কিউপিডের চুম্বনে সাইকির পুনর্জাগরণ
ভাস্কর : আন্তোনিও কানোভা
প্রথম প্রদর্শন : ১৭৮৭ - ১৭৯৩
|
এই ঘটনাটি উল্লেখ করেন লেখক জর্জ ক্যারি ইগলেস্টন। সিঙ্গার ফেইলরের বিরাট অট্টালিকায় একবার এক ভোজসভার আয়োজন হয়। এই ভোজসভার আয়োজন করে বিরাট এক কোম্পানি। ভোজসভার ঠিক আগ মুহূর্তে খাবারের পরিচালককে জানানো হল যে কেউ একজন মূল খাবারটি নষ্ট করে ফেলেছে। পরিচালকের তো মৃতপ্রায় অবস্থা।
সেখানে রান্নাঘরে কাজ করছিল এক বালক। সে বলল, ‘আপনি যদি অনুমতি দেন তবে আমি এমন কিছু বানাতে পারি যা দেখে সকলে খুশি হবে।’
পরিচালক : তুমি! তুমি কে?
বালক : আমার নাম আন্তোনিও কানোভা, ভাস্কর পিসানোর নাতি।
পরিচালক : (একটু দ্বিধা নিয়ে) তুমি কী বানাতে পার?
আন্তোনিও : এমন কিছু যা টেবিলের মধ্যমণি হবে, যদি আপনি আমাকে চেষ্টা করার অনুমতি দেন।
তখন ভোজসভা আরম্ভ হতে খুব একটা সময়ও ছিল না। পরিচালক অনেকটা দ্বিধা নিয়েই আন্তোনিওকে বলল, ‘দেখ কী করতে পার।’ আন্তোনিও কিছু ঘি নিয়ে সেগুলোকে একত্রে মিশিয়ে একটি শুয়ে থাকা সিংহের ভাস্কর্য তৈরি করল এবং একে খাবার টেবিলের মাঝখানে সাজান হল।
ভোজসভায় ছিল ভেনিসের বড় বড় ব্যবসায়ী, রাজকুমার ও সংসদ সদস্যরা। তারা খাবার ঘরে ঢুকে সেই শায়িত সিংহকে দেখে তাজ্জব হয়ে গেল। তাদের মধ্যকার অনেকেই শিল্পসাহিত্যের চর্চাকারী। এমন অসাধারণ কাজ দেখে তাঁরা চোখ ফেরাতে পারল না। তারপর উপস্থিত অতিথিবৃন্দ সিঙ্গার ফেইলরকে জিজ্ঞেস করল, ‘ঘিয়ের মতো ক্ষণস্থায়ী জিনিসের ওপর কে এই অসাধারণ কর্ম করেছে?’ ফেইলর উত্তর দিতে পারলেন না। তিনি তাঁর খাবার পরিচালককে ডাকলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন। পরিচালক আন্তোনিওকে সাথে করে নিয়ে এলেন।
অতিথিরা যখন বুঝতে পারলেন একজন রান্নাঘরের সাধারণ কর্মচারী এই অসাধ্য কাজ করেছে তখন তাঁরা হতবাক হলেন। গৃহকর্তা ফেইলরের কাজটি এত পছন্দ হয় যে তিনি সকলের সামনে ঘোষণা করেন আন্তোনিওকে তিনি সবচেয়ে ভালো ভাস্কর্য শিক্ষকের কাছে পাঠাবেন এবং তার সব ধরনের শিক্ষা ব্যয় বহন করবেন। তিনি তাঁর কথা রেখেছিলেন।
আন্তোনিও কানোভা
আত্মপ্রতিকৃতি : ১৭৯২
জীবনকাল : ১৭৫৭ - ১৮২২
|
আন্তোনিও তাঁর সৌভাগ্য দ্বারা বখে যাননি। তাঁর হৃদয়ে সেই একই বালকসুলভ সহজসরলতা, বিশ্বস্ততা ও পরিশ্রম করার মানসিকতা রয়ে যায়। তিনি বাল্যকালে যেমন কঠোর পরিশ্রম করতেন, পরবর্তী সময়েও তিনি একইভাবে পরিশ্রম করে যান। অনেকে হয়তো আন্তোনিও’র প্রথমবার সুযোগ তৈরি করার ঘটনা শোনেননি। কিন্তু অনেকেই বিশ্ববিখ্যাত ভাস্কর কানোভার নাম শুনেছে।
সুযোগ পাওয়া যায় না, তৈরি করতে হয়। দুর্বল মানুষ সুযোগের অপেক্ষায় বসে থাকে আর দৃঢ়চেতা মানুষ সুযোগ তৈরি করে। সুযোগ তৈরি করতে সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। আন্তোনিও কানোভা তাঁর সুযোগ দেখলেন এবং সাহস নিয়ে এগিয়ে গেলেন।
তথ্যসূত্র :
১। https://bn.m.wikipedia.org/wiki/সাইকি
২। https://en.m.wikipedia.org/wiki/Psyche_Revived_by_Cupid's_Kiss
৩। https://en.m.wikipedia.org/wiki/Antonio_Canova
৪। https://en.m.wikipedia.org/wiki/Luigi_Lablache
৫। https://en.m.wikipedia.org/wiki/George_Cary_Eggleston