বাংলায় সাইনাস মিলিও এবং বুরদিউ মডেল (The Sinus Milieu and Bourdieu models)

সাইনাস মিলিও মডেল: আপনি নিজেকে কোথায় বসাবেন?
আপনি আপনার পিতামাতাকে কোথায় অবস্থান দিবেন?
আপনি নিজেকে সমাজের কোন অবস্থানে বসাতে পছন্দ করেন?

সাইনাস মিলিও এবং বুরদিউ মডেল:

১. সাইনাস মিলিও মডেল (Sinus Milieu Model): সাইনাস মিলিও হলো একটি মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি, যা সমাজের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গ্রুপ বা “মিলিও” চিহ্নিত করতে ব্যবহার করা হয়। এই মডেলটি মূলত ব্যক্তির সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় বোঝার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটা সাধারণত মার্কেটিং গবেষণায় লক্ষ্যবস্তু গ্রুপ নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। সাইনাস মিলিও অনুসারে, মানুষের সামাজিক আচরণ এবং জীবনধারা বিভিন্ন সাইকো-সোশ্যাল গ্রুপে ভাগ করা যায়। যেমন উচ্চ, মধ্য এবং নিম্ন শ্রেণির মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা যায়।

এই মডেলটি ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল দুর্কহেইম দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। সামাজিক আচরণ এবং মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে বোঝার জন্য মডেলটি একটি কাঠামো প্রদান করে।

২. বুরদিউ মডেল (Bourdieu's Model): ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী পিয়েরে বুরদিউ আরেকটি মডেল তৈরি করেন। একে বুরদিউ মডেল বলা হয়। এটা সাংস্কৃতিক এবং শ্রেণী ভিত্তিক পার্থক্য নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। “ক্যাপিটাল” আইডিয়ার মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি তাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক “ক্যাপিটাল” এর মাধ্যমে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে। বুরদিউর মতে, মানুষ তার সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পছন্দের অগ্রাধিকারের মাধ্যমে সমাজে তার অবস্থান নির্ধারণ করে।

বুরদিউর মডেল আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে আমাদের মনের ভেতরে যে গভীরভাবে সাংস্কৃতিক পছন্দ এবং অভ্যাসগুলো রয়েছে সেগুলো আমাদের জীবনযাত্রার সাথে কতটা সম্পর্কিত এবং সেগুলো আমাদের সমাজে অবস্থান নির্ধারণে কতটা সহায়ক।

৩. মডেলগুলোর ব্যবহারিক উদ্দেশ্য:

সাইনাস মিলিও মডেলটি মূলত মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা বুঝতে এবং কোন গ্রুপকে টার্গেট করতে হবে সেটা নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়। যা ব্যবসা এবং মার্কেটিং গবেষণায় খুবই কার্যকরী।

বুরদিউ মডেল মূলত সংস্কৃতিক ভোগ এবং সামাজিক শ্রেণির পার্থক্য বুঝতে ব্যবহৃত হয়। এটা আমাদের সাংস্কৃতিক পছন্দ এবং অভ্যাসের প্রভাব বুঝতে সাহায্য করে। কীভাবে এগুলো আমাদের জীবনধারা ও সমাজে আমাদের অবস্থান নির্ধারণ করে তা বুঝতে সাহায্য করে।

৪. সমালোচনা:

সাইনাস মিলিও মডেলটি কিছুটা সংকীর্ণ হিশাবে সমালোচিত। কারণ এটা সব ধরনের মানুষ এবং তাদের সামাজিক পরিচয় সম্পর্কে পূর্ণ ধারণ দিতে পারে না।

বুরদিউ মডেলটি আমাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক অভ্যাস এবং পণ্য বা সেবা ভোগের অভ্যাসের গভীরে পৌঁছানোর জন্য বেশ কার্যকরী হলেও, এটা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে নিখুঁত পার্থক্য চিহ্নিত করতে আরও বিস্তারিত বিশ্লেষণের প্রয়োজন হতে পারে।

৫. অভ্যাসের শক্তি:

এই মডেলগুলোর মধ্যে একটি সাধারণ আইডিয়া রয়েছে। যা “লক-ইন প্রিন্সিপল” নামেও পরিচিত। এটা মতে, যদি একবার মানুষ কোন নির্দিষ্ট সামাজিক বা সাংস্কৃতিক সিস্টেমে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তবে সেই সিস্টেমের বাইরে গিয়ে নতুন কিছু প্রতিষ্ঠিত করা অনেক কঠিন হয়ে যায়। উন্নতি করার আকাঙ্ক্ষা বা নতুন কোন অভ্যাস চালু করা কঠিন। সমাজে যা যা অভ্যাস চলছে সেটা উন্নতি করার আকাঙ্ক্ষার চেয়েও শক্তিশালী। এজন্য নতুন একটা অভ্যাস সমাজে চালু করা কঠিন। কারণ আগে থেকে সমাজে একটা অভ্যাস চালু আছে।

সারাংশ:

সাইনাস মিলিও এবং বুরদিউ মডেল আমাদের সাহায্য করে সমাজের ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক গ্রুপ এবং শ্রেণির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে। সেই অনুযায়ী আমাদের সাংস্কৃতিক পছন্দ এবং জীবনধারা কীভাবে আমাদের সমাজে অবস্থান তৈরি করে সেটা উপলব্ধি করতেও সাহায্য করে।

ফজলে রাব্বি (Fazle Rabbi)

আমার জীবনের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৪টি অনুপ্রেরণামূলক বই প্রকাশ করা। saphollo.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন