আস্থা
আস্থা হচ্ছে
মস্তিষ্কের রাসায়নিক অবস্থা। যখন আস্থা চিন্তার তরঙ্গ শক্তির সাথে মিলিত হয় তখন
মনের অবচেতন অংশ তাৎক্ষণিক সেই তরঙ্গ ধরে ফেলে, রূপান্তর করে ঐশ্বরিক পর্যায়ে এবং
একে পৌছে দেয় অসীম বুদ্ধিমত্তার কাছে।
আস্থা, প্রেম
এবং যৌনতা হচ্ছে প্রধান ইতিবাচক আবেগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। যখন এই তিনটি
একত্রিত হয় তখন তারা এমন “রঙের” সৃষ্টি করে যা তরঙ্গ শক্তি আকারে তাৎক্ষণাৎ অবচেতন মনে পৌছে
যায়, যেখানে ইহা ঐশ্বরিক পর্যায়ে পরিবর্তিত হয় যা কিনা একমাত্র পথ যাতে অসীম বুদ্ধিমত্তার
দেখা পাওয়া যায়।
প্রেম এবং
আস্থা হচ্ছে মানসিক অবস্থা, যা ব্যক্তির আত্মগত দিকের সাথে সম্পৃক্ত। যৌনতা
(যৌনশক্তি) পুরোপুরি জৈব রাসায়নিক এবং ইহা শুধুমাত্র শারীরিক দিকে সম্পৃক্ত। এইগুলো
মিশ্রণ বা মিলিত হলে, এই তিনটি আবেগের প্রভাবে উন্মুক্ত হয় ব্যক্তির সসীম
চিন্তাকারী মস্তিষ্ক থেকে অসীম বুদ্ধিমত্তার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের পথ।
কিভাবে আস্থা
গঠন করবেন
এখন, এই
বিবৃতিতে আপনি আস্থা সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। তবে আস্থা সম্পর্কে
বোঝার পূর্বে আপনাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র সম্পর্কে জানতে হবে। ইহা হচ্ছে স্ব-পরামর্শ।
স্ব-পরামর্শ হচ্ছে আপনার ইচ্ছাকে তার বাস্তব অবস্থায় পরিণত করার রূপান্তরক।
স্ব-পরামর্শ হচ্ছে সেই সূত্র যার দ্বারা কিছু নির্দেশনা বারবার পড়ে আপনার অবচেতন
মনে সৃষ্টি করবে মানসিক স্থিরতা যাকে বলা হয় আস্থা।
একটু
ব্যাখ্যা করা যাক, আপনি যে উদ্দেশ্যে এই লেখা পড়ছেন তাই নিয়ে। বিষয়টা হচ্ছে সেই
ক্ষমতাকে অর্জন করা যাতে আপনার ইচ্ছার অনুভবযোগ্য চিন্তা তরঙ্গকে বাস্তবে পরিণত
করা যায়, আপনার ব্যক্তিগত উন্নয়ন ঘটানো যায়। স্ব-পরামর্শ এবং অবচেতন মন অধ্যায়ে
লিখিত দিক-নির্দেশনাগুলো আপনি অনুসরণ করলে, স্ব-পরামর্শ অধ্যায়ে তা বর্ণনা করা
হয়েছে, আপনি আপনার অবচেতন মনকে মানাতে পারবেন যে আপনি যা চান তাতে আপনি বিশ্বাস
করলে আপনি তা পাবেনই এবং ইহা (অবচেতন মন) সেই বিশ্বাস অনুযায়ী কাজ করবে। যা আপনার
অবচেতন মন “আস্থা” আকারে
আপনাকে ফেরত দিবে। এর ফলে আপনি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুসরণ করে আপনার ইচ্ছা পূরণ
করতে পারবেন।
যেই পদ্ধতিতে
একজন ব্যক্তি আস্থা গঠন করে, যার কোন অস্তিত্ব নেই, তা বর্ণনা করা খুবই কঠিন।
বাস্তবে ইহা এতটাই কঠিন যে একজন অন্ধ মানুষকে লাল রঙের বর্ণনা দেওয়া যে কোন দিনই
রঙ দেখেনি এবং এমন কিছুই নেই যার সাথে আপনি তুলনা করে তাকে বর্ণনা দিবেন। আস্থা
হচ্ছে একটি মানসিক অবস্থা যা আপনি ইচ্ছা দ্বারা গঠন করতে পারেন, আপনি এখানে বর্ণিত
নিয়ম ও সূত্রগুলোর উপর আধিপত্য করার পর, ইহাকে বাস্তব কর্মসূচীতে পরিণত করতে
পারবেন।
আস্থা নামক
এই আবেগটিকে গঠনের একমাত্র জানা উপায় হচ্ছে বারবার ইতিবাচক নিদের্শ দিয়ে নিজ
অবচেতন মনে পৌছানো।
নিম্নোক্ত
ব্যাখ্যাটি এর অর্থকে আরও পরিষ্কার করে তুলবে, আস্থা দ্বারা যেভাবে মানুষেরা মাঝে
মাঝে অপরাধী হয়ে ওঠে। একজন বিখ্যাত অপরাধ বিজ্ঞানী তার লেখায় বলেন, “যখন ব্যক্তি
প্রথম অপরাধের সংস্পর্শে আসে তখন তিনি একে অত্যন্ত ঘৃণা করে। যদি তিনি একটা সময়
পর্যন্ত অপরাধের সংস্পর্শে থাকে তবে তিনি এর প্রতি অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং সহ্য করে।
যদি তিনি একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ইহার সংস্পর্শে থাকে তবে তিনি অবশেষে একে আলিঙ্গন
করে নেয় এবং এর দ্বারা প্রভাবিত হতে থাকে।”
এটা ঠিক একই
সমতুল্য, ইহা বলা যে, যেকোন চিন্তার তরঙ্গ যা বারবার অবচেতন মনে পৌছে দেওয়া হয় তা
অবশেষে গৃহীত হয় এবং অবচেতন মন সেই অনুযায়ী কাজ করে, যার মাধ্যমে সেই তরঙ্গকে
বাহ্যিকরূপে সমানভাবে রূপান্তর করে। ইহাই আজ পর্যন্ত পাওয়া মাধ্যমগুলোর মধ্যে
সর্বাপেক্ষা বাস্তবিক পদ্ধতি।
ইহার সাথে
আরও যুক্ত করা যাক। বিবৃতিটি আবার স্মরণ করে দেখুন, যে সকল চিন্তাগুলোই আবেগযুক্ত
(অনুভব থেকে) এবং আস্থার সাথে মিশ্রিত, সাথে সাথেই বাস্তবে নিজেদের রূপান্তর করে
নেয়।
আবেগগুলো বা
চিন্তাগুলোর “অনুভব” অংশ হচ্ছে
সেই ব্যাপারগুলো যা চিন্তা গুলোকে দেয় প্রাণশক্তি, জীবন এবং কাজ। আস্থা, প্রেম এবং
যৌনতা যখন চিন্তার তরঙ্গের সাথে মিশ্রিত হয় তখন বিশাল কর্ম সম্পাদন করতে পারে,
এদের যেকোন একটি আবেগ শক্তির চেয়ে।
চিন্তা
তরঙ্গের সাথে শুধু স্বতন্ত্র (একা) আস্থা মিশ্রিত হলেই হবে না, এর সাথে আরও কোন
ইতিবাচক আবেগ অথবা নেতিবাচক আবেগ মিশ্রিত হতে হবে। তবেই এই মিশ্রিত তরঙ্গ অবচেতন মনে
পৌছাবে এবং একে প্রভাবিত করবে।
এই বিবৃতি
থেকে আপনি বুঝতে পারছেন যে একটি চিন্তার তরঙ্গকে মানুষের অবচেতন মন বাহ্যিকরূপে
প্রতীয়মান করতে পারে, যদিও তা হতে পারে নেতিবাচক বা ধ্বংসাত্মক তরঙ্গ। ঠিক ততটাই
দ্রুত এটি কাজ করে একটি ইতিবাচক বা গঠনমূলক চিন্তার তরঙ্গের প্রতি। এই সেই অদ্ভুত
আশ্চার্যজনক বিষয় যার কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষের অভিজ্ঞতা হয় “র্দুভাগ্য” বা “হতভাগ্য” নামক বিষয়ের
সাথে।
বহু লক্ষাধিক
মানুষ আছেন যারা নিজের ক্ষেত্রে বিশ্বাস করেন যে তারা দারিদ্র্যতা এবং ব্যর্থতার “কষ্টভোগ করতে
ভাগ্য নির্দিষ্ট” করা। কারণ কিছু অদ্ভুত শক্তির উপর তারা বিশ্বাস করেন যাদের
উপর তাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। তারা নিজেরাই তাদের র্দুভাগ্যের সৃষ্টিকারী, কারণ
হচ্ছে এই নেতিবাচক বিশ্বাস, যা অবচেতন মন ধরে ফেলেছে এবং একে বাস্তবে সমানরূপে
রূপান্তরিত করেছে।
ইহা একদম ঠিক
জায়গা যেখানে আপনাকে পরামর্শ দেওয়া যায় যাতে আপনি লাভবান হতে পারেন। অবচেতন মনে
কোন ইচ্ছা প্রেরণ করার মাধ্যমে যা আপনি বাস্তবিক রূপে চান তা প্রকৃতপক্ষেই একটা
স্থির চাওয়া বা বিশ্বাস এর মাধ্যমেই ঠিক যথাযতভাবে ঘটবে। আপনার বিশ্বাস বা আস্থা
হচ্ছে সঠিক উপাদান এবং সেই উপাদান যা নির্দিষ্ট করবে আপনার অবচেতন মনের কাজ। [এখানে
“প্রতারণা
করে”
বাঁধা দেওয়ার কিছু নেই, আপনার অবচতন মনকে স্ব-পরামর্শ এর মাধ্যমে নিদের্শনা দিয়ে
যান।] এখানে অবচেতন মনকে “কৌশলে” বা “প্রতারণা করে” আপনার ইচ্ছানুযায়ী গতিতে চালাতে পারেন।
কৌশলটি হচ্ছে পরিষ্কার ভাবে নিজেকে স্ব-পরামর্শের নির্দেশনা দিয়ে যাওয়া।
এই “প্রবঞ্চনা” কে আরও
বাস্তবিক করার জন্য নিজেকে সেই ভাবে পরিচালিত করুন যা আপনার হওয়ার ইচ্ছা, এমনভাবে
যেন আপনি যা চাচ্ছেন সেই ইচ্ছানুযায়ী বিষয়ের অধিকারী হয়েছেন যখন আপনি অবচেতন মনকে
নির্দেশনা দিবেন।
অবচেতন মন
বাহ্যিকরূপে রূপান্তর করবে যতটা সম্ভব সোজা এবং বাস্তবিক মাধ্যমে, যেকোন নির্দেশ
যা বিশ্বাস বা আস্থা রূপে দেওয়া হয়, তা অবশ্যই নির্দেশমত বেরিয়ে আসবে।
নিশ্চিতভাবে,
আপনাকে একটি শুরুর বিন্দু দেখানো হল যাতে আপনি অনুসন্ধান এবং অনুশীলন করতে পারেন।
যাতে আপনি আস্থা মিশ্রিত করার ক্ষমতা নিয়ে অবচেতন মনকে যেকোন নির্দেশ দিতে পারেন।
অনুশীলনের দ্বারাই এই ক্ষমতার পরিপূর্ণতা আসবে। শুধু কেবলমাত্র এখানকার
নির্দেশাবলী পড়ে গেলেই হবে না।
যদি এটা সত্য
হয় যে ব্যক্তি অপরাধের সংস্পর্শে থাকলে অপরাধী হয়ে ওঠে (এটা জানা কথা), তবে এটাও
সমান সত্য যে একজন ব্যক্তি আস্থা গঠন করতে পারে প্রতিনিয়ত তার অবচেতন মনকে পরামর্শ
দিয়ে। আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে স্ব-পরামর্শ সম্পর্কে আরও পড়বো।
অবশেষে মন
এমন প্রকৃতির প্রভাবে আসে যাতে এর উপর আধিপত্য বিস্তার করা যায়। এই সত্যকে বুঝুন
এবং আপনি জানতে পারবেন যে কেন ইতিবাচক আবেগগুলোকে আপনার মনের কর্তৃত্বকারী শক্তি
হিসেবে উৎসাহিত করা প্রয়োজন এবং নেতিবাচক আবেগগুলোকে দূরীভূত করার জন্য নিরুৎসাহিত
করা প্রয়োজন।