বর্তমান উপমহাদেশীয় ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে “ভারতীয় আধিপত্যবাদ” একটি আলোচিত বিষয়। এই আধিপত্যবাদ শুধু সামরিক কিংবা অর্থনৈতিক নয়—এটা সাংস্কৃতিক, কূটনৈতিক এবং ধর্মীয় রাজনীতির মধ্যেও ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। এই প্রেক্ষাপটে ইসলামের রাজনীতি এক ধরনের বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রতিরোধের ভাষা হিশাবে আবির্ভূত হয়েছে। এই ব্লগে আমরা বিশ্লেষণ করব—ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের রাজনীতি কীভাবে অবস্থান নেয় এবং এর তাৎপর্য কী।
ভারতীয় আধিপত্যবাদ কী?
ভারত রাষ্ট্র নিজেকে দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্রীয় শক্তি হিশাবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে কাজ করে। এর মধ্যে রয়েছে—
প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ,
সীমান্ত বিবাদকে দীর্ঘস্থায়ী করে রাখা,
সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে ‘হিন্দুত্ব’-কেন্দ্রিক পরিচয় চাপিয়ে দেওয়া,
মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে নিপীড়ন চালানো (যেমন: কাশ্মীর)।
এই আধিপত্যবাদ শুধু কূটনৈতিক কৌশল নয়; বরং এটা একটা আদর্শগত আগ্রাসনও বটে।
ইসলামের রাজনীতি: ন্যায়ের ভিত্তিতে প্রতিরোধ
ইসলামের রাজনীতির অন্যতম ভিত্তি হলো আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, ইনসাফ এবং জুলুমবিরোধিতা। ভারতীয় আধিপত্যবাদকে ইসলাম একটি অন্যায্য, জুলুমপূর্ণ, এবং ‘তাগুতী শক্তি’ হিশাবে দেখে থাকে। ফলে এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে অবস্থান নেওয়াকে ইসলামী দায়িত্ব হিশাবে গণ্য করা হয়।
কাশ্মীর: একটি প্রতিরোধের প্রতীক
কাশ্মীর ভারতের আধিপত্যবাদের অন্যতম শিকার। ৩৭০ ধারা বাতিলের পর কাশ্মীর কার্যত একটি সামরিক বন্দিশিবিরে পরিণত হয়েছে। ইসলামী রাজনীতি কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের দাবিতে সরব থাকে। অনেক ইসলামী দল ও চিন্তাবিদ এই ইস্যুকে মুসলিম উম্মাহর একতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিশাবে বিবেচনা করেন।
হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ
ভারতের রাজনৈতিক কাঠামোতে ‘হিন্দুত্ববাদ’ এখন একটি রাষ্ট্রীয় আদর্শে রূপ নিচ্ছে। এতে মুসলিমদের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে। গোহত্যা, লাভ জিহাদ, মসজিদ ধ্বংস—এসব ঘটনার বিরুদ্ধে ইসলামী রাজনীতি শুধু প্রতিবাদ নয়; বরং বিকল্প সমাজ গড়ার ডাক দেয়। এই রাজনীতি মুসলমানদের আত্মপরিচয় রক্ষা এবং নিজস্ব ধর্মীয় শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানায়।
মুসলিম উম্মাহর সংহতি
ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী ইসলামী রাজনীতি জাতীয়তাবাদকে অতিক্রম করে উম্মাহ সচেতনতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। কাশ্মীর, ফিলিস্তিন, রোহিঙ্গা, চেচনিয়া—যেখানেই মুসলিম নিপীড়িত, সেখানেই সংহতি প্রকাশ করে এই রাজনীতি। কারণ, আল কুরআন মতে:
“নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।”
- (সূরা হুজরাত, আয়াত ১০)
সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ ও শিক্ষার গুরুত্ব
বলিউড, হিন্দি ভাষার আগ্রাসন, বিকৃত ইতিহাস উপস্থাপন—এসব কৌশলে ভারত তার আধিপত্য বিস্তার করছে। ইসলামের রাজনীতি এসবের বিরুদ্ধে ইসলামী শিক্ষা, সাহিত্য, ইতিহাসচর্চা এবং মিডিয়া সচেতনতাকে গুরুত্ব দেয়। এর লক্ষ্য হলো আত্মপরিচয় রক্ষা ও বিকল্প মানসিকতা গড়ে তোলা।
ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী ইসলামের রাজনীতি কেবল রাজনৈতিক অবস্থান নয়—এটা একটা আদর্শ, একটা প্রতিরোধ এবং একটা ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ার পথ। এই রাজনীতি মুসলমানদের আত্মপরিচয়, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং আন্তর্জাতিক সংহতির বার্তা দেয়। ভারতের আধিপত্যবাদী কৌশলের বিপরীতে এটা এক শক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তিক ও আদর্শিক প্রতিরোধ হিশাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে—যদি মুসলিম সমাজ এই রাজনীতিকে বোঝে, গ্রহণ করে এবং বাস্তবায়নে সচেষ্ট হয়।