আমরা এখন প্রধান ভুলগুলো নিয়ে আলোচনা করবো। যে ভুলগুলোর কারণে নেতারা ব্যর্থ হয়ে থাকেন। কারণ কী করতে হয় না এটা জানা ততটাই গুরুত্বপূর্ণ যতটা কী করতে হয় জানা।
১. তথ্য সংগ্রহে অক্ষমতা। দক্ষ নেতৃত্ব হচ্ছে সংগঠিত করার সক্ষমতা ও তথ্যের পূর্ণতা। কোন প্রকৃত নেতা কখনো এমন কিছুর প্রতি ‘অনেক ব্যস্ততা’ দেখায় না যেখানে তার নেতা রূপে থাকার প্রয়োজন। যখন একজন ব্যক্তি সে নেতা হোক বা অনুসারী হোক তার পরিকল্পনা পরিবর্তনে ‘অনেক ব্যস্ততা’ দেখায় বা কোন জরুরি ব্যাপারে মনোযোগী হয় না, তখন সে তার অদক্ষতারই পরিচয় দেয়। একজন সফল নেতা অবশ্যই তার অবস্থানের সাথে সম্পৃক্ত সকল বিষয়ে দক্ষ হবে। এর মানে তিনি অবশ্যই সক্ষম কর্মকর্তাদের নিকট থেকে সবরকম তথ্য সংগ্রহ করবেন এবং যোগ্য ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় পদে বসাবেন।
২. বিনীত সেবা প্রদানে অনিচ্ছা। মহান নেতাদের আকাক্সক্ষাই প্রকৃত সত্য। যখন অবস্থা প্রয়োজনে যেকোন ধরনের শ্রম দিতে হয়, তারা পরিশ্রম দিতে রাজি এবং কাজ করে দেখান। যদিও তা অন্য কাউকে দিয়ে করানো যেত তবুও তারা নিজেরাই কাজটি করেন। ‘সবার মধ্যে মহান তিনিই যিনি সকলের সেবা করেন।’ সকল নেতাদের এই সত্যকে অনুধাবন করা দরকার এবং মেনে চলা উচিত।
৩. লোকজন কী ‘জানে’ এটার মূল্য দেওয়ার পরিবর্তে তারা যা জানে তা দিয়ে কী ‘করে’ তার মূল্য পরিশোধ করা। পৃথিবী সেইসব ব্যক্তিদের মূল্য দেয় না যারা ‘জানে’। পৃথিবী কেবল তাদেরই মূল্য দেয় যারা তাদের জানা জ্ঞান দ্বারা অন্যদের উৎসাহিত করে। কেবল জানাটাই যথেষ্ট নয়, সেই জানা জ্ঞান দ্বারা কাজ করে দেখানোটাই মূল্যবান।
৪. অনুসারীদের সাথে প্রতিযোগিতার ভয়। যে নেতা ভয় পায় যে তার অনুসারীদের মধ্যে কেউ একজন তার স্থান নিতে পারে, বাস্তবে তা শীঘ্রই ঘটবে। সক্ষম নেতাকে অবশ্যই তার নিম্ন পদস্থদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে যাতে করে তিনি তাকে প্রতিনিধি রূপে নিজের আকাক্সক্ষায় যেকোন অবস্থানে বসাতে পারেন। একমাত্র এইভাবেই একজন নেতা নিজেকে বহুগুণে ও বহু জায়গায় প্রসারিত করতে পারে। এইভাবে একজন নেতা ঠিক একই সময় বিভিন্ন মানুষের চেতনায়, কাজে-কর্মে উপস্থিত থাকতে পারে। যেসব ব্যক্তিরা অন্যদের দিয়ে কাজ করানোর সক্ষমতা অর্জন করেছেন তারা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি বেতন পায়। এটা একটি চরম সত্য। অন্যদের দিয়ে কাজ করানোর দক্ষতা একটি মূল্যবান সম্পদ। একজন দক্ষ নেতা হয়ত, তার কাজ সম্বন্ধে তার জ্ঞান ও তার ব্যক্তিত্বের চুম্বকত্ব দ্বারা অন্যদের দক্ষতা অনেক পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারেন এবং তাদেরকে আরও সেবা প্রদান করতে এবং অধিকতর ভালো সেবা দিতে প্রভাবিত করতে পারেন যা হয়ত তারা নেতার উৎসাহ ও সহায়তা ছাড়া পারতো না।
৫. কল্পনার অভাব। কল্পনা ব্যতীত একজন নেতা জরুরী সভা করতে অক্ষম এবং পরিকল্পনা তৈরিতেও অক্ষম যার দ্বারা তার অনুসারীদের দক্ষভাবে পরিচালিত করবে।
৬. স্বার্থপরতা। যে নেতা সব ধরনের পুরস্কারের প্রতি দাবি জানায় যা তার অনুসারীরাও করেছে, তিনি নিশ্চিতভাবে নির্বাসনে প্রেরিত হবে। একজন প্রকৃত নেতা কোন পুরস্কার দাবি করে না। তিনি পুরস্কারগুলো দেখেই সন্তুষ্ট। যখন কোন পুরস্কার দেখেন তা তার অনুসারীদের হাতে তুলে দেন, কারণ তিনি জানেন যে বেশিরভাগ মানুষই কঠিন পরিশ্রম করে প্রশংসার জন্য এবং তাকে যেন অন্যরা স্মরণ রাখে। একজন লোক টাকা পেলে যে কাজ করতো তারচেয়ে অনেক বেশি কাজ করবে এই প্রশংসা বা অন্যের চিন্তায় স্মরণ থাকার জন্য।
৭. অসংযম। অনুসারীরা কখনো একজন অসংযমী নেতাকে শ্রদ্ধা করে না। অধিকন্তু, যে ব্যক্তি তার মধ্যে অসংযমকে প্রশয় দেয় তার মধ্যকার সব সহ্যশক্তি ও জীবনী শক্তি ধ্বংস হয়ে যায়। এটা যেকোন ব্যবসা বা উদ্যোগের জন্যও সমান সত্য।
৮. অবিশ্বস্ত। এটা হয়ত তালিকার একদম উপরে থাকা উচিত ছিল। একজন নেতা যিনি তার সহযোগী ও কর্মচারীদের প্রতি আস্থাশীল নয়, তার উপরে যারা আছেন এবং তার নিচে যারা আছেন, কেউই বেশি সময় তার নেতৃত্ব মেনে নিতে পারে না। অবিশ্বস্ততা ধুলোবালির মতো। যার মধ্যে অবিশ্বস্ততা বিরজমান সে ধুলোবালির মতো সহজেই উড়ে যায়। কোথাও টিকতে পারে না। এই বিশ্বস্ততাই তার মাথাকে অপমানে নিচে নিয়ে আসে যার সে যোগ্য। আমাদের জীবনে ব্যর্থতার একটি অন্যতম প্রধান কারণ বিশ্বস্ততার অভাব।
৯. নেতৃত্বের ‘কর্তৃত্বের’ ওপর অধিক জোর দেওয়া। ‘আমি নেতা বা আমি মালিক। আমার কথাই তোমাকে মানতে হবে।’ এই ধরনের বক্তব্য একজন অদক্ষ নেতার পরিচায়ক। একজন দক্ষ নেতা পরিচালিত হন উৎসাহ দ্বারা এবং এটা নয় যে তার অনুসারীদের মনে ধীরে ধীরে ভয় প্রবেশ করিয়ে নেতৃত্ব দিবে। যে নেতা তার অনুসারীদের ‘কর্তৃত্বের’ ভয় দেখানোর চেষ্টা করে তিনি বল দ্বারা নেতৃত্বের প্রকারে পড়ে। যদি একজন নেতা, একজন প্রকৃত নেতাই হন, তবে তার বিজ্ঞাপন দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। শুধু তার আচরণ ব্যতীত। তার আচরণই বলে দিবে সে নেতৃত্বের কোন প্রকারে পড়ে। তিনি সহানুভূতি, বুঝজ্ঞান, ন্যায্যতা ও জনমতের প্রকাশ সম্বন্ধে জানে যে এটা তার দায়িত্ব, এটা তার কাজ।
১০. পদবির ওপর জোর দেওয়া। অনুসারীদের সম্মান পেতে হলে একজন যোগ্য নেতার কোন ‘পদবি’র প্রয়োজন হয় না। যে ব্যক্তি তার পদবির ওপর খুব বেশি জোর দেয় সে সাধারণত নাম সর্বস্বই থাকে। প্রকৃত নেতার অফিসের দরজা সব সময় খোলা থাকে তাদের জন্য যে প্রবেশ করতে চায় এবং তার কাজের অংশ লৌকিকতা বা বাহ্যাড়ম্বর থেকে মুক্ত।
নেতৃত্বে ব্যর্থতার কারণসমূহের মধ্যে এগুলো হচ্ছে বেশি সাধারণ। ব্যর্থতা ঘটাতে এই ভুলগুলোর যেকোন একটিই যথেষ্ট। তালিকাটি মনোযোগের সাথে পর্যবেক্ষণ করুন। যদি আপনি নেতৃত্বের প্রতি আগ্রহী হন তবে আগে নিশ্চিত হোন যে আপনি এই ভুলগুলো থেকে মুক্ত।
ফজলে রাব্বি
সূত্র : নেপোলিয়ন হিলের চিন্তা করুন এবং ধনী হোন। সাফল্য প্রকাশনী।