সিদ্ধান্ত
সিদ্ধান্ত,
যে ব্যক্তি সিদ্ধান্ত নেয় যে সে জীবনে সফল হবে, তার যেকোন ইচ্ছাকে বাস্তবে
রূপান্তর করবে সে সাধারণত তা করে থাকে। যদি আপনি দ্বিধা করেন তবে আপনার পরিকল্পনা
পূরণে আপনি শতভাগ চেষ্টা দিতে সক্ষম হবেন না এবং ব্যর্থ হবেন।
দ্বিধা
আমাদের একটি সাধারণ শত্রু যা বেশীরভাগ লোকের মাঝেই পাওয়া যায়। ইহার ওপর আমাদের জয়
আনতে হবে। দ্বিধার ওপর কর্তৃত্ব করার সূত্রটি হচ্ছে সিদ্ধান্ত। সেখানে কোন দ্বিধা
থাকতে পারে না যখন আপনি নির্দিষ্টভাবে
সিদ্ধান্ত নেবেন।
পৃথিবীর মহান
সাফল্যের অধিকারী ব্যক্তিগণ ও নেতাগণ দ্রুত ও নির্দিষ্টভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার
অভ্যাসের অধিকারী। তারা সকলেই তাদের সিদ্ধান্তে পৌছান দ্রুততার সাথে এবং এগুলোকে
পরিবর্তন করেন ধীরভাবে। কিন্তু সাধারণ লোকেরা যারা এদের মত মহান সাফল্যের অধিকারী
নন, তারা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্তে পৌছান ধীরভাবে এবং সিদ্ধান্তগুলো প্রায়ই
পরিবর্তন করেন এবং দ্রুততার সাথে পরিবর্তন করেন। আরেক ধরনের লোক রয়েছে যারা
দ্রুততার সাথে সিদ্ধান্তে পৌঁছান কোন তথ্য ও সম্ভাবনা চিন্তা না করেই এবং ইহা
দ্রুততার সাথেই পরিবর্তন করেন। এরাও মহান সাফল্যের অধিকারী হতে পারেন না কারণ তারা
প্রকৃত সমস্যা এবং এর সম্ভাব্য সমাধানগুলো মাঝে উৎকৃষ্ট সমাধান চিন্তা করে চিহ্নিত
করতে ব্যর্থ।
বেশীরভাগ
মানুষ তাদের কাজে ব্যর্থ হন কারণ তারা সাধারণত, সহজেই অপর ব্যক্তিদের “মতামত” দ্বারা
প্ররোচিত হন। তারা জল্পনাকারী (বাজে গল্পকারী) প্রতিবেশী, আত্মীয়, স্বজন, বন্ধুদের
অনুমতি দিয়ে থাকেন তাদের জন্য চিন্তা করে দিতে এবং মতামত দিতে। মতামত হচ্ছে
পৃথিবীর সবচেয়ে সস্তা বিষয়, যা সকলেই দিতে আগ্রহী, যারা ইহা নিতে ইচ্ছুক। আপনি
আপনার কর্মে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রাপ্ত তথ্য, উপাত্ত, সুযোগ, ফলাফল এবং অভিজ্ঞতার
ভিত্তিতে। অথচ লোকেরা তাদের সহায়তা নেন যারা উক্ত কর্মটি সম্পর্কে মূর্খ এবং
জল্পনাকারী।
যদি আপনি
মতামতগুলো গ্রহণ করেন তবে আপনার নিজস্ব কোন ইচ্ছা থাকবে না।
নিজের
পরামর্শদাতা নিজেই হোন। এখানে বর্ণিত সূত্রগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করুন, আপনার
কর্ম সম্পর্কে পরিপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করুন, আপনিও দ্রুত ও নির্দিষ্টভাবে সিদ্ধান্ত
নিতে পারবেন। আপনার আত্মবিশ্বাসে অন্য কোন ব্যক্তিকে স্থান দিবেন না, শুধুমাত্র
আপনার “কর্তৃত্বশীল
মন”
এর দলের সদস্যদের ব্যতীত। এই দলের সদস্যদের নির্বাচন করুন এমন যে তারা আপনার
সিদ্ধান্তগুলো অনুধাবন করতে সক্ষম এবং আপনার প্রতি সহানুভূতিশীল, যারা সাময়িক
বাঁধায় হার মানে না।
ঘনিষ্ঠ বন্ধু
বা আত্মীয়রা ইহা নাও করতে পারে। প্রায় সময় দেখা যায়, বেশীরভাগ লোকেদের ইচ্ছাগুলো অঙ্কুরেই
নষ্ট হয় আত্মীয়দের “মতামতগুলো” বা “ঠাট্টাগুলো” দ্বারা। অনেক ব্যক্তিই এই ধরনের হীনমন্যতায়
ভোগেন তাদের সারা জীবন কারণ কিছু মূর্খ ব্যক্তি তাদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করেছে মতামত
বা ঠাট্টা দ্বারা।
আপনার নিজের
একটি মস্তিষ্ক আছে ও একটি মন আছে। এগুলোকে কাজে লাগান এবং আপনার প্রয়োজনীয়
সিদ্ধান্ত নিন। যদি অপর কোন ব্যক্তি থেকে কোন ব্যাপার বা তথ্য জানতে হয় তবে নিজের
উদ্দেশ্য প্রকাশ না করে তা জানার চেষ্টা করুন।
ইহা মানুষের
একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, সে বাহ্যিক ভাবে চাতুর্য বা জ্ঞানী হওয়ার ছদ্মবেশ ধারণ
করে বোঝাতে চায় যে তাদের অনেক জ্ঞান আছে, তারা অনেক বেশি বোঝে। স্মরণ রাখবেন, যারা
কম বোঝে তারা বেশি কথা বলে এবং কম শোনে। যদি আপনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চান তবে
আপনার মুখ বন্ধ রাখুন এবং চোখ কান খোলা রাখুন। আপনি যদি শোনার চেয়ে বেশি কথা বলেন
তবে আপনি অনেক প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জনের থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন, অধিকিন্তু আপনার
উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা উন্মুক্ত করার ফলে লোকেরা আপনাকে পরাজিত করে বিশেষ আনন্দ
নেবে কারণ তারা আপনাকে হিংসা করে।
আপনি বলার
পূর্বে দুইবার চিন্তা করুন, আপনি যা বলতে যাচ্ছেন তা বলা ঠিক হবে কি না।
একটি
সিদ্ধান্তে মুক্তি বা মৃত্যু
সিদ্ধান্তে
উপর অটল থাকুন। এজন্য আপনার দরকার হবে সাহস। সিদ্ধান্তকে সম্পন্ন করতে
আত্মবিশ্বাসী ও অধ্যবসায়ী হোন। মানব সভ্যতা টিকে আছে সিদ্ধান্তের ওপর, আপনার
আশেপাশে দৃশ্যমান সবই সিদ্ধান্তের ফসল। লোকেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তা পূরণ করার
সাহস দেখিয়েছেন বলেই আমরা আজ বহুতল ভবনে বাস করি, এমনকি আমাদের শরীরের পরিধেয়
পোশাকও সিদ্ধান্তের ফসল।
সক্রেটিস বিষ
ভরা পেয়ালা পান করে মৃত্যু বরণ করতে সিদ্ধান্ত নেন তবুও তিনি তার ব্যক্তিগত
বিশ্বাস পরিবর্তন করেন নি। ইহা ছিল একটি সাহসী সিদ্ধান্ত। ইহা বুঝতে মানুষের এক
হাজার বছর সময় লেগেছে, মানুষকে জাগিয়ে তুলেছে এবং দিয়েছে মুক্তভাবে চিন্তা করার
এবং বলার স্বাধীনতা।
যিনি দ্রুত ও
নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেন তিনি জানেন কোথায় যাচ্ছেন। আপনি সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা
করলে উক্ত স্থানে সিদ্ধান্তহীনতা প্রবেশ করবে। আপনি কোথায় যাবেন তা কল্পনা করতে
পারবেন না, কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত পাবেন না এবং পরিকল্পনা ব্যর্থ হবে।
তাই সিদ্ধান্ত নিন, আপনার পরিকল্পনা অধ্যবসায়ের সাথে পালন করুন এবং সফল হোন।
দ্রুত
সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভ্যাস গঠন করুন। ইহা অন্যান্য মানসিক গুণাবলীর মত যা একজন
ব্যক্তি জন্ম থেকে নিয়ে আসে না বরং জন্ম গ্রহণ করার পর আপন জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়ে
গঠন করতে হয়। আপনার ইচ্ছা সম্পর্কে নির্দিষ্ট হোন, প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করুন,
পরিকল্পনা সৃষ্টি করুন, সিদ্ধান্ত নিন, অধ্যবসায় পালন করুন এবং যে কোন ইচ্ছাকে
আপনি বাস্তবে রূপান্তর করতে পারবেন। আপনার প্রতিদিনের কাজে এগুলো প্রয়োগ করুন এবং অভ্যাস
গড়ে তুলুন, এতে আপনার জয়ী হওয়ার অভ্যাস সৃষ্টি হবে। যে ব্যক্তি জয়ী হওয়ার অভ্যাস
গঠন করে তিনি পরাজয়ের মত সাময়িক বাঁধা অতিক্রম করেই জয়ী হন। সিদ্ধান্ত নিন জয়ী
হওয়ার, সিদ্ধান্ত নিন জীবনে সফল হওয়ার।