কল্পনা
কল্পনা হচ্ছে
মনের কর্মঘর। এখানে চিন্তা তরঙ্গগুলো নিয়ে কাজ করা হয়, পরিকল্পনা করা হয়, সুবিধা,
অসুবিধা বিবেচনা করে পরিকল্পনায় শর্ত যোগ বা বিয়োগ করা হয়। এই কর্মঘরে চিন্তা
তরঙ্গের একটি বীজকে পর্যাপ্ত মাটি, পানি, বাতাস, আলো দিয়ে বড় করার প্রক্রিয়া চলে।
বলা হয়ে থাকে
যে, একজন ব্যক্তি যা কল্পনা করতে পারে তাই সে সৃষ্টি করতে পারে। ইহার বাস্তব
প্রমাণ মানব সভ্যতার প্রতিটি সৃষ্টিশীল কর্মেই রয়েছে। সাধারণত ব্যক্তিগণ যখন ছবি
আঁকেন তখন কল্পনার ব্যবহার সরাসরি ব্যবহার করে থাকেন।
মানুষ আকাশে
উড়ার কল্পনা করেছিল। তাই সে আজ বাতাসের মত হাল্কা বস্তুর ওপর নির্ভর সৃষ্টি করেছে
উড়োজাহাজ, যা তাকে সবচেয়ে দ্রুত গতির পাখির চেয়েও বেশি দ্রুত উড়ে যাওয়ার গতি
দিয়েছে। মানুষ প্রকৃতির ঝড়, বৃষ্টি থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য নিরাপদ আশ্রয়
তৈরীর কল্পনা করেছিল, যার বাস্তব প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ ভবনগুলো। এগুলো
যদি ব্যক্তিরা কল্পনা না করতো তবে আমরা এর কিছুই বাস্তবে দেখতাম না।
কল্পনা
অনুষদ দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথমটি সমন্বয় কল্পনা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে সৃষ্টিশীল
কল্পনা।
সমন্বয়
কল্পনাঃ
কল্পনা অনুষদের যে ভাগ অভিজ্ঞতা, বাহ্যিক দৃষ্টি দ্বারা প্ররোচিত হয়ে কাজ করে তা
সমন্বয় কল্পনা। ইহা প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে, সমন্বয় সাধন করে ও ফল প্রকাশ করে।
ইহা ব্যক্তির সচেতন অংশ এবং ব্যক্তিরা সকলেই ইহার সাথে পরিচিত। ইহাকে আবিষ্কারগণ
ব্যবহার করেন তাদের প্রাপ্ত তথ্য হতে ফলাফল লাভের জন্য। কিন্তু তারা ব্যতিক্রমী
যারা সৃষ্টিশীল কল্পনার পথে চলেন কারণ তারা তাদের সমাধান সমন্বয় কল্পনায় পান না।
সৃষ্টিশীল
কল্পনাঃ
যারা তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য মনের সচেতন অংশকে যোগাযোগ করান অসীম বুদ্ধিমত্তার
সাথে, সৃষ্টিশীল কল্পনার মাধ্যমে তারা উদ্ভাবন করেন তাদের সমস্যা সমাধানের নতুন
পথ। এরাই হচ্ছেন সৃষ্টিশীল কল্পনার প্রয়োগকারী, উদ্ভাবক।
সৃষ্টিশীল
কল্পনার মাধ্যমেই মনের সচেতন অংশ সরাসরি যোগাযোগ করে অসীম বুদ্ধিমত্তার সাথে। এই
অংশেই “উৎসাহগুলো” বা “অপমানগুলো” ক্রিয়া করে।
এই অংশ কাজ
করে যখন ব্যক্তি মনের সচেতন অংশ অধিক দ্রুত গতিতে আলোড়িত হয়। এই আলোড়ন সৃষ্টি
সম্ভব ব্যক্তির একটি “শক্তিশালী ইচ্ছা” দ্বারা। একটি নির্দিষ্ট ইচ্ছা মনের
সৃষ্টিশীল কল্পনাকে বাধ্য করে ইচ্ছা পূরণের জন্য এক বা একাধিক নির্দিষ্ট পরিকল্পনা
উদ্ভাবন করতে।
সৃষ্টিশীল
কল্পনা আরো প্রখর ও ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে প্রয়োগ দ্বারা। যত বেশি ইহা ব্যবহার করা হয়
ইহা তত বেশি কার্যকরী হয়ে ওঠে। ইহাকে পুনরায় চিন্তা করুন, চিন্তা করুন সৃষ্টিশীল
কল্পনা সম্পর্কে যদি আপনি ইহা অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে রাখেন তবে আজ, এখনই একে কাজে
লাগান, প্রয়োগ করুন এবং ধীরে ধীরে অনুশীলন দ্বারা আপনিও বাস্তবে রূপান্তর করতে
পারবেন আপনার যে কোন ইচ্ছা।
ইচ্ছা হচ্ছে
একটি চিন্তা বা তরঙ্গ। ইহা উৎপন্ন হয় এক সেকেন্ড বা তারও কম সময়ে। ইহা মেঘ বা
কুয়াশার মত, অস্পষ্ট, অনুভবনীয়। ইহাকে বাস্তবে পরিণত করতে হলে বা এর সমতুল্যে রূপান্তর
করতে হলে ইহার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। ইচ্ছা একটি বিমূর্ত ধারণা যার কোন মূল্য নেই
যদি ইহা বাস্তবে রূপান্তরিত না হয়। একে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে হলে সবচেয়ে বেশি
আপনাকে প্রয়োগ করতে হবে সমন্বয় কল্পনার। কিন্তু এমন সময় আসবে যখন সমন্বয় কল্পনায়
সমাধান পাওয়া যাবে না, তখন ইহা সৃষ্টিশীল কল্পনার প্রয়োগ দাবি করবে।
প্রথমবার সৃষ্টিশীল
কল্পনা প্রয়োগে ব্যর্থ হলেও হতাশ হবেন না। আপনার সৃষ্টিশীল কল্পনা অংশ বহুদিন
প্রয়োগ না করার ফলে প্রথমে ধীরে ধীরে কাজ করবে। আপনার প্রয়োগ যত বেশি হবে ইহা তত
দ্রুত সমস্যা সমাধানে ধারণা প্রদান করে সাড়া দিবে।
ধারণা হচ্ছে
কল্পনা থেকে উৎসারিত বস্তু। ধারণা সত্যি একটি মহান বিষয়। ইহার নিজস্ব কোন মূল্য
নেই। যিনি ধারণাগুলোর সৃষ্টিকর্তা তিনি যদি বুদ্ধিমান হন তবে ধারণার দাম ঠিক করেন
এবং তা পান। আমাদের ব্যবসা জগতে এমন উদাহরণ বহু রয়েছে যারা একটি নতুন ধারণা নিয়ে
ব্যবসা করে মহান সাফল্য অর্জন করেছেন। এদের বলা হয় উদ্যোগক্তা। যিনি সৃষ্টিশীল
কল্পনা প্রয়োগ করেন, ধারণা সৃষ্টি করেন এবং একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনায় অধ্যবসায়ের
সাথে চলেন, তিনি তাঁর নির্দিষ্ট গন্তব্যে সবসময়ই পৌছান, যা তিনি ইচ্ছা করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন