মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০২২

মেন্টাল ম্যাপ তথা মানসিক ধ্যানধারণার ছক


চার্লস টমাস মাঙ্গার বলেন, তোমার মাথায় মানসিক ধ্যানধারণার ছক থাকতে হবে এবং তোমার খারাপ ও ভালো অভিজ্ঞতাকে এসব ছক দ্বারা বিচারবিশ্লেষণ করতে হবে, যাতে করে তুমি সফল হতে পারো। এসব মানসিক ধ্যানধারণার ছককে জালের মতো ব্যবহার করো। যা দিয়ে ছেঁকে ময়লা-আবর্জনা দূর করে স্বর্ণকণা খুঁজে বের করতে পারো।

আজকে আমরা কথা বলব এ ধরনের কিছু মেন্টাল ম্যাপ তথা মানসিক ধ্যানধারণার ছক নিয়ে। আমরা বিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইডিয়া সম্পর্কে জানব। বিজ্ঞানের নানা শাখা উপশাখা রয়েছে। সেই শাখা উপশাখার নানা গুরুত্বপূর্ণ আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করব। এগুলো আপনার জন্য এক ধরনের টুল হিসাবে কাজ করবে। যদিও এই আলোচনাই শেষ নয়। আপনি দেখবেন এক আইডিয়া অন্য বহু আইডিয়া এবং শাখা উপশাখায় কাজে লাগছে।

চার্লস টমাস মাঙ্গার যেমন বলেছেন আমাদের মেন্টাল ম্যাপ থাকা উচিত। সেভাবেই আমরা এগিয়ে যাব। এখানে বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখা উপশাখার আইডিয়া নিয়ে আলোচনা হবে। একদম মৌলিক তত্ত্ব থেকে মানবিক তত্ত্ব পর্যন্ত। আমরা অবশ্য আলোচনার স্বার্থে মানসিক ধ্যানধারণার ছকগুলোকে ধারাবাহিকভাবে সাজিয়েছি। প্রথমে আমরা মৌলিক বিষয় থেকে আলোচনা আরম্ভ করব। নিচের ছবিতে দেওয়া আছে। বাম দিক থেকে ডান দিকে আলোচনা চলতে থাকবে। প্রথমে দর্শন, গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞান থেকে আলোচনা আরম্ভ হবে। আর যেহেতু এগুলো আমাদের দৈনন্দিন দুনিয়ার সাথেও সম্পৃক্ত, সেহেতু এগুলো নিয়ে আলোচনা করলে আপনার অনেকটা পরিচিত বোধ হবে বলে আশা করি। তবে মনে রাখবেন, এটা কোন শ্রেণীবিভাগ নয়। আমরা কেবল আলোচনার স্বার্থে একটা ধারাবাহিক ক্রম সাজিয়েছি।

জ্ঞানের নানা শাখা

  • দর্শন
  • গণিত
  • পদার্থবিজ্ঞান
  • পরিসংখ্যান
  • প্রকৌশলবিদ্যা
  • রসায়ন
  • জীববিজ্ঞান
  • মনোবিজ্ঞান
  • অর্থনীতি
  • ইতিহাস

 

আমাদের জীবনের অন্যতম প্রশ্ন আরম্ভ হয় দর্শন দিয়ে। অজানার শুরু যেখানে। এরপর গণিত হচ্ছে আমাদের জানা দুনিয়ার ভিত্তি। প্রকৃতির ভাষা। এ থেকে উৎসারিত হয়েছে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, পরিসংখ্যান এবং প্রকৌশলবিদ্যা। পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়ন থেকে উৎসারিত হয়েছে জীববিজ্ঞান, যা মনোবিজ্ঞানকে বদলে দিয়েছে, অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়েছে। সবশেষে বলব ইতিহাসের কথা। যা মানবজাতির অস্তিত্বের পুরো কালজুড়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো করেছে আবদ্ধ।

এই আলোচনা করতে করতে আমরা পর্যায়ক্রমে আইডিয়ার তাৎপর্য বুঝতে পারব এবং গুরুত্বপূর্ণ আইডিয়ার ভেতর অবগাহন করব। মেন্টাল মডেলগুলোর সংখ্যা অসংখ্য। সেখান থেকে আমরা ১০০টি বেছে নিয়েছি। মাঙ্গার মূলত ১০০টির কথাই বলেছেন। এগুলো দিয়ে আমরা আমাদের জীবনের প্রায় ৯৫% পরিস্থির ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম হব। কিন্তু এটা তখনই সম্ভব হবে যখন এগুলোকে আমরা আমাদের জীবনে কাজে লাগাব। এজন্য প্রথমে আমাদেরকে এগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। তারপর আপনি যখন এগুলো প্রয়োগ করবেন, তখন দেখবেন, এই দুনিয়ার আসল চেহারা আপনি বুঝতে সক্ষম হচ্ছেন এবং নিজেকে ও অন্যদের সাহায্য করতে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন।


আলবার্ট আইনস্টাইন বলেন, “কোনকিছু সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা তো যেকোন বোকাও পারবে। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে সেটা বোঝা।”

আমরা যখন জ্ঞান পরিমাপ করতে যাই, তখন আমরা সাধারণত তথ্য জানাই। এটা আসলে কাম্য নয়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি হয়তো অনেক মানসিক ধ্যানধারণার ছক সম্পর্কে জানলেন অথবা অনেক বই পড়লেন, কিন্তু কোনটাই কাজে লাগালেন না। এ ব্যাপারে নাভাল রবিকান্ত যেমন বলেছেন, “আমি সবকিছু পড়তে চাই না। আমি কেবল ১০০টি মহান বই বারবার পড়তে চাই।”

রিচার্ড ফাইনম্যান বলেন, “আপনি একটি পাখির নাম দুনিয়ার যত ভাষায় হয় তা জানতে পারেন, কিন্তু আপনি যখন কাজটা শেষ করবেন, তখন দেখবেন, আপনি আসলে ঐ পাখি সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আপনি কেবল জানলেন দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গায় মানুষ ঐ পাখিকে কী নামে ডাকে তা সম্পর্কে। তো চলুন, পাখিটার দিকে তাকান, দেখুন পাখিটা কী করে। আর সেটাই কাম্য। আমার সৌভাগ্য বলতে হবে যে আমি অল্প বয়সেই কোন কিছুর নাম জানা, আর জিনিসটা সম্পর্কে জানা-এ দুইয়ের মধ্যে যে পার্থক্য তা বুঝতে পেরেছিলাম।”

আমার মতে, ৫ থেকে ১০ মেন্টাল মডেলস সম্পর্কে জানাই উত্তম। আর এগুলোকে আপনার জীবনে বারবার প্রয়োগ করা উচিত। এতে করে আপনি উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তাছাড়া আপনি ৩০০ জিনিসের নাম জানলেন, কিন্তু কখনো এগুলোর কোনটাই ব্যবহার করলেন না। তাতে লাভ কী! ব্রুস লি এ সম্পর্কে বলেন, “যে ব্যক্তি ১০ হাজার রকমের লাথি চর্চা করেছে, তাকে আমি ভয় পাই না। কিন্তু আমি ভয় পাই সেই ব্যক্তিকে যে একই ধরনের কিক ১০ হাজার বার চর্চা করেছে।”

যাই হোক, এই আইডিয়াগুলোকে কেবল একটি ভিত্তি হিসাবে নিতে পারেন। তবে এগুলো কোন পাথরে খোদাই করা জিনিস নয়। আপনি এগুলো প্রয়োজন মতো বাদ দিতে পারেন অথবা যেকোন নতুন মডেল যোগ করতে পারেন। এমন নমনীয় মন-মানসিকতা রাখবেন। যদিও এসব মডেল বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক থেকে উৎপন্ন, তবুও এগুলোকে আপনার নিজের প্রয়োজন মতো যখন দরকার বদলে নিন।

আরও বলব, আলোচনার শেষে আরও অধ্যয়ন করার জন্য একটি বইয়ের তালিকা দেওয়া হয়েছে। যেখানে এসব আইডিয়ার আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাবেন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন