“কর্তৃত্বশীল মন” এর ক্ষমতা
সাফল্যের
জন্য জীবনে ক্ষমতা সৃষ্টি করা অত্যন্ত দরকারী। তাই এখানে আলোচনা করা হবে যে কিভাবে
ক্ষমতা সৃষ্টি করা যায়, আর ক্ষমতা সৃষ্টি করার সর্বোত্তম জানা পথ হচ্ছে “কর্তৃত্বশীল
মন”
গঠন এবং এর দল তৈরী করা।
ক্ষমতা
হচ্ছে, “জ্ঞানকে
সংগঠিত এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে নির্দেশিত করা, পরিচালিত করা ও নির্দিষ্ট গন্তব্যে
পৌছানোর ব্যবস্থা করা।” সাফল্য অর্জন করতে হলে দুই বা ততোধিক লোকের সহযোগিতা,
প্রত্যেকের চেষ্টার সমন্বয়, চেতনার সমসুর এবং একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সমাপ্তির
প্রতি সকলকে একত্রে চলতে হবে। একেই বলে “কর্তৃত্বশীল মন” এর দল। “কর্তৃত্বশীল
মন”
এর ক্ষমতা আপনাকে নিয়ে যাবে সাফল্যের চূড়ায় যেখানে আপনি যেতে ইচ্ছুক।
ক্ষমতা আসে
জ্ঞানকে সংগঠিত করায় এবং জ্ঞান আসে যেসব উৎস হতে সেগুলো হলোঃ
ক. অসীম
বুদ্ধিমত্তাঃ এই জ্ঞানের উৎস হতে জ্ঞান গ্রহণ করতে হলে সৃষ্টিশীল কল্পনার সহায়তা
নিতে হবে। (সৃষ্টিশীল কল্পনা সম্পর্কে “কল্পনা” অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।)
খ. অর্জিত
অভিজ্ঞতাঃ ইহা পেতে পারেন যেকোন গ্রন্থাগারে যেখানে মানুষের অভিজ্ঞতাগুলো নির্দিষ্ট
বিষয়ে সজ্জিত করে রাখা হয়েছে। বিদ্যালয়গুলোতেও অর্জিত অভিজ্ঞতার জ্ঞান শ্রেণী এবং
সংগঠিত আকারে সজ্জিত করা হয়েছে।
গ.
পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাঃ ব্যক্তি জীবনের প্রাত্যহিক চলার পথে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে
পর্যবেক্ষণ করে প্রাপ্ত জ্ঞান এবং বৈজ্ঞানিক পন্থায় গবেষণা হতে প্রাপ্ত জ্ঞান, যা
ব্যক্তি শ্রেণীভাগ এবং সংগঠিত করে প্রতিনিয়ত নতুন জ্ঞানের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ
পায়। এখানেও প্রায়ই সৃষ্টিশীল কল্পনার ব্যবহার করতে হয় যদি প্রাপ্ত তথ্য হতে
সন্তোষজনক উত্তর না পাওয়া যায়।
এই তিনটি
জ্ঞানের উৎস হতে জ্ঞান গ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যদি একজন তার ইচ্ছাকে বাস্তবে
রূপান্তর করতে চায়। অধিকিন্তু (আরও) এই তিনটি উৎস হতে একজন ব্যক্তি স্বতন্ত্রভাবে
জ্ঞান অর্জন, সংগঠন ও পরিচালিত করা কঠিন। যদি আপনার পরিকল্পনা হয় বিশাল তবে আপনার
একটি কর্তৃত্বশীল মন এর দল গঠন করে একাধিক ব্যক্তির সহায়তা নিতে হবে উক্ত উৎসত্রয়
হতে জ্ঞান অর্জনের জন্য।
“কর্তৃত্বশীল
মন”
বলতে বোঝায়, “দুই
বা ততোধিক লোকের মাঝে চেতনার সমসুর সৃষ্টি করা একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য লাভের
জন্য, জ্ঞান ও প্রচেষ্টার সমন্বয় সাধন।” একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য এবং একটি
নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করার জন্য নিজের মন এর ওপর কর্তৃত্ব করা এবং এমন ব্যক্তিদের
সঙ্গে নেওয়া যাদের চেতনায় একই নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য লাভের ইচ্ছা আছে এবং এদের সকলেই
একই চেতনার সমসুরে গাঁথা।
একজন ব্যক্তি
স্বতন্ত্রভাবে মহান সাফল্যের অর্জন করতে পারে না কর্তৃত্বশীল মন এর অধিকারী না হয়ে।
পরিকল্পনা করুন, অধ্যবসায় পালন করুন, জ্ঞানকে সংগঠিত ও বুদ্ধিমত্তার সাথে
নির্দেশিত করুন এবং কর্তৃত্বশীল মন এর দল গঠন করুন, তবেই সফল হবেন। যদি আপনি
কর্তৃত্বশীল মন এর দল গঠন করতে আগ্রহী না হন তবে আপনি সাফল্যের শুধুমাত্র অর্ধেক
পথেই পৌঁছাতে পারবেন, অধিকিন্তু স্মরণ রাখবেন সাফল্যের পথে যত বাঁধাই আপনি অতিক্রম
করুন না কেন, শেষ প্রান্তে না পৌঁছালে সফলতা নিশ্চিত হবে না। আর একটি ইচ্ছার শেষ প্রান্তে
পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা করে যাওয়াটাই হচ্ছে সফলতা।
আপনাকে বুঝতে
হবে দুইটি মানুষের মনের মধ্যে সমসুর তৈরীর “অস্পর্শনীয়” বা “অদৃশ্য” চেতনা
শক্তিকে। ইহা অনুভবযোগ্য শক্তি। এই শক্তিকে কর্তৃত্বশীল মন তৈরীতে প্রয়োগ করুন।
কর্তৃত্বশীল মন সূত্রের দুইটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এখানে বলা হল। একটি হচ্ছে
অর্থনৈতিক প্রকৃতির এবং অন্যটি হচ্ছে মানসিক প্রকৃতির। অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যটি
হচ্ছে স্পষ্ট। আপনি অর্থনৈতিক সুবিধা দিয়ে উপদেষ্টা, পরামর্শক, গবেষক এবং কর্মচারী
দ্বারা নিজেকে ঘিরে রাখতে পারেন যারা একই চেতনার সমসুরে আপনাকে হৃদয় দিয়ে সহযোগিতা
করতে প্রস্তুত। ইহা প্রায় সকল মহান সৌভাগ্যের ভিত্তি। ইহা অনুধাবন করুন, ইহা
নিশ্চিত ভাবে আপনার অর্থনৈতিক অবস্থা নির্দিষ্ট করবে।
কর্তৃত্বশীল
মন সূত্রের মানসিক বৈশিষ্ট্যটি বর্ণনা করা কঠিন, বোঝানো আরও কঠিন। ইহা মানুষের
আত্মিক শক্তিরগুলোর সাথে সম্পৃক্ত। ইহা এমন যে, আপনি শুধু অর্থনৈতিক সুবিধা দিয়ে
আপনার দলের সদস্যদের সাথে সম্পৃক্ত নন, আপনার আত্মিক শক্তিগুলো দিয়েও তাদের সাথে
সম্পৃক্ত।
এই মহাজগত
সৃষ্টি হয়েছে শুধুমাত্র দুইটি উপাদান দিয়ে, শক্তি এবং পদার্থ। ইহা আমরা সকলেই জানি
যে পদার্থ অণু আকারে, পরমাণু ও ইলেকট্রন আকারে ভাগ করা যায়। কিছু পদার্থ আছে গলানো
যায়, আলাদা করা যায় এবং বিশ্লেষণ করা যায়।
তেমনি,
শক্তিরও ভাগ রয়েছে।
মানব মন
শক্তির একটি প্রকার। এর একটি অংশ পরিবেশের সাথে আত্মিকভাবে সম্পৃক্ত। যখন দুই
ব্যক্তির মনগুলো চেতনার সমসুরে সমন্বিত হয়, প্রত্যেক মনের শক্তির আত্মিক ভাগগুলো
একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গঠন করে, যা তৈরী করে “কর্তৃত্বশীল মন” এর “মানসিক” অবস্থা।
একজন
ব্যক্তির মস্তিষ্ক একটি বিদ্যুৎ কোষের (ব্যাটারী) মত। একটি বিদ্যুৎ কোষে শক্তির
গাঠনিক একক হিসেবে থাকে “বিদ্যুৎ”, তেমনি মানব মস্তিষ্কে প্রকৃতির গাঠনিক একক, শক্তি রূপে রয়েছে
“চিন্তা”। আমরা সবাই
জানি যে, একটি বিদ্যুৎ কোষের চেয়ে একাধিক বিদ্যুৎ কোষের সমন্বিত শক্তি অনেক বেশি
এবং একটি স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ কোষ তার উল্লেখিত শক্তির একাংশই দিতে পারে। একইরূপ,
একটি স্বতন্ত্র ব্যক্তির মস্তিষ্ক যে পরিমাণ “চিন্তা” উৎপন্ন করতে
পারে তারচেয়ে বহুলাংশে বেশী পরিমাণে চিন্তা শক্তি উৎপন্ন করতে পারে একাধিক
ব্যক্তির সমন্বিত মস্তিষ্কগুলো, যা কর্তৃত্বশীল মন কতৃর্ক অর্জিত হয়।