শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

ব্যক্তিগত উন্নয়ন – দ্বিতীয় অধ্যায়

ইচ্ছা

অনেককাল আগের কথা, এক মহান যোদ্ধা একবার এক জরুরী অবস্থার মধ্যে পড়েছিলেন। অবস্থাটি ছিল তিনি কিভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে তার জয় নিশ্চিত করবেন। তিনি শত্রু বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করতে একদল সেনা নিলেন। কিন্তু শত্রু সেনা সংখ্যা তার নিজ বাহিনীর সেনা সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি। তিনি তার সেনাদের সমরাস্ত্রে সাজিয়ে প্রস্তুত করলেন এবং জাহাজে করে শত্রু দেশে রওনা হলেন। শত্রুদেশের সৈকতে তিনি সৈন্যদের এবং যুদ্ধাস্ত্র নামালেন এবং তিনি আদেশ দিলেন জাহাজগুলোকে জ্বালিয়ে দিতে যা তাদের নিয়ে এসেছিল। যুদ্ধের পূর্বে তিনি সেই জ্বলন্ত জাহাজগুলোকে দেখিয়ে তার সৈন্যদের বললেন, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন যে জাহাজগুলো আমাদের এখানে নিয়ে এসেছিল সেগুলো আগুনে পুড়ে ভস্ম হয়ে যাচ্ছে। তার মানে আমরা এই সৈকত জীবন্ত ত্যাগ করতে পারবো না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা জয়ী হই। এখন আমাদের সামনে কোন পথ নেই, হয় আমরা জিতবো না হয় আমরা মরবো। তারাই জিতেছিল।

যে সকল ব্যক্তি তাদের ইচ্ছানুযায়ী জয়ী হতে যে কোন উপায় অবলম্বন করতে চায় তাদের অবশ্যই পেছনের সব জাহাজ জ্বালিয়ে দিতে হবে এবং কেটে ফেলতে হবে ফিরে যাওয়ার সকল পথ। এভাবেই একজন ব্যক্তি প্রয়োজনীয় স্থির মানসিক অবস্থা অর্জন করতে পারে যাকে বলা হয় জয়ের জন্য জ্বলন্ত ইচ্ছা, যা সাফল্য অর্জনের জন্য অত্যাবশ্যক।

প্রত্যেক ব্যক্তিকেই এই জ্বলন্ত ইচ্ছা তৈরী করতে হবে যদি সে সাফল্য অর্জন করতে চায়। মানুষ সফল হতে চায় কিন্তু শুধুমাত্র চাওয়া কোন ব্যক্তিকে সফল করে না। চাওয়া হচ্ছে ব্যক্তি মানসিকতার নিম্নতর পর্যায়। ইহাকে প্রাথমিক পর্যায়ও বলা চলে। চাওয়া যেকোন মুহূর্তে, বাঁধার সম্মুখীন হলে পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। তাই শুধু চাওয়া কোন ব্যক্তিকে সাফল্য এনে দিতে পারে না। সফল হতে চাওয়াকে রূপান্তরিত করতে হবে ইচ্ছায়। এই ইচ্ছাকে জ্বলন্ত করে তুলতে হবে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও পরিকল্পনা পালনে অধ্যবসায় দ্বারা। তাহলেই জীবনে সফলতা আসবে।


যে পদ্ধতিতে ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপান্তর করা যায় তা গঠিত হয় ছয়টি নির্দিষ্ট ধাপে। এই ধাপগুলো বাস্তবসম্মত। এগুলো হলঃ

প্রথমতঃ আপনার মস্তিষ্কে আপনার ইচ্ছাকে নির্দিষ্ট করুন। (এই নির্দিষ্টতা হতে পারে অর্থের পরিমাণ, ক্ষমতা বা অন্য যে কোন ইচ্ছা।) ধরুন, আপনি ধনী হতে চান। তাহলে আপনার মস্তিষ্কে আপনার ইচ্ছানুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যক অর্থের পরিমাণ ঠিক করুন। এটা বলা যথেষ্ট নয় যে আমি অনেক অর্থের মালিক হতে চাই। অর্থের পরিমাণের ব্যাপারে নির্দিষ্ট হোন। (নির্দিষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে একটি মানসিক কারণ রয়েছে যা পরবর্তী অধ্যায়ে বর্ণনা দেওয়া হবে।)

দ্বিতীয়তঃ আপনার যা ইচ্ছা তার পরিবর্তে আপনি কি দিতে পারেন তা নিশ্চিত করুন। (বিনিময় মূল্য ছাড়া বিনামূল্যে কিছু পাবেন, বাস্তবে এ ধরনের কিছু নেই।)

তৃতীয়তঃ একটি নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করুন যে দিন আপনি আপনার ইচ্ছানুযায়ী অবস্থার অধিকারী হবেন।

চতুর্থতঃ আপনার ইচ্ছা পূরণের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরী করুন এবং এখনই শুরু করুন, আপনি তৈরী থাকুন বা না থাকুন পরিকল্পনা অনুযায়ী এই মুহূর্ত হতেই কাজ শুরু করুন।

পঞ্চমতঃ সংক্ষেপে পরিষ্কার করে লিখুন, আপনি যেই ইচ্ছাটি অর্জন করতে চান, ইচ্ছাটির পরিবর্তে আপনি কি দিতে চান লিখুন, এই অর্জনের জন্য আপনার নির্ধারিত সময়সীমা দিন এবং পরিষ্কার করে বর্ণনা করুন যে পরিকল্পনায় আপনার ইচ্ছাটি অর্জন করতে চান।

ষষ্ঠতঃ আপনার লিখিত বিবৃতিকে উচ্চস্বরে পড়ুন, প্রতিদিন দুইবার করে, একবার রাতে ঘুমাবার আগে এবং পরে আরেকবার সকালে উঠে। যখন আপনি পড়বেন তখন অনুভব করবেন এবং বিশ্বাস করবেন যা আপনি পড়ছেন। দেখবেন আপনি ইতোমধ্যে সেই ইচ্ছার অধিকারী হয়েছেন।

বর্ণিত এই ছয়টি ধাপ অনুসরণ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ছয় নম্বর অংশটি পর্যবেক্ষণের সাথে অনুশীলন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি হয়ত অভিযোগ করতে পারেন ইতোমধ্যে সেই ইচ্ছার অধিকারী হওয়া কে যা প্রকৃতপক্ষে হওয়ার পূর্বেই। এখানেই আপনাকে সহায়তা করবে আপনার জ্বলন্ত ইচ্ছা। যদি সত্যিই আপনি আপনার ইচ্ছাকে এরূপ ভাবে চান যে আপনার ইচ্ছা বাতিকে পরিণত হয়েছে, তাহলে নিজেকে এটা মানাতে কোন শক্ত কাজ হবে না, যে সেই ইচ্ছা আপনি অর্জন করতে পারবেন। বিষয়টা হচ্ছে ইচ্ছাটাকে বিশ্বাস করা এবং এতটাই নিশ্চিত হওয়া যে নিজেকে মানানো, যে ইহা আমি অবশ্যই পাব।

এই ধাপগুলোর জন্য কোন কঠিন শ্রম লাগে না। এগুলোর জন্য কিছু উৎসর্গও করতে হবে না। এগুলো পালন করলে আপনি উপহাসের পাত্র হবেন না বা সব কিছু সহজেই বিশ্বাস করবেন তাও নয়। এমনকি ধাপগুলো প্রয়োগ করতে আপনাকে অনেক বেশি শিক্ষিতও হতে হবে না। কিন্তু সফল ভাবে এই ছয়টি ধাপ পালন করতে আপনার কল্পনা এর সহায়তা নিতে হবে, যাতে আপনি দেখতে পান এবং বুঝতে পারেন যে জীবনে সফল হওয়াটা- সুযোগ, সৌভাগ্য বা কপালের উপর ছেড়ে দেওয়া যায় না। আপনাকে অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে যে যারা বৃহৎ আকারের সৌভাগ্য গড়েছেন প্রথমে তারা নিশ্চিতভাবে কিছু স্বপ্ন দেখেছেন, আশা করেছেন, চেয়েছেন, ইচ্ছা করেছেন এবং পরিকল্পনা করেছেন সেই সৌভাগ্যের অধিকারী হওয়ার পূর্বে। সুতরাং এই কাজটিই আপনাকে আগে করতে হবে বিশাল সৌভাগ্যের অধিকারী হতে হলে।

আপনি ভালোভাবেই জানেন, ঠিক এই মুহূর্তে আপনি সফল ব্যক্তিদের মত বিশাল সৌভাগ্যের পরিমাণ কখনই পাবেন না যতক্ষণ না আপনি আপনার নিজের মধ্যে সৌভাগ্য পাওয়ার সেই ইচ্ছাকে জাগিয়ে তুলছেন এবং বিশ্বাস করছেন যে আপনি তা পাবেনই। (ইহা অনেকটা এমন যে, আপনি যদি বিশাল পরিমাণ অর্থের দেখা আপনার কল্পনায় না পান তবে আপনি সেই পরিমাণ অর্থ কখনই আপনার ব্যাংক ব্যালেন্সে দেখবেন না।)

একটি কিছুর জন্য চাওয়া এবং তা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হওয়ার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কেউই একটা কিছুর জন্য প্রস্তুত হতে পারে না যতক্ষণ না সে বিশ্বাস করে সে তা অর্জন করতে পারবে। বিশ্বাসের উপর অবশ্যই মনের স্থিরতা থাকতে হবে। যেকোন অনির্দিষ্ট আশা বা চাওয়ার উপর মনের স্থিরতা থাকে না। বিশ্বাসের জন্য প্রয়োজন আগ্রহী মন। বদ্ধ মন আপনাকে আস্থাশীল, সাহসী এবং বিশ্বাসী হতে উৎসাহিত করবে না। আস্থা সম্পর্কে আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে আরও পড়বো যে আস্থা কি, কিভাবে আস্থা গঠন করা যায় প্রভৃতি।

স্মরণ রাখবেন, ব্যক্তিগত উন্নয়ন করতে, জীবনে উচ্চ লক্ষ্য গ্রহণ করতে, প্রাচুর্য্য এবং উন্নতি চাইতে কোন শ্রম লাগে না বরং দুর্দশা ও দারিদ্র্যতা কে মেনে নিলে তা (শ্রম) বেশি প্রয়োজন হয়।


লেখাগুলো একবার পড়ুন, প্রতিদিন পড়ুন, বারবার পড়ুন, এতে আপনি প্রেরণা পাবেন এই সূত্রগুলোকে আপনার বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার। অধ্যবসায় পালন করুন, শেষ পর্যন্ত পড়ে যান, ফলে আপনার মাঝে অধ্যবসায়, ধৈর্য্য এবং গঠনমূলক চিন্তা করার অভ্যাস তৈরী হবে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন