সায়হানের বন্ধু কথা বলা নদী


সায়হান ছিল এক কল্পনাপ্রবণ বালক। গ্রামের পাশে খালের ধারে বসে বসে সে প্রায়ই কল্পনা করত এক অদ্ভুত জগতের। তার পছন্দ ছিল নিজের মতো করে এক জগৎ তৈরি করা, যেখানে সে রাজা হবে।

এক বিকালে, খালের ধারে বসে সায়হান তার নিজের দুনিয়ার ছবি আঁকছিল। কাগজে তার জগতে বিশাল পাখি, চমৎকার বৃক্ষ এবং কথা বলা নদী। হঠাৎ করেই খালের পানি অদ্ভুতভাবে দুলতে শুরু করে। সে বিস্মিত হয়ে দেখল পানিতে একটি গোলাকার আলো ফুটে উঠছে।

আলোর মধ্য থেকে একটি মিষ্টি স্বরের ডাক এলো, “সায়হান, সায়হান, আমাদের রাজ্যে এসো! আমরা তোমার অপেক্ষায় আছি।”

সায়হান একটু ভয় পেলেও, আবার কৌতূহলীও হলো। সে খালের আলোর দিকে এগিয়ে গেল। হঠাৎ সে অনুভব করল যেন মাটির নিচে কোনকিছু তাকে টানছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে একটি অচেনা পৃথিবীতে পৌঁছে গেল।

নতুন পৃথিবীতে এসে সায়হান দেখল, একটি ছোট্ট প্রাণী তার সামনে দাঁড়িয়ে। এটা ছিল মাটির তৈরি একটা ছোট্ট প্রাণী। প্রাণীটি বলল, ভয় পেয় না। আমার নাম মাটুক। আমিই তোমাকে ডেকেছিলাম। আমাদের দুনিয়া বিশাল বড় বিপদে পড়েছে। তোমার সাহায্য দরকার। তুমি যদি আমাদেরকে বিপদমুক্ত করতে পারো, তবে তুমিই হবে আমাদের রাজা।”

মাটুকের সঙ্গে সায়হান এগিয়ে যেতে লাগল। চারদিকে অদ্ভুত সব প্রাণী; বড় বড় গাছ। আর কথা বলা নদী। কিন্তু সে বুঝতে পারল, এই রাজ্যে কোন একটা সমস্যা আছে। বিশাল এক ছায়ামূর্তি এই রাজ্যের সবকিছুকে গ্রাস করছে।

মাটুক বলল, “এই ছায়ামূর্তি আমাদের জীবনীশক্তি চুরি করে নিচ্ছে। শুধুমাত্র একজন সত্যিকারের রাজাই এটা থামাতে পারে।”

যাত্রাপথে সায়হান কয়েকজন নতুন বন্ধু পেল। যেমন ডানাদার শিয়াল রুধির এবং মিষ্টি মধুর গাছ ফুলিয়া। কিন্তু পথে তার শত্রুদের সঙ্গেও দেখা হলো। একদল ছায়ার প্রাণী সায়হানের পথ আটকাতে চাইল। রুধির আর ফুলিয়ার সাহায্যে সায়হান তাদের পরাজিত করল।

ছায়ামূর্তির রাজ্যে পৌঁছানোর আগে সায়হানকে তার সাহস এবং বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষা দিতে হলো। একটি কাঁচের পাহাড়ে চূড়ায় উঠতে গিয়ে সে প্রায়ই পড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু রুধির তাকে উড়তে শেখাল। আর মাটুক তাকে পাহাড়ে ওঠার সময় আটকে থাকার কৌশল শিখিয়ে দিল।

শেষ পর্যন্ত সায়হান ছায়ামূর্তির মুখোমুখি হলো। এটা ছিল এক বিশাল দানব; যার দেহ কালো ধোঁয়ায় আবৃত। সায়হান বুঝতে পারল, এই দানব আসলে তার নিজের ভয় এবং সন্দেহ।

দানবটি বলল, “তুমি কখনোই রাজা হতে পারবে না। তুমি দুর্বল।”

প্রথমে সায়হান সেই বিকট আওয়াজের কথা শুনে ভয় পেল। তারপর সে বড় করে শ্বাস নিল। তার ভেতরে সাহস এলো এবং বলল, “আমি জানি আমি কী হতে পারি। আমি আমার নিজের ভয়কে জয় করবো।”

এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ছায়ামূর্তিটি ভেঙে পড়ল। আর সায়হান রাজ্যকে মুক্ত করল।

ছায়ামূর্তির পরাজয়ের পর, রাজ্যের প্রাণীরা সায়হানকে তাদের রাজা হিশাবে স্বীকৃতি দিল। তারা বলল, “তুমি আমাদের মুক্ত করেছ, সায়হান। তুমি আমাদের সত্যিকারের নেতা।”

মাটুক বলল, “এখন তুমি চাইলে এই রাজ্যেই থেকে যেতে পারো অথবা তোমার নিজস্ব পৃথিবীতে ফিরে যেতে পারো।”

সায়হান নিজের পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। কারণ সে বুঝতে পারল, তার পরিবার এবং বন্ধুরাও তার জন্য অপেক্ষা করছে।

সায়হান তার নিজের পৃথিবীতে ফিরে এলো। কিন্তু সে আর আগের মতো নয়। সে এখন অনেক বেশি সাহসী, আত্মবিশ্বাসী এবং কল্পনাপ্রবণ।

গ্রামের লোকজন এখন সায়হানের কথা শুনতে চায়। তার কল্পনার গল্পগুলো সবাইকে মুগ্ধ করে। সায়হান বুঝতে পারে, কল্পনা আর বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য রাখা সম্ভব। সে তার অভিজ্ঞতাগুলো গল্পে রূপান্তর করে ছড়িয়ে দেয়। এভাবে একদিন সে নিজেও একজন মহান গল্পকার হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন:

অন্ধকার এবং শোষণের বিরুদ্ধে এক সাহসী পথিকের লড়াই

শক্তির রহস্য

ফজলে রাব্বি (Fazle Rabbi)

আমার জীবনের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৪টি অনুপ্রেরণামূলক বই প্রকাশ করা। saphollo.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন