বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই, ২০২১

ব‌ই পর্যালোচনা: নেভার স্পিলিট দ্য ডিফারেন্স: ক্রিস ভস, টাহল রাজ


#ব‌ই_পর্যালোচনা:

নেভার স্পিলিট দ্য ডিফারেন্স: ক্রিস ভস, টাহল রাজ

Never split the difference by Chris Voss

মতের পার্থক্য থাকলেও কখনো আলাদা হবেন না

বইয়ের সারমর্ম লিখেছেন: ফজলে রাব্বি


প্রকাশনা: Harper Business

প্রথম প্রকাশ, ২০১৬

মূল্য: ২৬৫ টাকা

পৃষ্ঠা: ২৮৮

তথ্যসূত্র: স্যামুয়েল থমাস ডেভিস-এর আর্টিকেল অনুসারে 


ভূমিকা

ক্রিস ভস একজন আন্তর্জাতিক এফবিআই হস্টেজ নেগোসিয়েটর। তিনি তার বই নেভার স্পিলিট দ্য ডিফারেন্স  তথা মতো পার্থক্য থাকলেও কখনো আলাদা হবেন না-এ, নিজের অভিজ্ঞতার কথা ও কলাকৌশল তুলে ধরেন। কী কী কৌশলের মাধ্যমে একজন নেগোসিয়েটর জীবনমরণ সমস্যার ক্ষেত্রে অবলম্বন করলে সমাধান পেতে পারে তা উল্লেখ করেন।

পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ আইডিয়া:

১। নেগোসিয়েশন তথা আলাপ-আলোচনা আরম্ভ হবে কথাবার্তা শোনার মাধ্যমে, অন্যদের কথা শোনার মাধ্যমে, তাদের আবেগের মূল্য দিতে হবে, বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে হবে এবং কথাবার্তা শোনা ও বলার মধ্যমে অন্যদের ভরসা দিতে হবে।

২। মিরর তথা আয়না পদ্ধতি হচ্ছে অন্যের কথার পুনরাবৃত্তি করা। এই কথা পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে অন্যদেরকে সহানুভূতি জানান এবং আপনার সাথে একটি আত্মিক বন্ধন তৈরি করুন। মানুষকে এভাবে কথা বলতে উৎসাহ দিন। নিজের কথাগুলো গুছিয়ে নিতে সময় নিন। আপনার প্রতিপক্ষকে তার কলাকৌশল প্রকাশ করতে উৎসাহিত করুন। এসবই করবেন অন্যের কথার পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে।

৩। সহানুভূতি প্রকাশ করুন কৌশলগতভাবে। এজন্য আবেগ সংক্রান্ত বাধার সম্মুখীন হবেন এবং একটি সম্ভাব্য ঐকমত্যে পৌঁছাতে সহজ হবে।

৪। অন্যের আবেগের একটি নাম দিন। একে অন্যভাবে বলা হয়, লেবেল দেয়া। কোন পণ্যের মধ্যে যেমন লেবেল থাকে, যেখানে পণ্যের বিবরণ লেখা থাকে, তেমন অন্যের আবেগের নাম দিন। এতে করে আপনি অন্যদের আরও নিকটে পৌঁছে যাবেন। অন্য কিছু জিজ্ঞেস করা ছাড়াই আপনি মানুষের আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠবেন।

৫। মানুষকে ‘না’ বলতে দিন। এতে করে আপনার জন্য দারুণ সব সুযোগ তৈরি হবে। এতে করে আপনি কী চান এবং কী চান না, তা পরিষ্কার হবে এবং অপর পক্ষও এটা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবে।


নেভার স্পিলিট দ্য ডিফারেন্স  তথা মতো পার্থক্য থাকলেও কখনো আলাদা হবেন না-এর সারমর্ম


প্রথম অধ্যায়: নতুন নিয়মাবলি

মানুষ চায় তাকে যেন অন্যরা বোঝে এবং গ্রহণ করে। এই আকাঙ্ক্ষা বা চাওয়া থেকেই নেগোসিয়েশন তথা আলাপ-আলোচনার আরম্ভ হয়। অন্যের কথা শোনা সবচেয়ে সহজ এক কাজ এবং এটা নেগোসিয়েশনের জন্য অত্যন্ত কার্যকর এক পন্থা। তাই আমরা অন্যের কথা শোনার মাধ্যমেই আরম্ভ করতে পারি। আপনি অন্যের কথা গভীরভাবে শোনার মানে আপনি অন্যের অনুভূতিকে মূল্যায়ন  এবং অন্যরা কী অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি অনুভব করছে তা নিজের ভেতর অনুভব করেন।


দ্বিতীয় অধ্যায়: মিরর তথা আয়না পদ্ধতি ব্যবহার করুন। অন্যের কথার পুনরাবৃত্তি করুন।

ভালো নেগোসিয়েটররা জানে অন্যকে কীভাবে প্রশ্ন করতে হয়। তারা অন্যের বিশ্বাসযোগ্য অনুমানের ভিত্তিতে প্রশ্ন করে। অথবা এমন প্রশ্ন করে যে অন্যরা অহংকার বা দম্ভের চোটে একমত হয়। পাশাপাশি, তারা সব ধরনের সম্ভাবনার প্রতি মুক্তমনা থাকে। আবার বুদ্ধিমত্তার সাথেও যেকোনো পরিস্থিতির বিভিন্ন সম্ভাবনার দিকে নজর রাখে।

যেসব লোকজন নেগোসিয়েশন তথা আলাপ-আলোচনাকে তর্কবিতর্কের একটি লড়াই ক্ষেত্র মনে করে তাদের মাথা দ্রুতই গরম হয়ে যায়। নেগোসিয়েশন মানে লড়াই নয়, এটা কোনকিছু আবিষ্কার করার পন্থা। আপনার লক্ষ্য হচ্ছে যত বেশি সম্ভব তথ্য আদায় করা।

আপনার মস্তিষ্কের মধ্যে পূর্ব েথেকে যে কণ্ঠ ধ্বনিত হচ্ছে, আপনার আত্মাকে, আপনার মনোযোগকে বিক্ষিপ্ত করছে তার দিকে সতর্ক দৃষ্টি দিন। কারণ এতে করে আপনি অন্যরা কী বলছে বা কোন বিষয়ে জোর দিচ্ছে সেদিকে নজর দিতে ব্যর্থ হবেন।

আপনার লক্ষ্য হচ্ছে আপনার প্রতিপক্ষ প্রকৃত অর্থে কী চায় এবং তাদেরকে একটি নিরাপদ স্থানে আনা যেখানে তারা তাদের চাওয়া, তাদের আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে বলতে পারে।

নেগোসিয়েশন মানে আপনি অন্যদের কথা শুনবেন, অন্যদের আবেগের মূল্যায়ন করবেন এবং পর্যাপ্ত ভরসা জিতবেন যাতে করে তারা আপনার ওপর আস্থা রাখতে পারে এবং একটি প্রকৃত আলাপ-আলোচনা করতে পারে।

সব নেগোসিয়েটররাই দ্রুত গতিতে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার দিকে ধাবিত হয়। এটা একটা সর্বজনীন ভুল। আপনি যদি খুব বেশি তাড়াহুড়া করেন, তবে মানুষ মনে করবে আপনি তাদের কথা শুনছেন না। এতে করে আপনি একটি সম্পর্ক ও আস্থা তৈরিতে ব্যর্থ হবেন।


নেগোসিয়েটরদের জন্য তিন ধরনের কণ্ঠস্বরের উল্লেখ করা হল:


১। গভীর রাতের রেডিও ডিজে কণ্ঠস্বর: নির্দিষ্টভাবে আপনার পয়েন্ট তুলে ধরুন। আপনার কণ্ঠস্বরকে নিচের দিকে বাঁকিয়ে আনুন। শান্ত থাকুন। ধীরে কথা বলুন। এটা ঠিকভাবে করা গেলে, আপনি কর্তৃত্ব এবং বিশ্বাসযোগ্যতার একটি আবহ তৈরি করতে সক্ষম হবেন। এভাবে কথা বললে অপর পক্ষের প্রতিরক্ষার বিষয়গুলোও জাগ্রত হবে না।


২। ইতিবাচক / খেলার মাঠের কণ্ঠস্বর: আপনার সবসময় এ ধরনের কণ্ঠস্বর বজায় রাখা উচিত। এটা হচ্ছে সহজভাবে কথা বলার ভঙ্গি। একজন যত্নশীল ও রুচিবান ব্যক্তির এমন কণ্ঠস্বর থাকবে। আপনার মনোভাব হবে হালকা মেজাজের এবং অন্যকে অনুপ্রেরণাদায়ী। এখানকার মূল চাবিকাঠি হচ্ছে প্রশান্তি বোধ করা এবং মৃদু হাস্যে কথা বলা।

৩। সরাসরি / দৃঢ় কণ্ঠস্বর: খুব কম ব্যবহার করবেন। এই স্বর ব্যবহার করলে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে এবং শ্রোতার ওপর চাপ সৃষ্টি হবে।


আপনার মুখে একটা হাসি রাখবেন। যখন লোকজন ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে, তারা খুব দ্রুত অন্যের সাথে মিশতে পারে এবং সমস্যা সমাধানে তত বেশি অবদান রাখতে পারে। ইতিবাচকতা আপনার ও আপনার প্রতিপক্ষের মধ্যে এক ধরনের মানসিক স্ফূতি তৈরি করবে।

আপনি সরাসরিও কথা বলতে পারেন। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ধরে কথা বলেও এক ধরনের নিরাপত্তার বলয় তৈরি করতে পারেন। যেমন এভাবে কথা বলতে পারেন: ‘ঠিক আছে। এর ব্যাপারে আমি ঠিক আছে। আপনিও একমত। চলেন আমরা সামনের বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলে একটা সমাধান করি।’

অনুমানগুলোকে এক ধরনের সম্ভাব্য কাজ হিসাবে চিন্তা করুন এবং এই অনুমানগুলো দিয়ে নেগোসিয়েশনকে কঠোরভাবে পরীক্ষা করুন।

মিরর তথা আয়না পদ্ধতি ব্যবহার করুন। অন্যের কথার পুনরাবৃত্তি করুন। নেগোসিয়েশনে আয়না পদ্ধতি বেশ চমৎকার কাজে দেয়। অন্যের কথার শেষ তিনটি শব্দ পুনরাবৃত্তি করুন অথবা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন শব্দ পুনরাবৃত্তি করুন। আমরা সাধারণত কী কী জিনিস ভিন্ন তার প্রতি ভয়ে থাকি এবং কী কী জিনিস একই রকম তার দিকে মনোযোগ দিই। আয়না পদ্ধতি একই রকম জিনিস খুঁজে পেতে উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে। এতে করে একে অপরের মধ্যে বন্ধন তৈরি হয়। আয়না পদ্ধতির মাধ্যমে একে অন্যের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা যায়, মানুষকে কথা চালিয়ে যেতে উৎসাহ দেওয়া যায়, অন্যদের সাথে পুনরায় বন্ধন তৈরিতে সাহায্য করে এবং আপনার প্রতিপক্ষকে তাদের কলাকৌশল প্রকাশ করতে উৎসাহ দেয়।

প্রতিপক্ষের কথাকে পুনরাবৃত্তি করলে, অপরপক্ষ অবশ্যই মাত্র বলা কথাকে আরেকটু বিস্তারিতভাবে বলবে এবং এই প্রক্রিয়া বজায় রাখতে চেষ্টা করবে।

রিচার্ড ওয়াইজম্যানের এক গবেষণা থেকে দেখা যায়, যেসব ওয়েটাররা কাস্টমারদের ইতিবাচক প্রশংসা করে তাদের চেয়ে যারা কাস্টমারদের কথা পুনরাবৃত্তি করে তাদের টিপ বা অতিরিক্ত টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা ৭০% বেশি।

একটি সফল নেগোসিয়েশনের জন্য ঠিক মানসিকতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মুখোমুখী কোনকিছু মোকাবিলা করার চেয়ে নেগোসিয়েশন উত্তম। এর জন্য নিচের পাঁচটি সহজ ধাপ মেনে চলুন:

১। গভীর রাতের রেডিও ডিজে কণ্ঠস্বর প্রয়োগ করুন;

২। কথা শুরু করুন ‘আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত . . .’ বলে;

৩। আয়না পদ্ধতি ব্যবহার করুন;

৪। নীরবতা পালন; কমপক্ষে চার সেকেন্ডের জন্য। এতে করে প্রতিপক্ষের ওপর আয়না পদ্ধতি দারুণভাবে কাজ করবে।

৫। পুনরাবৃত্তি করুন;


অধ্যায় ৩: অন্যদের ব্যথা অনুভব করার দরকার নেই। তবে অবশ্যই অনুভূতির নাম দিন।


[চলবে . . .]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন