শনিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২১

একটি বিজয়ী দল গঠন করুন

 একটি বিজয়ী দল গঠন করুন


‘তুমি দুনিয়াতে কেবল কোনোরকম জীবনযাপনের জন্য আসনি। তুমি দুনিয়াতে এসেছ তোমার বড় বড় স্বপ্ন নিয়ে, মানুষের জন্য ভালো কিছু করার আশা নিয়ে এবং বড় বড় কৃতিত্বসম্পন্ন কাজ করে একে কানায় কানায় পরিপূর্ণ করে দিতে। তুমি এসেছ দুনিয়াকে সমৃদ্ধ করতে। তুমি যদি এ বার্তা ভুলে যাও তবে তুমি নিঃস্ব হয়ে পড়বে।’—আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উইড্র উইলসন (বই: টিমওয়ার্ক ১০১)

ছবিসূত্র: freepik.com


যখন আমরা নেতাদের তৈরি হওয়া নিয়ে কথা বলি, তখন বলি নেতারা জন্ম থেকে নেতা হয়ে জন্মায় না, তারা নিজেদের সুযোগ্য নেতা হিসাবে নিজেদের তৈরি করে। আর যা অন্যরা তৈরি করতে পারে, তা আপনিও তৈরি করতে পারবেন। এ কেবল চর্চা ও অনুশীলনের ব্যাপার। আর নেতা হয়ে ওঠাটা যেকোন কাজে, যেকোন পদে প্রথম হওয়ার, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হওয়ার পথে সবচেয়ে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে। এটাকে এক নম্বর গুণ বলতে পারেন। আপনার যত গুণাবলি আছে সব গুণকে নেতৃত্ব দিবে যদি আপনি আপনার মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি গঠন করেন। এতে করে আপনি আপনার গুণাবলিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজে লাগাতে সক্ষম হবেন। এতে করে আপনি একদল পুরুষ বা নারীকে দলবদ্ধভাবে কাজ করতে উৎসাহিত করতে পারবেন। তাদেরকে একসাথে, এক উদ্দেশ্যে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারবেন। আপনি গঠন করবেন বিজয়ী দল, যারা আপনাকে আপনার স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে নিবে। বড় বড় কাজ করতে অবশ্যই দল দরকার। আর সেই দল হতে হবে বিজয়ী দল।

একটি বিজয়ী দল গঠনের জন্য নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। এর রয়েছে সাতটি ধাপ:

১। পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণ এবং নেতৃত্ব: দলকে অগ্রসর হওয়ার জন্য কে ডাক দেয় তা সকলেই জানে। একজন প্রশিক্ষক থাকে এবং সকলেই দলের প্রধানকে চেনে। বিজয় নেতারা নিজেদের ভালো লোকদের দ্বারা বেষ্টিত রাখে। আপনি একজন নেতার গুণাগুণ তার চারপাশের লোকদের গুণাগুণ দেখেই বলে দিতে পারবেন, যাদের দ্বারা সেই নেতা নিজেকে বেষ্টিত রাখে। তেজদীপ্ত নেতারা নিজেদের চারপাশে তাদের চেয়ে যোগ্য লোকদের নির্বাচন করে। দুর্বল নেতারা তাদের চেয়ে দুর্বলতর লোক নির্ধারণ করার চেষ্টা করে।

২। লোকদের প্রশিক্ষণ ও উন্নতিতে যত্নবান হোন: একটি বিজয়ী দল গঠনের জন্য প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে আপনার লোকদের দক্ষতা ও যোগ্যতা তৈরি করা, অনুপ্রেরণা দেওয়া, উৎসাহ প্রদান, প্রশিক্ষণ ও মান উন্নয়ন করার কাজগুলো হবে সামগ্রিক লক্ষ্যের কেন্দ্রবিন্দু।

৩। পরিকল্পনার উপর খুব বেশি জোর দিন: বিষয়টি একটি জটিল কাজ, পরিস্থিতি অনুধাবন করুন। ব্যবস্থাপনা নিয়ে হ্যারল্ড জেনিনের বিখ্যাত বইয়ে তিনি লেখেন যে প্রধান চাবিকাঠি হল প্রকৃত তথ্য। আপনি ধারণাকৃত অবস্থা বা যে অবস্থা আশা করেন বা সম্ভাব্য পরিস্থিতির উপর সন্তুষ্ট না হয়ে প্রকৃত ঘটনা জানুন। জেনিন লেখেন যে প্রকৃত ঘটনা মিথ্যা বলে না এবং সুন্দরভাবে পরিকল্পনা করা ব্যবসায়িক বুদ্ধিবৃত্তির উপর নির্ভর করে। আপনি যদি একটি বিজয়ী দল বা বিজয়ী সেনাপতির দিকে লক্ষ করেন, দেখবেন বিখ্যাত যুদ্ধে বিজয়ী দলগুলো নিজেদের লোকদের বুদ্ধিমত্তার কারণেই জিতেছিল। তারা সঠিক তথ্য পায় এবং সেগুলো নিজেদের পরিকল্পনার সাথে সংযুক্ত করে। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের ফলাফল সম্ভবত ব্রিটিশদের দ্বারা জার্মানির গোপন যন্ত্রের মাধ্যমে তাদের যুদ্ধক্ষেত্রগুলোতে এবং কমান্ডারদের মধ্যে সামনে এগিয়ে যাওয়া ও পেছনে ফিসে আসা সম্পর্কিত প্রেরিত বার্তাগুলোর পাঠোদ্ধারের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছিল।

বিপদকালীন সময়ে বিকল্প পরিকল্পনাও উন্নত করুন। সব বিখ্যাত সেনাপতিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, যখন তারা যুদ্ধক্ষেত্রে গমন করতেন, পারিপাশির্^কতা যেমনই হোক, তারা সবসময় নিজেদের জিজ্ঞাসা করতেন যে তারা কী করবেন যদি তাদের পিছু হটতে হয়। ওয়াটার লু’র যুদ্ধে ওয়েলিংটনের কাছে ১৭ হাজার অভিজ্ঞ সৈন্য সংরক্ষণে ছিল। যদি পরাজয়ের সম্ভাবনায় ওয়েলিংটনের পিছ হটার প্রয়োজন হত বা তাকে যুদ্ধ প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেয়া হত তবে সেসব সৈন্যরা তাকে রক্ষা করত। এমনকি তিনি সেদিনের যুদ্ধে যখন পরাজিত হতে যাচ্ছিলেন, তখনও তিনি তার সংরক্ষিত সৈন্যদের যুদ্ধে নেননি। শেষ পর্যন্ত তিনি যুদ্ধে জয়লাভ করে। যদি ওয়েলিংটন তার সংরক্ষিত সৈন্যদের যুদ্ধে অন্তর্ভুক্ত করতেন, তাহলে সেদিন তিনি হয়তো অনেক আগেই যুদ্ধে জয়লাভ করতেন এবং পরাজয়ের নিকটবর্তী হতেন না। কিন্তু একজন উৎকৃষ্ট সেনাপতির সবসময় সবচেয়ে খারাপ ফলাফলের জন্য বিকল্প পরিকল্পনা থাকে। একজন নেতা যিনি সম্ভাব্য কী ভুল হতে পারে, তা চিন্তা না করেই একটি পরিকল্পনা করেন, তিনি সম্ভাব্য ভুলের বিপরীতে প্রস্তুতি বা সতর্কতা স্বরূপ পরিকল্পনা না নিয়ে ব্যবসায় মারাত্মক ভুল করবেন।

৪। বাছাইকৃত কাজ করুন: একজন নেতা হিসাবে আপনি বেতনভুক্ত লোক নিয়োগ দেন এবং আপনি তাদেরকে সেই কাজে নিয়োজিত করবেন যেখানে তারা শক্তিশালী অবদান রাখতে পারবে। যদি তারা সেখানে ভালো করতে না পারে আপনি তাদেরকে আশেপাশে অন্য কাজে সরিয়ে দিন এবং তাদেরকে আপনি পরিবর্তন করতেই থাকবেন যতক্ষণ না আপনি তার জন্য উপযুক্ত স্থান পান যেখানে সে নিজের সর্বোচ্চ দক্ষতা প্রকাশ করতে পারে এবং নিজের কাজকর্মের মূল্যবান ভূমিকা রাখতে পারে।

৫। অযোগ্য লোকদের ছাঁটাই করার যোগ্যতা: যদি আপনার বাছাইকৃত লোকজন প্রতিষ্ঠানের কাজে ভূমিকা রাখতে না পারে, আপনি অবশ্যই তাদের সংস্পর্শ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখবেন। কারণ যত অধিক সময় আপনি অযোগ্য লোকদের কাজে রাখবেন, তত অধিক সময় ধরে আপনি অযোগ্য নেতা হিসাবে বিবেচিত হবেন। শুধু তাই নয়, আপনি একটি বার্তা দিলেন যে আপনার প্রতিষ্ঠানে অযোগ্য হওয়ার একটি পুরস্কার আছে এবং তা হল চাকুরির নিরাপত্তা। এই অবস্থা অন্য যোগ্য ব্যক্তি এবং সকলকে নিরুৎসাহিত করবে। তাদের সকলকে প্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিজেদের সাধ্যের চেয়ে কম ভূমিকা রাখতে প্ররোচিত করবে।

৬। উন্নতর যোগাযোগ: যেকোন প্রতিষ্ঠানের অন্যতম এক দুর্বলতা হল অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেখানে উন্নতি, অবনতি বা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে কী ঘটছে সেই ব্যাপারে যথেষ্ট তথ্য থাকে না। ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় জয় প্রত্যাশী দলের উন্মুক্ত যোগাযোগ প্রয়োজন যাতে করে লোকজন প্রতিষ্ঠানের যেকোন জায়গায় খুব তাড়াতাড়ি চাহিদা অনুযায়ী তথ্য পেয়ে যায়।

৭। শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হোন: শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া একমাত্র বিষয় যা মানুষকে প্রভাবান্বিত করে। সেরা হওয়ার বাসনা তাদেরকে সকালে বিছানা থেকে পৃথক করে দেয়, কাজের প্রতি উদ্দীপ্ত ও নিবেদিতপ্রাণ করে তোলে। ফলশ্রæতিতে নেতারা সবসময় বিজয় অর্জন, সফলতা ও অন্যান্যদের চেয়ে ভালো হওয়ার বিষয়ে কথা বলে।


তথ্যসূত্র: লিডারশিপ। লেখক: ব্রায়ান ট্রেসি। অনুবাদ: ফজলে রাব্বি। ঢাকা, সাফল্য প্রকাশনী, ২০২১।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন