১৮৯৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্বামী বিবেকানন্দ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে আয়োজিত বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে বক্তৃতা দেন।
১৫ সেপ্টেম্বরের সভায় প্রত্যেক সদস্য নিজ নিজ ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে পরস্পরের সঙ্গে প্রায় কলহের পরিবহ সৃষ্টি করেছিলেন। তাদের মুখ বন্ধ করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। একটি ছোট্ট গল্প দিয়ে। (ছবির মাধ্যমে 'কুয়োর বাইরে চিন্তা কর' গল্পকে প্রকাশ করা হল।)
এক কুয়োর মধ্যে থাকত এক ব্যাঙ। একদিন একটা সমুদ্রের ব্যাঙ কী করে কে জানে সেই কুয়োটার সামনে এল।
কুয়োর ব্যাঙ : কোথা থেকে আসা হচ্ছে?
সমুদ্রের ব্যাঙ : সমুদ্র থেকে।
কুয়োর ব্যাঙ : সমুদ্র? সে কত বড়? আমার এ কুয়োর মতো বড়?
বলে কুয়োর ব্যাঙ কুয়োর এক ধার থেকে অন্য ধারে এক লাফ দিল।
সমুদ্রের ব্যাঙ : আরে ভাই, তুমি এ ছোট্ট কুয়োর সঙ্গে সমুদ্রের তুলনা করছ কী করে?
শুনে কুয়োর ব্যাঙ আরও বড় এক লাফ দিয়ে জিজ্ঞেস করল : সমুদ্র কি এত বড়?
সমুদ্রের ব্যাঙ : সমুদ্রের সঙ্গে কুয়োর তুলনা করে তুমি কী মূর্খের মতো প্রলাপ বকছ!
কুয়োর ব্যাঙ : আমার কুয়োর মতো এত বড় আর কিছুই হতে পারে না। এ পৃথিবীতে এরচেয়ে বড় আর কিচ্ছু নেই। এ নিশ্চয়ই মিথ্যাবাদী, একে তাড়িয়ে দাও।
স্বামী বিবেকানন্দ আরও বলেন, হে ভ্রাতৃগণ, এইরূপ সংকীর্ণ ভাবই আমাদের মতভেদের কারণ। আমি একজন হিন্দু -আমি আমার নিজের ক্ষুদ্র কূপে বসিয়া আছি এবং সেটিকেই সমগ্র জগৎ বলিয়া মনে করিতেছি! খ্রীষ্টধর্মাবলম্বী তাঁহার নিজের ক্ষুদ্র কূপে বসিয়া আছেন এবং সেটিকেই সমত্র জগৎ মনে করিতেছেন! মুসলমানও নিজের ক্ষুদ্র কূপে বসিয়া আছেন এবং সেটিকেই সমগ্র জগৎ মনে করিতেছেন! হে আমেরিকাবাসিগণ, আপনারা যে আমাদের ক্ষুদ্র জগৎগুলির বেড়া ভাঙিবার জন্য বিশেষ যত্নশীল হইয়াছেন, সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ দিতে হইবে। আশা করি, ভবিষ্যতে ঈশ্বর আপনাদের এই মহৎ উদ্দেশ্য-সম্পাদনে সহায়তা করিবেন।