এমন কিছু উর্বর জায়গার উল্লেখ করছি যেখানে 'নতুন নেতৃত্ব' দরকার।
প্রথমত। রাজনৈতিক ক্ষেত্র যেখানে নতুন নেতাদের জন্য একটি অত্যন্ত জরুরি চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদা নির্দেশ করে যে এখনই এই ক্ষেত্রে নতুন নেতা দরকার, নতুন নেতৃত্ব দরকার। ব্যাপারটি একেবারে সংকটে গিয়ে পৌঁছেছে। বেশিরভাগ রাজনীতিবিদরা হচ্ছে উচ্চ শ্রেণির আইন অনুমোদিত মাস্তান। যে মাস্তান ক্ষতি করার ভয় দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। অন্তত বাহ্যিক দিক থেকে দেখলে তো তাদের মাস্তানের মতোই লাগে। তারা তেল-গ্যাস-বিদ্যুতে দাম বৃদ্ধি করেছে এবং লোকজনকে সৎ পথ থেকে প্রলোভন দেখিয়ে বিপথে নিয়ে গেছে। ব্যবসা ও কারখানাগুলোকে লাইসেন্সের নামে হয়রানি করেছে এবং অতিরিক্ত বোঝা এদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে যাতে লোকজন বোঝার ভারে কখনো উঠে দাঁড়াতে না পারে, প্রতিবাদ তো দূরের কথা।
দ্বিতীয়ত। ব্যাংকিং ক্ষেত্র একটি পুনঃগঠনের দিকে যাচ্ছে। এই ক্ষেত্রের নেতারা প্রায় সম্পূর্ণভাবে জনগণের বিশ্বাস হারিয়েছে। ইতোমধ্যে ব্যাংক কর্মকর্তাগণ পুনঃগঠনের অনুভূতি পাচ্ছেন এবং তারা এটা আরম্ভ করেছে।
তৃতীয়ত। শিল্প-কারখানাগুলো নতুন নেতাদের ডাকছে। পুরাতন ধরনের নেতাদের চিন্তা ও চাল-চলন ছিল লভাংশের ভিত্তিতে। কিন্তু বর্তমানে ব্যবসা ও কারখানায় নতুন চিন্তার আর্বিভাব হয়েছে। এটা হচ্ছে মানুষকে সমান ভিত্তিতে চিন্তা করবে ও চলবে। কেবল লভাংশের ভিত্তিতেই চিন্তা করবে না। ভবিষ্যতের শিল্প-কারখানার নেতারা দুঃখকষ্টে অবিচলিত থাকবে। তারা অবশ্যই নিজেকে বিবেচনা করবে যেন জনগণের একজন সেবাকারী। যার দায়িত্ব হচ্ছে তার বিশ্বাস এমন ভাবে তৈরির ব্যবস্থা করা যে এটা কখনো অন্যায়ভাবে কোন স্বতন্ত্র ব্যক্তির ওপর বা কোন স্বতন্ত্র গোষ্ঠীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না। মানুষের ওপর শোষণ, অধিক খাটিয়ে অল্প মজুরি দান করা, এগুলো হচ্ছে একটি অতীতের বিষয়। সেই মানুষটি নিজের আগ্রহ থেকে ব্যবসা, কারখানা ও শ্রমখাতে নেতৃত্ব দেওয়ার আকাক্সক্ষা পোষণ করে সে অবশ্যই এটা স্মরণ রাখবে।
চতুর্থত। ভবিষ্যতের ধর্মীয় নেতারা তাদের অনুসারীদের ইহজীবনের প্রয়োজনগুলোর প্রতি, তাদের বর্তমান আর্থিক ও ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো সমাধানের প্রতি বেশি মনোযোগ দিতে বাধ্য হবে এবং কম মনোযোগ দিবে মৃত্যু পরবর্তী সময়ের প্রতি এবং যে ভবিষ্যত জন্ম হয়নি তার প্রতি। ধর্ম কেবল মৃত্যু পরবর্তী জান্নাতে যাওয়ার টিকেট বিক্রির ব্যবসা নয়; বরং ধর্ম যে মানুষের পৃথিবীগত সমস্যারও সমাধান দিতে পারে-ঠিক এই ব্যাপারটিই ভবিষ্যতের ধর্মীয় নেতার বুঝতে সক্ষম হবে।
পঞ্চমত। আইন, ঔষধ ও শিক্ষা পেশাগুলোতে একটি নতুন ধরনের নেতৃত্ব গড়ে উঠবে এবং আরও কিছু ক্ষেত্রে, নতুন নেতাদের একটি প্রয়োজনীয়তা জরুরি হয়ে উঠবে। এটা বিশেষত শিক্ষাখাতের জন্য সত্য। এই খাতের নেতারা অবশ্যই ভবিষ্যতে এমন এমন পথ ও উপায় খুঁজে পাবে যে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের জ্ঞানকে বাস্তব জীবনে কাজে লাগাবে। তারা এমন এমন পদ্ধতি বের করবে যাতে করে ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে বসে বসে কেবল বই মুখস্তই করবে না; বরং কাজের দ্বারা শিখবে, জ্ঞানের প্রয়োগ শিখবে। তারা আরও বেশি কাজের দ্বারা শেখার প্রতি গুরুত্ব দিবে এবং কেবল মুখস্ত করে যাওয়াটা ধীরে ধীরে কমে যাবে।
ষষ্ঠত। নতুন নেতাদের প্রয়োজন হবে সাংবাদিকতায়। সংবাদপত্রের ভবিষ্যৎ সফলভাবে পরিচালিত হবে নতুন নেতাদের দ্বারা। যারা রাজনৈতি বা কোন বিশেষ অর্থনৈতিক গোষ্ঠীদের কাছ থেকে ‘বিশেষ সুবিধা’ নিয়ে তাদের হয়ে কাজ করবে না। যারা সংবাদপত্রকে বিজ্ঞাপনের অত্যাচার থেকে রক্ষা করবে। আজকে যেমন তারা বিভিন্ন সংগঠনের সমর্থন লাভের জন্য সংবাদ, প্রতিবেদন বা শিরোনাম তৈরি করে, ভবিষ্যতের নেতারা তা করবে না। ভবিষ্যতের নেতারা এধরনের চাটুকারিতা বর্জন করবে। অন্য যেসব সংবাদপত্র মানুষের সমালোচনা নিয়ে মুখরিত এবং অশ্লীল ছবি ছাপিয়ে মানব মনকে বিপথে নিয়ে যায় তারাও পর্যায়ক্রমে হারিয়ে যাবে।
এই দেশে কিন্তু কাজের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। এখানে অল্প কয়েকটি মূল জায়গার উল্লেখ করা হলো মাত্র যেখানে নতুন নেতা দরকার এবং একটি নতুন ধরনের নেতৃত্ব এখানে সহজলভ্য। বিশ্ব এখন দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এটার মানে পরিবর্তনটির সাথে সাথে মানুষের মানসিকতাও খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। যিনি নেতা হতে চান তাকে অবশ্যই এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে হবে। এখানে যে ব্যবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো একমাত্র এই ধরনের ব্যবস্থাই সভ্যতার ধারা নিশ্চিত করবে।
ফজলে রাব্বি
সূত্র : ডিভেলপিং দ্য লিডার উইদিন ইউ। সাফল্য প্রকাশনী।