এরিয়ান সান-মাইথ, দ্য অরিজিন অব রিলিজিয়নস্ বইয়ের পর্যালোচনা, অনুবাদ সা'দউল্লাহ


সূর্যের তিন ধরনের শক্তি। যখন উদিত হয় তখন সূর্যের সৃষ্টিকারী শক্তি। তারপর সূর্য উঠে গিয়ে পৃথিবীকে লালন-পালন করে। এর থেকে আসে লালন-পালনকারী শক্তি। তারপর খরার সময় শস্য পুড়ে যা, সূর্যের খরতাপে ধ্বংসাত্মক রূপ প্রকাশ পায়। একে বলা হয় ধ্বংসাত্মক শক্তি। এই তিন ধরনের শক্তিকে ত্রিত্ববাদ হিসাবে প্রাচীনকাল থেকে সূর্যকে পূজা অর্চনা করা আরম্ভ হয়। নানা দেশে, নানা জাতিতে, নানান সভ্যতায় সূর্যকে ভিন্নরূপে, অবতার হিসাবে পূজা করা হয়েছে।

হিন্দুরা ত্রিমূর্তির দেবতায় বিশ্বাসী - ব্রহ্ম পিতামহ, বিষ্ণু পুত্র এবং শিব হলো ধ্বংশকারী।

খ্রিস্টানদের কাছে ত্রি-মূর্তির তৃতীয় ব্যক্তি হলো পবিত্র আত্মা এবং ঘুঘু পাখির প্রতীক। দ্বিতীয় ব্যক্তিটি হলো শব্দ-জ্ঞান বা গ্রিক ভাষায় লোগোস।

খ্রিস্টপূর্ব ৬,০০০ বছর পূর্বে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর তীরে মানুষ বসবাস আরম্ভ করে। এখান থেকেই মেসোপটেমিয়া সভ্যতার সূচনা ঘটে খ্রিস্টপূর্ব ৫,০০০ বছরের দিকে। এখানে ব্রোঞ্জযুগে আক্কাদীয়, এসেরিয় ও ব্যবিলনীয় সভ্যতা গড়ে ওঠে। লৌহযুগে এসেরিয় ও নব্য-ব্যবিলনীয় সভ্যতা গড়ে ওঠে। এরা সূর্যকে পূজা করত এবং সূর্যের তিন শক্তি সম্পর্কে অবগত ছিল। ব্যবিলনে নানান উপকথা প্রচলিত ছিল। ব্যবিলীয়দের সৃষ্টিতত্ত্ব সম্বন্ধে কিম্বদন্তি ছিল, মানুষের পতনের কথা ছিল। হিব্রুরা ব্যবিলীয়দের দাস ছিল। সেখান থেকে তারাও এসব উপকথা শিখে নেয়। যা পরে তাদের জেনেসিস (আদিপুস্তক) এ লিখে রাখে। মেসোপটেমিয়া থেকে পরবর্তী সময় মিশরীয় সভ্যতা, পারস্য সভ্যতা, ভারতীয় (আর্য) সভ্যতা, গ্রিক সভ্যতা সহ নানান সভ্যতার উন্মেষ ঘটে।

ব্যবিলনীয়দের একটি মহাপ্লাবনেরও কাহিনী আছে যা হিব্রুবাইবেলের কাহিনী সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, মনে রাখতে হবে ব্যবিলনীয়রা আগে তারপর হিব্রু বা ইহুদীরা। (৫৩ পৃষ্ঠা)। নিঃসন্দেহে এটা বলা যায় যে কলদীয়তে বন্দিদশাকালীন সময়ে ইহুদীরা (হিব্রুরা) এই সব উপকথার সাথে বিশেষভাবে পরিচিত হয় এবং পরে তারা তাদের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করে। (৫৫ পৃষ্ঠা)।

এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে একটা জাতি অন্য একটা জাতির সংস্পর্শে এলে উভয় জাতি তাদের উপকথাগুলোর সংমিশ্রণ ঘটায়, কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব করে না। (৫৫ পৃষ্ঠা)।

যদিও বুদ্ধদেব শান্তির সাথে বৃক্ষের নিচের মৃত্যুবরণ করেছেন বলে বলা হয়, তবুও তাকে নির্যাতিত ত্রাণকর্তা বলা হয়েছে এবং মানুষের দুঃখের কারণে তিনি তৃণের মতো নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। (Max Muller, Science and Religion, p.224 London 1873)

বহু প্রাচীনকাল থেকে ত্রুশ’কে অনন্তকালের প্রতীক চিহ্ন হিসাবে ধরা হতো। (৭৪ পৃষ্ঠা)। এখানে মিশর, গ্রিক, সেন্ট এন্টনি, পার্শিয়ান, প্রাচীন ব্যবিলনবাসী, ভারত, নেপাল সহ বহু জায়গা ও জাতির কথা উল্লেখ করেছেন যারা ত্রুশ’কে অনন্তকালের প্রতীক চিহ্ন হিসাবে ব্যবহার করত। স¤্রাট অসুর বানিপাল ছিলেন এসিরিয়দের স¤্রাট। খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতক, তখন মিশর এসিরিয়দের অধীন একটি প্রদেশ। এ সময় অসুর বানিপাল অন্যদিকে বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত থাকায় মিশরে দৃষ্টি দিতে পারেননি। তাই সামটিক (Psamtik) নামে এক মিশরীয় (সেনাপতি যিনি ঐ সময় এ সিরিয়দের পক্ষে মিশরে ভাইসরয় হিসাবে কাজ করছিলেন, সুযোগ বুঝে, নিজেকেই মিশরের সর্বাধিপতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং ফেরাও (Pharoh) দের ২৬ তম বংশের প্রথম ফেরাও সামটিক-১ (Psamtik-1) বলে ঘোষণা দেন। (৮১ পৃষ্ঠা)।

আর্যদের কিম্বদন্তি (Myth) থেকে মি. কক্স (Cox) বলেন - যে যা-ই বলুক এবং কুমারী মাতাকে যে যেভাবেই চিহ্নিত করুক - সকল পুরাণ তত্ত্ব ঊষা (Dawn) কে নির্দিষ্ট করছে। (৮২ পৃষ্ঠা)। সকল পুরাণে কুমারী মাতা বলতে ভোরের সূর্যোদয়ের কথাকে বোঝানো হয়েছে।

ঋকবেদে সূর্যকে স্বর্ণের আলো বলা হয়েছে - দুবাহু দুদিকে যেন সোনা ছড়িয়ে দিলেন, স্বর্গের মধ্যে এবং পৃথিবীকে উদ্ধার করতে ও অন্ধকারকে মুছে দিতে জন্ম নিলেন। (৮৩ পৃষ্ঠা)।

পার্সিয়ান উপকথা অনুযায়ী অরমুজ (Ormuzd) এই বিশ্বপৃথিবী ছয়দিনের সময়ে সৃষ্টি করেন। প্রথমে করেন স্বর্গ, দ্বিতীয় জল, তৃতীয় পৃথিবী, চতুর্থ গাছ-গাছড়া, পঞ্চম পশুপাখী এবং ষষ্ঠবারে মানুষ সৃষ্টি করেন। এরপর অরমুজ (Ormuzd) বিশ্রাম গ্রহণ করেন। (৯২, ৯৬ পৃষ্ঠা)। ভন বোলেন এবং ড. ম্যাকল এর বর্ণনা মতে বিশ্ব সৃষ্টির ঘটনা। (৯২ পৃষ্ঠা)। (দেখুন : Aids to Faith, P. 219, also the Pentateuch Examined. Vol, iv P. 113)।

পৃথিবী সৃষ্টির পর সৃষ্টিকর্তা অশুভকে (আহরিমান) সর্পের আকারে পৃথিবীতে প্রেরণ করে যে প্রথম মানব-মানবীকে প্রলুব্ধ করেছিল ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করতে। (৯২ পৃষ্ঠা)। (দেখুন : Aids to Faith, P. 219, also the Pentateuch Examined. Vol, iv P. 113)।

সবশেষে বলা যায়, টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীদ্বয়ের মধ্যবর্তী অঞ্চলে মেসোপটেমিয়া সভ্যতা গড়ে ওঠে। এখান থেকে মানুষের চিন্তা ভাবনাকে সংগঠিত করে, রাজ্য পরিচালনা করে সভ্যতা গড়ে তোলার দিকে মানুষ ধাবিত হয়। তাই আমরা যতবেশি মেসোপটেমিয়া সভ্যতা সম্পর্কে জানবো ততবেশি বর্তমান চিন্তা ভাবনার সূচনা বা আরম্ভ বিন্দু ধরতে পারবো।
ফজলে রাব্বি (Fazle Rabbi)

আমার জীবনের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৪টি অনুপ্রেরণামূলক বই প্রকাশ করা। saphollo.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন