শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

ব্যক্তিগত উন্নয়ন – একাদশ অধ্যায়

যৌনশক্তি রূপান্তরের রহস্য

যৌনশক্তি অত্যন্ত ক্ষমতাশালী একটি শক্তি, যা রূপান্তর করে মানবজীবনে সাফল্য অর্জনের জন্য প্রয়োগ করা যায়। ইহাকে রূপান্তর করতে হলে আমাদেরকে রূপান্তরের অর্থ বুঝতে হবে। সোজা ভাষায় রূপান্তর শব্দটির অর্থ হচ্ছে, পরিবর্তন বা একটি পদার্থের অন্য পদার্থে পরিণতি অথবা শক্তির অন্য এক আকারে পরিণত হওয়া।

যৌনানুভূতি মনের একটি অবস্থা তৈরী করে।

এই বিষয়ে অজ্ঞতার কারণে, এই মানসিক অবস্থাটি সাধারণত শরীরগত ভাবেই ঘটে থাকে এবং বেঠিক (সঠিক এর বিপরীত) প্রভাবের দরুন বেশীরভাগ মানুষ যৌন জ্ঞান অর্জন করে শরীর বৃত্তিয় প্রয়োজনে যা মনকে পক্ষপাতদুষ্ট করে। [পক্ষপাতদুষ্ট বলতে বোঝায় সম্পূর্ণ অংশ সম্পর্কে না জেনে শুধু এক অংশের প্রতি ঝোঁক বা প্রবণতা।]

যৌন অনুভূতির তিনটি সম্ভাব্য গঠনমূলক আবশ্যিকতা রয়েছে, এগুলো হচ্ছেঃ

১. মানব জাতিকে বিলুপ্তি হইতে রক্ষা করা।

২. স্বাস্থ্য রক্ষা করা (যেমন একটি আরোগ্য বিদ্যা সম্বন্ধীয় অনুষদে ইহার সমতুল্য কিছু নেই।)

৩. প্রতিভাবান হতে রূপান্তরক মাধ্যম।

যৌনতা (যৌন শক্তি) রূপান্তরের সহজ এবং সাধারণ ব্যাখ্যা আছে। এর মানে, মনের চিন্তাগুলোর মাধ্যমে যা শারীরিক ক্রিয়া ঘটায়, এগুলো দ্বারা অন্য প্রকৃতির চিন্তা গুলোকেও প্রভাবিত করা যায়। অর্থাৎ প্রথম প্রকারের চিন্তাগুলোর প্রভাবে দ্বিতীয় প্রকার চিন্তা সৃষ্টি হতে পারে।

যৌন ইচ্ছা হচ্ছে মানব ইচ্ছাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। ব্যক্তিরা যখন এই ইচ্ছা দ্বারা পরিচালিত হয় তখন গঠন করে তীব্র কল্পনা, সাহস, ইচ্ছাশক্তি, অধ্যবসায় এবং সৃষ্টিশীল ক্ষমতা যা অনেক সময় তাদের কাছে অপরিচিত। যৌন ইচ্ছা এত শক্তিশালী এবং উত্তেজক যে মানুষ ইহা পেতে মুক্তভাবে তার জীবন এবং সম্মান ঝুঁকিতে ফেলতে রাজি। ইহাকে যখন সজ্জিত করে এবং অন্যান্য পথে পরিচালিত করা হয়, এই প্রভাব বিস্তারকারী শক্তি (প্রভাবক) সকল ধরনের তীব্র কল্পনা, সাহস প্রভৃতি তৈরী করতে পারে। এই শক্তিশালী সৃষ্টিশীল ক্ষমতাকে প্রয়োগ করা যায় সাহিত্যে, কলাকৌশলে বা অন্য যেকোন পেশা বা ইচ্ছায়। ইহাকে অবশ্যই জীবনে সাফল্য অর্জনে প্রয়োগ করা যায়।

যৌন শক্তির কোষ গুলোকে ইচ্ছা শক্তিতে রূপান্তর করার অনুশীলন করলে এর পুরস্কার, অনুশীলন প্রচেষ্টার চেয়েও বহু অধিক মূল্যমানের। যৌন প্রতিক্রিয়ার ইচ্ছা আজন্ম এবং প্রাকৃতিক। ইচ্ছাটিকে নিমজ্জিত বা ত্যাগ করা যায় না এবং করা উচিতও নয়। কিন্তু ইহাকে একটি নির্গম-পথ এর মাধ্যমে প্রকাশ হতে দেওয়া উচিত যাতে ইহা ব্যক্তির শরীর, মন এবং চেতনাকে (আত্মাকে) সমৃদ্ধ করতে পারে। যদি ইহাকে এই নির্গম পথ দেওয়া না হয়, রূপান্তরের মাধ্যমে, ইহা নির্গম পথ হিসেবে খুঁজে নেয় শুধুমাত্র শারীরিক পথগুলোর মাধ্যম।

একটি নদীকে হয়ত বাঁধ দেওয়া যায় এবং এর পানিকে একটা সময়ের জন্য নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিন্তু এক পর্যায়ে ইহা শক্তি প্রয়োগ করে হলেও এর একটি নির্গম পথ খুঁজে বের করবে। একই ব্যাপার সত্য যৌন অনুভূতির জন্য। ইহাকে হয়ত একটা সময়ের জন্য নিমজ্জিত এবং নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিন্তু ইহার প্রকৃতিগত কারণেই ইহা যেকোন পথ খুঁজে নেবে বহিঃপ্রকাশের জন্য। ইহা যদি কিছু সৃষ্টিশীল প্রচেষ্টায় রূপান্তর না হয়, ইহা খুঁজে নেবে কোন নিম্ন মূল্যমানের নির্গম পথ।

সেই ব্যক্তি সৌভাগ্যের অধিকারী, যিনি আবিষ্কার করেছেন যে কিভাবে যৌন অনুভূতিকে কিছু সৃষ্টিশীল প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি নির্গম পথ দিতে হয়। এই আবিষ্কারের জন্য তিনি নিজেকে একটি প্রতিভাবান অবস্থায় উন্নীত করেছেন।

বৈজ্ঞানিক গবেষনা এই তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপারগুলো উদঘাটিত করেছেঃ

১. সবচেয়ে সাফল্য অর্জনকারী ব্যক্তিরা হচ্ছেন সেই ব্যক্তিরাই যাদের যৌন প্রকৃতি উচ্চ পর্যায়ে গঠিত। ব্যক্তিরা যারা যৌনতা রূপান্তরের কৌশল শিখেছেন।

২. ব্যক্তিরা যারা মহান সৌভাগ্য গড়েছেন এবং অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন সাহিত্যে, কলা কৌশল, শিল্প প্রতিষ্ঠান, স্থাপত্যবিদ্যা এবং পেশায় তারা প্রভাবিত হয়েছেন একজন নারী দ্বারা।

এই গবেষণা যা অসাধারণ আবিষ্কার করেছে, ইহা দুই হাজার বছরেরও বেশী সময়ে পাওয়া জীবনী ও ইতিহাসের পাতার মাধ্যমে ফল স্বরূপ পাওয়া গেছে। যেখানেই মহান সাফল্য গাঁথায় পুরুষ ও নারীর সম্পর্ক পাওয়া গেছে, ইহা নিশ্চিত ভাবে নির্দেশ করেছে যে তারা উচ্চ মানে যৌন প্রকৃতির অধিকারী।


যৌন অনুভূতি একটি অনিবার্য ক্ষমতা যার বিরুদ্ধে এমন কোন বিপক্ষ নেই। যেন একটি নিথর দেহ। ব্যক্তি যখন এই অনুভূতি দ্বারা চালিত হয় তখন কাজের জন্য একটি উচ্চমানের শক্তির উপহার পায়। এই সত্যটি বুঝুন এবং এই বিবৃতির তাৎপর্য আপনি ধরতে পারবেন যে যৌনতাকে রূপান্তর করে একজন ব্যক্তি প্রতিভাবান অবস্থায় পৌঁছাতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন