সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২২

লেনিন বই থেকে অসাধারণ ১৯টি উক্তি


লেনিন বই থেকে অসাধারণ ১৯টি উক্তি:

১। ১৮৮৭ সাল থেকে অত্যাচারী জারের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য গোপন দল তৈরি হয়। তাদের দলের নাম ‘নারোদনায়া ভোলিয়া’। এ কথাটার মানে হলো ‘জনগণের ইচ্ছা’।

২। কিন্তু ‘নারোদনায়া ভোলিয়া’ দলটা ভুলে গেছে যে একজন জারকে মারলেই অত্যাচারী শাসনটা শেষ হয়ে যায় না। এক জারের জায়গায় আর এক জার আসে। অত্যাচারটা তো জার একা করে না। মন্ত্রী, সেনাপতি, বিচারপতি, জমিদার, পাদ্রি থেকে শুরু করে গ্রামের দারোগাটা পর্যন্ত। উচ্ছেদই যদি করতে হয়, তবে এই গোটা ব্যবস্থাটারই উচ্ছেদ দরকার।

৩। লেনিন ভাবতেন, অন্ন বস্ত্র শিক্ষঅ বাসস্থান - এই চারটি বিষয়ে সবার সমান অধিকার। একই সঙ্গে আরও দুটো বিষয়েও সমান অধিকার সবারই। সেই দুটি হলো - চিন্তা করার স্বাধীনতা আর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা।

৪। জারকে টিকিয়ে রাখার প্রধান দুই স্তম্ভ: সৈন্যবাহিনী আর বিচার-ব্যবস্থা।

৫। বেঁচে থাকতে গেলে খুব কম করে হলেও যা কিছু লাগে: পানি, বাতাস, আলো, খাবার, কাপড় আর থাকার জায়গা। এর মধ্যে প্রথম ৩টি প্রাকৃতিকভাবে পাই। আর বাকি ৩টি উৎপাদন করতে হয়।

৬। সম্পত্তি ব্যাপারটাকে দু-ভাগে ভাগ করা যাক। যা আমি ব্যবহার করি তা আমার ‘নিজস্ব সম্পত্তি’। আর যে সম্পত্তি আমার, কিন্তু আমি ব্যবহার করি না তা হলো ‘ব্যক্তিগত সম্পত্তি’। যে বাড়িটায় আমি থাকি, সেটা নিজস্ব সম্পত্তি। যে বাড়িটায় থাকি না, ফেলে রাখি বা ভাড়া দিই, সেটা ব্যক্তিগত সম্পত্তি।

৭। লেনিনের কয়েকটি বই: রুশ ধনতন্ত্রের বিকাশ, রুশ সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের প্রতিবাদ, কী করতে হবে?, বস্তবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদী সমালোচনা, সাম্রাজ্যবাদ, ধনতন্ত্রের সর্বোচ্চ স্তর, রাষ্ট্র ও বিপ্লব প্রভৃতি।

৮। লেনিন স্পষ্টভাবে বলেন, বিপ্লবী মতবাদ ছাড়া বিপ্লবী পার্টি হয় না। আর, বিপ্লবী পার্টি করতে গেলে চাই কঠোর সৈনিকসুলভ শৃঙ্খলা।

৯। সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের দ্বিতীয় সম্মেলন বা কংগ্রেসে সারা রাশিয়ার ২৬টি ছোটো-ছোটো দলের পক্ষ থেকে মোট ৪৩ জন প্রতিনিধি যোগ দেয়। সেখানে আলোচনা হয় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠদের বলে বলশেভিক। রুশ ভাষায় বোলশিনস্তভো শব্দটার মানে হলো - সংখ্যাগরিষ্ঠ। আর মেনশিনস্তভো কথাটার অর্থ হলো সংখ্যালঘিষ্ঠ। তাদের নাম হয়ে গেল মেনশেভিক।

১০। রাশিয়া জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছেন লেনিন। সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং লোককে বোঝাচ্ছেন, একটা পরাজয়েই ভেঙে পড়ার কিছু নেই। এত বড়ো দেশ, এতদিনকার শেকল, এক-আধটা পরাজয় তো হতেই পারে। বরং এই পরাজয় থেকেই শিক্ষা নিতে হবে। দেখতে হবে, কোন কোন ভুলের জন্য হার হলো। পরের বার আর সেই ভুলগুলো করা চলবে না। - পৃষ্ঠা ৫৩

১১। ১৯০৭ থেকে ১৯১৭ এই ১০ বছরের মধ্যে অসংখ্য রাজনৈতিক দল গজিয়ে উঠেছিল রাশিয়ায়। তার মধ্যে বড়ো দল ছিল কমপক্ষে উনিশটা। মফস্বলের কোনো কোনো জায়গায় তো ছিল ৪০টা পর্যন্ত। প্রতিটি দলের সঙ্গে প্রতিটি দলের বিরোধ।

১২। বলশেভিকদের অন্যতম এক নেতা ত্রৎস্কি মনে করতেন, রাশিয়াতে বিপ্লব করা গেলেও সে বিপ্লব টিকতে পারবে না আশপাশের দেশগুলোতেও বিপ্লব না হলে।

১৩। ১৯১২ সালে রুশ সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক শ্রমিক পার্টির ষষ্ঠ কংগ্রেস শুরু হলো প্রাহা শহরে। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন লেনিন। মেনশেভিকদের তাড়িয়ে দিয়ে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিকে ঢেলে সাজানো হলো। এই প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটিতে এলেন সেই কোবা ইভানোভিচ, অর্থাৎ স্তালিন। - ‍পৃষ্ঠা ৬০

১৪। ১৯১২ সালের মে মাসের ৫ তারিখে প্রকাশিত হলো আজও পর্যন্ত বিখ্যাত সেই কাগজ - ‘প্রাভদা’ (প্রাভদা মানে সত্য)। লেনিন ও স্তালিন যুগ্মভাবে প্রাভদার সম্পাদনার দায়িত্ব নিলেন।

১৫। লাগামছাড়া ধনতন্ত্র যখন বিকশিত হয়, তখন এত এলোপাতাড়ি উৎপাদন হয় যে তা বিক্রির মতো বাজার দেশে পাওয়া যায় না। তখনই শুরু হয় অন্যের সাম্রাজ্য - অন্যের বাজার গ্রাস করার যুদ্ধ। এই মর্মে একটা বইও লিখলেন লেনিন, যার নাম - ‘সাম্রাজ্যবাদ, ধনতন্ত্রের সর্বোচ্চ স্তর’।

১৬। জার সরকারের পতনের পর কাদেতরা সরকার গঠন করে। কাদেত: জন স্বাধীনতার পার্টি। এরাও রাজতন্ত্রী, তবে রাজতন্ত্রকে সংস্কার করে ভদ্রস্থ চেহারা দেওয়ার পক্ষপাতী ছিল এর। ফেব্রুয়ারি-মার্চের বিপ্লবের পরে এরাই প্রথম ক্ষমতা দখল করে। অবশ্য তাদের হটিয়ে দেওয়া হয় কয়েকদিনের মধ্যেই।

- তারপর এলো অস্থায়ী সরকার। তাদের মধ্যে সোশ্যালিস্ট রেভলিউশনারি, ক্রদোভিক এবং মেনশেভিকদের প্রভাবই বেশি। প্রধানমন্ত্রী হলেন কেরনস্কি।

- এরপর এলো পেত্রোগ্রাদ সোভিয়েতের সরকার। যে সোভিয়েতে বলশেভিকরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।

১৭। ১৯১৭ সালের ৮ নভেম্বর, সোভিয়েত সম্মেলন ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভকে রাশিয়ার জন-কমিশার পরিষদের সভাপতি, অর্থাৎ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করল।

১৮। সোভিয়েত বাহিনীর সৈন্য - সৈন্যবাহিনীর সমস্ত পদ - জেনালের থেকে আর্দালি পর্যন্ত - উঠিয়ে দেওয়া হলো। এখন থেকে প্রত্যেক সৈন্যের একটাই পরিচয় - সোভিয়েত বাহিনীর সৈন্য। একই রকম ভাবে উঠিয়ে দেওয়া হলো সমস্ত সরকারি ও অভিজাত খেতাব বা উপাধি। এখন থেকে প্রত্যেকের একটাই পরিচয় - তারা সোভিয়েত রাষ্ট্রের নাগরিক।

১৯। যাবতীয় সরকারি কেরানি ও অফিসাররা লেনিন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ধর্মঘট করে। লেনিন, তাদের বদলে শ্রমিকদের সরকারি অফিসে কাজের দায়িত্ব দেন। এ কাজটা তাদের ভালো লাগত না। কিন্তু লেনিন বলতেন, দেশ আপনাকেও একটা দায়িত্ব দিয়েছে। যতই বিরক্তিকর হোক না কেন, সেটা তো আপনাকে করে যেতেই হবে?

তথ্যসূত্র: লেনিন। লেখক: জয়দেব বসু। কলকাতা, প্যাপিরাস, ২০০০।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন