ব্যক্তিগত উন্নয়ন – নবম অধ্যায়

অধ্যবসায়

অধ্যবসায় “সাফল্য দর্শন” এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। ইহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় একটি ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে। ইহার মূল ভিত্তি হচ্ছে ইচ্ছাশক্তি। ইচ্ছাশক্তি অধ্যবসায় পালনে প্রেরণা যোগায় এবং একটি জ্বলন্ত ইচ্ছা মানুষকে অধ্যবসায়ী করে তোলে।

ইচ্ছাশক্তি এবং আকাঙ্ক্ষা একটি শক্তিশালী জোড়া যা অধ্যবসায় গঠনে সহায়তা করে। আপনার ইচ্ছাশক্তিকে আকাঙ্ক্ষা দ্বারা মিশ্রিত করুন, ইহা আপনাকে অধ্যবসায় পালনে উৎসাহ দিবে। বেশীর ভাগ লোকেরা যারা জীবনে সফল হয়েছেন তারা তাদের ইচ্ছাগুলো বাস্তব করেছেন অধ্যবসায় দ্বারা, তাদের সফল হওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছা তাদেরকে সকল নেতিবাচক উৎস হতে দূরে থাকতে সহায়তা করেছে, অধ্যবসায় পালনে উৎসাহী করেছে।

বেশীর ভাগ লোক যারা তাদের ইচ্ছাগুলো বাস্তবে রূপান্তর করতে চেষ্টা করেন, তারা প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পর ইচ্ছাগুলো জলে ফেলে দেন, এরা কখনই জয়ী হতে পারে না কারণ তারা জয়ী হতে অধ্যবসায়ী নন। খুব অল্প সংখ্যক লোকই এই “সাময়িক বাঁধা” অতিক্রম করে নিজের ইচ্ছাগুলোকে পূরণ করেন। এরাই সফল। তারা অধ্যবসায় পালন করে নিজেদের সাফল্য নিশ্চিত করেন এবং প্রমাণ করেন, যেকোন ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপান্তর করা যায়।

ইহা জানা ব্যাপার যে, কাঁচা লোহা থেকে ইস্পাত সৃষ্টি করা হয়। একই রূপ অধ্যবসায়ের গুণ হল ইহা ব্যক্তির চরিত্রকে লোহা থেকে ইস্পাতে পরিণত করে, যা দ্বারা সকল সাময়িক বাঁধা, পরাজয় হার মানতে বাধ্য হয় এবং ব্যক্তির ইচ্ছার জয় নিশ্চিত হয়।

আপনার ব্যক্তিগত উন্নয়ন বা যেকোন কাজে সাফল্য অর্জন নিশ্চিত করতে আপনার প্রথম পরীক্ষা হবে অধ্যবসায় পালন করা। ধৈর্য্য সহকারে সবগুলো লেখা পড়ে যান সমাপ্তি পর্যন্ত। ইচ্ছা অধ্যায়ে লেখা নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করুন। সাফল্য নিশ্চিত করতে প্রথমেই আপনার কর্মে অধ্যবসায় প্রয়োগ করতে হবে নতুবা আপনি প্রতি একশজন ব্যক্তির মধ্যে একজন হবেন যার একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে কিন্তু ইহা অর্জনের জন্য ইচ্ছা ও অধ্যবসায়ের অভাব।

আপনি এই মুহুর্ত হতেই সর্তক হন। আপনি আপনার জীবনে সাফল্য অর্জনের ইচ্ছাকে আরও গুরুতর ভাবে দেখুন। ইহা আপনার জীবন এবং শুধুমাত্র একান্তই আপনার। সিদ্ধান্ত নিন আপনি জীবনে সফল হয়ে বাঁচতে চান নাকি ব্যর্থ হয়ে মরতে চান। কারণ হাজারো মানুষ যারা ব্যর্থ হয়ে জীবন যাপন করে, তারা না তাদের ইচ্ছার প্রতি নজর দেয়, না অধ্যবসায় পালনের প্রতি। তারা শুধু সফল হতে চায় কিন্তু চাওয়া কখনও আপনাকে সফল করবে না, যদি তা একটি জ্বলন্ত ইচ্ছায় পরিণত না হয়। জ্বলন্ত ইচ্ছাকে বজায় রাখুন, অধ্যবসায় পালন করুন এবং সফল হন। আর যারা ব্যর্থ হয় তাদের বেশীর ভাগই ব্যর্থ হয়ে থাকে অধ্যবসায় পালন না করার ফলে। অধ্যবসায়ের অভাব ব্যক্তির একটি সাধারণ দূর্বলতা। ইহার উপর কর্তৃত্ব করার উপায় হচ্ছে একটি জ্বলন্ত ইচ্ছা, যা প্রতিনিয়ত শক্তি যোগায় এগিয়ে যাওয়ার।

সৌভাগ্য আকর্ষণ করে সেসব লোকদের যারা সৌভাগ্যের জন্য প্রস্তুত। ইহা অভিকর্ষ শক্তির মত যার সহায়তায় পানি হাজারো মাইল প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রে পৌছায়। আপনিও সেই শক্তির সহায়তা পেতে পারেন যদি আপনি সাফল্য অর্জনে বদ্ধ পরিকর হন। এখানে আপনি সকল উৎসাহ পাবেন যার “সমন্বয়” সাধন করে আপনি আপনার যেকোন ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপান্তর করতে পারবেন।

অধ্যবসায় পালন করতে স্ব-পরামর্শ এবং অবচেতন মন অধ্যায়ের নির্দেশনাগুলো পালন করুন। এই নিয়মগুলো অনুসরণ করুন যতক্ষণ না ইহা আপনার মনের একটি স্থায়ী অভ্যাসে পরিণত হয়। ব্যক্তির অবচেতন মন প্রতি মুহুর্তে কাজ করে, রাতে ও দিনে সারাক্ষণ। অবচেতন মনকে প্রতিনিয়ত স্মরণ করিয়ে দিন, আপনি যা ইচ্ছা করেন।

নিয়মগুলো পালনে অবিরত প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। সাময়িক প্রচেষ্টা আপনার কোন কাজে আসবে না। আপনাকে সবগুলো নিয়ম পূর্ণরূপে প্রয়োগ করতে হবে যতক্ষণ না এগুলো একটি স্থায়ী অভ্যাসে পরিণত হয়। একমাত্র আপনার অধ্যবসায়ী প্রচেষ্টাই পারে আপনাকে সাফল্যের জন্য প্রস্তুত করতে।

এই অধ্যায়ের পূর্ণ তাৎপর্য উদ্ধার করুন এবং অনুধাবন করুন সাফল্য অর্জনের জন্য অধ্যবসায়ের গুরুত্ব। যদি বুঝতে পারেন তবে আপনার অভ্যন্তর হতে, মন থেকে শক্তি পাবেন যা আপনার জ্বলন্ত ইচ্ছা পূরণ করতে অধ্যবসায়ী করে তুলবে।

অধ্যবসায় মনের একটি অবস্থা। ইহা মনের অন্যান্য অবস্থার মত চাষযোগ্য। অধ্যবসায় চাষ করুন এবং ব্যর্থতার উপর কর্তৃত্ব করুন, ব্যর্থতাকে বদলে দিন জয়ে। ইহা কোন সমস্যাই না যে আপনি কতবার পড়ে গেছেন, অবশেষে সফল তারাই হন যারা পুনরায় উঠে দাঁড়ান এবং চলা শুরু করে। তারা মইয়ের মাথায় উঠেন, সাফল্যের চূড়ায় পৌছান এবং বিজয়ী রূপে পর্দাপন করেন।


“অধ্যবসায়” অধ্যায় ছেড়ে যাওয়ার পূর্বে চিন্তা করুন আপনার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের প্রতি, ইচ্ছার প্রতি, আত্ম-নির্ভরশীলতা অর্জন করুন স্ব-পরামর্শ দ্বারা, আপনার পরিকল্পনা গুলো নির্দিষ্ট করুন, লিখে রাখুন এবং প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করুন। কারণ যে পরিকল্পনা “জানা” এর পরিবর্তে “অনুমান” নির্ভর তা কখনও পূরণ হয় না, আর পরিকল্পনার প্রতিটি তথ্য সম্পর্কে জানা হচ্ছে প্রকৃত জ্ঞান।

ফজলে রাব্বি (Fazle Rabbi)

আমার জীবনের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৪টি অনুপ্রেরণামূলক বই প্রকাশ করা। saphollo.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন