নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ক্লে শার্কি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব সমস্যার সমাধান করে, তারা চেষ্টা করে সেসব সমস্যাকে জিইয়ে রাখতে।’ তিনি এ বিষয়ক একটি বইও লিখেন। বইয়ের শিরোনাম: Cognitive Surplus: How technology makes consumers into collaborators by Clay Shirky. বাংলায় অর্থ করলে বইয়ের শিরোনাম এমন দাঁড়ায় যে মূল নির্যাস: কীভাবে প্রযুক্তি গ্রাহকদের সহযোগীতে পরিণত করছে।
বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমবিএ পাঠ করার সুবিধা একটা আছে। আর তা হচ্ছে সেখান থেকে ফরচুন ৫০ কোম্পানিগুলো কর্মী সংগ্রহ করে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, বিশাল বড় একাউন্টিং ফার্ম, ব্যাংক এবং বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থাকে।
আসলে বড় বড় কোম্পানির ম্যানেজারদের এত সময় কোথায় শত শত লোকজন থেকে বাছাই করে তাদের কোম্পানির জন্য কর্মী নিয়োগ করবে। তারচেয়ে বরং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেহেতু আগ্রহী এবং মেধাবী এমবিএ শিক্ষার্থীদেরকে বাছাই করে নেয়, সেখান থেকে তাদের প্রয়োজনীয় কর্মী খুঁজে নেওয়া সহজ।
আর তাছাড়া এমবিএ প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়াটাও তো বিশাল ঝামেলার বিষয়। তার ওপর লাখ টাকা টিউশন ফি তো আছেই। এসব টিউশন ফি দেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের ঋণও দেওয়া হয়। আমেরিকায় একটি মধ্যম মানের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করতেও দেড় লাখ ডলার খরচ হয়। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এমবিএ করার ব্যাপারটা এখন ইউরোপে ব্যবসায়িক অবস্থান থেকে তুঙ্গে। পরিবর্তন হওয়ার কি কোন দরকার আছে? অবশ্য এ টাকাটা যেকোন শিক্ষার্থী যেকোন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েও করতে পারে। এতে করে এই ঋণ তাকে পরবর্তী জীবনে কাজ করে, চাকরি করে পরিশোধ করতে হবে। তাই বলা যায়, এটা একটা ট্র্যাক বা পথ। যেই পথে একবার ঢুকলে বাকিটা গড় গড় করে বলে দেওয়া যায়। আর এখান থেকে হুট করে বের হওয়াটাও বেশ মুশকিল। আপনি এমবিএ করার জন্য ঋণ নিলেন। তারপর এমবিএ শেষ করে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিলেন, যেখানে বেতন বছরে ৮৫ লাখ টাকা। সেখান ৪-৫ বছর চাকরি করার পর হয়তো আপনি আপনার খরচ মিটিয়ে ঋণ শোধ করতে পারলেন। আর কোম্পানিতে ৪-৫ বছর কাজ করার পর, অভিজ্ঞতার পর, পরবর্তী পদোন্নতির জন্য লোকজন দেখবে আপনি এই ৪-৫ বছরে কী করেছেন। তখন আর কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন, পড়ালেখা করেছেন তা দেখে পদোন্নতি দেওয়া হয় না। আর এই ৪-৫ বছরে সপ্তাহে ৮০ ঘণ্টারও ওপর কাজ করতে হয়। কাজের প্রচুর চাপ থাকে। তাই এ ধরনের এমবিএ কোর্সে ভর্তি হতে গেলে সতর্ক থাকতে হয়। কারণ আপনি একবার এই ট্র্যাকে প্রবেশ করলে, হুট করে পরিবর্তনের সুযোগ কম।
বাংলাদেশেও শিক্ষাখাতে ধীরে ধীরে ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে শহর জীবনযাপনের খরচ তো দ্রুতগতিতে বাড়ছে। আর উচ্চ শিক্ষার ব্যয় আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান তো বর্হিবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করছে। তা কেবল খরচের দিক থেকেই নয়, গবেষণা এবং অন্যান্য দিক থেকেও এ ধরনের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। সেক্ষেত্রে নিজে নিজে পড়ালেখা করে নিজের ব্যক্তিগত উন্নয়ন এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করার বিকল্প নেই। এদিক থেকে দ্য পারসোনাল এমবিএ বইটি আপনাকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। এর পাশাপাশি কিছু বইয়ের নাম দিচ্ছি। এসব বইয়ের নাম দ্য পারসোনাল এমবিএ বই থেকেই নেওয়া। এই বইগুলো আপনার দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করবে।
ম্যানেজমেন্ট ও লিডারশিপের জন্য: দ্য পারসোনাল এমবিএ বইয়ের অধ্যায় ৯ দেখতে পারেন।
ফাইন্যান্স (অর্থ ও বিনিয়োগ) এবং একাউন্টিং (হিসাববিজ্ঞান) এর জন্য: দ্য পারসোনাল এমবিএ বইয়ের অধ্যায় ৬ দেখতে পারেন। আরও জানতে দেখুন:
- Accounting made simple by Mike Piper
-
Essentials
of accounting by Robert N. Anthony and Leslie K. Breitner
-
The
McGraw-Hill 36-hour Course in Finance for Nonfinancial Managers by Robert Cooke
-
How
to Read a Financial Report by John A. Tracy
তথ্য এবং বিভিন্ন আইডিয়া বিশ্লেষণ করার জন্য:
- Principles of Statistics by M. G. Bulmer
-
Turning
Numbers into Knowledge by Jonathan G. Koomey
ব্যক্তিগতভাবে আমি বই পাঠের সময় রঙিন কলম ব্যবহার করি এবং বইয়ের মধ্যেই দাগ দিই অথবা লিখি। এতে করে আমি পরবর্তী সময় আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ লাগা বাক্য এবং বিষয়াবলি সহজেই খুঁজে পাই। বিজনেস ট্রেনিং এর ওপর বেস্টসেলিং বই জশ কফম্যান রচিত দ্য পারসোনাল এমবিএ তে লেখক পরামর্শ দিয়েছেন বই পাঠের সময় পাশে একটি খাতা ও কলম রাখতে। এতে করে দরকারি জিনিস টুকে নিতে পারেন। আপনি বই পাঠের সময় কী করেন? আমাদের জানান। পরবর্তী রচনা আসবে প্রতিটি ব্যবসার ৫টি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ নিয়ে আলোচনা।
তথ্যসূত্র:
দ্য পারসোনাল এমবিএ বই অনুসারে
https://www.amazon.com/McGraw-Hill-36-Hour-Finance-Non-Financial-Managers/