ডাবল-লুপ শেখার মডেল (the double-loop learning model)

ডাবল-লুপ শেখার মডেল (the double-loop learning model)।

কীভাবে আপনি আপনার ভুল থেকে শিখবেন?

ডাবল-লুপ শেখা হলো আপনার কাজের ওপর চিন্তাভাবনা করা এবং সেখান থেকে শিক্ষা নেওয়া। শুনতে সহজ মনে হলেও প্রায়ই দেখা যায় কাজটা অসম্ভব কঠিন।

সিদ্ধান্তের ভিত্তি: এই তত্ত্ব সিস্টেম তাত্ত্বিক হেইঞ্জ ফন ফয়েস্টার এবং নিকলাস লুম্যানের (system theoreticians Heinz von Foerster and Niklas Luhmann) কাজের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে “দ্বিতীয় স্তরের পর্যবেক্ষণ” আইডিয়ার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। সঠিকভাবে বললে এটা একটা মডেল নয়; বরং জ্ঞানীদের জন্য একটা কৌশল। আপনি কীভাবে এই কৌশল আয়ত্ত করবেন? সহজ কাজ হচ্ছে প্রথম স্তরের পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণ করতে শিখুন।

প্রথম স্তরের পর্যবেক্ষক: প্রথম স্তরের পর্যবেক্ষকরা দুনিয়াকে তেমনই দেখে যেমন দুনিয়া আছে। পৃথিবী যেমনভাবে এদের সামনে তুলে ধরে এরা তেমনই দেখে। তাদের কাছে এই দুনিয়া স্রেফ যেমন আছে, তেমনই।

দ্বিতীয় স্তরের পর্যবেক্ষক: তারা প্রথম স্তরের পর্যবেক্ষকদের দেখার ধরনকে পর্যবেক্ষণ করে। অর্থাৎ, দ্বিতীয় স্তরের পর্যবেক্ষকরা “দেখার একটি ধরন”কে পর্যবেক্ষণ করে। প্রথম স্তরের পর্যবেক্ষকরা যখন পর্যবেক্ষণ করে, তারা তাদের নিজের দেখার পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন থাকে না। এটা তাদের “ব্লাইন্ড স্পট” তথা দুর্বলতা। এই ব্লাইন্ড স্পট তথা দুর্বলতা চিনতে পারে বলেই দ্বিতীয় স্তরের পর্যবেক্ষকরা জ্ঞানী। তারা প্রথম স্তরের পর্যবেক্ষকদের দেখাতে পারেন যে, ভিন্নভাবে দেখা সম্ভব। ফলে, তারা জিনিসগুলোকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে শেখে।

ডাবল-লুপ শেখার তত্ত্ব: মনোবিজ্ঞানী ক্রিস আর্জিরিস এবং দার্শনিক ডোনাল্ড শোয়েন (psychologist Chris Argyris and the philosopher Donald Schön) এই তত্ত্ব থেকে ডাবল-লুপ শেখার মডেল তৈরি করেন।

সিঙ্গেল লুপ (প্রথম স্তরের পর্যবেক্ষণ):

সেরা ক্ষেত্রে: কোন কার্যপ্রণালী ভালোভাবে কাজ করলে তা পরিবর্তন না করে বারবার অনুসরণ করা হয়।

খারাপ ক্ষেত্রে: একই ভুল বারবার করা হয়। অথবা সমস্যার সমাধান হয়। কিন্তু সমস্যাটা কেন তৈরি হলো তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় না।

ডাবল-লুপ শেখার মডেল:

এতে আপনি নিজের কাজ নিয়ে ভাবেন এবং প্রশ্ন করেন।

নিজের চিন্তা বা কাজ করার ধরন ভাঙার চেষ্টা করেন। শুধু ভিন্নভাবে কাজ করেই নয়; বরং ভাবেন কেন আপনি সেভাবে কাজ করেন।

আপনার কাজের পিছনের উদ্দেশ্য এবং মূল্যবোধ কী?

যদি আপনি এগুলো পুরোপুরি বুঝতে পারেন, তবে সেগুলো পরিবর্তন করতে পারেন।

সমস্যা: ডাবল-লুপ মডেলের সমস্যা হলো, আমরা যা বলি যে আমরা করব (espoused theory) এবং যা আসলে করি (theory in use) তার মধ্যে পার্থক্য। আমরা যদি সত্যিই কিছু পরিবর্তন করতে চাই, তবে শুধু নির্দেশিকা তৈরি করা বা নির্দেশ দেওয়াই যথেষ্ট নয়। এগুলো কেবল আদেশ হিশাবে থাকে (espoused theory)। কাজের ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন ঘটে না। আসল পরিবর্তন তখনই ঘটে, যখন আমরা আমাদের গভীরতর কারণ, উদ্দেশ্য এবং মূল্যবোধকে পুনর্মূল্যায়ন করি। এগুলোই আমাদের ব্যবহারিক তত্ত্বে (theory in use) প্রভাব ফেলে।

সংক্ষেপে: আমাদের যা কিছু আছে সেই অনুযায়ীই আমাদের প্রাপ্য, আমাদের অর্জন। যতক্ষণ না আমরা সেটা পরিবর্তন করি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের যা কিছু আছে সেই অনুযায়ীই আমাদের অর্জন, আমাদের প্রাপ্তি ঘটবে।

নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি শেষ কবে আপনার জীবনের কোনো পরিচিত অভ্যাস ভেঙে ভিন্ন কিছু করেছিলেন? কোন অভ্যাসটি আপনি ভাঙতে চান? আপনাকে এটা ভাঙতে কী বাধা দিচ্ছে?

আরও দেখুন:

 ব্ল্যাক বক্স মডেল

বাংলায় ডাবল-লুপ শেখার মডেল (the double-loop learning model)

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডাবল-লুপ লার্নিং মডেলের ব্যবহার (the double-loop learning model)

ফজলে রাব্বি (Fazle Rabbi)

আমার জীবনের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৪টি অনুপ্রেরণামূলক বই প্রকাশ করা। saphollo.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন