। যত বেশি সম্ভব আইডিয়া বা সমস্যার সমাধান আসতে দিন এবং তা লিখে রাখুন। এতে করে আপনি অসাধারণ সব ফলাফল পাবেন, তা আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি।


আশাবাদ হচ্ছে প্রগতির মূল চাবিকাঠি


আশাবাদের মনোভাব বজায় রাখতে দুইটি পদ্ধতি ব্যবহার করুন।


এক, আপনি কী করতে চান এবং কীভাবে করবেন তা নিয়ে সবসময় চিন্তা করুন এবং কথা বলুন। আশাবাদী লোকজন সকাল-সন্ধ্যা-রাত, সবসময় তাদের লক্ষ্য নিয়ে চিন্তা করে। তারা দুনিয়াকে সুযোগে পরিপূর্ণরূপে দেখে এবং সবসময় কীভাবে সেই লক্ষ্য অর্জন করা যায় বা কোনো সমস্যা সমাধান করা যায় তাই নিয়ে চিন্তা করে।


দুই, প্রত্যেক ব্যক্তি বা প্রতিটি ঘটনার ভালো দিক খুঁজে দেখে। আশাবাদীরা মনে করে প্রতিটি সমস্যার একটি সমাধান নিশ্চয় আছে। তারা সবসময় যেকোনো ঘটনার ভালো দিক বা কাজে লাগে এমন সুযোগের প্রত্যাশায় থাকে।


আশাবাদীদের ভাষা


আশাবাদীরা একটি কঠিন সমস্যাকে ‘পরিস্থিতি’ বা ‘অবস্থা’ বলে। যেহেতু অবস্থা বা পরিস্থিতি ভালোও না, মন্দও না, একটি নিরপেক্ষ অবস্থা, তাই এ নিয়ে অতি উদ্বেগ প্রকাশের কিছু নেই। আপনি হয়তো একটি সমস্যায় পড়লে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বেন, কিন্তু একটি পরিস্থিতি বা অবস্থায় পড়লে তা নিয়ে তত বেশি উদ্বিগ্ন হবেন না।


এর চেয়েও ভালো শব্দ হচ্ছে ‘চ্যালেঞ্জ’। কোনো সমস্যায় পড়লে একে চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখুন।


সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি একে ‘সুযোগ’ বলে দেখেন। প্রতিটি সমস্যার মধ্যেই কোন না কোন সুযোগ থাকে। আপনাকে কেবল তা খুঁজে বের করতে হবে। যখনই কোনো সমস্যায় পড়বেন, তখন জিজ্ঞেস করুন, ‘সমস্যা কী?’ প্রশ্ন আপনার অবচেতন মস্তিষ্ককে উদ্দীপ্ত করে। এ প্রশ্ন করার পর আপনার অবচেতন মস্তিষ্ক ব্যাপারটিকে সুযোগ হিসাবে দেখবে, এ সমস্যার মধ্যে আপনার জন্য কী সুযোগ আছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে।


সমস্যার মধ্যে কোনো এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা খুঁজুন। আপনি এ বাধা বা সমস্যা থেকে কী শিখলেন?-এমন প্রশ্ন নিজেকে করুন। এতে করে এসব শিক্ষা আপনাকে ভবিষ্যতে সফল হতে সাহায্য করবে। আজই আপনার ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত জীবনের সবচেয়ে বড় বাধা বা সমস্যাকে খুঁজে বের করুন।


মনমস্তিষ্কের জন্যও পুষ্টিকর খাবার দরকার


আপনি যেমন দেহের জন্য পুষ্টিকর খাবার খান, সুষম খাবার খেলে যেমন দেহ ভালো থাকে, তেমন মনমস্তিষ্কের জন্যও পুষ্টিকর খাবার দরকার। আপনি যত বেশি বুদ্ধিদীপ্ত ও ইতিবাচক খাবার মনমস্তিষ্ককে দিবেন, তত বেশি আপনার মনমস্তিষ্ক সজীব ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।


আমাদের মন চুম্বকের মতো। আপনি যদি নেতিবাচক কথা বলেন, চিন্তা করেন অথবা ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় উদ্বিগ্ন থাকেন, তবে প্রকৃতির আকর্ষণ সূত্র অনুযায়ী, আপনি আরও সমস্যাকে আকর্ষিত করবেন। এ ব্যাপারে সাবধান থাকবেন।


হাতে কলমে কাজ। আজই একজন আশাবাদী ব্যক্তিরূপে নিজেকে প্রকাশ করবেন বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হোন। আপনার লক্ষ্য নিয়ে কথা বলুন এবং তা কীভাবে অর্জন করা যায় তাই নিয়ে চিন্তা করুন। প্রতিটি অবস্থা বা পরিস্থিতির ভালো দিক দেখুন। প্রতিটি সমস্যার মধ্যে সুযোগ খুঁজে বেড়ান। আপনার মনকে ইতিবাচক চিন্তা ও সুযোগ সম্ভাবনা দিয়ে ভরিয়ে তুলুন। এ ধরনের বই পড়ুন, সিডি বা ভিডিও শুনুন-দেখুন। অন্যদের সাথে এ নিয়ে কথা বলুন।


আশাবাদীর ভাষা ব্যবহার করুন। নেতিবাচক কথাবার্তা বলা বন্ধ করুন। নেতিবাচক শব্দকে ইতিবাচক শব্দে প্রতিস্থাপিত করুন। এতে করে আপনি আরও সজীব, প্রাণবন্ত ও বুদ্ধিদীপ্ত হয়ে উঠবেন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন