ছোট গল্প: বিনয়ী হোন

ছবিসূত্র: চ্যাট জিপিটি (এআই) দিয়ে ছবিটি তৈরি করা হয়েছে


কুষ্টিয়ায় এক বৃদ্ধ থাকতেন। তিনি তার ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি তার শান্ত স্বভাব ও সুন্দর মেজাজের জন্য সকলের কাছে প্রিয় ছিলেন। কোনকিছুই তাকে বিরক্ত করতে পারত না। তিনি সদা শান্তচিত্তে সকলের কথা শুনতেন এবং সকলের সাথে সদ্বব্যবহার করতেন। এমনকি তাকে অনেক জ্বালাতন করলেও তিনি বিশেষ উচ্চবাচ্য করতেন না। ফলে যদিও তিনি সকলের সুপরিচিত, কিন্তু তবুও সবাই তার এই সহজ সরল শান্তচিত্তে চলাফেরা দেখে খুব অবাক হতো এবং অনেকেই তার ব্যাপারে বেশ কৌতুহলী হয়ে উঠল।

একদিন কিছু তরুণ ছেলেপেলে, একটু বখাটে আরকি। তারা চিন্তা করলো দাঁড়া বুড়োকে মজা দেখাব। দেখব রাগ না করে কী করে থাকে! তারা এক দুর্বৃত্তের শরণাপন্ন হলো। তারা তাকে বুড়োর ব্যাপারে বুঝিয়ে বলল। সে যদি বুড়োকে রাগাতে পারে তবে তাকে $৫০০ দেওয়া হবে বলে চুক্তি হলো।

বৃদ্ধ লোকটি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা পদ্মা নদীতে গোসল করত। তিনি প্রতিদিনই এই কর্ম সারতেন। অন্যদিনের মতো আজকেও তিনি সকাল সকাল গোসল করার জন্য নদীমুখে রওনা দিলেন। আর বখাটেগুলো ঝোপঝাড়ের আড়ালে মজা দেখার জন্য বসে গেল। বৃদ্ধ লোকটি যখন ¯œান শেষ করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন সেই দুর্বৃত্ত তাকে লক্ষ করে একটি পঁচা ডিম তার মুখে ছুঁড়ে মারে। বৃদ্ধ লোকটি কেবল একটু হাসলেন। তারপর আবার গোসল করতে ফিরে গেলেন। এরপর বৃদ্ধ যখন দ্বিতীয়বার বাড়ি ফিরে যাচ্ছিল তখন সেই দুর্বৃত্ত আবার সেই একই কাজ করল। এবারও তিনি মুচকি হেসে পুনরায় গোসল করতে গেলেন।

এভাবে প্রায় শতবার কেটে গেল। অবশেষে দুর্বত্ত তার এই জঘন্য কাজের জন্য অনুতপ্ত হলো। সে তার অনুশোচনা স্বরূপ লোকটির পায়ের কাছে গিয়ে পড়ল এবং ক্ষমা চাইল। আড়াল থেকে তরুণরাও বেরিয়ে এলো এবং বৃদ্ধের কাছে ক্ষমা চাইল।

এক বিস্মিত তরুণ যে চিন্তাই করতে পারছে না যে বৃদ্ধ এতটা ধৈর্যশীল কী করে হয়। সে বুড়োকে জিজ্ঞেস করলো, ‘দাদা, আপনি ঐ দুর্বৃত্তের এহেন মন্দ আচরণ কী করে সইলেন?’

বৃদ্ধটি প্রশান্তচিত্তে জবাব দিল...

প্রশ্ন:

১. বৃদ্ধ লোকটি কী জবাব দিল?

২. গল্পটি থেকে আমরা কী শিখলাম?


আমরা নিচে উত্তর দিয়ে দিচ্ছি। তবে উত্তরগুলো দেখার আগে আপনি নিজে নিজের উত্তরগুলো দিয়ে নিবেন। তারপরই কেবল আমাদের উত্তরগুলো দেখবেন।

উত্তর:

১. আরে বাছা, ও তো একটা শিশু।

২. আমরা যেমন সব শিশুকে ভালোবাসি, তাদের দুষ্টুমি বা ভুলের জন্যও তাদের প্রতি কোন বিদ্বেষ পোষণ করি না, তেমনি আমরা যদি এই পৃথিবীর সকলের প্রতি এমন বিরাগহীন ভালোবাসা পোষণ করতে পারি, তবেই আমরা সবচেয়ে বেশি খুশি হবো। এমন কোন ঘটনাই থাকবে না যা আমাদের রাগাতে পারে বা বিরক্ত করতে পারে। এই ধরনের সহ্যশক্তি অর্জন করা অবশ্য সহজ নয়। কিন্তু ব্যাপারটি অসম্ভবও নয়। এর জন্য দরকার নিয়মিত চর্চা ও অধ্যবসায়।


লেখকের অভিব্যক্তি

এই সময় আমি কহলিল জিব্রানের বই দ্য প্রফেট পড়ছিলাম। অনুবাদ ও অনুকথন অজিত মিশ্র। সেখানে আত্মজ্ঞান বিষয়ে লেখক বলছেন:


দিন ও রাত্রির গোপনতাকে

নীরবতায় জেনেছে তোমার হৃদয়।

কিন্তু তোমার কান তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে

হৃদয়ের জ্ঞান ভাষায় শুনবে বলে।

ভাবনায় যা জেনেছো

কথাতেও জানতে হবে তাকে।

স্বপ্নের নগ্ন-শরীর

স্পর্শ করো তোমার আঙুলে।


এতেই সমূহ মঙ্গল।

তোমার আত্মার গোপন ঝরনা

জেগে উঠতে চাইবে

সমুদ্রের দিকে ছুটে যেতে চাইবে কুলকুল স্বরে;

অনন্ত গভীরতার সম্পদ

তখনই খুলে যাবে তোমার চোখের সম্মুখে।

কিন্তু সেই অজানা সম্পদের পরিমাপ জানতে চেয়ে

কোনও দাঁড়িপাল্লা রেখো না;

কোনও কিছু দিয়ে মাপতে চেয়ো না তোমার জ্ঞানের গভীরতা

ছুঁতে চেয়ো না তাকে শব্দরেখা দিয়ে।

কেননা, তোমার তুমি তো সীমাহীন, পরিমাপহীন এক সমুদ্র।


বোলো না কখনও : আমি জেনেছি সমগ্র সত্যকে;

বরং বোলো : খুঁজে পেয়েছি এক সত্য!

বোলো না কখনও : আমি জেনেছি আত্মার পথ;

বরং বোলো : আমার পথে আত্মাকে হাঁটতে দেখেছি।

কেননা, আত্মা সমস্ত পথেই বিচরণশীল।

আত্মা তো চলে না এক রেখা বরাবর

অথবা বাড়ে না ঘাসের মতো সরলরেখায়Ñ

আত্মা নিজেকে উন্মোচিত করে

অসংখ্য পাপড়ির এক গোলাপের মতো ॥

ফজলে রাব্বি (Fazle Rabbi)

আমার জীবনের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৪টি অনুপ্রেরণামূলক বই প্রকাশ করা। saphollo.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন