বুধবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

লক্ষ্যভেদের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

কিছুদিন আগে “লক্ষ্য নির্ধারণে মহাভারতের শিক্ষা” নামক একটি গল্প শেয়ার করেছিলাম। সেখানে নদীর এপাড় থেকে ওপাড়ে রাখা গাছের ওপর একটি কৃত্রিম পাখির চোখ ছেদ করতে বলা হয়। একমাত্র রাজকুমার অর্জুনই তীর দিয়ে ঐ পাখির চোখ ছেদ করতে সক্ষম হয়। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ফোকাস বা একাগ্র মনোযোগ। লক্ষ্য সম্পর্কে আগে থেকে নিশ্চিত হওয়া এবং সেই লক্ষ্য ভিন্ন আর কিছু না দেখাই হচ্ছে লক্ষ্যভেদ করার অন্যতম মন্ত্র।


আজ আমরা জানব লক্ষ্যভেদ করার আরও কিছু উপায় সম্পর্কে। প্রথমে মনে রাখবেন, অন্যরা যা কিছু অর্জন করেছে, আপনিও তাই অর্জন করতে পারবেন, যদি আপনি জানেন তা কীভাবে অর্জন করতে হয়। তাই জানার আগ্রহ বজায় রাখুন এবং শিখতে থাকুন।

৩টি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। তা হচ্ছে স্বচ্ছতা, ফোকাস বা একাগ্র মনোযোগ এবং লক্ষ্য ভিন্ন আর কিছু না দেখা। আপনি ব্যায়াম করার মাধ্যমে যেমন দেহের পেশী মজবুত ও শক্তিশালী করতে পারেন, তেমন নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে মানসিক পেশীকেও দৃঢ় ও ক্ষমতাশালী করতে পারেন। এজন্য কাজটা আপনাকে বারবার করতে হবে।

হাওয়ার্ড হিল নামক এক অসাধারণ ব্যক্তি ১৮৯৯ সালের ১৩ নভেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাস্কেটবল এবং ফুটবল সহ নানা ধরনের খেলায় পারদর্শী ছিলেন। কিন্তু তিনি পরে অনুভব করলেন, তিনি যদি সব খেলায় অংশ নেন, তবে তিনি কোন খেলাতেই পাকা খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারবেন না। তাই তিনি তীর নিক্ষেপ খেলাকে নির্দিষ্ট করলেন। আর সেই খেলাই বহু বছর ধরে চর্চা করে গেলেন। তিনি একাধারে নানা তীর নিক্ষেপ খেলায় ১৯৬টি পুরস্কার জিতে নেন। যা ইতিহাসে বিরল। তার সাথে প্রতিযোগিতায় নামলে অন্যরা মনে করত, প্রথম তো হাওয়ার্ড হিলই হবে। বাকিরা ২য়, ৩য় বা ৪র্থ পদ নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে পারে।

কিন্তু এত প্রতিভা, অভিজ্ঞতা এবং চর্চা থাকা সত্ত্বেও, হাওয়ার্ডকে যদি বলা হত, তীর যে টার্গেটে নিক্ষেপ করবে সেই টার্গেটের সামনে একটি কম্বল ঝুলিয়ে দিয়ে তীর নিক্ষেপ করতে তবে কী সে টার্গেটে ঠিকমতো লাগাতে পারত? এ সম্পর্কে জিগ জিগলার বলেন, আপনি যদি কোন টার্গেট না দেখেন, তবে আপনি কোন টার্গেটে হিট করতে পারবেন না। জীবনের ক্ষেত্রেও এ কথা সত্য। আপনি যদি কোন লক্ষ্য না নেন, তবে আপনি কোন লক্ষ্যই পূরণ করতে পারবেন না।

লুইস ক্যারোল এ সম্পর্কে বলেন, আপনি যদি না জানেন আপনি কোথায় যাবেন, তবে যেকোনো রাস্তা আপনাকে সেখানে পৌঁছে দিতে পারে।

আবার থমাস কার্লাইল বলেন, যে ব্যক্তির কাছে একটি পরিষ্কার ও স্বচ্ছ উদ্দেশ্য আছে, সে সবচেয়ে কঠিন রাস্তার মধ্য দিয়েও অগ্রগতি আনতে পারে। আর যে ব্যক্তির কাছে একটি পরিষ্কার উদ্দেশ্য নেই, সে সবচেয়ে মসৃণ রাস্তা দিয়েও উন্নতি করতে পারে না।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সফল ব্যক্তি তারাই হয় যারা তাদের বেশির ভাগ সময় তাদের উচ্চ সম্ভাবনাময় কাজে ব্যয় করে। আপনার উচ্চ সম্ভাবনাময় কাজ কোনগুলো? আপনি কি সেগুলোতে বেশি সময় দিচ্ছেন?

আপনার চিন্তাভাবনার গুণগত মানই আপনার পছন্দ নির্বাচন করবে। আপনার পছন্দ এবং সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করবে আপনি কোন ধরনের কাজ করবেন। আর আপনার কাজই আপনার ফলাফলের গুণগত মান এবং পরিমাণ নির্ধারণ করবে। লোকজন কেবল ফলাফল দেখতে চায়। তাই উত্তম ফলাফল পেতে হলে চিন্তাভাবনা থেকে আরম্ভ করুন।

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার হচ্ছে, আপনি যে ক্ষেত্র বা মার্কেটে সফল হতে চান, সেই ক্ষেত্রে আগে যারা সফল হয়েছে তাদেরকে জানুন, তাদের পদ্ধতি সম্পর্কে খোঁজ নিন এবং তাই তাই করুন। দেখবেন আপনিও সফল।

আপনি যত স্বচ্ছভাবে আপনার লক্ষ্য দেখতে পাবেন আপনি তত দারুণভাবে লক্ষ্যভেদ করতে পারবেন। কারণ আপনি লক্ষ্য সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করছেন। চিন্তাভাবনা থেকে পছন্দ এবং সিদ্ধান্ত আসবে। আর সিদ্ধান্ত থেকে কাজ এবং কাজ থেকে আশানুরূপ ফলাফল আসবে। আবারও জিগ জিগলারের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, “আপনি যদি কোন টার্গেট না দেখেন, তবে আপনি কোন টার্গেটে হিট করতে পারবেন না।” আপনি কি জানেন, পরিকল্পনা বা লক্ষ্য কীভাবে তৈরি করতে হয়? আজই আপনার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন