বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২৩

15 lessons from The Art of Thinking Clearly by Rolf Dobelli + বুক রিভিউ

লেখক রল্ফ ডোবেল্লি রচিত ❝দ্য আর্ট অফ থিংকিং ক্লিয়ারলি❞ বই থেকে নেওয়া ১৫টি শিক্ষা:

১। কনফার্মেশন বায়াস তথা নিশ্চিতকরণ পক্ষপাত হচ্ছে সব ধরনের ভুল ধারণার জননী।
নতুন কোন তথ্যকে আমরা আমাদের বিদ্যমান জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পরিমাপ করি। বিদ্যমান তথ্যের ভিত্তিতে আমরা নতুন জ্ঞানকে সংজ্ঞায়িত করি। একেই বলে কনফার্মেশন বায়াস।

২। এমন বহু কাজ আছে যেখানে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম, অথচ কঠোর পরিশ্রম করা লাগে। এ ধরনের কাজ সম্পর্কে সাবধান।

এমন বহু কাজ আছে যেখানে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম, অথচ কঠোর পরিশ্রম করা লাগে। আসলে আমরা শুধু সফল লোকজনের ব্যাপারে শুনি। কিন্তু যারা ব্যর্থ হয় তাদের ব্যাপারে খুব একটা শোনা যায় না। পৃথিবীতে সাফল্যের হার ৩ থেকে ১ শতাংশ। তার মানে ব্যর্থ মানুষের হার ৯৭ থেকে ৯৯ শতাংশ।
৩। সামঞ্জস্যের বিপর্যয় (Calamity of Conformity).

আপনি যদি এমন কোন দলের মধ্যে গিয়ে পড়েন, যেখানে সবাই বসের সুরে সুর মিলাচ্ছে, হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলাচ্ছে, সেখানে কষ্ট হলেও আপনাকে মন খুলে কথা বলতে হবে। যদি আপনার দলের সঙ্গীরা আপনার কথা পছন্দ নাও করে, তবুও আপনাকে হক কথা বলতে হবে। এতে করে হয়তো আপনি সবার সাথে একমত হতে পারলেন না বলে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়বেন। কিন্তু তারপরও আপনাকে আপনার কথা বলতে হবে, যে কথা আপনার সঠিক মনে হয়, সেই কথা বলতে হবে।

৪। ইন্ডাকশন (Induction)।
মানুষের এটা প্রচলিত চিন্তাধারার মধ্যে পড়ে যে সে ইতিহাসের বা অতীতের উপর ভিত্তি করে, কোন ধরনের যৌক্তিক চিন্তার ধার না ধরে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।

৫। ক্ষতি এড়িয়ে চলার চেষ্টা (Loss Aversion)।

কিছু পাওয়ার চেয়ে কোনকিছু হারানোর ভয় মানুষকে বেশি অনুপ্রাণিত করে।

৬। চক্রবৃদ্ধি হার (Compound effect)।

যখন কোন বিষয়ে চক্রবৃদ্ধির ব্যাপারটা আসবে তখন আপনার স্বজ্ঞা, অনুমান বা মনে করেছিলাম এমন ধরনের চিন্তাধারার ওপর বিশ্বাস করবেন না। চক্রবৃদ্ধির ব্যাপারটা যে কতটা শক্তিশালী সেই ব্যাপারে আপনার কোন ধারণাই নেই।
৭। আপনি কী বলছেন তা নয়; বরং কীভাবে বলছেন তা গুরুত্বপূর্ণ।
কেউ যদি বলে এই পণ্য ৯৯% চর্বি মুক্ত। আর কেউ বলল, এই পণ্যে ১% চর্বি আছে। কোন কথাটা শুনতে আপনার ভালো লাগে। দুটো একই কথা। কিন্তু সাধারণত মানুষ ৯৯% চর্বি মুক্ত শুনলে মনে করে এটা স্বাস্থ্যকর।

৮। আপনি যদি সমাধানের অংশ না হন, তবে আপনি অবশ্যই সমস্যার একটা অংশ।

নিষ্ক্রিয় থাকার বা উদাস দর্শক হিসাবে থাকার কোন অবকাশ নেই।

৯। কীসের প্রতি আপনি অনুরক্ত, কী কাজ করতে আপনি ভালোবাসেন, সেই প্যাশানকে অনুসরণ করুন।

আপনার আবেগকে অনুসরণ করুন, যা করতে ভালোবাসেন তাই করুন। এজন্য যদি আপনাকে আপনার আয়ের কিছু অংশ বাদও দিতে হয়, তবুও প্যাশানকে অনুসরণ করুন।

১০। যখনই আপনি গড় (average) বিষয় নিয়ে কাজ করবেন, তখন এর পিছনের তথ্যগুলো সম্পর্কে সতর্ক থাকুন।

বিল গেটসের মতো একজন ধনৗ ব্যক্তি১ মাসে যা আয় করে তা ৫০ হাজার সাধারণ মানুষের আয়ের সমান হতে পারে। তাই এ ধরনের বিরাট বৈষম্যের সংখ্যা নিয়ে গড় করলে তা অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর তথ্য দিতে পারে।

ধরুন, ৫০ হাজার মানুষের প্রতি মাসে মোট আয় ৫০ কোটি টাকা। আর বিল গেটস বা অন্য কোন একজন ধনৗ ব্যক্তির প্রতি মাসে আয় ৫০ কোটি টাকা। তাহলে এদেরকে এক করে যদি গড় করি, তবে ৫০ হাজার ১ জন মানুষের গড় আয় আসে ২০ হাজার টাকা। কিন্তু এই গড়ের তথ্য থেকে যদি বিল গেটসকে সরিয়ে নিই, তবে দেখা যাবে ৫০ হাজার মানুষের গড় আয় প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা। দেখুন গড়ের কী তারতম্য!

এই গড়ের ওপর অনেক সিদ্ধান্ত নির্ভর করে। ধরুন, সরকার এমন এক গড় করে দেখল, দেশের জনগণের আয় ২০ হাজার টাকা করে। তো, সরকার চিন্তা করল, তেলের দামে সরকারকে ১০০ টাকা ভর্তুকি দিয়ে ৫০ টাকা লিটার বিক্রি করতে হচ্ছে। যেহেতু সবার আয় বেড়েছে। তো ভর্তুকি উঠিয়ে দিলেও চলবে। তখন তেল লিটার প্রতি হয়ে যাবে ১৫০ টাকা। কিন্তু প্রকৃত অর্থে মানুষের আয় হয়তো ১০ হাজার বা তারও নিচে। তখন যারা ধনী, তাদের ততটা অসুবিধা না হলেও, সাধারণ জনগণের নাভিশ্বাস উঠে যাবে।
১১। টাকার চিন্তা করলে যে সবসময় আপনি অনুপ্রাণিত হবেন ব্যাপারটা তা নয়।

এটা কেবল সেই কোম্পানিগুলোতেই প্রেরণা হিসাবে কাজ করে যেখানে কর্মচারীরা শুধু টাকাপয়সার জন্য কাজ করে। যেমন মোবাইলের ফ্ল্যাক্সিলোড, বিকাশের দোকান প্রভৃতি।

১২। টাকাপয়সার চিন্তার সাথে আবেগ জড়ানো থাকে।

যখন কেউ আকস্মিকভাবে টাকাপয়সা পেয়ে যায়, তখন সে অযৌক্তিভাবে সেই টাকাপয়সা খরচ করে। যদিও মানুষ প্রায়ই বলে, এরকম হঠাৎ ৫ বা ১০ লাখ টাকা পেলে সে খুব যৌক্তিকভাবে খরচ করবে। আসলে তা হয়ে ওঠে না। কিন্তু একই পরিমাণ টাকা যদি পরিশ্রম করে আয় করে, তবে তা খরচ করতে অনেক চিন্তাভাবনা করে।

১৩। আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে গেলে নিজের ভেতর বেশ অনেকটা শক্তির দরকার হয়।

আপনি যদি জীবনের কোন একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্র বা লক্ষ্যে সফল হতে চান বা আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে চান তবে শারীরিক এবং মানসিক, উভয়ভাবে আপনার শক্তির দরকার। তাই যখন-তখন, যেখানে-সেখানে হ্যাঁ বলে নিজের এনার্জি লস করবেন না।

১৪। কোনকিছুর অনুপস্থিতির চেয়ে উপস্থিতি অনেক বেশি লক্ষণীয় এবং মূল্যবান।

উদাহরণস্বরূপ, রোগের উপস্থিতি এর অনুপস্থিতির চেয়ে অনেক বেশি লক্ষণীয়। রোগ না থাকলে মানুষ নির্বিঘ্নে জীবনযাপন করে। বলতে গেলে অস্বাস্থ্যকর এবং অনিয়মিত উপায়ে জীবনযাপন করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। কিন্তু যখন অসুস্থ হয়েই যায় তখন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগে। যেমন, ডায়াবেটিস রোগীরা ডায়াবেটিস রোগ হওয়ার পর থেকে সকালে হাঁটতে বের হয়, কিন্তু আগে নয়।

১৫। মানবদেহের জন্য চিনি যেমন বিষের মতো তেমন পত্রপত্রিকা বা টিভিতে সংবাদগুলো আমাদের মনমানসিকতার জন্য বিষস্বরূপ।

চিনি বা সংবাদ, এসব জিনিস দেখলে ক্ষুধা পায়, সহজে হজম করা যায়। কিন্তু এগুলো দীর্ঘমেয়াদে অত্যন্ত মারাত্মক। যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ©ফজলে রাব্বি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন