আমরা সকলেই জানি যে অভ্যাস আমাদের জীবনে
সাফল্য অর্জনে আমাদেরকে হয় সাহায্য করবে নাহয় ধ্বংস করবে। খারাপ অভ্যাসগুলো যেমন
আপনাকে দ্রুত ধ্বংসের প্রতি ধাবিত করে তেমনি ভালো অভ্যাসগুলো আপনাকে একটি
সাফল্যমণ্ডিত জীবন অর্জনের প্রতি এগিয়ে নিয়ে যাবে। একটি কাজে পূর্ণ এবং
কৃতিত্বসম্পন্ন কাজে ভরপুর একটি জীবন গঠনে কেবলমাত্র ভালো অভ্যাসগুলোই আপনাকে
সাহায্য করতে পারে।
যদি আপনি কোন একজন সফল পুরুষকে সম্মানের চোখে
দেখেন তবে তাকে বিশ্লেষণী দৃষ্টিতে দেখুন, কিভাবে তিনি তার প্রতিদিনকার জীবন যাপন
করে যা তার জীবনের একটি নির্দিষ্ট স্বপ্ন পূরণের প্রতি এগিয়ে নিচ্ছে। ইহার মানে এই
নয় যে তারা প্রতিটি কাজ পূর্ণাঙ্গভাবে করে বা তারা ত্রুটিহীন – কারণ কেউই
ত্রুটিহীন নয় – কিন্তু জিনিসগুলো বা তাদের কাজগুলো মাঝে মাঝে ত্রুটি যুক্ত হলে
তারা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যায়। এই ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয় প্রতিদিনকার
অভ্যাসগুলো দ্বারা, নিয়মিত ইতিবাচক চিন্তা দ্বারা।
এখন আমরা যখন সাফল্যমণ্ডিত লোকজনকে অধ্যয়ন
করবো, একটি বিষয়ে নিশ্চিত জানবেন যে যদি এই সূত্রগুলো আপনি নিজ জীবনে কাজে না
লাগান তবে এগুলো বৃথা এবং কোন ফলই বয়ে আনবে না। তাই আসুন আমরা সাফল্যমণ্ডিত
লোকজনের ৫টি প্রতিদিনকার অভ্যাসগুলো সম্বন্ধে জানি এবং এগুলো নিজ জীবনে প্রয়োগ করে
নিজেরাও সাফল্যমণ্ডিত লোকজনের খাতায় নিজেদের নাম লিখাই।
১। সাফল্যমণ্ডিত লোকজন তাদের দিনের পরিকল্পনা
পূর্বের রাতেই তৈরি করে রাখে।
ইহা খুবই সহজ পথ থেকে সরে যাওয়া যদি আপনি একটি
পথ পরিকল্পনা না করে থাকেন। পরিকল্পনা ব্যতীত আপনার দিনটি এমন যে আপনি সকালে ঘুম
থেকে উঠেছেন কিন্তু আপনি জানেন না আপনি আজ কি কাজ সম্পন্ন করবেন। সাফল্যমণ্ডিত
লোকজন অল্প সময় ব্যয় করে রাতের বেলায় তাদের পরবর্তী দিনের পরিকল্পনা করেন,
আগামীকাল কি কাজগুলো করবেন তার একটি তালিকা তৈরি করেন এবং পরবর্তী দিন সেই
পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেন।
জীবন হয়ত সবসময় পরিকল্পনা মতন চলবে না কিন্তু
একটি পরিকল্পনা থাকলে, আপনি সময় নষ্ট না করেই আপনার মূল্যবান সময়কে কাজে লাগাতে
পারবেন।
২। সাফল্যমণ্ডিত লোকজন নিজেদেরকে অনুপ্রাণিত
রাখার জন্য বই পাঠ করে।
বই সাফল্য অর্জনের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ
একটি উপাদান। একটি বই প্রচুর পরিমাণ উপাদান ধারণ করে যাতে একজন ইহা থেকে নিজের
জন্য যথেষ্ট পরিমাণ অনুপ্রেরণা নিতে পারে। আপনি প্রতিদিন ১ ঘণ্টা থেকে ৪ ঘণ্টা
পর্যন্ত সময় বই পাঠ করে কাজে লাগাতে পারেন। যদিও এমন কোন নির্দিষ্ট সময় নেই তবে
আপনার পছন্দ মতন সময় বেছে নিয়ে নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে বই পাঠ করতে পারেন।
৩। সাফল্যমণ্ডিত লোকজন নিজেদের স্বাস্থ্যকে
অগ্রাধিকার দেন।
আপনি কি খান এবং কতটা সময় ব্যায়াম করেন ইহা
আপনার জীবনের প্রতিটি দিকেই প্রভাব ফেলে। সাফল্যমণ্ডিত লোকজন তাদের ব্যায়ামকে
স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য এবং নিজেদের জীবন আনন্দে কাটানোর একটি পূর্বশর্ত বলে মনে
করেন। পরিমিত, পুষ্টিকর খাবার এবং নিয়মিত ব্যায়াম আপনার ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে
এবং বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
৪। সাফল্যমণ্ডিত লোকজন অন্যান্য লোকজনের কাজ
দেখে বিভ্রান্ত হয় না।
যখন আপনি সাফল্যমণ্ডিত লোকজনকে অধ্যয়ন করবেন তখন
একটি ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। আপনি একজন সফল পুরুষকে বিশ্লেষণ করছেন তার কাছ থেকে
শিখার জন্য, ভালো অভ্যাসগুলো জানার জন্য, এমন কোন সূত্র যা তিনি কাজে লাগিয়ে সফল
হয়েছেন সেই সূত্র আপনার নিজের কাজে লাগানোর জন্য কিন্তু কখনই নিজের সাথে তুলনা
করবেন না। আপনার কাজ আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইহা সর্বদা স্মরণ রাখবেন। কিন্তু
আপনি যদি তাদের গল্পগুলো থেকে অনুপ্রেরণা না নেন তবে আপনি হিংসা, হতাশা, নিজের
কাজকে মূল্যহীন বিবেচনা করবেন।
সাফল্যমণ্ডিত লোকজন ইহা অনুধাবন করে যে তাদের
যাত্রা অসাধারণ এবং ইহা তুলনার যোগ্য নয়। তাই তারা তুলনার ফাঁদে আটকে যায় না এবং
তাদের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের প্রতি মনোযোগী থাকেন।
৫। সাফল্যমণ্ডিত লোকজন তাদের প্রতিদিন যাপন
করেন যেন ইহা তাদের শেষদিন।
জীবন ব্যস্ত এবং জটিল। তাই আপনাকে আপনার একটি
নির্দিষ্ট লক্ষ্যের প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। আপনার আজকের কাজগুলো আজই শেষ
করুন এবং ইহার জন্য নিজেকে ধন্যবাদ দিন। এইভাবে প্রতিদিন পরিকল্পনা মতন কাজ
সম্পন্ন করে নিজেকে ধন্যবাদ দিলে আপনার মাঝে কৃতজ্ঞতা বোধ তৈরি হবে এবং আপনার
নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে।
আপনার জীবনের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য হয়ত অনেক
বড় হতে পারে এবং ইহা নিয়ে চিন্তা করতে হতাশা অনুভব হতে পারে। তাই এই নির্দিষ্ট
লক্ষ্যকে ছোট ছোট আকারে ভাগ করুন এবং প্রতিদিন এই ছোট কাজগুলো সম্পাদন করে এগিয়ে
যান। আপনার জীবনে সাফল্য অর্জন করুন এই কামনায় ঠিক ধারণা।
তথ্য সহযোগিতায় – Success Magazine.