শনিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২১

ইট দ্যাট ফ্রগ। মূল: ব্রায়ান ট্রেসি। অনুবাদ: ফজলে রাব্বি। ঢাকা, সাফল্য প্রকাশনী, ২০২১।



সবচেয়ে কঠিন কাজ দিয়ে আরম্ভ করুন



 
আমার জীবনের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের জন্য উপকারী সেবা সম্পন্ন করা, একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের ক্ষমতাকে তুলে ধরা যাতে করে মানুষ নিজেদের জীবনকে সমৃদ্ধি ও সাফল্যের পথে পরিচালিত করতে পারে। ঠিক এই কারণেই আমি প্রতিদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠি, নতুন নতুন পথ খুঁজি, কী কী করা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করি। এরই একটি উপায় হচ্ছে সাফল্য প্রকাশনীর মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে অনুপ্রেরণার ৬৪টি বই প্রকাশ করা।
 
―ফজলে রাব্বি (সাফল্য প্রকাশনী, ঠিক ধারণা ব্লগ)


 
                              আপনার সাফল্যের সারথি

২০০১ সালে প্রকাশিত ঊধঃ ঞযধঃ ঋৎড়ম / ইৎরধহ ঞৎধপু বইয়ের অনুসরণে বাংলা অনুবাদ



সবচেয়ে কঠিন কাজ দিয়ে আরম্ভ করুন


গড়িমসি অভ্যাস ত্যাগ করা এবং অল্প সময়ে আরও বেশি কাজ দক্ষভাবে সম্পন্ন করার ২১টি বাস্তবসম্মত উপায়


মূল
ব্রায়ান ট্রেসি

অনুবাদ
ফজলে রাব্বি














প্রকাশক
সাফল্য প্রকাশনী
৩০২, লালবাগ রোড, ওয়ার্ড নং: ২৫,
লালবাগ, ঢাকা-১২১১।
মোবাইল: ০১৫৩৪ ৯০২ ৮৮২
সাপ্র: ০১৫
প্রথম প্রকাশ: ০০০০ / ০০০০
বিষয়: ব্যক্তিগত উন্নয়ন
স্বত্ব:র্  ফজলে রাব্বি
প্রচ্ছদ: সাফল্য কম্পিউটার্স

দাম: দুইশত পঞ্চাশ টাকা (250.০০)

পরিবেশক: নীলক্ষেত বুক মার্কেট, ৬৪, ইসলামিয়া মার্কেট, নীলক্ষেত, ঢাকা-১২০৫।
ফোনে অর্ডার করতে কল করুন ০১৬৮২ ০৫৮ ১৭১
সাফল্য প্রকাশনীর অনলাইন ওয়েরসাইট– িি.িংধঢ়যড়ষষড়.পড়স
সাফল্য প্রকাশনীর যেকোনো বই কিনতে ভিজিট করুন
িি.িৎড়শড়সধৎর.পড়স/সাফল্য-প্রকাশনী

ঊধঃ ঞযধঃ ঋৎড়ম, ঞৎধহংষধঃবফ নু ঋধুষব জধননর, চঁনষরংযবফ নু ঝধঢ়যড়ষষড় চৎড়শধংড়হর, ৩০২, খধষনধময জড়ধফ, ডধৎফ ঘড়: ২৫, খধষনধময, উযধশধ-১২১১. ঈড়হঃধপঃ ঙভভরপব: ০১৫৩৪ ৯০২ ৮৮২.
ডবনংরঃব: িি.িংধঢ়যড়ষষড়.পড়স
ঊ-সধরষ: ধফসরহ@ংধঢ়যড়ষষড়.পড়স
চৎরপব: ঞশ 250.০০ ঙহষু. টঝ: $২০. (ঐধৎফপড়াবৎ). ওঝইঘ: ৯৭৮-৯৮৪-৯৩৬১৪-৮-২
 




উৎসর্গ
(০০০০)


০০০০
০০০০



 
 
 




সূচি


ভূমিকা
০০
১৮
০০
২২
ব্যক্তিগত উন্নয়নে অন্যান্য বইয়ের তালিকা ১৪১


 
 



মুখবন্ধ

ব্রায়ান ট্রেসির ইট দ্যাট ফ্রগ তথা সবচেয়ে কঠিন কাজ দিয়ে আরম্ভ করুন-এ বইয়ের ইংরেজি তৃতীয় সংস্করণে দ্বিতীয় সংস্করণের কিছু অনুচ্ছেদ বাদ দিয়ে এবং নতুন কিছু অনুচ্ছেদ যোগ করে প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা পাঠকের সুবিধার্থে উভয় সংস্করণের সব অনুচ্ছেদ সংগ্রহ করে এখানে যুক্ত করে দিয়েছি। আশা করি, পাঠক গুরুত্বপূর্ণ কোন বক্তব্য থেকে বঞ্চিত হবেন না।
মার্ক টোয়েন একদা বলেছিলেন, ‘যদি প্রতিদিন সকালে একটি জীবন্ত ব্যাঙ খাওয়ার মাধ্যমে কারও দিনের সূচনা হয়, তাহলে দিনের বাকি সময়টায় তার মনে এমন সন্তুষ্টি বিরাজ করবে যে, এর তুলনায় খারাপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন তাকে হতে হবে না।’ টোয়েন এর মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন, প্রতিদিনের শুরু করুন সবচেয়ে কঠিন কাজ দিয়ে। আপনি যদি দিনের শুরুতেই কঠিন কাজ দিয়ে আরম্ভ করেন এবং তা সম্পন্ন করেন, তবে সারাদিন এই সন্তুষ্টি নিয়ে কাটাবেন যে এরচেয়ে কঠিন কাজ আর কিছু হতে পারে না। নিজের মধ্যে কঠিন কাজ সম্পন্ন করার শক্তি ও সাহস বিরাজ করবে। আত্মবিশ^াস বৃদ্ধি পাবে।
ব্রায়ান ট্রেসি মার্ক টোয়েনের সেই কথা অনুযায়ী ব্যাঙকে রূপ অর্থে ব্যবহার করেছেন। আপনার ব্যাঙ হলো আপনার সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ কাজটা—যেটা সম্পাদনের উদ্যোগ না নিলে সম্ভবত আপনি সময়ের অপচয় করতে থাকবেন। এটা এমন কোন কাজও হতে পারে যার প্রভাব ও ফলাফল বর্তমান মুহূর্তে আপনার জীবনে সবচেয়ে ইতিবাচক। টোয়েন আরও বলেন, ব্যাঙ খাওয়ার প্রথম নিয়ম হল: যদি আপনাকে ২টি ব্যাঙ খেতে হয়, তবে সবচেয়ে কুৎসিতটাকে আগে ভক্ষণ করুন।
টোয়েনের বক্তব্যকে আরেকভাবে বলা যায়, যদি আপনাকে ২টি ব্যাঙ খেতে হয়, তবে বেশি কুৎসিতটাকে আগে ভক্ষণ করতে হবে। অর্থাৎ আপনার সামনে যদি ২টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে তাহলে সবচেয়ে বড়, কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ কাজটি আগে করুন। নিজের মাঝে এমন শৃঙ্খলাবোধ গড়ে তুলুন যাতে কোন কাজ তাৎক্ষণিকভাবে (সময় নষ্ট না করে) শুরু করতে পারেন এবং তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এর পেছনে লেগে থাকতে পারেন। অন্য কিছু করার আগে আগের কাজ আগে শেষ করুন। যে কাজ একবার ধরবেন তা শেষ না করা পর্যন্ত অন্য কোন কাজ আরম্ভ করবেন না।
কবি কালীপ্রসন্ন ঘোষ যেমন বলেছেন, ‘একবার না-পারিলে দেখো শতবার।’ ঠিক তেমনই শতবার চেষ্টা করুন। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাল ছাড়বেন না। লেগে থাকুন।
ব্রায়ান ট্রেসির এ বই মূলত গড়িমসি অভ্যাস ত্যাগ করা এবং অল্প সময়ে আরও বেশি কাজ দক্ষভাবে সম্পন্ন করার কলাকৌশল নিয়ে লেখা হয়েছে। এখানে ২১টি বাস্তবসম্মত উপায় নিয়ে সাবলীল ও সহজভাবে আলোচনা করা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে এসব উপায়, সূত্র ও নীতি কাজে লাগিয়ে উপকৃত হয়েছি। তাই এসব উপায়, সূত্র ও নীতি পাঠকদের উপকারার্থে প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমরা পাঠকের সাফল্য যাত্রায় সারথি হতে এই সামান্য অবদান রাখতে পেরে আনন্দিত। পাঠকের জীবন সমৃদ্ধ হোক।

ফজলে রাব্বি
লালবাগ রোড, লালবাগ, ঢাকা-১২১১
আগস্ট ২০২১



 



ভূমিকা

এই বইটি বেছে নেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমি আশা করব এতে বর্ণিত সূত্রগুলো থেকে আপনি ততটাই উপকৃত হবেন যতটা আমি হয়েছে এবং আরও বহু পাঠক হয়েছে। আমার বিশ^াস এ বইয়ে উদ্ধৃত আইডিয়াগুলো আপনার জীবনকে চিরদিনের জন্য পালটে দিবে।
আমাদের সব কাজ পুরোপুরি শেষ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় কখনোই পাওয়া যায় না। আপনাকে আক্ষরিক অর্থেই বিভিন্ন কাজ ও দায়িত্ব সম্পাদন করা; অগণিত ইমেইল পড়া ও উত্তর দেয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রকল্প এবং অধ্যয়নের অপেক্ষায় থাকা বই ও পত্রিকার স্তুপের মাঝে নিমজ্জিত থাকতে হয়। আপনি হয়তো আশা করেন একটু সময় পেলেই এগুলোর দিকে নজর দিব।
কিন্তু বাস্তবে, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দেয়া আপনার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। আপনি কখনোই আপনার সব কাজ সমাপ্ত করতে পারেন না। বই অথবা পত্রিকাগুলো পড়ে শেষ করা, ইমেইলগুলোর উত্তর দেয়া অথবা কাক্সিক্ষত অবসর সময় বের করা সম্ভব হয় না।
আপনি অধিক সক্রিয় (ঢ়ৎড়ধপঃরাব) বা নিজে থেকে কাজ করতে উদ্যোগী হওয়া সত্ত্বেও সময় ব্যবস্থাপনা সমস্যার সমাধান করতে পারেন না। ব্যক্তিগত উৎপাদনশীলতার যত কৌশলই (ঢ়ৎড়ধপঃরারঃু ঃবপযহরয়ঁবং) রপ্ত করেন না কেন, সর্বদাই আপনার হাতে থাকা সময়ের তুলনায় বেশি কাজ জমে থাকে।
আপনার প্রতিদিনের চিন্তা, কাজ ও দায়িত্বের অন্তহীন প্রবাহকে আপনি যেভাবে মোকাবিলা করেন—কেবল তার কৌশল পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনার পক্ষে সময় ও জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আপনার গতানুগতিক কিছু কাজকে স্থগিত করে, যখন এমন অল্প সংখ্যক কাজে আপনি বেশি সময় ব্যয় করবেন—যেগুলো সত্যিকার অর্থে আপনার জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটাতে পারে—তখনই আপনার কর্মকা-ের উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে।
৪০ বছরের বেশি সময় ধরে আমি সময় ব্যবস্থাপনা বিষয়ে গবেষণা করেছি। স্টিফেন আর. কোভি (দ্য ৭ হ্যাবিটস অফ হাইলি ইফেক্টিভ পিপল), পিটার ড্রুকার (দি ইফেক্টিভ এক্সিকিউটিভ), অ্যালেক ম্যাকেঞ্জি, অ্যালেন লেকিন সহ বহু খ্যাতিমান লেখকের কাজ সম্পর্কে ধারণা নিয়েছি। ব্যক্তিগত দক্ষতা ও কার্যকারিতা বিষয় সহস্রাধিক বই ও প্রবন্ধ পাঠ করেছি। আমার এসব গবেষণা ও অধ্যয়নের ফসল এ বই—ইট দ্যাট ফ্রগ তথা সবচেয়ে কঠিন কাজ দিয়ে আরম্ভ করুন।
যখনই আমি কোন ভালো কৌশল বা ধারণা সম্পর্কে জেনেছি, সেটা আমি নিজের জীবনে এবং কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছি। যখন তা থেকে ইতিবাচক ফলাফল পেয়েছি, তখন সে বিষয়ে আমার বক্তৃতা ও সেমিনারে অন্যদের শেখানোর জন্য আলোচনা করেছি।
গ্যালিলিও একবার লিখেছিলেন, ‘আপনি মানুষকে কোনকিছু শেখাতে পারেন না; আপনি কেবল তার ভেতরে যা কিছু আছে তা খুঁজে পেতে তাকে সাহায্য করতে পারেন।’
যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ইতোমধ্যে আপনি অর্জন করেছেন, তা অনুযায়ী এ বইয়ে বর্ণিত অনেক আইডিয়া আপনার কাছে পরিচিত মনে হতে পারে। এ বই আপনার পূর্বের আইডিয়া, ধারণা ও বুদ্ধিগুলোকে আরও বেশি স্পষ্টতা দান করবে।
যখন আপনি এখানে বর্ণিত পদ্ধতি ও কলাকৌশল রপ্ত করবে এবং বারবার প্রয়োগের মাধ্যমে সেগুলোকে আপনার অভ্যাসে পরিণত করতে সক্ষম হবেন, তখন আপনার জীবনের গতি অত্যন্ত ইতিবাচক পথে মোড় নিবে।

লিখিত লক্ষ্যের ক্ষমতা
এবার আমি নিজের সম্পর্কে এবং এ ছোট বইয়ের উৎস বিষয়ে কিছু ধারণা দিব। জীবনের সূচনালগ্নে একটি কৌতুহলী মন ছাড়া আর কোন সুবিধা বা সম্পদ আমার ছিল না। মাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়ায় ভালো ছিলাম না এবং বোর্ড পরীক্ষার আগেই স্কুল ত্যাগ করলাম। তারপর বেশ কিছু বছর শ্রমিকের কাজ করি। আমার ভবিষ্যৎ তেমন সম্ভাবনাময় মনে হয়নি।
তারুণ্যে পদাপর্ণ করার পর একটি মালবাহী জাহাজে কাজ পাই, যেটি বিভিন্ন গন্তব্যে পণ্য বহন করত। এ চাকরি আমাকে পৃথিবী ঘুরে দেখার সুযোগ করে দিল। ৮ বছর ধরে আমি ভ্রমণ করলাম, কাজ করলাম, তারপর আবার ভ্রমণ করলাম। পর্যায়ক্রমে ৫টি মহাদেশের ৮০টির বেশি দেশ আমার দেখা হয়ে গেল।
এক পর্যায়ে যখন শ্রমিকের পদে চাকরি খুঁজে পাচ্ছিলাম না, তখন আমি বিক্রয়কর্মী হিসাবে কাজ শুরু করলাম। বাড়ি বাড়ি ঘুরে কমিশনের ভিত্তিতে পণ্য বিক্রি করতে লাগলাম। এ কাজ যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ছিল এবং একই পেশায় নিয়োজিত অন্যান্য বিক্রয়কর্মীদের সাফল্য দেখে আমি নিজেকে প্রশ্ন করতাম, ‘কীভাবে অন্যরা এ পেশায় আমার তুলনায় ভালো করছে?’
সেই মুহূর্তে আমি এমন কিছু করলাম যার ফলে আমার জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটে গেল। আমি সফল বিক্রয়-কর্মীদের কাছে জানতে চাইলাম তারা কী এমন করে, যার কারণে তাদের উৎপাদনশীলতা তুলনামূলকভাবে বেশি এবং রোজগারও আমার তুলনায় ভালো। তারা তাদের কৌশল সম্পর্কে আমাকে অবহিত করল। তাদের উপদেশ কাজে লাগানোর পর আমার বিক্রি বেড়ে গেল। পর্যায়ক্রমে, একজন বিক্রয়কর্মী হিসাবে আমার সাফল্য এমন পর্যায়ে পৌঁছাল যে, পদোন্নতি পেয়ে বিক্রয় ব্যবস্থাপক হলাম। একজন বিক্রয় ব্যবস্থাপক হিসাবে আমি একই কৌশল অবলম্বন করলাম। সফল ব্যবস্থাপকদের কাছে জানতে চাইলাম-তারা কীভাবে তাদের পেশায় ভালো ফলাফল অর্জন করছে। তাদের কাছ থেকে যা জানলাম, তা নিজের কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করলাম। অতি অল্প সময়ে তাদের মতোই উৎকৃষ্ট ফলাফল পেতে শুরু করলাম।
এভাবে শেখা এবং তা কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করার মাধ্যমে আমার জীবন বদলে গেল। আমি এখনো চিন্তা করে অবাক হই-সেই প্রক্রিয়া কত সহজ ও স্পষ্ট ছিল। অন্যান্য সফল ব্যক্তিরা কী করেন তা জানা এবং বারবার তা কাজে লাগানো যতক্ষণ পর্যন্ত না একই ফলাফল পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে শেখা। কী চমৎকার ধারণা!

সাফল্য একটি অনুমানযোগ্য বিষয়
সহজভাবে বলা যায়, কিছু মানুষ অন্যদের তুলনায় বেশি দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে। কারণ তাদের কাজ করার পদ্ধতি ভিন্ন এবং তারা সঠিক পন্থায় কাজ করে। বিশেষ করে সফল, সুখী ও সম্ভাবনাময় ব্যক্তিরা তাদের সময়কে গড়পড়তা মানুষের তুলনায় অনেক ভালোভাবে কাজে লাগায়। আমার জীবনের শুরুটা অসফল হওয়ার কারণে আমার মনে গভীর হীনমন্যতাবোধ কাজ করত এবং নিজেকে অসম্পূর্ণ মনে হত। এক দুর্বল মানসিকতার ফাঁদে আটকে গিয়ে আমি ভাবতাম—যারা নিজেদের জীবনে আমার তুলনায় ভালো করছে, তারা মানুষ হিসাবে আমার চেয়ে উত্তম। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে শিখলাম, আমার এই ধারণা ভুল। যারা সফল, তাদের কাজ করার পদ্ধতি ভিন্ন এবং তারা যেসব দক্ষতা রপ্ত করেছে সেগুলো আমার পক্ষেও শেখা সম্ভব।
এই উপলব্ধি আমার জন্য ঐশী বাণীর মতো ছিল এবং এর প্রভাবে আমি বিস্ময় ও উত্তেজনা অনুভব করলাম। এখনও সেই অনুভূতি আমার মধ্যে রয়ে গেছে। আমি বুঝেছিলাম, আমার জীবনকে ইতিবাচকভাবে পালটে ফেলতে পারি এবং আমার নির্ধারিত যেকোন লক্ষ্য অজর্ন করতে পারি—যদি আমার পক্ষে জানা সম্ভব হয়, একই ক্ষেত্রে অন্যরা কী করছে এবং সেই কৌশল অবিরামভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে একই ধরনের সাফল্য অর্জন করতে পারি।
বিক্রয়কর্মী হিসাবে কাজ শুরু করার এক বছরের মধ্যে আমি একজন সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিক্রয়কর্মীর পদ লাভ করি। এর এক বছর পর বিক্রয় ব্যবস্থাপক হই। পরবর্তী তিন বছরে ৬টি দেশের দায়িত্বে নিয়োজিত ৯৫ সদস্যের বিক্রয় প্রতিনিধি দলের সহ-সভাপতির পদে অধিষ্ঠিত হই। তখন আমার বয়স ২৫ বছর। বিগত বছরগুলোতে আমি ২২টি ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছি; বেশ কিছু সংখ্যক কোম্পানি গড়ে দিয়েছি; ফরাসি, জার্মান ও স্প্যানিশ ভাষা শিখেছি; বক্তা, প্রশিক্ষক ও পরামর্শদাতা হিসাবে ১ হাজারের অধিক প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করেছি। বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজারের বেশি মানুষ আমার বক্তৃতা শুনতে আসে এবং প্রতিটি সেমিনারে প্রায় ২০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।

একটি সরল সত্য
আমার সমগ্র পেশাগত জীবনে যে সরল সত্যকে আমি বারবার আবিষ্কার করেছি তা হল—এককভাবে নিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার সামর্থ্য এবং সেটা যতটা সম্ভব নিখুঁতভাবে সমাপ্ত করতে পারাই শ্রেষ্ঠ সফলতা, সম্মান, মর্যাদা এবং আত্মতৃপ্তির চাবিকাঠি। এই মৌলিক অন্তর্দৃষ্টি এ বইয়ের মূল নির্যাস।
এ বইটি লেখার উদ্দেশ্য আপনাকে বোঝানো—কীভাবে আপনার পক্ষে পেশাগত জীবনে অধিক দ্রুততার সঙ্গে অগ্রসর হওয়া সম্ভব এবং একই সাথে নিজের ব্যক্তিগত জীবনকেও সমৃদ্ধ করা সম্ভব। আমার আবিষ্কার করা ব্যক্তিগত কার্যকারিতার সবচেয়ে শক্তিশালী ২১টি সূত্র এ বইয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
এসব পদ্ধতি, কৌশল এবং কর্মপন্থাগুলো ব্যবহারিক, পরীক্ষিত এবং দ্রুত কার্যকরী। সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর বিপরীতে মানুষ কেন সময় নষ্ট করে অথবা তাদের সময় ব্যবস্থাপনা কেন দুর্বল হয়—এ সংক্রান্ত বিবিধ মনস্তাত্ত্বিক অথবা আবেগগত ব্যাখ্যার মাঝে গেলে আমারও সময় নষ্ট করা হবে। তাই এখানে বিভিন্ন তত্ত্ব ও গবেষণা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়নি। এ বইয়ে আপনি নির্দিষ্ট কিছু কর্মপন্থা সম্পর্কে ধারণা পাবেন—যেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে আপনার কাজ থেকে দ্রুত উৎকৃষ্ট ফলাফল আসবে এবং আপনার জীবন অধিক আনন্দময় হয়ে উঠবে।
এতে আলোচিত প্রতিটি ধারণার প্রধান লক্ষ্য আপনার সার্বিক উৎপাদনশীলতা, কর্মদক্ষতা ও উৎকৃষ্ট ফল লাভের মাত্রা বৃদ্ধি করা এবং যে পেশাতেই আপনি নিয়োজিত থাকেন—সে ক্ষেত্রে আপনাকে অধিক মূল্যায়িত হওয়ার পথে অগ্রসর করা। এগুলোর মধ্যে কিছু কৌশল আপনি ব্যক্তিগত জীবনেও প্রয়োগ করতে পারেন।
এখানে যে ২১টি সূত্র আলোচিত হয়েছে সেগুলো স্বয়ংসম্পূর্ণ; সবই দরকারি। পরিস্থিতি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। এই ২১টি সূত্র বৈজ্ঞানিক ফরমুলার মতো যেকোন ক্রম অনুসারে সাজান যায়, যেকোন সময় আপনি প্রয়োগ করতে পারেন। আপনি আপনার সুবিধামতো এগুলো যেকোনভাবে কাজে লাগাতে পারেন।
সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে কাজ (ধপঃরড়হ) বা কাজে নামার প্রতি উদ্যোগী হওয়া। এখানে বর্ণিত সূত্রাবলি কাজে লাগালে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে আপনার যাবতীয় কাজের কাক্সিক্ষত উন্নততর ফলাফল বয়ে আনবে। যত তাড়াতাড়ি আপনি এগুলো শিখবেন ও নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে পারবেন, নিঃসন্দেহে তত দ্রুত আপনার জীবনে উন্নতি ঘটবে!
আপনি যখন শিখে ফেলবেন কীভাবে ব্যাঙ খেতে হয়, তখন আপনি সীমাহীন সফলতার পথে পা বাড়াবেন।

ব্রায়ান ট্রেসি
সোলানা সমুদ্র সৈকত, ক্যালিফোর্নিয়া
জানুয়ারি ২০১৭


 



সূচনা

ইট দ্যাট ফ্রগ তথা সবচেয়ে কঠিন কাজ দিয়ে আরম্ভ করুন

আমরা একটি চমৎকার সময়ে পৃথিবীতে বাস করছি। বর্তমান যুগে আমাদের পক্ষে যত বেশি লক্ষ্য অর্জনের সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে—তেমনটি আর কখনো ছিল না। হয়তো মানব ইতিহাসে আর কোন সময়ে এত বেশি বিকল্প সম্ভাবনার মাঝে আমাদের হাবুডুবু খেতে হয়নি। বস্তুত, এত বেশি সংখ্যক ভালো কাজ আমাদের পক্ষে করা সম্ভব যে—সেগুলো মধ্যে কোনটা আমরা বেছে নিব, এই জটিল সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই নির্ধারিত হতে পারে জীবনে আমাদের পক্ষে কী অর্জন করা সম্ভব।
আপনি যদি এ যুগের গড়পড়তা মানুষদের মতো হন, তাহলে সম্পাদনযোগ্য বহু কাজ আপনাকে সর্বদা তটস্থ রাখে এবং সব কাজ সমাপ্ত করার যথেষ্ট সময় আপনি পান না। আপনি যখন বর্তমান কাজগুলো সম্পাদনের জন্য লড়াই করেন, তখন আপনার সামনে আরও নতুন নতুন কাজ ও দায়িত্ব উপস্থিত হতে থাকে সাগরের ঢেউয়ের মতো। এর ফলে সম্পাদনের অপেক্ষায় থাকা সব কাজ কখনোই আপনার পক্ষে শেষ করা সম্ভব হয় না। আপনি কখনোই এই কর্মযজ্ঞের ঢেউ সামলে উঠতে পারেন না।

বাছাইয়ের প্রয়োজনীয়তা
উপরোক্ত কারণে হয়তো অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায়—প্রতি মুহূর্তে নিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি বাছাই করার সামর্থ্য, সেটা আরম্ভ করা এবং দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে শেষ করা—আপনার সাফল্য লাভের সম্ভাবনাকে অনেক বেশি প্রভাবিত করছে।
একজন গড়পড়তা মানুষ, যিনি গুরুত্বের ক্রমানুসারে নিজের কাজ সমাপ্ত করার অভ্যাস গড়ে তুলেছেন এবং প্রধান কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে পারেন-তার পক্ষে এমন একজন প্রতিভাবান ব্যক্তিকে পরাজিত করা সম্ভব, যিনি অনেক কথা বলেন; চমৎকার পরিকল্পনা তৈরি করেন; কিন্তু সে সব বাস্তবায়ন করতে পারেন সামান্যই।
[সবসময় আগের কাজ আগে করুন। আপনার কাজের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকে আগে করুন। গুরুত্বপূর্ণ কাজের তালিকা করুন। তারপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ দিয়ে দিন আরম্ভ করুন। আগের কাজ আগে করুন।]

ব্যাঙ বিষয়ক রূপকের মর্ম
মার্ক টোয়েন একদা বলেছিলেন, ‘যদি প্রতিদিন সকালে একটি জীবন্ত ব্যাঙ খাওয়ার মাধ্যমে কারও দিনের সূচনা হয়, তাহলে দিনের বাকি সময়টায় তার মনে এমন সন্তুষ্টি বিরাজ করবে যে, এর তুলনায় খারাপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন তাকে হতে হবে না।’
আপনার ব্যাঙ হলো আপনার সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ কাজটা—যেটা সম্পাদনের উদ্যোগ না নিলে সম্ভবত আপনি সময়ের অপচয় করতে থাকবেন। এটা এমন কোন কাজও হতে পারে যার প্রভাব ও ফলাফল বর্তমান মুহূর্তে আপনার জীবনে সবচেয়ে ইতিবাচক। তিনি আরও বলেন,
ব্যাঙ খাওয়ার প্রথম নিয়ম হল: যদি আপনাকে ২টি ব্যাঙ খেতে হয়, তবে সবচেয়ে কুৎসিতটাকে আগে ভক্ষণ করুন।
টোয়েনের বক্তব্যকে আরেকভাবে বলা যায়, যদি আপনাকে ২টি ব্যাঙ খেতে হয়, তবে বেশি কুৎসিতটাকে আগে ভক্ষণ করতে হবে। অর্থাৎ আপনার সামনে যদি ২টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে তাহলে সবচেয়ে বড়, কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজটি প্রথমে করুন। নিজের মাঝে এমন শৃঙ্খলাবোধ গড়ে তুলুন যাতে কোন কাজ তাৎক্ষণিকভাবে (সময় নষ্ট না করে) শুরু করতে পারেন এবং তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এর পেছনে লেগে থাকতে পারেন। অন্য কিছু করার আগে আগের কাজ আগে শেষ করুন। যে কাজ একবার ধরবেন তা শেষ না করা পর্যন্ত অন্য কোন কাজ আরম্ভ করবেন না।
এভাবে কর্ম সম্পাদনের পদ্ধতিকে একটি পরীক্ষা হিসাবে ভাবুন এবং একে ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহণ করুন। সহজ কাজটি প্রথমে শুরু করার প্রলোভন দমন করুন। সর্বদা মনে রাখুন, প্রতিদিন আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হল—তাৎক্ষণিকভাবে আপনি কোন কাজটি করবেন তা নির্বাচন করা এবং এরপর কী করবেন তা ঠিক করা, যদি আদৌ তা করার ইচ্ছা আপনার থাকে।
ব্যাঙ খাওয়ার দ্বিতীয় নিয়ম হল, যদি একটি জীবন্ত ব্যাঙ আপনাকে ধরে খেতেই হয়, সেটা দীর্ঘক্ষণ আপনার তাকিয়ে থাকার জন্য এক জায়গায় বসে থাকবে না।
উচ্চমাত্রার দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা অর্জনের মূলমন্ত্র হল, প্রতিদিন সকালে সর্বপ্রথম আপনার প্রধান কাজটি সম্পাদন করার আজীবনব্যাপী অভ্যাস গড়ে তোলা। অন্য কিছু করার আগে এবং চিন্তাভাবনার পেছনে বেশি সময় ব্যয় না করে আপনাকে ‘নিজের ব্যাঙ খাওয়ার’ রুটিন তৈরি করতে হবে।

দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পুরুষ বা নারী অধিক বেতন ও দ্রুত পদোন্নতি লাভ করেন—তাদের সকল কাজের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ অভ্যাস বিদ্যমান। তাদের অভ্যাসটা হল কর্মমুখিতা (ধপঃরড়হ ড়ৎরবহঃধঃরড়হ), কাজের প্রতি ঝোঁক বা কাজ করার প্রবণতা। তারাই সফল ও কার্যকরী মানুষ, যারা সময় অপচয় না করে সরাসরি তাদের মূল কাজগুলো আরম্ভ করে এবং শৃঙ্খলা, স্থিরতা ও অখ- মনোযোগের সাথে সেগুলো সম্পন্ন করে।
বিশেষ করে ব্যবসা জগতে একজন ব্যক্তি ভালো উপার্জন করতে ও পদোন্নতি পেতে সক্ষম হন তখনই যখন তিনি কোন কাজ লক্ষণীয় মাত্রায় নির্দিষ্ট ফলাফল প্রদর্শন করতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে মূল্যবান অবদান রাখতে পারলেই আপনাকে উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেয়া হবে, বিশেষ করে আপনার কাছে যতটুকু আশা করা হয়—তার সঙ্গে আপনার কর্মদক্ষতার সামঞ্জস্য থাকতে হবে। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল ‘কর্মসম্পাদনে ব্যর্থতা’। অনেক মানুষ, কর্মকা-ের (ধপঃরারঃু) সঙ্গে কর্মসম্পাদনকে (ধপপড়সঢ়ষরংযসবহঃ) গুলিয়ে ফেলে। তারা বিরামহীন কথা বলে, অগণিত সভার আয়োজন করে এবং চমৎকার সব পরিকল্পনা তৈরি করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায় কেউই নিজের কাজটি সম্পাদন করতে পারেনি এবং সবাই কাক্সিক্ষত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।

সাফল্যমুখী অভ্যাস গড়ে তুলুন
একজন ব্যক্তির মাঝে যে অভ্যাসসমূহ গড়ে উঠে, সেগুলোর উপর তার জীবন ও কর্মক্ষেত্রের শতকরা ৯৫ ভাগ সাফল্য নির্ভরশীল। গুরুত্বের ক্রমানুসারে কাজ করা, গড়িমসি অভ্যাস কাটানো* (ড়াবৎপড়সরহম ঢ়ৎড়পৎধংঃরহধঃরড়হ) এবং আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ আগে সম্পাদন করা। এগুলো হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানসিক ও শারীরিক দক্ষতা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এ অভ্যাসগুলো আপনি নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে আয়ত্ত করতে পারেন। বারবার অভ্যাসগুলো আপনার অনুশীলনের মাধ্যমে পুনরাবৃত্তি করে যেতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না সেগুলো আপনার অবচেতন মনে স্থায়ীভাবে গেড়ে বসে এবং আপনার স্বভাবের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে। যেসব কাজ আপনার অভ্যাসে পরিণত হয়, সেগুলো অত্যন্ত সহজে ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পাদন করা যায়। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো শুরু ও সমাপ্ত করার অভ্যাস-তাৎক্ষণিক ও বিরামহীন সুফল বয়ে আনে। এভাবে আপনি নিজেকে এমন মানসিক ও আবেগগত প্রোগ্রামিং করতে সক্ষম হবেন যে, প্রতিটি কর্মসম্পাদন আপনার মাঝে ইতিবাচক অনুভূতি সৃষ্টি করতে থাকবে। এর থেকে আপনার মাঝে একজন বিজয়ী খেলোয়াড়ের মতো উচ্ছাস তৈরি হবে।
[*গড়িমসি অভ্যাস ত্যাগ করা এবং অল্প সময়ে আরও বেশি কাজ দক্ষভাবে সম্পন্ন করার ২১টি বাস্তবসম্মত উপায় নিয়েই এ বই আপনার জন্য বিশেষভাবে রচিত।]
যেকোন গুরুত্বের বা আকারের একটি কাজ সম্পাদন করার সাথে সাথেই আপনার দেহমনে উত্তাল তরঙ্গের মতো তেজ, উদ্দীপনা ও আত্মতৃপ্তির অনুভূতি সৃষ্টি হয়। সম্পাদিত কাজটি যত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়, আপনি তত বেশি খুশি হন, আপনার আত্মবিশ^াস বৃদ্ধি পায় এবং নিজের সক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চয়তা লাভ করেন।
একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সমাপ্ত করার প্রতিক্রিয়ায় আপনার মস্তিষ্কে এনডরফিন নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়। এই রাসায়নিক প্রাকৃতিকভাবে আপনাকে উত্তেজনা ও পরিতৃপ্তির অনুভূতি প্রদান করে। এর প্রভাব আপনার অধিকতর সৃজনশীল, ইতিবাচক, সুদর্শন এবং আত্মবিশ^াসী মানুষের পরিণত করে।

ইতিবাচক আসক্তি গড়ে তুলুন
এখন, সাফল্যের অত্যন্ত একটি গোপন সূত্র সম্পর্কে আপনাকে বলব। আপনি স্বীয় চেষ্টায় আপনার মস্তিষ্কে এনডরফিন নিঃসরণের ‘ইতিবাচক আসক্তি’ গড়ে তুলতে পারেন-যা আপনাকে অধিকতর স্পষ্টতা, আত্মবিশ^াস এবং সক্ষমতা প্রদান করবে। এই আসক্তি যখন আপনার মধ্যে গড়ে উঠবে, তখন আপনি অবচেতনভাবে নিজের জীবনকে এমনভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ করবেন যে—অবিরামভাবে অধিক সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং প্রকল্প আরম্ভ ও শেষ করা আপনার স্বয়ংক্রিয় অভ্যাসে পরিণত হবে। আপনার সাফল্য ও অবদানের পেছনে এই আসক্তি গঠনমূলকভাবে অবদান রাখবে।
উৎকৃষ্টতর জীবনযাপন, পেশাগত সাফল্য এবং নিজের মধ্যে সন্তুষ্টিদায়ক অনুভূতি বজায় রাখার মূলমন্ত্র হল—গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো শুরু ও সমাপ্ত করার অভ্যাস গড়ে তোলা।
আপনার মধ্যে যখন এই অভ্যাস তৈরি হবে, তখন তা আপনার আত্মশক্তিকে আরও মজবুত করবে; ফলে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পাদন না করে ফেলে রাখা আপনার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে।

কোন সংক্ষিপ্ত পথ নেই
আপনি নিশ্চয় এ গল্পটি শুনেছেন। নিউ ইয়র্ক শহরের রাস্তায় এক ব্যক্তি একজন সঙ্গীতবিদকে থামিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘আপনি কি বলতে পারেন আমি কীভাবে কার্নেগি হলে পৌঁছাতে পারি? (কার্নেগি হল সঙ্গীতানুষ্ঠানের জন্য বিখ্যাত মিলনায়তন)’
সঙ্গীতবিদ: ‘আরে ভাই, চর্চা করতে হবে। আরও অনুশীলন করতে হবে। তবেই সেখানে পৌঁছাতে পারবেন।’
যদিও এ গল্পটি কৌতুকের মতো শোনায়। কিন্তু বাস্তবে যেকোন বিষয়ে দক্ষতা গড়ে তোলার একমাত্র উপায় হল অনুশীলন। সৌভাগ্যের বিষয় হল মানুষের মন—¯œায়ুতন্তু বা পেশির মতো কাজ করে। মনকে যত বেশি কাজে লাগান যায়, এটা তত বেশি শক্তিশালী ও সক্ষম হয়ে ওঠে। আপনি যেসব অভ্যাস বা স্বভাব নিজের জন্য আবশ্যক বা দরকারি মনে করেন তা অনুশীলন ও চর্চার মাধ্যমে গড়ে তুলতে পারেন।

নতুন অভ্যাস গঠনের জন্য আবশ্যক ৩টি বৈশিষ্ট্য
মনোযোগ প্রদান করার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য আপনার মাঝে ৩টি মৌলিক বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার এবং এগুলো আয়ত্ত করা সম্ভব। এই বৈশিষ্ট্যগুলো হল:
ক্স সিদ্ধান্ত গ্রহণ
ক্স শৃঙ্খলাবোধ
ক্স দৃঢ়সংকল্প
প্রথমত, সিদ্ধান্ত নিন আপনি নিজের মাঝে কাজ সমাপ্ত করার অভ্যাস গড়ে তুলবেন।
দ্বিতীয়ত, নিজের মধ্যে এমন শৃঙ্খলাবোধ গড়ে তুলুন যে-এই বই থেকে শেখা কৌশলগুলো আপনি পুনঃপুন অনুশীলন করবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না সেগুলো আপনার স্বয়ংক্রিয় অভ্যাসে পরিণত হয়।
তৃতীয়ত, যেসব কাজ আপনার করণীয় সেগুলো দৃঢ়সংকল্পের সাথে করতে থাকবেন যতক্ষণ না সেগুলো অভ্যাস হিসাবে আপনার স্বভাবে স্থায়িত্ব লাভ করে।

কল্পনা করুন আপনি আপনার কাক্সিক্ষত স্বপ্নের ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছেন
আপনি যেমন চান তেমন উচ্চ উৎপাদনশীল, কার্যকরী ও দক্ষ ব্যক্তি হওয়ার পথে দ্রুত অগ্রসর হওয়ার একটি বিশেষ উপায় রয়েছে। আপনাকে ক্রমাগত কল্পনা করতে হবে—একজন কর্মমুখী, চটপটে এবং নিজের কাজের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ বিশিষ্ট মানুষ হতে পারার পুরস্কার ও সুফলগুলো কী। সর্বদা নিজেকে এমন একজন ব্যক্তি হিসাবে দেখুন, যে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো দ্রুত ও সঠিকভাবে সম্পাদন করতে পারে।
কোন ব্যক্তি নিজেকে যে রূপে কল্পনা করে, তার স্বভাবে এর শক্তিশালী প্রভাব পড়ে। আপনি ভবিষ্যতে যে ধরনের মানুষে পরিণত হতে চান—সেই রূপে নিজেকে কল্পনা করুন। আপনার আত্ম-প্রতিকৃতি (ংবষভ-রসধমব), মনে মনে নিজেকে আপনি যেমন মানুষ হিসাবে দেখেন—তার মাধ্যমেই মূলত নির্ধারিত হয় আপনার বাহ্যিক কর্মকা- কেমন হবে। আপনার বাহ্যিক জীবনের সব ধরনের উন্নয়নের সূচনা ঘটে আপনার অন্তর্নিহিত উন্নয়নের প্রভাব ও মানসিক কল্পনার সাহায্যে। পেশাগত উন্নয়ন বিষয়ক বক্তা জিম ক্যাচকার্ট বলেন,
‘নিজেকে আপনি যে ধরনের মানুষ হিসাবে কল্পচোখে দেখেন, সেই ধরনের মানুষেই আপনি পরিণত হবেন।’
বস্তুত আপনার—নতুন কোন দক্ষতা, অভ্যাস বা সামর্থ্য রপ্ত করার ক্ষমতা সীমাহীন। বারংবার অনুশীলন করা, গড়িমসি অভ্যাস কাটানো এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো দ্রুত সমাপ্ত করার বিষয়ে নিজেকে যখন প্রশিক্ষিত করে তুলবেন, তখন আপনার জীবন ও পেশাগত ক্ষেত্রে গতি সঞ্চার হবে এবং আপনার মাঝে বিদ্যমান সম্ভাবনাগুলো সুপ্ত অবস্থা থেকে গা ঝাড়া দিয়ে জেগে উঠবে।
ইট দ্যাট ফ্রগ তথা সবচেয়ে কঠিন কাজ দিয়ে আরম্ভ করুন।





অধ্যায় এক

টেবিল গুছিয়ে রাখুন
জয়ী হতে হলে আপনার মধ্যে যে গুণ অবশ্যই থাকতে হবে তা হল—নিজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা। আপনাকে জানতে হবে আপনি ঠিক কী চান এবং তা অর্জন করার জন্য আপনার মাঝে তীব্র আকাক্সক্ষা থাকতে হবে।—নেপোলিয়ন হিল (থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ বইয়ের লেখক)

আপনার ব্যাঙ নির্বাচন করা এবং সেটা খাওয়ার জন্য অগ্রসর হওয়ার আগে আপনাকে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে, নিজের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনি কী কী অর্জন করতে আগ্রহী। স্পষ্টতা—ব্যক্তিগত উৎপাদনশীলতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক। অধিক দ্রুততার সঙ্গে কিছু মানুষের বেশি সংখ্যক কাজ সম্পাদন করতে পারার প্রধান কারণ, নিজেদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে তাদের অত্যন্ত স্পষ্ট ধারণা থাকে এবং এই লক্ষ্য থেকে তারা কখনোই বিচ্যুত হয় না। আপনি কী করতে চান এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আপনাকে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, এসব বিষয়ে আপনি যত বেশি স্পষ্টভাবে অবহিত হবেন—আপনার কর্তব্য সম্পাদন, সময়ের অপচয় রোধ এবং ব্যাঙ খাওয়া তত সহজ হবে। সময় নষ্ট করা এবং অনুপ্রেরণার অভাবের প্রধান কারণ হল—আপনি যা করতে চাচ্ছেন তার ক্রম বা ধারাবাহিকতা কী হবে এবং আপনার প্রকৃত উদ্দেশ্য কী—সেই বিষয়ে অস্পষ্টতা, বিভ্রান্তি এবং দোদুল্যমানতা। আপনাকে সর্বশক্তি দিয়ে এই সাধারণ প্রবণতা মোকাবিলা করতে হবে এবং নিজের প্রধান উদ্দেশ্য ও কর্তব্যগুলো সম্পাদনের জন্য স্পষ্ট ধারণার সাহায্যে লড়াই করতে হবে।

সাফল্য অর্জনের অন্যতম সূত্র হচ্ছে আপনার চিন্তাভাবনা কাগজে লিখে ফেলা
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ—তাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যগুলো স্পষ্টভাবে কাগজে লেখে। এই স্বল্প সংখ্যক ব্যক্তিদের সাফল্যের মাত্রা, তাদের সমমানের শিক্ষার অধিকারী অথবা তাদের তুলনায় বেশি শিক্ষিত ও সক্ষম মানুষদের তুলনায় ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি—যারা অজ্ঞাত কারণে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো কাগজে লেখার সময় করে উঠতে পারে না।
লক্ষ্য নির্ধারণ ও অর্জন বিষয়ে একটি শক্তিশালী ফরমুলা রয়েছে যা আপনি আজীবন ব্যবহার করতে পারবেন। এই ফরমুলাটি ৭টি সহজ ধাপের সমন্বয়ে গঠিত। এই ধাপগুলোর মাধ্যে যে কোন ১টি আপনার উৎপাদনশীলতাকে দ্বিগুণ বা তিনগুণ করতে পারে, যদি ইতোমধ্যে আপনি সেটা ব্যবহার না করে থাকেন। এই সহজ ৭ ধাপের কৌশল ব্যবহার করে আমার অনেক প্রশিক্ষণার্থী কয়েক বছর অথবা কয়েক মাসে তাদের আয় নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।
ধাপ ১: আপনি কী করতে চান সে ব্যাপারে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিন। এই সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারেন অথবা আপনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো সম্পর্কে আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানার চেষ্টা করতে পারেন—কোন কাজগুলো, কী ধরনের গুরুত্বের ধারাবাহিকতা আপনার কাছ থেকে আশা করা হচ্ছে। এটা খুবই আশ্চর্যজনক বিষয় যে—বহু কর্মী দিনের পর দিন অসংখ্য গুরুত্বহীন কাজ করে সময় নষ্ট করে, কারণ তারা নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার জন্য তাদের বসের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসে না।
সময়ের নিকৃষ্টতম অপচয় ঘটে তখন, যখন এমন কোন কাজ খুব ভালোভাবে করা হয় যা করার আদৌ কোন প্রয়োজন ছিল না। স্টিফেন কোভি তার দ্য ৭ হ্যাবিটস অফ হাইলি ইফেক্টিভ পিপল বইয়ে বলেছেন, ‘যদি কোন কর্মী তার মই সঠিক দেয়ালে স্থাপন না করে, তাহলে তার প্রতিটি পদক্ষেপ অতি অল্প সময়ে তাকে ভুল জায়গায় পৌঁছে দিবে।’
 
[কথায় বলে, আপনি কোন মই দিয়ে কোন বিল্ডিং এর চূড়ায় পৌঁছাতে চান তা আগে থেকে ঠিক করুন। কারণ চূড়ায় পৌঁছে যদি দেখেন ভুল জায়গায় এসেছেন তাহলে তো প-শ্রম। এজন্য স্টিফেন আর. কোভি বলেন, ‘যদি মইটি সঠিক দেয়ালে ঠেকানো না হয়, তবে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ আমাদেরকে দ্রুত ভুল জায়গায় নিয়ে পৌঁছায়।’—তথ্যসূত্র: মিটিংস দ্যাট গেট রেজাল্টস। ব্রায়ান ট্রেসি।]
ধাপ ২: আপনার পরিকল্পনা একটি কাগজে লিখে ফেলুন। নিজের চিন্তাকে কাগজে স্থানান্তর করুন। যখন কোন উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য আপনি কাগজে লিখে লিখিত রূপ দেন, তখন সেটা স্পষ্টতা ও স্থায়িত্ব লাভ করে। আপনি এমন কিছু সৃষ্টি করেন যা দেখা ও স্পর্শ করা যায়। অন্যভাবে বলা যায়, যে লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য লিখিত রূপ পায় না—তা নিছক একটি ইচ্ছঅ বা কল্পনা আকারে থেকে যায়, যা অত্যন্ত অকার্যকর। ব্যক্তির অলিখিত লক্ষ্যসমূহ তাকে বিভ্রান্তি, অস্পষ্টতা এবং ভুল পথে চালিত করে।
ধাপ ৩: আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন। প্রয়োজনে সম্পূর্ণ কর্মসূচিকে সময়ের ভিত্তিতে একাধিক অংশে বিভক্ত করুন এবং প্রতিটি ভাগের জন্য আলাদা আলাদা ডেডলাইন তথা সময়সীমা দিন। একটি কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় যদি নির্ধারণ করা না হয়, তাহলে সেটা শেষ করার কোন তাগিদ থাকে না। এর বাস্তব কোন সূচনা বা সমাপ্তিও থাকে না। কোন প্রকল্প শেষ করার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া না হলে অথবা সেটা সমাপ্ত করার সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব কেউ গ্রহণ না করলে—স্বভাবতই কাজ নিয়ে গড়িমসি করা হবে এবং কাজের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হবে না।
ধাপ ৪: আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য যেসব কাজ করা দরকার বলে আপনি মনে করেন, সেগুলোর একটি লিখিত তালিকা তৈরি করুন। যদি নতুন কোন কর্মকা-ের চিন্তা মাথায় খেলে, তাও এই তালিকায় যোগ করুন। এভাবে তালিকাটি সম্পূর্ণ করুন। যে বৃহত্তর কাজ বা উদ্দেশ্য আপনি সম্পাদন করবেন তার একটি চাক্ষুষ ছবি এই তালিকা। এটা আপনার কর্মসম্পাদনের পথ, যার উপর দিয়ে হেঁটে আপনি সমাপ্তির দিকে অগ্রসর হতে পারবেন এবং এর ফলে আপনার কাজগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করার সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যাবে।
ধাপ ৫: আপনার তালিকাটিকে একটি পরিকল্পনার আকৃতি দিন। এতে অন্তর্ভুক্ত কাজগুলো গুরুত্বের ক্রমানুসারে এবং সময়ের পরম্পরা অনুযায়ী সাজান। অর্থাৎ কোন কাজের পর কোনটি সম্পাদন করবেন—এমন ধারাবাহিকতা। প্রথমে কী করবেন এবং পরে কী করা যাবে, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কিছু সময় নিন। ভেবে ঠিক করুন—অন্য কিছুর আগে কী করা দরকার এবং পরে কোন কাজটি করা সুবিধাজনক ও যুক্তিসঙ্গত হবে।
এর তুলনায় কার্যকরী কৌশল হল আপনার পরিকল্পনাগুলো কাগজের উপর ধারাবাহিক বর্গক্ষেত্র অথবা বৃত্ত আকারে অঙ্কন করা এবং সরল রেখা বা তীরচিহ্ন এঁকে কাজগুলোর একটির সাথে অন্যটির সম্পর্ক প্রদর্শন করা। কাজের প্রতিটি ধাপকে এভাবে রেখাচিত্রের আকারে বিভক্ত করার ফলে আপনার লক্ষ্য অর্জন যতটা সহজ হবে, তা প্রত্যক্ষ করে আপনি বিস্মিত হবেন।
এমন অঙ্কিত লক্ষ্য এবং কর্মসম্পাদনের সুশৃঙ্খল পরিকল্পনার সাহায্যে আপনি সেসব ব্যক্তিদের তুলনায় অনেক বেশি উৎপাদনশীল ও দক্ষ হয়ে উঠবেন, যারা নিজেদের পরিকল্পনাগুলোকে তাদের চিন্তার মাঝে সীমাবদ্ধ রাখে।
ধাপ ৬: অতি দ্রুত আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করুন। আপনার তালিকার ক্রমানুসারে যে কোন একটি কাজ আরম্ভ করে দিন। দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ সম্পন্ন করা একটি মধ্যম মানের পরিকল্পনা, কার্যকর না করা একটি উৎকৃষ্টতর পরিকল্পনার তুলনায় শ্রেষ্ঠ। যে কোন ধরনের সাফল্য লাভের জন্য কর্মসম্পাদনই মূল বিষয়।
ধাপ ৭: সিদ্ধান্ত নিন প্রতিদিন এমন কিছু কাজ করবেন যা আপনাকে আপনার প্রধান লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর করবে। এই কার্যক্রমকে আপনার দৈনিক রুটিনে পরিণত করুন। আপনার কাজ বা ব্যবসায়ের সাথে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান বা খদ্দেরদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন; দিনের কিছুটা সময় ব্যায়াম করতে পারেন; কোন বিদেশী ভাষার নতুন কিছু শব্দ শিখতে পারেন। কোন না কোন ফলপ্রসূ কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন যাতে আপনার একটি দিনেরও অর্থহীন অপচয় না ঘটে।
দৃঢ়তার সাথে অগ্রসর হোন। একবার যখন সক্রিয় হবেন, তখন অলসতাকে উপেক্ষা করে চলার গতি অব্যাহত রাখবেন। আপনার এই সিদ্ধান্ত ও শৃঙ্খলাবোধ এককভাবে আপনার প্রজন্মের যেকোন ব্যক্তির তুলনায় আপনাকে অধিক উৎপাদনশীল ও সফল মানুষে পরিণত করবে।

লিখিত লক্ষ্যসমূহের শক্তি
লিখিত ও স্পষ্ট লক্ষ্যসমূহ আপনার চিন্তায় চমৎকার ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। আপনার মাঝে কর্ম সম্পাদনের প্রেরণা সৃষ্টি করে। এর সাহায্যে আপনার মাঝে সুপ্ত সৃজনশীলতা বিদ্যুৎতের মতো উজ্জীবিত হয়ে ওঠে, আপনার অস্তিত্বে শক্তির প্রবাহ সৃষ্টি হয় এবং আপনার সময় অপচয় করার প্রবণতা অপসারিত হয়। এমন অনুভূতি আপনার মাঝে আরও বেশি শক্তি সঞ্চার করে এবং সারাদিন তৎপর থাকার ইচ্ছা সৃষ্টি করে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি হল ১০/৯০ নীতি। এই নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোন কাজ আরম্ভের আগে ১০ শতাংশ সময় আপনি সেই কাজকে সংগঠিত করা ও এ সম্পর্কিত পরিকল্পনা তৈরি করার জন্য ব্যয় করেন, তাহলে কাজটি শুরু করার পর-শেষ করার ক্ষেত্রে আপনি ৯০ শতাংশ সময় বাঁচাতে পারবেন। একবার এই নীতি প্রয়োগ করলেই আপনি এর কার্যকারিতা উপলব্ধি করতে পারবেন।
আমাদের লক্ষ্যসমূহ, আমাদের অর্জনের চুল্লিতে জ¦ালানির মতো কাজ করে। আপনার লক্ষ্য যত বড় ও স্পষ্ট হবে, তা অর্জনের জন্য আপনি তত বেশি উত্তেজনা অনুভব করবেন। আপনার লক্ষ্য সম্পর্কে আপনি যত বেশি ভাববেন, তা অর্জনের অন্তর্নিহিত আকাক্সক্ষা ও প্রেরণা তত বেশি তীব্রতর হবে।
প্রতিদিন আপনার লক্ষ্যসমূহ সম্পর্কে চিন্তা করুন এবং সেগুলো পর্যালোচনা করুন। প্রতিদিনের শুরুতে আপনার বর্তমান মুহূর্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যটি অর্জনে সহায়ক কাজটি সম্পাদন করার উদ্যোগ নিন।

হাতেকলমে কাজ করুন
১. এখনই একটি সাদা কাগজ নিন এবং আগামী বছরে সম্পাদন করার জন্য তাতে ১০টি লক্ষ্যের এক তালিকা তৈরি করুন। এমনভাবে লক্ষ্যগুলো সম্পর্কে কাগজে লিখুন যেন পরবর্তী বছর শেষ হয়ে গেছে এবং সেগুলো বাস্তবায়িত হয়ে গেছে। লেখার সময় বর্তমান কাল ব্যবহার করুন।
কর্তৃবাচ্য এবং উত্তম পুরুষ এক বচন ব্যবহার করুন। যাতে শব্দগুলোকে তৎক্ষণাৎ আপনার অবচেতন মন গ্রহণ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি লিখতে পারেন, ‘আমি এত তারিখের মধ্যে প্রতি বছর এত টাকা আয় করেছি। [উদাহরণ, ‘আমি ৩০ নভেম্বর ২০২১ সালের মধ্যে ৩০ লাখ টাকা আয় করেছি। প্রতি বছর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আমি ৩০ লাখ টাকা আয় করছি।’] অথবা আমি এত তারিখ পর্যন্ত আমার ওজন এত কেজি ছিল। [উদাহরণ, আমার ওজন ৩০ মার্চ ২০২২ তারিখে ৭০ কেজি হয়েছে।] অথবা আমি এত তারিখে এই গাড়ির মালিক হয়েছি বা এই বাড়ির মালিক হয়েছি। [উদাহরণ, আমি ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ির মালিক হয়েছি অথবা আমি ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে বাড়ির মালিক হয়েছি।]
২. আপনার ১০টি লক্ষ্য সম্পর্কিত তালিকাটি পুনঃবিবেচনা করুন এবং এর থেকে এমন একটি লক্ষ্য নির্বাচন করুন যা অর্জিত হলে জীবনে আপনি সবচেয়ে ইতিবাচক ফলাফল লাভ করবেন। এই লক্ষ্যটিকে ভিন্ন একটি কাগজে লিখুন, সেটা কবে সমাপ্ত করতে পারবেন সে বিষয়ে সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করুন, এর (লক্ষ্য অর্জনের) জন্য পরিকল্পনা তৈরি করুন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সক্রিয় হোন এবং প্রতিদিন সেই কাজগুলো করুন যার ফলে আপনি সেই লক্ষ্যটি অর্জনের দিকে অগ্রসর হতে থাকবেন। এই অনুশীলনীটি এককভাবে আপনার জীবনকে বদলে দিতে পারে।




অধ্যায় দুই

প্রতিদিনের কাজকর্মের আগাম পরিকল্পনা তৈরি করুন
পরিকল্পনা হল ভবিষ্যতকে বর্তমানে নিয়ে আসা, যাতে বর্তমান মুহূর্তে সেই বিষয়ে আপনি সক্রিয় হতে পারেন।—অ্যালেন লেকিন (ঐড়ি ঃড় এবঃ ঈড়হঃৎড়ষ ড়ভ ণড়ঁৎ ঞরসব ধহফ ণড়ঁৎ খরভব বইয়ের লেখক)

আপনি হয়তো একটি প্রাচীন প্রবাদ শুনেছেন, একটি হাতিকে কীভাবে খাওয়া যেতে পারে? উত্তর হচ্ছে, ‘প্রতিবারে এক কামড় করে।’
সবচেয়ে কঠিন কাজ দিয়ে আরম্ভ করুন। এখন আপনার সবচেয়ে কঠিন কাজ কোনটি? রূপক অর্থে যদি বলি, আপনার সবচেয়ে বড় ও কুৎসিত ব্যাঙ কোনটি? আপনি কীভাবে এই বড় ও কুৎসিত ব্যাঙটিকে খাবেন? উপরোক্ত প্রবাদের মতো উত্তর দিন। অর্থাৎ পুরো কাজটিকে গুরুত্ব অনুসারে একাধিক ধাপে ভাগ করে ফেলুন। তারপর প্রথম ধাপ অনুযায়ী কাজ আরম্ভ করুন।
আপনার স্বভাবে বিদ্যমান গড়িমসি করার অভ্যাস দমন করুন। এই প্রবণতা রোধ এবং আপনর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হল-আপনার মস্তিষ্ক, চিন্তাশক্তি, পরিকল্পনা করার এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার সামর্থ্য। নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করা, পরিকল্পনা গ্রহণ করা এবং সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে আপনার জীবনের গতিপথ রচিত হয়। কেবল চিন্তা ও পরিকল্পনা করার মাধ্যমে নিজের মানসিক শক্তিকে আপনি সুপ্ত অবস্থা থেকে জাগ্রত করতে পারেন, সৃজনশীলতাকে সক্রিয় করতে পারেন এবং ইচ্ছাশক্তি ও শারীরিক কর্মশক্তি বৃদ্ধি করতে পারেন।
অপরপক্ষে, অ্যালেন ম্যাকেঞ্জি’র মতে, ‘কোন বিষয়ে বিস্তারিত চিন্তাভাবনা না করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা-সকল ব্যর্থতার মূল কারণ।’
কোন কাজের পদক্ষেপ গ্রহণ করার অনেক আগেই সে বিষয়ে উৎকৃষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করার সামর্থ্য-আপনার বুদ্ধিমত্তার স্বাক্ষর বহন করে। আপনার পরিকল্পনা যত ভালো হবে-আপনার কাজ শুরু করা, সময় নষ্ট কনা করা এবং ব্যাঙ খাওয়া তত সহজ হবে। একই সাথে আপনার অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে।

আপনার ব্যয়িত কর্মশক্তির প্রতিফল বৃদ্ধি করুন
আপনার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত-নিজের কর্মক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা মানসিক, আবেগগত এবং শারীরিক শক্তির সর্বোত্তম ফলাফল অর্জন করা। সুসংবাদ হল, কোন কাজের পরিকল্পনার জন্য ব্যয় করা এক মিনিট সময়ের বিপরীতে-কর্মসম্পাদনের ক্ষেত্রে ১০ মিনিট বেশি সময় বাঁচানো সম্ভব। সারাদিন যে কাজগুলো আপনি করবেন তা পরিকল্পনা করতে আপনার-৯ থেকে ১৫ মিনিট সময় ব্যয় হতে পারে। কিন্তু পরিকল্পনার জন্য বিনিয়োগ করা এই সামান্য সময়-আপনার সারাদিনের কাজে সম্ভাব্য ভুল ও সময়ের অপচয়কে দেড় থেকে দুই (৯০-১৫৯ মিনিট) ঘণ্টা হ্রাস করবে।
আপনি হয়তো ৬-পি ফরমুলার নাম শুনে থাকবেন। এই সূত্র অনুযায়ী, ‘সঠিক পূর্বপরিকল্পনা-কর্ম সম্পাদনের অদক্ষতা দূর করে (ঝরী-চ ঋড়ৎসঁষধ: চৎড়ঢ়বৎ চৎরড়ৎ চষধহহরহম চৎবাবহঃং চড়ড়ৎ চবৎভড়ৎসধহপব.)।’ কর্ম পরিকল্পনা সংক্রান্ত অভ্যাস গড়ে উঠলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার কর্মদক্ষতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও বিস্ময়কর বিষয় হল-অত্যন্ত স্বল্প সংখ্যক মানুষ প্রতিদিন এর (পূর্বপরিকল্পনার) চর্চা করেন। আর, পরিকল্পনা করার কাজটি অত্যন্ত সহজ একটি বিষয়। এর জন্য আপনাকে কেবল একটি সাদা কাগজ ও কলম ব্যবহার করতে হবে। [আরও পড়–তে দেখুন: ঠিক ধারণা ব্লগ। আমি কীভাবে ছয় পি (ঝরী-চ ঋড়ৎসঁষধ) পদ্ধতি কাজে লাগালাম?]
অত্যাধুনিক ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার (উদাহরণ: মাইক্রোসফট আউটলুক, ক্যালেন্ডার), এ জাতীয় কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন এবং সময় ব্যবস্থাপনার নানা প্রযুক্তি-একই ফরমুলা অনুসরণ করে তৈরি করা হচ্ছে। [একই ফরমুলা বলতে ৬-পি ফরমুলাকে বোঝানো হয়েছে। ৬-পি ফরমুলা মানে-কাজ করার আগে যথাযথ পরিকল্পনা করা হলে কার্যসম্পাদন হয় যথার্থভাবে]। আপনার করণীয় কাজগুলো আরম্ভ করার আগে একটি কাগজে আপনি সেই বিষয়ে যে তালিকা তৈরি করবেন-উপরোক্ত প্রযুক্তিগুলো এর থেকে ভিন্ন কিছু নয়।

দৈনিক অতিরিক্ত ২ ঘণ্টা
নিজের কাজগুলো করার জন্য সবসময় স্বনির্ধারিত একটি তালিকা অনুসরণ করুন। যখন নতুন কোন কাজ আপনার সামনে উপস্থিত হবে, সেটাও সম্পাদন করার আগে আপনার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন। আপনার কর্মদক্ষতা ও উৎপাদনশীলতাকে আপনি ২৫ শতাংশ বা এর চেয়েও বেশি বৃদ্ধি করতে পারেন। এর পরিমাণ দৈনিক ২ ঘণ্টার মতো। যেদিন থেকে ক্রমাগত আপনি একটি তালিকা অনুসরণ করে আপনার কর্মসম্পাদন আরম্ভ করবেন, সেদিন থেকে আপনার মনে হবে আপনি যেন দিনে ২৪ ঘণ্টার চেয়ে ২ ঘণ্টা বেশি ২৬ ঘণ্টা সময় পাচ্ছেন।
চেষ্টা করবেন, আগামীকালের কাজের তালিকা বা দৈনিক রুটিন আজ রাতেই পরিকল্পনা করে রাখার। আগের রাতেই কাজের একটি পূর্বপরিকল্পিত তালিকা তৈরি করে ফেলুন। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে না পারলে রেখে দিন। পরবর্তী দিনের রুটিন তৈরি করার সময়, সম্পন্ন না হওয়া কাজটি যোগ করে নিন এবং রুটিন সম্পন্ন করুন। কর্ম দিবসের আগের রাতে তালিকা তৈরির পর আপনি যখন ঘুমিয়ে পড়বেন, তখন আপনার অবচেতন মন সারা রাত সেই তালিকার বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করবে। ফলে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আবিষ্কার করবেন-তুলনামূলকভাবে দ্রুত ও ভালোভাবে কাজ সম্পাদনের জন্য আপনার মগজে প্রাথমিক ধারণার তুলনায় অধিক ফলপ্রসূ বুদ্ধি খেলছে।
আপনার যা কিছু করণীয় তার অগ্রিম লিখিত তালিকা তৈরির জন্য যত বেশি সময় আপনি ব্যয় করবেন, আপনি কার্যকারিতা ও কর্মদক্ষতা তত বাড়তে থাকবে।
ভিন্ন ভিন্ন সময়সীমার ভিত্তিতে আপনার একাধিক তালিকা দরকার। প্রথমত: একটি প্রধান তালিকা তৈরি করুন যার মধ্যে-ভবিষ্যতের যেকোন সময়ে সম্পাদনযোগ্য যাবতীয় সকল কর্মকা- ভেবে ঠিক করে আপনি লিখবেন। এটা এমন তালিকা-যার মধ্যে আপনি আপনার চিন্তায় থাকা সব ধারণা স্থান পাবে এবং আপনার সামনে উপস্থিত হতে থাকা নতুন কাজ অথবা দায়িত্ব সম্পর্কিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত হবে। এই তালিকার বিষয়বস্তুগুলো আপনি পরবর্তী কোন এক সময় বাছাই করবেন।
দ্বিতীয়ত: আপনার একটি মাসিক তালিকা থাকা উচিত যেটা আপনি তৈরি করবেন চলতি মাসের শেষ ভাগে। এই তালিকায় আপনি পরবর্তী মাসের কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করবেন। এতে আপনি আপনার প্রধান তালিকার কিছু বিষয়বস্তু স্থানান্তর করতে পারেন।
তৃতীয়ত: আপনার একটি সাপ্তাহিক তালিকা থাকা দরকার যাতে আপনার পুরো সপ্তাহের অগ্রিম পরিকল্পনা লিখতে হবে। চলতি সপ্তাহ অতিবাহিত করার সময় আপনার এই তালিকা তৈরি করা উচিত।
নিয়মিত এমন সুশৃঙ্খলভাবে সময় ব্যবস্থাপনার চর্চা আপনার জন্য ব্যাপক মাত্রার উপকার বয়ে আনবে। বহু লোক আমাকে জানিয়েছেন যে, প্রতি সপ্তাহের শেষ ভাগে-পরবর্তী সপ্তাহের পরিকল্পনা তৈরির জন্য কয়েক ঘণ্টা সময় ব্যয় করার অভ্যাস তাদের কর্মদক্ষতা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি করেছে এবং তাদের জীবনকে সম্পূর্ণ পালটে দিয়েছে। তাই এই কৌশল আপনার জন্যও ফলদায়ক হবে।
চূড়ান্ত পর্যায়ে, আপনার মাসিক ও সাপ্তাহিক তালিকা থেকে নির্বাচিত কিছু কাজ-আপনার দৈনিক তালিকায় স্থানান্তর করতে হবে। এটা নির্দিষ্টভাবে এমন একটি তালিকা যাতে অন্তর্ভুক্ত কাজগুলো আপনি আগামী দিন সম্পাদন করবেন।
দৈনিক কাজ করার সময় তালিকার যে কাজগুলো শেষ হয়ে যাবে সেগুলোতে টিক চিহ্ন দিন। এর ফলে আপনার কর্ম সম্পাদনের একটি বাস্তব চিত্র আপনি প্রত্যক্ষ করবেন। এর থেকে আপনার মাঝে সাফল্যের অনুভূতি ও সম্মুখে অগ্রসর হওয়ার প্রেরণা সৃষ্টি হবে। এভাবে তালিকার কাজগুলো ক্রমাগত সম্পাদন করার মাধ্যমে অগ্রসর হওয়ার ভূমিকায় নিজেকে প্রত্যক্ষ করলে আপনার উদ্দীপনা ও কর্মশক্তি বৃদ্ধি পাবে। আপনার আত্মমর্যাদাবোধও বৃদ্ধি পাবে। এমন অবিচলিত, দৃশ্যমান অগ্রগতি আপনাকে সময় নষ্ট না করার ব্যাপারেও উৎসাহিত করবে।

প্রকল্প সম্পর্কিত পরিকল্পনা
যেকোন ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও একটি তালিকা তৈরি করা প্রয়োজন। এতে আপনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটির সম্পাদনযোগ্য প্রতিটি ধাপ লিপিবদ্ধ করবেন। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ধাপগুলোকে গুরুত্বের ক্রমানুসারে সাজান এবং সেগুলো সম্পাদনের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা। একটি সাদা কাগজে অথবা কোন কম্পিউটার প্রোগ্রামে আপনি এই প্রকল্প বিষয়ক ছক অংকন করুন, যাতে এর প্রতিটি ধাপ ও কার্যক্রম আপনি অগ্রিম দেখতে পারেন। তারপর প্রতিবারে একটি করে কাজ শুরু ও শেষ করুন। এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে কত দ্রুত আপনার প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে তা প্রত্যক্ষ করে অবাক হবেন।
পেশাগত দক্ষতার ক্ষেত্রে একটি শ্রেষ্ঠ নীতি হল ১০/৯০ নীতি। এই নীতি অনুযায়ী, আপনার কাজ শুরুর আগে ১০ শতাংশ সময় যদি আপনি পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যয় করেন, তাহলে কাজটি সম্পাদনের সময় আপনি ৯০ শতাংশ সময় বাঁচাতে পারবেন। একবার প্রয়োগ করলেই এই নীতির সত্যতা সম্পর্কে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন।

হাতেকলমে কাজ করুন
১. দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসিক অগ্রিম পরিকল্পনা আজই আরম্ভ করে দিন। আগামী ২৪ ঘণ্টায় যেসব কাজ আপনাকে করতে হবে তার তালিকা একটি সাদা কাগজে, নোটবুক অথবা আপনার স্মার্ট ফোনে লিপিবদ্ধ করুন। নতুন কোন কাজ সামনে এলে সেটাও এই তালিকায় লিখুন। আপনার ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সকল প্রকল্প, বড় মাপের সাম্প্রতিক দায়িত্ব প্রভৃতির জন্যও একটি তালিকা তৈরি করুন।
২. আপনার প্রধান লক্ষ্য, প্রকল্প এবং কাজগুলো গুরুত্বের ক্রমানুসারে ধারাবাহিকভাবে লিপিবদ্ধ করুন। অর্থাৎ প্রথমে কী করবেন, দ্বিতীয়ত কী করবেন-এভাবে। সেগুলো সমাপ্ত করার জন্য আনুমানিক সময় নির্ধারণ করুন এবং প্রতিটি কাজের পরিণতি কী হবে তা চিন্তা করে সেগুলো শুরু করুন।
সবসময় কাগজে লিখুন। কাগজে লিখে লিখে চিন্তা করুন! সবসময় কাজ আরম্ভ করবেন একটি তালিকা দেখে। এজন্য আগে থেকেই তালিকা তৈরি করে নিন। আপনি দেখে অবাক হবেন যে আপনি কত বেশি কাজ কতটা ঝামেলাহীনভাবেই সম্পন্ন করতে পারছেন এবং আপনি কত বেশি কর্মক্ষম ও দক্ষ। এভাবেই আপনি আপনার সবচেয়ে বড় ও কুৎসিত ব্যাঙ খেতে পারবেন তথা সবচেয়ে বড় ও কঠিন কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন।

 



অধ্যায় তিন

সবক্ষেত্রে ৮০/২০ সূত্র প্রয়োগ করুন
সময়ের সদ্ব্যবহার করলে সময়ের অভাব হয় না।—মহাকবি ইয়োহান ভোলফগাং ফন গ্যেটে

সময় এবং জীবন ব্যবস্থাপনার সকল নীতির মাঝে অন্যতম একটি সহায়ক নীতি হল ৮০/২০ নীতি। এই নীতিকে এর জনক ভিলফ্রেডো পারেতোর নামানুসারে “পারেতো নীতি” ও বলা হয়ে থাকে। পারেতো ছিলেন একজন ইতালিয়ান অর্থনীতিবিদ যিনি ১৮৯৫ সালে প্রথম এই নীতির ধারণা দেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে তার সমাজের মানুষগুলো স্বাভাবিকভাবেই দুই ভাগে বিভক্ত। এক হল, “অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু” বা শীর্ষ ২০ ভাগ মানুষ, যাদের সম্পদ এবং ক্ষমতা দুইই আছে এবং দ্বিতীয় হল “তুচ্ছ অনেক” যা কিনা সমাজের নিম্ন শ্রেণীর ৮০ শতাংশ মানুষ নিয়ে গঠিত।
তিনি পরবর্তীতে আবিষ্কার করেন যেসব অর্থনৈতিক কর্মকা- কার্যত এই নীতির উপর নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ, এই নীতি বলে ২০ ভাগ কাজ ৮০ ভাগ ফলাফল এনে দেয়, ২০ ভাগ ক্রেতাই ৮০ ভাগ পণ্য ক্রয় করে থাকে, ২০ শতাংশ পণ্য ৮০ ভাগ লাভের জন্য দায়ী, ২০ ভাগ কাজ একজন মানুষের ৮০ ভাগ কর্মদক্ষতা নির্ধারণ করে দেয় ইত্যাদি। এর অর্থ হল আপনার তালিকায় যদি ১০টি কাজ থাকে, তবে সেখানের দুইটি কাজ এমন থাকবে যা বাকি ৮টি কাজের চাইতে ৫ থেকে ১০ গুণ অধিক গুরুত্বপূর্ণ হবে।

কাজের সংখ্যা বনাম কাজের গুরুত্ব
এক মজার আবিষ্কারের কথা বলি। এই ১০টি কাজ করতে সমপরিমাণ সময় ব্যয় হলেও এর মাঝে একটি বা দুটি কাজ বাকি কাজগুলোর চাইতে ৫ থেকে ১০ গুণ অধিক ফলাফল বয়ে আনবে।
অনেক সময় তালিকার ১০টি কাজের একটির গুরুত্ব বাকি ৯টি কাজের সম্মিলিত গুরুত্বের চাইতেও বেশি হয়ে থাকে। এই কাজটিই আপনার ব্যাঙ, যাকে প্রথমে খাওয়া উচিত।
চিন্তা করে বের করুন তো, কোন কাজগুলো করতে মানুষ বেশি আলসেমি করে থাকে? দুঃখের বিষয় হল অধিকাংশ মানুষই এই শীর্ষ ১০/২০ ভাগ “অতি গুরুত্বপূর্ণ” কাজগুলোতেই গড়িমসি করে থাকে। এর পরিবর্তে তারা “অতি তুচ্ছ” ৮০ ভাগ কাজ নিয়ে পড়ে থাকে যার ফলাফল অতি নগণ্য।

কর্ম সম্পাদনের দিকে নয় বরং কাজের ধরনের দিকে মনোযোগ দিন
অনেক সময় দেখবেন অনেকেই সারাদিন ব্যস্ত থাকলেও দিন শেষে তাদের অর্জন অতি সামান্য। এর কারণ হল তারা অতি তুচ্ছ কাজ করে সময় পার করে এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে বিলম্ব করে। অথচ এই একটি বা দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজই তাদের কর্মজীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দিতে পারে।
দেখা গেছে প্রতিদিনের সবচেয়ে কঠিন এবং জটিল কাজই সেদিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে থাকে। কিন্তু এই কাজগুলো সফলভাবে সম্পাদন করার ফলাফল হয় অসামান্য। এজন্যেই আপনার উচিত এই ২০ ভাগ কাজ আগে করা। দৃঢ় মানসিকতা দিয়ে বাকি তুচ্ছ ৮০ ভাগ কাজ করতে অস্বীকৃতি জানানো।
সবসময় কাজ শুরুর আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন, “এই কাজটি কি শীর্ষ ২০ ভাগ গুরুত্বপূর্ণ কাজ নাকি কম গুরুত্বপূর্ণ ৮০ ভাগ কাজের একটি?
নিয়ম: সহজ কাজগুলো আগে করার প্রলোভন প্রতিহত করুন।
মনে রাখবেন, আপনি বারবার যেই কাজগুলো করবেন সেগুলোই আপনার অভ্যাসে পরিণত হবে। যদি প্রতিদিন মূল্যহীন কিংবা কম মূল্যবান কাজগুলো করেন, তবে সেই কাজগুলোই আগে করার অভ্যাস তৈরি হবে। এই অভ্যাস গড়ে তোলা আপনার জন্য মঙ্গলজনক নয়।
কোন কাজের সবচেয়ে কঠিন দিক হল সেটা আরম্ভ করা। কিন্তু একবার একটা মূল্যবান কাজ শুরু করে দিলে আপনি স্বাভাবিকভবেই কাজটা চালিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা পাবেন। আপনার মস্তিষ্কের একটি অংশ হচ্ছে ফ্রন্টাল লোব। এটা গুরুত্বপূর্ণ এবং অর্থপূর্ণ কাজ করতে ভালোবাসে। আপনার কাজ হল এই অংশকে নিয়মিত কাজে লাগানো।
 
তথ্যসূত্র: যঃঃঢ়ং://পযধহমবংঢ়ংুপযড়ষড়মু.পড়স.ধঁ/নৎধরহ-বসড়ঃরড়হং-নবযধারড়ঁৎং/

নিজেকে অনুপ্রাণিত করুন
শুধু একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু এবং শেষ করার চিন্তাই আপনাকে আলসেমি পরিত্যাগ করার অনুপ্রেরণা যোগাবে। অনেক সময়ই দেখা যায় যে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং একটি তুচ্ছ কাজ করতে একই পরিমাণ সময় লাগে। পার্থক্য হল একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষে যেই গৌরব ও সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, একই পরিমাণ সময় ও শ্রম ব্যয় করে একটি তুচ্ছ কাজ থেকে সেটা লাভ করা যায় না।
সময় ব্যবস্থাপনা আদতে জীবন ব্যবস্থাপনা, ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনা। এটা আসলে ঘটনাক্রমের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেয়া। সময় ব্যবস্থাপনা হল আপনি পরবর্তীতে কোন কাজটা করবেন সেটা নির্ধারণ করা। আপনি কখন কোন কাজটা করবেন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা আপনার আছে। কিন্তু কোন কাজটা গুরত্বপূর্ণ এবং কোনটা নয়, সেটা নির্ধারণ করার ক্ষমতাই আপনার ব্যক্তি ও কর্মজীবনে সাফল্যের সূচক হিসাবে কাজ করবে।
কার্যকর এবং উৎপাদনশীল লোকেরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটা প্রথমে শুরু করার অভ্যাস গড়ে তোলে। তারা নিজেদের ব্যাঙটাকে খেতে বাধ্য করে, তা সেটা যেমনই হোক না কেন। ফলস্বরূপ, তারা সাধারণ মানুষের চাইতে অধিক অর্জন করে এবং তাদের চাইতে বেশি সুখী এবং সমৃদ্ধ জীবনযাপন করে। আপনারও এই পন্থা অবলম্বন করা উচিত।

হাতেকলমে কাজ করুন
১. বর্তমানে আপনার জীবনের সকল প্রধান লক্ষ্য, কাজ, প্রকল্প এবং দায়িত্বের একটি তালিকা তৈরি করুন। এদের কোন ২০ ভাগ কাজ আপনাকে ৮০ ভাগ সাফল্য এনে দিবে? অথবা এদের কোন ১০ ভাগ কাজ আপনাকে ৯০ ভাগ সাফল্য এনে দিবে?
২. আজকেই সংকল্প করুন যে তুচ্ছ কাজে কম সময় ব্যয় করবেন এবং সেসব অল্পসংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ কাজে সর্বাধিক সময় ব্যয় করবেন যেগুলো কিনা আপনার ব্যক্তি ও কর্মজীবনে অসামান্য প্রভাব ফেলতে সক্ষম।



অধ্যায় চার

পরিণতি বিবেচনা করুন
সকল বিখ্যাত ব্যক্তি সুনাম অর্জন করেছেন, সকল কৃতি ব্যক্তি সফল হয়েছেন—তাদের সামর্থ্যকে একটি নির্দিষ্ট পথে চালিত করার মাধ্যমে।—ওরিসন সোয়েট মারডেন (চঁংযরহম ঃড় ঃযব ঋৎড়হঃ বইয়ের লেখক)

একজন উচ্চতর চিন্তাশক্তির মানুষের পরিচায়ক হল, তার কোন কাজ করা বা না করার পরিণতি সম্পর্কে সঠিকভাবে অনুমান করার ক্ষমতা। কোন কাজের সম্ভাব্য পরিণতি হল কাজটি আপনার এবং আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার মূল নির্ধারক। এভাবে একটি কাজের তাৎপর্য পরিমাপ করেই আপনার পরবর্তী ব্যাঙটি নির্ধারণ করতে পারবেন।
হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এডওয়ার্ড ব্যানফিল্ড ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, আমেরিকার ঊর্ধ্বমুখী সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নতির রহস্য হচ্ছে ‘দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি’। জীবন ও কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের পেছনে আপনার পারিবারিক পটভূমি/বংশধারা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, বর্ণ, বুদ্ধিমত্তা, সামাজিক পরিচিতি অথবা অন্য যেকোন একক প্রভাবকের তুলনায় দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সময়ের প্রতি আপনার মনোভাব, আপনার ‘টাইম হরাইজন’ তথা ভবিষ্যৎ সময়কে পরিকল্পনা করা, মানে একটি নির্দিষ্ট সময় পর আপনি ভবিষ্যতে কোন জায়গায় পৌঁছাবেন, তা সম্পর্কে কল্পনায় স্পষ্টভাবে দেখতে পাওয়া, আপনার আচরণ এবং সিদ্ধান্তের উপর বিরাট প্রভাব ফেলে। [উইকিপিডিয়ায় টাইম হরাইজন সম্পর্কে আরও পড়ে দেখুন: যঃঃঢ়ং://বহ.রিশরঢ়বফরধ.ড়ৎম/রিশর/ঞরসবথযড়ৎরুড়হ]
যারা ব্যক্তি এবং কর্মজীবন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে, তারা সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে। অপর দিকে যারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদাসীন, তারা সময় হেলায় নষ্ট করে।
নিয়ম: দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা স্বল্পমেয়াদি সমস্যার সমাধান এবং সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
সফল মানুষের একটি স্পষ্ট ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থাকে। তারা আগামী ৫, ১০ এমনকি ২০ বছরেরও পরিকল্পনা করে রাখে। তারা তাদের বর্তমান কাজ এবং আচরণ এমনভাবে বিশ্লেষণ করে যাতে এটা নিশ্চিত হয় যে এই আচার-ব্যবহারগুলো তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করুন
কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনাগুলো করা সহজ হয়।
কোন কিছু গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার অর্থই হল এর দীর্ঘমেয়াদি কোন ফলাফল থাকবে। যা অপ্রয়োজনীয় তার প্রভাব স্বল্পমেয়াদি বা সেটা প্রভাবহীন। কোন কাজ শুরুর আগে নিজেকে সর্বদা প্রশ্ন করুন, “এই কাজটি করা বা না করার ফলাফল কী হতে পারে?
নিয়ম: ভবিষ্যতে আপনি কী করবেন সেই ইচ্ছা-আকাক্সক্ষা বর্তমান সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব ফেলে এবং প্রায়ই বর্তমান সিদ্ধান্তগুলোকে নির্ধারণ করে দেয়।
ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার যত বেশি স্পষ্ট ধারণা থাকবে, আপনার বর্তমানে করণীয় কাজের উপর তার তত বেশি প্রভাব পড়বে। একটি সুস্পষ্ট দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকলে আপনি বর্তমানের কাজগুলোকে এমনভাবে সাজাতে পারবেন যাতে আপনার ভবিষ্যৎ লক্ষ্যটি অর্জিত হয়।

দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করুন

সফল মানুষেরা স্বল্পমেয়াদি সুখ-স্বাচ্ছ্যন্দ বিসর্জন দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে অসামান্য ফলাফল অর্জন করে। অন্যদিকে অসফল ব্যক্তিরা বর্তমানের স্বল্পমেয়াদি সুখ ও আমদে মত্ত থেকে ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য বিসর্জন দেয়।
ডেনিস ওয়েটলি নামক একজন মোটিভেশনাল স্পিকার বলেন, “পরাজিতরা সাময়িক আনন্দে মত্ত হয়ে নিজেদের ভীতি ও নিম্নমানের জীবনযাপন থেকে পালানোর চেষ্টা করে। বিজয়ীরা অনুপ্রাণিত হয় নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের আকাক্সক্ষা থেকে, যা তাদের লক্ষ্য অর্জনকারী ক্রিয়াকলাপের প্রতি আকৃষ্ট করে।”
উদাহরণস্বরূপ, আগে কাজে আসা, আপনার কাজ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন, আপনার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কোর্স করা, গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোয় মনোনিবেশ করা, সমস্ত একত্রিত হয়ে আপনার ভবিষ্যতের ওপর বিরাট ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অন্যদিকে, দেরিতে কাজে আসা, সংবাদপত্র পড়া, কফি পান এবং সহকর্মীদের সাথে আড্ডা দেওয়া সাময়িকভাবে উপভোগ্য হলেও অবশ্যম্ভাবীভাবে দীর্ঘ মেয়াদে সেগুলো পদোন্নতিহীনতা, বিফলতা এবং হতাশার জন্ম দিবে।
যদি কোনও কাজ বা ক্রিয়াকলাপের বড় সম্ভাব্য ইতিবাচক ফলাফল থেকে থাকে, তবে সেটাকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে অবিলম্বে শুরু করুন। যদি কিছু দ্রুত না করলে সেটা কোন বড় নেতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে বলে মনে হয়, তবে তাকেও সর্বাধিক প্রাধান্য দিন। আপনার ব্যাঙটা যেমনই হোক না কেন, সবার আগে সেটা খেয়ে ফেলুন।
প্রেরণার জন্য প্রয়োজন উদ্দেশ্য। আপনার কোন স্পষ্ট আকাক্সক্ষা বা উদ্দেশ্য আপনার জীবনে যত বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা রাখবে, আপনি অলসতা ত্যাগ করে সেই লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য অর্জনে তত বেশি উৎসাহী হবেন।
যেসব কাজ আপনার ব্যবসা কিংবা চাকরিতে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে আসবে তাদের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিন এবং সেই কাজগুলো দ্রুত ও সঠিকভাবে সম্পন্ন করুন। এভাবে আপনার কর্মে মনোযোগ এবং একাগ্রতা বজায় থাকবে।
সময়ের কাজ হল বয়ে চলা। প্রশ্ন হল, এই চির প্রবাহিত সময়কে আপনি কীভাবে কাজ লাগাচ্ছেন এবং আপনার ভবিষ্যৎ কী হবে। আর আপনি স্বল্পমেয়াদি কাজগুলোয় কতটা সময় ব্যয় করছেন, সেটাই আপনার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
নিজের চিন্তা, কাজ, সিদ্ধান্ত এবং আচরণের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে নিয়মিত চিন্তা করাই হল আপনার ব্যক্তি ও কর্মজীবনের প্রধান কাজগুলো নির্ধারণের শ্রেষ্ঠ উপায়।

অর্পিত দক্ষতা নীতি মেনে চলুন
অর্পিত দক্ষতা (ঋড়ৎপবফ ঊভভরপরবহপু) নীতি বলে, “সবকিছু করার সময় না থাকলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সময় অবশ্যই থাকবে।” রূপক অর্থে বলতে গেলে, আপনি একটি পুকুরের সব ব্যাঙ এবং ব্যাঙাচি খেয়ে শেষ করতে না পারলেও, সবচেয়ে বড় এবং কুৎসিত ব্যাঙটি অবশ্যই খেতে পারবেন। আর সেটাই যথেষ্ট হবে, সাময়িকভাবে হলেও। এরকমভাবে, আপনার হাতে অনেক কাজ থাকতে পারে। সব কাজ শেষ করতে না পারলেও, আপনি সবচেয়ে বড় ও কঠিন কাজটি অবশ্যই করতে পারেন। নিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করুন। তা যত বড় ও কঠিনই হোক না কেন।
কোন একটি কাজ করার ফলাফল কত বড় হতে পারে, সেটা জানা থাকলে আপনার হাতে পর্যাপ্ত সময় না থাকলেও আপনি সেই সময়টুকুর মাঝেই কাজটা শেষ করবেন। আপনি আগে অফিসে যাবেন, দেরিতে বের হবেন এবং যেকোন উপায়ে শেষ মুহূর্তে হলেও কাজটি শেষ করেই দম নিবেন। কারণ কাজটি সম্পন্ন না হলে আপনাকে যেই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে, তার মুখোমুখি হতে আপনি রাজি নন।
নিয়ম: সবকিছু করার মতো সময় কখনোই হবে না।
আজকের এই কঠিন প্রতিযোগিতামূলক যুগে একজন সাধারণ কর্মী, বিশেষ করে একজন ম্যানেজারকে তাদের দক্ষতার সীমা ১১০ থেকে ১৩০ গুণ বৃদ্ধি করে কাজ করতে হয়। তাছাড়া দিন দিন কাজের সংখ্যা এবং পরিমাণ বেড়েই চলেছে। আমাদের কত শত জিনিস এখনও পড়া বাকি রয়ে গেছে। একটি গবেষণা মতে, একজন সাধারণ কার্যনির্বাহীর বাড়ি এবং অফিসে ৩০০ থেকে ৪০০ ঘণ্টা পড়ার মত কাগজপত্র থাকে।
এর অর্থ হল আপনি কখনোই সবকিছু করতে পারবেন না। সবকিছু শেষ করার মতো—এই কাল্পনিক চিন্তা বাদ দিন। আপনি কেবল এইটুকু আশা করতে পারেন যে, নিজের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করার সময় যেন হাতে পান। অন্য কাজের চিন্তা পরে।

সময়সীমা একটি অজুহাত মাত্র
অনেকেই বলে, সময়সীমা বাধা থাকলে তারা চাপের মাঝে আরও ভালো কাজ করে। দুর্ভাগ্যক্রমে, বহু বছরের গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে, এর সত্যতা খুবই কম।
সময়সীমার চাপে, প্রায়শই মানুষ গড়িমসি করে, তাদের ওপর অধিক চাপ সৃষ্টি হয়, তারা অধিক ভুল করে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ভুলের জন্য একই কাজ তাদের বারবার করতে হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় কঠিন সময়সীমার অধীনে কাজ করা মানুষের ভুলের কারণে তারা পরবর্তীতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অনেক সময় দেখা যায়, সময়সাপেক্ষ একটি কাজ তাড়াহুড়ো করে করতে গিয়ে ভুল করে কাজটি আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হয়।
উত্তম উপায় হল কাজের অগ্রিম পরিকল্পনা করার পাশাপাশি সেই কাজে অপ্রত্যাশিতভাবে বিঘœ ঘটানো ঘটনাবলির জন্য প্রস্তুত থাকা। একটি কাজ করতে আপনার যত সময় লাগবে বলে মনে হয়, তার সাথে সেই সময়ের আরও ২০ ভাগ বা এর অধিক সময় যুক্ত করুন। তবে চেষ্টা করবেন সময় শেষের আগেই কাজটি সম্পন্ন করতে। দেখবেন কত আরামে আর সহজে কাজটি শেষ করতে পারছেন।
 
সর্বোচ্চ কর্মদক্ষতার তিনটি প্রশ্ন
আপনার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সময়মতো শেষ করার অনুপ্রেরণা পাবার জন্য নিয়মিতভাবে এই তিনটি প্রশ্ন নিজেকে জিজ্ঞেস করুন। প্রথম প্রশ্নটি হল, “আমার সবচেয়ে মূল্যবান কাজ কোনগুলো?” অন্যভাবে বলতে গেলে, কোন ব্যাঙগুলো খেলে সেগুলো আপনার ব্যক্তিজীবন ও কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে আসবে?
এই প্রশ্নটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং এর উত্তরটি জানা আবশ্যক। আপনার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ কাজগুলো কী? প্রথমে নিজে ভাবুন। এরপর আপনার বস, সহকর্মী এবং অধীনস্তদের সাথে এ নিয়ে আলোচনা করুন। আপনার পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুবান্ধবের পরামর্শ নিন। ক্যামেরার লেন্স ফোকাসের মতো, কাজ শুরুর আগে আপনার প্রশ্নটির উত্তর সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।
দ্বিতীয় প্রশ্নটি হল, “কোন কাজটি একমাত্র আমিই করতে পারি এবং যা করলে তার ফলাফল হবে সুদূরপ্রসারী?” স্বর্গত ব্যবস্থাপনা গুরু পিটার ড্রাকার এই প্রশ্নটির জনক। ব্যক্তিগত কার্যকারিতা অর্জনের এটা অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়। কোন কাজটি কেবল আপনিই করতে পারেন যার ফলাফল হবে সুদূরপ্রসারী?
এই কাজটি একমাত্র আপনার পক্ষেই করা সম্ভব। আপনি না করলে কাজটি করা হবে না। কিন্তু আপনি কাজটি করলে এবং ভালোভাবে করলে সেটা আপনার ব্যক্তি ও কর্মজীবন বদলে দিবে। কেবল আপনার জন্য বরাদ্দকৃত এই ব্যাঙটি কী?
সর্বক্ষণ নিজেকে এই প্রশ্নটি করে আপনি একটি নির্দিষ্ট উত্তর পাবেন। আপনার এই উত্তর সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। এরপর সেই কাজটি সবার আগে সম্পাদন করতে হবে।
তৃতীয় এবং শেষ প্রশ্নটি হল, “বর্তমানে আমার সময়ের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহার কী হতে পারে?” অন্য কথায়, “এই মুহূর্তে আমার সবচেয়ে বড় ব্যাঙ কোনটি?”
এটি সময় ব্যবস্থাপনার মূল প্রশ্ন। এই প্রশ্নটির উত্তরই অলসতা কাটিয়ে উঠে নিজের সর্বোচ্চ কর্মদক্ষতা প্রদর্শনের মূল চাবিকাঠি। একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট কাজ, আপনার সময়ের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহারের প্রতিনিধিত্ব করে। আপনার কাজ হল বারবার নিজেকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে এর উত্তর খুঁজে সেই উত্তর অনুযায়ী কাজ করা।
আগের কাজ আগে করবেন এবং পরের কাজ কখনোই করবেন না। মহাকবি ইয়োহান ভোলফগাং ফন গ্যেটে বলেছেন, “যে কাজের গুরুত্ব বেশি, তা কখনোই কম গুরুত্বপূর্ণ কাজের পরে করা উচিত নয়।”
এই তিনটি প্রশ্নের উত্তরগুলো যত স্পষ্টভাবে জানা থাকবে, আপনি তত সহজে সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারবেন, অলসতা পরিত্যাগ করতে পারবেন এবং আপনার মূল্যবান সময়ের সর্বাধিক সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হয় এমন কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারবেন।

হাতেকলমে কাজ করুন
১. নিজের ক্রিয়াকলাপ, প্রকল্প এবং পরিকল্পনার তালিকা নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করুন। নিজেকে ক্রমাগত জিজ্ঞাসা করুন, “কোন একটি প্রকল্প বা ক্রিয়াকলাপ আমি সময়মতো এবং অসাধারণভাবে করলে, সেটা আমার ব্যক্তি ও কর্মজীবনের ওপর সর্বাধিক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে?”
২. প্রতিদিনের প্রতিটি ঘণ্টায় কোন কাজটা আপনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটা নির্ধারণ করুন। এরপর নিজের সময়ের সর্বাধিক সদ্ব্যবহার হয়, সেসব কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বর্তমানে সেই কাজ কোনটি?
যে জিনিসটি আপনার সবচেয়ে বেশি উপকারে আসবে সেটাকে নিজের লক্ষ্য হিসাবে নির্ধারিত করুন, তা অর্জনের পরিকল্পনা করুন এবং তৎক্ষণাৎ সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজে নেমে পড়–ন। মহাকবি গ্যেটের এই অসাধারণ উক্তি মনে রাখবেন,
“কাজে নেমে পড়–ন, তবেই মস্তিষ্ক সচল হবে। কাজ আরম্ভ করুন, তবেই কাজ শেষ হবে।”

 



অধ্যায় পাঁচ

সৃজনশীল চিন্তাভাবনা করে গড়িমসি করুন
প্রতিদিনকার বড় ও গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য সময় বরাদ্দ রাখুন। আগে থেকে প্রতিদিনের কাজের পরিকল্পনা করে রাখুন। অপেক্ষাকৃত কয়েকটি ছোট কাজ যা অবশ্যই করতে হবে সেগুলো সকাল সকাল সেরে ফেলুন। তারপরে সরাসরি বড় কাজগুলো সম্পাদনে নেমে পড়–ন।—বোর্ডরুম রিপোর্টস (যুক্তরাষ্ট্রের একটি সাবেক প্রকাশনা সংস্থা)

সৃজনশীল চিন্তাভাবনা করে গড়িমসি করুন। এই সূত্র সমস্ত ব্যক্তিগত কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির কলাকৌশলের মাঝে অন্যতম সূত্র। এটা অত্যন্ত কার্যকরী এক সূত্র। এটা আপনার জীবন বদলে দিতে পারে।
আসলে আপনার পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব নয়। আপনাকে কোন না কোন কাজে গড়িমসি করতেই হবে। এজন্য ছোট কাজগুলোর বেলাতে গড়িমসি করুন। ছোট এবং অপেক্ষাকৃত কম কুৎসিত ব্যাঙগুলো খাওয়া ছেড়ে দিন। সবচেয়ে বড় এবং কুরুচিপূর্ণ ব্যাঙটি সবার আগে খান! [ফজলে রাব্বির কথা—এটা অনেকটা মাছ ধরতে যাওয়ার মতো। জাল দিয়ে মাছ ধরতে গেলে জেলেরা যেমন ছোট ছোট মাছ বাদ দেয়। তাদের নজর থাকে বড় ও ধরা কষ্টকর এমন মাছের দিকে। তেমন, কাজকর্ম করতে গিয়ে আমাদের উচিত, ছোট ছোট গুরুত্বহীন কাজকে বাদ দিয়ে বড় কাজের দিকে ধাবিত হওয়া। সম্পূর্ণ মনোযোগ বড় কাজের দিকে কেন্দ্রীভূত করা।]
সবাই গড়িমসি করে। কোন বিষয়গুলোতে গড়িমসি করা হচ্ছে সেটাই উচ্চ এবং নিম্ন দক্ষতার মাঝে পার্থক্য করে দেয়।
যেহেতু আপনাকে গড়িমসি বা বিলম্ব করতেই হবে, তাই আজই সিদ্ধান্ত নিন যে কম বা অদরকারি কাজগুলোতে বিলম্ব করবেন। যে কাজগুলো আপনার জীবনে কোন প্রভাব ফেলবে না সেগুলোতে বিলম্ব করুন, অন্যকে করতে দিন বা করা ছেড়ে দিন। ব্যাঙাচি বাদ দিয়ে ব্যাঙের উপর মনোযোগ দিন।

অগ্রাধিকার বনাম পশ্চাদ্বর্তিতা
[ফজলে রাব্বির কথা—অগ্রাধিকার মানে কোন কাজের আগে কোন কাজের অধিক গুরুত্ব তা পরিমাপ করা। আর পশ্চাদ্বর্তিতা মানে পেছনে গমন, অনগ্রসরতা।] একটি মূলনীতি বলি। কোন কাজগুলো অগ্রগণ্য তা সঠিকভাবে শনাক্ত করার জন্য আপনাকে পশ্চাদ্বর্তী (পেছনের) কাজগুলোকেও শনাক্ত করতে হবে। যেসব কাজ অগ্রগণ্য বা অধিক গুরুত্বের বলে বিবেচিত হবে সেগুলো আপনাকে বেশি করে করতে হবে এবং দ্রুত সম্পাদন করতে হবে। অপরদিকে, পশ্চাদ্বির্ততা হচ্ছে যেসব কাজের গুরুত্ব কম এবং পরে করার জন্য রেখে দেয়া যায় সেসব কাজ। এগুলো করতে পারেন অথবা বাদ দিতে পারেন। কিন্তু আগে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে। তারপর কম গুরুত্বের কাজের কথা বিবেচনা করবেন।
নিয়ম: কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ যত কম করবেন, আপনার সময় ও জীবন তত বেশি আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
‘না’ বলা হল সময় ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত সবচেয়ে শক্তিশালী শব্দ! এটা বিনীতভাবে বলুন। স্পষ্টভাবে বলুন, যাতে কোন ভুল বোঝাবুঝি না হয়। আপনার সময় পরিচালনার শব্দভা-ারের স্বাভাবিক অংশ হিসাবে একে নিয়মিত ব্যবহার করুন।
আপনার সময়ের যথাযথ ব্যবহার হবে না এমন সব কাজকে ‘না’ বলুন। ভদ্রভাবে কিন্তু দৃঢ়তার সাথে কথাটি বলুন যাতে আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউ কিছু করাতে না পারে। নিয়মিত বলুন এবং তাড়াতাড়ি বলুন। মনে রাখবেন, অপচয় করার মতো সময় আপনার নেই। কথায় বলে, “সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়।”
নতুন কিছু করতে হলে পুরনো কাজ সমাপ্ত করতে হবে অথবা বাদ দিতে হয়। নতুন পথ চলতে গেলে আগের পথ ত্যাগ করতে হয়।
সৃজনশীল চিন্তাভাবনা করে গড়িমসি করা অথবা সৃজনশীল বিলম্ব হল চিন্তাভাবনা করে এমন সব কাজ সনাক্ত করা, যা আপনি এখন বা কখনোই করতে চান না।

ইচ্ছাকৃত বিলম্ব
বেশিরভাগ মানুষ অচেতনভাবেই কাজে বিলম্ব করে। তারা না ভেবেই এটা করে থাকে। ফলে তারা এমন সব কাজে বিলম্ব করে ফেলে, যা তাদের ব্যক্তি ও কর্ম জীবনকে অভূতপূর্ণভাবে প্রভাবিত করতে পারে। আপনার এই ভুল করলে চলবে না।
আপনার কাজ হল ইচ্ছাকৃতভাবে সকল অপ্রয়োজনীয় কাজে বিলম্ব করে এমন সব কাজের জন্য সময় বরাদ্দ করা, যা আপনার ব্যক্তি ও কর্মজীবনে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে। নিয়মিত নিজের দায়িত্ব এবং কর্তব্যগুলোকে পর্যালোচনা করে এমন সব সময়সাপেক্ষ কাজগুলো চিহ্নিত করুন যা না করলেও ক্ষতি নেই। এই কাজ করা কখনো থামাবেন না।
উদাহরণস্বরূপ, আমার এক গলফ প্রেমী বন্ধু ছিল। অবিবাহিত অবস্থায় সে প্রতি সপ্তাহে তিন থেকে চারবার, তিন থেকে চার ঘণ্টা করে গলফ খেলত। কয়েক বছর পর সে ব্যবসা শুরু করে, বিয়ে করে। তার দুটি সন্তানও হয়। তা সত্ত্বেও সে একইভাবে সপ্তাহে তিন থেকে চারবার গলফ খেলা চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু পরে সে অনুধাবন করে যে এটা তার ব্যক্তি ও কর্মজীবনের ওপর প্রচ- চাপ সৃষ্টি করছে। তার গলফ খেলার সময় অনেকাংশে কমিয়ে সে অবশেষে নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

পশ্চাদ্বর্তী এবং সময় অপচয়কারী কাজগুলো চিহ্নিত করুন
ক্রমাগত আপনার জীবন পর্যালোচনা করে সময় অপচয়কারী এবং অদরকারি কাজগুলো চিহ্নিত করুন। টিভি দেখা কমিয়ে আপনার পরিবারকে সময় দিন। অযথা সময় অপচয় না করে বই পড়–ন, ব্যায়াম করুন কিংবা এমন কিছু করুন যা আপনার জীবনের মান উন্নত করে।
আপনার কাজের তালিকা থেকে অপ্রয়োজনীয় সব কাজ বাদ দিন বা অন্যকে করতে দিন যাতে দরকারি কাজগুলো করার সময় বৃদ্ধি পায়। আজ থেকেই সৃজনশীল বিলম্ব চর্চা আরম্ভ করুন। কোন কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে সেগুলো নির্ধারণ করুন। এই একটি কাজ আপনার সময় ও জীবনের নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে এনে দিবে।

হাতেকলমে কাজ করুন
১. জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে “শূন্য-কেন্দ্রিক চিন্তা” অনুশীলন করুন। নিজেকে নিয়মিত জিজ্ঞেস করুন, “এই কাজ কি আমার করা উচিত?” যদি উত্তর না হয়, তবে তা বাদ দিন অথবা তাতে বিলম্ব করুন।
২। আপনার বর্তমান অবস্থার ভিত্তিতে ব্যক্তি ও কর্মজীবনের কাজগুলোকে পর্যালোচনা করুন। অন্তত একটি কাজ চিহ্নিত করুন যা তৎক্ষণাৎ বাদ দেয়া যায় বা আপনার মূল লক্ষ্যগুলো অর্জন না হওয়া পর্যন্ত ফেলে রাখা যায়।

 



অধ্যায় ছয়

নিয়মিত ক-খ-গ-ঘ-ঙ পদ্ধতির প্রয়োগ করুন
“সাফল্যের প্রথম নীতি হল একাগ্রতা—সকল শক্তিকে একটি বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত করা, ডানে-বামে না তাকিয়ে সরাসরি সেই বিন্দুতেই পৌঁছানো।”—উইলিয়াম ম্যাথিউস

আপনি কাজের পরিকল্পনা এবং কাজের প্রাধান্য নির্ধারণে যত বেশি সময় ব্যয় করবেন, তত দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো শেষ করতে পারবেন। কাজটি যত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে, আপনি অলসতা ত্যাগ করে কাজটি সম্পাদন করতে তত বেশি উৎসাহ পাবেন।
ক-খ-গ-ঘ-ঙ পদ্ধতিটি প্রাধান্য নির্ধারণের একটি শক্তিশালী পদ্ধতি, যা আপনি দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করতে পারেন। পদ্ধতিটি এতই সহজ এবং কার্যকর যে সেটা আপনাকেও একজন কার্যকর এবং কর্মদক্ষ ব্যক্তিতে পরিণত করবে।

আপনার চিন্তাভাবনা কাগজে লিখুন
পদ্ধতিটির কার্যকারিতা এর সরলতার মাঝে নিহিত। এটা এভাবে কাজ করে: একটি কাগজে আগামীদিনের করণীয় সব কাজ লিপিবদ্ধ করুন। আপনার চিন্তাভাবনা কাগজে লিখে রাখুন।
এরপর কাজ শুরুর আগে প্রতিটি কাজের নামের পাশে ক, খ, গ, ঘ এবং ঙ অক্ষরগুলো লিখুন।
ক হল এমন একটি কাজ যা অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যাবশ্যক। এর ফলাফল আপনার কর্মক্ষেত্রে গুরুতর প্রভাব ফেলবে। যেমন: কোনও মূল গ্রাহকের সাথে সাক্ষাৎ কিংবা বসের পরবর্তী বোর্ড মিটিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রিপোর্ট তৈরি। এই কাজগুলো আপনার জীবনের ব্যাঙ স্বরূপ।
যদি ক তে একের অধিক কাজ থাকে, তবে সেগুলোকে ক-১, ক-২, ক-৩ ইত্যাদি—এভাবে চিহ্নিত করুন। ক-১ হল আপনার সবচেয়ে বড় এবং কুৎসিত ব্যাঙ।

“করা উচিত” বনাম “করতেই হবে”
খ হল সেসব কাজ যা আপনার করা উচিত। কিন্তু এর প্রভাব তত গুরুতর নয়। এগুলো আপনার কর্মজীবনের ব্যাঙাচি স্বরূপ। মানে এই কাজগুলো না করলে কেউ হয়তো অখুশি হবে কিংবা সাময়িক কোন সমস্যা হবে কিন্তু তার ফলাফল “ক” কাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়। একটি অরদরকারি ফোন ধরা, মেসেজের রিপ্লাই দেয়া বা ইমেলের উত্তর দেয়া হল “খ” শ্রেণীর কাজ।
নিয়ম হল “ক” শ্রেণীর কাজ বাকি থাকতে কখনই “খ” শ্রেণীর কাজ করা যাবে না। বড় ব্যাঙ সামনে ফেলে রেখে কখনো ব্যাঙাচি খেতে যাবেন না।
“গ” হল সেই শ্রেণীর কাজ যা করলে ভালো, কিন্তু না করলেও কোন সমস্যা নেই। এগুলো হল বন্ধুকে ফোন করা, সহকর্মীর সাথে বাইরে খেতে যাওয়া এবং অফিসের কাজের সময় ব্যক্তিগত কাজ করা। আপনার কর্মজীবনের উপর এগুলোর কোন প্রভাব নেই।
“ঘ” হল এমন কাজ যা অন্যকে দিয়ে করালেই হয়। নিয়ম হল যেই কাজ অন্য কেউ করতে পারে সেটা আপনি তাকে দিয়েই করাবেন। ফলে আপনার গুরুত্বপূর্ণ “ক” কাজগুলো করার জন্য সময় বাড়বে।
“ঙ” কাজ হল সেগুলো যাদের একেবারেই বাদ দেয়া উচিত। এগুলো না করলেও কিছু যাবে-আসবে না। এককালে কাজগুলোর গুরুত্ব থাকলেও এখন আর তাদের কোন মূল্য নেই। সাধারণত এগুলো হল সেসব কাজ যা আপনি অভ্যাসবশত করেন কিংবা করতে উপভোগ করেন। কিন্তু এই কাজে ব্যয়কৃত প্রতিটি মিনিট আপনার মূল্যবান কাজের সময় হতে হ্রাস পায়।
কাজের তালিকায় ক-খ-গ-ঘ-ঙ পদ্ধতিটি প্রয়োগের পর দেখবেন, আপনার সমস্ত কাজ গোছানো হয়ে গেছে এবং আপনি দ্রুততার সাথে সকল কাজ সম্পন্ন করতে পারছেন।

তৎক্ষণাৎ কাজে নেমে পড়–ন
ক-খ-গ-ঘ-ঙ পদ্ধতিটি সফলভাবে প্রয়োগের জন্য আপনার উচিত তালিকাটি শেষ হওয়া মাত্র ক-১ কাজটি শুরু করে দেওয়া এবং কাজটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া। আপনার সমস্ত ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে কাজ চালিয়ে যান। আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাঙটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত খাওয়া বন্ধ করবেন না।
আপনার কাজের তালিকাকে বিশ্লেষণ করে ক-১ কাজটিকে চিহ্নিত করার ক্ষমতাই হল আপনার উচ্চতর অর্জন, বৃহত্তর আত্মবিশ্বাস, আত্মসম্মান এবং ব্যক্তিগত গৌরবের পরিচায়ক। যখন ব্যাঙ খাওয়া অর্থাৎ ক-১ কাজটি সম্পাদন করায় সম্পূর্ণরূপে মনোনিবেশ করার অভ্যাস গড়ে তুলবেন, দেখবেন অন্যদের চাইতে আপনি কত বেশি সামনে এগিয়ে গেছেন।

হাতেকলমে কাজ করুন
১। আপনার কাজের তালিকার প্রতিটি কাজের পাশে ক-খ-গ-ঘ-ঙ অক্ষরগুলো লিখুন। ক-১ কাজটি চিহ্নিত করে তৎক্ষণাৎ কাজে নেমে পড়–ন। কাজটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাজটি বন্ধ বা অন্য কাজে হাত না দেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
২। আগামী এক মাস প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে ক-খ-গ-ঘ-ঙ পদ্ধতির প্রয়োগ করুন। এক মাস পর আপনার মাঝে নিজের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ চিহ্নিত করে সেগুলো সম্পাদন করার অভ্যাস গড়ে উঠবে। ফলে আপনার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ হবে সুনিশ্চিত!

 



অধ্যায় সাত

প্রধান ফলাফল লাভের ক্ষেত্রগুলোর দিকে মনোযোগ দিন
“কোন বিষয়ে একজন ব্যক্তির সকল দৈহিক ও মানসিক সামর্থ্য কেন্দ্রীভূত করা হলে, তার যেকোনো সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।”—নরম্যান ভিনসেন্ট পিল (দ্য পাওয়ার অফ পজিটিভ থিংকিং বইয়ের লেখক)

“আমাকে কেন পারিশ্রমিক দেয়া হচ্ছে?” নিজের সমগ্র কর্মজীবন জুড়ে এই প্রশ্নটি নিজেকে বারবার, হাজার বার জিজ্ঞেস করুন এবং এর উত্তর খুঁজুন। এই প্রশ্নটির গুরুত্ব অপরিসীম।
বাস্তবে দেখা গেছে, অনেকেই জানে না যে তাদের কেন পারিশ্রমিক দেয়া হয়। কিন্তু আপনি যদি এটাই না জানেন যে আপনাকে কেন বেতন দেওয়া হচ্ছে, আপনার থেকে কী আশা করা হচ্ছে, তবে কখনোই কর্মক্ষেত্রে নিজের সেরাটা দিতে পারবেন না এবং আপনার কাক্সিক্ষত সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছাতে পারবেন না।
সহজ ভাষায়, আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু কাজ করা এবং ফলাফল অর্জনের উদ্দেশ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একটি মজুরি বা বেতন হল একটি নির্দিষ্ট মান ও পরিমাণ কাজের জন্য অর্থ প্রদান যা অন্যদের কাজের সাথে সম্মিলিত হয়ে একটি সেবা কিংবা পণ্য তৈরি করবে যার জন্য ক্রেতারা অর্থ ব্যয় করবে।
আপনার কাজকে মূল কর্মক্ষেত্রের পাঁচ থেকে সাতটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এর বেশি খুব কমই হয়ে থাকে। এগুলো সেই সব ফলাফলকে নির্দেশ করে যেগুলো আপনাকে অবশ্যই অর্জন করতে হবে, যদি আপনি কর্মক্ষেত্রে নিজের দায়িত্ব সফল, পরিপূর্ণ এবং কার্যকরভাবে পালন করতে চান।
একটি মূল ফলাফলের ক্ষেত্রকে সংজ্ঞায়িত করা যায় এভাবে—এটা হল এমন একটি ক্ষেত্র যার জন্য আপনি সম্পূর্ণরূপে দায়ী। আপনি যদি এক্ষেত্রে কাজ না করেন, তবে কাজটি হবে না। এই মূল ফলাফলের ক্ষেত্রের ক্রিয়াকলাপ সম্পূর্ণভাবে আপনার নিয়ন্ত্রণে। এটা এমন একটি আউটপুট উৎপাদন করে যা অন্যদের কাজের ইনপুট হিসাবে কাজ করে।
মূল ফলাফলের ক্ষেত্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক কার‌্যাবলির সাথে তুলনা করা যায় যা নির্দেশিত হয়—রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন, শ্বাস প্রশ্বাসের হার এবং মস্তিষ্ক-তরঙ্গ ক্রিয়াকলাপ দ্বারা। এর যেকোন একটির অভাবে জীবের মৃত্যু ঘটে। একইভাবে মূল ফলাফলের ক্ষেত্রগুলোতে সফলভাবে কাজ করতে না পারলে আপনার কর্মজীবনেরও ইতি ঘটবে।

ব্যবস্থাপনা এবং বিক্রয়ের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ ৭টি ক্ষেত্র
ব্যবস্থাপনার মূল ফলাফলের ক্ষেত্রগুলো হল—পরিকল্পনা, সংগঠন, কর্মী নির্বাচন, দায়িত্ব অর্পণ, তদারকি, পরিমাপ এবং রিপোর্টিং (ঢ়ষধহহরহম, ড়ৎমধহরুরহম, ংঃধভভরহম, ফবষবমধঃরহম, ংঁঢ়বৎারংরহম, সবধংঁৎরহম ধহফ ৎবঢ়ড়ৎঃরহম)। এই ক্ষেত্রগুলো যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনাই হল একজন ব্যবস্থাপকের সফলতার পরিচায়ক। এর যেকোন একটি ক্ষেত্রে দুর্বলতা হল ব্যবস্থাপকের ব্যর্থতার নির্দেশক।
অপরদিকে বিক্রয়ের মূল ফলাফল ক্ষেত্রগুলো হল—প্রত্যাশা, সম্পর্ক ও বিশ্বাস গঠন, চাহিদা চিহ্নিতকরণ, আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন, অভাব অভিযোগের জবাব প্রদান, বিক্রয় সম্পন্ন এবং পুনরায় বিক্রয় ও প্রচার (ঢ়ৎড়ংঢ়বপঃরহম, নঁরষফরহম ৎধঢ়ঢ়ড়ৎঃ ধহফ ঃৎঁংঃ, রফবহঃরভুরহম হববফং, ঢ়ৎবংবহঃরহম ঢ়বৎংঁধংরাবষু, ধহংবিৎরহম ড়নলবপঃরড়হং, পষড়ংরহম ঃযব ংধষব, ধহফ মবঃঃরহম ৎবংধষবং ধহফ ৎবভবৎৎধষং)। এর যেকোন একটি ক্ষেত্রে দক্ষতার অভাব বিক্রয় হ্রাস করে এবং বিক্রয়কর্মীর ব্যর্থতার পরিচয় বহন করে।
আপনার কর্মক্ষেত্র যাই হোক না কেন, সেখানে সফলভাবে কাজ করতে হলে আপনার কিছু নির্দিষ্ট দক্ষতা থাকা আবশ্যক। এই দক্ষতার চাহিদা ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। আপনার কিছু মূল দক্ষতা রয়েছে যার কারণে আপনি চাকরিটি পেতে সমর্থ হয়েছিলেন। তবে নির্দিষ্ট কিছু ফলাফল আপনার কাজের কেন্দ্রবিন্দু এবং এগুলোই আপনার কাজের সাফল্য বা ব্যর্থতা নির্ধারণ করে। সেগুলো কী?
[ফজলে রাব্বির কথা—ব্যক্তিভাবে সাফল্য প্রকাশনী পরিচালনার ক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থাপনা ও বিক্রয়ের মূল ফলাফল ক্ষেত্রগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করার জন্য দুইটি ছবি ব্যবহার করি। তাই আপনার সাথে শেয়ার করলাম।
 
চিত্র: ব্যবস্থাপনার মূল ফলাফলের ক্ষেত্রগুলো
 
চিত্র: ব্যবস্থাপনার মূল ফলাফলের ক্ষেত্রগুলো
এসব ছবিকে প্রিন্ট বা ফটোকপি করে নিতে পারেন। তারপর কাগজের ওপরেই নিজের পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য খসড়া আকারে লিখে ফেলুন।]

স্পষ্টতা অপরিহার্য
পূর্ণ দক্ষতার সাথে কাজ করার প্রথম শর্ত হল, আপনার কাজের মূল ফলাফলের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করুন। আপনার বসের সাথে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করুন। আপনার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আউটপুটগুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন। সাথে এটাও নিশ্চিত করবেন যে আপনার ঊর্ধ্বতন এবং অধস্তন কর্মকর্তারা যেন এর সাথে একমত হন।
উদাহরণস্বরূপ, একজন বিক্রয়কর্মীর জন্য নতুন গ্রাহক খুঁজে বের করা এবং আবিষ্কার করা—একটি প্রধান ফলাফলের ক্ষেত্র। এই কার্যক্রম, সমগ্র বিক্রয় প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিক্রয়ের কাজ সমাপ্ত করা—আরেকটি প্রধান ফলাফলের ক্ষেত্র। যখন কোন পণ্য বা সেবার বিক্রয় সম্পাদিত হয়, তখন এই পণ্য বা সেবা উৎপাদন ও সরবরাহ করায় নিয়োজিত অন্যান্য বহু লোক এর ক্রিয়াকলাপ দ্বারা প্রভাবিত হয়।
কোনও প্রতিষ্ঠানের মালিক বা মূল নির্বাহী কর্মকর্তার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণের ব্যবস্থা করা একটি মূল ফলাফলের ক্ষেত্র হতে পারে। সঠিক কর্মী নিয়োগ এবং দায়িত্ব অর্পণ, উভয়ই মূল ফলাফলের ক্ষেত্র। একজন রিসেপশনিস্ট কিংবা সেক্রেটারির জন্য দক্ষতার সাথে দ্রুত চিঠি টাইপ করা, ফোন ধরা এবং ট্রান্সফার করা হল মূল ফলাফল ক্ষেত্র। এই কাজগুলো দ্রুততা এবং দক্ষতার সাথে সঞ্চালন করার ক্ষমতার উপর একজন ব্যক্তির পারিশ্রমিক এবং পদোন্নতি অনেকাংশে নির্ভর করে।

নিজের মূল্যায়ন করুন
একবার আপনি আপনার মূল ফলাফলের ক্ষেত্রগুলো নির্ধারণ হয়ে গেলে পরবর্তী পদক্ষেপটি হল সেই ক্ষেত্রগুলোতে নিজেকে মূল্যায়ন করা। এজন্য প্রতি ক্ষেত্রে নিজেকে ১ থেকে ১০ এর মধ্যে নম্বর দিন। এখানে ১ হল সর্বনিম্ন এবং ১০ হল সর্বোচ্চ। কোন কোন ক্ষেত্রে আপনি শক্তিশালী এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আপনার দুর্বলতা রয়েছে?—সেগুলো খুঁজে বের করুন। কোথায় আপনি দুর্দান্ত ফলাফল অর্জন করেছেন এবং কোথায় সঠিক ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন?
নিয়ম: যেসব ক্ষেত্রে আপনার দুর্বলতা রয়েছে সেসব ক্ষেত্র আপনার উন্নতির পথে বাধা স্বরূপ। আপনার দক্ষতা ও ক্ষমতা উক্ত ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হবে।
এই নিয়মটি বলে, আপনি আপনার বাকি ছয়টি মূল ফলাফলের ক্ষেত্রে যতই চমকপ্রদকভাবে কাজ করে থাকুন না কেন, সপ্তম ক্ষেত্রে দুর্বলতা আপনার সমগ্র কাজের অগ্রগতিকে দমিয়ে দিবে। এই দুর্বলতাটি সারাক্ষণ আপনার কাজে ব্যাঘাত ঘটাবে।
উদাহরণস্বরূপ, ডেলিগেশন তথা দায়িত্ব অর্পণ হল একজন ব্যবস্থাপকের জন্য মূল ফলাফল ক্ষেত্র। এই দক্ষতার মাধ্যমে একজন ব্যবস্থাপক অন্যদের দিয়ে কাজ করিয়ে ফলাফল অর্জন করে নেন। একজন ব্যবস্থাপকের এই গুণটি না থাকলে তিনি কখনোই নিজের কাজ সঠিকভাবে করতে পারবেন না। এই একটিমাত্র ক্ষেত্রে দুর্বলতা তার সমস্ত কার্যকারিতাকে ব্যর্থ করে দিবে।

অদক্ষতার কারণে কাজকর্মে গড়িমসির অভ্যাস তৈরি হয়
কর্মক্ষেত্রে অলসতা এবং কর্মে বিলম্বের অন্যতম একটি প্রধান কারণ হল, মানুষ এমন সব জায়গাতে কাজ করতে চায় না যেখানে তারা পূর্বে ব্যর্থ হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে উন্নতির লক্ষ্যে পরিকল্পনা করার বদলে অধিকাংশ মানুষ সেদিকে পা বাড়ায় না। এর ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে পড়ে।
এর বিপরীত হল—আপনি একটি বিশেষ দক্ষতায় যত বেশি পারদর্শী হবেন, আপনি সেই কাজটি সম্পন্ন করতে তত বেশি উৎসাহ পাবেন এবং আপনার গড়িমসির অভ্যাসও দূর হয়ে যাবে।
বস্তুত, প্রত্যেকেরই কিছু দক্ষতা এবং কিছু দুর্বলতা থাকে। দুর্বলতাগুলোকে অস্বীকার বা ন্যায়সঙ্গত করার চেষ্টা করবেন না। [শাক দিয়ে মাছ ঢাকবেন না।] বরং সেগুলোকে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করুন। সেই ক্ষেত্রগুলোতে উন্নতি করার সংকল্প করে সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করুন। চিন্তা করে দেখুন, এই একটি পদক্ষেপ আপনাকে আপনার কর্মক্ষেত্রের শীর্ষস্থানে পৌঁছে দিতে পারে।

অসাধারণ এক প্রশ্ন
নিজেকে জিজ্ঞেস করার মতো অসাধারণ এক প্রশ্ন হচ্ছে: কোন দক্ষতাটি বাড়িয়ে আমি নিজের কর্মক্ষেত্রের শীর্ষে পৌছাতে পারব?”
এই প্রশ্নটিকে আপনার সমগ্র কর্মজীবনের দিকনির্দেশক হিসাবে ব্যবহার করুন। এর উত্তর খুঁজুন। আপনি হয়তো উত্তরটি নিজেই জানেন।
আপনার বস এবং সহকর্মীদেরও প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করুন। আপনার পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুবান্ধবদেরকেও জিজ্ঞেস করুন। উত্তর যাই হোক না কেন, সেটা জেনে এরপর সেই ক্ষেত্রে আত্মোন্নয়নের লক্ষ্যে ব্রতী হোন।
সুসংবাদ হল, সকল ব্যবসায়িক দক্ষতাই শিক্ষণীয়। অন্যরা একটি ক্ষেত্রে দক্ষ হতে পারলে আপনিও পারবেন। প্রয়োজন কেবল আপনার ইচ্ছার।
গড়িমসি অভ্যাস ত্যাগ করা এবং অল্প সময়ে আরও বেশি কাজ দক্ষভাবে সম্পন্ন করার একটি অন্যতম সেরা এবং দ্রুততম উপায় হল নিজের মূল ফলাফলের ক্ষেত্রগুলোতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন। আপনার ব্যক্তি এবং কর্মজীবনে এর গুরুত্ব অপরিসীম।

হাতেকলমে কাজ করুন
১। আপনার কাজের মূল ফলাফলের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করুন। সেগুলো কী কী? আপনার কাজ দক্ষভাবে করতে হলে কোন মূল ফলাফলগুলো আপনাকে অর্জন করতে হবে? প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেকে ১ থেকে ১০ এর মধ্যে নম্বর দিন। এরপর নির্ধারণ করুন কোন একটি প্রধান দক্ষতায় নিপুণভাবে পারদর্শী হয়ে উঠলে সেটা আপনার কাজে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করবে।
২। এই তালিকাটি নিয়ে এবার নিজের বসের সাথে আলোচনা করুন। তার প্রকৃত মতামত নিন, তার উপদেশ গ্রহণ করুন। অন্যের গঠনমূলক মতামতকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করুন। আপনার অর্জিত ফলাফল নিয়ে সহকর্মী এবং কর্মচারীদের সাথে আলোচনা করুন। আপনার স্বামী/স্ত্রীর সাথেও এ ব্যাপারে আলোচনা করুন।
সমগ্র কর্মজীবন জুড়ে নিয়মিত এই বিশ্লেষণটি করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কখনো আত্মোন্নয়ন বন্ধ করবেন না। শুধু এই সিদ্ধান্তটি আপনার জীবন বদলে দিতে পারে।

 



অধ্যায় আট

তিনের নীতি প্রয়োগ করুন
“যেখানেই থাকুন, আপনার যা কিছু আছে, তাই দিয়ে চেষ্টা করুন।”—থিওডোর রুজভেল্ট

আপনার সম্পাদিত ৩টি মৌলিক কাজ আপনার প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায় সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে। আপনার এই তিনটি মূল কাজকে সঠিকভাবে চিহ্নিত এবং একাগ্রচিত্তে সেগুলোয় মনোনিবেশ করার দক্ষতাই হল আপনার কর্মদক্ষতার আসল পরিচায়ক। একটি গল্প বলি।
আমার সাথে তার প্রথম পূর্ণ-দিনের কোচিং সেশনের তিন মাস পরে, সান দিয়াগোতে একদিন সিনথিয়া উঠে দাঁড়িয়ে তার গ্রুপকে একটি গল্প শুনিয়েছিল। সে বলে, “আমি যখন ৯০ দিন আগে এখানে আসি তখন, আপনি দাবি করেছিলেন কীভাবে ১২ মাসের মধ্যে আমার আয় এবং অবসর সময় দ্বিগুণ করা যায় তা দেখাবেন। আমার কাছে তখন কথাটি অবিশ্বাস্য মনে হলেও আমি একবার চেষ্টা করে দেখতে চেয়েছিলাম।
“প্রথম দিন, আপনি আমাকে এক সপ্তাহের মধ্যে আমি কর্মক্ষেত্রে যা করি তার একটি তালিকা তৈরি করতে বলেছিলেন। আমি এমন ১৭টি কাজ লিপিবদ্ধ করেছিলাম। আমার সমস্যা ছিল আমি সম্পূর্ণভাবে কাজের ভারে নুইয়ে পড়েছিলাম। আমি সপ্তাহে ৬ দিন, দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা করে কাজ করতাম। আমার স্বামী এবং দুটি শিশুর সাথে কাটানোর মতো পর্যাপ্ত সময় আমার ছিল না। কিন্তু আমি এর থেকে পরিত্রাণ পাবার কোন উপায় দেখছিলাম না।”
“আমি আট বছর যাবৎ একটি দ্রুত বর্ধনশীল হাই-টেক ক্ষেত্রে কাজ করা উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানে কার্যরত আছি। কিন্তু আমার সবসময় মনে হয়েছে সেখানে কাজ অনেক বেশি অথচ সময় অনেক কম।”

সারাদিন জুড়ে একটিমাত্র কাজ করুন
সে বলে চলে, “আমার তালিকাটি তৈরি হয়ে গেলে আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন: ‘এই তালিকার যেকোন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আপনাকে সারাদিন করতে বলা হলে, কোন কাজটি আপনার কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখবে?’ আমি সহজেই সেই কাজটি চিহ্নিত করার পর সেই কাজটিতে একটি টিকচিহ্ন দিই।”
“এরপর আপনি জিজ্ঞেস করেন, ‘দ্বিতীয় কোন কাজটি সারাদিন করতে বলা হলে সেটা আপনার কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখবে?’
“আমি সেই দ্বিতীয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সনাক্ত করার পর আপনি আমাকে তৃতীয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সনাক্ত করতে বললেন।”
“এরপর আপনি আমাকে এমন একটি কথা বলেন যা আমাকে হতবাক করে দেয়। আপনি বললেন এই তিনটি কাজই আমার কর্মক্ষেত্রে ৯০ ভাগ অবদান রাখে। এছাড়া বাকি যাই করি সেগুলো সমর্থক কিংবা পরিপূরক কাজ যা সহজেই পরে করা যায় অথবা অন্য কাউকে দিয়ে করানো যায় বা না করলেও চলে।”

তৎক্ষণাৎ কাজে নেমে পড়–ন
সিনথিয়া তার গল্প চালিয়ে যায়। “আমি সেই তিনটি কাজের দিকে তাকিয়ে অনুধাবন করতে পারি এই তিনটি কাজ আদতেই আমার কর্মক্ষেত্রে ৯০ ভাগ অবদান রাখে। সেদিন ছিল শুক্রবার। সোমবার সকাল ১০টায় আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে তাকে এই আবিষ্কারের কথা জানাই। আমি তাকে বলি এই তিনটি কাজ বাদে বাকি কাজগুলো পরে করার, অন্য কাউকে দিয়ে করার বা না করার জন্য আমার তার সাহায্যের প্রয়োজন। আমি তাকে এটাও বলি যে এই তিনটি কাজ সারাদিন মনোযোগ সহকারে করতে পারলে আমি আমার কাজে দ্বিগুণ অগ্রগতি করতে পারব। এরপর আমি তাকে বলি, আমি যদি আমার অবদান দ্বিগুণ করতে পারি তবে আমাকে দ্বিগুণ অর্থ প্রদান করতে হবে।”
সে বলে, “আমার বস কিছুক্ষণ চুপ করে আমার লিস্ট দেখেন। এরপর আমার দিকে দিকে তাকিয়ে বলেন, ঠিক আছে। তার পেছনের দেয়ালে থাকা ঘড়ির কাঁটা বলছিল সময় তখন ১০টা বেজে ২১ মিনিট।”
“তিনি বলেন, আপনি ঠিক বলেছেন। আপনি এই প্রতিষ্ঠানে যত কাজ করেন তার মাঝে এই তিনটি কাজই সর্বাধিক গুরুত্ববহ এবং এই তিনটি কাজে আপনিই সেরা। আমি আপনাকে বাকি অদরকারি কাজগুলো সামলাতে সাহায্য করব যাতে আপনি এই তিনটি কাজ করার পর্যাপ্ত সময় পান। আর আপনি যদি দ্বিগুণ কাজ করতে পারেন তবে আপনার মাইনেও দ্বিগুণ করা হবে।”

জীবন পালটে দিন
সিনথিয়া এই বলে তার গল্প শেষ করে যে, “এরপর তিনি তার কথা রাখেন, আমিও রাখি। তিনি অদরকারি কাজগুলো অন্যত্র সরিয়ে আমাকে সেই তিনটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার পূর্ণ সময় প্রদান করেন। এর ফলে আমি পরবর্তী ৩০ দিনে আমার কাজের আউটপুট দ্বিগুণ করে ফেলি এবং আমার বেতনও দুই গুণ বৃদ্ধি পায়।”
“আমি প্রায় ৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে কঠোর পরিশ্রম করছিলাম। অথচ কেবল একমাস আমার সমস্ত সময় এবং শক্তি সেই প্রধান তিনটি কাজে ব্যয় করে আমি নিজের আয় দ্বিগুণ করতে সক্ষম হই। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করার বদলে আমি এখন সকাল ৮:০০টা থেকে বিকাল ৫:০০টা পর্যন্ত কাজ করি এবং প্রতি সন্ধ্যা ও সপ্তাহান্তে নিজের স্বামী ও দুই সন্তানের সাথে সময় কাটাই। এই তিনটি কাজে মনোনিবেশ আমার জীবন পালটে দিয়েছে।”
কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দটি হয়তো অবদান। আপনার আর্থিক এবং মানসিক অর্জনগুলো সরাসরি আপনার অবদানের সাথে সমানুপাতিক। যত বেশি সাফল্য চান, আপনাকে তত বেশি ফলাফল দেখাতে হবে, তত বেশি অবদান রাখতে হবে। আপনাকে নিজের কর্মক্ষেত্রে নিজের সেরাটা দিতে হবে। আর এই তিনটি কাজের মাধ্যমেই সেটা সম্ভব।

কুইক লিস্ট পদ্ধতি (ঃযব য়ঁরপশ ষরংঃ সবঃযড়ফ)
একটি অনুশীলন আছে যা আমরা আমাদের কোচিং ক্লায়েন্টদের কোচিংয়ের শুরুর দিকে করতে দিই। আমরা তাদের একটি কাগজ দিয়ে বলি, “ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে বর্তমানে আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি লক্ষ্য লিখে ফেলুন।”
আমরা দেখেছি যে ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে যেই উত্তর পাওয়া যায়, ত্রিশ মিনিট বা তিন ঘণ্টা সময় দিলেও সেই একই উত্তর পাওয়া যায়। তাদের অবচেতন মন এই সময়ে “হাইপারড্রাইভ” নামক একটি অবস্থায় চলে গিয়ে সেই তিনটি মূল লক্ষ্য তৎক্ষণাৎ তাদের মস্তিষ্কে উদয় হয়ে কাগজে স্থানান্তর হয়। অনেকে এটা দেখে নিজেই অবাক হয়ে যায়।
৮০ ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় সব মানুষেরই তিনটি লক্ষ্য থাকে;
প্রথম, একটি আর্থিক এবং কর্মসংক্রান্ত,
দ্বিতীয়, একটি পরিবার কিংবা ব্যক্তিগত সম্পর্ক সংক্রান্ত এবং
তৃতীয়, শরীরিক কিংবা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত
আর এমনটাই হওয়া উচিত। এই তিনটি জিনিসই মানুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি এই তিনটি ক্ষেত্রে নিজেকে এক থেকে দশের মধ্যে নম্বর দেন তবে সহজেই বুঝতে পারবেন কোন ক্ষেত্রে আপনার অগ্রগতি কতদূর। নিজে একবার এটা অনুশীলন করে দেখুন। নিজের পরিবারের অন্য সদস্যদেরও করতে দিন। উত্তরগুলো আপনার চোখ খুলে দিবে।
পরবর্তীতে আমাদের কোচিং প্রোগ্রামে, আমরা এই অনুশীলনটি প্রসারিত করি নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করে:
১। আপনার ব্যবসা কিংবা কর্মক্ষেত্রে বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি লক্ষ্য কী?
২। আপনার পারিবারিক কিংবা ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি লক্ষ্য কী?
৩। বর্তমানে আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক লক্ষ্য তিনটি কী?
৪। বর্তমানে আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসংক্রান্ত লক্ষ্য তিনটি কী?
৫। বর্তমানে আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত এবং পেশাগত উন্নয়নমূলক লক্ষ্য তিনটি কী?
৬। বর্তমানে আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক লক্ষ্য তিনটি কী?
৭। বর্তমানে আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় তিনটি সমস্যা কিংবা দুশ্চিন্তা কী?
যখন নিজেকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করবেন, তখন ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে নিজেকে উত্তর দিতে বাধ্য করবেন। তখন অনেক সময়ই উত্তরগুলো আপনাকে অবাক করবে। এই উত্তরগুলো যাই হোক না কেন, সেগুলো আপনার সেই সময়কালীন অবস্থার প্রতিচ্ছবি। এই উত্তরগুলো বলে দিবে কোন জিনিসগুলো আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
লক্ষ্য নির্ধারণ, প্রস্তুতি গ্রহণ, একাগ্রচিত্তে কর্মে মনোসংযোগ এবং নিজের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে নিজেকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার সময় এটা কখনোই ভুলবেন না যে আপনার চূড়ান্ত লক্ষ্য একটি দীর্ঘ, সুখী এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা।

সময় ব্যবস্থাপনা মানে পেশাগত কাজ দ্রুত সমাপ্ত করা
সময় ব্যবস্থাপনা শেখার মূল উদ্দেশ্য হল গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সময় মতো শেষ করে আপনার ব্যক্তিগত পছন্দের কাজগুলো করার জন্য অবসর সময় হাতে পাওয়া, যাতে আপনি জীবনে সুখ এবং সন্তুষ্টি লাভ করতে পারেন।
আপনার জীবনের ৮৫ ভাগ সুখ আসে আপনার কাছের মানুষ, ভালোবাসার মানুষ এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে সুন্দর সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে। আর একটি সুখী এবং সুন্দর সম্পর্ক স্থাপনের জন্য অপরিহার্য বস্তু হল সময়, যা আপনি যাদের ভালোবাসেন এবং আপনাকে যারা ভালোবাসে তাদের সাথে অতিবাহিত করেন।
সময় ব্যবস্থাপনার (ব্যাঙ খাওয়ার জন্য) মূল উদ্দেশ্য হল অল্প সময়ে অধিক কার্য সম্পাদন—যাতে করে আপনি আপনজনদের সাথে অধিক সময় ‘অন্তরঙ্গভাবে’ অতিবাহিত করতে পারেন। আপনজনদের সাথে সময় পার করে পছন্দের কাজগুলো করতে পারার মাঝেই জীবনের প্রকৃত সুখ নিহিত।
নিয়ম: কর্মক্ষেত্রে অতিবাহিত সময়ের গুণমান (য়ঁধষরঃু) গুরুত্বপূর্ণ এবং বাড়িতে অতিবাহিত সময়ের পরিমাণ (য়ঁধহঃরঃু) গুরুত্বপূর্ণ।

কাজের সময় শুধু কাজ করুন (কাজের পুরোটা সময় ব্যস্ত থাকুন)
জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখতে আপনার সংকল্প করা উচিত যে কাজের সময় কেবল কাজই করবেন। যখন কাজে যাবেন, তখন মাথা নিচু করে কেবল কাজ করুন। সময়ের আগেই কাজ শুরু করুন, সময়ের পরেও কতক্ষণ কাজ করুন। একটু বাড়তি পরিশ্রম করুন। সময় অপচয় করবেন না। সহকর্মীদের সাথে অযথা গালগল্পে নষ্ট করা প্রতিটি মিনিট আপনার কাজের সময় থেকে হ্রাস হবে। কর্মে উন্নতি চাইলে তা না করাটাই বাঞ্ছনীয়।
এরচেয়েও ভয়ানক কথা হল এই অপচয়কৃত সময় আপনার পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত সময় থেকে হ্রাস হবে। আপনাকে হয় দেরি করে বাড়িতে যেতে হবে নয়তো কাজ বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে। কর্মদিবসে কার্যকরভাবে কাজ না করার দরুণ আপনার ওপর অনাকাক্সিক্ষত চাপ সৃষ্টি হবে এবং তার প্রভাব হয়তো আপনার পরিবারের উপরেও পড়বে।
একটি ছোট্ট মেয়ের গল্প বলি। সে তার মায়ের কাছে যায় এবং মা’কে জিজ্ঞেস করে, “আম্মু, বাবা কেন প্রতি রাতে বাসায় ব্রিফকেস ভর্তি কাজ নিয়ে আসে আর আমাদের সাথে কখনো সময় কাটায় না?” মা সহানুভূতির সুরে উত্তর দেয়, “মামনি, তোমাকে বুঝতে হবে—বাবা অফিসে কাজ শেষ করতে পারেনি। তাই বাসায় এসে তাকে কাজটি শেষ করতে হচ্ছে।” এরপর মেয়েটি প্রশ্ন করে, “যদি তাই হয় তাকে কেন ধীরে কাজ করা বাচ্চাদের ক্লাসে দিচ্ছে না ওরা?”

ভারসাম্যের কোন বিকল্প নেই
প্রাচীন গ্রীকদের অন্যতম বিখ্যাত উক্তি ছিল, “সবকিছুতে সংযম পালন করা উত্তম।” আপনাকে ব্যক্তিগত এবং কর্মজীবনের মাঝে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। আপনাকে কর্মক্ষেত্রে জরুরি কাজগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোতে মনোনিবেশ করতে হবে। একই সাথে আপনাকে এটাও মনে রাখতে হবে যে আপনার কর্মক্ষেত্রে এত পরিশ্রম করার মূল কারণ হল আপনার এবং আপনার পরিবারের জীবনের মান উন্নয়ন।
অনেকেই আমাকে এসে জিজ্ঞেস করে, “আমি কীভাবে ব্যক্তিগত এবং কর্মজীবনের মাঝে ভারসাম্য বজায় রাখব?”
আমি তাদের পাল্টা প্রশ্ন করি, “একজন সার্কাসের খেলোয়াড় দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার সময় কতক্ষণ ভারসাম্য বজায় রাখে?” কিছুক্ষণ চিন্তা করে প্রায় সকলেই উত্তর দেয়, “সারাক্ষণ।” আমি তখন বলি, “ব্যক্তিগত এবং কর্মজীবনের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রেও এই একই কথা খাটে। আপনাকে সারাক্ষণ এটা করতে হবে। আপনি কখনোই নিখুঁতভাবে সেটা করতে পারবেন না। এজন্য আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে। নিয়মিত চর্চা করতে হবে।”
আপনার কাজ হল কর্মক্ষেত্রে আপনার সেরাটা দিয়ে সর্বাধিক পুরস্কার অর্জন করা। একই সময়ে আপনাকে অবশ্যই নিজের জীবনকেও উপভোগ করার কথা মনে রাখতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না আপনি আসলে কেন অফিসে এত পরিশ্রম করছেন আর কেন আপনার সময় যথাযথভাবে বিনিয়োগ করছেন। যত বেশি সময় আপনজনদের সাথে ব্যয় করবেন, জীবনে তত বেশি সুখী হবেন।

হাতেকলমে কাজ করুন
১। কর্মক্ষেত্রে আপনার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তিনটি কাজ নির্ধারণ করুন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, “যদি এর মাঝে একটি কাজ আমাকে সারাদিন করতে বলা হয় তবে কোন কাজটি আমাকে সর্বাধিক সাফল্য এনে দিবে?” এই কাজটি আরও দুইবার করুন। এভাবে নিজের “সবচেয়ে বড় তিন কাজ” চিহ্নিত করে সারাদিন সেই কাজগুলো একাগ্রচিত্তে করুন।
২। নিজের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনটি মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। এগুলো গুরুত্ব অনুসারে সাজান। এগুলো অর্জনের জন্য পরিকল্পনা করুন এবং প্রতিদিন সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করুন। সামনের কয়েক মাস কিংবা বছরের মাঝে আপনার অর্জন দেখে আপনি নিজেই হতবাক হবেন।

 



অধ্যায় নয়

যেকোন কাজ আরম্ভ করার আগে সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিন
“আপনার দক্ষতার সীমা যাই হোক না কেন, আপনি নিজের ধারণার চেয়েও বেশি সামর্থ্য রাখেন।”—জেমস টি. ম্যাকেই

গড়িমসি অভ্যাস পরিত্যাগ করে বেশি বেশি কার্যসম্পাদন করার একটি অন্যতম সেরা উপায় হল, কাজ শুরু আগে কাজটি করার জন্য যা যা প্রয়োজন সেগুলো আগে জোগাড় করা। যখন এভাবে নিজেকে প্রস্তুত রাখবেন তখন আপনাকে কেউ রুখতে পারবে না। আপনি সামনের দিনগুলোতে কত বেশি অর্জন করতে পারবেন তা দেখে নিজেই অবাক হবেন। একটু মানসিক শক্তি আপনাকে নিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করতে উদ্বুদ্ধ করবে।
এটা অনেকটা রান্না করার মতো (আপনার ব্যাঙটিকে ধরুন)। আপনি রান্না করার আগে নিজের সামনে সকল উপকরণ রেখে তবেই রান্না শুরু করেন। এরপর ধাপে ধাপে রান্নাটি শেষ করেন।
আপনার টেবিল বা কাজের জায়গা থেকে অন্য সবকিছু সরিয়ে কেবল তখন করার কাজটি সামনে রাখলে—আপনার ওপর কম চাপ সৃষ্টি হবে। দরকার হলে অন্য সবকিছু চোখের আড়ালে রাখুন। কেবল আপনার বর্তমান কাজটি করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্যউপাত্ত, কাগজ, কাজের সরঞ্জাম নিজের সামনে রাখবেন। সবকিছু হাতের কাছেই রাখুন যাতে আপনাকে কোনকিছু জন্য বারবার কাজ ছেড়ে উঠতে না হয়।
সকল দরকারি লিখিত দস্তাবেজ, কম্পিউটার ডিস্ক, এক্সেস কোড, ইমেল এড্রেস এবং অন্যান্য জরুরি সবকিছু যাতে কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত আপনার হাতের কাছে থাকে সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করুন।
এমনভাবে নিজের কাজের স্থানটিকে সাজান যাতে সেটা দীর্ঘক্ষণ কাজ করার মতো উপযোগী এবং আরামদায়ক হয়। বিশেষ করে এমন একটি চেয়ারে বসে কাজ করবেন যাতে আপনার পিঠ রাখার এবং পা রাখার ব্যবস্থা থাকে।

একটি আরামদায়ক কাজের স্থান
সবচেয়ে কর্মক্ষম ব্যক্তিরা এমন একটি কাজের জায়গা প্রস্তুত করে যেখানে কাজ করে তারা আনন্দ পায়। আপনার কাজের জায়গা যত বেশি পরিচ্ছন্ন এবং গোছানো হবে আপনার কাজ তত বেশি সহজ হবে।
নিজের ব্যাঙটিকে খাবার অন্যতম সেরা একটি কৌশল হল কাজ শুরু আগে কাজের সকল সরঞ্জাম জোগাড় করা। সবকিছু গোছানো এবং হাতের কাছে থাকলে আপনা থেকেই আপনার কর্মস্পৃহা বেড়ে যাবে।

কাজ শুরু করে দিন
ভাবলে অবাক লাগে শুধুমাত্র মানুষ কাজ শুরুর আগে কাজটি করার সরঞ্জাম জোগাড় করতে ব্যর্থ হওয়ায় কত বই অলেখা রয়ে গেছে, কত ডিগ্রি নেওয়া হয়নি, কত জীবন অপরিবর্তিতই রয়ে গেছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস সমগ্র আমেরিকার এমন সব মানুষকে আকর্ষণ করে যারা একটি সফল সিনেমার স্ক্রিপ্ট লিখে বড় বড় স্টুডিওকে বিক্রি করার স্বপ্ন দেখে। তারা সেখানে গিয়ে বছরের পর বছর ধরে নিম্ন স্তরের চাকরিতে কাজ করে এবং একটি জনপ্রিয় স্ক্রিপ্ট রচনা ও বিক্রয়ের স্বপ্ন দেখে।
দ্য লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস একবার একজন প্রতিবেদককে পথচারীদের সাক্ষাৎকার নিতে উইলশায়ার বুলেভার্ডে পাঠিয়েছিল। তিনি তাদের একটি কেবল একটি প্রশ্ন করেছিলেন: “কতদূর এগোলো আপনার স্ক্রিপ্ট?” চারজন পথচারীর মধ্যে তিনজনই উত্তরে বলেছিলেন, “প্রায় শেষ!”
দুঃখের বিষয় বেশির ক্ষেত্রেই “প্রায় শেষ” এর মানে হল “শুরুই করিনি।” এমনটি যাতে আপনার সাথে না হয়।

স্বপ্ন পূরণের পথে অগ্রসর হোন
একবার সকল প্রস্তুতি শেষ হলে সাথে সাথে নিজের কাজটি শুরু করে দিন। শুরু করুন। কাজ করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ নিন। প্রথমে যেই কাজ আসবে তাই দিয়ে আরম্ভ করুন। তা সে যাই হোক।
আমার নিজস্ব নীতি হল “আগে ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করব, পরে সংশোধন করে বাকিটা ঠিক করে নিব।” আমার নীতিটা একবার মেনেই দেখুন না তা কাজে আসে কিনা। প্রথম কয়েকবারেই পূর্ণ সফলতা আশা করবেন না। বারবার ব্যর্থ হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন। মনে রাখবেন, ব্যর্থতার পর সফলতা আসবেই।
নিজের লক্ষ্য অর্জনের পথে আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হল ব্যর্থতার ভয়, প্রত্যাখ্যান এবং আত্মবিশ্বাসের অভাবে জন্ম নেয়া সন্দেহ। নিজের ভয়কে জয় করার একমাত্র উপায় হল “যেই কাজ করতে ভয় পান সেটা করা।” এমারসন এজন্যেই লিখেছেন, “যেই কাজ করতে ভয় পান সেটা করুন। কারণ মৃত্যুর ভয় তো নিশ্চিত।” [ফজলে রাব্বির কথা—এমারসনের কথার মানে হচ্ছে একদিন না একদিন সবাইকেই মরতে হবে। মৃত্যু নিশ্চিত এবং মৃত্যুকে সবাই ভয় পায়। মৃত্যুর থেকে ভীতিপ্রদ আর কী হতে পারে! যেহেতু মৃত্যুর মতো ভয়ঙ্কর অবস্থার সম্মুখীন আমাদের নিশ্চিতভাবে হতে হবে, সেহেতু অন্য যেকোনো ভয়ই মৃত্যুর ভীতির চেয়ে কম ভয়ঙ্কর। আমরা যেহেতু নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি হব, সেহেতু আমরা যেকোনো ভীতিরই মুখোমুখি হতে পারব। তাই যেই কাজ করতে ভয় পান সেটা করুন। এতে ভয় দূর হয়ে যাবে।]
বিখ্যাত হকি খেলোয়াড় ওয়েন গ্রেটস্কি একবার বলেছিলেন, “আপনার না নেওয়ার ১০০ ভাগ শট আপনি মিস করেন।” একবার আপনি প্রস্তুতি সম্পন্ন করুন এবং সাহস সঞ্চয় করে প্রথম পদক্ষেপটি নিন, দেখবেন আপনা থেকেই পুরো কাজটি সম্পন্ন হয়ে গেছে। এমনভাবে সাহস সঞ্চয় করুন যাতে মনে হয় আপনার মাঝে এই সাহস আগে থেকেই ছিল।

প্রথম পদক্ষেপ নিন
সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে কাজ শুরুর আগে উচ্চ কর্মদক্ষ ব্যক্তির মতো আচরণ করুন। সোজা হয়ে বসুন, সামনের দিকে এগিয়ে। চেয়ারে হেলান দিবেন না। এমনভাবে নিজেকে চালিত করুন যেন আপনাকে দেখে একজন কর্মক্ষম, উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন এবং কর্মে উৎসাহী ব্যক্তি বলে মনে হয়। এরপর কাজের প্রথম অংশটি হাতে হাতে নিয়ে নিজেকে বলুন, “চলো, কাজে নেমে পড়ি!” এরপর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়–ন। একবার কাজ আরম্ভ করে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত থামবেন না।

হাতেকলমে কাজ করুন
১। আপনার অফিস এবং বাড়ির কাজের টেবিলের দিকে তাকান। নিজেকে প্রশ্ন করুন, “এমন জায়গায় কি কেউ কাজ করতে পারে?” আপনার কাজের স্থান যত পরিষ্কার এবং পরিপাটি হবে আপনি তত বেশি ইতিবাচক, কর্মক্ষম এবং আত্মবিশ্বাস অনুভব করবেন।
২। আজকেই নিজের বাসা এবং অফিসের কাজের টেবিল সম্পূর্ণভাবে গুছিয়ে ফেলুন যাতে আপনি দক্ষতার সাথে প্রতিবার কাজে নেমে পড়ার উৎসাহ বোধ করতে পারেন।

 



অধ্যায় দশ

প্রতিবার একটি একটি করে তেলের ড্রাম পার হন
“একজন সামান্য ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিও অসামান্য জিনিস অর্জন করতে পারবে যদি সে একবারে কেবল একটি কাজে অক্লান্তভাবে, সম্পূর্ণরূপে মনোনিবেশ করতে পারে।”—স্যামুয়েল স্মাইলস (ঝবষভ ঐবষঢ় বইয়ের লেখক)

একটি পুরনো প্রবাদ আছে,

“ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল,
গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল।”

অলসতা কিংবা গড়িমসি পরিত্যাগ করার একটি অন্যতম সেরা উপায় হল সামনে থাকা বিশাল কাজটি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সেই কাজের একটি অংশ, যা আপনার জন্য করা সহজ সেটিতে মনোসংযোগ করা। একটি বড় ব্যাঙ খেয়ে শেষ করার সর্বোত্তম উপায় হল প্রতিবার একটি একটি করে কামড় দিতে সেটা খেয়ে ফেলা।
লাও জু লিখেছেন, “হাজারো মাইলের যাত্রা আরম্ভ হয় একটি ছোট্ট পদক্ষেপ দিয়ে।” এটা অলসতা ত্যাগ করে দ্রুত কাজ সমাপ্ত করার একটি উত্তম কৌশল।

একটি বিশাল মরুভূমি পার হওয়া
অনেক বছর আগের কথা। আমি একটি পুরনো ল্যান্ড রোভার গাড়ি চালিয়ে আধুনিক আলজেরিয়ার বুকে লুকিয়ে থাকা সাহারা মরুভূমির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা টিউনিকা** পার করেছিলাম। তার অনেকদিন আগেই ফরাসিরা সেই জায়গা ছেড়ে চলে গিয়েছিল আর পুরনো জ্বালানী স্টেশনগুলোও ততদিনে পরিত্যাক্ত হয়ে গিয়েছিল।
[টিউনিকা (ঞধহবুৎড়ঁভঃ) (আরবি: تنزروفت) হোগার পর্বতমালার পশ্চিমে আলজেরিয়া এবং মালির সীমান্তে অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক অঞ্চল। লিবিয়া মরুভূমির পাশাপাশি এটা সাহারা মরুভূমির অন্যতম নির্জন এবং সবচেয়ে শুষ্ক অংশ। তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া।]
৫০০ মাইল দীর্ঘ সেই মরুভূমির রাস্তায় খাদ্য, ঘাস এমনকি একটি মাছিরও চিহ্ন ছিল না। একটি সম্পূর্ণ সমতল হলদে পাথরের বোর্ড যেন দিগন্ত পর্যন্ত বিস্তৃত।
১৩শ এরও বেশি সংখ্যক মানুষ কালের পরিক্রমায় সাহারার এই অঞ্চলে প্রাণ হারিয়েছে। প্রায়ই ধুলিঝড়ে ঢেকে যায় পথের চিহ্ন, যার ফলে অনেক ভ্রমণকারী রাতের বেলায় পথ হারিয়ে এই মরুভূমির বুকে হারিয়ে গেছে। তাদের আর কখনো জীবিত পাওয়া যায়নি।
এই সমস্যা মোকাবিলা করতে ফরাসিরা প্রতি ৫ কিলোমিটার পরপর পথটিতে পঞ্চান্ন গ্যালন তেলের ড্রাম রেখেছিল, যা ছিল পৃথিবীর বক্রতা দ্বারা গঠিত এই দিগন্ত বিস্তৃত পথের দূরত্ব।
এই কারণে, দিনের বেলাতে আমরা দুটি তেলের ড্রাম দেখতে পেতাম, একটি ৫ কিলোমিটার সামনে আর দ্বিতীয়টি পেছনে।
আমাদের শুধু পরবর্তী তেলের ড্রামটি দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হত। আর তাই আমরা একটি “একটি করে তেলের ড্রাম পার করে” পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মরুভূমি পার করতে পেরেছিলাম!

এক এক করে পা ফেলুন
একইভাবে, আপনি এক এক করে পদক্ষেপ নিতে নিজেকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় কাজটি সম্পাদন করতে পারবেন। আপনার কাজ হল যতদূর পর্যন্ত দেখতে পারেন আগে সেইটুকু যাওয়া। এভাবেই আপনি সম্পূর্ণ পথটি অতিক্রম করতে পারবেন।
 
আমাদের সবার মধ্যেই একটি ভীত শিশু বাস করে। ছবির মধ্যে এই ব্যাপারকেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। জে. স্ট্রেটফোর্ড বলেন, ‘আপনি যেকোনো কিছু অর্জন করতে পারবেন। কেবল আপনাকে এক সময়ে একটি পদক্ষেপ নিতে হবে।’ তথ্যসূত্র: যঃঃঢ়ং://পড়ধপযরহমভড়পঁং.পড়স.ধঁ/ফবঃবৎসরহধঃরড়হ-যধঢ়ঢ়বহং-ড়হব-ংঃবঢ়-ধঃ-ধ-ঃরসব/
একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করার জন্য আপনাকে অবশ্যই এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে আপনার পরবর্তী পদক্ষেপটি শীঘ্রই স্পষ্ট হয়ে উঠবে। এই চমৎকার উপদেশটি মনে রাখবেন, “বিশ্বাসে মিলায় বস্তু!”
একটি দুর্দান্ত কর্মজীবন গঠিত হয় দ্রুততা এবং দক্ষতার সাথে এক সময়ে একটি কাজ সম্পাদন করে পরবর্তী কাজে হাত দেয়ার মাধ্যমে। বছরের পর বছর ধরে প্রতি মাসে টাকা জমিয়েই আর্থিক স্বাধীনতা অর্জিত হয়। সুস্বাস্থ্য অর্জিত হয় দিনের পর দিন ডায়েট এবং শরীরচর্চা করে।
আপনি দীর্ঘসূত্রতা তথা গড়িমসি অভ্যাস পরিত্যাগ করে অসামান্য জিনিস অর্জন করতে পারবেন শুধুমাত্র প্রথম পদক্ষেপটি নিয়ে এক পা এক পা করে আপনার লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হয়ে। অর্থাৎ একটি একটি করে তেলের ড্রাম পার হয়ে।

হাতেকলমে কাজ করুন
১। আপনি দীর্ঘদিন ধরে গড়িমসি করছেন এমন একটি কাজ নির্বাচন করে সেটা সম্পন্ন করার পদক্ষেপগুলো লিপিবদ্ধ করুন।
২। এরপর তৎক্ষণাৎ প্রথম পদক্ষেপ নিন। অনেক সময় দেখা যায় কেবল তালিকার একটি কাজ সম্পন্ন করেই পরেরগুলো পরপর করে ফেলার উৎসাহ পাওয়া যায়। কাজগুলো শেষ হলে আপনার অর্জন দেখে আপনি নিজেই বিস্মিত হবেন।

 



অধ্যায় এগারো

আপনার প্রধান দক্ষতাগুলো শণিত করুন
“সাফল্য অর্জনের অন্যতম উপায় হচ্ছে যতটুকু আপনার কাছে আশা করা হয় তার তুলনায় বেশি সেবা প্রদান করা—সেটা যে কাজই হোক না কেন।”—অগ ম্যান্ডিনো (বিশে^র সর্বশ্রেষ্ঠ সেলসম্যান বইয়ের লেখক)

ব্যক্তিগত প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধির যেসব নীতি আছে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতি হচ্ছে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করা। যা কিছু আপনার শেখা প্রয়োজন তা শিখুন—যাতে আপনার কাজগুলো আপনি চমৎকারভাবে সম্পাদন করতে পারেন। কোন নির্দিষ্ট ব্যাঙ ভক্ষণে আপনি যত বেশি পারদর্শী হয়ে উঠবেন, তত সহজে আপনি কোন নির্দিষ্ট কাজ আরম্ভ করে তা সমাপ্ত করতে পারবেন।
যেকোনো কাজে গড়িমসি করার একটি প্রধান কারণ, নিজের সামর্থ্যকে অপর্যাপ্ত মনে করা, আত্মবিশ^াসের অভাব অথবা কোন কাজের প্রধান অংশগুলো সম্পাদনে নিজেকে অযোগ্য ভাবা। কোন কাজে নিরুৎসাহিত হওয়ার জন্য এর যেকোন একটি অংশকে মোকাবিলা করার ব্যাপারে নিজেকে দুর্বল বা অক্ষম মনে করাই যথেষ্ট।
প্রধান ফলাফলের ক্ষেত্রগুলোতে অবিরামভাবে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করুন। স্মরণ রাখবেন, আজকে আপনি যতই দক্ষ হন না কেন, আপনার এই জ্ঞান ও দক্ষতা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে অপ্রচলিত হয়ে পড়ছে। বাস্কেটবল কোচ প্যাট রেইলি বলেন, ‘যখনই আপনি আরও ভালো করার চেষ্টা ছেড়ে দিবেন, তখন নিশ্চিতভাবে আপনার অধঃপতন আরম্ভ হবে।’

শিক্ষা গ্রহণের চর্চা অ্যাবহত রাখতে হবে
প্রতিনিয়ত শিক্ষা গ্রহণ করার চর্চা বজায় রাখতে হবে। সময় ব্যবস্থাপনার অন্যতম কৌশল হচ্ছে—আপনি আপনার প্রধান দক্ষতার জায়গাগুলোতে দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা সবসময় বজায় রাখবেন। নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা সবসময় করতে থাকবেন। ব্যক্তিগত ও পেশাগত উন্নতি সাধনে সবসময় শিক্ষা গ্রহণের চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। নিজেকে যুগোপযোগী রাখতে, জীবনে উন্নতি করতে এটাই সর্বোত্তম পন্থা। আপনার প্রধান কাজ মোকাবিলায় আপনি যত বেশি দক্ষ হবেন, তা সম্পাদনে আপনার মাঝে তত বেশি উৎসাহ থাকবে। আপনার সক্ষমতা যত বেশি হবে আপনার কর্মশক্তি ও উদ্দীপনাও তত বেশি হবে। আপনি যখন জানবেন যে কোন কোন কাজ আপনার পক্ষে উৎকৃষ্টভাবে সম্পাদন করা সম্ভব—তখন গড়িমসি অভ্যাস কাটিয়ে ওঠা আপনার জন্য সহজ হবে এবং কাজটি আপনি যেকোন পরিস্থিতিতে দ্রুত ও ভালোভাবে সমাপ্ত করতে পারবেন।
এক খ- তথ্য অথবা একটু বাড়তি দক্ষতা, কোন কাজ উত্তমভাবে সম্পাদনে আপনার সামর্থ্যরে মাঝে ব্যাপক পার্থক্য সূচিত করতে পারে। আপনার দ্বারা সম্পাদিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো শনাক্ত করুন এবং সেই ক্ষেত্রগুলোতে অবিরামভাবে আপনার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন।
সূত্র: যেকোন ক্ষেত্রে ন্যূনতম সাফল্যও অর্জন করার অন্যতম শর্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত শিক্ষা গ্রহণের চেষ্টা করা।
আপনার অগ্রগতিতে বাধা দান করে এমন যেকোন ধরনের দুর্বলতা অথবা অক্ষমতার প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত করুন। সবকিছুই শেখা যায়। আর অন্যরা যা কিছু শিখছে তা আপনার পক্ষেও শেখা সম্ভব। আপনি যখন আমার প্রথম বইটি লেখার কাজ শুরু করেছিলাম, তখন আমার মাঝে উদ্যমের অভাব ছিল—কারণ আমি দুই আঙ্গুলের সাহায্যে অক্ষর খুঁজে খুঁজে টাইপ করতাম। অল্প কাল অতিবাহিত হওয়ার পর আমি উপলব্ধি করলাম, আমাকে দশ আঙ্গুল ব্যবহার করে টাইপ করা শিখতে হবে, যদি আমি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একটি ৩০০ পৃষ্ঠার বই রচনা করতে চাই।
অতএব, আমি আমার কম্পিউটারে দশ আঙ্গুল ব্যবহার করে টাইপ করা শেখার প্রোগ্রাম ইন্সটল করলাম। তারপর ৩ মাস ধরে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ মিনিট সঠিক পন্থায় টাইপের অনুশীলন করলাম। উক্ত সময় শেষে মিনিটে ৪০ থেকে ৫০টি শব্দ টাইপ করার সামর্থ্য অর্জন করলাম। এই বাড়তি দক্ষতার সাহায্যে আমি ৭৫টির অধিক বই রচনা করে ফেললাম, যেগুলো বর্তমানে বিশে^র সর্বত্র প্রকাশিত হয়েছে। সুসংবাদ হল, নিজেদের কার্যকারিতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য আমরা যেকোন কৌশল শিখতে পারি। একজন অনভিজ্ঞ টাইপিস্ট থেকে প্রয়োজনে আপনি পেশাদার টাইপিস্টের দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। আপনি কম্পিউটার ব্যবহারে নৈপুণ্য অর্জন করতে পারেন। আপনি একজন উৎকৃষ্ট আপোস-রফাকারী অথবা চমৎকার বিক্রয়কর্মীর স্থান অধিকার করতে পারেন। আপনি জনসমক্ষে বক্তৃতা করার কৌশল শিখতে পারেন। আপনি একজন ভালো লেখকও হতে পারেন। এগুলো এমন পারদর্শিতা—যা কেবল সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে এবং অগ্রাধিকার প্রদানের মাধ্যমে আয়ত্ত করা সম্ভব। আপনাকে প্রথমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনি কোন ধরনের দক্ষতা অর্জন করতে চান। তারপর অন্য সব কাজের আগে সেই দক্ষতা অর্জনের চেষ্টাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তবেই আপনি এমন কাজে পারদর্শী হয়ে উঠবেন।

পারদর্শিতা অর্জনের তিনটি ধাপ
প্রথমত, প্রতিদিন আপনার পেশাগত বিষয়ে কমপক্ষে ১ ঘণ্টা অধ্যয়ন করুন। সকালে একটু তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন এবং আপনার পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এমন বই অথবা পত্রিকা ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পড়–ন।
দ্বিতীয়ত, আপনার পেশাগত কাজের প্রধান দক্ষতার সাথে সম্পর্কিত কর্মশালা অথবা সেমিনারে যোগ নিন। আপনার ব্যবসায় অথবা পেশা বিষয়ক সম্মেলনে যোগ দিন। এসব অনুষ্ঠানে সবসময় সামনের সারিতে বসার করুন এবং আলোচিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংক্ষেপে খাতায় নোট করুন। এসব অনুষ্ঠানের অডিও টেপ, থাকলে তা ক্রয় করুন। আপনার পেশাগত ক্ষেত্রে সবচেয়ে জ্ঞানী ও সক্ষম ব্যক্তিতে পরিণত হওয়ার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করুন।
 
তথ্যসূত্র: যঃঃঢ়ং://িি.িধিুভধরৎ.পড়স/ঢ়বঃ/ঢ়ফঢ়/ঃঁপশবৎ-সঁৎঢ়যু-ঢ়বঃ-ঢ়ড়ংঃড়হ-বধংু-৩-ংঃবঢ়-ঢ়বঃ-ৎধসঢ়-০ি০২০৯১৮২২.যঃসষ
তৃতীয়ত, সংগ্রহ করা অডিও টেপ গাড়িতে বা বাড়িতে অবসর সময়ে শ্রবণ করুন। একজন গড়পড়তা মটর গাড়ির মালিক বছরে ৫০০ থেকে ১ হাজার ঘণ্টা পর্যন্ত সময় অতিবাহিত করে গাড়ির মধ্যে। [এই গবেষণা করা হয়েছে আমেরিকান সমাজ নিয়ে]। গাড়িতে চলাচলের সময়কে শেখার সময়ে রুপান্তরিত করুন। যানবাহনে চলাচলের সময় শিক্ষঅমূলক অডিও শ্রবণ করার মাধ্যমে আপনি নিজের পেশাগত ক্ষেত্রে একজন বিচক্ষণ, উত্তম সামর্থ্য বিশিষ্ট উচ্চ বেতনভোগী ব্যক্তিতে পরিণত হতে পারেন। আপনি যত বেশি শিখবেন ও জানবেন—আপনার আত্মবিশ^াস ও উদ্দীপনা তত বৃদ্ধি পাবে। আপনার দক্ষতা ও সামর্থ্যরে সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে আপনার পেশাগত উন্নতি ঘটতে থাকবে। মানুষ যত বেশি শিখে তত বেশি রোজগার করতে সক্ষম হয়। দৈহিক ব্যায়ামের মাধ্যমে যেমন শরীরের পেশিসমূহ শক্তিশালী হয়, অনুরূপভাবে মানসিক ব্যায়ামের মাধ্যমেও বৃদ্ধি শাণিত হয়। আপনি যদি চিন্তা ও কল্পনা শক্তিকে ইচ্ছাকৃভাবে সীমিত না করেন, তাহলে কতদূর বা কত দ্রুত আপনি অগ্রসর হতে পারবেন তার কোন নির্দিষ্ট সীমারেখা থাকবে না।

হাতেকলমে কাজ করুন
১। সেসব মূল দক্ষতার ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিত করুন—যেগুলোর দ্রুত ও উৎকৃষ্ট ফলাফল অর্জনে আপনার সবচেয়ে বেশি কাজে আসবে। ভবিষ্যতে আপনার কর্মক্ষেত্রে অগ্রবর্তী ভূমিকা রাখার জন্য যে পারদর্শিতা অর্জন করা দরকার তা শনাক্ত করুন। এর ধরন যাই হোক না কেন—লক্ষ্য নির্ধারণ করুন, পরিকল্পনা তৈরি করুন এবং সেসব ক্ষেত্রে আপনার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ শুরু করে দিন। সিদ্ধান্ত নিন আপনার পেশাগত ক্ষেত্রে আপনি শ্রেষ্ঠ দক্ষতার অধিকারী হবেন।
২। আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে উৎকর্ষতা অর্জনের জন্য একটি ব্যক্তিগত পরিকল্পনা তৈরি করুন। সেসব কার্যক্রমের প্রতি মনোযোগ দিন—যেগুলোতে আপনি অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী এবং যেগুলো আপনার কাছে সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য। এটাই আপনার ব্যক্তিগত সুপ্ত সম্ভাবনার বিকাশ ঘটানোর মূল চাবিকাঠি।

 



অধ্যায় বারো

আপনার প্রধান সীমাবদ্ধতাগুলো চিহ্নিত করুন
“আপনার সব চিন্তা বর্তমান কাজের প্রতি কেন্দ্রীভূত করুন। সাধারণত বিক্ষিপ্ত সূর্যের আলোতে আগুণ জ¦লে না, কিন্তু লেন্সের সাহায্যে সূর্যরশ্মিকে কেন্দ্রীভূত করা হলে তা থেকে আগুন জ¦লে ওঠে।”—আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল

আজ আপনার অবস্থান যেখানে এবং যে লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য আপনি অর্জন করতে চান, এর মধ্যবর্তী স্থানে গুরুতর সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান যা মোকাবিলা না করলে আপনার মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এই সীমাবদ্ধতাকে স্পষ্টভাবে শনাক্ত করা আপনার দায়িত্ব।
কী কারণে আপনার অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে? কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আপনার লক্ষ্য অর্জনে গতি সঞ্চার হবে? আপনি যে অবস্থানে আছেন, সেখান থেকে আপনার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে কত দ্রুত গতিতে আপনি পৌঁছাতে পারবেন বিষয়টি কীসের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে? কেন আপনার ব্যাঙ খাওয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যাকে মোকাবিলা করলে আপনার জীবনের আমূল পরিবর্তন ঘটে যাবে? ইতোমধ্যে আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেননি কেন?
উচ্চ পর্যায়ের উৎপাদনশীলতা ও কার্যকারিতা অর্জন করার জন্য নিজেকে উপরোক্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নসমূহ করা এবং এদের উত্তর আবিষ্কার করা আবশ্যক। আপনি যা কিছুই করার তাগিদ অনুভব করেন না কেন, সর্বদাই আপনি কিছু বাধার সম্মুখীন হবেন—যা নির্ধারণ করবে, কত দ্রুত ও উত্তমভাবে আপনার কাজটি সম্পন্ন হবে। অতএব, আপনার দায়িত্ব হল নিজের কাজকে বিশ্লেষণ করে এর মধ্যস্থিত সীমাবদ্ধতা সৃষ্টিকারী উপাদানগুলো চিহ্নিত করা। তারপর সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সেই সীমাবদ্ধতাগুলোকে নির্মূল করা।

সীমাবদ্ধতা সৃষ্টিকারী উপাদান চিহ্নিত করুন
প্রকৃতপক্ষে, ছোট অথবা বড় সব ধরনের কাজে কোন একক উপাদান থাকে যা এর গতি নির্ধারণ করে। যার প্রভাবে আপনার লক্ষ্য অর্জিত হয় অথবা কাজ সমাপ্ত হয়। সেই উপাদান কী? আপনার মানসিক শক্তিকে এই প্রধান ক্ষেত্রের প্রতি নিবন্ধ করুন। আপনার এই উদ্যোগ, আপনার সময় ও প্রতিভার সবচেয়ে উৎপাদনশীল প্রয়োগ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।
আপনার এই প্রতিবন্ধকতা হতে পারে কোন ব্যক্তি—যার সহযোগিতা বা সিদ্ধান্ত আপনার প্রয়োজন। আবার সেটা হতে পারে কোন সম্পদ - যা আপনার দরকার, অথবা আপনার প্রতিষ্ঠানের কোন দুর্বলতা বা অন্য কিছু। তবে সব ক্ষেত্রেই কোন না কোন সীমাবদ্ধতা সৃষ্টিকারী উপাদান বিরাজ করে এবং আপনার দায়িত্ব তা শনাক্ত করা।
উদাহরণস্বরূপ, যেকোন ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্রাহক তৈরি করা এবং তাদের ধরে রাখা। এভাবে পর্যাপ্ত সংখ্যক গ্রাহক সৃষ্টির মাধ্যমে একটি কোম্পানি মুনাফা অর্জন করে এবং সমৃদ্ধি অব্যাহত রাখে। কিন্তু সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরই কোন না কোন সীমাবদ্ধতা থাকে যার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়, কত দ্রুত এবং উত্তমভাবে সেই প্রতিষ্ঠান তার উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারবে। সীমাবদ্ধতার ধরন হতে পারে এর বিপণন ব্যবস্থা, বিক্রির পরিমাণ অথবা এর বিক্রয়কর্মীদের ভূমিকা। আবার ব্যবসায় পরিচালনা ব্যয়, উৎপাদন পদ্ধতি, নগদ অর্থের সরবরাহ এবং কাঁচামালের মূল্যও সীমাবদ্ধতা সৃষ্টিকারী উপাদানের আওতাভুক্ত হতে পারে। আবার সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি, গ্রাহকদের মানসিকতা এবং সমপর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতাও একটি কোম্পানির সাফল্য নির্ধারণ করতে পারে। এই উপাদানগুলোর যেকোন একটি—অন্য কিছুর তুলনায় বেশি জোরালোভাবে নির্ধারণ করে, কত দ্রুত কোম্পানিটি এর সমৃদ্ধি ও মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে। সেটা কী?
অন্য যেকোন একক কর্মকা-ের তুলনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী উপাদানটিকে নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করা, সকল ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ক্ষেত্রেই সাধারণত কম সময়ে বেশি অগ্রগতি অর্জনে সহায়ক হয়।

প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় ৮০/২০ নীতির প্রয়োগ
আপনার ব্যক্তিগত জীবন ও পেশাগত ক্ষেত্রেও ৮০/২০ নীতি প্রয়োগযোগ্য। এর অর্থ, যে ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী উপাদান আপনার লক্ষ্য অর্জনে বাধা সৃষ্টি করছে সেগুলো অভ্যন্তরীণ সমস্যা। সেগুলোর অবস্থান আপনার অস্তিত্বের মধ্যে—যেমন আপনার ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য, সামর্থ্য, অভ্যাস, শৃঙ্খলাবোধ অথবা যোগ্যতা। অথবা এমনও হতে পারে এই ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা বা সমস্যাগুলো আপনার প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির মধ্যে বিদ্যমান।
কেবল ২০% প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী উপাদান আপনার অথবা আপনার প্রতিষ্ঠানের বাইরে অবস্থান করে। এছাড়াও শতকরা ২০ ভাগ সীমাবদ্ধতা বাহ্যিক প্রতিযোগিতা, বাজার পরিস্থিতি, সরকারি নীতি অথবা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান দ্বারা সৃষ্টি হতে পারে। আবার, আপনার প্রধান সীমাবদ্ধতাটি ক্ষুদ্র আকারের কিছু হতে পারে যাকে স্পষ্টভাবে দেখা যায় না।
কখনো কখনো আপনার কর্মপ্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপের একটি তালিকা তৈরি করা আবশ্যক—যাতে প্রত্যেকটি পদক্ষেপ পর্যালোচনা করে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নির্ধারণ করা যায় কোন বিষয়টি আপনাকে পেছনের দিকে টেনে রাখছে। মাঝে মাঝে গ্রাহকদের পক্ষ থেকে সৃষ্টি হওয়া একটি মাত্র নেতিবাচক ধারণা বা আপত্তি—সমগ্র বিক্রয় প্রক্রিযার মাঝে স্থবিরতা তৈরি করতে পারে। আবার এটাও বাস্তব যে, একটিমাত্র গুণগত বৈশিষ্ট্যের অভাবের কারণে কোন পণ্য বা সেবার সার্বিক প্রসার ব্যাহত হচ্ছে।
সততার সাথে আপনার কোম্পানির কার্যক্রম পর্যালোচনা করুন। আপনার বস, সহকর্মী এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের কর্মকা- বিশ্লেষণ করে দেখুন তাদের মাঝে কোন গুরুত্ব সীমাবদ্ধতা রয়েছে কিনা—যার প্রভাবে আপনার ও আপনার প্রতিষ্ঠানের উন্নতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং আপনার প্রধান লক্ষ্যগুলো অর্জিত হচ্ছে না।

নিজেকে পর্যালোচনা করুন
সফল ব্যক্তিরা সবসময় তাদের সীমাবদ্ধতা বিষয়ক বিশ্লেষণ আরম্ভ করে একটি প্রশ্নের মাধ্যমে, ‘আমার নিজের মধ্যে এমন কী ত্রুটি রয়েছে যার কারণে আমি পিছিয়ে থাকছি?’ তারা তাদের নিজেদের ভুলত্রুটির সম্পূর্ণ দায়িত্ব স্বীকার করেন এবং নিজেদের মধ্যে তাদের সমস্যার কারণ ও প্রতিকার সন্ধান করেন।
আপনার মাঝে সেই সততা থাকতে হবে যার সাহায্যে নিজের অভ্যন্তরে গভীর অনুসন্ধান করে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টিকারী উপাদান অথবা দক্ষতার অভাব চিহ্নিত করতে পারেন, যেগুলো আপনার লক্ষ্য অর্জনের গতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। সর্বদা এই প্রশ্ন করা অব্যাহত রাখুন, ‘কোন বিষয়গুলো আমার কাক্সিক্ষত ফলাফল লাভের গতিকে প্রভাবিত করছে?’

ত্রুটিহীন হওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করুন
আপনার সীমাবদ্ধতার প্রকৃতি বা ধরন শনাক্ত করে—কোন কৌশলে আপনি একে নির্মূল করবেন? সীমাবদ্ধতাকে সঠিকভাবে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হলে অথবা যদি আপনি এ কাজে ভুল করেন, তাহলে আপনি ভুল পথে চালিত হবেন। তখন আপনি ভুল সমস্যা সমাধানের সচেষ্ট হবেন।
আমার খদ্দের—বড় একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বিক্রির পরিমাণ নিম্নগামী হয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালকবৃন্দ এমন ধারণা করলেন যে, তাদের বিক্রি নিম্নগামী হওয়ার কারণ বিক্রয়কর্মীদের অদক্ষতা এবং বিক্রয় ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি পুনর্গঠনে এবং বিক্রয়কর্মীদের পুনঃপ্রশিক্ষণে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করলেন।
কিন্তু পরবর্তী সময় তারা আবিষ্কার করলেন তাদের বিক্রি কমে যাওয়ার মূল কারণ ছিল হিসাবরক্ষকের ভুল। এই হিসাবরক্ষক, বাজারের প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে তাদের পণ্যের মূল্য উচ্চ হারে নির্ধারণ করেছিল। প্রতিষ্ঠানটি তাদের পণ্যের দাম পুনঃসমন্বয় করার পর বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধি পেল এবং মুনাফা অর্জন আগের মতো লাভজনক হল।
যখন একটি বাধা সফলভাবে শনাক্ত ও নির্মূল করা হয়, তখন অপর একটি প্রতিবন্ধকতার আবির্ভাব ঘটে। আপনি সকালে সঠিক সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে পারেন অথবা একটি সফল কর্মজীবন গড়ে তুলতে পারেন, কিন্তু আপনার জীবনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী উপাদানগুলো আবির্ভূত হতেই থাকবে—মানে সমস্যা জীবনে থাকবেই—যার প্রভাবে আপনার অগ্রগতি ব্যাহত হবে। আপনার দায়িত্ব হচ্ছে সেগুলো শনাক্ত করে যতটা সম্ভব দ্রুত নির্মূল করার ব্যাপারে একাগ্র মনোযোগ দেয়া।
একটি গুরুত্বর সীমাবদ্ধতা অপসারণের মাধ্যমে দিনের সূচনা করতে পারলে আপনি নিজের মধ্যে অধিক কর্মোদ্দীপনা এবং আত্মিক শক্তি অনুভব করবেন। এই উদ্দীপনা সাবলীল গতিতে আপনাকে কাজ সম্পাদনে অগ্রসর করবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোন প্রধান বাধা নির্মূল করা—একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাঙ খাওয়ার তৃপ্তি দান করে।

হাতেকলমে কাজ করুন
১। আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য কী—তা আজই শনাক্ত করুন। এর প্রকৃতি কী? বিশেষ করে, কোন ১টি লক্ষ্য অর্জিত হলে আপনার জীবনে তা শ্রেষ্ঠ ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে? পেশাগত ক্ষেত্রে কোন ১টি অর্জন আপনার কর্মজীবনে শ্রেষ্ঠ ইতিবাচক ফলাফল সৃষ্টি করবে?
২। ১টি অভ্যন্তরীণ অথবা বাহ্যিক প্রতিবন্ধকতাকে চিহ্নিত করুন যা আপনার লক্ষ্য অর্জনের গতিকে প্রভাবিত করছে। প্রশ্ন করুন, ‘ইতোমধ্যেই কেন আমি আমার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি? আমার মধ্যে বিরাজমান কোন বৈশিষ্ট্যটি আমাকে পিছু টানছে?’ উত্তর যাই হোক, দ্রুত এর ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিন। কিছু করুন। যাই করেন না কেন, আরম্ভ করতে বিলম্ব করবেন না।


 



অধ্যায় তেরো

নিজের ওপর চাপ সৃষ্টি করুন
“সাফল্য অর্জনের প্রথম শর্ত হল—ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত না হয়ে যেকোন একটি সমস্যার প্রতি অবিরামভাবে আপনার সর্বাত্মক শারীরিক ও মানসিক শক্তি প্রয়োগ করার সামর্থ্য।”—টমাস আলভা এডিসন

পৃথিবীতে এমন বহু মানুষ আছে যাদের ধারণা—অন্য কেউ এসে তাদের কাক্সিক্ষত স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ প্রদর্শন করবে। কিন্তু সমস্যা হল এ ধরনের উদ্ধারকারী আগমনের আদৌ কোন সম্ভাবনা নেই। এ জাতীয় ব্যক্তিরা এমন রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাস ধরার জন্য অপেক্ষা করছে—যে পথে কোন বাস চলাচল করে না। যদি তারা নিজেদের জীবনকে সমৃদ্ধ করার দায়িত্ব নিজেরাই গ্রহণ না করে এবং নিজেদের ওপর চাপ সৃষ্টি না করে, তাহলে হয়তো আজীবন তাদের অপেক্ষাই করে যেতে হবে। আর বেশিরভাগ মানুষের জীবনে এমনটাই ঘটে।
কোন ধরনের তদারকি ছাড়া মাত্র ২ শতাংশ মানুষ সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে কাজ করতে সক্ষম। তাদের আমরা ‘নেতা’ উপাধি প্রদান করি। এ ধরনের ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার চেষ্টাই আপনাকে করতে হবে এবং আপনার পক্ষে সেটা সম্ভবও, যদি আপনি স্বনির্ভর ব্যক্তিতে পরিণত হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আপনার মধ্যে বিদ্যমান পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য নিজের ওপর চাপ সৃষ্টির অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং তা করার জন্য অন্য কারও অপেক্ষায় থাকলে চলবে না। আপনার ব্যাঙ আপনাকেই বেছে নিতে হবে এবং গুরুত্বের ক্রমানুসারে সেগুলো ভক্ষণ করতে হবে।

নিজ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিন
নিজেকে একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসাবে কল্পনা করুন। নিজের যোগ্যতা বৃদ্ধি করুন। নিজের কাজ ও স্বভাবের যে মানদ- আপনি নির্ধারণ করবেন—তা অন্য কারও দ্বারা নির্ধারিত মানের তুলনায় উৎকৃষ্ট হতে হবে।
নিছক কৌতূহলবশত স্বাভাবিক সময়ের কিছুটা আগে কাজ আরম্ভ করুন, একটু বেশি পরিশ্রম করুন এবং কিছুটা বেশি সময় কাজ করুন। সর্বদা একটু বাড়তি দক্ষতা প্রদর্শনের উপায় সন্ধান করুন, যে পারিশ্রমিক আপনাকে দেয়া হয় তার তুলনায় কিছুটা বেশি কাজ করুন।
মনোবিজ্ঞানী নেথানিয়েল ব্র্যান্ডেন বলেছেন, মানুষের আত্মসম্মানবোধ হল, ‘ব্যক্তি নিজেকে যে সুনামের অধিকারী বলে মনে করে।’ আমরা যা কিছু করি অথবা করতে ব্যর্থ হই—তার মাধ্যমে এই সুনাম বৃদ্ধি পায় অথবা ক্ষুণœ হয়। সুসংবাদ হল, তখনই নিজেদের সম্পর্কে আমাদের মাঝে সুখানুভূতি তৈরি হয়, যখন আমরা নিজেদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য প্রয়োগের জন্য নিজেদের ওপর চাপ সৃষ্টি করি। আপনার আত্মসম্মান তখনই বৃদ্ধি পায়—যখন আপনি সেই সীমা অতিক্রম করেন—যে পরিস্থিতিতে একজন গড়পড়তা ব্যক্তি হাল ছেড়ে দেয়।

কাল্পনিক সময়সীমা নির্ধারণ করুন
সময়ের অপচয় রোধ করার এবং দ্রুততম সময়ে অধিক কাজ সমাপ্ত করার একটি শ্রেষ্ঠ উপায় হল এমনভাবে কাজ করা—যেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো শেষ করার জন্য আপনার হাতে মাত্র একদিন সময় রয়েছে।
প্রতিদিন কল্পনা করুন—এইমাত্র আপনি একটি জরুটি নির্দেশনা পেয়েছেন যে—কালই আপনাকে এক মাসের জন্য শহর ছেড়ে বাইরে যেতে হবে। যদি আপনাকে এক মাসের জন্য শহরের বাইরে যেতে হয়, তাহলে এর আগে কোন কাজটি সমাপ্ত করা আপনার জন্য অপরিহার্য? এই প্রশ্নের উত্তর যা হবে, এখনই সেই কাজটি আরম্ভ করে দিন।
নিজের ওপর চাপ সৃষ্টির আরেকটি উপায় হল কল্পনা করা, পুরস্কার হিসাবে একটি চমৎকার পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণের সার্বিক ব্যয়সহ আপনার জন্য ছুটি বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে শর্ত হল, আপানকে আগামীকাল সকালেই এই ছুটি কাজে লাগাতে হবে, তা না হলে এই সুযোগ অন্য কাউকে দেয়া হবে। এমন পরিস্থিতিতে কর্মস্থল ত্যাগের পূর্বে কোন কাজটি সমাপ্ত করা আবশ্যক বলে আপনি মনে করেন—যদি ছুটিতে যেতে চান? তা যাই হোক, এই মূহূর্তে সেই কাজটি আরম্ভ করে দিন।
 
সফল ব্যক্তিরা অল্প সময়ে অধিক কাজ সম্পাদনের জন্য বিরামহীনভাবে নিজেদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। পক্ষান্তরে, অসফল ব্যক্তিদের কর্মসম্পাদনের জন্য অন্যরা চাপ দেয় এবং নির্দেশনা প্রদান করে।
নিজের ওপর চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে আপনি অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি কাজ উৎকৃষ্টভাবে সম্পাদন করতে পারবেন দ্রুততার সাথে। আপনি একজন উচ্চ কার্যকারিতা সম্পন্ন অধিক ফলাফল অর্জনকারী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। নিজের সম্পর্কে আপনার মধ্যে অসাধারণ অনুভূতি সৃষ্টি হবে, ধাপে ধাপে আপনার দ্রুত কর্মসম্পাদনের অভ্যাস গড়ে উঠবে এবং বাকি জীবনটা আপনি এর সুফল ভোগ করবেন।

হাতেকলমে কাজ করুন
১। প্রতিটি কাজকর্ম শেষ করার জন্য সময়সীমা দিন। সময়সীমা বড় হলে, ছোট ছোট আকারে দৈনিক ও সাপ্তাহিক সময়সীমা তথা উপ-সময়সীমা নির্ধারণ করুন। নিজের ওপর চাপ সৃষ্টির অভ্যাস গড়ে তুলুন। একে ‘নিজের ওপর বলপ্রয়োগ’ বলতে পারেন। আপনার সীমাবদ্ধতাগুলো অপসারণ করুন এবং লক্ষ্য রাখুন কর্মসম্পাদনে যাতে গাফিলতি না হয়। একবার সময়সীমা নির্ধারণ করার পর তা অপরিবর্তিত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকুন এবং সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই কর্ম সম্পাদনে সচেষ্ট হোন।
২। সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ অথবা প্রকল্প আরম্ভের আগে সেগুলোর প্রতিটি ধাপ লিপিবদ্ধ করে নিন। ধাপগুলো সমাপ্ত করতে আপনার কত মিনিট এবং ঘণ্টা ব্যয় হবে তা নির্ধারণ করুন। তারপর সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ চালিয়ে যান। নিজের নির্ধারিত সময়সীমাকে পরাজিত করুন। এটা অনেকটা নিজের সাথে নিজে প্রতিযোগিতা করার মতো। সমস্ত কর্ম-প্রক্রিয়াকে একজন ক্রীড়াবিদের মতো মোকাবিলা করুন এবং বিজয় হওয়ার সংকল্প নিন।




অধ্যায় চৌদ্দ

নিজেকে কর্মতৎপর হতে প্ররোচিত করুন
“ রোমাঞ্চকর অভিযান ও চূড়ান্ত বিজয়ের প্রবল অনুপ্রেরণা এবং সৃজনশীল কর্মসম্পাদনের উদ্দীপনাতেই মানুষ সর্বোচ্চ আনন্দের সন্ধান পায়।”—এন্টোয়ান ডি সেইন্ট-এক্সুপরি

কর্মসম্পাদনে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য আপনাকে নিজেই নিজের উৎসাহদাতা হতে হবে। আপনার প্রশিক্ষণের জন্য আপনাকেই রুটিন তৈরি করতে হবে এবং আপনার খেলায় শীর্ষস্থান অধিকারের জন্য নিজেকে উৎসাহ দিতে হবে।
প্রতিক্ষণে আপনি যা কিছু চিন্তা করেন, তার দ্বারা আপনার মাঝে ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক আবেগ তৈরি হয়।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন