স্ব-পরামর্শ
স্ব-পরামর্শঃ যে পদ্ধতিতে অবচেতন মনকে
প্রভাবিত করা যায়।
স্ব-পরামর্শ হচ্ছে
স্বীয় পরামর্শ। অর্থাৎ নিজেকে পরামর্শ প্রদান। আপনি নিজেকে গঠন করবেন, নিজের
ব্যক্তিগত উন্নয়ন করবেন। সুতরাং আপনাকে পরামর্শ দিতে সবচেয়ে যোগ্য এবং বিশ্বস্ত
ব্যক্তি আপনি নিজেই। ইহা আপনাকে আত্ম শাসনের প্রেরণা দেয়।
স্বপরামর্শ
হচ্ছে আত্ম পরামর্শ। ইহা মস্তিষ্কে সচেতন মনের একটি স্থান যেখান থেকে অনবরত অবচেতন
মনে পরামর্শ মূলক শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে চিন্তা তরঙ্গ প্রেরণ করা হয়। এই চিন্তা
তরঙ্গ অবচেতন মন থেকে বর্ধিত শক্তি নিয়ে সচেতন মনে ফিরে আসে যা সচেতন মনকে কাজ
করার জন্য প্রেরণা দেয়। যা পরবর্তীতে রূপ নেয় ইচ্ছা শক্তিতে।
ব্যক্তিগত
উন্নয়নে স্ব-পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। আপনি একটি সহজ উদাহরণের মাধ্যমে
ইহা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। আপনি রাতে বিছানায় শুয়ে নিজেকে বলুন, “আমি সকাল ৭
টায় উঠবো।”
দশবার বলুন। ইহা বলতে বলতে ঘুমাবার চেষ্টা করুন। দেখবেন পরদিন ঠিক সকাল ৭ টায় আপনি
উঠেছেন। ইহা হচ্ছে একটি ইতিবাচক চিন্তা। ইহা আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে
পরীক্ষা দেওয়ার আগের রাতে ব্যবহার করে থাকে।
এবার আমরা
একটি নেতিবাচক চিন্তা দেখবো। ইহা অবশ্য আমরা সচেতনভাবে বা অসচেতনভাবে প্রায়ই
ব্যবহার করি। অনেকেই বলে থাকেন রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে যে “কালকে জরুরী
কাজ আছে, সকাল ৮ টায় উঠতে হবে। কিন্তু এখন রাত ১২.৩০ বেজে গেছে। এখন আর সকালে উঠতে
পারবো না।”
আমাদের অবচেতন মন এই নেতিবাচক চিন্তাকে গ্রহণ করে এবং ইহাতে বর্ধিত শক্তি দিয়ে
সচেতন মনে ফেরত পাঠায়। ফলে পরদিন সকালে ব্যক্তিটি ৮.৩০ এ ঘুম থেকে উঠতে পারে। ইহা
হচ্ছে নেতিবাচক চিন্তা যা আমরা স্বপরামর্শ রূপে ব্যবহার করে থাকি।
এখন একটি
ভিন্ন উদাহরণ পড়বো। একজন লোক রাতে ঘুমাবার জন্য বিছানায় গেলেন। এখন অপর কোন
ব্যক্তিকে সকাল ৭ টায় তাকে ডেকে উঠাতে বললেন। এমন অবস্থায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা
যায় অপর ব্যক্তি না ডাকা পর্যন্ত লোকটি ঘুমিয়ে থাকে। ইহা অবস্তুগত চিন্তা।
এই সকল
চিন্তাগুলো যা ব্যক্তি তার মস্তিষ্কে অবচেতন মনে প্রেরণ করে থাকে তা একই রূপে অধিক
শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসে এবং তদানুযায়ী সচেতন অংশ কাজ করে।
স্বপরামর্শ
অবচেতন মনে পৌছায় ব্যক্তির পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারা। তবে অবচেতন মনে যে কোন চিন্তা
তরঙ্গ স্ব-পরামর্শ ছাড়াও যেতে পারে। ইহা চিন্তা তরঙ্গের প্রাবল্যের ওপর নির্ভর
করে। এই প্রাবল্য ইতিবাচক বা নেতিবাচক উভয়ই হতে পারে। ব্যক্তিরা প্রায়ই বাস্তব
পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে তাদের ইচ্ছার ইতিবাচক চিন্তা বাদ দেয়। উক্ত স্থান দখল করে
নেতিবাচক চিন্তা যে “কাজটি মনে হয় হবে না।” অবচেতন মন এই চিন্তা তরঙ্গ গ্রহণ করে,
অধিক শক্তিশালী করে সচেতন মনে ফেরত পাঠায় এবং সচেতন মন তদানুযায়ী কাজ করে। যা
ব্যাখ্যা করে কেন এত বেশি লোক তাদের জীবন দারিদ্র্যতার মধ্য দিয়ে যাপন করে।
আপনাকে ইচ্ছা
অধ্যায়ের ছয়টি ধাপ অনুসরণ করতে হবে। এই ধাপগুলো অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ধাপগুলো অনুসরণ করাটা খুবই সহজ। এগুলোকে স্বপরামর্শ রূপে ব্যবহার করুন।
পদ্ধতিটি
ব্যবহার করার ক্ষেত্রে, জোরে স্পষ্ট ভাষায় নিদের্শনা গুলো পড়ুন। পড়ার সময় আবেগ ও
অনুভূতি প্রয়োগ করুন। কারণ অবচেতন মনে আবেগ ও অনুভূতি নিয়ে বলা নির্দেশনাই পৌছায়
নতুবা আপনি হাজার বার পড়েও ব্যর্থ হবেন।
প্রথমবার
পড়লে হয়ত আপনার সেই অনুভূতি আসবে না কিন্তু হতাশ হবেন না, চেষ্টা করুন। ব্যর্থ হলে
আরেকবার চেষ্টা করুন, পুনরায় ব্যর্থ হলে আবার একবার চেষ্টা করুন যতক্ষণ না
আপনি জয়ী হচ্ছেন।
স্বপরামর্শকে অধ্যবসায়ের
সাথে পালন করুন। লেখাগুলো একবার পড়ুন, প্রতিদিন পড়ুন,
বারবার পড়ুন, এতে আপনি প্রেরণা
পাবেন এই সূত্রগুলোকে আপনার বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার। অধ্যবসায় পালন করুন, শেষ পর্যন্ত পড়ে
যান, ফলে আপনার মাঝে অধ্যবসায়, ধৈর্য্য এবং গঠনমূলক চিন্তা করার অভ্যাস তৈরী হবে।
স্বপরামর্শ
ব্যবহার করতে আপনাকে ব্যবহার করতে হবে মনোযোগ। আপনার মনোযোগের উপর নির্ভর করবে ইহার
কার্যকারিতা, অবচেতন মনে প্রবেশের সম্ভাবনা এবং আপনার সফলতা। আপনার মনোযোগ যত গাঢ়
হবে অবচেতন মনে স্ব-পরামর্শের নির্দেশনা গুলো প্রবেশের সম্ভাবনা তত বেশি। মনোযোগ
খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোন বিষয় সম্পর্কে আগ্রহ আমাদের মনোযোগ নিরূপণ করে দেয়।
আমাদের আগ্রহ কম বা বেশি হলে যথাক্রমে মনোযোগের হ্রাস বা বৃদ্ধি ঘটে। অর্থাৎ
আগ্রহ
α
মনোযোগ
এর মানে
আগ্রহ সমান অনুপাতে বা ধ্রুব ভাবে মনোযোগ তৈরী করে। তেমনি ভাবেই এই লেখাগুলো যদি
আপনি আগ্রহী হয়ে না পড়েন তবে মনোযোগ ছাড়াই লেখাটি পড়বেন এবং ভুলে যাবেন। আগ্রহ
হচ্ছে ইচ্ছার আধিক্য বা প্রাবল্য। আপনার ইচ্ছা আছে জীবনে সফল হওয়ার (সম্মান,
ক্ষমতা বা অর্থনৈতিক যে কোন দিক হতে) তা আগ্রহে পরিণত হবে আপনার ইচ্ছার আধিক্যের
ওপর এবং এই নির্দিষ্ট ইচ্ছাই আপনার মনোযোগ বৃদ্ধি করবে। ইহা অনেকটা ১৮টি সাদা ও
কালো ক্যারামের গুটির মাঝে ১টি লাল গুটি দেখতে পাওয়ার মত। এভাবেই আমাদের মন
প্রতিনিয়ত চিন্তা করে চলছে এবং এগুলোর মাঝে একটি নির্দিষ্ট ইচ্ছার প্রতি দৃষ্টি
দেওয়াটাই মনোযোগ।
স্বপরামর্শ
নির্দেশনা পড়ার ক্ষেত্রে আপনার মনোযোগ বৃদ্ধি করতে কল্পনা ব্যবহার করুন। আবার
ক্যারাম খেলার চিন্তা করুন। আপনি ১৮টি সাদা ও কালো গুটির মাঝে ১টি লাল গুটি দেখতে
পাচ্ছেন। আপনি সাদা বা কালো গুটি গর্তে ফেলছেন কিন্তু ১টি লাল গুটি থেকে আপনার নজর
সরে নি। কারণ আপনি কল্পনা করছেন ১টি লাল গুটি গর্তে ফেলতে পারলে আপনার পয়েন্ট ১২
থেকে ৫ যোগ হয়ে ১৭ হবে (লাল গুটির পয়েন্ট ৫ ধরে) এবং আপনার জয়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।
ঠিক একইরূপ কল্পনা করুন সাফল্যমণ্ডিত সেই জয়ী ব্যক্তিকে যখন আপনি স্ব-পরামর্শ
নির্দেশনাগুলো পড়বেন।