বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২১

পরিবর্তন হওয়ার কি কোন দরকার আছে?

সবাই পৃথিবীকে বদলানোর কথা বলে, কিন্তু কেউ নিজেকে বদলানোর কথা ভাবে না। - নিও তলস্তয়। 

পরিবর্তন হওয়ার কি কোন দরকার আছে?

দুনিয়া বদলে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। কিন্তু আমাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায়িক শিক্ষা কি বদলাচ্ছে? দুনিয়া এখন ইন্টারনেটের যুগ। আর প্রতিনিয়ত শত শত প্রযুক্তি এসে বর্তমান সময়কে পরিবর্তন ও পরিবর্ধিত করে দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমাদের ব্যবসা শিক্ষার সিলেবাস সেই আগের যুগের বিষয়াবলি ধরে রেখেছে। এখনকার ব্যবসা আকারে ছোট হয়ে পড়েছে, আগের থেকে অনেক কম পুঁজিতেও ব্যবসা করা যায় এবং অনেক কম কর্মচারী দিয়েও ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব। আমেরিকান ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রশাসন, পুরো আমেরিকার ৯৯.৭ শতাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসা মালিকদের প্রতিনিধিত্ব করে। তারা দেশের বেসরকারি অংশের অর্ধেকেরও বেশি কর্মের যোগান দেয়। গত ১৫ বছরে তারা নতুন ৬৪ শতাংশ কর্মের যোগান দিয়েছে। এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দেশের অকৃষি পণ্যের ৫০ শতাংশ পণ্য তৈরি করেছে। কিন্তু আপনি যদি দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা শিক্ষার সিলেবাস দেখেন, তবে দেখবেন সেখানে এসব প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা করার মতো কিছু নেই অথবা এসব প্রতিষ্ঠান নিয়েও কোন আলাপ-আলোচনা নেই। দেখে মনে হয় যেন এমবিএ প্রোগ্রাম কেবল বড় বড় ব্যবসা পরিচালনার জন্যই তৈরি হয়েছে।

পূর্বে মার্কেটিংও হত বৃহৎ আকারে। রেডিও, টেলিভিশন সর্বত্র প্রচার করার চেষ্টা ছিল। কিন্তু এখন বিজ্ঞাপনের নানা মাধ্যম আবিষ্কৃত হওয়ায় বিজ্ঞাপন ব্যয় টাকা থেকে পয়সাতে নেমে এসেছে। বর্তমানে ব্যবসা সফল হতে সবচেয়ে বেশি দরকার গতি, নমনীয়তা এবং উদ্ভাবনী দক্ষতা। কিন্তু এসব গুণ অর্জন করা বড় বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য দুরূহ ব্যাপার। আর এসব বিষয়ে ক্লাসরুমেও শেখানো হয় না। বড় বড় প্রতিষ্ঠান যেমন এসব গুণ অর্জন করতে অক্ষম, তেমন আমাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমও এগুলো গ্রহণ করতে অপারগ।

বাজারের তীব্র প্রতিযোগিতা এক্সিকিউটিভদেরকে স্বল্পমেয়াদি মুনাফার দিকে ধাবিত করে। যেখানে তারা দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের দিকে না ঝুঁকে স্বল্পমেয়াদি কলাকৌশল অর্জনের দিকে ছুটছে। আবার একই সময়ে কর্মীরাও আরও বেশি কর্তৃত্ব, আরও বেশি চাকরির নিরাপত্তার দিকে ছুটছে। যা প্রথাগত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রদান করতে পারছে না। আপনি এখন এমন কাউকে কীভাবে আপনার কোম্পানিতে চাকরি করতে রাজি করাবেন যার জন্য আপনার কোম্পানিতে কাজ করা হয়তো প্রথম অপশন বা প্রস্তাব নয়? তার হয়তো আরও অনেক জায়গায় কাজ করার সুযোগ আছে। সেক্ষেত্রে আপনি কীভাবে তাকে আপনার কোম্পানিতে কাজ করতে উৎসাহী করবেন?

এমবিএ প্রোগ্রামগুলো হয়তো এসব সমস্যার সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা এখনো প্রথাগত তত্ত্ব ও রীতিনীতিতে আটকে আছে। আর তাছাড়া বর্তমানের এমবিএ প্রোগ্রামগুলো খুবই মুনাফাজনক এবং সম্মানজনক। সেক্ষেত্রে পরিবর্তন হওয়ার দরকার কি? ছাত্রছাত্রীরা যতক্ষণ পর্যন্ত না ব্যবসা শিক্ষার প্রোগ্রাম তথা এমবিএ প্রোগ্রামগুলোতে যুক্ত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিদ্যমান অবস্থাই ধরে রাখবে।

শেষ করব, সক্রেটিসের একটি বক্তব্য দিয়ে, ‘পরিবর্তনের গোপন সূত্র হচ্ছে আপনার সব শক্তি দিয়ে পুরাতনের সাথে লড়াই করা নয়; বরং নতুন কিছু তৈরির পেছনে সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগ করা।’


তথ্যসূত্র:

দ্য পারসোনাল এমবিএ বই অনুসারে

https://blog.hubspot.com/sales/quotes-about-change

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন