ব্যক্তিগত উন্নয়ন – দ্বাদশ অধ্যায়

অবচেতন মন

সচেতন ক্ষেত্র দ্বারা গঠিত হয়েছে অবচেতন মন। এখানে প্রত্যেক চিন্তা তরঙ্গ পৌছায় পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা। অবচেতন মনে চিন্তা তরঙ্গগুলো শ্রেণী বিভক্ত হয়, সংরক্ষিত হয় এবং যেকোন প্রয়োজনে চিন্তাগুলোকে ফিরিয়ে আনা যায় বা তোলা যায়। ইহা অনেকটা এক বাক্স চিঠি থেকে দরকারী চিঠিটি তোলার মত।

অবচেতন মনে চিন্তাগুলো নথিভুক্ত হয়, সংরক্ষিত হয় এবং পরবর্তীতে চিন্তাগুলোকে ডাকা যায়। তবে অবচেতন মন সর্বাধিক বেশী সাড়া দেয় সেসব চিন্তা তরঙ্গগুলোর প্রতি যেগুলো প্রচন্ড ইচ্ছা দ্বারা আবৃত।

ইহার সাথে ইচ্ছা অধ্যায়ে দেওয়া নির্দেশনাগুলো বিবেচনা করুন। সেখানে যে নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়েছে তা প্রয়োগ করুন। এতে আপনি বুঝতে পারবেন পরিকল্পনা গঠন এবং অধ্যবসায় পালনের জন্য অবচেতন মনের গুরুত্ব।

অবচেতন মন প্রতি মুহূর্তেই কাজ করে, অবিরতভাবে, না থেমে। ইহা মানুষের সচেতন মন এবং অসীম বুদ্ধিমত্তার মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী মাধ্যম। ইহার দ্বারা সচেতন অংশ থেকে চিন্তাগুলো অসীম বুদ্ধিমত্তার কাছে পৌঁছায় এবং উন্নত ও পুনঃগঠিত হয়ে সৃষ্টিশীল কল্পনা কর্তৃক যেকোন সমস্যার সমাধানের ধারণা নিয়ে আসে।

আপনার অবচেতন মনকে আপনি সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। তবে অবচেতন মনকে সহায়তা করা যায়। কোন পরিকল্পনা, ইচ্ছা বা উদ্দেশ্য দিয়ে অবচেতন মনকে সহায়তা করার একটি পদ্ধতি হচ্ছে স্বপরামর্শ। স্বপরামর্শ অধ্যায়ে বর্ণিত নির্দেশনা গুলো দেওয়া হয়েছে যাতে অবচেতন মনকে প্রভাবিত করা যায়। অবচেতন মন প্রভাবিত হলে ইহা কর্তৃক প্রেরিত ইচ্ছা (তরঙ্গ আকারে) অসীম বুদ্ধিমত্তা হতে পুনঃগঠিত হয়ে এমন ধারণা নিয়ে আসবে যা উক্ত ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপান্তর করতে সক্ষম।

অবচেতন মনের অস্তিত্ব এবং এর সম্ভাবনাগুলোকে একটি বাস্তবতা হিসেবে গ্রহণ করার পর আপনি ইচ্ছা অধ্যায়ের নির্দেশনাগুলোর পূর্ণ তাৎপর্য হৃদয়ঙ্গম করতে পারবেন। আপনি আরও বুঝতে পারবেন যে কেন আপনাকে ইচ্ছাগুলো নির্দিষ্ট ভাবে ও পরিষ্কার করে তৈরী করতে এবং লেখায় রূপ দিতে বলা হয়েছে। আপনি আরও বুঝতে পারবেন যে নিদের্শনাগুলো পালন করার জন্য অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে।

লেখাগুলো একবার পড়ুন, প্রতিদিন পড়ুন, বারবার পড়ুন, এতে আপনি প্রেরণা পাবেন এই সূত্রগুলোকে আপনার বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার অধ্যবসায় পালন করুন, শেষ পর্যন্ত পড়ে যান, ফলে আপনার মাঝে অধ্যবসায়, ধৈর্য্য এবং গঠনমূলক চিন্তা করার অভ্যাস তৈরী হবে

অবচেতন মন হচ্ছে মনের একটি স্থান। ইহা বায়ু পূর্ণ স্থানের মত। এমন স্থান যেখানে বায়ু প্রবেশ করবে অবিরতভাবে, বিশুদ্ধ বা দূষিত যেমন বায়ুই হোক না কেন। তেমনি অবচেতন মন এর স্থান খালি থাকে না। চিন্তা তরঙ্গগুলো অবিরতভাবে এখানে প্রবেশ করে আপনার ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, হতে পারে চিন্তাগুলো নেতিবাচক বা ইতিবাচক। যদি আপনি ইতিবাচক চিন্তা তরঙ্গগুলো স্বপরামর্শের দ্বারা অবচেতন মনে প্রবেশ না করান তবে ইহা নেতিবাচক চিন্তা তরঙ্গগুলো দ্বারা পূর্ণ করবে নিজেকে এবং এগুলোকে বাস্তবে রূপ দিবে।

নেতিবাচক তরঙ্গগুলো অবচেতন মনে যাওয়ার রাস্তা চিন্তা তরঙ্গের সহায়তায় নিশ্চিত করে থাকে। এগুলো নেতিবাচক আবেগগুলোর (ভয়, হিংসা, রাগ) সহায়তায় অবচেতন মনে পৌঁছায়। ইতিবাচকগুলো (ইচ্ছা, আস্থা, গভীর আগ্রহ) প্রবেশ করাতে সহায়তা প্রয়োজন। স্বপরামর্শ সূত্র দ্বারা ইতিবাচকগুলো অবচেতন মনে চিন্তা তরঙ্গ রূপে প্রবেশ করাতে হবে। এজন্য সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পালন করবে- আপনি নিজে। ইহা একটি স্বতন্ত্র আশা রূপে অবচেতন মনে বারবার নির্দেশনা দিয়ে পৌঁছাতে হবে।

আবেগগুলো বা অনুভূতিগুলো অত্যন্ত গুরুত্ববহ যেকোন ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপান্তর করার জন্য। এগুলো একটি মৌলিক উপাদানের মত। রুটিতে যেমন আটা উপাদান হিসেবে রয়েছে তেমনি আবেগগুলো বা অনুভূতিগুলো হচ্ছে চিন্তা তরঙ্গের উপাদান। যা চিন্তা তরঙ্গগুলোকে মৃত অবস্থা থেকে জীবন্ত করে তোলে। এজন্যই মানুষ ঠান্ডা কারণ বা যৌক্তিক কারণ গুলো দ্বারা গঠিত চিন্তা তরঙ্গগুলো অনুযায়ী ক্রিয়া করতে পারে না, যতটা লোকেরা ক্রিয়া করতে পারে আবেগগুলো বা অনুভূতিগুলো মিশ্রিত চিন্তা তরঙ্গগুলোর মাধ্যমে।


আপনি নিজেকে প্রস্তুত করুন। অবচেতন মনকে সহায়তা দ্বারা প্রভাবিত করে ইহাকে কাজে লাগান, যা আপনি ইচ্ছা করেন। চিন্তা করুন, আপনাকে প্রস্তুত করবে আপনার ইচ্ছা। মানুষ হন, জীবনে সাফল্য অর্জন করুন এবং ইহা করতে হলে নিজেকে সাফল্যের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। নিজেকে সাফল্যের জন্য প্রস্তুত করুন, তারপর সাফল্য অবশ্যই আসবে। ইহা নয় যে সাফল্য এলে আপনি প্রস্তুত হবেন। ছাত্র জীবনের পরীক্ষার ব্যাপারটি চিন্তা করুন, প্রস্তুতি নেওয়ার পর আপনি পরীক্ষা দিতে গিয়েছেন এবং ভাল ফলাফল করেছেন। যদি পরীক্ষা দেওয়ার পর প্রস্তুতি নিতে চান, তবে তা মূল্যহীন। ঠিক একই রূপ, সাফল্য অর্জনের পূর্বেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে, একমাত্র এভাবেই আপনি আপনার সাফল্য নিশ্চিত করতে পারেন, অন্যথায় নয়।

ফজলে রাব্বি (Fazle Rabbi)

আমার জীবনের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৪টি অনুপ্রেরণামূলক বই প্রকাশ করা। saphollo.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন