বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

নেতৃত্বের গল্প: প্রজাপতির গল্প

চিনা প্রবাদে আছে, একজন মানুষকে যদি একটি মাছ দাও তবে সে একদিন খেতে পারবে। কিন্তু তাকে যদি মাছ ধরতে শিখিয়ে দাও তবে সে সারাজীবন খেতে পারবে। আমাদের নবীজীও তাই করেছেন। একজন গরিবকে কুড়াল কিনে দিয়ে কাঠ কাটতে বলেছেন। এতে করে সে সারাজীবন কাজ করার মাধ্যমে সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারে। কিন্তু এসব থেকে আমরা কী শিক্ষা নিতে পারি? আমি বলব, এখান থেকে আমরা নেতৃত্বের শিক্ষা নিতে পারি।

আজ আমরা নেতৃত্ব বিষয়ক একটি গল্প বলব। একে প্রজাপতির গল্পও বলা হয়। গল্প বলার আগে নেতৃত্বের কিছু সংজ্ঞা বলে নিই। ডিভেলপিং দ্য লিডার উইদিন ইউ বইয়ের লেখক জন সি. ম্যাক্সওয়েল বলেন, নেতৃত্ব মানে পদ, পদবি বা অবস্থান নয়, বরং এর মানে হচ্ছে একটি মানবজীবন আরেক মানবজীবনকে প্রভাবিত করছে। তিনি আরও বলেন যে অন্যদেরকে গুণান্বিত করতে হলে প্রথমে আপনাকে অন্যদের মূল্য দিতে হবে। নেতৃত্ব সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, কাউকে তার নিজের সমস্যা সমাধানে সক্ষম করে তোলা, তাদেরকে তাদের নিজ পরিস্থিতিকে খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ করে দেয়াই হচ্ছে নেতৃত্ব।

যেমন আমি আমার ছোট ভাইকে হাত ধরে রাস্তা পার করে দেওয়ার চেয়ে তাকে রাস্তা পারাপার হতে গেলে রাস্তার দুইদিকে, ডানে-বামে তাকাতে বলি, তারপর রাস্তা পার হতে বলি। ফলে সে যখনই রাস্তা পার হবে, নিজে নিজে পার হতে পারবে। আবার সেদিন বাসার পাশের প্রতিবেশী বিদ্যুতের মিটারে প্রিপেইড কার্ড প্রবেশ করাতে পারছিলেন না। তার সাথে গিয়ে তাকে বলেছি কী কী করতে হবে, কীভাবে করতে হবে। তিনি নিজে তার হাতে প্রিপেইড কার্ড মিটারে প্রবেশ করালেন এবং ঠিক আছে কিনা দেখলেন। আমি কেবল তার পাশে থেকে দিকনির্দেশনা দিলাম। এতে করে তিনি আর কখনো কার্ড নিয়ে সমস্যায় পড়বেন না। আর পড়লেও তা সমাধান করতে নিজের মধ্যে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস অনুভব করবেন। এবার প্রজাপতির গল্পটা বলা যাক।


আমি বহু বছর আগে এ গল্পটা আমার দাদীর কাছে শুনেছি। এক লোক পার্কের ভেতর দিয়ে অফিসে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখলেন, একটি গাছে শুঁয়োপোকা তার গুটি থেকে বের হতে চেষ্টা করছে। তিনি বেশ সময় নিয়ে ঘটনাটি দেখলেন। গুটির ভেতর শুঁয়োপোকার তীব্র নাড়াচাড়া করছে। তিনি দেখে অফিসে চলে গেলেন।

পরেরদিন, তিনি আবার সেই জায়গায় দেখলেন শুঁয়োপোকা চেষ্টা করছে তার গুটি থেকে বের হতে। তিনি একবার চিন্তা করলেন কী করবেন। শুঁয়োপোকার এত চেষ্টা ও কষ্ট দেখে তিনি সাহায্য করতে নিজের ভেতর তীব্র তাড়না বোধ করলেন। কিন্তু তারপরও তিনি কিছু না করে চলে গেলেন।

তৃতীয়দিন তিনি একটি ছুরি নিয়ে এলেন। শুঁয়োপোকার এত সংগ্রাম তার সহ্য হলো না। লোকটি ছুরি দিয়ে গুটি কেটে শুঁয়োপোকাকে বের করে আনলেন এবং এর সংগ্রাম থেকে মুক্তি দিলেন। কিন্তু দেখা গেল কিছুক্ষণ পরেই শুঁয়োপোকাটি মারা গেল।

গল্পের এখানেই শেষ। এ গল্প থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে আমরা অন্যের সমস্যা সমাধান করে দিতে পারি না এবং তা উচিতও নয়। আমরা কেবল তাকে তার সমস্যা সমাধানে সক্ষম হয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারি, তার নিজ পরিস্থিতিকে খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ করে দিতে পারি।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন