বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২২

লিংকন। অশ্রুকুমার সিকদার। ঢাকা, নালন্দা, ২০০৮।


২২। লিংকন। অশ্রুকুমার সিকদার।  সাহার জীবন কথা। হেনা সুলতানা। ঢাকা, নালন্দা, ২০০৮।

চারিত্রিক দৃঢ়তা, বাকশক্তি এবং অসীম সাহস নিয়ে যিনি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ঐক্য এবং গণতন্ত্র বজায় রেখেছেন। লিংকন এক মহান ব্যক্তি, মানুষ এবং রাষ্ট্রনায়কের নাম। লিংকনের জীবনী নিয়ে ৬০ পৃষ্ঠার এক ছোট্ট বই থেকে অসাধারণ কিছু উক্তি।

১। মানুষের স্বাধীনতায় যারা বিশ্বাস করে, যারা মনে করে গায়ের রং যা-ই হোক-না কেন সব মানুষই সমান, আব্রাহাম লিংকনকে তারা কোনদিন ভুলতে পারবে না।

২। লিংকন বাঁচার জন্য গায়ে-গতরে খাটছিলেন, আর শুধু বই থেকে নয়, জীবনযাপন থেকে নিচ্ছিলেন মূল্যবান শিক্ষা। - পৃষ্ঠা ৯।
সামান্য খাবার তাদের জুটত, শীতের দীর্ঘ রাত্রে ঘুমই ছিল খিদে ভুলে থাকবার উপায়।

৩। জনৈক রেড ইনডিয়ান নায়ক চুক্তি ভেঙে ইলিনয় রাজ্যের উত্তরাংশ আক্রমণ করলে গর্ভনরের ডাকে লিংকনও স্বেচ্ছা সৈন্যবাহিনীতে যোগ দেন। যুদ্ধে কিছু করতে হয়নি তাঁকে। কিন্তু তাঁর দলের হাতে  পড়ে এক বুড়ো রেড ইন্ডিয়ান অকারণে নির্যাতিত হতে গেলে লিংকন তাকে রক্ষা করেন।

৪। নিউ সালেমে অবসর সময়ে যেমন তিনি নিজে নিজেই আইন পড়তে শুরু করলেন, তেমনি পড়তে লাগলেন হাতের কাছে যে-বই পান তা-ই।

৫। রাজনীতিতে ব্যর্থ, ব্যবসায় অসফল, গায়ে-গতরে খাটাই হলো তার বাঁচবার উপায়।
তাঁর পড়া হয়ে গেলে গিবনের লেখা রোমান সাম্রাজ্যের অবক্ষয় ও পতনের ইতিহাস।

৬। তিনি খানিকটা আলসে ছিলেন, ছিলেন অতি-সাবধানী, মনের জোরের খানিকটা অভাব ছিল তাঁর, কিন্তু তাই বলে রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার অভাব ছিল না। তবে তিনি মানুষের ক্ষতি না করে, নিঃস্বার্থভাবে নিজে, উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে চেয়েছেন। আমরা উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছাড়া কোনো বড় লক্ষ্য অর্জন করতে পারি না। কিন্তু উচ্চাশার লক্ষ্য ভালো হতে হবে, পথ খাঁটি হতে হবে। স্প্রিংফিল্ডে যখন এলেন তখন তিনি আইনসভার সদস্য হিসাবে সুপরিচিত, কিন্তু তাঁর পকেট তো ফাঁকা।

৭। বিয়ের পরে-পরে তিনি হার্নডন বলে এক তরুণ বন্ধুকে নিজের আইনব্যবসার অংশীদার করে নিয়েছিলেন। আব্রাহামের নির্বাচনের ব্যাপারে খুব সাহায্য করেছিল এই বন্ধু। লিংকন ছিলেন ধীরস্থির, সাবধানী, আর হার্নডন ছিলেন যেমন আদর্শবাদী, তেমনি লড়াকু। হার্নডন দাসপ্রথার বিরোধী ছিলেন।

৮। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে আমেরিকায় ইংরেজ বসতি ভালোভাবে শুরু হয়। ইংল্যান্ডের গরিবেরা ও ভাগ্যান্বেষীরা এই নতুন দুনিয়ায় দলে দলে আসতে থাকে। পরে শুধু ইংল্যান্ড থেকে কেন, ইউরোপের অন্যসব দেশ থেকেও। তবে বসতি স্থাপনে ইংরেজদের সাফল্যই সবচেয়ে বেশি। ইউরোপ থেকে আসা মোট জনসংখ্যার শতকরা আশি জনই ছিল ইংরেজ।

৯। এই যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাংশে বসতি স্থাপন করেছিল যারা, তাদের মধ্যে ছিল অনেক কারিগর। এই অঞ্চল হয়ে উঠেছিল ব্যবসা ও সামুদ্রিক বাণিজ্যের কেন্দ্র। সেখানে শিল্প প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বস্টন, নিউ ইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া গড়ে উঠল অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসাবে। অন্যদিকে ভার্জিনিয়া থেকে টেকসাস রাজ্য পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চল হলো প্রধানত কৃষিপ্রধান।
উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে অর্থনৈতিক স্বার্থ নিয়ে বিরোধ তো ছিলই, তার সঙ্গে মিলে গেল ক্রীতদাসপ্রথা নিয়ে বিরোধ।
লংফেলোর কবিতা “হানটেড নিগ্রো” পড়লে সেই মর্মন্তদ অবস্থা বুঝতে পারবে তোমরা।

১০। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতারা - ওয়াশিংটন, জন অ্যাডামস, জেফারসন, ম্যাডিসন - সবাই ছিলেন এই প্রথার বিরোধী। যদিও উত্তরাংশের রাজ্যগুলো ছিল ক্রীতদাস-প্রথামুক্ত, কিন্তু দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে এই প্রথা ব্যাপকভাবে চালু ছিল।

১১। তবে দেশরক্ষা, অন্যদের সাঙ্গে সম্পর্ক আর শুল্ক আদায় ছাড়া অন্য ব্যাপারে মার্কিন রাজ্যগুলো ছিল আমাদের রাজ্যগুলোর চেয়ে অনেক বেশি স্বাধীন।
১৮১২ খ্রিস্টাব্দে লুসিয়ানা রাজ্য কেন হয়। ফরাসি সম্রাটের কাছ থেকে।
স্পেনের কাছ থেকে ফ্লোরিডা রাজ্য কেনা হয়।
১৮৪৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক যোগ দেয় মিসিসিপি, আলাবামা ও আরকানসাস রাজ্য। ১৮৪৫ সালের মেক্সিকো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে টেকসাস রাজ্য যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্গত হলো। ২ বছর পরে ক্যালিফোর্নিয়া।
 ইউরোপ থেকে ভাগ্যন্বেষী মানুষ দলে দলে আসায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা লাফিয়ে - লাফিয়ে বেড়ে চলল এবং উপনিবেশ বিস্তার হতে লাগল।

১২। মিশুরি সমঝোতা। নতুন নতুন রাজ্যকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করবার সময়, যেগুলোতে দাসপ্রথা চালু ছিল সেগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে উত্তরের রাজ্যগুলো আপত্তি জানিয়েছে, আর দলবৃদ্ধির জন্য দক্ষিণের রাজ্যগুলো চেয়েছে সেগুলো অন্তর্ভুক্ত হোক। এইভাবে ক্রীতদাসপ্রথা নিয়ে উত্তরদক্ষিণের রাজ্যগুলোর মধ্যে একটা বিবাদ ঘনিয়ে উঠছিল। এই বিবাদ তীব্র হলো মিশুরি রাজ্যকে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে। উত্তরের রাজ্যগুলো দাবি করে, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম রাজ্য হওয়ার আগে মিশুরিকে ধীরে ধীরে ক্রীতদাস প্রথা বর্জনের কথা দিতে হবে। কিন্তু দক্ষিণের চাপে মিশুরিকে শেষ পর্যন্ত বিনা শর্তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একই সময়ে মেইন রাজ্যকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্গত করে নেওয়া হয় ক্রীতদাস-মুক্ত রাজ্য হিসাবে। তখন উত্তর-দক্ষিণের রাজ্যগুলোর মধ্যে একটা বোঝাপড়া হয়, পরবর্তীকালে যে ভূখণ্ড ফ্রান্সের কাছ থেকে খরিদ করা হয় তার ৩৬০ দ্রাঘিমাংশের ঈষৎ উত্তরের ক্রীতদাস-প্রথা নিষিদ্ধ হবে, কিন্তু তার দক্ষিণে ঐ প্রথা চালু থাকতে পারবে। একে বলা হতো মিশুরি সমঝোতা। - পৃষ্ঠা ১৮।

১৩। লিংকন রীতিমতো লম্বা, ডগলাস বেঁটেখাটো। ডগলাস সবসময় লড়াকু, লিংকন ধীরস্থির। ক্রীতদাস প্রথা নিয়ে ডগলাস ক্রীতদাস রাখার পক্ষে, আর লিংকন বিপক্ষে। উত্তরাঞ্চলের লোকজন ডগলাসকে জুডাসের সঙ্গে তুলনা করা হলো, যে-জুডাস ত্রিশটি রৌপ্যমুদ্রার লোভে যিশুকে ধরিয়ে দিয়েছিল। - পৃষ্ঠা ২৬।

১৪। গৃহযুদ্ধের ভূমিকা রচিত হলো কনসাসে। এক মার্কিন নাগরিক অন্য মার্কিন নাগরিককে এই প্রশ্নে খুন করতে উদ্যত হলো যে কৃষ্ণকায় নিগ্রো কি একজন মানুষ, নাকি সে নিতান্ত একটি পশু। এই সময়ে লিংকন একটি চিঠিতে লিখেছেন, জাতি হিসাবে যাত্রার মুহুর্তে আমরা বলেছিলাম সব মানুষ সমান। এখন আমরা কার্যক্ষেত্রে বলছি, নিগ্রো ব্যতিরেকে সব মানুষ সমান। - পৃষ্ঠা ২৭।

১৫। দাসপ্রথা বিষয়ে জনগণের রায়ই শেষ কথা হবে বলেছিলেন ডগলাস, কিন্তু বুকানন জনগণের সিদ্ধান্তকে উলটে দেবার চেষ্টা করায়, নিজে বুকাননের বিরোধিতা করেন। - পৃষ্ঠা ২৯।

১৬। নিচুজাতের যুক্তিকে তীব্রভাবে আক্রমণ করলেন লিংকন। তিনি জানালেন, যুগযুগ ধরে রাজারা-প্রজারা নিচুজাত, অযোগ্য - এই যুক্তিতে তাদের অধিকারহীন দাস করে রেখেছিল। সম্রাজ্যবাদীরাও অন্যদেশের মানুষকে শাসন করবার সময় একই যুক্তি দিয়ে থাকে; বলে, অধীনদেশের মানুষ অযোগ্য, নিচুজাত। গণতন্ত্রপ্রেমীরা এই যুক্তি মানেনি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন