আমাদের সকলের জীবনেই একটি সময় আসে যখন আমরা কাজের চাপে বা সমস্যার চাপে থাকি। তখন কাজ করা অনেক কঠিন মনে হয় এবং আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী ফলাফল পাওয়ার আশা অসম্ভব বলে মনে হয়। কিন্তু তখনও কাজ থামাবেন না, ধৈর্য ধরে অধ্যবসায়ের সাথে কাজ করে যান। বিশ্বাস করুন আপনি সাফল্য অর্জন করতে পারবেন। আর আপনি যদি কাজটি ত্যাগ করেন তবে আপনি কখনই জানতে পারবেন না যে আপনি কি সাফল্য অর্জন করতে পারবেন। সর্বদাই এই অনুশোচনায় ভুগবেন যে আমি হয়ত আরেকটু চেষ্টা করলে সাফল্য অর্জন করতে পারতাম। তাই এই অনুশোচনায় না গিয়ে নিজেকে দিয়ে আরও একবার চেষ্টা করান, অধ্যবসায়ের সাথে কাজ করুন।
আজ আমরা আলোচনা করবো অধ্যবসায় কিভাবে গঠন করা যায় এই সম্বন্ধে। অধ্যবসায় হচ্ছে মনের একটি অবস্থা। সেইজন্য ইহা চাষ করা যায়। মনের সকল অবস্থার মতন, অধ্যবসায় নির্ভর করে নির্দিষ্ট কারণগুলোর ওপর, এগুলো হচ্ছেঃ-
ক। উদ্দেশ্যের নির্দিষ্টতা। একজন কি চায় ইহা প্রথমে জানতে হবে এবং ইহাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যবসায় গঠনের প্রতি। ইহা স্বাভাবিক যে আপনি যদি কক্সবাজার যেতে চান তবে আপনি নিশ্চয় কক্সবাজারের গাড়ীতে বা ট্রেনে উঠবেন। নিশ্চয়ই সিলেটের গাড়ীতে উঠবেন না। কারণ যে গাড়ী সিলেটে যাবে তা আপনাকে কক্সবাজার পৌঁছে দিবে না। ঠিক তেমনই আপনি কি অর্জন করতে চান তা একটি কাগজে নির্দিষ্ট করে লিখুন, আপনার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে নির্দিষ্ট হোন। ইহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
খ। আকাঙ্ক্ষা। আপনার উদ্দেশ্যটিকে প্রতিনিয়ত দেখে যান। রাতে ঘুমাবার আগে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে। এমন জায়গায় লিখে রাখুন যাতে সর্বদা দেখতে পান। এভাবেই একটি জ্বলন্ত আকাঙ্ক্ষা তৈরী হবে যা আপনাকে সাফল্য অর্জন করতে সর্বদাই উজ্জীবিত রাখবে।
গ। আত্ম নির্ভরশীলতা। আপন দক্ষতার ওপর বিশ্বাস রাখুন। আপনি আপনার নির্দিষ্ট আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারবেন। যখনই আপনার আত্ম বিশ্বাস কমতে আরম্ভ করবে নিজের মনে জোর করে বলুন – ‘আমি পারবো। আমি পারবো।’ পূর্ণ বিশ্বাস সহকারে। যদিও প্রথমে মনে হতে পারে আপনার আকাঙ্ক্ষাটি পূরণ হবার নয় কিন্তু আপনি যদি অধ্যবসায়ের সাথে কাজ করে যান তবে অবশ্যই আপনি তা পূরণ করতে পারবেন।
ঘ। পরিকল্পনাগুলোর নির্দিষ্টতা। আমি অনেকের সাথেই আলাপ করেছি এবং তাদের অভিমত হচ্ছে পরিকল্পনা ব্যর্থ তাই তিনি সাফল্য অর্জন করতে পারেননি। সর্বদা স্মরণ রাখবেন, একটি পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে আরও একটি পরিকল্পনা সৃষ্টি করা যায়। একটি পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে পারে কিন্তু আপনি ব্যর্থ নন। পরিকল্পনা ব্যর্থ মানে আপনার পরিকল্পনায় কিছু ত্রুটি ছিল এবং সেই ত্রুটির জন্য আপনার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। আবার একটি নতুন পরিকল্পনা সৃষ্টি করুন কিন্তু এবার গত পরিকল্পনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সম্পূর্ণ নতুন পরিকল্পনা সৃষ্টি করুন। সর্বদাই দেখবেন পরিকল্পনাটি যেন একটি কাগজে নির্দিষ্টভাবে লেখা থাকে। তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার কি আছে এবং আরও কি দরকার।
কাগজে একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য এবং ইহা অর্জনের জন্য পরিকল্পনা লেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রায় সময়ই ইহা লিখতে অনাগ্রহী থাকি কিন্তু একজন যখন একটি কাগজে নির্দিষ্টভাবে তার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে লিখে তখন তিনি তার অবচেতন মনে এই উদ্দেশ্য সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে ওঠেন। তারপর দেখবেন আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার উদ্দেশ্যের প্রতি ধাবিত হচ্ছেন। যেখানেই যাবেন আপনার অবচেতন মন আপনাকে রাস্তা দেখিয়ে দিবে যে পরবর্তীতে কোথায় দেখতে হবে এবং কোথায় যেতে হবে। এভাবে অধ্যবসায়ের সাথে কাজ করে যান এবং জীবনে সাফল্য অর্জন করুন।
অধ্যবসায় সম্বন্ধে আরও পাঠ করতে চাইলে এই লিংক দেখতে পারেন।
তথ্যসূত্র – নেপোলিয়ন হিলের চিন্তা করুন এবং ধনী হোন। সাফল্য প্রকাশনী।