শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

সাফল্য অর্জনের অন্যতম সূত্র হচ্ছে আপনার চিন্তাভাবনা কাগজে লিখে ফেলা

সাফল্য অর্জনের অন্যতম সূত্র হচ্ছে আপনার চিন্তাভাবনা কাগজে লিখে ফেলা।


প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ—তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য স্পষ্টভাবে কাগজে লেখে। এই স্বল্প সংখ্যক ব্যক্তিদের সাফল্যের মাত্রা, তাদের সমমানের শিক্ষার অধিকারী অথবা তাদের তুলনায় বেশি শিক্ষিত মানুষদের তুলনায় ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি—যারা অজ্ঞতার কারণে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো কাগজে লেখার সময় করে উঠতে পারে না।


আমেরিকান লেখক, কোচ ও স্পিকার অ্যান্টনি জে রবিনস (টনি রবিনস) বলেন, লক্ষ্য নির্ধারণ করার মাধ্যমে আপনি এই প্রথম একটা অদৃশ্য আকাঙ্ক্ষাকে দৃশ্যমান জিনিসে পরিণত করলেন।


লক্ষ্য নির্ধারণ ও অর্জন বিষয়ে একটি শক্তিশালী ফরমুলা রয়েছে যা আপনি আজীবন ব্যবহার করতে পারবেন। এই ফরমুলা ৭টি সহজ ধাপের সমন্বয়ে গঠিত। এই ধাপগুলোর মধ্যে যেকোন ১টি আপনার বর্তমান প্রোডাক্টিভিটিকে দ্বিগুণ বা তিনগুণ করতে পারে। যদি ইতোমধ্যে আপনি তা ব্যবহার না করে থাকেন, তবে এখন কাগজকলম বসে যান। এই সহজ ৭ ধাপের কৌশল ব্যবহার করে আমার অনেক প্রশিক্ষণার্থী কয়েক বছর অথবা কয়েক মাসে তাদের আয় নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।


ধাপ ১: আপনি কী করতে চান সে ব্যাপারে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিন। এই সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারেন অথবা আপনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো সম্পর্কে আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানার চেষ্টা করতে পারেন—কোন কাজগুলো, কী ধরনের গুরুত্বের ধারাবাহিকতা আপনার কাছ থেকে আশা করা হচ্ছে। এটা খুবই আশ্চর্যজনক বিষয় যে—বহু কর্মী দিনের পর দিন অসংখ্য গুরুত্বহীন কাজ করে সময় নষ্ট করে, কারণ তারা নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার জন্য তাদের বসের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসে না।


সময়ের নিকৃষ্টতম অপচয় ঘটে তখন, যখন এমন কোন কাজ খুব ভালোভাবে করা হয় যা করার আদৌ কোন প্রয়োজন ছিল না। স্টিফেন কোভি বলেছেন, ‘যদি কোন কর্মী তার মই সঠিক দেয়ালে স্থাপন না করে, তাহলে তার প্রতি পদক্ষেপ অতি অল্প সময়ে তাকে ভুল জায়গায় পৌঁছে দিবে।’

 

কথায় বলে, আপনি কোন মই দিয়ে কোন বিল্ডিং এর চূড়ায় পৌঁছাতে চান তা আগে থেকে ঠিক করুন। কারণ চূড়ায় পৌঁছে যদি দেখেন ভুল জায়গায় এসেছেন তাহলে তো পণ্ডশ্রম। এজন্য স্টিফেন আর. কোভি বলেন, ‘যদি মইটি সঠিক দেয়ালে ঠেকানো না হয়, তবে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ আমাদেরকে দ্রুত ভুল জায়গায় নিয়ে পৌঁছায়।’


ধাপ ২: আপনার পরিকল্পনা একটি কাগজে লিখে ফেলুন। নিজের চিন্তাকে কাগজে স্থানান্তর করুন। যখন কোন উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য আপনি কাগজে লিখে লিখিত রূপ দেন, তখন সেটা স্পষ্টতা ও স্থায়িত্ব লাভ করে। আপনি এমন কিছু সৃষ্টি করেন যা দেখা ও স্পর্শ করা যায়। অন্যভাবে বলা যায়, যে লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য লিখিত রূপ পায় না—তা নিছক একটি ইচ্ছঅ বা কল্পনা আকারে থেকে যায়, যা অত্যন্ত অকার্যকর। ব্যক্তির অলিখিত লক্ষ্যসমূহ তাকে বিভ্রান্তি, অস্পষ্টতা এবং ভুল পথে চালিত করে।


ধাপ ৩: আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন। প্রয়োজনে সম্পূর্ণ কর্মসূচিকে সময়ের ভিত্তিতে একাধিক অংশে বিভক্ত করুন এবং প্রতিটি ভাগের জন্য আলাদা আলাদা ডেডলাইন তথা সময়সীমা দিন। একটি কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় যদি নির্ধারণ করা না হয়, তাহলে সেটা শেষ করার কোন তাগিদ থাকে না। এর বাস্তব কোন সূচনা বা সমাপ্তিও থাকে না। কোন প্রকল্প শেষ করার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া না হলে অথবা সেটা সমাপ্ত করার সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব কেউ গ্রহণ না করলে—স্বভাবতই কাজ নিয়ে গড়িমসি করা হবে এবং কাজের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হবে না।


ধাপ ৪: আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য যেসব কাজ করা দরকার বলে আপনি মনে করেন, সেগুলোর একটি লিখিত তালিকা তৈরি করুন। যদি নতুন কোন কর্মকাণ্ডের চিন্তা মাথায় খেলে, তাও এই তালিকায় যোগ করুন। এভাবে তালিকাটি সম্পূর্ণ করুন। যে বৃহত্তর কাজ বা উদ্দেশ্য আপনি সম্পাদন করবেন তার একটি চাক্ষুষ ছবি এই তালিকা। এটা আপনার কর্মসম্পাদনের পথ, যার উপর দিয়ে হেঁটে আপনি সমাপ্তির দিকে অগ্রসর হতে পারবেন এবং এর ফলে আপনার কাজগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করার সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যাবে।


ধাপ ৫: আপনার তালিকাটিকে একটি পরিকল্পনার আকৃতি দিন। এতে অন্তর্ভুক্ত কাজগুলো গুরুত্বের ক্রমানুসারে এবং সময়ের পরম্পরা অনুযায়ী সাজান। অর্থাৎ কোন কাজের পর কোনটি সম্পাদন করবেন—এমন ধারাবাহিকতা। প্রথমে কী করবেন এবং পরে কী করা যাবে, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কিছু সময় নিন। ভেবে ঠিক করুন—অন্য কিছুর আগে কী করা দরকার এবং পরে কোন কাজটি করা সুবিধাজনক ও যুক্তিসঙ্গত হবে।

এর তুলনায় কার্যকরী কৌশল হল আপনার পরিকল্পনাগুলো কাগজের উপর ধারাবাহিক বর্গক্ষেত্র অথবা বৃত্ত আকারে অঙ্কন করা এবং সরল রেখা বা তীরচিহ্ন এঁকে কাজগুলোর একটির সাথে অন্যটির সম্পর্ক প্রদর্শন করা। কাজের প্রতিটি ধাপকে এভাবে রেখাচিত্রের আকারে বিভক্ত করার ফলে আপনার লক্ষ্য অর্জন যতটা সহজ হবে, তা প্রত্যক্ষ করে আপনি বিস্মিত হবেন।


এমন অঙ্কিত লক্ষ্য এবং কর্মসম্পাদনের সুশৃঙ্খল পরিকল্পনার সাহায্যে আপনি সেসব ব্যক্তিদের তুলনায় অনেক বেশি উৎপাদনশীল ও দক্ষ হয়ে উঠবেন, যারা নিজেদের পরিকল্পনাগুলোকে তাদের চিন্তার মাঝে সীমাবদ্ধ রাখে।


ধাপ ৬: অতি দ্রুত আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করুন। আপনার তালিকার ক্রমানুসারে যে কোন একটি কাজ আরম্ভ করে দিন। দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ সম্পন্ন করা একটি মধ্যম মানের পরিকল্পনা, কার্যকর না করা একটি উৎকৃষ্টতর পরিকল্পনার তুলনায় শ্রেষ্ঠ। যে কোন ধরনের সাফল্য লাভের জন্য কর্মসম্পাদনই মূল বিষয়।


ধাপ ৭: সিদ্ধান্ত নিন প্রতিদিন এমন কিছু কাজ করবেন যা আপনাকে আপনার প্রধান লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর করবে। এই কার্যক্রমকে আপনার দৈনিক রুটিনে পরিণত করুন। আপনার কাজ বা ব্যবসায়ের সাথে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান বা খদ্দেরদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন; দিনের কিছুটা সময় ব্যায়াম করতে পারেন; কোন বিদেশী ভাষার নতুন কিছু শব্দ শিখতে পারেন। কোন না কোন ফলপ্রসূ কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন যাতে আপনার একটি দিনেরও অর্থহীন অপচয় না ঘটে।

দৃঢ়তার সাথে অগ্রসর হোন। একবার যখন সক্রিয় হবেন, তখন অলসতাকে উপেক্ষা করে চলার গতি অব্যাহত রাখবেন। আপনার এই সিদ্ধান্ত ও শৃঙ্খলাবোধ এককভাবে আপনার প্রজন্মের যেকোন ব্যক্তির তুলনায় আপনাকে অধিক উৎপাদনশীল ও সফল মানুষে পরিণত করবে।


মিকি মাউস এবং ডিজনিল্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াল্ট ডিজনি বলেন, "আমাদের সব স্বপ্নই পূরণ হতে পারে, যদি আমরা সেগুলো অর্জনের চেষ্টা করি।" তাই আজই আপনার স্বপ্ন পূরণের জন্য চেষ্টা করুন এবং আপনি কী করতে চান তা কাগজেকলমে লিখে ফেলুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন